আত্মার অন্তরালে পর্ব ২৩

আত্মার অন্তরালে পর্ব ২৩
প্রীতি আক্তার পিহু

রাত তখন প্রায় দশটার ঘাঁটুনি। আকাশের কালো মেঘের ফাঁকফোঁক দিয়ে চাঁদের আলো অম্লানভাবে ঝলকাচ্ছে।জানালার ধারে স্থির অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে আনায়া।বাহিরের বাতাসে তার চুল ঘূর্ণির মতো ছড়িয়ে উড়ছে। সে শূন্যের দিকে একনিষ্ঠ দৃষ্টিতে চেয়ে ভাবনায় নিমগ্ন হয়ে আছে। পৃথিবী আজ তার কাছে অচেনা লাগছে বিশেষ করে ইউভানকে।তার বিয়ের কথাবার্তার পরেও ইউভান ঘরে কাউকে কিছু বলেনি; বরং সন্ধ্যা থেকে বাইরে গিয়েছে এবং এখনও ফেরেনি।ইউভানের এই নীরবতা আনায়ার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে।আনায়া বুঝতে পারে না ইউভানের এই অদ্ভুত আচরণের মানে কী?ঠিক তখনই তার হাত অজান্তেই ঠোঁটের কাছে উঠে আসে এবং মনে পরে যায় ইউভানের সেই অনাকাঙ্খিত ছোঁয়ার কথা।সেই স্পর্শ এখনো তার ঠোঁটের উপর লেগে আছে। চোখ বন্ধ করে সে নিঃশব্দে অনুভব করে ইউভানের ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া।
তবে হঠাৎ গাড়ির হর্নের শব্দ তার ধ্যান ভেঙে দেয়। তাড়াহুড়ো করে সে বেলকনির নিচে তাকিয়ে বলল,

“ইউভান ভাই!”
আনায়ার হৃদয় ধকধক করতে লাগে। ইউভান এসেছে ভেবে সে অস্থির হয়ে ঘর ত্যাগ করে নিচে নেমে দেখে গাড়ি সত্যিই দাঁড়িয়ে আছে,কিন্তু ইউভান নেই। আনায়া ব্যাকুল চোখে ইউভানকে খুঁজে।সে কিছু বুঝতে পারার আগেই হঠাৎ পিছন থেকে এক জোড়া হাত তার মুখ চেপে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় হয়ে যায় তার এবং ভয়ে সে হাত-পা ছুঁড়ে ধস্তাধস্তি করে।ঠিক তখনই আনায়ার কানে ভেসে আসে গম্ভীর পরিচিত কণ্ঠস্বর,
“হুশশশশ! আমি।”
কণ্ঠস্বর শুনে আনায়ার সন্দেহ দূর হয়ে যায়; সে নিশ্চিত হয় এটা ইউভান। কিন্তু ইউভানের আচরণ তার বোধগম্য হয় না। ইউভান একপ্রকার জোর করে তাকে গাড়ির ভিতরে টেনে বসায়। সঙ্গে ড্রাইভিং সিটে নিজেও উঠে বসে।আনায়া ইউভানের পানে চেয়ে হতবাক হয়ে প্রশ্ন করল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনি কি পাগল হয়ে গিয়েছেন? আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
ইউভান নীরস ভঙ্গিতে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল,
“বেঁচতে নিয়ে যাচ্ছি তোকে।”
এমন কথায় আনায়া হা হয়ে তাকায় ইউভানের দিকে।তারপর বিস্মিত কণ্ঠে বলে,
“মজা করছেন আপনি আমার সঙ্গে? রাতের অন্ধকারে অন্যের বউকে কিডন্যাপ করতে লজ্জা লাগে না?”
আনায়ার কথায় ইউভান ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
“শুধু তো কিডন্যাপি করেছি, তবে বাসর করতে লজ্জা লাগবে না আমার। ওসব ফাকিং লাজ্জা ইউভানের নেই।”
আনায়া থতমত খেয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে দাঁত চেপে বলল,
“এজন্যই তো বলি, নির্লজ্জ আপনি।”
ইউভান সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভিং করতে করতে বলল,

“আই নো, সুইটি।”
সঙ্গে সঙ্গে আনায়া মুখ ঘুরিয়ে জানালার বাইরের দিকে তাকায়। ইউভানের ক্রমাগত এই নির্লজ্জ আচরণে তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যেতে শুরু করছে। বিরক্তি এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নিয়ে সে কয়েক মুহূর্ত নীরব থাকে। কিন্তু দীর্ঘ স্থিরতা অচল রাখার ক্ষমতা হারিয়ে সে পুনরায় বলল,
“বাসায় আমার বিয়ের কথা হচ্ছে আপনি জানেন?”
“সো ওয়াট?”
ইউভানের এভাবে স্বাভাবিক ও নীরস স্বরে উত্তর দেওয়ায় আনায়ার ক্রোধ হুহু করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। হঠাৎ সে এক অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অপ্রত্যাশিত কাজ করে ফেলে। ড্রাইভিং অবস্থায় সে ইউভানের কলার দৃঢ়ভাবে ধরে ক্রোধিত কণ্ঠে বলল,

“মানে? এই সো ওয়াট মানে কী? হ্যাঁ?”
আনায়ার এই আচরণে ইউভান অল্পতেই গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারায়। স্টিয়ারিং অবাধ্যভাবে দুলে গাড়ি অল্পবিস্তর বাঁক নেয়। ইউভান কোনোমতে স্টিয়ারিং সমন্বয় রেখে সতর্ক স্বরে বলল,
“সুইটি, কী করছিস? এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।”
কিন্তু আনায়া ছাড়ল না বরং ধাক্কা দিয়ে ইউভানের কোলের উপর উঠে বসে চোখে চোখ রেখে বলল,
“হোক এক্সিডেন্ট!মরে যান আপনি।”
আনায়ার ছড়ানো চুল ইউভানের চোখ-মুখ ঢেকে দিচ্ছে,ফলে ড্রাইভিং করতে অতিশয় অসুবিধা হচ্ছে তার। ইউভান এবার আনায়ার রাগী ও অভিব্যক্তিময় মুখের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা স্বরে উচ্চারণ করল,
“আমি মরে গেলে তোর কী হবে?”
আনায়া রাগে হুঁহুঁ করে বলল,
“কেন, বিয়ে করে ফেলবো অন্য কারও সঙ্গে।”

আনায়ার কথায় ইউভান বাঁকা হেসে এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে, অন্য হাতে আনায়ার কোমর দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে নিজ কাছে টেনে আনল। ফলে তাদের মধ্যে এক ইঞ্চি দূরত্বও রইল না।মুহূর্তে দুজনের নিঃশ্বাস মিলে একাকার হয়ে যায়। তখনই ইউভান ঝুঁকে কানের কাছে ঠান্ডা কণ্ঠের ভয়ংকর কথা বলল,
“পাত্র বেঁচে থাকলে তো বিয়ে করবি।”
এ কথা শুনে আনায়ার বিস্ময়ের চোখ বিস্ফোরিত হয়ে যায়।মুখ উচিয়ে সে কণ্ঠস্বর কাঁপিয়ে বলে,
“কীহহহ! খুন করবেন নাকি আপনি?”
ইউভান সামনের দিকে তাকিয়েই ঠোঁট বাঁকিয়ে জবাবে বলল,
“প্রয়োজনে তাই করব।”
“ক’জনকে খুন করবেন আপনি?”
“যে কয়জন তোকে বিয়ে করতে চাইবে।”

ইউভানের এই ভয়ঙ্কর কথায় আনায়া স্তম্ভিত হয়ে যায়। অতঃপর সে বিস্ময়ে বলল ,
“যারা খুন করে তাদেরকে কি বলে জানেন তো?”
ইউভান নিঃশব্দে আনায়ার চুলে মুখ ডুবিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস টেনে বলল,
“ক্রিমিনাল!”
মুহূর্তের মধ্যে আনায়ার ঠোঁটে রহস্যময় হাসি ফুটে ওঠে। ধীরে সে মুখটি ইউভানের কানের কাছে নিয়ে এসে ফিসফিস করে গেয়ে উঠে,
“But mama I’m in love with a criminal.”
ইউভান অধর প্রসারিত করে দৃঢ়ভাবে আনায়াকে টেনে নিজের প্রশস্ত বুকে মিশিয়ে নেয়। তার বুকে মাথা রেখে আনায়া আবেশে আঁখিদ্বয় বুঁজে নেয়।গভীর অন্ধকারে গাড়ি এগিয়ে চলল নির্জন পথে আর নিস্তব্ধতার মাঝে শুধু দু’টি নিঃশ্বাসের প্রতিধ্বনি বন্দি রইল গাড়ির অন্তরালে।

একই সময়, চারপাশে অন্ধকারের ঘন স্তর নেমে এসেছে।চট্টগ্রামের রাতের রাস্তা-ঘাটও শুনশান।কালো মেঘে মুড়ানো আকাশের নিচে নির্জন রাস্তার বুক চিরে ধীর পায়ে হাঁটছে এক ব্যক্তি। তার পরনে কালো হুডি যার টুপি মাথা অব্দি টেনে দেওয়া ফলে,ব্যক্তিটির আসল মুখাবয়ব বোঝা যায় না।তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি চারদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে শিকারির খোঁজে।তখনই তার দৃষ্টি আটকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির উপর।মেয়েটির পরনের লালচে শাড়ির আঁচলটা কোমরে আঁটসাঁটভাবে টেনে রাখা।বয়স বড়জোর বিশ-পঁচিশ হবে।মেয়েটি ব্যক্তিটিকে দেখে সামনে এগিয়ে এসে দাঁত বের করে হেসে বলল,

“কি সাহেব লাগব নাকি?”
ব্যক্তিটি নিঃশব্দে মেয়েটির উপরে থেকে নিচ পর্যন্ত ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে নেয়।তখনই শিকারির চোখে ঝলসে উঠে এক ধরনের নেশায়। সে বাঁকা হাসি দিয়ে আওড়াল,
“যাবে আমার সাথে?”
মেয়েটি মুখের ভেতর পান চিবোতে চিবোতে হালকা ঢঙে জবাব দিল,
“যাওয়া যায়,কিন্তু ট্যাকা অনেক লাগবো কমে হইব না।”
ব্যক্তিটি ঠোঁটের কোণে আরও চওড়া হাসি এনে ধীরে ধীরে বলল,
“যত চাইবি তত দিব। শুধু এখন আমার সাথে চলো।”
এই উত্তর শুনে মেয়েটি অবিশ্বাস চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। অতঃপর বিস্মিত কন্ঠে উচ্চারণ করল,
“সত্যি কইতাছেন?যত চাইব তত দেবেন মোরে?”
“আমি কখনো কথার খেলাফ করি না।”

ব্যক্তিটির শক্ত কণ্ঠের আওয়াজে মেয়েটি চুপ হয়ে যায়।সে নিঃশব্দে ব্যক্তিটির পেছনে পেছন দিয়ে একটি কালো রঙের গাড়িতে উঠে বসে।মুহূর্তেই গাড়ি চলতে শুরু করে নির্জন রাস্তা দিয়ে।কিছুক্ষবাদ মেয়েটি আঁচলটা আঙুলে পাকাতে পাকাতে প্রশ্ন করল,
“কই লইয়া যান, সাহেব?”
ব্যক্তিটি সামনের দিকে তাকিয়ে নিলিপ্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিল,
“বাসায়।”

মেয়েটি আর কথা বাড়ায় না কারণ প্রায় সে কাস্টমারদের বাসায় যায়।এর কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে থামল একটি নির্জন বাংলোর সামনে। মেয়েটি গাড়ি থেকে নেমে চারদিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয় অজানা আতঙ্কে। তবু সে নিঃশব্দে নেকের পেছনে পেছনে বাংলোর ভেতরে প্রবেশ করে।একটু রুমে এসে মেয়েটি দেখে কোনো আসবাবপত্র নাই শুধু একটি পুরোনো খাট আর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আর কিছু ব্যাগপত্র।হঠাৎই তার মনে কেমন অজানা ভয় ডানা বাধঁল।আতঙ্কে মেয়েটি খাটের পাশে গিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে পড়ে।নেক দরজাটি বন্ধ করে মেয়েটির দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে,

“কী ভয় পাচ্ছ?
মেয়েটি চারদিক তাকিয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলল,
“না মানে তাড়াতাড়ি কাজ কইরা ছাইরা দেন সাহেব।আমার আবার যাইতে হইবো।”
নেক বাঁকা হেসে হাতে মোটা দড়ি নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে আসে।এটা দেখে মেয়েটি কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে বলল,
“এ এ একি করতাছেন সাহেব?”
নেক নিঃশব্দে টেবিলের পাশে রাখা টাকার ব্যাগ টেনে সামনে ফেলে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,
“আমি যেভাবে বলছি সেভাবে করলে সবগুলো টাকা তোমার।”
মেয়েটি মুহূর্তের দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যায় টাকা দেখে।কী করবে সে এখন?সামান্য দ্বিধার পর অবশেষে প্রস্তাব মেনে নিয়ে চোখের ইশারায় নেককে সম্মতি জানায়। সে জানেও না, তার জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ংকর মৃত্যু।নেক আর দেরি না করে মেয়েটির হাত-পা শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেঁধে দেয়।আর মুহূর্তেই অপেক্ষা না করে নেক ঝাপিয়ে পরে মেয়েটির দেহের উপর।প্রথমে সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল, কিন্তু আচমকাই নেকের আচরণ বদলে যায়।মেয়েটি অনুভব করে নেকের তীক্ষ্ণ দাঁত তার গলার চামড়া ভেদ করে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ব্যথায় কাতর হয়ে সে আর্তনাদ করে উঠল,

“সাহেব! আমাকে ছাইড়া দেন। আমার টাকা লাগবো না।”
নেক মাথা উঁচু করে তার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা স্বরে বলল,
“হুশশশশশ!বেশি কথা নেকের একটুও পছন্দ নাহ।”
বলেই নেক এক ঝটকায় মেয়েটির গলায় দাঁত বসিয়ে মাংস টেনে ছিঁড়ে আনে।ব্যথার তীব্রতায় মেয়েটি চোখ বড় বড় করে চিৎকার দিয়ে উঠলো,
“আআআআআআআ!ছাইড়া দেন আমারে।”
কিন্তু নেকের কানে কোনো আর্তনাদ পৌঁছায় না,বরং সেই আর্তনাদ তাকে আরও হিংস্র করে তুলে। গলা ছাড়িয়ে সে এবার কাঁধের মাংস কামড়ে ছিঁড়ে মুখে নিয়ে চিবোতে লাগে।ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়া কাঁধ থেকে মাংস খুলে অভ্যন্তরীণ শিরা-উপশিরা বেরিয়ে এসেছে।মুহূর্তেই তীব্র ব্যথায় মেয়েটির শিরদাঁড়া বেয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নেমে আসে। ঘাড়ের পাশের শিরা ফেটে গিয়ে ছিটকে র*ক্ত বের হচ্ছে।দড়ির শক্ত বাঁধনে মেয়েটির কবজির চামড়া ফেটে র*ক্ত চুইয়ে পড়ছে।সে এবার সাহায্যর জন্য চিৎকার দেয়,

“বাঁচাও বাঁচাও!কে আছো আমায় বাঁচাও।”
নেক এবার দাঁতে দাঁত চেপে ভয়ংকর কণ্ঠে বলে উঠলো,
“বলেছিলাম না নেক বেশি কথা বলা পছন্দ করে না?
এবার তার ফল ভোগ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যা।”
মেয়েটির দৃষ্টি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে।নেক তীব্র ক্রোধ দাঁত দিয়ে মেয়েটির ঠোঁট ছিঁড়ে ফেলল।দাঁতের চাপ এত গভীর যে তার ঠোঁট আলগা হয়ে মাংস খসে পরে।মেয়েটির গলা থেকে তখন শুধু গোঙানি বেরোচ্ছে।এরপর ধীরে ধীরে নেক মেয়েটির বক্ষের মধ্যবর্তী স্থানে দাঁত বসিয়ে চামড়ায় বিদীর্ণ করে আনে।ক্ষতস্থান থেকে নির্গত র*ক্ত সে জিহ্বা দ্বারা লোহন করে পুনরায় কামড় বসিয়ে বক্ষমাংস ছিঁড়ে ফেলে।নেকের প্রতিটি আঘাতে মেয়েটির নিঃশ্বাস ক্রমগত ক্ষীণ হচ্ছে কিন্তু নেকের নির্মমতা থামছে না।সে এবার উঠে দাঁড়িয়ে হাতে ধারালো ছুরি তুলে নিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,

“কী হলো চিৎকার কর?আরও জোড়ে! নেক তোর চিৎকারের আওয়াজ শুনতে চাচ্ছে।”
চোখ ভরে অশ্রু আর যন্ত্রণার চিৎকারে মেয়েটি শেষবারের মতো মুক্তি চাইলো।কিন্তু নেক হাতে থাকা ছুড়ি দিয়ে মেয়েটির পেটে পৈচাশিক আ*ঘা*ত হানে এবং হাত দিয়ে পেটের মাংস দু’দিকে আগলা করে।ফলে পেটের মাংস দুদিক ঝুলে গিয়ে মাঝখানে গর্তের মতো ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়।নেক সেই ফাঁকা স্থানে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে ভেতর থেকে কিডনি বের করে মুখগহ্বরে গুটিয়ে নিয়ে তৃপ্তির সহিত খায়।মেয়েটি আর ব্যথায় কাতরায় না, কারণ তার দেহ এখন প্রাণহীন।ওই যে কথায় আছে,লোভে পাপ আর পাপে মৃ*ত্যু ;মেয়েটিও টাকার লোভে পরে আজ নিজের প্রাণ হারায়।
অপরদিকে, নেক থামে না বরং একের পর এক বীভৎস আঘাত হানে ঘাড়, বক্ষদেশ বরাবর।তার মুখমণ্ডল জুড়ে তাজা রক্ত, দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা মাংসখণ্ডের উপস্থিতিতে তাকে আরো বীভৎস দেখাচ্ছে।মেয়েটির নিশ্বাস থেমে গিয়েছে তবুও নেক সেই মৃতদেহর উপর নিষ্ঠুর ধ*র্ষ*ণ চালায়।কয়েক ঘন্টা ধ*র্ষ*ণ করার পরে নেক ভয়ংকর কণ্ঠে বলল ,

“এত সহজে মরে গেলে কীভাবে?নেক এত সহজ মৃত্যু একেবারে পছন্দ করে না।”
বলেই নেক উম্মাদের ন্যায় উচ্চস্বরে হাসতে থাকে।সে এবার হাতে চাপটি উঠিয়ে নিয়ে মেয়েটির যৌ*ঙ্গ বরাবর কোঁপ মারে।সঙ্গে সঙ্গে যৌ*ঙ্গের মাংস থেঁতলে সেখান থেকে সাদা-লাল মিশ্রিত নালা নিঃসৃত হয়।কাটা অংশের ফাঁক দিয়ে গা ছমছমে লালচে মাংস দেখা যাচ্ছে।নেক মুখ নামিয়ে সেই লালচে মাংস কামড়ে ছিঁড়ে আনে।ফলে যৌ**না**ঙ্গর খাবলা খাবলা মাংস এক দিকে ধলে পড়ে।নেক পুণরায় মেয়েটির যৌ*** অভ্যন্তরীণে নিজের পু***ঙ্গ প্রবেশ করিয়ে দেহগত ক্ষুধা নিবৃত্তি করতে থাকে।কিছুক্ষণ বাদ সে উঠে দাঁড়িয়ে চাপটি দিয়ে মেয়েটির হাত,পা এবং মাথা শরীর থেকে আলাদা করে নেয়।মুহূর্তেই রক্তনালির তীব্র ছিন্নতায় রক্তধারা দেয়ালের গায়ে ছিটকে পড়ে।এরপর সে চাপাতির ধারালো ফলায় মেয়েটির স্ত**নদ্বয় নিঃসংশয়ে কাটে ফলত, স্ত*নের চামড়াছিঁড়ে গিয়ে গভীর থেকে র*ক্ত নির্গত হয়।নেক পৈচাশিক আনন্দের সাথে সেই র*ক্ত জিহ্বা দিয়ে লোহন করে বলে,

“মেয়েদের উষ্ণ রক্তের স্বাদ আমার খুবই পছন্দ।কিন্তু সেটা যদি হয় আমার বেবিডল আনায়ার রক্ত?তাহলে?”
আনায়ার কথা মনে পড়তেই নেকের চোখে উন্মাদনা জেগে উঠল।সে উম্মাদ চোখে মেয়েটির মৃতদেহ দিকে তাকায়।অতঃপর পুনরায় সে মেয়েটির ছিন্নবিন্ন যৌ*ঙ্গে ধ*র্ষ*ণ করে যতক্ষণ পর্যন্ত না তার দেহের ক্ষুধা নিবারণ হয়।ধর্ষণ অব্যাহত রেখে নেক পাগলের ন্যায় বলতে থাকল,
“আনায়া বেবিডল আই ওয়ান্ট ইউ।আই ব্যাডলি ওয়ান্ট ইউ।”

নিজের দেহের ক্ষুধা মিটিয়ে অবশেষে নেক উঠে দাঁড়ায় এবং তার ঘন কালো ব্যাগের অভ্যন্তর থেকে তরল লিকিউড জার নিরাবেগ ভঙ্গিতে বের করে আনে।অতঃপর নেক তরল লিকিউড মেয়েটির র*ক্তা*ক্ত দেহংশের উপর ঢেলে দেয়।তৎক্ষণ বুদবুদ ফুটতে ফুটতে চামড়ার কিছু অংশ খসে পড়ে অভ্যন্তরীণের মাংস ধীরে ধীরে উত্তাপে ঝলসে উঠল।র*ক্ত উত্তপ্ত গরমে টগবগ করে ফুটছে আর চারপাশে গলিত মাংসের বীভৎস গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।নেক চোখ বন্ধ করে সেই গন্ধের ঘ্রাণ নিয়ে অধর প্রসারিত করে হাসে।লিকুইডের প্রতিক্রিয়ায় মেয়েটির দেহের মাংস গলে গিয়ে দেহের হাড়ও গলিত হয়ে বুদবুদ ধোঁয়া বের হয়।নেক তাকিয়ে রইল গলিত হয়ে যাওয়া শরীরটার দিকে, আর হালকা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“শিকারীর মৃত্যুতে আজ নেক বেশ আনন্দ পেয়েছে।”

প্রায় ঘণ্টাখানিক যাত্রা শেষে ইউভানের গাড়ি থামে এক বনের প্রান্তে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গেই আনায়া ইউভানের কোলে থেকে সরে নিজের সিটে বসে পড়ে। চারপাশে শুধুই ঝোপঝাড়, বৃক্ষরাজি এবং দূর থেকে ভেসে আসছে সমুদ্রের গর্জন। হয়তো তারা সমুদ্রের খুব কাছাকাছি। আনায়া পাশ ফিরে কণ্ঠে সংশয় মেশানো সুরে বলল,
“এটা কোথায়, ইউভান ভাই?”
ইউভান কোনো উত্তর দেয় না। কেবল গাড়ির পেছনের আসন থেকে একটি শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে আনায়ার দিকে বাড়িয়ে নিস্তব্ধ কণ্ঠে বলল,
“এটা পরে নে। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।”

আনায়া কিছু বলার আগেই ইউভান গাড়ি থেকে নেমে যায়। বেচারি আনায়ার আর করার কী? কিছুক্ষণ পরে দ্বিধা ভেঙে সে ব্যাগ খুলে দেখে সেখানে রাখা একটি কালো গাউন। তার মনে অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরে, ইউভান এসব কেন করছেন? অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে জামাটি বদলে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়য়। ইউভান পিছন ফিরে আনায়াকে দেখেই কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। বুকের ভিতর ধুকপুক করা হৃদপিণ্ডও থেমে যায় কিছু সেকেন্ডের জন্য। কালো পোশাকে আনায়ার শরীরের আকৃতি অপার্থিব সৌন্দর্যে ফুটে উঠেছে। এলোমেলো কালো চুলগুলো অন্ধকারের সঙ্গে মিশে তাকে আরও রহস্যময়ী লাগছে।তখনই আনায়া ভ্রুঁ কুঁচকে ডেকে উঠল,

“বলছি শুনছেন?”
ইউভান হঠাৎ ধ্যানভঙ্গ হয়ে কয়েকবার পলক ফেলে বলল,
“শুনছি, ম্যাডাম।”
আনায়া এগিয়ে এসে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে বলল,
“বললেন না তো, এসব কিসের জন্য?”
ইউভান কোনো উত্তর না দিয়ে পেছন থেকে এসে পকেট থেকে কালো ফিতা বের করে আনায়ার চোখে বাঁধল। সঙ্গে সঙ্গে আনায়া হকচকিয়ে বলল,
“এটি কী করছেন?”
ইউভান আনায়ার কানের কাছে হালকা কণ্ঠে ফিসফিস করে আওড়ালো,
“হুশ! কোনো শব্দ নয়। সারপ্রাইজ!”

অবাক আনায়া মুহূর্তেই অনুভব করে, যে সে বাতাসে ভেসে যাচ্ছে। ইউভান তাকে কোমরে জড়িয়ে কোলে তুলে নিয়েছে। আনায়া আশ্চর্য হয়ে বলল,
“এই কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ছাড়ুন বলছি।”
“শাট আপ! আর একবার আওয়াজ করলে আমি জঙ্গলের মধ্যে একা ফেলে চলে যাব।”
ইউভানের ধমক পেয়ে আনায়া নিশ্চুপ হয়ে যায় কারণ তার ইউভানের প্রতি কোনো আশা-ভরসা নেই। দুই হাত অবচেতনে ইউভানের ঘাড়ে আঁকড়ে ধরে সে। অসংখ্য গাছের ফাঁক, শেকড়ের উপর দিয়ে, ঝোপঝাড় সরিয়ে ইউভান এগিয়ে চলল গন্তব্যের দিকে। দীর্ঘ পথচলার পর অবশেষে তারা পৌঁছাল এক প্রাচীন প্রাসাদের সামনে। প্রাসাদটি দেখলেই মনে হচ্ছে শতবর্ষ ধরে একা দাঁড়িয়ে আছে। দেয়ালজুড়ে লতাগুল্ম ছড়িয়ে, কোথাও কোথাও ফাটল ধরে গাছ জন্ম নিয়েছে। চারপাশ থেকে পেঁচার ডাক ও ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ ভেসে আসছে।ইউভান নিঃশব্দে প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশ করে আনায়াকে কোল থেকে নামায়। আনায়া শ্বাসপ্রশ্বাস সামলে কোনোমতে জিজ্ঞাসা করে,

“চলে এসেছি আমরা?”
ইউভান ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত হাসি রেখে আনায়ার চোখ থেকে ফিতার বাঁধন খুলে দিয়ে বলল,
“হু!এসেছি।”
আনায়া ধীরে ধীরে চোখ খুলে চারপাশে নজর ঘোরায়। প্রথমে সবকিছু অস্পষ্ট মনে হলেও ক্রমে তা স্পষ্ট হয়ে উঠে। চারপাশে তাকাতেই তার দৃষ্টি বিস্ফোরিত হয়ে যায়। আনায়ার চোখ আটকে যায় মাঝখানে স্থাপিত এক বিশাল সিংহাসনের দিকে। সিংহাসনটি সম্পূর্ণরূপে মানব হাড় দিয়ে নির্মিত।সিংহাসনে হাতলের ওপরে শুকনো কঙ্কালের হাতের পাতার অবয়ব এমনভাবে স্থাপন করা, যে দেখে মনে হবে কোনো মৃত হাত এখনো দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছে সেই আসনকে।হাড়ের ফাঁকফোকরে কোথাও কোথাও শুকনো রক্তের দাগ সাঁটানো। সিংহাসনের শীর্ষাংশে সজ্জিত সিংহের দাঁত এবং চারপাশে খোদাই করে বসানো ১০–১২টি মানুষের খুলি। সিংহাসনের পৃষ্ঠে ছড়িয়ে আছে মরীচিকার মতো মুছে যাওয়া কালো গোলাপে। আনায়ার পায়ের তলে থাকা শুষ্ক কালো গোলাপগুলি থেকে মৃত সুবাস ভেসে আসছে।

এসব দেখে আনায়ার শ্বাস রুদ্ধ হয়। এই ভয়ঙ্কর দৃশ্যের মধ্যে পাশ থেকে ভেসে আসে এক কণ্ঠস্বর,
“কেমন লাগল সারপ্রাইজ?”
আনায়া চমকে ঘুরে তাকিয়ে, আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল,
“এ-এ সব কি সত্যিই ?”
ইউভান ঠোঁটের কোণে হালকা বাঁক নিয়ে হাসি দিয়ে জবাব দিল,
“না সবকিছু আর্টিফিশিয়াল আমার পছন্দের।”
ইউভানের কথায় আনায়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।সে কি না কি ভেবে ফেলেছিল।আবারও চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,

“আপনার পছন্দ সত্যিই ব্যতিক্রমী, অদ্ভুত এবং রহস্যময় ইউভান ভাই।”
প্রতিউত্তরে ইউভান হিমশীতল কন্ঠে উচ্চারণ করল,
“আর আমার রহস্যময় পছন্দের সবচেয়ে দুর্বোধ্য উদাহরণ হলি তুই।”
আনায়া সামান্য ভ্রুঁ সঙ্কুচিত করে। ইউভানের কঠোর কথার অর্থ বোঝার চেষ্টা করে সে, তবে আগের মতোই ব্যর্থ হয়। ঠিক তখনই ইউভান আনায়াকে বিস্মিত করে তার সামনে এসে হাত বাড়িয়ে বলল,
“ওয়েলকাম টু মাই ডার্ক ওয়ার্ল্ড, মাই ব্ল্যাক কুইন।”
আনায়া স্থির দৃষ্টিতে ইউভানের প্রসারিত হাতে দিকে তাকায়। এরপর সে ধীরে তার কম্পিত হাত রাখে ইউভানের হাতের উপর। ইউভান হালকা হেসে তার হাত শক্ত করে ধরে এগিয়ে আসে সিংহাসনের দিকে।তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে পায়ের নিচের শুকনো ফুল মচমচ শব্দ ভাঙছে।সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে আনায়া সামান্য দ্বিধান্বিত হয়ে প্রশ্ন করে,

“আমি কি সত্যিই এখানে বসব?”
ইউভান এবার আনায়ার চোখে গভীর দৃষ্টি চেপে ধরে বলল,
“হ্যাঁ! এই সিংহাসন তুই ব্যতীত অসম্পূর্ণ।”
বলেই ইউভান আনায়ার হাত ধরে তাকে সেই ভয়ঙ্কর সিংহাসনে বসায়। বসার সঙ্গে সঙ্গে আনায়ার শরীরজুড়ে শীতল স্রোত প্রবাহিত হয়।আনায়া একনিষ্ঠ দৃষ্টিতে কেবল চেয়ে রয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘড়ির কাঁটা বারোটায় পৌছায়। ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে ইউভান সিংহাসনের পাশে রাখা এক অলংকৃত কালো বাক্স থেকে হাত বাড়িয়ে এক মুকুট বের করে আনায়ার সামনে ধরে। কালো হীরার অতুলনীয় ভয়ংকর সৌন্দর্যে মোড়া মুকুটটি দেখে আনায়ার চোখ বিস্ময়ের ভরে যায়। হ্যাঁ, এটি সেই হীরা যেটি ইউভান ২০০ কোটি টাকার বিনিময়ে কিনেছিল।নিঃশব্দতা ভেঙে ইউভান বলল,
“প্রস্তুত তো আমার অন্ধকার রাজ্যের রানী হতে?”

ইউভানের কথায় আনায়ার হৃদয়ে অদ্ভুত উত্তেজনার ঢেউ ওঠে । সে কী করবে, তা নিজেও জানে না।তবে ইউভানের উপহার প্রত্যাখ্যান করার সাধ্য তার মাঝে নেই।হাজার রাগ, অভিমানের মাঝেও ইউভানের প্রতি তার ভালোবাসা একবিন্দুও কমেনি বরং ইউভানের আচারণে তা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।নিজের অজান্তেই সে ইউভানের মায়াজালে বাঁধা পড়ে। হঠাৎ তার অধরজুড়ে অচেনা হাসি ফুটে উঠে;এই হাসির কারণ অজানা। সমস্ত দ্বিধা ভেঙে সে পায়ের উপর পা তুলে সিংহাসনের সেই কঙ্কালের হাতলের উপর তার হাত রেখে বলল,
“প্রস্তুত আমি।”

আনায়ার সম্মতিতে ইউভান রহস্যময় হাসি দিয়ে মুকুটটি তার মাথায় পরিয়ে দেয়। মুকুটের ভারে আনায়ার আত্মা অব্দি কেঁপে উঠল।তার নিখাদ সৌন্দর্য মুকুটের সঙ্গে মিলেমিশে অতীন্দ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইউভান সেই সৌন্দর্যের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অস্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“এখন থেকে তুমি আমার অন্ধকার সাম্রাজ্যের রানী। এই রাজত্বে আমি রাজা, আর তুমি রানি।”
‘তুমি’ সম্বোধন শুনে আনায়ার হৃদয় তীব্রভাবে কেঁপে উঠে। সে অবাক দৃষ্টিতে চাইল ইউভানের গভীর সমুদ্রের ন্যায় নীল চোখের দিকে। সেই চোখ এখনও তার দিকে অটল। আচমকা ইউভান হাঁটু গেড়ে বসে আনায়ার পা নিজের হাঁটুর ওপর রাখে। এহেন কৃত্যে আনায়া হতভম্ব হয়ে তাড়াহুড়া করে বলল,
“এ কী করছেন আপনি?”

ইউভান জবাব দিল না; বরং আনায়াকে বিস্মিত করে দিয়ে একজোড়া হীরের জুতা তার পায়ে পরিয়ে দিল। আনায়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। বিস্ময়ের ঢেউ তার চোখ-মুখে ছড়িয়ে পড়ে। সে বলল,
“এসব কিসের জন্য?”
ইউভান নিঃশব্দে আনায়ার পায়ে ঠোঁট স্পর্শ করে মোলায়েম কণ্ঠে উত্তর দেয়,
“তোমার জন্য।”
সঙ্গে সঙ্গে আনায়া চোখ বুঁজে নেয়। ইউভানের এই আচরণে তার হৃদয়ে যে ঝড় বইছে, তার দায়ভার কার? নিঃসন্দেহে ইউভানের। সে এবার শুকনো ঢুক গিলে বলল,
“শুনুন, আমাকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করবেন। আপনার মুখে ‘তুমি’ ডাক কতই না অদ্ভুত শোনায়।”
ইউভান আনায়ার চোখে চোখ রেখে কন্ঠের স্বর আরও গাঢ় করে বলল,

“অভ্যাস করে নাও। এই মুহূর্ত থেকে আরও অদ্ভুত কথা এবং অদ্ভুত কার্যকলাপের মুখোমুখি হতে হবে সুইটি।”
আনায়া ফ্যালফ্যাল চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে, দৃষ্টি নামিয়ে পায়ের জুতার দিকে মনোযোগ দিল। কাঁচের উপর হীরার আলো তার পায়ের সৌন্দর্যকে আরও দীপ্তিময় করে তুলেছে। হঠাৎ তার মনে প্রশ্ন জাগে; এত উপহারের টাকা ইউভান কোথায় পেল? তার জানা মতে, ইউভান তো কোনো প্রফেশনালি রকস্টার নয় বরং সাধারণ প্রফেসর। কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে সে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলল,

“আপনি এত মূল্যবান উপহার কেনার টাকা কোথা থেকে পেলেন?”
আনায়ার অদ্ভুত প্রশ্নে ইউভান কপাল কুঁচকে ওঠে। বিরক্ত কণ্ঠে সে বলল,
“এসব কী আজগুবি প্রশ্ন করছিস? আমাকে দেখে কি ফকির মনে হয়?”
আনায়া সন্দেহপূর্ণ চোখে তাকিয়ে উচ্চারণ করল,
“শুনুন, এসব বলে কথার গতি ঘুরানোর চেষ্টা করবেন না। আপনি তো সাধারণ প্রফেসর তাই না?”
“আমি কে, সেটা জানতে হলে তোকে আরও গভীরে ঝাঁপ দিতে হবে।”
ইউভানের প্রতিউত্তরে আনায়ার চোখ গোল গোল হয়ে যায়। সে এখন ইউভানকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে।অতঃপর সে হুশিয়ারি কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে,

“সত্যি বলুন তো, আপনি কি কোনো গ্যাংস্টার বা মাফিয়া?”
বিরক্তিতে ইউভান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ওসব দুই টাকার গ্যাংস্টার-মাফিয়ার ইউভানের জুতার সমান। বিজনেসের সুবিধার্থে আরও আমার তাদের হায়ার করতে হয়।”
আনায়া আরও কৌতূহল ও আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
“মানে? আপনারও কি বিজনেস আছে? কোথায়? কী ধরনের?”
“তোর মতো ঘাড়ত্যারাদের পিস-পিস করে কাটার বিজনেস করি আমি।”
ইউভানের এহেন সাংঘাতিক কথায় আনায়া থতমত খেয়ে তাকায়। তবু সে সহজে হার মানার পাত্রী না। জানার আকাঙ্ক্ষায় সে পুনরায় বলতে চাইল,

“কিন্তু…..”
কিন্তু তার বাক্য শেষ হওয়ার আগেই ইউভান তার ঠোঁটে হাত রেখে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“হুুশ! আর যদি এক কথাও বলিস, খেয়ে ফেলব তোকে।”
কী ভয়ঙ্কর ভাষ্য! আনায়া নাকের ডগা ফুলিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। সেই মুহূর্তে ইউভান তার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে একটি বিশাল লাল পর্দার দিকে এগিয়ে আসে। একপাশের দড়ি আনায়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সে নির্দেশ করল,
“এটা ধরে টান দে।”
“এটা আবার কী?”
“আরেকটি সারপ্রাইজ।”

নতুন সারপ্রাইজের শব্দ শুনে আনায়া বিস্ময়ে অবাক হয়।এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে সে লাল দড়ি টানতেই সামনে প্রতিফলিত হয় তার নিজের প্রতিচ্ছবি। ছবিতে আনায়া হালকা গাল স্পর্শ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তার ঢেউ খেলানো চুল একপাশে ছড়ানো, আর পেছনের দিকে লালাভ আকাশে সূর্যোদয় স্পষ্ট। সমগ্র ক্যানভাস লাল রঙে আবৃত, শুধুমাত্র তার সোনালি চোখ ব্যতীত। আনায়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের অজান্তে বলল,
“ওয়াও! অসম্ভব সুন্দর।”
আনায়ার কথায় ইউভান বাঁকা হেসে ক্যানভাসের দিকে চেয়ে দেখল। ক্যানভাসের লাল রঙ সাধারণ নয়; বরং রক্ত।এটা তার রক্ত,যার সাথে আনায়ার বিয়ের কথা হয়েছিল তার অনুপস্থিতিতে। এই রক্ত দিয়েই ইউভান নিজ হাতে আনায়ার অতুলনীয় প্রতিচ্ছবি এঁকেছে।
ঠিক তখনই আনায়া বলে উঠল,

আত্মার অন্তরালে পর্ব ২২

“আজকে কি কোনো বিশেষ দিন, ইউভান ভাই?”
ইউভান নিঃশব্দে পেছনে এসে দাঁড়িয়ে আনায়ার কোমর এক হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরল।মুখটা ঘাড়ের কাছে স্পর্শ করিয়ে ধীর কণ্ঠে বলল,
“হ্যাঁ, আজকে খুব বিশেষ দিন। আজ এই দিনে আমার অন্ধকার আকাশে তুই এক মুঠো সোনালী রোদ হয়ে এসেছিলি।”
থেমে গেল ইউভান। তারপর আনায়ার কানের লতিতে ঠোঁট ছুঁয়ে আবরও বলল,
“দ্যাট’স ওয়াই আই কল ইউ সানশাইন।”

আত্মার অন্তরালে পর্ব ২৩ (২)