আত্মার আগলে পর্ব ২৪
সানজিদা আক্তার মুন্নী
এহসান সোফায় গিয়ে বসে। মেহনূর কাছে যাওয়ার সাথে সাথে তার শরীরে সেই মারাত্মক ঘ্রাণ মেহনূরের নাকে এসে লাগে। মেহনূর চোখ বন্ধ করে এক মুহূর্তের জন্য সেই ঘ্রাণ অনুভব করতে থাকে। এক মুহুর্ত দু”মুহুর্ত এরপর এহসান মেহনূরের দিকে তাকিয়ে বলল—
—-“আজ থেকে একমাত্র আমি যখন টেবিলে বসে খাব, তখনই নিজ হাতে খাব, আর যদি নিজ ঘরে বসে খাই, তোকে খাইয়ে দিতে হবে। তাই এখন বেয়াদবি না করে একজন ভালো বেগমের মতো স্বামীর সেবা কর।”
মেহনূরের গায়ে ফুসকা পড়ে যায় একপ্রকার এহসানের এমন নবাবী আবদার শুনে তাই দাঁত চেপে বলে,
—-“আমি পারব না, খাইয়ে দিতে।”
এহসান ওর এমন কড়া কথা শুনে ধমকের সুরে বলে,
—–“আর একটা ত্যাড়া কথা বললে, এখন খাবার না খেয়ে তোকে খেয়ে নিব কাঁচা কাঁচা। বেয়াদ্দব বান্দি, খাবার মুখ তুলে দে।”
মেহনূর কটমট করে তাকিয়ে ওর পানে খাবারের প্লেট হাতে তুলে নেয়। তার হাতে চুড়ি বারবার কাচের প্লেটের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে, যা থেকে হালকা শব্দ হচ্ছে। এহসান চোখ বন্ধ করে সেই শব্দ উপভোগ করে। আজ তার বেগমকে, নিজের বেগম মনে হচ্ছে।
মেহনূর একটু টুকরো রুটি তরকারির সাথে মিশিয়ে এহসানের দিকে বাড়ালে, এহসান মুখ খুলে তা নিজের মুখে তুলে নেয়। মেহনূর বিরক্তি নিয়ে বলে,
—–“দয়া করে তাড়াতাড়ি গিলে নিন! আপনার মতো, আমার রসে রঙ্গে দিন যাচ্ছে না যে, আপনায় সারাদিন শুধু খাওয়ার খাওয়াতেই কাটিয়ে দেব।”
এহসান মেহনূরের দিকে তাকিয়ে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
—-“তোর এই বেয়াদবি নিয়ে আমি ভীষণ চিন্তায় আছি। পরে আবার তোর মতো বেয়াদব না হয়ে যায়, আমার বাচ্চা-কাচ্চা গুলোও ভীষণ চিন্তায় ভুগছি আমি।ভীষণ!”
মেহনূর দাঁত চেপে বলে,
—-“কথায় কথায় বাচ্চা-বাচ্চা করেন কেনো ? আর আপনি বাচ্চা পেলেন কোথা থেকে? কাল ভাইজানদেরও মিথ্যা বললেন কেন? এত খারাপ কেনো আপনি,?”
এহসান মৃদু হেসে বলে,
—-“আজ না কাল, তুই তো আমার বাচ্চার মা হবেই, তাই আগেই চিন্তা মাথায় নিয়ে নিলাম! এখন তো আমায় খারাপ বল, আর ভালো!”
মেহনূর রেগে ফুসে উঠে বলে,
—-“এমন সপ্ন কখনও বাস্তব হবে না, এহসান তালুকদার! আপনি সারাজীবন নির্বংশ থাকবেন। নির্বংশ! যদি আমায় নিজের বাচ্চার মা বানাতে চান তো!”
এহসান মৃদু হেসে বলে, “.
+——চুপ থাক, বেয়াদ্দব বান্দি! দেখে নিস, তুই-ই হবে আমার বাচ্চার জন্মদাত্রী জননী!”
মেহনূর এহসানের মুখে খাবার পুড়ে দিয়ে বলে,
— “এই অসভ্য! জবান দিয়ে দয়া করে আর কোনো বানী বের করবেন না, দয়া করে মাফ করুন। নাউজুবিল্লাহ মাবুদ, তুমি আশ্রয় দাও আমায়!”
এহসান হাসতে হাসতে বলে,
—- “আচ্ছা, আর কিছু বলব না। রাতে এসে বলব। এখন যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে, পানি খাইয়ে দে!”
মেহনূর বিরক্তি নিয়ে বলে,
—- “হাতে কি গজব পড়েছে যে, পানিও আমার খাইয়ে দিতে হবে?”
এহসান ভেবেচিন্তে বলে,
—-“হ্যা, দিতে হবে! আর গজব আমার হাতে না পড়লেও, তোর জবানে একদিন পড়বে, এই যে কথাবার্তা বলিস, এই জবান দিয়ে!”
মেহনূর এহসানের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়, ওর ঠোঁটে গ্লাস ঠেকিয়ে দেয়। এহসান নিজ হাতে পানির গ্লাস তুলে নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে তিন বারে পানি খেয়ে নেয়।
পানির গ্লাস টেবিলে রাখতেই, মেহনূর নিজের হাতে প্লেট টেবিলের উপর রেখে, বা হাত দিয়ে নিজের ওড়না দিয়ে এহসানের মুখ মুছে দেয়। কারণ, সে জানে এখন যদি সে ওর মুখ না মুছে দেয়, তো সে ঠিকই কয়েকটা অসভ্য কথা বলে মুখে মুছিয়ে নিবে এহসান ।
মেহনূর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
—- “এবার দয়া করে, যেদিকে যাওয়ার সেদিকে চলে যান। আপনার যন্ত্রণা আমি আর নিতে পারছি না!”
কিন্তু এহসান যায় না। উল্টো বসে থেকে তাকে আদেশ করে,
—- “এই প্লেটে যে অবশিষ্ট খাবার রয়েছে, তা চুপচাপ খেয়ে নে।”
মেহনূর অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
—-“কেন আমি এখন খাব? কেন আর আপনার এটা খাব?”
এহসান হালকা এগিয়ে এসে মেহনূরের কাঁধে নিজের হাত রাখে
—-, “আমি জানি মহারানী, আপনি সকাল থেকে কিছু খাননি, তাই চুপচাপ খেয়ে নিন। আর স্বামীর এটু খেলে ভালোবাসা বাড়ে, তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন, নয়তো আমি আমার মতো চেষ্টা করব!”
মেহনূর আর কিছু না বলে, এক পলক দাঁত চেপে এহসানের পানে তাকিয়ে, তারপর আবার সোফায় বসে নিজের মুখে খাবার নিয়ে নেয়।
এহসান মেহনূরের পাশে বসে থাকে যতক্ষণ না সে খাবার খায়। মেহনূর ক্ষিদে পেয়েছে, কিন্তু কেন জানি কিছু খেতে ইচ্ছে হয় না। মনে অশান্তি থাকলে, শান্তিতে খাওয়া যায় না, মেহনূর জানে।
অনেক কষ্টে কয়েক টুকরো রুটি গিলে, তারপর পানি খেয়ে নেয়।
এহসান দেখে,
—–“এত কম খেলে হবে? তুমি যদি এত কম খাও, তাহলে তুমি চলবে কী করে? আর আমার বাচ্চা চলবে কী করে?”
মেহনূর কান পঁচে যাচ্ছে এহসানের কথা শুনতে শুনতে, কিন্তু তাও সে কিছু বলে না। জানে, যদি কিছু বলে, এহসান আবার ত্যাড়ামি শুরু করবে। তাই চুপচাপ উঠে যায়।
মেহনূর উঠে দাঁড়াতেই এহসানও উঠে দাঁড়ায়। মেহনূর যখন চলে যাবে, তখনই এহসান তার হাত দিয়ে মেহনূরের বাহু পিছন থেকে ধরে ওকে আঁটকে নেয় ।
মেহনূর বিষ্ময়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় ওর পানে। তখনি এহসান ওর গালে আলতো হাতে হাত স্পর্শ করে, তারপর নিজের মুখ মেহনূরের দিকে এগিয়ে নিয়ে ওর কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ায় গভীরভাবে কয়েক বার।
এরপর, কপাল থেকে মুখ তুলে, মেহনূরের চোখের দিকে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে ওর গালে হাত রেখে নিজের বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে স্পর্শ করতে করতে বলে,
;——–“যেমন শান্ত আছো, তেমনি থেকো। আমি আসার আগ অব্দি কোনো চালাকি করিও না, বেগম। যদি এমন কিছু করো, তবে বুঝতেই পারছো, এর ফল কতটা ভয়ংকর হবে!”
মেহনূর কিছু বলে না, শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এহসানের দিকে। এই পুরুষের জন্যই আজ তার বাবা চাচারা হাসপাতালে পড়ে আছে, আব্বা আধমরা। অথচ সে এই পাপিষ্ঠ পুরুষের অধীনে দাঁড়িয়ে আছে। এক অদ্ভুত অনুভূতি তাকে ঘিরে রেখেছে—আজ আর ঘৃণা লাগছে না, তবে ভালোও লাগছে না। সব কিছু যেন গুলিয়ে যাচ্ছে, নিজের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে না।
মেহনূরে, এহসানের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে এসব ভাবনায় ডুবে থাকে।
এহসান তার নারীর চোখের এই দৃষ্টি আজ আবার দেখতে পায়, যা সে সেদিন ছাঁদে পেয়েছিল, আজও আবার পেয়ে গেল—ভয়ংকর সুন্দর তার নারীর এই দৃষ্টি । এহসান মেহনূরের চোখের দিকে তাকিয়ে, নেশাগ্রস্ত গলায় বলে,
—-“আমার পাপিষ্ঠ অন্তর অব্দি ঝলসে দিয়েছে তোমার এই আঁখি জোড়া!”
মেহনূর এহসানের কথায় নিজ ভাবনায় ডুবে থাকে, পরে থতমত খেয়ে বলে,
—-“ছাড়, নানা… নিচে যেতে হবে
এহসান মুচকি হেসে মেহনূরকে ছেড়ে দেয়, তারপর দুজনে হাঁটা ধরে নিচের দিকে ।
নিচে এসে, মেহনূর কোনো দিকে না তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়, আর এহসান, এনিসা বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে, জয়নালকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
রাত ১০ টা
মেহনূর বেলকনিতে রাখা একটি সোফায় বসে আছে ঠান্ডার মধ্যে, তবে তার গায়ে এহসানের একখানা চাদর জড়ানো, যে চাদর মেখে আছে তার পাপিষ্ঠ পুরুষের শরীরে ঘ্রাণ!!
মেহনূরের হাতে তাসবি নিয়ে বসে বসে দুরুদ জিকির পড়ছে আর নিস্তব্ধ গেটের দিকে তাকিয়ে আছে এই আশায়, কবে যে এহসান বাড়ি আসবে, কারণ এনিসা বেগম তো ওকে দায়িত্ব দিয়েই দিয়েছেন যে এহসানের খাওয়া-দাওয়া যা যা প্রয়োজন সব মেহনূরের দায়িত্ব। আর মেহনূর সে আর কি করবে, এসবি করছে, তাই তো যাকে ঘৃণা করে তার জন্য নিজের ঘুম হারাম করে বসে বসে অপেক্ষা করছে!
আজ মনটা একটু হলেও শান্ত, কারণ বিকেল বেলা আমেনা বেগমের ফোন দিয়ে মেহরুবকে ফোন করেছিল, জানতে পেরেছে সবই ঠিক আছে। আল্লাহর হুকুমে তার আব্বা জানও একটু সুস্থ আছেন, চাচারাও আর বাড়ির সবাইও ঠিক আছেন!
এসব ভাবতে ভাবতে গাড়ির শব্দ কানে আসে, স্পষ্ট দেখতে পায় তার পাপিষ্ঠ পুরুষ হাজির। তাই আর এক মুহূর্ত দেরি না করে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়, তারপর গায়ের চাদর খানা সোফায় রেখে তাড়াতাড়ি পা চালায়। উদ্দেশ্য সদর দরজা খুলে দেওয়া, যেমন ভাবা তেমন কাজ, তাড়াতাড়ি নিচে চলে আসে এসে সদর দরজার দিকে হাত বাড়ায়!
এদিকে এহসান, যে”ইনা বাইরে থেকে দরজা খুলার জন্য পকেট থেকে চাবি বের করে দরজায় লাগাতে যাবে, তখনই হুট করে দরজা খুলে যায়। এহসান কিছুটা থমকে যায়, কারণ এটা তার সাথে প্রথমবার হলো!
দরজার দিকে চোখ যেতেই তার মন প্রাণ অন্তর পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে যায়, প্রশান্তি চলে আসে আপনাআপনি তার ভিতরে । অজান্তেই এক চিলতি হাসি ঠোঁটের কোনায় ফুটে ওঠে ! তার নারী যে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে, তার স্নিগ্ধ ফুল দাঁড়িয়ে আছে, তবে আজও তাকে কবুতরের বাচ্চার মতো লাগছে, নামাজের হিজাব যে পড়ে আছে!
এহসানকে এভাবে নিজের পানে তাকিয়ে দেখতে মেহনূর ওকে উদ্দেশ্য করে সালাম দেয়
— আসসালামু আলাইকুম।
সালাম দেওয়াটা তাদের সবারই অভ্যাস, কেউ বাড়িতে প্রবেশ করলে কাউকে সারাদিন দেখলে!
মেহনূরের সালাম দেওয়া নিজ ধ্যান ভেঙে, এহসান মুচকি হেসে বলে
— ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ
এ বলে এহসান বাড়িতে প্রবেশ করার দোয়া মনে মনে পড়ে, বাড়িতে পা রাখে!
এহসান ভিতর আসতেই মেহনূর দরজা লাগিয়ে দেয়!
তখনই এহসান ওর পানে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে
— কি রে কবুতরের বাচ্চা, এখনো ঘুমাসনি কেন?
কবুতরের বাচ্চা এমন উক্তি শুনে মেহনূরের কপাল কুচকে আসে, তবে এসব ছেড়ে বলে
— আপনাকে খাইয়ে দাইয়ে উদ্ধার না করে কি করে ঘুমাই বলুন তো?জোর করে রেখেছেন তো এনে নিজের সেবা করাতে!
এহসান মৃদু হেসে সোফার দিকে এগিয়ে যায় এবং নিজের হাতে থাকা ব্যাগগুলো সোফার উপর রেখে দেয়। অতঃপর মেহনূরের দিকে এগিয়ে এসে কোনোকিছু না বলেই হুট করে মেহনূরকে নিজের কোলে তুলে নেয়!
হঠাৎ এমন হওয়ায় মেহনূর চমকে উঠে, কিছুক্ষণ সময় নেয়, অতঃপর বুঝে কি হলো তার সাথে! বুঝতে পেরেই তেঁতে উঠে বলে
—— কি করছেন টা কি নামান বলছি? এভাবে কোলে তুললেন, কোন কারণে?
এহসান মেহনূরের দিকে তাকিয়ে, ওর কোমরে রাখা নিজের হাত আরও শক্ত করে ধরে, হেসে বলে
— প্রতিদিন তো তোকে দু-এক বার করে কোল নিতে হয়, কোনো না কোনো কারণ, কিন্তু আজ তো কোনো কারণ পেলাম না, তাই এমনিই নিলাম। অভ্যাস হয়ে গেছে তো, তাই!
মেহনূর বিরক্তি নিয়ে বলে –
— এই, আপনি না সারাদিনে বাড়ি ফিরলেন, তাহলে ক্লান্ত লাগে না একটুও? ক্লান্ত হন এসব নাটক করতে?
এহসান সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বলে
— সারাদিনের কি সারাজীবনের ক্লান্তি উড়ে যায়, নারী যখন তোমার এই নিষ্পাপ মুখশ্রী পানে তাকাই আমি!
এহসানের এমন কথা শুনে মেহনূর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে
— হয়েছে, নাটক বন্ধ করুন।
এহসান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
— তোমার কাছে নাটক হতে পারে, তবে আমার কাছে এটাই চিরসত্য!
এ বলে এহসান ওর এক হাতে যত্নে কোমরে চেপে, নিজের আপন নারীকে সযত্নে ঘরে নামিয়ে দেয়!
মেহনূর এহসানের থেকে ছাড় পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নিতে নিতে, নিজে নিজেকে বলে –
— আল্লাহ মাবুদ!
এহসান ওকে বলে
—- কিছু বললি মেহনূর?
ওর পানে তাকিয়ে বলে
— দয়া করে গোসল টোসল করে নিচে আসুন, আমি খাবার দিচ্ছি!
এহসান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
— কোনো ভর্তা আছে আজকে খাবারের ভোজনে?
মেহনূর ওর কথায় একটু ভেবে বলে
— না, নেই।
এহসান ওর দিকে তাকিয়ে বলে
—- তাহলে যা, আমার জন্য কোনো কিছু দু’একটা ভর্তা তৈরি কর, আমার ইচ্ছে হচ্ছে তোর হাতের ভর্তা খেতে!
এহসানের এমন আদেশ শুনে মেহনূর বলে
— শুকরিয়া আদায় করুন, আপনার মতো পাপিষ্ঠ পুরুষের জন্য, আমি নিজের ঘুম হারাম করে আপনায় খাওয়ার দিচ্ছি, আর এখন নাকি আপনায় আমি ভর্তা বানিয়ে দেব, পারব না আমি এসব ফালতু কাজ, এই মাঝ রাতে!
এহসান মেহনূরের কথা শুনে ধমক দিয়ে বলে
— বেয়াদ্দব নারী, তুই আর আদবে এলি না? এখন যদি আমি ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে না পারি, তো সোজা তোকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে নিয়ে শুকরিয়া আদায় করব! যা গিয়ে ভর্তা তৈরি কর!
এ বলেই এহসান কাপড় রাখার কক্ষে প্রবেশ করে, উদ্দেশ্য লুঙ্গি নিয়ে আসা!
মেহনূর আর কি করবে, সেই বেহায়া বিলাইয়ের মতো, তর্ক করেও জিততে না পেরে, নিচে রান্নাঘরে চলে আসে!
অতঃপর, নিজ পাপিষ্ঠ পুরুষের জন্য ভর্তা তৈরি করতে থাকে, একটা ডিম সেদ্ধ করে নয়, আর কতগুলো শুঁকনো মরিচ ভেজে নেয়! গরুর মাংসের তরকারির পাএ থেকে কয়েক টুকরো মাংস নিয়ে নেয়।
তারপর পেঁয়াজ-টেয়াজ সব কিছু দিয়ে ডিম ভর্তা, মাংস ভর্তা আর শুঁকনো মরিচ ভর্তা তৈরি করে নেয়, একটা লেবুও কেটে নেয়!
একটা প্লেটে পরিমাণ মতো ভাত বেড়ে নেয়, আর ভর্তাগুলো বাটিতে নিয়ে টেবিলে রেখে আসে!
টেবিলের উপর যখন পানির জগ থেকে গ্লাসে পানি রাখছিল, তখনই মেহনূর লক্ষ্য করে, এহসান সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে, ফোন ঘাটতে ঘাটতে, যার এলোমেলো ভেজা চুল আর পড়নে কালো একটা টিশার্ট আর সাদা লুঙ্গি!
সাথে সাথে, নিজের চোখ নামিয়ে নেয়, নয়তো এ চোখ বারবারই এই পাপিষ্ঠ পুরুষের দিকে যাবে, কি এক নির্লজ্জ চোখ, তার ছিঃ ছিঃ! এসব মনে মনে আওড়াচ্ছে মেহনূর, তখনই এহসান ওর পাশে এসে দাঁড়ায়, সাথে সাথে ওর শরীরে ঘ্রাণ মেহনূরের নাকে এসে লাগে! মেহনূর নিজেকে স্থির করার জন্য এক লম্বা ঘন শ্বাস নেয়!
কিন্তু এহসানের কাজি তো ওকে যন্ত্রণা দেওয়া, তাই ওর একদম নিকটে পিছনে এসে দাঁড়ায়, যার ফলে মেহনূরের অস্বস্তি তিনগুণ বেড়ে যায়, এহসানের ভেজা শরীরে ঘ্রাণ তাকে মাতোয়ারা করে তুলছে।
এহসান কিছু সময় চুপ থেকে, আলতো গলায় বলে
— মানতে হবে, কবুতরের বাচ্চা, তুই যতই বেয়াদ্দব হস না কেনো, কিন্তু কাজেরও কিন্তু বটে!
মেহনূর নিজেকে সামলিয়ে, হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে এহসানের পানে তাকিয়ে বলে_
— দয়া করে মায়া করে খাবারটা খেয়ে নিন!
এহসান মেহনূরের কথায় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে, চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে
— এবার মহারানী, আপনি আমায় দয়া করে একটু মায়ার সহিত খাবারগুলো আমার মুখে তুলে দিন!
মেহনূর জানতো, এই অসভ্য পুরুষ এমন কিছুই বলবে, তাই দাঁত চেপে ভাতের প্লেট হাতে তুলে নেয়, আর মাংসের ভর্তা প্লেটে নিয়ে মাখাতে মাখাতে, দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলে
— মন তো চাচ্ছে, বিষ মিশিয়ে মেরে দিতে খাবারের সাথে!
এহসান ওর এমন কথা শুনে মৃদু হেসে বলে,
— মেরে তো ফেলেছিস নিজের মায়ায় জড়িয়ে অনেক আগই, এখন আর কি নতুন করে মারবি?
মেহনূর দাঁত চেপে এহসানের মুখ খাবার তুলে দিতে দিতে বলে,
— হ্যাঁ, আমি তো আপনায় বলেছিলাম যে বাবা আসুন, এসে আমার মায়ায় পড়ে মরে যান, যত্তসব নাটক।
এহসান খাবার চিবতে চিবতে বলে,
— ইয়া রাব্বে কারীম, আমি চেয়েছিলাম একজন মুত্তাকী বেগম, আর আপনি আমার কপালে জুটাইলেন এক আস্ত বেয়াদ্দব!
মেহনূর রাগি গলায় বলে,
— আমার রব বলেছেন, যাও, গিয়ে ওকে বিয়ে কর, আপনি নিজেই তো কীর্তি করে আমায় নিজের কপালে জুটায়েছেন!
এহসান নিজের মুখ খাবার নিতে নিতে বলে,
— আমার রব চেয়েছেন বলেই আমি এহসান তোকে নিজের করে পেয়েছি!
তারপর ফের মেহনূরের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে,
— এই তোকে না করেছিলাম খয়েরী রঙের কিছু না পড়তে, তাহলে আজও কেন পড়েছিস?
মেহনূর হতবাক হয়ে নিজের দিকে তাকায়, তারপর দাঁত চেপে বলে,
— আমার ইচ্ছে হয়েছে পড়েছি, তাতে আপনার কি?
এহসান মুচকি হেসে বলে,
— পরে কিন্তু আমি বেসামাল হয়ে তোতে ডুব দিলে, আবার আমায় দোষ দিস না, বেকুব নারী!
মেহনূর এহসানের মুখ খাবার তুলে দিতে দিতে বলে,
— পাপিষ্ঠ পুরুষ তো পাপিষ্ঠ জাবানি হবে!
এহসান ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,
— আমি পাপিষ্ঠ হলে কি হবে, তুই তো আছিস এই পাপিষ্ঠ পুরুষের এক পবিএ অস্তিত্ব!
মেহনূর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
— নাটকের কথা বন্ধ করুন, আর পানি টা খেয়ে নিন।
এ বলে মেহনূর প্লেটটা নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়, এহসান পানি খেয়ে টেবিলে রাখা বাটিগুলো হাতে তুলে নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায় এবং বেসিনে এগুলো রেখে মেহনূরকে বলে,
— রান্নাটা ভালো হয়েছে, তাই এরজন্য একটু সাহায্য করলাম, আবার ভাবিস না বউয়ের চামচে হয়ে গেছি।
মেহনূর বাটি গুলো ধুতে ধুতে বলে,
— আপনাকে এসব বলার, না আছে আমার আগ্রহ, আর না আছে রুচি!
এহসান ওর দিকে এগিয়ে এসে ওর নামাজের হিজাবে নিজের মুখ মুছে নিতে থাকে। মেহনূর এটা দেখে বড় গলায় বলে,
— কি করছেন? টা কি? এটা দিয়ে আমি নামাজ পড়ি?
এহসান মুখ মুছা শেষ করে কোনো উত্তর না দিয়ে যেতে যেতে বলে,
— আমার মুখ নাপাক নয়, তাই মুছলে সমস্যা হবে না।
মেহনূর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সব কিছু একমনো গুছাতে থাকে। এহসান টেবিলের উপরে রাখা সুপারির থালা থেকে এক টুকটো সুপারি মুখ দিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়!
মেহনূর কাজ শেষ করে সোফায় রাখা এহসানের ব্যাগ হাতে তুলে নিয়ে ঘরে চলে আসে, এসে দেখে এহসান সামনের কক্ষের সোফায় শুয়ে বই পড়ছে। লুঙ্গি পড়া তাই এহসানের পায়ের দিক টাকনু উপরের কিছু টা অংশ দেখা যাচ্ছে “! মেহনূরের চোখ আটকে যায় এহসানের ফর্সা লোম যুক্ত পায়ে তবে সাথে সাথে নিজের চোখ নামিয়ে নেয় আর পরে লজ্জায় নিজে নিজেকে গালি দিতে দিতে
হাতের ব্যাগগুলো অন্য সোফায় রেখে বাথরুমে চলে যায়, হাত মুখ ধুয়ে ওযু করে বেরিয়ে আসে!
এহসান মেহনূরের ওযু পড়ারি অপেক্ষায় বসে ছিল, নিজে ওযু করে! ওযু করে এসে মেহনূরের মনে আসে, এহসানের চাদর তো সে বেলকনিতে রেখে এসেছে, তাই বেলকনিতে যায়, উদ্দেশ্য চাদর খানা চুপিসারে জায়গামতো রেখে দেওয়া!
তাড়াতাড়ি বেলকনিতে গিয়ে চাদর খানা গুছিয়ে নিয়, গুছিয়ে নিয়প যেই না পিছনে ঘুরবে, তখনই ওর নাকে এহসানের শরীরে ঘ্রাণ এসে ঠেকে, মুহূর্তেই কেঁপে উঠে, সাথে বুঝে যায়, এহসান তার পাশেই।
তাই তাড়াতাড়ি চাদর খানা আবারও সোফায় রেখে দেয়, তখনই এহসান পিছন থেকে ওকে বলে,
— আমি তোর স্বামী, আর আমার জিনিস ব্যবহার করার পর এত আতংকিত হওয়ার কিছু নেই, বুঝেছিস বোকা নারী!
মেহনূর এহসানের কথা থমকে যায়, সে নিজেও জানে, এহসান তাকে কিছু বলবে না, কিন্তু এই নির্লজ্জ পুরুষ যে তাকে কথায় কথায় শরম দেয়।
যদি এখনও এমন করে, তাই তো চুপিসারে রেখে দিতে চেয়েছিল! কিন্তু সে তো আর নিজের দোষ শিকার করবে না, তাই পিছনে ঘুরে বলে,
— ক-কই, আমি আতংকিত হয়েছি? আপনি সব বুঝেন মনে হয়।
এহসান মুচকি হেসে মেহনূরের দিকে এগোতে এগোতে বলে,
— হ্যা, গো, আমি সব বুঝি, তোমার পায়ের পাতা থেকে তোমার মাথা অব্দি, প্রতি মুহুর্তে, মুহুর্তে কি চলছে, তুমি কি ভাবছো, সব বুঝি আমি, সব!
মেহনূর মেকি হেসে বলে,
— ভুল ধারণা।
এহসান মেহনূরের সামনে এসে বলে,
— কীভাবে বুঝলে?
মেহনূর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
— যদি আপনি আমার অন্তরের অবস্থা জানতেন, তাহলে কি আর আমার সামনে আমার বাপকে আধমরা হতে দিতেন?
এহসান মেহনূরের দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে প্রতি সময়ের মতো ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বলে,
— তোমার অবস্থা বুঝি বলেই নারী, তোমার বাপ আধমরা ছিল, নয়তো মরা থাকত।
এহসানের এমন কথা শুনে মেহনূর আহত গলায় বলে,
— আপনি বুঝবেন না, আপনাদের কষ্টে দেখতে কতটা ভয়ংকর যন্ত্রণা হয়, যদি জানতেন, তাহলে এমন বলতেন না।
এহসান আহত সুরে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
— হাহ, নিজের ভাইয়ের রক্ত দিয়ে গোসল করা, আমি এহসান, নিজের বড় বোনের নিজ চোখে ইজ্জত হরণ হতে দেখা, আমি এহসান,! নিজের ভাইয়ের বউয়ের ইজ্জত হরণ হতে দেখা, আমি এহসান, “!নিজের ভাতিজার ছোট্ট কলিজা ছিঁড়ে নিতে দেখা, আমি এহসান, “!
নিজের বাপকে আপন ছেলের রক্ত দিয়ে গোসল করা, আমি এহসান, “!আরও কত বিরল, কত নির্মম হত্যা নিজ চোখে দেখা, আমি এহসান, জানিস তোর বাপ চাচা যদি সেদিন মরেও যেত, আর তুই যতটা কষ্ট পেতি, তার এক ভাগের সমান হতো না আমার চাপা কষ্টের কাছে, বুঝলি বোকা নারী, আমি পাপিষ্ঠ, এতে চাইনি, এই দুনিয়ার নিকৃষ্ট মানুষ আমায় বাধ্য করেছে তা হতে!
মেহনূর এহসানের কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়! কিছুক্ষণ থমকে গিয়ে বলে,
— আপনি বুঝেন তো আপনজনের হারানোর ভয়? তাহলে কেন একটা বার আমায় আমার আব্বার সাথে কথা বলতে দিচ্ছেন না?
এহসান মেহনূরের দিকে তাকিয়ে বলে,
— কেন? আজ বিকেলে যে কথা বললি, সেটা কি যথেষ্ট নয়?
মেহনূর চমকে উঠে, কি রে জানল? এহসান এটা, মেহনূরকে চমকে যেতে দেখে, এহসান মৃদু হেসে বলে,
— তুই কি ভাবলি, আমি কিছু জানি না? মনে রাখিস, তুই এই বাড়িতে কি করছিস, কি বলছিস, কিভাবে হাঁটছিস, কি খাচ্ছিস, তা প্রতি মুহুর্তে, মুহুর্ত আমার জানা, তা হয় তাকে।
এহসান ফের বলে,
— বাপকে দেখবি?
মেহনূর যেন চাঁদ হাতে পাওয়ার মতোন চমকে উঠে, তার চোখ উচ্ছ্বাসে চকচক করে উঠে, আগ্রহ নিয়ে বলে,
— হ্যা, হ্যা দিবেন, একটা বার দেখতে?
এহসান মুচকি হেসে, মেহনূর কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে,
— হুম, একটা বার নয়, একদিনের জন্য দেখতে দিব, তবে আমার কয়েকটি শর্ত মেনে নিতে হবে বেগম, তোমায়।
মেহনূর চোখ বন্ধ করেছিল, ফের হুট করে চোখ খুলে বলে,
— বলুন, আমি সব শর্তে রাজি।
— সত্যি তো?
— হুম।
এহসান মৃদু হেসে বলে,
— তাহলে শুন, যদি এখন থেকে তুই আমার একজন মুত্তাকী স্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করবি, একদম একজন মুত্তাকী স্ত্রী, আর মুত্তাকী মা পারবি?
মেহনূর থমকে যায়, এহসানের এমন শর্তে, সে তো তা কখনোই পারবে না। এই পুরুষের স্ত্রী হওয়া টা কি আদৌও কি সে পারবে মেনে নিতে, তার মন তো মানবে না, কিন্তু তার যে তার বাবা কেও দেখাই লাগবে, প্রাণটা বেরিয়ে যাচ্ছে জন্য! কোনোকিছু না ভেবে, বোকা মেহনূর বলে দেয়,
— হ্যা, আমি রাজি।
এহসান নিজের হাত ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
— কথা দে।
মেহনূর কিছু মুহূর্ত ভেবে, কাঁপা কাঁপা হাত, এহসানের হাতে রাখে আলতো করে আর বলে,
— কথা দিলাম।
সারা শরীর কাপছে, মেহনূরের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তা সে কথা দিয়ে দিয়েছে! এহসান মুচকি হেসে, মেহনূর কে ঝাপটে, আগলে নেয় আপন বুকে, এর পর তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলে,
— তাহলে কাজ শুরু করে দাও।
মেহনূর থমকে যায়, কিসের কথা বলছে এই পুরুষ? কি করবে সে! এহসান, মেহনূরের মাথা, নিজ বুক থেকে আলতো সরিয়ে, ওর দুই কাঁধে হাত রেখে বলে,
— তুমি যখন কথা দিলে তো তা পূর্ণ কর, আর তোমার প্রথম কাজ হচ্ছে আমায় তেলাওয়াত শুনানো। এখন থেকে যখন তুমি তেলাওয়াত করবে, তখনই আমিও শুনব। সেসময় যদি আমি তোমার পাশে থাকি! আর তাহাজ্জুদের সময় আর ফজরের সময় তো আমায় শুনাইতে হবে!
মেহনূর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে, সে তো ভেবেছিল এহসান না আবার নিজের অধিকার চেয়ে বসে, কিন্তু এমন কিছুই হয় না। তখনি, এহসান ওকে বলে,
— এইটার আস্তা রেখো, যে আমি তোমার অনুমতি ছাড়া তোমার উপর নিজের কৃতিত্ব ফলাব না, তবে…
মেহনূর ঢুক গিলে বলে,
— তব, তবে কি?
এহসান, নিজের মুখ, মেহনূরের কানের কাছে নিয়ে আসে, যার ফলে, এহসানের গরম উষ্ণ নিশ্বাস, মেহনূরের গালে আঁচড়ে পড়ে! মেহনূর কেঁপে উঠে, তখনি, এহসান, ওর কানে ফিসফিসয়ে বলে,
— তবে কিন্তু দিনে কয়েকবার কোলে নেওয়া আর চুমু দেওয়া, এটা কিন্তু আমি তুমি অনুমতি দিলেও করব, আর না দিলেও করব! বুঝলে, আমার বোকা নারী!
মেহনূর, এহসানের এমন কথা শুনে, ওর বুক বরাবর ধুপ করে এক ধাক্কা দিয়ে বলে,
— চুপ করুন, বেহায়া পুরুষ, লজ্জা করে না!
এহসান মুচকি হেসে, মেহনূরের হাত ধরে নিয়ে, ওকে সোফায় বসায়, এবং নিজেও বসে, আর বলে,
— নাও, একটা সুন্দর নাশিদ শুনাও। কোরআন শুনেছি, তোমার গলা থেকে নাশিদ শুনিনি।
মেহনূর কিছু মুহূর্ত চুপ থাকে, তারপর গলা পরিষ্কার করে, মনে মনে বিসমিল্লাহ পড়ে, শুরু করে একটা সুন্দর নাশিদ
—-أشرقت نفسي بنورٍ من فؤادي
حينما رددت “يا رب العبادِ”
وانتشت روحي وصار الدمع يجري
يا إلهي خذ بقلبي للرشادِ
أشرقت نفسي بنورٍ من فؤادي
حينما رددت “يا رب العبادِ”
وانتشت روحي وصار الدمع يجري
يا إلهي خذ بقلبي للرشادِ
أشرقت نفسي بنورٍ من فؤادي
حينما رددت “يا رب العبادِ”
وانتشت روحي وصار الدمع يجري
يا إلهي خذ بقلبي للرشادِ
في سكون الليل أدعو في سجودي
والدجى حولي سوادٌ في سوادِ
يا رؤوفاً، يا رحيماً، يا حليماً
يا كريماً، ما لفضلك من نفادِ
يا سميعاً، يا مجيباً، يا عظيما
اهدني يا خالق السبع الشدادِ
أشرقت نفسي بنورٍ من فؤادي
حينما رددت “يا رب العبادِ”
وانتشت روحي وصار الدمع يجري
يا إلهي خذ بقلبي للرشادِ
أشرقت نفسي بنورٍ من فؤادي
حينما رددت “يا رب العبادِ”
وانتشت روحي وصار الدمع يجري
يا إلهي خذ بقلبي للرشادِ
للهدى والحق وفقني إلهي
فعلى توفيقك اليوم اعتمادي
يا إله الكون، يا عوني وغوثي
يا ملاذ الخلق في يوم المعادِ
فها أنا يا ربي أرجو منك عفوا
فاعفو عن ذنبي وحقق لي مرادي
أشرقت نفسي بنورٍ من فؤادي
حينما رددت “يا رب العبادِ”
وانتشت روحي وصار الدمع يجري
يا إلهي خذ بقلبي للرشادِ (يا عظيماً)
أشرقت نفسي بنورٍ من فؤادي
حينما رددت “يا رب العبادِ”
وانتشت روحي وصار الدمع يجري
يا إلهي خذ بقلبي للرشادِ
আত্মার আগলে পর্ব ২৩ (২)
অর্থ :
আমার হৃদয়ের আলোয় আমার আত্মা আলোকিত হয়
যখন আমি মানবজাতির প্রতিপালকের প্রশংসা করলাম
আর আমার আত্মা প্রফুল্ল হয়ে উঠল এবং অশ্রুধারা বইছিল
হে আল্লাহ! আমার হৃদয়কে বিচারবুদ্ধির দিকে পরিচালিত করো।
আমার হৃদয়ের আলোয় আমার আত্মা আলোকিত হয়
যখন আমি মানবজাতির প্রতিপালকের প্রশংসা করলাম
আর আমার আত্মা প্রফুল্ল হয়ে উঠল এবং অশ্রুধারা বইছিল
হে আল্লাহ! আমার হৃদয়কে বিচারবুদ্ধির দিকে পরিচালিত করো।
আমার হৃদয়ের আলোয় আমার আত্মা আলোকিত হয়
যখন আমি মানবজাতির প্রতিপালকের প্রশংসা করলাম
আর আমার আত্মা প্রফুল্ল হয়ে উঠল এবং অশ্রুধারা বইছিল
হে আল্লাহ! আমার হৃদয়কে বিচারবুদ্ধির দিকে পরিচালিত করো।
রাতের প্রশান্তিতে আমি আমার সিজদায় প্রার্থনা করি
যখন আমার চারপাশে কালো অন্ধকার
হে দয়ালু! হে পরম করুণাময়! হে পরম সহনশীল!
ওহ দয়ালু! তোমার উপহারের কোন শেষ নেই।
হে সর্বশ্রোতা! হে উত্তরদাতা! হে পরম মহিমান্বিত!
হে শক্তিশালী শিকারী প্রাণীদের স্রষ্টা! আমাকে পথ দেখাও!
আমার হৃদয়ের আলোয় আমার আত্মা আলোকিত হয়
যখন আমি মানবজাতির প্রতিপালকের প্রশংসা করলাম
আর আমার আত্মা প্রফুল্ল হয়ে উঠল এবং অশ্রুধারা বইছিল
হে আল্লাহ! আমার হৃদয়কে বিচারবুদ্ধির দিকে পরিচালিত করো।
আমার হৃদয়ের আলোয় আমার আত্মা আলোকিত হয়
যখন আমি মানবজাতির প্রতিপালকের প্রশংসা করলাম
আর আমার আত্মা প্রফুল্ল হয়ে উঠল এবং অশ্রুধারা বইছিল
হে আল্লাহ! আমার হৃদয়কে বিচারবুদ্ধির দিকে পরিচালিত করো।
হে আল্লাহ, পথনির্দেশনার প্রতি, সত্যের প্রতি, দেবত্বের প্রতি।
আমি আজ তোমার নির্দেশনার উপর নির্ভর করছি।
হে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আল্লাহ, তুমিই আমার সহায়।
তুমি পরলোকে মানুষের আশ্রয়স্থল।
আমি আল্লাহ, তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার ইচ্ছা পূরণ করো।
আমার হৃদয়ের আলোয় আমার আত্মা আলোকিত হয়
যখন আমি মানবজাতির প্রতিপালকের প্রশংসা করলাম
আর আমার আত্মা প্রফুল্ল হয়ে উঠল এবং অশ্রুধারা বইছিল
হে আল্লাহ! আমার হৃদয়কে বিচারবুদ্ধির দিকে পরিচালিত করো (ওহ অসাধারণ)।
আমার হৃদয়ের আলোয় আমার আত্মা আলোকিত হয়
যখন আমি মানবজাতির প্রতিপালকের প্রশংসা করলাম
আর আমার আত্মা প্রফুল্ল হয়ে উঠল এবং অশ্রুধারা বইছিল
হে আল্লাহ! আমার হৃদয়কে বিচারবুদ্ধির দিকে পরিচালিত করো।