আত্মার আগলে পর্ব ২৩ (২)
সানজিদা আক্তার মুন্নী
এহসান দৃঢ় গলায় বলে
— “যে পুলিশ আপনাদের কেস নেয়নি, তার নাম টা বলে যান শুধু, মা! দেখবেন কি অবস্থা করি আমি ঐদের!”
মহিলা নিজের চোখ মুছে সোজা তাকিয়ে বললেন,
— “উনার নাম হামিন আহমেদ, বাবা! তুমি ওরেও ছাড়িও না!”
এহসান গভীর শ্বাস নিল, যেন নিজের ভেতরের আগুনকে আরও প্রশমিত করছে প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞায়। তারপর কঠিন কণ্ঠে বলল,
— “চিন্তা করবেন না, ওরে এই দুনিয়ায় আমি আর টিকতে দিব না, ইনশাআল্লাহ! আপনি বাড়ি যান, আর আপনার ছোট মেয়েকে—আমার আরেক বোন কে—বলুন, নিশ্চিন্তে থাকতে। আজকের পর থেকে এই গ্রামে এমন কোনো জঘন্য কাজ হবে না, ইনশাআল্লাহ!”
এই বলে এহসান উঠে দাঁড়াল। চারপাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের লোকদের দিকে তাকাল এক নজর রাগ নিয়ে , যারা ভয়ে আর অপরাধবোধে কুঁকড়ে গেছে।
কঠোর দৃষ্টিতে সবাইকে একপলক দেখে নিয়ে সে গর্জে উঠে বলল
— “তোমাদের কি আমি বা***ল ফালাইতে রাখছি নিজের আওতায় “! যে একটা মেয়ে এই গ্রামে ধর্ষিত হলো, আর তোমরা কিছুই জানতে পারলে না? একদিন বলেছিলাম না, যদি কোনো বখাটে ছেলেকে গ্রামে দেখো, তবে হাত-পা ভেঙে দেবে? আজ তোমাদের কারণেই এই দিনটা দেখতে হচ্ছে!
ফের থেমে নিজেকে সামলিয়ে বলে
—এরপর থেকে দিনে চারজন, রাতে চারজন—সবাই মিলে পুরো গ্রাম পাহারা দেবে! যেন আমার কোনো মা-বোনের ইজ্জত আর কখনো হরণ না হয়! মনে থাকবে?”
সবাই একসাথে মাথা নিচু করে সম্মতির ইঙ্গিত দিল।
এহসান এবার গেটের দিকে এগিয়ে গেল, কারণ তাদের বাড়ির সামনে মাঠের মধ্যে সেখানে অপেক্ষা করছে গ্রামের বহু মানুষ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রক্তমাখা শরীরে এহসান যখন গেট পেরিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়াল, তখন সবাই পথ ছেড়ে দিল, যেন সে এক যুদ্ধজয়ী যোদ্ধা। তার পিছনে তার লোকজন, আর সেই অসহায় মা, যিনি এবার বিজয়ের হাসি নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরে যাচ্ছেন।
এহসান রক্তমাখা শরীরে ধীরে ধীরে মাঠের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ায়। মুহূর্তেই পুরো গ্রামের মানুষ ভয় আর বিস্ময়ে একপাশে সরে গিয়ে গোল হয়ে দাঁড়ায়। সবার চোখে আতঙ্ক, কৌতূহল—আর এক ধরনের সম্মান।
রক্তের দাগে ভেজা জামার দিকে একবার তাকিয়ে এহসান মুখ তুলে চাইল। গভীর, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সে গ্রামবাসীদের দিকে তাকিয়ে বলল,
— “এটা কোনো ভালো মানুষের রক্ত নয়! এটা এক জানোয়ারের রক্ত! এক ধর্ষকের রক্ত!”
তার কণ্ঠের কঠোরতায় বাতাস কাঁপল। পুরো মাঠ নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর গ্রামবাসীরা নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করতে শুরু করল—
— “ওহ! এর জন্য মেরেছে!”
— “হ্যাঁ, ভালো করেছে!”
— “এখন মা-বোনেরা অন্তত নিরাপদ থাকবে!”
এহসান এবার গর্জে উঠল। তার কণ্ঠে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার গলায় বলে
— “খবরদার! এরপর থেকে যদি দেখি, এই গ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে কেউ আমার কোনো মা-বোনের অসম্মান করছে, তাহলে এক খোদার কসম! আমি এহসান তার কলিজা টেনে ছিঁড়ে আনতেও দুবার ভাবব না! তাই, গ্রামের যুবক ভাইরা সাবধান!”
তারপর একটু থেমে আবার বলল,
— “আর শোনো! যদি এই গ্রামে কখনো কোনো মেয়ে বিপদে পড়ে, কেউ তাকে উত্যক্ত করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করো! একা না পারলে অন্যদের ডাকো! আর যদি কারও সাহস না থাকে, তাহলে সরাসরি আমার কাছে আসবে! তালুকদার বাড়ির দরজা সবসময় খোলা আছে তোমাদের জন্য! আজকের পর থেকে এই গ্রামে নারীর অসম্মান যেন আর কখনো না হয়!”
সে হাত উঁচিয়ে বলল,
— “নারীরা আল্লাহর রহমত! তাদের সম্মান দিতে না পারলে মানুষ হওয়া বৃথা!”তাই সন্মান দিতে শিখ নারী কে
এবার পুরো গ্রাম যেন একসঙ্গে গর্জে উঠল,
— “ইনশাআল্লাহ! ইনশাআল্লাহ! আজ থেকে এই গ্রামে কখনোই নারীর অসম্মান হতে দেব না!”
এহসান আবার বলল,
— “আমার যুবক ভাইয়েরা! আমাদের বোনদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব! তাই চোখ-কান সজাগ রাখো! অন্যায় দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ো!”
গ্রামের যুবকেরা একসঙ্গে চিৎকার করে উঠল—
— “ইনশাআল্লাহ! ইনশাআল্লাহ!”
এহসান নিজের চাদর ঠিক করে যখন বাড়ির দিকে পা বাড়ায়, তখনই ভিড়ের মাঝখান থেকে একটি মেয়ে এগিয়ে আসে। কলেজের পোশাকে মেয়েটি, গলায় গভীর যন্ত্রণা নিয়ে বলে
— “আপনি আমার বিচার করবেন!”
তার কণ্ঠের দৃঢ়তায় এহসান থমকে দাঁড়ায়। সাথে সাথে পুরো গ্রাম নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
এহসান ধীরে ধীরে পিছনে ফিরে মেয়েটির দিকে তাকায়। গভীর দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে বলে,
— “কি বিচার, বোন? বলো তুমি!”
মেয়েটি মাঠের চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। চারপাশের হাজারো চোখ তার দিকে তাকিয়ে, কিন্তু আজ সে ভয় পাবে না। আজ সে বাঁচবে, অথবা মরে যাবে—কিন্তু আর চুপ থাকবে না!
সে ধীরে ধীরে হাত তোলে। শাহাদাত আঙুল লক্ষ্য করে ইশারা করে এক যুবকের দিকে। তারপর এক মুহূর্ত চুপ থেকে হঠাৎ ডুকরে কেঁদে ওঠে। কাঁপা গলায় বলে,
— “এই যে! এই আমার চাচাতো ভাই শিহাব! আমার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমি চাচার বাড়িতে থাকি। আর প্রতি রাতে এই নরপশু আমার ঘরে এসে আমাকে ধর্ষণ করে! শুধু সে-ই নয়, নিজের বন্ধুদেরও নিয়ে আসে! আমার শরীর বিক্রি করে টাকা কামায়! আমার চাচা কিছু জানেন না, কিন্তু আমার চাচি? উনি তো নিজেই লোক এনে আমাকে ব্যবসার পণ্য বানিয়েছেন!”
মেয়েটির কণ্ঠস্বর পাথরের মতো শক্ত, চোখে জল নেই—কারণ সে এতদিনে কান্নার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে।
তারপর সে চিৎকার করে উঠে,
— “আপনি এর বিচার করবেন! আমি এ আশায় এত বড় সত্যি টা বললাম, যাতে আপনি এদের ভয়ংকর মৃত্যু দেন! আপনি মারবেন এদের!”
গ্রামের লোকেরা স্তব্ধ। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি এত বড় সত্যি এতদিন গোপন ছিল!
এদিকে মেয়েটি যখন শিহাবের দিকে আঙুল তোলে, তখনই ছেলেটি দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার সে সুযোগ হয় না। মুহূর্তের মধ্যে গ্রামবাসীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাকে ধরে ফেলে! তার চিৎকার শোনা যায়, কিন্তু কেউ করুণার দৃষ্টি দেয় না। তার চাচিকেও টেনে বের করে আনা হয়।
এহসান এবার কঠিন গলায় বলে,
— “তুমি বিচার পাবে, বোন! কঠিন বিচার! এমন বিচার, যা দেখে অন্যরা কেঁপে উঠবে!”
তারপর গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে বলে,
— “এই নোংরা মহিলাকে অর্ধেক গলা পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে দাও! তারপর মহিলারা—শুধু তোমরাই! আমার নির্যাতিত বোন সহ—পাথর নিক্ষেপ করে তার জীবন শেষ করবে!”
এরপর শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে,
— “আর পুরুষেরা! এটাকেও মাটিতে পুঁতে ফেলো! তারপর যতক্ষণ না সে মরে, ততক্ষণ পাথর মারো! এরপর লাশ বাজারের বড় গাছের সাথে ঝুলিয়ে দিও! যাতে আগামী শত বছর এই গ্রামে আর কেউ এমন কাজ করার সাহস না পায়!” তোমরা আছো বলে আমি আর এর বিচার নিজ হাতে নিলাম না”!
গ্রামের বুক কাঁপিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়ল উত্তেজিত জনতা! রাগে ফেটে পড়া চোখ, কণ্ঠে তীব্র ধ্বনি—তাঁদের থামানোর ক্ষমতা কারও নেই। এহসানের কথায় নয়, এটাই এই গ্রামের অলঙ্ঘনীয় নিয়ম!
“কোনো পুরুষ যদি কোনো নারীকে অসম্মান করে, তবে তার শাস্তি মৃত্যু!”
বড়োদের কণ্ঠে এ কথার উচ্চারণ মানেই চূড়ান্ত আদেশ। বিচার চলতে দেরি হয় না, উন্মত্ত জনতা ফাঁসির দড়ি গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেয়। বাতাস ভারী হয়ে ওঠে আতঙ্কে, পাখিরা যেন আর ডাকে না।
আর যদি কোনো নারী পরকীয়ায় লিপ্ত হয়, তবে?
“অর্ধেক মাটিতে পুঁতে পাথর নিক্ষেপ!”
এ এক ভয়ংকর শাস্তি! পাষাণ হৃদয়ের মানুষরাও পাথর হাতে নিলে রক্ত হিম হয়ে আসে। কিন্তু এ নিয়ম ভাঙার সাহস কার?
আজও সেই নিষ্ঠুর বিচারের আয়োজন করা হয়েছে। ছেলে ও তার মা—দুজনকেই পাশাপাশি মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। শুধু মাথা দুটো বেরিয়ে আছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাঁদের। চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের চোখে কোনো মায়া নেই, শুধু কঠিন শাসনের প্রতিচ্ছবি।
এহসান তাদের সামনে একটি চেয়ারে বসে। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেই মেয়ে, যার জীবন এতদিন নরকের আগুনে পুড়েছে।
ওদের সামনে রাখা হয় পাথর—বড়, ছোট, শক্ত কংকর।
এহসান মেয়েটির দিকে পাথর এগিয়ে দিয়ে বলে,
— “নাও, তুমি শুরু করো!”
মেয়েটি কাঁপা হাতে একটি পাথর তুলে নেয়। প্রথম পাথরটি তার হাত থেকে একটু ধীরে পড়ে। কিন্তু এরপর… এরপর আর সে থামে না! পাগলের মতো একের পর এক পাথর ছুঁড়তে থাকে! তার রাগ, তার ঘৃণা, তার সমস্ত যন্ত্রণা সে উগড়ে দেয় পাথরের আঘাতে!
গ্রামের মহিলারাও যোগ দেয়। তারা পাথর ছুঁড়ে মাটির নিচে থাকা সেই নারীকে শাস্তি দেয়!
এদিকে গ্রামের পুরুষেরা শিহাবকে পাথরের আঘাতে থেঁতলে দেয়।
ওরা চিৎকার করতে থাকে—
— “আমাদের ভুল হয়েছে! মাফ করে দিন!”
কিন্তু এহসান বজ্রকণ্ঠে গর্জে ওঠে,
— “নারীর অসম্মান যে করবে, তার একটাই প্রাপ্য— যা হলোএমন ভয়ংকর মৃত্যু! তোদের আরও কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত ছিল! কিন্তু তাও তোদের দয়া করা হলো!”
তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে,
— “বোন, তুমি নিজের ক্ষোভ মেটাও! যত ইচ্ছে মারো! এ তোমার প্রতিশোধ!”
এহসান আর দাঁড়ায় না। সে ধীরপায়ে তালুকদার বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে।
তার পেছনে তখনও পাথর পড়ার শব্দ, আর মাঝে মাঝে শোনা যায় একঝাঁক নারীর তৃপ্তির-হাসি।
শিহাব ও তার মা শেষবারের মতো চিৎকার করে ওঠে। তারপর… সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
সদর দরজার পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল বাড়ির মহিলারা। কিন্তু কেউও খুব বেশি কষ্ট পাননি। বরং তাদের চোখে ছিল এক ধরনের প্রশান্তি—আজ এক পাপের অবসান হয়েছে।
মেহনূরও এতক্ষণ চুপচাপ দেখছিল। কিন্তু যখন এহসান গেটের বাইরে চলে যায়, তখন সে ধীর পায়ে উপরের ঘরে উঠে আসে।
আজ এহসানকে খুন করতে দেখে তার একটুও ভয় লাগেনি, একটুও কষ্ট হয়নি। কারণ সে ছিল একজন ধর্ষক, আর ধর্ষকের একটাই শাস্তি—ভয়ংকর মৃত্যু!
মেহনূর দ্রুত আলমারি খুলে এহসানের জন্য একটি লুঙ্গি, টাওয়াল, আর মিসওয়াক বের করে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের কাপড়গুলো একবার দেখে নেয়, তারপর ধীর পায়ে নিচে নেমে আসে।
নিচে এসে দেখে, মাদ্রাসা থেকে ফিরে বাচ্চারা এখন নাস্তার জন্য টেবিলে বসছে।
মেহনূর একটু এগিয়ে যেতেই সবাই একসঙ্গে সালাম দেয়,
— “আসসালামু আলাইকুম, ছোট আম্মা!”
সে মৃদু হেসে জবাব দেয়,
— “ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ! কেমন আছো তোমরা?”
সবাই একসঙ্গে বলে,
— “আলহামদুলিল্লাহ, ভালো! আপনি কেমন?”
মেহনূর মুচকি হেসে বলে,
— “আলহামদুলিল্লাহ, আমিও ভালো আছি, আল্লাহর রহমতে।”
তারপর নিজের হাতে থাকা লুঙ্গি আর টাওয়ালের দিকে একবার তাকিয়ে বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বলে,
— “আচ্ছা, এগুলো কেউ একটু কষ্ট করে পুকুর ঘাটে রেখে আসবে?”
ইমরান কৌতূহল নিয়ে বলে,
— “কেন, ছোট আম্মা?”
মেহনূর কিছুটা বিব্রত হয়ে পড়ে। এখানে আমেনা বেগমও আছেন। সে চুপ করে গেলে আমেনা বেগম নিজেই বলে ওঠেন,
— “হ্যাঁ হ্যাঁ, বলো তো কেন?”
মেহনূর লজ্জা গিলে নেয়। এরপর শান্ত কণ্ঠে বলে,
— “তোমার ছোট আব্বা এখন গোসল করবেন। এর জন্য এগুলো রেখে আসো, নয়তো পরে এসে তাড়া দেবেন এগুলো দেওয়ার জন্য।”
এলিজা সাথে সাথেই বলে,
— “ও আচ্ছা! তাহলে দাও, আমি রেখে আসছি।”
মেহনূর কাপড়গুলো এলিজার হাতে তুলে দেয়। এলিজা এগুলো নিয়ে পুকুর ঘাটের দিকে হাঁটতে শুরু করে।
পুকুর ঘাটে পৌঁছে সে জয়নাল কে দেখে বলে,
— “জয়নাল চাচ্চু, ছোট আব্বার গোসলের সবকিছু আমি পুকুর ঘাটে রেখে এসেছি। ছোট আম্মা পাঠিয়েছেন!”
জয়নাল মাথা নাড়িয়ে বলে,
— “আচ্ছা আম্মা, আমি জানিয়ে দেব।”
এলিজা বাড়ির ভেতরে ফিরে যায়।
এদিকে এহসান ধীরে ধীরে গেট দিয়ে প্রবেশ করে। চোখ পড়তেই দেখে, জয়নাল মাটির ঘাস থেকে রক্ত পরিষ্কার করছে। এতক্ষণে লাশ নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয়েছে।
এহসান আদেশি কণ্ঠে বলে,
— “জয়নাল, এদিকে আয়। এটা অন্য কেউ করে নেবে।”
জয়নাল হাতের ব্রাশ অন্য এক জনের হাতে দিয়ে এহসানের দিকে এগিয়ে আসে।আর বলে
— “জি ভাইজান, বলুন।”
এহসান একটু থেমে বলে,
— “হাসিবরে ফোন দিয়েছিস?”
জয়নাল মাথা নাড়িয়ে বলে,
— “ও ভাইজান! হাসিব রফিকরে মাইরা তার কলিজা ছিঁড়িয়া লাশ এক জঙ্গলে জ্বালায় দিছে!”
এহসান মৃদু হেসে বলে,
— “যাক! শান্তি পেলাম। তুই এক কাজ কর, তৈরি হ। আজ অফিসে সুইডেন থেকে কয়েকজন আসবে, তাদের সাথে বোর্ড মিটিং আছে। তো আমি আর তুই গিয়ে মিটিংটা সেরে আসি।”
— “আইচ্ছা ভাইজান।”
এহসান তখন গম্ভীর গলায় বলে,
— “বাইরে থেকে কাউকে ডেকে বল, আমায় গোসলের কাপড় দিতে। পুকুরেই ডুবিয়ে এই হারাম রক্ত পরিষ্কার করতে হবে।”
জয়নাল তখন উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে,
— “ভাইজান, আফনের কাপড় তো পুকুর পাড়ে আফনের বেগম পাঠাইছে!”
এহসান ভ্রু কুঁচকে বলে,
— “আমার বেগম পাঠিয়েছে?”
— “জি ভাইজান, এলিজা আম্মায় আমারে কইছে!”
এহসান মৃদু হাসে। ধীরে ধীরে সামনে হাঁটতে থাকে।
তার মনে একটা তৃপ্তির অনুভূতি কাজ করে—তার বেগম তার কথাটা অন্তত একবার হলেও ভাবল! এটাই অনেক!
আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া!
এদিকে মেহনূর বাচ্চাদের নাস্তা করিয়ে উপরের ঘরে চলে আসে। উদ্দেশ্য—সবকিছু গুছিয়ে ফেলা।
আজকের সকাল ছিল রক্তাক্ত, কিন্তু তার পরেও এক ধরনের প্রশান্তি ছড়িয়ে আছে বাতাসে।
বাড়ির উঠোনে রক্তের শেষ চিহ্নটাও মুছে ফেলা হবে। তারপর শুরু হবে আরেকটি দিন—যেখানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আর অপরাধীদের জন্য কোনো করুণা নেই!
মেহনূর ঘরে ঢুকে দ্রুত ঘর গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঠিক তখনই দরজা ঠেলে এহসান ভেতরে প্রবেশ করে, কিন্তু মেহনূর তা টের পায় না। কারণ এহসান সোফার কক্ষে দাঁড়িয়ে, আর মেহনূর ব্যস্ত বিছানার চাদর ঠিক করতে।
পরিপাটি চাদর গোছাতে গোছাতেই হঠাৎ মেহনূর অনুভব করে, কেউ একজন ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। সে টের পেলেও মুখ তোলে না, কারণ সে জানে—তার চোখ খুব বেশি বেপরোয়া। যদি একবার এহসানের দিকে তাকায়, তো সে চোখ ফেরাতে পারবে না। তাই নিজের মনকে বোঝায়, সে কিছুই টের পায়নি, শুধু ব্যস্ততার অজুহাতে চোখ নামিয়ে চুপচাপ কাজ করতে থাকে।
কিন্তু এহসান কি এত সহজে তাকে ছেড়ে দেবে?
পর্দা সরিয়ে সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে, কাঁধে ঝুলে থাকা সাদা তোয়ালে থেকে এখনো ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ছে। পড়নে স্বাভাবিক লুঙ্গি, চুলের ভেজা ভাঁজগুলো থেকে সৌরভ ছড়িয়ে রয়েছে ।
একদম মেহনূরের পাশে দাঁড়িয়ে এহসান নিজের চুল মুছতে থাকে, আর সেই চুলের ভেজা পানি এসে পড়তে থাকে মেহনূরের কাঁধে। এহসানের শরীর থেকে ভেসে আসা সুগন্ধ একপ্রকার তীব্র ধাক্কা দেয় মেহনূরের মনে। তার হৃৎপিণ্ড দ্রুত লাফিয়ে ওঠে, হাতের কাজও কে জানি এলোমেলো হয়ে যেতে চায়।
পানি পড়ার অনুভূতিতে চমকে উঠে বিরক্তি নিয়ে মেহনূর মুখ তোলে বলে_
— “কি সমস্যা আপনার? এমন করছেন কেন?”
এহসান ম্লান হেসে নিজের কাঁধের তোয়ালেটা বিছানায় ছুঁড়ে দেয়। অতঃপর, কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়াই হাত বাড়িয়ে মেহনূরের কোমর ঝাপটে ধরে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে টেনে নেয়!
মেহনূর হতভম্ব হয়ে যায়!
সাধারণত এই মুহূর্তে তার প্রচণ্ড রাগ ঘৃনা হওয়ার কথা, কিন্তু কেন যেন রাগ হচ্ছে না। বরং এক ধরনের অদ্ভুত অনুভূতি মনের গহীনে ঢেউ তুলছে নিজ মনে। লজ্জায় শরীর কাঁপতে থাকে, মনে হয়—যেন এই লজ্জায় সে মাটির সাথে মিশে যাবে।
এহসান মেহনূরের চোখের গভীরে চেয়ে বলে—
— “সমস্যার কথা আর কিই বা বলবো জান, প্রথম সমস্যাটাই তো তুমি!”
মেহনূর বিস্ময়ে তাকিয়ে বলে—
— “আমি?”
এহসান এক হাত দিয়ে মেহনূরের মাথার ওড়না আলতো করে সরাতে সরাতে ফিসফিসিয়ে বলে—
— “হ্যাঁ, তুমি। কারণ আমি, এহসান—সব সামলাতে পারি। কিন্তু বিশ্বাস করো বেগম, তোমায় দেখার তৃষ্ণা না পারি আমি মেটাতে, আর না পারি সামলাতে!”
মেহনূর দ্রুত এহসানের হাত ঝাপটে ধরে—
— “কি করছেন? ওড়না সরাচ্ছেন কেন?”
এহসান মৃদু হেসে তার হাত সরিয়ে দিয়ে ওড়নাটা সরিয়ে ফেলে। এরপর মৃদু স্বরে বলে—
— “তোমার চুলে মুখ ডুবিয়ে দিব বলে!”
এ বলেই বিদ্যুৎ গতিতে মেহনূরের খোঁপা খুলে দেয়! মুহূর্তেই ঘন, দীর্ঘ, কালো চুল মেহনূরের পিঠে ছড়িয়ে পড়ে।
এহসান তার বাহুতে মেহনূরকে শক্ত করে ধরে পিছন ফিরিয়ে নেয়, আর নিজে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার গালে নিজের থুতনি রাখে।
মেহনূরের পুরো শরীর কেঁপে ওঠে! মনে হচ্ছে, তার প্রাণটাই বুঝি বেরিয়ে যাবে!
এহসান সেই কাঁপুনি টের পেয়ে মুচকি হেসে ফিসফিসিয়ে বলে—
— “জান, তুমি যদি এভাবে আমার এতটুকু স্পর্শে কাঁপতে থাকো, তাহলে আমি বাচ্চার বাপ হব কবে?”
মেহনূরের লজ্জায়, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়!
সে জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করে, তারপর অস্পষ্ট কণ্ঠে বলে—
— “ছাড়ুন! অসভ্য! ছাড়ুন বলছি!”
এহসান মেহনূরকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হেসে বলে—
— “বউয়ের সাথে অসভ্যতা না করে কি পাড়ার লোকের সাথে করব আমি অসভ্যাতামি, আমার বোকা নারী?”
মেহনূর এহসানের নিজের কোমরে পেছিয় শক্ত করে বাঁধা দুই হাত খামচে ধরে বলে—
— “ছাড়ুন বলছি!”
কিন্তু, এরপর আর কিছু বলার সুযোগ সে পায় না…
কারণ, পরম মুহূর্তেই এহসান নিজের উষ্ণ ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় মেহনূরের গাড়ে!
মেহনূর স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে। এহসানের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি তার গাড়ে বিঁধছে তীক্ষ্ণ সুঁচ এর মতো “!
এহসান ধীরে ধীরে মুখ তুলে নিয়ে মেহনূরের চুলের মধ্যে মুখ গুঁজে দেয়। গভীর নিশ্বাস নেয়, যেন সেই চুলের সুগন্ধ তার সমস্ত অস্তিত্বে ছড়িয়ে দিতে চায়।
তারপর মৃদু, তীব্র আবেগ মেশানো গলায় ফিসফিসিয়ে বলে—
— “তোমার এই চুলের ঘ্রাণ পাগল করে দেয় আমায়! তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠে তোমার প্রতি থাকা আমার ভালোবাসার অনুভূতি!”
মেহনূর পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু বলতেও পারছে না, নড়াচড়াও করতে পারছে না। যেন, সময় থেমে গেছে। এহসান নিজের মুখ মেহনূরের গলার দিকে এগিয়ে নিয়ে আসে, আর মেহনূরের গাল আর গলায় নিজের নাক ঠেকিয়ে নেয় “! এতে মেহনূর বিদ্যুৎ আঘাত পাওয়ার মত কেঁপে উঠে “! এহসান মেহনূর কে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে
— “ভীষণ ভালোবাসি তোমায়, আমি ভীষণ। আমার স্নিগ্ধ ফুল, ভীষণ ভালোবাসি!”
মেহনূর মুখ খোলে, তবে তাচ্ছিল্যের সাথে বলে—
— “জোর করে যা ভালোবাসার, তা বেসেনিন। এই দুদিনের দুনিয়ায় আখিরাত তো আর পারবেন না আমায় জোর করে নিজের করে রেখে নিতে!”
এহসান মৃদু হেসে, নিজেকে সামলিয়ে বলে—
— “ওহে, আমার বোকা নারী, তোমায় আমি দুনিয়াতেও চাই, আখিরাতেও চাই। চিরন্তন নয়, তোমায় আমি নিজের করে, চিরস্থায়ী চাই!”
মেহনূর তাচ্ছিল্য করে বলে—
— “দুনিয়ায় নিজের জোর খাটিয়ে পেয়ে গেছেন আমায়, কিন্তু আখিরাতে তো আর জোর কাটাতে পারবেন না, এহসান তালুকদার!”
এহসান তার গাল থেকে মুখ সরিয়ে, নিজের মুখ মেহনূরের গাড়ে বুঁজে দিয়ে বলে—
— “তোমায় আমি দুনিয়ায় নিজের জোর খাটিয়ে নয়, আল্লাহর কাছে ভিক্ষে চেয়ে নিয়েছি। জোর একমাত্র আল্লাহর কাছে আছে, আর কারো নয়। আল্লাহ আমার প্রতি দয়া করেছেন, বলেই আমি এহসান তোমায় নিজের করে পেয়েছি। তাই আখিরাতেও না হয় আমি আমার মাবুদের কাছে তোমায় ভিক্ষে চেয়ে নিব!”
মেহনূর স্তব্ধ হয়ে যায়, কিছু বলতে পারে না। এমন কথার উওর আর কিই বা দিবে?
এহসান তাকে ছেড়ে দিয়ে, নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তারপর, নিজের ঠোঁট মেহনূরের কপালে স্পর্শ করায়, আর তার মুখশ্রীর প্রতি এক প্রেমময়অনুভব করিয়ে দেয়। মেহনূর বারবার কেঁপে ওঠে, তবে তার কিছু বলার উপায় নেই। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, সে একটুও হলেও অনুভব করে এহসান তাকে ভীষণ ভালোবাসে।
এহসান মেহনূরকে নিজের বক্ষে আঁকড়ে ধরে নেয়, তারপর তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে—
— “হয়তো তুমি আমায় ভীষণ ঘৃণা কর, ভীষণ। তবে এতেও আমার শান্তি, কারণ আমার শুধু তোমায় লাগবে। এবার তুমি আমায় ভালোবাসো অথবা ঘৃণা কর, তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমি শুধু তোমায় চাই, শুধু তোমায়। শান্তি বাঁচার জন্য হলেও তোমায় চাই!”
এহসান এরপর মেহনূরকে ছেড়ে দেয়, কারণ তাকে অফিসে যেতে হবে, অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। মেহনূর কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
এহসান বলে—
— “আমার জন্য খাবার নিয়ে এসো, আমি বের হব। আর আমার স্যুট কোট এসব বের করে দিয়ে যাও!”
মেহনূর ত্যাড়ামি করে বলে—
— “আপনার স্যুট আমি কেন বের করব? আপনার কাজ আমি কেন করব?”
এহসান ধমক দিয়ে বলে—
— “বউ হস, তুই আমার! আমার কাজ তুই করবি না তো পাড়ার লোক করবে? বেয়াদব নারী, একটুও আদবে এলি না!”
ব্যাস মেহনূরের মনটা বিষাদ হয়ে উঠে “! এহসান কেন ধমক দিল তাও কিছুটা সাহস নিয়ে বলে—
— “আমি করব, আপনার সব কথা শুনব, তবে আম—আমায় আমায়…”
এহসান বুঝে যায় মেহনূর কী বলতে চায়, তাই ধমক দিয়ে বলে—
— “খবরদার, এখন যদি বলিস হাসপাতালে নিয়ে যেতে, তো তোর একদিন কি! আর আমার যতদিন লাগে, ততদিনে!”
এহসানের এমন ধমক শুনে মেহনূরের মুখে অন্ধকার নেমে আসে, আর নিচু গলায় বলে—
— “একটা বার নিয়ে যান না। আমি সত্যি বলছি, আপনার সাথে যাব। আর আপনি যেন আমাকে নিয়ে যেতে দেন!”
এহসান তাচ্ছিল্য করে বলে—
— “হ্যাঁ, নিয়ে যাব তোমায় আমি। আর গিয়ে আমার থেকে চলে যাওয়ার দান্দা করবে তুমি! এসব হবে না, আমার বাচ্চার মা। যাও, তাড়াতাড়ি কাপড়চোপড় বের করে, গিয়ে আমার স্যুটগুলো বের করে দাও!”
মেহনূরের ভীষণ রাগ হয়, তাই দাঁত চেপে বলে—
— “দেখবেন, দেখে নিয়েন আপনি। আমায় ভালোবাসেন না, বলেছেন তো ভালোবাসেন। এটা যদি সত্যি হয়, তবে দেখে নিয়েন একদিন আমিও আমার আব্বার মতো আধমরা হয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকব, আর আপনি আমায় দেখতে ছটফট করবেন, কিন্তু আফসোস—পারবেন না দেখতে, যেমন আমায় দিচ্ছেন না দেখার সুযোগ!”
মেহনূরের এমন কথা মুখ থেকে বের করতে দেরি হয়, তবে টাশ করে এহসান তার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিতে দেরি করেনি। এহসানের থাপ্পড় খেয়ে মেহনূরের পৃথিবী যেন ঘুরতে থাকে। মনে হয়, ঘরের দেয়ালগুলো ধসে পড়বে এবং মেহনূর পড়ে যাবে। ঠিক তখনই, এহসান তার বাহু চেপে ধরে, দাঁত চেপে বলে—
— “খারাপের বাচ্চা, যদি এমন কথা আর মুখ দিয়ে বের করেছিস, তো আমি তোকে নিজে আধমরা করে দেব! সাহস হয় কী করে, তোর এত বড় কথা বলার? জিব কেটে ফেলব! আর যদি এমন বানী আমি শুনি!”
মেহনূর নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করে, কিন্তু তার চোখ থেকে অশ্রু ঝরে পড়ে। সে টিপে চোখের পানি মুছে বলে—
— “একটা কথার জন্য মারলেন?”
এহসান মেহনূরের থুতনি আলতো করে ধরে, গম্ভীরভাবে বলে—
— “হ্যাঁ, মারলাম। তোর অভ্যাসে তুই মার খেয়েছিস, আমার কিছু করার নেই। যা, গিয়ে খাবার নিয়ে আয়, আমার জন্য!”
এ বলে, এহসান মেহনূরকে ছেড়ে না দিয়ে,
নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় মেহনূরের সেই গালে, যে গালে সে থাপ্পড় মেরেছিল। বারবার কয়েকবার গভীরভাবে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে, এহসান মেহনূরের গালকে স্পর্শ করে। তারপর মেহনূরকে ছেড়ে দিয়ে বলে—
— “খাবার নিয়ে আয়!”
মেহনূর আর এক মুহূর্ত দেরি করে না। বিলাইয়ের মতো চোখের জল চুপি চুপি মুছে, ঘর থেকে বেরিয়ে যায়, উদ্দেশ্য এহসানের জন্য খাবার নিয়ে আসা।
এহসান মেহনূর চলে যাওয়ার পর, দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে—
— “তোমায় যে কী করে সামলাই, একমাত্র আল্লাহই জানেন!”
এই বলে, সে কাপড় রাখার কক্ষে প্রবেশ করে, উদ্দেশ্য অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া।
মেহনূর কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে আসে। কক্ষে এসে দেখে, এহসান বেরিয়ে আসছে কাপড় রাখার কক্ষে থেকে মেহনূর একনজর তাকায় এহসানের পানে “! যার পরনে আজ সবসময় এর মতো পাঞ্জাবি পায়জামা নয় বরং
তার পরনে একটি কালো রঙের স্যুট, সাদা শার্ট, আর সাথে ম্যাচিং কালো টাই। তার স্যুটের কাঁধে, ম্যান-ফিট ডিজাইনে কাটানো, পুরোপুরি পালিশ করা লেদার জুতো এবং হাতের তালুতে একটি সিলভার ওয়াচও রয়েছে,
তার উপরে, একটি কালো সুট কোট, যা নিখুঁতভাবে পরা,তার সুটের পকেটে একটি ছোট লাল সিল্কের হ্যান্ডকারচিফ সাবধানে রাখা”!
মেহনূর নিজের চোখ কে সামলিয়ে নেয় নয়তো এই এহসান তালুকদাররে ভয়ংকর সৌন্দর্যে কে দেখে না আবার নিজের চোখি নষ্ট করে নেয়, দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সোফার সামনে রাখা টেবিলে খাবার রেখে, এহসানকে উদ্দেশ্য করে বলে—
আত্মার আগলে পর্ব ২৩
— “এই নিন, খেয়ে নিন!”
এ বলে, মেহনূর বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
এহসান মেহনূরের দিকে তাকিয়ে, এগিয়ে আসতে আসতে বলে—
— “এখানে দাঁড়া!”
মেহনূর থমকে দাঁড়িয়ে, বলে—
— “কি হয়েছে?”
এহসান তার সামনে এসে দাঁড়ায়, আর মেহনূরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।