আত্মার অন্তরালে পর্ব ২৪ (২)

আত্মার অন্তরালে পর্ব ২৪ (২)
প্রীতি আক্তার পিহু

আলোকসজ্জার ভিড় পেরিয়ে অবশেষে আনায়া সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। আনায়াকে দেখে তানহা তার দিকে ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকায়।তবে আনায়া একপ্রকার তানহাকে উপেক্ষা করেই পাশ কাটিয়ে সোজা স্টেজে সারাহর পাশে গিয়ে বসল।এতক্ষণে সারাহর মুখে হাসি ফুটে তার বোনকে আসতে দেখে।আনায়া সারাহকে জড়িয়ে ধরে আদুরে কণ্ঠে বলল,
“আহা! আমার আপুটাকে দেখতে কী যে মিষ্টি লাগছে আজ।”
সারাহ একহাতে তাকে আলিঙ্গন করে অভিমানী কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে,
“থাক হয়েছে। এখন মনে পড়ল বোনের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান আছে?”
তখন পাশ থেকে রুহি সামন্য ব্যঙ্গ করে বলে উঠল,
“আরেহ বাদ দাও তো সারাহ।নতুন নতুন মনে রং লাগলে কী আর অন্যকিছু মনে থাকে?তাই না
আলু?”

বলেই রুহি চোখ টিপ মারে।আনায়া রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুহির উপর।এসব খুনসুটির মাঝেই সারাহকে একে একে বাড়ির বড় থেকে ছোট আর সাদনানের পরিবারের সবাই হলুদ মাখায়।তবে গম্ভীর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ইউভান এসবকিছু এড়িয়েই চলে।তখন স্টেজে আয়ান এগিয়ে আসে।তার হাতা থাকা ছোট্ট উপহারটি সারাহকে দিয়ে বলল,
“তোমার আগামী দিনের জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল। এই নাও ছোট্ট উপহার তোমার জন্য।”
সারাহ উপহারটি গ্রহণ করে সামান্য হাসি টেনে প্রশ্ন করল,
“শুধু উপহার দিয়েই চলে যাবে? আমাকে হলুদ মাখাবে না?”
আয়ান হালকা হেসে সামান্য হলুদ তুলে সারাহর গালে লাগিয়ে দেয়।আনায়া তখন আয়ানের উদ্দেশ্য আনার্দোলিত কণ্ঠে বলে উঠল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এবার কিন্তু তোমার পালা ভাইয়া।রেডি থেকো!”
আয়ান আড়চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে আধখানা হাসি টেনে মজার ভঙ্গিতে বলল,
“মনে তো হচ্ছে না যে আমার আর এই জন্মে বিয়ে হবে।”
“তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া আমি আর রুহি মিলে তোমার জন্য লাল টুকটুকে বউ খুঁজে আনব।”
কথাটা রুহির দিকে তাকিয়েই বলল আনায়া।সাথে সাথেই রুহি আনায়ার কথায় সাই জানিয়ে এক গাল হাসি নিয়ে জানাই,
“হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই!আপনি চিন্তা করবেন না আয়ান ভাই আমি নিজে আপানার জন্য বউ খুঁজে এনে দিব।”
কথাটা শুনে আয়ান রুহির পানে হতবাক দৃষ্টিতে তাকায়।সে মনে মনে বলল,
“তুই আমার বউ হয়ে যা না রুহ পাখি।”

কিন্তু কথাটা আর সে মুখ ফুঁটে বলে না।সারাহ আয়ানের দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করে অদ্ভুতভাবে হাসে।মুহূর্তেই হলরুমের স্টেজে ঢাক-ঢোল আর গানের তালে কয়েকজন মহিলারা নাচা শুরু করেছে।রুহি তা দেখে আনায়াকে জোড় করে টেনে আনে স্টেজে।একমাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা নাচ-গান না করলে কী হয়?ব্যাকগ্রাউন্ডের ‘সাজান জি ঘার আনা’ গানের তালে দুই বোন একসাথে নাচা আরম্ভ করে এবার।এই নাচের মাঝেই একটা ঘোমটা পড়া মহিলা সারাহর কাছে গিয়ে তাকে স্টেজে আনে।কিন্তু মহিলাটি তার গা গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছে বারবার যাতে সারাহর খুব অস্বস্তিবোধ হয়।বিরক্তিতে সে সরে যেতে চাইলে মহিলাটি তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে,

“আরে বউ এত দূরে সরে যাচ্ছ কেন? আমি তো।”
পুরুষালী কণ্ঠ শুনতেই সারাহ বিস্ফারিত চোখে তাকায়।এতো সাদনানের গলা!তারমানে সাদনান এমন মেয়েদের বেশ ধরে এসেছে।সারাহ বুঝতে পেরে সাদনানকে সবার আড়ালে নিয়ে রাগে গজগজিয়ে বলে,
“অসভ্য লোক এখানে কী করছেন আপনি?”
সাদনান এবার ঘোমটাটা উঁচু করে হালকা ঢুক গিলে শুধায়,
“বউ আমি তো আজ তোমায় দেখতে এসেছি।”
সারাহর বড্ড চিন্তা হচ্ছে কারণ কেউ দেখে ফেললে বাসায় তুলুমকান্ড হবে।সে তড়িঘড়ি করে বলল,
“পাগল লোক কেউ আপনায় দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।কাল দেখবেন আমায় । আজ বের হন।”
“কাল শুধু দেখব না বরং আরও অনেক কিছু করব।
ইউ নো সামথিং সামথিং!”

এমন কথায় সারাহ রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে কন্ঠ শক্ত করে বলল,
“নির্লজ্জ এখান থেকে না বের হলে আমি আপনার শাড়ি খুলে ফেলব সবার সামনে।”
“ছি ছি বউ! সবার সামনে তুমি তোমার হবু স্বামীর বস্ত্র হরণ করবে?”
“আপনি এই মুহূর্তে না গেলে কসম আমি বাসার সাবাইকে ডাকব।”
“ডেকে নাও। দেখাও যে তোমার ফিয়ন্সে কি সুন্দর শাড়ি পড়তে পারে! তবে একটা সমস্যা আছে, তোমার ঘরের পুরুষ লোক যদি আমাকে ক্রাশ খেয়ে বসে! পরে যদি ইয়ে টিয়ে করে ফেলে। আয়হায়!”
এই বলে বুকে হাত দিয়ে নিজের ইজ্জত রক্ষা করার চেষ্টা করতে থাকল সাদনান। সারাহ তার এমন ভাব দেখে আশ্চর্য হয়।কোনমতে রাগ সংবরণ করে বলল, “ঠিক আছে। কথা শুনবেন না তো। আমি চিৎকার করে লোক জরো করে বলছি যে আপনি বাসায় চুরি করতে এসে ধরা খেয়েছেন।”

সারাহর হুমকি শুনে সাদনান আশেপাশে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে আওড়ায়, “আসতাগফিরুল্লাহ! এমন বদনাম দিও না, বউ। আচ্ছা, রাগ করে না সোনা।যাইহোক আজ কিন্তু তোমায় খুব হট এন্ড সে*ক্সি লাগছে।”
এবার সারাহর ধৈর্যের বাধ ভেঙে সে চিৎকার করবেই তার পূর্বে সাদনান ভয়ে একপ্রকার দৌড়ে পালায়।সারাহ তা দেখে বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে পুণরায় স্টেজে আসে।রুহি আর আনায়া তাকে ধরে এবার নাচতে থাকে।তিনবোনের এই খুনসুটি হাসি-ঠাট্টা মাঝেই দূর থেকে একজোড়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি কেবল আনায়াকে দেখছে।আনায়ার প্রতিটি হাসি, প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি মুগ্ধ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে ইউভান।তৎক্ষণাৎ তার পাশে আহসান চৌধুরী উপস্থিত হয় এবং ছেলেকে এভাবে আনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কড়া কণ্ঠে সতর্ক করলেন,

“চোখ সরাও ইউভান।এমনিতেও রাতভর বাইরে থেকে অনেক বড় কাণ্ড ঘটিয়েছ তুমি।”
ইউভান চোখ না সরিয়ে বরং হালকা বাঁকা হেসে উত্তরে বলল,
“সরি পাপা চোখ সরছে না।”
ছেলের এমন বেহালি কথা শুনে আহসান চৌধুরীর কন্ঠে সামান্য ক্রোধ নিয়ে বললেন,
“দিন দিন চরম নির্লজ্জ হচ্ছ তুমি। আর আনায়ার যার সঙ্গে বিয়ের কথা হচ্ছিল সেই ছেলেকে কোথায় গায়েব করলে?”

“আপনার কেন এমন মনে হচ্ছে আমি ওকে গায়েব করেছি?”
আহসান কঠোর অভিব্যক্ত নিয়ে জবাব ছুঁড়লেন,
“তোমার মতো ক্রিমিনালকে আমি ভালোভাবে চিনি।কতজনকে তুমি গায়েব করতে পারো আমিও দেখবো।”
ইউভান আড়চোখে তার বাবার দিকে তাকিয়ে ঠাণ্ডা কণ্ঠে উচ্চারণ করে,
“আমি ছাড়া আনুর জন্য আপনি যতজনের সম্বন্ধ আনবেন, ততজনকে একে একে গায়েব করব।আই প্রমিস!”
ছেলের এহেন সাংঘাতিক হুমকি শুনে আহসান চৌধুরী সামান্য বিস্মিত হয়।অতঃপর তিনি গম্ভীরভাবে প্রতিক্রিয়া জানালেন,

“এসব কিছু বাদ দিয়ে আমাদের ফ্যামিলির বিজনেসে জয়েন করো ইউভান।”
ইউভান মুখের অভিব্যক্ত সামান্য বদলিয়ে কন্ঠে অহংকার নিয়ে উত্তর দিল,
“ওসব বিজনেস আমার দরকার নেই। আমার ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন টাকা আছে।”
আহসান চৌধুরী হেসে ফেললেন, তবে সে হাসির মাঝেই তীব্র তাচ্ছিল্য নিয়ে শুধালেন,
“ট্রিলিয়ন টাকা যদি সৎ পথে ইনকাম করতে, তাহলে আজ সাধারণ মানুষের মতো জীবন-যাপন করে লুকিয়ে চলতে হতো না।”

এই কথায় মুহূর্তের জন্য ইউভান দমে যায়। কঠিন হলেও এটাই বাস্তব যে যতই ট্রিলিয়ন টাকা থাকুক না কেন তা, অবৈধ হলে সব সময় আড়ালে রাখতে হয়।কারণ এসব অবৈধ কার্য সামনাসামনি প্রকাশিত হলে আইনের হাত থেকে বাঁচা অসম্ভব।আহসান চৌধুরীর কথা এড়াতে ইউভান সেখান হতে প্রস্থান করে।ছেলের যাওয়ারর দিকে আহসান চৌধুরী কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল।কারণ সে যদি ইউভানকে ছোটবেলায় দূরে না পাঠাতে হয়তো এসবকিছু হতো না।এটাই বাস্তবতা সন্তানরা সর্বদা তার বাবা-মায়ের কাছেই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়।

অপরদিকে গল্প-গুজবে মেতা থাকা আনায়ার চারদিকের কোনো কিছুর খবর নাই। কিন্তু হঠাৎ কোথা থেকে যেন ইউভান এসে তাকে ভীর থেকে এনে ফাঁকা স্থানে বসাল। হতভম্ব আনায়া তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“একি আমায় এভাবে টেনে আনলেন কেন?”
“সারাদিন যে না খেয়ে আছিস তার কোন খেয়াল আছে কি?”
“দূর আমি এখন খাব না।”
বলেই আনায়া উঠে যেতে চাই কিন্তু ইউভান তাকে পুণরায় বসিয়ে দিয়ে সতর্কভাবে জানায়,
“আর একবার উঠলে পা ভেঙে দিব। আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

ধমক শুনে আনায়া মুখ চুপচাপ গোমড়া করে বসে রইল।কিছুক্ষণ পর ইউভান হাতে খাবার নিয়ে ফিরে এসে তার সামনে বসে।সে সযত্নে আনায়ার মুখে খাবার তুলে ধরে।খেতে খেতে আনায়া নীরবতায় একটু কণ্ঠ মিলিয়ে বলল,
“আপনার এতকিছু মনে থাকে কীভাবে বলুন তো?আমি খেলাম কিনা খেলাম না সব খবর কীভাবে রাখেন শুনি?”
ইউভান অধরের কোণে হাসি ফুটিয়ে জবাবে বলল,”তোর সব মনে রাখাই তো আমার কাজ”
“আর এই কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসেবে কী চান আমার কাছে?”
কথাটি শুনে ইউভান তার চোখে চোখ রাখে গভীরভাবে।অতঃপর বলল,
“যা চাই তা দিতে পারবি তো?”

আনায়া দুই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে আবার জানতে চাই, “আরে একবার বলুন তো কী চাই আপনার?”
ইউভান এবার ঠোঁট কাঁমড়ে ধরে বলল, “প্রতি রাতে আমার বিছানায় চাই তোকে।”
মুহূর্তেই আনায়ার গলায় খাবার আটকে গিয়ে সে জোড়ে কাশতে থাকে।লজ্জায় কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে তাই।ইউভান তার নাজেহাল অবস্থা দেখে দ্রুত পানি এগিয়ে দিয়ে শুধালো,
“কুল ডাউন সুইটি।

আনায়া পানি খেয়ে কয়েকটা দম নিয়ে ঝাঁড়ি মেরে বলল, ” নির্লজ্জ লোক! আপনার মুখে কিছু আটকায় নাহ।”
ইউভান ঠোঁট টিপে হাসে।তখন তার ফোনে কল আসায় সে আনায়ার কাছ থেকে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়।এদিকে আনায়া ইউভানকে গালি দিয়ে ধুয়ে ফেলছে।ইউভান কলটা রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে পিয়াস বলে উঠল,
” স্যার জাবেদ হায়দারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।সে এই সপ্তাহে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে গেস্ট হিসেবে আসছেন।”
ইউভান চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে।অবশেষে তার অপেক্ষার অবসান ঘটবে।ইউভান পিয়াসকে বলল,
” গুড নিউস! এবার নেক কে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।”
বলেই ইউভান বাঁকা হাসি দিয়ে ফোনটা কেটে দেয়।সে বহু পূর্বেই জানে জাবেদ হায়দারের সঙ্গে নেক পরিচিত কারণ তার দু’জনই রে*পি*স্ট।আর এই সেই চট্টগ্রাম ভার্সিটির প্রফেসার জাবেদ হায়দার যিনি হলেন আলিসার বাবা।ইউভান মুলত নেক কে ধরার উদ্দেশ্যেই ঘুষের বিনিময়ে ভার্সিটিতে প্রফেসর হিসেবে রয়েছে।তখনই ইউভান চোখে ঘুরিয়ে দেখে আনায়া রোহানের সাথে দাড়িয়ে কথা বলছে।এ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে মুহূর্তেই তার চোখে দাও দাও করে আগুন জ্বলতে থাকে।

সে হনহনিয়ে এসে আনায়াকে রোহানের সামনে থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসে।রোহান সেদিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।হতভম্ব আনায়া নিজের হাত ছাড়ানোর প্রয়াস করে বলতে থাকে,
“ইউভান ভাই কী করছেন?ছাড়ুন প্লিজ!”
ইউভান প্রতিউত্তর না করে সোজা তাকে রুমে এনে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়।আনায়া অবিশ্বাস্য চোখে ইউভানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কী হয়েছে আপনার? এমন বিহেভিয়ার কেন করছেন?”
অবশেষে ইউভান নীরবতা ভেঙে মুখ খুলল, “তোর সাহস কী করে হলো ওই ছেলের সাথে কথা বলার?”
আনায়া হতভঙ্গ হয় কারণ সে বুঝতে পারে না তার দোষ কোথায়?রোহান তো সাদনানের ভাই সেই সুবাদেই কথা বলেছে সে।আনায়া এবার তাকে বোঝানোর প্রয়াস করে,

“শুনুন আপনি যা ভাবছেন তার কিছুই না।আমি তো শুধু নরমাল কথাই…
তৎক্ষণাৎ ইউভান তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে চিৎকার করে উঠলো,
“শাট আপ!আজ এই রুম থেকে বের হওয়া তোর নিষেধ। আর আমার অনুমতি ছাড়া বের হওয়ার চেষ্টা করলে পা ভেঙ্গে দিব।”
আনায়া উঠে দাড়িয়ে চড়া গলায় উত্তর দিল, “কেন আপনার অনুমতি নিতে হবে?আমি বাচ্চা নয় যে আপনি আমায় আটকে রাখবেন।”

ইউভান চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে তবে ব্যর্থ হয়ে সে সজোরে হাত দিয়ে আঘাত হানে দেয়ালে।এমন কাণ্ডে আনায়া কেঁপে ওঠে কারণ ইউভানের হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে।সে দ্রুত ইউভানের হাত ধরতে যায় কিন্তু ইউভান তার হাত ঝাড়ি মেরে সরিয়ে দিয়ে হুশিয়ারি কণ্ঠে বলল,
“মনে রাখিস তোর সীমারেখা কেবল আমার গন্ডিরেখা অব্দি সমাপ্ত।এই রেখা অতিক্রম করলে শুধু ধ্বংস,মৃত্যু আর রক্তের বন্যা বইবে।”
বলেই এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ইউভান বাহির থেকে দরজা আটকে দিয়ে চলে যায়। আর এককী রুমে আনায়া পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে।সামান্য বিষয় ইউভান এত রিয়াক্ট করবে তার অজানা ছিল।আনায়া রাগে, দুঃখে, অভিমানে ধপ করে বসে পড়ে।

অতীত,
কতদিন পার হয়ে গিয়েছে আলিসা আর ক্যাসিনোর জীবনে। তাদের সম্পর্কের উন্নতি নেই কারণ আলিসার কাছে ক্যাসিনো তথাকথিত ধ*র্ষ*ক কুপুরুষ। আলিসা চাইত ক্যাসিনো তার কাছে থাকুক আর তার চাওয়া পূরণ হয়েছে ব্যস এই পর্যন্তই। অনেকদিন পর আজ আলিসা রেডি হয়েছে ক্যাসিনোর সাথে গেট টুগেদার পার্টিতে যাওয়ার জন্য। তখনই ক্যাসিনো রুমে এসে আলিসাকে একবার পরখ করে বলল,
“আর ইউ রেডি রোজ ফর দ্যা পার্টি?”

আলিসা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “ইয়াহ, আ’ম রেডি।”
অপেক্ষা না করে তারা দুজন এবার বাসা থেকে রওনা দেয়। ক্যাসিনো ড্রাইভ করছে আর তার পাশে আলিসা বসে আছে। ক্যাসিনো বারবার আলিসার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। এটা লক্ষ্য করে বিরক্তিকর আলিসা জিজ্ঞাসা করে,
“বারবার আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছেন কেন?”
“কখন তাকালাম আমি?”
“আমায় দেখে কি অন্ধ মনে হয়?”

“তার মানে তুমিও আমার দিকে তাকিয়েছিলে, নাহলে বুঝলে কিভাবে আমি তোমার দিকে তাকিয়েছি?”
এমন কথা শুনে থতমত খেয়ে তাকায় আলিসা। সে আর কোনো কথা না বলে জানালার দিকে মুখ ফেরায়। ক্যাসিনো নিঃশব্দে হেসে ড্রাইভিং-এ মনোযোগ দেয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছালো। আলিসা গাড়ি থেকে নামতেই ক্যাসিনো তার হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরে ঢুকতেই নজর কাড়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের উপর। ক্যাসিনো তাদের সাথে আলিসাকে নিজের ওয়াইফ বলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু সেই মুহূর্তেই হঠাৎ এক ব্যক্তির আগমনে ক্যাসিনোর মুখের রঙ পাল্টে যায়। ব্যক্তিটি তার সামনে এসে ঠোঁটে কৌতুকমাখা হাসি নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“হ্যালো ক্যাসিনো ব্রো, হাউ আর ইউ?”
ক্যাসিনোর কঠিন দৃষ্টি ছুড়ে সে হাত মেলাল না। বরং ঠান্ডা কণ্ঠে আলিসাকে বলল,
“রোজ তুমি পার্টি এনজয় করো, আমি আসছি।”
আলিসা সামান্য ইতস্তত করে সেখান থেকে চলে যায়। আলিসা যেতেই ক্যাসিনো সামনে থাকা ব্যক্তিটির পানে তাকিয়ে দাঁত চেপে বলল,
“আমার সামনে আসার সাহস হলো কীভাবে হলো তোর, আলভারেজ?”
আলভারেজ হেসে ফেলে বলল, “এত ভাইপার হচ্ছিস কেন? আমি তো তোর রক্তের ভাই। আরে, বিয়ে করলি কবে?”

“আমার কোনো ভাই নেই। এখান থেকে সরে যা।”
“কেন? ভয় হচ্ছে যে তোর ওয়াইফ জানতে পারবে যে তুই ধর্ষক?”
“আমি যা-ই হই না কেন, অন্তত তোর মতো নিজের স্টেপ সিস্টারকে বিয়ে করিনি।”
আলভারেজ হাসে, কোনো উত্তর দেয় না। ক্যাসিনো পুনরায় রহস্যময় কণ্ঠে বলে,
“চৌধুরী বাড়ির মেয়েকে যে তুই সম্পত্তির লোভে বিয়ে করেছিস, সেটা ভালো করেই জানি আমি।”
এবার আলভারেজের মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। সে চোখ সরু করে ক্যাসিনোর দিকে তাকিয়ে হুঁশিয়ারির সুরে জানায়,

“সময় গুনতে থাক। তোর থেকে সবকিছু কেড়ে নেব আমি।”
ক্যাসিনো ঠান্ডা গলায় জবাব দেয়, “তুই আগে আমার কিছু ছুঁয়ে দেখা।”
কথা শেষ করেই ক্যাসিনো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুড়ে সেখান থেকে চলে যায়। আলভারেজ ক্যাসিনোর রক্তের ভাই তবে তারা একে অপরের প্রাণের শত্রু। অপরদিকে, হঠাৎ আলিসার শরীরটা খারাপ লাগতে শুরু করে। দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে সে মাটিতে পড়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ছোট্ট একজোড়া হাত তার হাতটি খপ করে ধরে ফেলে। আলিসা তাকিয়ে দেখে ছোট্ট একটি বাচ্চা ছেলে, বয়সটা আ্যশারের মতোই হবে। ছেলেটি তাড়াতাড়ি তাকে পাশে একটা চেয়ার টেনে বসাল আর কৌতূহলী চোখে জিজ্ঞেস করল,

“আপনার কী হয়েছে আন্টি?”
আলিসা প্রথমে হতবাক হয় কারণ ছেলেটি বাংলা বলছে। পরমুহূর্তে মায়ামাখা কণ্ঠে বলল,
“না বাবা, তেমন কিছু না। শুধু একটু মাথা ঘুরাচ্ছে।”
এমন কথা শুনে ছেলেটি তৎক্ষণাৎ এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে তার হাতে ধরিয়ে দেয়। আলিসা অবাক দৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকায়, তারপর ধীরে ধীরে পানি খেয়ে নরম স্বরে প্রশ্ন করে,
“থ্যাঙ্ক ইউ বাবা। তোমার নাম কী?”
ছেলেটি মিষ্টি হেসে বলল, “আভীর।”
আলিসা পুনরায় কিছু জিজ্ঞেস করবে তার পূর্বে আভীর ‘পাপা’ বলে দৌড়ে চলে গেল। আলিসা দেখল আভীর সেই ব্যক্তিটির কাছে গিয়েছে, যাকে সে ক্যাসিনোর সাথে কিছুক্ষণ আগে দেখেছে—আলভারেজ। অর্থাৎ আভীর আলভারেজের ছেলে।

এরই মাঝে ক্যাসিনো সেখানে উপস্থিত হয়। তাকে দেখে আলিসা উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পুনরায় মাথা ঘুরে ঢলে পড়ে। তড়িৎ বেগে ক্যাসিনো আলিসাকে আগলে নিয়ে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,
“হোয়াট হ্যাপেন রোজ? তুমি ঠিক আছো তো?”
আলিসা ক্লান্ত কণ্ঠে সূক্ষ্মভাবে বলল, “আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। আমি বাসায় যেতে চাই।”
সবকিছু দেখে ক্যাসিনো বুঝতে পারে আলিসা মোটেই ভালো নেই। তাই এক মুহূর্তও দেরি না করে সে তাকে কোলে তুলে নেয়। তারপর সোজা গাড়িতে আলিসাকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও উঠে বসে। গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে ক্যাসিনো বলল,
“চিন্তা করো না রোজ, আমি দ্রুত বাসায় ফিরব।”
আলিসা মাথা নাড়িয়ে নিঃশব্দে গাড়ির সিটে শরীর এলিয়ে দেয়।

অপরদিকে, ল্যাবরেটরির সেই অন্ধকার ঠান্ডা রুমে আ্যশার নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে। তার শরীরে গভীর ক্ষতের চিহ্ন, কারণ ক্যাসিনো তাকে প্রতিদিন মারে। সে প্রায় মানসিক রোগী কারণ তাকে যে সেই ভাইরাসের তিনটি ডোজ দেওয়া শেষ। ফলে আ্যশারের মস্তিষ্ক হিংস্র এবং বিকল হয়ে গিয়েছে। সে প্রতিনিয়ত মৃত মানুষের আধপচা মাংস, নাড়িভুঁড়ি খেয়েই বেঁচে আছে। আ্যশার একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে থমাস কীভাবে বাচ্চাটির হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে খাচ্ছে। কী বিভৎসতা! আ্যশার অপেক্ষা করছে থমাসের খাওয়া শেষ হলে, সে ওই অবশিষ্ট মৃত মাংস খাবে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় তার পেট যে জ্বালাপোড়া করছে।

তখন ক্যাথরিন এসে কাচের জার থেকে মৃত লাশটি বের করে আনে। মুহূর্তেই লাশটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আ্যশার। লাশটার গলা চিরে, বুক ছিঁড়ে সে মাংস টেনে খেতে থাকল।তার হাত দুটো পুরো রক্তে ভিজে যায় আর সে সেই রক্তমাখা হাত মুখে পুরে চাটছে পাগলের মতো। দৃশ্যটা একেবারেই বিকৃত আর গা ঘিনঘিনে। এমন সময় সে শুনতে পেল ক্যাথরিন ফোনে কথা বলছে,
“আলিসা ম্যাম অসুস্থ, তাই ডাক্তারকে দ্রুত বাসায় আসতে বলো।”
আলিসার নাম উচ্চারিত হতেই আ্যশারের রক্তমাখা হাত থেমে যায়। অশ্রুসিক্ত চোখে সে ঠোঁট কাঁপাতে কাঁপাতে উচ্চারণ করল,

“রোজ মা…”
আ্যশার দেখল ক্যাথরিন তড়িঘড়ি বেরিয়ে যায় কিন্তু যাওয়ার পূর্বে সে দরজাটা বন্ধ করে না। এটা নজরে পড়তেই আ্যশারের চোখ জ্বলে ওঠে এবং সে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগোয়। হাত বাড়িয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখল, বিশাল অন্ধকার ঘরের মাঝে কয়েকজন গার্ড দাঁড়িয়ে আছে। আ্যশার খুব সতর্কতার সাথে গার্ডদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে একটি রুমে পৌঁছালো। বহুদিন পর আ্যশার প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সে ধীর পায়ে রুম থেকে বের হয় আর ঠিক তখনই তার নজর আটকায় অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটির দিকে। ব্যক্তিটি আলিসা! এতদিন পর আ্যশার তার রোজ মাকে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে কেঁদে ফেলে। আলিসা অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে আ্যশার এবার তাকে ডাকার জন্য হাঁক ছাড়ল,

“রোজ ম…”
কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে হঠাৎ পেছন থেকে কেউ তার মুখ শক্ত করে চেপে ধরে। আ্যশার হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে কিন্তু পেছনের মানুষটি তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ আলিসা পেছন ফিরে অস্পষ্ট স্বরে বলে,
“আ্যশার।”
তার কেমন অনুভূতি হচ্ছে আর বুকটাও ধরফর করছে। তার মনে হচ্ছে সে মাত্র আ্যশারের কণ্ঠ শুনেছে। তখন ক্যাসিনো সেখানে এসে জানতে চাই,
“কী হয়েছে রোজ? কাউকে খুঁজছ?”
আলিসা মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়, “ক্যাসিনো, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমায় কেউ ডাকল।”
ক্যাসিনো তাকে বোঝায়, “শান্ত হও রোজ। কেউ নেই এখানে। এখন চলো, ডাক্তার এসে গিয়েছে তোমার চেকআপ করতে।”
বলে সে আলিসাকে ধরে সেখান থেকে নিয়ে যায়। কিন্তু যাওয়ার সময় আলিসা বারবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছিল। কারণ তার বুকটা হাহাকার করছে আজ আ্যশারের জন্য।

রাত প্রায় দশটার কাছাকাছি। আনায়া বন্ধ ঘরে মনমরা হয়ে বসে আছে। ঘরের জানালার আড়াল থেকে ঠান্ডা বাতাস আসছে, কিন্তু আনায়ার ভিতরে কোনো প্রশান্তি নেই। এতক্ষণে সারাহর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ। ইউভান যে তাকে রুমে আটকে রেখে গিয়েছিল এখনো ফেরেনি। সে অবশ্যই ইউভানের অপেক্ষা করছে না। তৎক্ষণাৎ দরজা খোলার শব্দ শুনে আনায়া তড়িৎ বেগে উঠে দাঁড়ায়। সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে তার মুখের অভিব্যক্তি পাল্টে যায়। ইউভান স্থির চাউনিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আনায়া কোনো কথা না বলে হনহনিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চায়, কিন্তু তৎক্ষণাৎ ইউভান তার হাত ধরে ফেলে। আনায়া রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ঘন নিশ্বাস নিয়ে বলে,

“হাত ছাড়ুন।”
“যদি না ছাড়ি?”
“সেই অধিকার নেই আপনার।”
“আমি সেই অধিকারের পরোয়া করি না, যে অধিকার তোকে ছোঁয়া থেকে আমায় আটকে রাখবে।”
আনায়া তাতেও নরম হয় না। সে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে, কিন্তু ইউভান তার হাত ধরে হেঁচকা দেয়। ফলে তার পিঠ গিয়ে ঠেকে ইউভানের প্রশস্ত বুকে। ইউভান তার থুতনিটা আনায়ার ঘাড়ে রেখে কোমল কণ্ঠে শুধায়,
“সরি সুইটি।”
তবে আনায়া ঝাড়ি মেরে উঠল, “আপনার কাছেই রাখুন আপনার সরি। আমাকে ছাড়ুন বলছি।”
বলেই সে ছোটাছুটি করতে থাকে, কিন্তু ইউভান তাকে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলল,
“এত রাগ কোথা থেকে আসে তোর, হুম?”
আনায়া উত্তর দিল, “যেখান থেকে আপনার আসে, আমারও সেখান থেকেই আসে বুঝলেন।”
ইউভান বুঝতে পারল, আনায়ার রাগ এভাবে ভাঙবে না। তাই সে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে, দুই হাতে মুখটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে শুধালো,

“বললাম তো সরি? তারপরও এত রাগ, ম্যাডাম?”
আনায়া চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল, “শুনতে চাই না আমি আপনার সরি।”
সে আর কিছু বলার আগেই ইউভান হঠাৎ করে তার ঠোঁটে টুপ করে চুমু খেল। হতবাক আনায়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার কিছু বলতে যাবে, কিন্তু তার পূর্বেই ইউভান আবারও চুমু দিল।
“দেখুন, ভালো হ…” আনায়া কড়া গলায় কিছু বলতে শুরু করতেই আবারও সেই একই ঘটনা। প্রতিবার কথা বলতে গেলেই একইভাবে ইউভান তার ঠোঁট টুপ করে চুমু দেয়। আনায়া রাগে ফুঁসছে, কারণ এভাবে ইউভান তাকে বিশ-পঁচিশটা চুমু দিয়েছে। আনায়ার রাগ, অভিমান, লজ্জা মিশ্রিত অনুভূতিতে হৃদয়ে অশান্ত ঝড় বইছে। লজ্জায় সে চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলল,

“দেখুন, আরেকবার চুমু দিলে আমি কিন্তু আপনাকে মেরে ফেলব।”
তখনই ইউভান পুনরায় দুঃসাহসিকতা নিয়ে আনায়ার ঠোঁট চুমু দিল। তারপর বাঁকা হেসে বলল,
“নে, মেরে ফেল আমায়। তোর হাতে আমার মৃত্যুও কবুল, সুইটি।”
আনায়ার চোখে হঠাৎ অশ্রু জমে উঠল। ইউভানের মৃত্যু এই দুটি শব্দ ভাবলেই তার বুকটা কেমন ধরফর করে। সে আচমকা ইউভানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গুমরে উঠে,
“এদিন কখনো না আসুক জীবনে। আমি বেঁচে থাকতে আপনার মৃত্যু সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।”
ইউভান কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে উচ্চারণ করল, “ম্যাডাম, দেখছি সিরিয়াস মুডে চলে গিয়েছেন? রাগ কমে গিয়েছে বুঝি?”

এমন কথায় আনায়া বাস্তবে ফিরে ইউভানের কাছ থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়। এদিক-ওদিক ছটফটিয়ে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
“উহু, মোটেও না। সব কথার শেষ কথা হলো, আমার রাগ কমেনি এখনো।”
ইউভান হাসল, তারপর পকেট থেকে একটি চকলেট বের করে আনায়ার সামনে তুলে ধরল,
“নিন চকলেট খান। তাহলে রাগ কমে যাবে।”
আনায়া চকলেটের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“খাব না আমি আপনার চকলেট।”
ইউভান নিঃশব্দে টেবিলের পাশে চকলেটটি রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আফসোস করল,
“ঠিক আছে, খাওয়া লাগবে না আপনার। কী আর করার, আমি রাগ ভাঙাতে ব্যর্থ। আপনি থাকুন, তাহলে আমি গেলাম।”

বলেই ইউভান সেখান থেকে চলে যায়। ইউভান যেতেই আনায়া সেদিক উঁকিঝুঁকি মেরে চকলেটের দিকে তাকায়। চকলেট মেয়েজাতির দুর্বলতা, আর আনায়াও তার ব্যতিক্রমি না। লোভ সামলাতে না পেরে সে চকলেটটা হাতে নিয়ে খেতে খেতে বলল,
“রাগ পরে করবি, আনু। আগে খেয়ে নে।”
কিন্তু ঠিক তখনই দৃষ্টি আটকে গেল দরজার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো ইউভানের দিকে। আনায়া তাজ্জব বনে যায়। মনে হলো চুরি করতে গিয়ে হাতে–নাতে ধরা খেয়েছে সে। দ্রুত চকলেটটা নামিয়ে রেখে অস্বস্তি লুকাতে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

আত্মার অন্তরালে পর্ব ২৪

“আমি খাচ্ছিলাম না, ম.. মানে আমি তো শুধু দেখছিলাম।”
ইউভান ভ্রু উঁচু করে বলল, “ওহ, আচ্ছা! আই নো, আই নো!”
বেচারি আনায়া মুখ ফিরিয়ে নেয়। সে একটু ঠিকভাবে রাগও দেখাতে পারল না ইউভানকে।

আত্মার অন্তরালে পর্ব ২৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here