আত্মার অন্তরালে পর্ব ১৮
প্রীতি আক্তার পিহু
সুইজারল্যান্ড,,,
চারদিকে ঘন তুষারপাত। নিঃশব্দে ঝরে পড়ছে বরফের পরত। বাইরে বরফের আস্তরণে আচ্ছাদিত পাইন গাছগুলো সাদা শীতনিশ্চল দানবের ন্যায় নিঃস্পন্দ অবস্থানে স্থিত। এই হিমস্বর্গের কেন্দ্রস্থলে স্থাপিত এক বিশাল আইস প্যালেস। প্যালেসের ছাদের উপর সঞ্চিত তুষারের প্রান্তগুলি ক্রমে নিচে ঝুলে কাচসদৃশ কৃশধার রূপে সুদীর্ঘতর হয়েছে। স্প্যানিশ ভাস্কর্যের ছাঁদে নির্মিত প্যালেসের কার্নিশগুলো দৃষ্টিনন্দন অলঙ্কারিকতায় সমুজ্জ্বল। পাইন বৃক্ষের ছায়া অতিক্রম করে প্রতিভাত হয় সেই রহস্যাবৃত প্যালেসের খাঁজকাটা মিনার। কিন্তু এই আইস প্যালেসের অভ্যন্তরে বিরাজ করছে দুর্বার উষ্ণতা।এর অন্তর্গত প্রদেশে প্রবেশ করলে অনুমানও করা যায় না যে বাহিরে তুষারপাত অব্যাহত। তবে অন্যান্য সকল স্থানের তুলনায় কিচেনটি সর্বদা অধিক উষ্ণতাবাহী।
আইস প্যালেসের কিচেনের প্রাচীরে সুবিন্যস্ত শাণিত ছুরি, কাঁটাচামচ, হুক সকলই নির্মল উজ্জ্বলতায় চকচক করছে। একজন ব্যক্তি অবস্থান করছে কিচেনের কেন্দ্রে। তার মুখে কালো ড্রাগনের মুখোশ, পরণে একখানা র*ক্ত*র*ঞ্জিত রন্ধন-অ্যাপ্রোন। আর বুঝতে বাকি রইল না উক্ত র*ক্তাবৃত ব্যক্তিটি আর কেউ নন—ড্রেভেন হান্টার। ড্রেভেন গতকালই প্রত্যাবর্তন করেছে সুইজারল্যান্ড। তার হাতে একটি দীর্ঘ স্লটেড বোনিং ছুরি। টেবিলের উপরে সন্নিবেশিত আছে টকটকা লাল মাংস। লালাভ মাংসের উপর আলগা চামড়ার কিছু অংশ এখনো সংলগ্ন। তলদেশে র*ক্ত*সিক্ত একপট্টি সাদা চর্বি সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ড্রেভেন ছুরি দিয়ে সেই মাংসের আলগা চামড়ার নিচে ঢুকিয়ে দেয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সঙ্গে সঙ্গে শূন্য ছুরির সূক্ষ্ম ফাঁক বেয়ে স্ফুটিত হয় উষ্ণ র*ক্তধারা। মাংসের সাথে সংযুক্ত র*ক্ত*টি তীব্র গরম। লালাভ রঞ্জিত মাংস হতে ধোঁয়ারূপী তাপবাষ্প উত্থিত হচ্ছে। অতঃপর চর্মবিচ্ছিন্ন করার পর সে অতি নিখুঁতভাবে মাংসখণ্ডগুলোকে বিছিন্ন করতে থাকে। এবার মাংস হইতে অধিক র*ক্ত বিস্তারলাভ করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এত র*ক্ত কেন? কেবল চর্মচ্ছেদ ও মাংস কর্তনে কি এত র*ক্তবিকিরণ সম্ভব? টেবিলের কিনারা অতিক্রম করে র*ক্ত টুপটুপ করে ভূমিতে পতিত হচ্ছে।ড্রেভেনের সাদা অ্যাপ্রনের গায়ে তাজা র*ক্তে*র ছোপ ছোপ দাগ লেগে আছে।কিন্তু ড্রেভেন নিরাসক্তভাবে মাংস খণ্ডন করে চলেছে চতুর্ভুজাকারে। কখনো আড়াআড়ি, কখনো লম্বালম্বিভাবে। মাংস কর্তন সম্পন্ন হলে সে মাংসখণ্ডসমূহকে স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে সঞ্চিত করলো। মাংসের দিকে একদৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করে ঘাড় কাত করে বললো,
“নো! দ্যট’স নোট এনসফ মিট। ফেয়ার টু লেস ফোর এ প্রোপার ডিস।”
এতটুকু কথা সমাপ্ত করে সে ধীরে ধীরে ফ্রিজের দিকে অগ্রসর হলো। ফ্রিজের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে হিমেল কুয়াশার মতো ধোঁয়া ধীরে ধীরে কক্ষজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অভ্যন্তরে প্রতিভাত হলো একটি অ*র্ধা*ঙ্গ শিশু মানবের নিথর দেহাবশেষ। দেহটির নাভিমণ্ডল হতে নিম্নাংশ অনুপস্থিত। অবশিষ্ট রয়েছে কেবল বক্ষ, কণ্ঠ এবং মস্তক। শিশুটির চক্ষুদ্বয় এখনও উন্মুক্ত, দেখে মনে হচ্ছে শিশুটি এখনো চোখ দিয়ে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে।তবে এই আকুতি ড্রেভেনের কান অব্দি পৌঁছায় না। কীভাবে পৌঁছাবে ? সে তো এক নির্মম বিকৃত দানব। এতক্ষণ সে এই মৃতদেহের নিম্নাংশের মাংস কুচি করছিল।
কতই বা হবে শিশুটির বয়স? এই তো দশ কিংবা একাদশ বর্ষে পদার্পণ। এইতো কিছুক্ষণ পূর্বেই তাকে ধরে ড্রেভেন জবাই করল।এ আর নতুন কী! প্রতিদিন তো ড্রেভেন নামক এই পিশাচ তিন থেকে চারজন নিষ্পাপ শিশুকে নির্মমভাবে ব*লি দেয়।
সেই মুহূর্তে ড্রেভেনের ঠোঁটের কোণে শীতল বিদ্রুপহাসি ফুটে ওঠে। মুখে মুখোশ থাকায় সেই হাসির রেখা দৃশ্যমান হয় না। সে মৃতদেহটিকে বক্ষের নিম্নাংশ থেকে উভয় হাতে আকর্ষণ করে টেনে বের করে আনে। মুহূর্তের মধ্যেই নিথর দেহটি ফ্রিজ থেকে বেরিয়ে তার হাতের উপর ভেঙে পড়ে। জমাট বাঁধা র*ক্ত ফ্রিজের প্রান্ত থেকে মেঝে বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। দেহটির মস্তক ঝুলে থাকে নিম্নদিকে। মাথা বরাবর কিছুটা আধা-জমাট র*ক্ত গলে নিচে গড়াতে থাকে।ড্রেভেন সাবধানে সেই দেহাংশটি স্টিল কাটিং বোর্ডের উপর রাখে।অতঃপর হাতে তুলে নেয় এক শাণিত চাপাতি এবং মৃতদেহটির বক্ষদেশ বরাবর অতি সূক্ষ্ম এক দাগ অঙ্কন করে। এরপর সেই ধারালো ছুরিটি ধীরে ধীরে চামড়ার নিচে প্রবিষ্ট করতে করতে সে গুনগুন করে গাইতে থাকে,
❝ঘুমপাড়ানি স্টু চুলায় আছে,আনন্দে ফেনিয়ে উঠছে;
ছোট ছোট পা, এখন কাবাবের জন্য মেরিনেট হচ্ছে।❞
মুহূর্তেই বীভৎস শব্দ হলো মাংসের অভ্যন্তরীণ থেকে। হয়তো মৃত বাচ্চাটি নিঃশব্দ আর্তনাদ! শিশুটির চোখের দিকে তাকালে বোঝা যায় সে মিনতি জানাচ্ছে তাকে যেন আর ক্ষতবিক্ষত না করা হয়। কিন্তু ড্রেভেন তার মনে করুণার এক বিন্দু স্থান নেয়।সে ছুরি চালিয়ে যেতে থাকে শিশুর বক্ষজুড়ে।
বুকের চামড়া কেটে ফেলতেই অভ্যন্তরে দৃশ্যমান হলো সাদা চর্বির স্তর। ড্রেভেন একটি আরেকটু সূক্ষ্ম ছুরি তুলে সেই স্তরকে নিপুণ হাতে আলগা করতে থাকে। মুহূর্তেই উদ্গত হয় গাঢ় র*ক্তি*ম মাংসপিণ্ড। সেখান থেকে নির্গত হয় এক প্রকার বদ্ধ সাপ্রচণ্ড গন্ধ। কিছু র*ক্ত ছিটকে ড্রেভেনের মুখোশে এসে পড়ে। অতঃপর সে একটি কাঁচি দিয়ে সাবধানে দেহটির চামড়া উভয় দিকে ছিঁড়ে ফেলে, ফলে মৃতদেহের অভ্যন্তর স্তর সুস্পষ্টভাবে উন্মুক্ত হয়। এরপর সে কাঁধের সংলগ্ন মাংস নিপুণভাবে পৃথক করতে থাকে। একে একে মাংসের খণ্ড টুকরো টুকরো করে কাচের বাটিতে স্থানান্তরিত করে। পুনরায় গুনগুনিয়ে সে আবৃত্তি করে,
❝হাসি দিয়ে কেটে নিলাম নরম বুকখানা,
হাড়ের চেয়ে মিষ্টি লাগে, শিশুর কোমল দেহের মাংসখানা।❞
পরক্ষণে ড্রেভেন গলার অংশ বরাবর ছুরি চালিয়ে একে একে শিরা-উপশিরা, বায়ুনালী ও স্বরযন্ত্র ছিন্ন করে। অতিরিক্ত যত্ন সহকারে মস্তিষ্কাধারী খুলিটি কেটে পৃথক একপাশে সরিয়ে রাখে। হঠাৎ তার দৃষ্টি আটকে যায় বক্ষপৃষ্ঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকা চামড়ার অভ্যন্তরীণে পাঁজরের হাড়গুলিতে। নিখুঁত নিষ্ঠায় সে একটির পর একটি পাঁজরের হাড় আলগা করতে থাকে। ভেতর থেকে কলিজা ও ফুসফুসের নিকটবর্তী অঞ্চল থেকে তীব্র দুর্গন্ধ প্রসারিত হয়। ড্রেভেন চোখ বুঁজে সেই গন্ধ অনুভব করার চেষ্টা চালায়।কাঁচা র*ক্তে*র লৌহঘ্রাণ এবং পঁচা মাংসের বিকট গন্ধে তার ঠোঁটে বিকৃত আত্মতৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে। এরপর সে পুনরায় গানের সুরে বলে ওঠে—
❝ঘুমাও এখন, ঘুমাও প্রিয় শিশু,
আমার পাত্র ভিতর চুপ;
শিগগিরই আসবে এক মনোহর খাবার;
উষ্ণ আর সুস্বাদু এক স্যুপ।❞
মাংস কাটার নির্মম পালা শেষ হলো ড্রেভেনের।এখন সে কাটা মাংসখণ্ডসমূহ একে একে স্টিল পাত্রে স্থানান্তর করে এবং সেগুলো গরম পানিতে নিমজ্জিত করে। পানি ধীরে ধীরে উৎপ্ত হতে থাকে। মাংসের গায়ে ছিটিয়ে দেয় বিবিধ সুগন্ধি মসলা ও পাতাবাহার। সিদ্ধ হতে থাকা মাংস থেকে একরকম উৎকট গন্ধ নির্গত হতে থাকে। পাত্রের পানিতে র*ক্ত মিশে ক্রমশ গাঢ় লাল রঙ ধারণ করে।মাংস রান্না শেষ হতেই ড্রেভেন গম্ভীর মুখে পাত্রভর্তি মাংসগুলো কালো চামচিকাবর্ণ পাত্রে ভরে ফেলল। পাত্রটা তুলে নিয়ে সে এগোতে থাকল প্যালেসের ভেতরের দিকে।সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে চোখে পড়ল এক কালো পাথরের দরজা। উপরে খোদাই করা-‘জেনেসিস পিট’
এটি প্যালেসের সবচেয়ে গোপন জায়গা আইস প্যালেসের হাইব্রিড চেম্বার। একে একধরনের জৈব-কারাগার বলা চলে,যেখানে তুষারভর্তি এক বিশেষ কাঁচের ঘরে হাইব্রিড প্রাণীদের রাখা হয়।এখানকার তাপমাত্রা সবসময় -18 ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থিত থাকে, যাতে প্রাণীরা উত্তেজিত না হয়ে স্থির থাকে। গরম জায়গায় রাখলে তাদের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে গিয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।জেনেসিস পিটের প্রধান দরজার ভেতরে প্রবেশ করল ড্রেভেন।ঠিক তখনই তার দৃষ্টি আটকালো সামনে জড়ো হয়ে থাকা গার্ডদের উপর।স্বাভাবিকভাবে এত মানুষ এখানে থাকার কথা না।ড্রেভেনের চোখ মুহূর্তেই রক্তবর্ণে পরিণত হলো। তার কণ্ঠে আগুনের মতো হুংকার ছেড়ে বলল,
“কি হচ্ছে এখানে? এত গার্ড কেন দাঁড়িয়ে?”
সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের সবার মুখ শুকিয়ে গেল, গলার পানি একদম গিলে ফেলল তারা।ড্রেভেন কোনরকম উত্তর না পেয়ে গর্জন করলো,
“ওয়ার ইজ ড্যারেন?ওয়ার ইজ মাই ব্রাদার্স?”
কেউ কোন জবাব দিতে পারল না সবাই গলাকাটা মুরগির মত ছটফট করে কাঁপছে।ঠিক তখনই ড্রেভেন গম্ভীর পায়ে এগিয়ে গেল স্নো-চেম্বার 07 এর দিকে।
চেম্বারের কাঁচের দরজার ওপাশে তার দৃষ্টি আটকে গেল এক ভয়ংকর দৃশ্যে। থমাস তার ধারালো দাঁত দিয়ে একটি গার্ডের দেহ তৃপ্তি করে খাচ্ছে। শরীর থেকে এক একটা মাংস টেনে ছিড়ে খাচ্ছে থমাস।মাঝেমধ্যে বিকৃত আওয়াজ বের হচ্ছে থমাসের মুখ দিয়ে। থমাস তার লেজের অংশটা দিয়ে গার্ডের মৃতদেহটি আঁকড়ে ধরে এবং নেকড়ের মতো তীক্ষ্ণ দাঁত দিয়ে মাংস ছিঁড়ে খাচ্ছে।সে সাপের মতো জিব্বা বের করে শরীরের ভেতর প্রবেশ করিয়ে বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে গার্ডটির। সাপের বিষের কারণে গার্ডেটির দেহ পুরো নীল হয়ে গিয়েছে।এখন প্রশ্ন হলো থমাস আসলে কি? কোন মানুষ নাকি প্রাণী?এটি একটি হাইব্রিড প্রাণী। থমাস সাপ এবং নেকড়ের ডিএন এর সমন্বয়ে তৈরি একটি ভয়ংকর প্রাণী।
যা এখনো পৃথিবীর কাছে অবিশ্বাস্য।তবে ইতিহাসের বুকে উনিশ শতকে এই অবিশ্বাস্যকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন কয়েক বিজ্ঞানী।উদাহরণস্বরূপ, ইতিহাসের সর্বপ্রথম হাইব্রিড প্রাণীতে সফল হন বিজ্ঞানী স্টিন উইলাডসেন।সে এবং তার সহকর্মীরা প্রথমবারের মতো সফলভাবে ছাগল ও ভেড়ার ভ্রূণ একত্র করে হাইব্রিড প্রাণী তৈরি করেন যাকে ‘গিপ’ বলা হয়। এই গবেষণায় তারা ছাগল ও ভেড়ার ভ্রূণকে চার থেকে আট কোষের স্তরে একত্র করে একটি নতুন ভ্রূণ তৈরি করেন, যা পরবর্তীতে একটি গর্ভধারণকারী মা প্রাণীর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। ফলস্বরূপ, একটি হাইব্রিড প্রাণী জন্ম নেয়, যার শরীরে ছাগল ও ভেড়ার কোষের মিশ্রণ।এই প্রাণীটির শরীরের কিছু অংশে ছাগলের বৈশিষ্ট্য এবং কিছু অংশে ভেড়ার বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
সেই থেকে বিজ্ঞানীরা এক এক করে তাদের এক্সপেরিমেন্ট চালাতে থাকে প্রাণীদের উপর। থমাস ও সেই এক্সপেরিমেন্টার ই প্রতিদান।তবে কে থমাসকে আবিষ্কার করেছে সেটা অজানা।থমাস তৈরি হয়েছে সাপ এবং নেকড়ের ডিএনএ একত্রিত হয়ে।এরকম কয়েক জাতের হাইব্রিড প্রাণী কয়েকটা চেম্বারে সংগ্রহিত আছে।হাইব্রিড প্রাণীদের খাদ্যাভ্যাস তাদের জিনগত মিশ্রণের উপর নির্ভর করে।ঠিক তেমনিভাবে শুধুমাত্র থমাসের খাদ্য তালিকা ভিন্ন অন্যান্য হাইব্রিড প্রাণীদের থেকে।থমাসকে খাদ্য হিসেবে ১০ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশু দেওয়া হয়। কারণ প্রাপ্তবয়স্কদের মাংস থমাসের পাচন ক্রিয়াকে নষ্ট করতে পারে।১০-১১ বছরের শিশুদের টিস্যুতে রয়েছে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার রিলিজ। যা থমাসকে কৃত্রিমভাবে সক্রিয় করে এবং হাইপোথালামাস অংশকে নিউরাল রিসেট দেয়।মুলত এই কারণে থমাস বাকি সব হাইব্রিড প্রাণীদের থেকে ভিন্ন এবং হিংস্র।
ড্রেভেনের আর বুঝতে বাকি রইল না থমাস আজও একটি গার্ড কে খেয়ে ফেলেছে।রক্তে লাল হয়ে যাওয়া জিহ্বা বের করে থমাস হিসহিস শব্দ করছে,সেই জিহ্বা সাপের মতোই দ্রুত লকলক করছে।ঠিক তখনই ড্যারেন ড্রেভেনের সামনে এগিয়ে আসল।আচমকা ড্রেভেন থমাসের কেয়ারটেকার মিস লিয়ার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল,
“আর ইউ দেট স্টুপিড মিস লিয়া?ডিডইউ নট ফিড থমাস টুডে? আনসার মি?”
মিস লিয়া ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
” ইয়েস স্যার পুরো ২টা জীবন্ত বাচ্চা খাবার হিসেবে দিয়েছিলাম থমাসকে। কিন্তু….
আর কিছু বলতে পারেনা। ড্রেভেন লিয়ার হাত বরাবর শুট করে। সঙ্গে সঙ্গে মিস লিয়া হাঁটু গেড়ে নিচে বসে আর্তনাদ করে ওঠে ব্যথায়। হাত থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। তখনই ড্রেভেন গর্জে ওঠে,
“থ্রি? ওনলি টু বডি? সিরিয়াসলি? ইউ থিংক দিস ইজ এ জোক? প্রতিদিন তিনটা বডি রান্না করে থমাস কে দিতে বলেছিলাম? ওয়াট দ্যা ননসেন্স?”
ড্যারেন এবার ড্রেভেনকে নিবৃত্ত করল। ড্রেভেন রক্তাভ চক্ষে তাকাল ড্যারেনের দিকে। ড্যারেন ইশারায় সকল গার্ডদের বাহিরে চলে যেতে নির্দেশ দিল। সঙ্গে সঙ্গেই সবাই জীবনপণে সেখান থেকে প্রস্থান করল। কেবল মিস লিয়া রক্তরঞ্জিত অবস্থায় নিথর পড়ে রইলেন। ড্রেভেনের অনুমতি ব্যতিরেকে তাঁর মৃত্যু অবধারিত নয়।ড্যারেন এবার শান্তস্বরে বলল,
“কুল ডাউন ব্রাদার!গুমঘড়ে আর একটি শিশুও অবশিষ্ট নেই। তাহলে ওরা থমাসকে কোথা থেকে এনে দিবে?আর ইউ আন্ডারস্ট্যাড?”
ড্রেভেন কোনো প্রতিউত্তর না দিয়ে রক্তবর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন মিস লিয়ার দিকে। মুহূর্তেই মিস লিয়া আরও কেঁপে উঠলেন। তিনি কাতর ভঙ্গিতে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন। অগ্রসর হয়ে ড্রেভেনের হাত থেকে মাংসসমৃদ্ধ পাত্রটি নিজের হাতে তুলে নিলেন।অতঃপর সঙ্কোচভরে এগিয়ে গেলেন কাঁচের চেম্বারের অভিমুখে।থমাসের দৃষ্টি মিস লিয়াকে পড়তেই সে বিকারগ্রস্তের ন্যায় আচরণ করল। লিয়ার জন্য এটি নিত্যকার কর্ম হলেও, তবুও আতঙ্কে তিনি স্থবির হয়ে পড়েন। নিরবের তাজা মাংসভরা পাত্রটি তিনি চেম্বারের অভ্যন্তরে স্থাপন করেন। আর তখন থমাস উন্মত্তের ন্যায় কাঁচের অপর প্রান্তে নখরাঘাত করতে থাকে। কিন্তু উষ্ণ তাজা মাংসের ঘ্রাণে মোহিত হয়ে থমাস ঝাঁপিয়ে পড়ে পাত্রটির উপর। মিস লিয়া আতঙ্কে কিছু কদম পশ্চাৎপদ হয়ে দ্রুত চেম্বারের বহির্গমন পথ ধরেন।
ঠিক সেই সময় ড্রেভেন ড্যারেনের দিকে দৃষ্টিপাত করে গম্ভীরস্বরে উচ্চারণ করল,
“K.K কে বলো আরও বাচ্চা পাঠাতে আমার কাছে।”
ড্যারেন ভ্রুঁজোড়া সংকুচিত করে চাপা কন্ঠে জবাব দিল,
“তোমার মনে হয় K.K আমাদের হাতে আবারও শিশুদেকে সোঁপে দিবে?”
ড্রেভেন মুখোশের আড়ালে বিকট হাসি দিল। তৎক্ষণ সে তার ঘন নীল দৃষ্টিতে ড্যারেনের দিকে চেয়ে রক্তশীতল স্বরে বলল,
“ওয়াই নোট?K.k বলো ফর্মুলা পেতে হলে অবশ্যই আমার কথা মেনে চলতে হবে। আমি যেমন বলবো যেভাবে বলবো সেভাবেই করতে হবে।কারণ K.K এর প্রাণ তো আমার হাতে বন্দি।”
ড্যারেন কোনো প্রতিউত্তর দিল না নিশ্চুপ থাকল। ঠিক সেই মুহূর্তে লিয়া গলা খাঁকারি দিয়ে ভীত কণ্ঠে বলল,
“স্যার আমি K.K এর সঙ্গে কথা বলে জানাবো।কিন্তু একটা প্রশ্ন ছিল।”
ড্রেভেন হুইস্কির গম্ভীরতা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
“কি?”
লিয়া নিজের মনের শক্তি সঞ্চয় করল। এরপর চঞ্চল ঠোঁট ভিজিয়ে উচ্চারণ করল,
” স্যার মানে K.K স্যারের ফর্মুলা আটকে রেখে আপনার লাভ কি?”
লিয়া এতটুকু বলেই সম্মুখে মাথা অবনত করল। ঠিক তখনই ড্রেভেন বিকট হেসে উঠল। তাঁর কণ্ঠস্বরের কঁপনে চারিপাশের প্রাচীর পর্যন্ত প্রকম্পিত হলো। লুয়ার অন্তঃকরণ কেঁপে উঠল। তাঁর মুখে ছায়া পড়ল ভীতির।ঠিক তখনই ড্রেভেন নীরব পদক্ষেপে কয়েক ধাপ অগ্রসর হল। তার সম্মুখে অবস্থানরত কাঁচের বাক্সটির চারিধারে নীলাভ আলোকরশ্মি বিচ্ছুরিত হচ্ছে।
কাঁচের সেই পাত্রের অন্তরে সংরক্ষিত রয়েছে এক রহস্যময় তরল ফর্মুলা যারই কথা লিয়া বলছে।ড্রেভেন ধীর গতিতে হাত বাড়িয়ে সেটি তুলে নিল। তাঁর ঠোঁটে ফুটে উঠল এক পৈচাশিক হাসি। তারপর অস্পষ্ট কণ্ঠে উচ্চারণ করল,
“কারণ আমি K.K কে কষ্ট পেতে দেখতে চাই।এই ফর্মুলা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তার সর্বোচ্চ কেড়ে নিতে চাই।বাই দ্য ওয়ে এক্সট্রা কোরসেন ড্রেভেন লাইক করে নাহ আন্ডারস্ট্যান্ড?”
মিস লিয়া আতঙ্কে মাথা নাড়ালেন। তাঁর অন্তরে জন্ম নেওয়া বাকি প্রশ্নসমূহ নিজেই গিলে ফেলল। ড্রেভেন এবার কুটিল হেসে তাকাল। কিন্তু ঠিক সেই সময় ড্যারেন নিরাবেগ স্বরে জিজ্ঞাসা করল,
“একবারে মেরে ফেললেই তো ঝামেলা শেষ হয়ে যায় ব্রাদার।”
ড্রেভেন এবার ঠোঁট দিয়ে অবজ্ঞাসূচক ‘চ’ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করল। তারপর শীতল অথচ তীব্র স্বরে বলল,
“একবারে মেরে ফেললে মজা থাকবে কোথায়?আমি তাকে তিলে তিলে মারব।প্রথমে তার অস্তিত্বকে নিঃশেষ করব। তারপর তাঁকেই দিয়ে তাঁকে ধ্বংস করাব। মানসিকভাবে তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেব। আমি তাকে দানবীয় এক মৃ*ত্যু উপহার দেব। প্রতিটি আঘাতের প্রতিশোধ আমি নিব ফা**কিং বি*****চ K.Kaaaaaaaaaaaaaaaaaaa।”
—🥀
ইউভান এবার ধীরে ধীরে পেছন ফিরে ঘুরে তাকালো।মুহূর্তেই তার র*ক্তরঞ্জিত দৃষ্টি শীতল হলো।সে অধর ভিজিয়ে নিঃশব্দ ঢোক গিলল।তার র*ক্তমাখা হাত থেকে কলিজাটা ঠক করে মাটিতে পড়ল।র*ক্ত ছিটকে এল তার পায়ের কাছে।এরপর বিস্মৃতির অতল থেকে ভেসে ওঠা কণ্ঠে বলল,
“সুইটি……..!”
ইউভানের কণ্ঠনালী কম্পমান হয়ে উঠল। কারণ তার ঠিক সামনে আনায়ার দাঁড়িয়ে আছে। আনায়ার ঠান্ডা দৃষ্টি তার দিকে নিবদ্ধ। সে নীরবে ঠোঁট ভিজিয়ে শুকনো ঢুক গিলে এক এক পা করে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগল। এতক্ষণ অন্ধকারের আড়ালে আনায়াকে আবছা দেখা যাচ্ছিল, ধীরে ধীরে তার চেহারা পরিষ্কার হয়ে উঠল। ইউভান আনায়ার সম্মুখীন স্থির হয়ে দাঁড়ালো।সে কম্পিত হাত উঁচু করল আনায়াকে ছোঁয়ার জন্য, কিন্তু না এই হাত তো কলুষিত! নিষ্ঠুর র*ক্তে*র দাগে র*ঞ্জিত এই হাত।ইউভান এই কলঙ্কিত র*ক্ত কিছুতেই তার সানশাইনের শরীরে মাখতে দিবে না।সে তার কম্পমান হাত দ্রুত সরিয়ে ফেলল।ইউভানের চোখ হতবুদ্ধি হয়ে ছটফট করছে, কারণ আনায়ার দৃষ্টিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ সাহস সে হারিয়ে ফেলেছে।সেই মুহূর্তে আনায়া অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো,
“ই ইউভান ভাই….”
ইউভান এখন কী উত্তর দেবে? তার অন্তরে অনেক কথা গেঁথে আছে, কিন্তু গলাটা শুকিয়ে কঠিন হয়ে উঠেছে। কোনমতে সে ঠোঁট ভিজিয়ে ঝিমধরা কণ্ঠে বলল,
“সানসাইন আসলে তুই না মানে আমি…..”
বলতে বলতেই ইউভান দৃষ্টি ঘুরিয়ে আনায়ার চোখের দিকে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গে সে তার কথাগুলো গিলে ফেলল। ভ্রু দুটি সামান্য সঙ্কুচিত হলো কারণ আনায়ার চোখের মনির রং পরিবর্তিত হয়েছে। আনায়ার চোখে স্বস্তির জন্য ডাক্তার কন্টাক্ট লেন্স পরিয়েছে। এই লেন্স পরার ফলে সাধারণত কেউ স্পষ্ট দেখতে পারে না। মুহূর্তের মধ্যে ইউভানের ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠল বাঁকা হাসি। এর অর্থ এই পুরো সময়টা আনায়া কিছুই স্পষ্টভাবে দেখেনি। বিষয়টি উপলব্ধি করে ইউভানের বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হল।বুকের গভীরে শিথিলতা নেমে এলো। তখনই আনায়া বিস্ময়ের স্বরে বলল,
“ইউভান ভাই, আপনি তো এখানে?”
পরক্ষণেই ইউভান নিজের র*ক্ত*মাখা কোটটি খুলে ফেলল। ধীরে ধীরে হাতের র*ক্ত কোটে মুছে ফেলে। তারপর নিরবচ্ছিন্ন মনোভাব নিয়ে কোটটি এক পাশে ছুঁড়ে দিল। সে আনায়ার নিকটে এসে তার বাহুদ্বয় আঁকড়ে ধরে কোমল কণ্ঠে বলল,
“এই তো আমি সুইটি! হ্যাঁ আমি এখানে আছি কোনো ভয় নেই।”
আনায়া হঠাৎ করেই তার কাঁপা হাতে ইউভানের হাত ধরে ফেলল। তার নখ লাগল ইউভানের ত্বকে। আনায়া স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো। তারপর ঠোঁট খুলে পুনরায় বলল,
“আসলে আমি আপনাকে খুঁজছিলাম, ইউভান ভাই।
আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি না কন্টাক্ট লেন্সের কারণে, শুধু অস্পষ্ট ছায়া দেখে এতদূর এসেছি। আমার ভয় হচ্ছিল একা একা। আপনি কোথায় চলে গিয়েছিলেন আমাকে একা রেখে?”
আচমকা ইউভানের মস্তিষ্ক আন্দোলিত হলো।আনায়ার শেষের লাইনটা ইউভানের হৃদয়-মর্মে গিয়ে আঘাত হানে। তার হৃৎপিণ্ডে তুমুল ঝড় বইতে শুরু করে। হঠাৎ করেই ইউভান দৃঢ় হাতে আনায়াকে বক্ষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশিয়ে নেয়। আনায়া বিস্ময়ে নিঃশব্দে আবদ্ধ হয়ে রইল ইউভানের বক্ষে। হ্যাঁ, এবার ইউভানের অস্থির হৃদয় কিছুটা প্রশান্ত হচ্ছে। সে আনায়ার মস্তকে হাত বুলিয়ে একের পর এক চুম্বন করে, যদিও আনায়া তা অনুধাবন করতে পারে না। এরপর উন্মাদ প্রবাহে কণ্ঠে উচ্চারণ করে,
“আ আই’ম সরি সুইটি! আমি বুঝতে পারিনি তুই আতঙ্কিত হবি। আই’ম রিয়েলি ভেরি সরি! আর কখনো একা রেখে চলে যাব না আমি প্রমিস।”
আনায়া ক্রমে বিস্মিত হচ্ছে ইউভানের অল্প ঘটনায় এমন উন্মত্ত প্রতিক্রিয়া দেখে। এই মানুষটা এতটা প্রগলভ, এতটা ব্যাকুল এটা সে এতদিনে বুঝতেই পারেনি।আনায়া মুখ তুলে কোমল স্বরে বলল,
“ইট’স ওকে ইউভান ভাই! আপনি শান্ত হোন প্লিজ, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। অতটা উদ্বিগ্ন হবেন না, আই’ম ওকে।”
কথাগুলো বলা শেষ হওয়ার আগেই ইউভান এবার আনায়ার মুখ উঁচিয়ে আদলটি আঁকড়ে ধরে নিজের নিকটে নিয়ে আসে। আনায়া ঝাপসা চোখে ইউভানকে দেখছে। ইউভান শুকনো কণ্ঠে পুনরায় বলে,
“নট ওকে সুইটি! ইউ আর নট ওকে!তুই এখানে আসতে গিয়ে পড়ে যেতেও পারতি। তোর শরীরে আঘাত লাগত তারপর রক্ত ঝড়তো….”
এসব ভাবনায় ইউভানের দৃষ্টি রক্তিম হয়ে ওঠে। তার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। প্রচণ্ড রাগে জ্বলছে সে নিজের ওপর। তার একটুখানি অসতর্কতার জন্য যদি আনায়া আবার আহত হতো? তার উচিত হয়নি আনায়াকে নিঃসঙ্গ রেখে যাওয়া।
ইউভান তপ্ত সঙ্কল্পে আবার বলে ওঠে,
“এভরিথিং ইজ মাই ফল্ট সানসাইন।আমি বেখেয়ালির কারণে তোর আইস হার্ট হয়েছে।এগেইন সরি! আমি তোকে কষ্ট দিতে চাইনি, তবুও দিয়ে ফেলি। আমার এই গাফিলতির জন্য তোর যেকোনো অঘটন ঘটে যেতে পারত।”
মুহূর্তেই আনায়া তার কম্পিত হাত দিয়ে ইউভানের মুখ স্পর্শ করল। ইউভান শীতল দৃষ্টিতে তাকাল আনায়ার দিকে।আনায়া মৃদুস্বরে শুধালো,
“আপনার জন্য আমি আঘাত পাইনি, তাই দয়া করে নিজেকে দোষারোপ করবেন না। আপনি তো আমার একমাত্র নির্ভরযোগ্য আশ্রয় যেখানে আমি সবসময় নিজেকে নিরাপদ অনুভব করি। আপনি থাকতে আমার কিছু হতেই পারে না ইউভান ভাই।”
ইউভান নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের রক্তাক্ত যুবকের শরীরের দিকে চাইল। এরপর দৃষ্টি ফিরিয়ে গার্ডের দিকে কিছু ইঙ্গিত করল। গার্ডরা ইঙ্গিত বুঝে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। তৎক্ষণাৎ ইউভান সামনে ফিরে কোনো প্রকার বাক্যব্যয় না করে এক ঝটকায় আনায়াকে কোলে তুলে নিল।আনায়ার হৃদয় ধক করে উঠল। সে দুই হাতে ইউভানের গলা আঁকড়ে ধরে বিস্ময়ে প্রশ্ন করল,
“কি করছেন আপনি? কোলে কেন তুলছেন?”
ইউভান থেমে অঁধরের কোণে ঠান্ডা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠল,
“তুই চাইছিস আমি তোকে এই অবস্থায় একা ছেড়ে দিই?যেন তুই মুখ থুঁবড়ে পড়ে গিয়ে আবারও আঘাত পেতে পারিস?”
আনায়া বিচলিত কন্ঠে পুনরায় প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“কিন্তু….”
আনায়ার মুখের কথা কেটে দিয়ে ইউভান তুষারশীতল কণ্ঠে বলে উঠল,
“হুশশশশ!তোকে নিয়ে আর কেনো রিস্ক নিতে চায় না আমি সুইটি।”
আনায়া কী বলবে ভেবে পাইনা।তাই নীরবে জড়িয়ে রইল ইউভানের বক্ষে। ইউভানের প্রতিটি হৃদস্পন্দনের শব্দ পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে সে।নিজের মাথাটি এলিয়ে দিল সে ইউভানের চওড়া বক্ষস্থলে।প্রশান্তিতে আঁখিদ্বয় বুঁজে নিল আনায়া।কিছুক্ষণের ব্যবধানে ইউভান আনায়াকে সঙ্গে নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করল।ধীরে ধীরে পা ফেলে এগিয়ে এসে আনায়াকে বাম পাশের চেয়ারে অত্যন্ত স্নেহে বসাল। আনায়া নিস্তব্ধ ও নীরবভাবে বসে রইল।পরক্ষণেই ইউভান আনায়ার সম্মুখে এক হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল। হাতদুটো আনায়ার হাঁটুর উপর স্থাপন করে আনায়ার চোখে কিছুক্ষণ অনিমেষ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।অতঃপর চাপা আন্তরিক কণ্ঠে উচ্চারণ করল,
“তুই ঠিক আছিস তো? আইসে কোনরকম পেইন হচ্ছে নাকি?”
আনায়া মৃদু মাথা নেড়ে সম্মতির সংকেত দিল। সে ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,
“ঠিক আছে বটেই লেন্সটা আর ভালো লাগছে না। আমি স্পষ্ট কিছু দেখতে পারছি না অ্যান্ড আনকমফোর্টেবল ফিল হচ্ছে।”
ইউভানের কপালের ভাঁজ আরও ঘন হয়ে উঠল। লেন্স পরলে চোখে সামান্য অস্বস্তি অনুভব হওয়াটা স্বাভাবিক, আর আনায়ার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিষয়টি স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করে ইউভান বলল,
“লেন্সের কারণে চোখে ব্যথা করলে খুলে ফেল এখনই। তুই নিজেই খুলতে পারবি। আমি হেল্প করব তোকে?”
আনায়া মাথা দুদিকে নাড়িয়ে জানাল,
“আমি একাই পারবো। ওয়াশরুমে গিয়ে আমি খুলে আসছি।”
এ কথা বলেই ধীর পায়ে উঠে দাঁড়াল সে। ইউভানও একই সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। সজাগ দৃষ্টিতে সে আনায়ার বাহু দু’টি নিজের দুই হাতে আলতো করে আঁকড়ে ধরল। সেই আকস্মিক স্পর্শে আনায়া খানিকটা চমকে উঠল। ঠিক তখনই ইউভান গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
“একা একা যেতে পারবি না। তোকে এগিয়ে দিচ্ছি।”
“না আমি একা….”
আনায়ার কথা মাঝপথে ছিন্ন করে ইউভান দৃঢ় স্বরে জানিয়ে দিল,
“নোপপ! আমি আছি তো, সানসাইন? আমি থাকতে তোকে একা কেন যেতে হবে? চুপচাপ আমার সঙ্গে পা মেলাতে থাক।”
আনায়া আর বিতর্ক না করে নিরবে ইউভানের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে হাঁটতে লাগল। ইউভান স্নিগ্ধ আলিঙ্গনে আনায়ার বাহু ধরে কয়েক কদম এগিয়ে ওয়াশরুমের দ্বারের কাছে পৌঁছে দিল। ভেতরে প্রবেশের পূর্ব মুহূর্তে ইউভান সতর্ক করা কন্ঠে শুধালো,
“সাবধানে খুলবি ঠিক আছে? বেশি প্রবলেম হলে আমাকে ডাক দিবি। আর যদি কোনো অঘটন ঘটাস তবে এবার তোকে সোজা জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দিয়ে আসবো আমি।”
ইউভানের হুমকির সুরে আনায়ার ভ্রু সামান্য কুঁচকে উঠল। এই রহস্যময় ব্যক্তিটিকে সে এখনো সম্পূর্ণরূপে বুঝে উঠতে পারেনি। প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিয়েই তার কাজ আদায় করে নেয় । অথচ আনায়া কীই বা করতে পারে? নিঃশব্দে ওয়াশরুমের অন্তরালে ঢুকে পড়ল সে।আনায়ার অন্তর্ধানের সঙ্গে সঙ্গেই ইউভানের ঠোঁটের কোণে রহস্যময় বিদ্রূপ হাসির রেখা উদিত হলো। সে ধীরে দেয়ালের গায়ে শরীর ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
দুই হাত বুকের সম্মুখে আড়াআড়ি ভাঁজ করে ঠোঁটে বাজাতে লাগল ক্রিমিনাল সং এর টোন।বাঁশির সুর থামিয়ে সে ঝাঁঝালো কন্ঠে উচ্চারণ করল,
“তোর দেহ আগুনে দগ্ধ হয়ে ছারখার হোক,তবু তোর চোখজোড়া যেন অক্ষুণ্ণ থাকে সুইটি।কারণ তোর দেহের ক্ষতর যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে সক্ষম হলেও তোর সোনালী মনি চোখজোড়ার ক্ষত সহ্য করতে আমি অক্ষম।তোর চোখজোড়ায় যদি এক বিন্দু দহনের ছোঁয়াও পায়,তবে আমি এই জগৎ অগ্নিস্নানে নিমজ্জিত করে ছাই করে ফেলব সানসাইন।”
কথা শেষ হওয়ার মাত্রই আনায়া ওয়াশরুম থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে এলো।আনায়ার উপস্থিতি অনুধাবন করে ইউভান পাশ ফিরে চাইল।আনায়াকে এতক্ষণে সুস্থভাবে অবলোকন করতে পেরে ইউভানের হৃদয় থেকে এক বৃহৎ ভার অপসৃত হলো।ইউভান এবার ধীরে ধীরে আনায়ার সম্মুখে এগিয়ে এল।হাত দুটো উঁচু করে আনায়ার মুখাবয়বে স্থাপন করল।আনায়া ডাগর ডাগর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইউভানের দিকে।ইউভান এবার ঠোঁট আর্দ্র করে জিজ্ঞাসা করল,
“সুইটি, বেটার ফিল করছিস তো?”
আনায়া একটি গভীর নিঃশ্বাস ত্যাগ করল।দীর্ঘ দেড় ঘন্টা পর সে ইউভানকে সুস্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করতে পারছে।তৎক্ষণাৎ আনায়া অভিমানী কন্ঠে উত্তর দিল,
“আমাকে জিজ্ঞাসা করে লাভ কি? আমি যদি বলি ঠিক আছি আপনি কি শুনবেন?আপনি যতক্ষণ না ফিল করবেন আমি ঠিক আছি, ততক্ষণ আমি আপনার দৃষ্টিতে অসুস্থ।”
ইউভান নিঃশব্দে ম্লান হাসলো।এরপর আনায়ার ললাটে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিল।আনায়া শরীর কেঁপে উঠল সেই কোমল স্পর্শে।
সেই মুহূর্তে ইউভান কণ্ঠস্বর নম্র করে হুইস্কি মেশানো সুরে প্রশ্ন করল,
“আমাকে এখন দেখতে পাচ্ছিস তো স্পষ্টভাবে?”
আনায়া এবার সরাসরি ইউভানের চোখে চাহনি স্থাপন করল।ঘায়েল করা সেই দৃষ্টিতে ইউভান ঠোঁট কামড়ালো।আনায়া গলার স্বর উচ্চ করে বলল,
“হুম সবকিছু প্রত্যক্ষ করতে পারছি।আপনি যে কতটা বিকারগ্রস্ত এবং উন্মাদ সেটাও দেখতে পাচ্ছি স্পষ্টভাবে।”
ইউভান খানিকটা ঝুঁকে এল আনায়ার মুখের সান্নিধ্যে।
এতটাই নিকটে যে তাদের নিঃশ্বাস একে অপরের মুখ স্পর্শ করছে।আনায়ার মাথা পেছনে সামান্য হেলতে লাগল।তখনই ইউভান অস্ফুট কণ্ঠে শুধালো,
“প্রসঙ্গ যখন তুই তখন আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উন্মাদ।”
আনায়া নিঃশব্দে হাসল।সেই হাসি ইউভানের দৃষ্টির আড়াল হলো না।সে এবার মাথা উঁচিয়ে বলল,
“আপনি কি এখন ফিল করতে পারছেন যে আমি সুস্থ আছি?”
ইউভান তার কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস রেখে উত্তর দিল,
“পাচ্ছি!”
“আচ্ছা, তাহলে এখন আমাকে ভার্সিটি যেতে হবে।”
আনায়ার বাক্যে ইউভানের কপালে কয়েকটি ভাঁজ পড়লো।সে কণ্ঠস্বর কঠোর করে বলল,
“পাগল হয়ে গেছিস তুই?কিছুক্ষণ আগে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল আর এখন ভাবছিস তোকে আমি ভার্সিটি যেতে দিব?”
আনায়া ইউভানকে রাজি করানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হলো এবার।সে তড়িঘড়ি করে বলল,
“না, একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে।আর সেটি আজকেই দাখিল করতে হবে।প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন।তাছাড়া আপনি তো আছেনই ভার্সিটিতে,তাহলে সমস্যা কোথায় ইউভান ভাই?”
ইউভান কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করল।এরপর গম্ভীর মুখ করে আনায়ার দিকে তাকিয়ে চাপা কণ্ঠে উত্তর দিল,
“হু, ঠিক আছে।”
আনায়ার হাসির উচ্ছ্বাসে ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল,
“ঠিক আছে, তাহলে যাওয়া যাক।”
বলেই সে সামনে পা বাড়াতে উদ্যত হয়। কিন্তু ঠিক তখনই ইউভান আনায়ার হাত হ্যাচকা টান দিল।আনায়া কিছু বোঝার আগেই নিজেকে ইউভানের শক্ত বাহুর মধ্যে আবিষ্কার করল।বুকের মধ্যে জোড়ে ধাক্কা খাওয়া নিঃশ্বাস নিয়ে অবাক হয়ে চোখ বড় করে চাইল ইউভানের দিকে। আনায়ার মুখের অভিব্যক্তি পুরো চমকে যাওয়া।সে নিজের অবস্থান বুঝে উতলা কন্ঠে বলল,
“এ এই কি করছেন আপনি?আবার কোলে তুললেন কেন আমাকে?”
ইউভানের ঠোঁটে সেই চিরচেনা হাসি নিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,
“সেফটি দিচ্ছি তোকে।”
বলেই সে আনায়াকে কোলে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকলো।আনায়া এবার ছটফট করতে থাকলো।একটা সময় ক্লান্ত হয়ে তাকাল ইউভানের পানে।তারপর গলার স্বর চওড়া করে বলল,
“আপনি না একটু আগে বললেন আপনি ফিল করছেন আমি এখন ঠিক আছি?তাহলে এখন আবার কিসের সেফটি দিচ্ছেন আপনি আমাকে?
ইউভান থেমে দাঁড়ায় এক মুহূর্ত।আনায়ার মুখের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“আমার মুড সুইং হচ্ছে। একটু আগে মনে হচ্ছিল তুই ঠিক আছিস।এখন মনে হচ্ছে একদম ঠিক নেই।”
আনায়া চুপচাপ ইউভানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।এর মানে এই না যে সে ইউভানকে বোঝার প্রয়াস করছে।এটা করতে করতে সে সম্পূর্ণ ক্লান্ত,তাই এই চেষ্টা সে বাদ দিয়েছে বহু পূর্বেই।তখনই আনায়া নজর আটকায় একসারিতে দাঁড়ানো গার্ডের উপর।চারপাশের লোকজন ভূত দেখার মত তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।ইউভানের সেসব এ ভ্রুক্ষেপে নেই,সে গম্ভীর মুখ করে সামনে এগোচ্ছে।আনায়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে একদৃষ্টিতে শুধু চেয়ে রইল।হাসপাতালের বাইরে তাদের গাড়িটি স্থির দাঁড়িয়ে আছে।কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী এগিয়ে এসে সযত্নে গাড়ির দরজা খুলে দিল। ইউভান পরম মমতায় আনায়াকে গাড়ির ভেতরে বসিয়ে দিল। নিজেও গিয়ে ড্রাইভিং সিটে গা এলিয়ে বসল।গাড়ির ইঞ্জিন গম্ভীর গর্জনে সচল হলো।
আনায়া নিঃশব্দে চারপাশের প্রতিটি মুহূর্ত গভীরভাবে আত্মস্থ করছে। ঠিক তখনই দুটি কালো গাড়ি তাদের পেছনে নিঃশব্দে অনুসরণ করতে শুরু করল।বিষয়টি বুঝে উঠতে না পেরে আনায়ার চোখ কুঁচকে যায়, অন্তরে জেগে ওঠে ল আশঙ্কা। সে জিজ্ঞেস করল,
“এরা আমাদের সঙ্গে কেন আসছে?”
ইউভান নির্বিকারভাবে সামনের রাস্তার দিকে চোখ রেখে গাড়ি চালাতে লাগল। আনায়ার প্রশ্নে সামান্যতম বিচলিত না হয়ে নির্লিপ্ততায় উত্তর দিল,
“ভার্সিটিতে যাচ্ছে। এখন থেকে প্রতিদিন ওরা তোকে নিয়ে যাবে, আবার ফেরতও এনে দেবে।”
আনায়ার শরীর এক ঝটকায় সিটের পেছনে গিয়ে ঠেকে। মুহূর্তকাল নিস্তব্ধতা ছেয়ে যায় তার মাঝে।হঠাৎই, আনায়ার বুকের গভীর থেকে প্রচণ্ড ক্ষোভ গর্জে উঠে কণ্ঠ ছুঁয়ে বেরিয়ে আসে,
“আপনাকে কি আমার দেখে পাঁচ শিশু মনে হয়?”
ইউভানের ঠোঁটের কোণে এক রহস্যময় হাসি খেলে যায়। আঁড়চোখে আনায়ার দিকে তাকিয়ে নরম কণ্ঠে বলে উঠল,
“ভাবব না কেন? তুই তো শিশুই, একরত্তি বাচ্চা।”
আনায়া স্তম্ভিত! এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইউভানের দিকে। তারপর রাগ চেপে মুখ ফিরিয়ে জানালার বাইরে তাকায়।ওর গাল ফুলে ওঠে অভিমানে। বুকের গভীরে গুমরে ওঠে অগ্নিগর্ভ রাগ। এই মুহূর্তে ইউভানকে ওর কাছে গিরগিটির চেয়েও বেশি প্রতারক মনে হচ্ছে।এই তো সকালে রুম থেকে রাগ করে বের করে দিয়েছিল। আর এখন এমন আচরণ করছে, যেন সে কোনো রাজপুত্রের রক্তে জন্মানো রাজকন্যা।ভাবনার স্রোতে ভেসে যেতে যেতে আনায়া আর নিজেকে সংবরণ করতে পারল না। হঠাৎ করেই বলে ফেলল,
“আপনার আর গিরগিটির মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাই না আমি ইউভান ভাই।”
ইউভান কপাল কুঁচকে তাকাল, বিস্ময়ে জড়ানো কণ্ঠে শুধালো,
“ওয়াট ইউ মিন?”
আনায়ার কণ্ঠে তখন আগুনের মত ঝাঁজ।
“মানে একেবারেই স্পষ্ট। আপনি গিরগিটির থেকেও দ্রুত রং বদলান। সকালে রেগে আমাকে তাড়িয়ে দিলেন, আর এখন এমন করে কেয়ার করছেন, যেন আমি কেনো বাচ্চা।”
হঠাৎই ইউভান আনায়াকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল।আনায়ার মাথা গিয়ে ঠেকল তার বুকের গাঢ় উত্তাপে।কোনোরকম প্রতিক্রিয়া দেখাতে না দিয়েই ইউভান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“খুব বেশি কথা বলছিস তুই সানসাইন। এই স্পর্ধা কিন্তু দিইনি তোকে আমি, যে আমার প্রতি অভিযোগ তুলবি। আমি কখন কেমন আচরণ করি, কেন করি তার ব্যাখ্যা আমি কাউকে দিই না। এমনকি তোকে ও না।আমার প্রতিটি উষ্ণ, শীতল, নির্মম, কোমল রুপের সাথে মানিয়ে চলতে হবে তোকে।সেটা তোর ইচ্ছাই হোক অথবা অনিচ্ছায়।”
আচমকা আনায়ার মুখে একচিলতে হাসি ফুটে উঠল। কি বিচিত্র তাই না?যাকে কেন্দ্র করে এত অভিযোগ, সেই ব্যক্তির উক্তিতেই আনায়ার অধরে অবারিত হাস্য বিকশিত হয়।এ আর নতুন কী?ইউভানের সেই কঠিন স্বভাব, তীব্র রূপ, আনায়ার নিকট সুপরিচিত।বরং এই একগুঁয়ে, অস্থির আত্মাকে সে অতিশয় অনুরাগে ভালোবাসে।
সে কেমন ভালোবাসা?যে শুধু ফুল দেখে, কাঁটা দেখলেই পিছু হটে?ভালোবাসা তো তখনই পূর্ণ হয়, যখন প্রিয়জনের তপ্ত রাগকেও ভালোবাসা যায় তার কোমলতার মতো করে।শুধু ভালো দিককে ভালোবাসা নয় বরং তার অন্ধকার, ক্ষোভ, দ্বিধা সবটাকেই আপন করে নেয়াই হলো প্রকৃত ভালোবাসা।আনায়া তার ব্যতিক্রম নয়।ইউভানের উগ্রতা, মমতা উভয়ই আনায়ার কাছে সমান প্রিয়।ইউভানের খারাপ ভালো উভয় দিককে সে প্রানপনে ভালবাসে।তখনই আনায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাঁপা গলায় বলল,
“আপনি এক জটিল অঙ্ক ইউভান ভাই। এর সমাধান আদৌ কি করতে পারবো আমি?”
ইউভান কোনো উত্তরে নয়, বরং বাহুবন্ধনে আরও জোরালো করে চেপে ধরল তাকে।আনায়া তখন পুরোপুরি লেপ্টে গেল ইউভানের চওড়া বুকে।ঠিক তখনই ইউভান বিষাদস্নাত কণ্ঠে বলে উঠল,
“পারবি! তবে সেদিন হয়তো আমি থাকবো না।”
আনায়ার বুক ধক করে উঠল। অজানা এক ঘূর্ণাবর্তে ডুবে যেতে লাগল তার হৃদয়।কিসের ভয়? কিসের আশঙ্কা?হয়তো ইউভানকে হারানোর।ইউভানকে ছাড়া কোনো ভবিষ্যৎ কল্পনা করলেই প্রাণ অবশ হয়ে আসে আনায়ার।আনায়াট এভাবে নীরব হয়ে পড়া দেখে ইউভান আচমকাই জিজ্ঞেস করল,
“গান শুনবি, সুইটি?”
আনায়া লহমায় চমকে উঠল।ইউভান এমন প্রস্তাব আগে কখনো দেয়নি।সে কিছু না ভেবেই নিস্পৃহভাবে জবাব দিল,
“হুহুহু শুনব।”
ইউভান ঠোঁট চেপে হেসে ফেলল।সে জানে, তার সানসাইন কীসে খুশি হয়।এতক্ষণেও আনায়া ইউভানের বুকেই স্থির হয়ে আছে। তৎক্ষণ ইউভানের ডীপ ভয়েসে গেয়ে উঠলো,
Mummy don’t know daddy’s getting hot..
At the body shop, doing something unholy
He lucky, lucky, yeah (ooh)
He lucky, lucky, yeah (ye-yeah)
He lucky, lucky, yeah
He lucky, lucky, yeah
A lucky, lucky girl
She got married to a boy like you
She’d kick you out if she ever, ever knew
‘Bout all the – you tell me that you do
Dirty, dirty boy🌚
You know everyone is talking on the scene
I hear them whispering ’bout the places that you’ve been
And how you don’t know how to keep your business clean
Mummy don’t know daddy’s getting hot,
At the body shop, doing something unholy,
He’s sat back while she’s dropping it, she be popping it,
Yeah, she put it down slowly
Oh-ee-oh-ee-oh, he left his kids at
Ho-ee-oh-ee-ome, so he can get that
Mummy don’t know daddy’s getting hot
At the body shop, doing something unholy (woo)
আত্মার অন্তরালে পর্ব ১৭
আনায়া আশ্চর্যের চরম সীমানায় পৌঁছিয়ে ঠোঁট জোড়া ফাঁক করে উচ্চারণ করল,
“নাউজুবিল্লাহ!”