আত্মার আগলে পর্ব ২৫+২৬
সানজিদা আক্তার মুন্নী
বড় তালুকদার বাড়ির বসার কক্ষটা আজ থমথমে। সবাই উপস্থিত, কিন্তু পরিবেশে যেন চাপা বারুদের গন্ধ। সকলেই ক্ষুব্ধ, আর সেই ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু একমাত্র ব্যক্তি—এহসান।
গত এক সপ্তাহে একটার পর একটা ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে সে। চারটে খুন! যদিও প্রতিটিই কারণসিদ্ধ, তবুও এভাবে খুন করে কি রাজনীতি টিকে থাকে? নির্বাচন এসে গেছে, এখন সামান্য ভুলও ভয়ানক বিপদ ডেকে আনতে পারে। রাজনীতির খেলা তীক্ষ্ণ বুদ্ধিতে খেলতে হয়, কিন্তু এহসান যেন আগুনের সঙ্গে নাচছে!
মনিরুল সাহেব কাল রাতে মজলিশ থেকে ফিরে বিষয়টা শুনে চিন্তিত হয়েছিলেন, কিন্তু নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন—এহসান তার ছেলে, সে ভুল করবে না।
কিন্তু আজ সকালে পত্রিকা খুলতেই যেন হৃদপিণ্ড এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল!
“—পুলিশ অফিসার হামিনের বিকৃত মরদেহ উদ্ধার! স্থানীয় লোকজন তার দেহ থানার সামনে পেয়েছে, যেখানে হাত-পা নৃশংসভাবে টুকরো টুকরো করা হয়েছে।”
তিনি আর কিছু পড়লেন না। চোখ তুলে সরাসরি তাকালেন এহসানের দিকে।
পত্রিকা টেবিলে ছুঁড়ে দিয়ে কঠিন স্বরে বললেন,
— “এটা কী, এহসান? তুমি কেন করেছো? এখন যদি কেউ টের পেয়ে যায়?”
এহসান ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল,
— “আব্বা, এই পুলিশটা কী ছিল জানেন? কোনো অসহায় মানুষের কেস নিত না, ঘুষ খেত, অপরাধীদের পেছনে না ছুটে উল্টো তাদের রক্ষা করত। আমি শুধু ন্যায্য বিচার করেছি।”
মনিরুল সাহেব ভ্রু কুঁচকে পত্রিকার বাকি অংশ পড়তে থাকলেন।
“অফিসার হামিন মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারই কোনো সহযোগী প্রতিশোধ নিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।”
তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এহসান শান্ত গলায় বলে উঠে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— “আব্বা, এসব বাদ দিন। আজ বিকেলে একটা বড় জনসভা আয়োজন করা হয়েছে। আপনাকে সেখানে থাকতে হবে। ভাইজান, আপনিও।”
মেহনূর তাড়াতাড়ি ঘর গুছিয়ে নিচ্ছে। তাড়াতাড়ি ঘরের কাজ শেষ করে রান্নাঘর যেতে হবে, নাহলে পরে এহসান এসে এটা-ওটা বলে ঝামেলা করবে। সে জানে, এহসান ইচ্ছে করেই তাকে বিরক্ত করার অজুহাত খোঁজে!
সব গুছিয়ে নিয়ে কাপড় রাখার কক্ষে প্রবেশ করে মেহনূর । সেখানে ঢুকেই বিরক্তিতে মুখ শক্ত করে ফেলল—!কেননা এহসান
বাচ্চাদের মতো সব এলোমেলো করে রেখেছে। শার্ট, পাঞ্জাবি, রুমাল—সব এদিক-ওদিক ছড়িয়ে আছে। মেহনূর দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেগুলো একে একে গুছিয়ে রাখতে লাগল।আর মনে মনে কয়েকটা গালি দিলও এহসান কে
ঠিক তখনই বাইরে থেকে পায়ের আওয়াজ শোনা গেল।
— “এহসান!”
সে মুহূর্তেই বুঝে গেল—এহসান চলে এসেছে! তাই দ্রুত সব কাজ শেষ করে ধীর পায়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এল উদ্দেশ্য কোনো দিকে না তাকিয়ে পারলে দৌড় দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া ।
বেরিয়েই সামনাসামনি এহসানের চোখে চোখ পড়ে যায় মেহনূরের। এহসান ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
— “কী রে কবুতরের বাচ্চা! দরজা বন্ধ করে কী করছিলি ঐ ঘরে?”
মেহনূর কটমট করে তাকা ওর পানে ।
এই পুরুষটা এমন আজব নাম ধরে কেন ডাকে সবসময়?
কঠিন গলায় বলে,
— “আপনি এসে যে এটা-ওটা ছড়িয়ে রেখে যান, সেগুলোই গুছিয়ে নিজেকে উদ্ধার করছিলাম!”
এহসান মুচকি হেসে এক পা এগিয়ে এল।
— “ওহ, তাহলে সুন্দর করে বলা যায় না? বেয়াদবি কেন করিস?”
মেহনূর জানে, এহসান আর এক পা এগোলে সে লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। তাই দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চায় “! নয়তো এখন এসেই কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এক গাঁধা নির্লজ্জ কথা বলবে”! তাই চুপিসারে কেটে পড়াটাই উওম “! তাই কোনো কথা না বলে চুপচাপ এহসানের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিতে লাগল। কিন্তু এহসান কি তাকে এত সহজে যেতে দেবে?
সে আলতো হাতে মেহনূরের বাহু টেনে ধরে সামনে এনে দাঁড় করায়। তারপর নিঃশব্দে ওর কোমরে হাত রেখে ওকে শক্ত করে টেনে নিল নিজের বুকের কাছে। আর মেহনূর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে
— “কাল রাতের কথা মনে আছে তো?”
মেহনূর এতক্ষণ লজ্জায় চোখ নামিয়ে ছিল, কিন্তু এহসানের কথায় তার শরীর মুহূর্তে জমে গেল।
এহসান তার নিজের নারীর মুখশ্রী পানে এক পলক তাকাল—চোখ নামানো, গালে হালকা লাল আভা, ঠোঁট কাঁপছে। এই স্নিগ্ধ সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করে বারবারই
এহসান আলতো করে নিজের মুখ মেহনূরের দিকে এগিয়ে নিয়ে, নিজের অধর ছুঁইয়ে দেয় বারবার কয়েক বার মেহনূরের কপালে।
মেহনূর চোখ বুঁজে নেয় লজ্জায় চোখ বুঁজে নেয় মেহনূর
কেন জানি না, এই পাপিষ্ঠ পুরুষের স্পর্শে অদ্ভুত এক শান্তি লাগছে। হৃদয়ের গভীরে যেন এক নতুন অনুভূতির জন্ম নিচ্ছে।
এহসান ধীরে ধীরে ওর কপাল থেকে ঠোঁট সরিয়ে নেয়, কিন্তু এত সহজে ছাড়ার জন্য সে ওকে ধরে রাখেনি।
সে তার মুখ আরও কাছে এনে মেহনূরের চোখে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল।
মেহনূর মুহূর্তেই কেঁপে উঠে, এহসানের দাঁড়ির খসখসে স্পর্শ তার নরম ত্বকের সঙ্গে মিশে গেল।
এহসান মৃদু হাসল। তারপর আপন নারীর লজ্জা মাখা মুখখানার পানে কিছু মুহুর্ত তাকিয়ে থাকে “! অতঃপর অতি যত্নে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় আপন বক্ষস্থলে।
মেহনূরও যেন স্বাভাবিকভাবে মাথা রেখে দিল ওর বুকের ওপর। এটাতে অভস্ত্য হয়ে গেছে “! আগে এই বুকে মাথা রাখলে শরীর মনে জ্বলে উঠতো “! অথচ এখন এই পাপিষ্ঠ বুকের বা পাশে মাথা রাখলে মনে হয়, একটা নিরাপদ স্থান পেলো”!
এহসানের বুকের গভীর থেকে ভেসে আসা পিট-পিট আওয়াজ শুনতে পেল মেহনূর ।
এই শব্দ… এটা কি এহসানের হৃদস্পন্দন?
কেন এত জোরে চলছে?
সে কান পেতে শুনতে লাগল, তার পাপিষ্ঠ পুরুষের হৃদয়ের গতি! কিছু মহুর্ত এক ধ্যানে শুনতে থাকে মেহনূর
এহসান মেহনূর কে চুপ থাকতে দেখে বলে
— “তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও, বেগম। সকালে নিয়ে যাচ্ছি, রাতে গিয়ে নিয়ে আসব।”
মেহনূর কোনো উত্তর দিল না, শুধু শক্ত করে এহসানের বুকে মাথা রেখে রইল
এহসান আবারও বলে
— “আর শোনো, তোমার উপর ভরসা করেই ওদের কাছে দিয়ে আসব। কোনো ত্যাড়ামি কোরো না, নইলে বুঝে নিও আমি কী করব!”
মেহনূর এহসানের বুকে মাথা রেখেই আস্তে মাথা নাড়ল।
— “হুম… মনে থাকবে… শুধু নিয়ে যান…”
এহসান মৃদু হাসল।
— “একটা আবদার রাখবে?”
মেহনূর চুপ রইল কিছু মুহুর্ত তারপর বলল
— “কি?”
এহসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
— “আমায় একবার জড়িয়ে ধরবে?”
মেহনূর স্তব্ধ হয়ে গেল তারপর মলিন গলায় বলে
— “ধরতে পারব… তবে ভালোবাসা নিয়ে নয়, ঘৃণা নিয়ে।”
এহসান মৃদু স্বরে বলল,
— “আমি জানি, আমি তোমার ঘৃণারই যোগ্য। তাই অন্তত ঘৃণা নিয়েই জড়িয়ে ধরো!”
কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর মেহনূর আস্তে করে ওর হাত জড়িয়ে ধরল।
এহসান এক মুহূর্তও দেরি করল না।
ওকে আরও শক্ত করে নিজের বক্ষস্থলে জড়িয়ে নিল
সময় যেন থমকে গেল।
কয়েক মুহূর্ত কেটে গেল, কিন্তু এহসান ছাড়ল না।
মেহনূর হাঁপিয়ে ওঠে ফিসফিস করে বলল,
— “দম বন্ধ হয়ে আসছে… ছাড়ুন!”
এহসান হেসে আস্তে করে ওকে ছেড়ে দিয়ে ওর গালে হাত রেখে বলল
— “যাও, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও!”
মেহনূর মাথা নাড়িয়ে কাপড় রাখার কক্ষের দিকে পা বাড়াল।
আজ সে অন্যরকম একটা শান্তি অনুভব করছে।
এক অজানা অনুভূতি
প্রস্তুত হয়ে এহসানের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল।
গাড়ির সিটে বসে সে বারবার এহসানের দিকে তাকাচ্ছে
কেন যেন মনে হচ্ছে, সে কিছু একটা অনুভব করছে…
এই মানুষটা, যে তার জীবনে ঝড় তুলে দিয়েছিল, সে কি আজ তার আশ্রয় হয়ে উঠছে?
এহসানের শক্ত হাতে স্টিয়ারিং চেপে ধরা, গভীর দৃষ্টি সামনের রাস্তায় স্থির।
মেহনূর জানে না, কেন তার হৃদয় এত অস্থির হয়ে উঠছে…
সে কি এখন সত্যিই তাকে ঘৃণা করে?নাকি এই ঘৃণার মধ্যেই লুকিয়ে জন্ম নিচ্ছে এক নিঃশব্দ ভালোবাসা?
এত সুন্দর পুরুষ, এত নিখুঁত তার সৌন্দর্য, মেহনূর কখনোই ভাবেনি এমন একজন তাকে চাইবে। হ্যাঁ, সে নিজেও সুন্দর, তবে এহসান এর চেয়ে উঁচু কাউকেই পেতেই পারতো। তার ব্যক্তিত্ব, তার সৌন্দর্য, তার ক্ষমতা—সবই যেন তাকে অনায়াসে পরাজিত করতে পারতো। কিন্তু কেনো এহসান তাকেই ভালোবাসল?
আর বড় হওয়ার পর তো কখনোই তার সামনে পড়েনি। হ্যাঁ তবে মাদ্রাসায় যাওয়ার সময় এহসানের সামনে সে পড়েছে তবে তখন, তার পুরো শরীর পর্দায় ঢাকা থাকতো, চোখ পর্যন্ত। তাহলে এহসান তাকে দেখল কীভাবে?
মেহনূর এহসানের পানে তাকিয়ে এসব ভাবতে ব্যস্ত ছিল। এহসান বারকয়েক খেয়াল করেছে, তার নারী তার পানে এক দূষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সে ঠিকই বুঝতে পেরেছিল, তার বেকুব নারী কিছু নিয়ে ভাবছে। এমনভাবে তাকিয়ে থাকলে অন্য কোনো কারণ হতে পারে না। এহসান খুব ভালো করেই জানত, সে কখনোই মেহনূরকে ভুল বুঝবে না।
এহসান শুঁকনো কাশি দিয়ে বলে,
— যা ভাবছ, সেই ভাবনার মূল কেন্দ্রবিন্দু কি আমি?
এহসানের এমন হঠাৎ প্রশ্নে, মেহনূর একপ্রকার হন্তদন্ত হয়ে নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে। তার চোখের সামনে ঘুরতে থাকে চারপাশের দৃশ্য। অবশেষে সে বলে,
— কই… না কি… ভাবছি…
এহসান মুচকি হেসে বলল,
— মেয়ে, তুমি কি ভাব? আর ভাবছো, সব আন্দাজ করতে পারি, তাই লুকিয়ে লাভ নেই। তাই ভালয় ভালোয় বলে দাও, কি ভাবছিলে?
মেহনূর একটু থতমত খেয়ে বলল,
— আমি যা ভাবার ভেবেছি, আপনায় কেন বলব?
এহসান তার মুচকি হাসিতে কিছু বলল না, কিন্তু মেহনূর জানতো, সে ঠিকই বুঝে গিয়েছে কিছু একটা নিয়ে ভাবছে সে। আর তা সম্পর্কে পরিস্কারভাবে জানলেই, হয়তো কিছু একটা বদলাতে পারে।
মেহনূর আবার তাকায় না এহসানের দিকে, চুপচাপ বসে থাকে। হঠাৎই, গাড়ি থামানো হল। তারা হাসপাতালের সামনে পৌঁছেছে। এহসান গাড়ি থেকে নেমে, প্রথমে নিজের মুখ ঢেকে নেয়। এরপর মেহনূরের হাত ধরে তাকে নিয়ে যায় হাসপাতালের ভিতরে।
হাসপাতালের ভেতর, যেখানে মেহনূরের বাবা ছিলেন, সেদিকে নিয়ে গেলো এহসান। হঠাৎ করেই, মেহরুবের চোখ পড়ে মেহনূরের দিকে। তার মুখে এক চিলতি হাসি ফুটে ওঠে।
এক মুহূর্ত দেরি না করে, সে দ্রুত এগিয়ে যায় মেহনূরের দিকে।
মেহনূর, এহসানের দিকে তাকিয়ে বলে,
— হাতটা ছাড়ুন, একটা-বার জড়িয়ে ধরি ভাইজানকে।
এহসান তার হাত ছেড়ে দেয়, মেহনূর গিয়ে ঝাপটে ধরে তার ভাইজানকে। মেহরুব তাকে বুকে আগলে নিয়ে বলে,
— কেমন আছিস, বোন?
মেহনূর ওর বুকে মাথা রেখে বলে,
— ভালো, ভাইজান, তুমি আব্বা কেমন আছেন, সব ঠিক আছে তো?
মেহরুব মেহনূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
— আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, সব ঠিক আছে, সব আল্লাহ ঠিক রেখেছেন।
এই সময়েই তৌফিক তালুকদার তাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। মেহনূর, মেহরুবের থেকে নিজের শরীর এলিয়ে দিয়ে উনাকে সালাম দেয়,
— আসসালামু আলাইকুম মেঝো চাচা, কেমন আছেন?
তৌফিক তালুকদার মৃদু হেসে মেহনূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
— ভালো রে মা, তুই কেমন আছিস?
অতঃপর, এহসানের দিকে তাকিয়ে বলেন,
— জানি, ভালো, থাকবি না, পশুর কাছে আছিস তো, ভালো থাকবিই কি করে?
মেহনূর পরিস্থিতি দেখে, তার হাত নিজের হাতে মুড়ে নিয়ে বলল,
— না না, আমি ভালো আছি।
তারপর এক পলক এহসানের পানে তাকিয়ে ফের উনার দিকে তাকিয়ে বলে,
— উনি খুব যত্নে রাখেন আমায়, তোমরা চিন্তা করো না।
তখনই, এহসান দৃঢ় গলায় বলে,
— আমার বাচ্চা আর বাচ্চার মাকে কয়েক ঘণ্টার জন্য তোদের কাছে রেখে যাচ্ছি, তাই নিজেদের বোন আর ভাতিজি কে যা দেখার দেখে নে।
তারপর মেহনূরের দিকে তাকিয়ে বলে,
— বেগম, কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছো, মনে আছে তো? তোমায় ভরসা করে রেখে গেলাম, কোনো চালাকির ধান্দা পাকিও না, এতে তোমরি মঙ্গল।
এ বলেই, এহসান তার চাদর খানা টেনে ঠিক করে বেরিয়ে যায়।
মেহরুব দ্রুত মেহনূরকে জিজ্ঞেস করে,
— ওকে কিসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিস?
মেহনূর, আহত গলায়, এহসানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,
— সারাজীবন উনার মুত্তাকী স্ত্রী হয়ে থাকার।
তৌফিক তালুকদার তেতে উঠে বলেন,
— কি বলছিস, তুই ঐ পশুর জীবন সঙ্গী হয়ে জীবন পার করবি? না, এটা কখনোই সম্ভব নয়, তোকে আজই আমরা বাড়ি নিয়ে যাব।
মেহনূর কিছু বলে না, কারণ সে জানে, যাই বলুক, সে তো শুধুই ঐ পাপিষ্ঠ পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী। এহসান তালুকদার, মৃত্যুর আগ অবধি তাকে নিজ বুকেই আগলে রাখবে ।
মেহনূর মুচকি হেসে বলে,
— আব্বা কে দেখব আমি?
তখনই, ক্যাবিনের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে মেহরাজ, সাথে একজন নার্স। মেহনূরকে দেখে, নিজের হাতের রিপোর্ট খানা নার্সের হাতে তুলে দিয়ে দৌড়ে এসে মেহনূরকে জড়িয়ে ধরে, মেহনূরের হিজাবের উপরি কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
— তুই এসেছিস, কিভাবে এলি? ভালো আছিস তুই?
মেহনূর মৃদু গলায় বলে,
— উনি দিয়ে গেছেন, আমি ভালো আছি।
মেহরাজ কিছু মুহূর্ত চুপ থেকে, মেহনূরকে নিজের থেকে আলাদা করে বলে,
— তুই আমাদের সাথেই যাবি, আর সব ব্যবস্থা আমি করব, আজ তুই নিজের বাড়ি যাবি।
মেহনূর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
— আচ্ছা, যাব, আব্বাকে দেখতে পারব?
— হ্যা, চল।
এ বলে, মেহরাজ, মেহনূর, মেহরুব ক্যাবিনে প্রবেশ করেন, যেখানে হাসপাতালের সাদা বিছানায় শুয়ে আছেন তাদের আব্বা জান।
মেহনূর দৌড়ে গিয়ে বিছানার পাশে রাখা বসার চেয়ারে বসে, নিজের বাবার হাত আঁকড়ে ধরে, অজস্র বার ঠোঁট ছুয়ে থাকে। মাজহারুল সাহেব কিছু বলতে পারছেন না, শুধু নিজের মেয়ে পাগলামি দেখছেন, মেহনূর চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে, নিজের বাবার পানে।
মেহনূর ধীর ধীরে তার চোখের পানি মুছে নিজের আব্বার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
— আব্বা, ঠিক আছেন তো? আপনি দেখুন, আপনার আম্মাজান হাজির হয়ে গেছেন আপনার দরবারে।
মাজহারুল সাহেব কিছুই বলেন না। তার চোখে পানি এসে যায়, গলার মধ্যে কথা আটকে যায়। মেহনূর, বাবার কপালে চুমু দিয়ে ধীরে ধীরে তার নিকাব খুলে নেয়, তারপর নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে বাবার কপালে। মাজহারুল সাহেব চোখ বুঁজে নেন, যেন তার মেয়ের স্পর্শে নিজেকে আবার জীবিত মনে করেন।
মেহনূর, নিজের বাবার থেকে মুখ সরিয়ে, দৃঢ় গলায় বলে,
— আব্বা, কোনো চিন্তা করবেন না। আল্লাহ আপনাকে সুস্থতা অতি শিগগিরই দান করবেন। আপনি জানেন তো, وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ, [যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তাকে যথেষ্ট।]
এই কথা বলেই, মেহনূর যেন কিছুটা শান্তি পেল, কিন্তু তৌফিক তালুকদার তখনি হন্তদন্ত হয়ে এসে ক্যাবিনে প্রবেশ করেন।
— মেহরাজ, তুই মেহনূর কে নিয়ে বেরিয়ে পড়। আশেপাশে এহসানের কোনো লোক নেই, আর মেহরুব আর আমি ভাইজান কে নিয়ে আসছি হাসপাতাল থেকে।
মেহনূর একটু চমকে গিয়ে বলল,
— না চাচা, এটা সম্ভব নয়। উনি নিয়ে যাবেন আমায়।
তখন মেহরাজ তীব্র কণ্ঠে ধমক দিয়ে বলে,
— তোর কাছে কে বড়? ও না, আমরা তোকে আজ বাড়ি যেতেই হবে। প্রাণ হোক বা তুই আমাদের না থাকলে নিজেকে মরা মরা লাগে।
মেহরাজ, মেহরুব এবং মেহনূর বাড়ি নিয়ে আসে।মেহনূরের অমত ছিল পরে নিজের পরিবার কে দেখার লোভ সামলাতে পারেনি তাই চলেই এসেছে
বাড়ির উঠানে পা রেখে মেহনূর একপলক এদিকে-ওদিকে তাকায়। মনে হয়, কত যুগ পর সে তার নিজ ঘরে ফিরেছে—এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব হচ্ছে।
ধীরে পায়ে সে বাড়ির সদর দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে, ভেতরের সোফায় বসা কক্ষে তার দাদাজানকে দেখে, তিনি চোখ বুঁজে বসে আছেন,
মেহনূর ধীর গলায় উচ্চারণ করে,
— দাদাজান।
নিজের ফুলের ডাক কানে আসতেই, মুস্তফা সাহেব চোখ খুলে ফেলেন। তাঁর চোখ, মনে হয়, বিশ্বাসই করতে পারছে না, এটি কি সত্যি না কি তাঁর স্বপ্ন।
যখন তাঁর চোখ পড়ল সদর দরজায়, তিনি থমকে যান। কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে তাকিয়ে থাকেন, তার চোখে ভাসে শুধু মেহনূর।
মেহনূর একপ্রকার দৌড়ে এসে মুস্তফা সাহেবের কাছে পৌঁছায়। মেহনূরকে কাছে পেয়ে,
মুস্তফা সাহেব বুঝতে পারেন, এটি সত্যি। তিনি তাড়াতাড়ি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেন,
— বেগম সাহেব! কোথায় আছো, তাড়াতাড়ি আসো, আমাদের ফুল এসেছে, আমাদের কাছে দেখ!
মেহনূর নিজের নিকাব খুলে, ঝাপটে জড়িয়ে ধরে মুস্তফা সাহেবকে। মুস্তফা সাহেব ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেন।
তাঁর চোখের কোণে কান্না এসে যায়, তবুও নিজেকে সামলে বলেন,
— কাঁদিস না, ফুল! ফুল কাঁদে না, ফুল সবসময় হাসে। ফুলের কাঁদতে হয় না।
মেহনূর ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে,
— দাদাজান, তোমার ফুল ঝড়ে গেছে, তোমার ফুল ধ্বংস হয়ে গেছে কলঙ্কে! এক ভয়ংকর কলঙ্কে কলঙ্কিত হয়ে গেছে।
এনিফা বেগম হাউমাউ করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসেন। তিনি বলতে থাকেন,
— আমার ফুল আইছে, আমার নাতনী আইছে! ফুল কোথায়? তুই কোথায়?
মেহনূর মুস্তফা সাহেবকে ছেড়ে এনিফা বেগমকে জড়িয়ে ধরে আবারও কেঁদে ওঠে,
— এসেছি আমি, দাদিজান! এসেছি আমি! তোমার ফুল এসেছে, তবে সে ঝড়ে গেছে, একদম ঝড়ে গেছে!
মেহনূরের চাচীরা এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। তার চাচাতো ভাইবোনেরা সবাই কাঁদছে,
বিশেষত তার চাচাতো বোন নূরি। নূরি মেহনূরকে এক সময় খুব ভালোবাসত, কিন্তু যেদিন থেকে মেহনূর এহসানের সাথে হয়েছিল, সেদিন থেকে সবাই যেন শান্তি হারিয়েছে। আজ, তার ফিরে আসার সাথে, মনে হচ্ছে কিছুটা শান্তি ফিরে এসেছে।
মেহনূর নিজের কক্ষে পা রাখে, একে একে সব কিছুতে হাত বুলাতে থাকে তাকে
মনে হয়, কত যুগ পর সে নিজের ঘরে ফিরল।
তার ঘরটা এহসানের ঘরের মতো বড় প্রাসাদের মতো নয়, ছোট্ট একটি ঘর,
যেখানে রাখা আছে একখানা বিছানা, একখানা ওয়ারড্রব, একখানা ছোট্ট সোফা এবং ছোট্ট একটা বইয়ের সেলফ। ঘরের একমাত্র জানালা রয়েছে, পশ্চিম দিকে।
মেহনূর ধীর পায়ে জানালার দিকে এগিয়ে যায়। আলতো হাতে জানালার পর্দা স্পর্শ করে।
জানালার সামনে রাখা ছোট্ট টেবিলের দিকে তার চোখ চলে যায়, যেখানে বসে সে পড়াশোনা করত। টেবিলের ওপর রাখা ছিল তার আম্মার একখানা হাফেজি কোরআন, যা সে হাফেজ হওয়ার পর হাতে তুলে দিয়েছিল তার আম্মা।
এই টেবিলেই বসে, ফজরের নামাজ শেষে, জানালার দিকে তাকিয়ে সূর্য উদয় দেখত আর কোরআন তেলাওয়াত করত।
এই হাফেজি কোরআনের পাশেই রাখা ছিল আরও একটি নূরানী কোরআন,
যা সে ক্বারী হওয়ার পর তার দাদাজান দিয়েছিলেন।
এসব ভাবতে ভাবতে, মেহনূর উদাস হয়ে ওঠে। তখনই, মেহরাজ ঘরে প্রবেশ করে আর তাড়াহুড়ো করে বলে,
— মেহনূর, তোর পাসপোর্টটা বের কর, তাড়াতাড়ি!
মেহনূর থমকে যায়। সে বুঝতে পারে না, তার ভাইজান কেন এমন কথা বলছে। গাড়ি ঘুরিয়ে তাকিয়ে মেহরাজের দিকে বলে,
— কেন ভাইজান?
মেহরাজ উত্তেজিত হয়ে বলে,
— আমি আজ তোকেএ নিয়ে ঢাকা চলে যাব। ঢাকা থেকে টিকেট কেটে কয়েকদিনের জন্য জর্ডান যাব কয়েকদিনের জন্য , যাতে ঐ এহসান আর তোর দ্বারে কাছে না আসে।
মেহনূরের বুক ধক করে ওঠে। তার মানে, সে আর এহসানকে দেখতে পাবে না। সত্যি, এহসানের সাক্ষাৎ পাবে না! সে এক মুহূর্তের জন্য হতাশ হয়ে পড়ে, খুন খুন হয়ে ওঠে। এবার সে আর এহসানকে কাছে পাবে না, তবে সে নিজের পরিবারের কাছেও থাকবে না। মাথা নাড়িয়ে বলে,
— আচ্ছা।
তার আর কিছু বলার নেই “! এখন যদি সে বলে “! সে যাবে না তো তার পরিবারের লোক কষ্ট পাবে “! আর তার কাছে এহসান আগে নয় তার পরিবার আগে “! তার বাপ-দাদা ভাই আগে তাই সে এক পায়ে রাজি ‘! মেহরাজ এর কথায়!
রাত ১০টা,
গাড়িতে, এহসান, জয়নাল, হাসিব আর তিনজন ছোট তালুকদার বাড়ির দিকে রওনা হয়েছে”! তাদের উদ্দেশ্য, মেহনূরকে নিয়ে বাড়ি ফেরা। হাসপাতালে ফোনে খবর পেয়েছে যে, মেহরাজরা বাড়ি ফিরে গেছে এবং সভায় থাকার জন্য এহসান ফোন বন্ধ রেখেছিল।
ফোন খুলে, যখন এহসান কাহিনিটি শুনতে পেল, তার বুকের মধ্যে একটা অজানা চাপ অনুভব করল। তার নারী আবারও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে—এমনটি তার মনে হতে থাকলো। রাগে, এহসানের নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল, কিন্তু সে নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে,সভা থেকে গাড়ি নিয়ে ছোট তালুকদার বাড়ির দিকে রওনা হল।
তখন, হঠাৎই, এহসানের ফোনে একটা ভিডিও আসে। প্রথমে সে পাত্তা না দিলেও, কিছুক্ষণ পরে, অচেনা নাম্বারটা দেখে তার মনে একটা অস্থিরতা চলে আসে।
তাই সে ভিডিওটি চালু করে। ভিডিও চালু হতেই, তার শরীর থেকে রক্ত যেন সরে গেল। ভিডিওতে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে একজন, মেয়ে আর ছেলেকে কেউ চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে “! কিছু মুহুর্ত পরি এহসান বুঝতে পারে এই নারী আর কেউ নয় তারি আপন নারী আর তার ভাই মেহরাজ “!
মেহরাজ বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে মেহনূরকে নিয়ে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হয়। গাড়ির গতি স্থির, সিলেট এয়ারপোর্ট রোডের কাছাকাছি আসতেই কয়েকজন গার্ড তাদের পথ রোধ করে দাঁড়ায়।মেহরাজ রেগে ফুঁসে গাড়ি থেকে বের হয় এতে “!
মেহনূর প্রথমে ভয় পায় না। সে ভাবে, হয়তো এহসানের কাজ। আর এহসান যাই করুক, তার ক্ষতি করবে না। যদি সে এহসানের হাতে-পায়ে ধরে, তাহলে হয়তো মেহরাজেরও কিছু করবে না।
কিন্তু সে ভুল
ওরা গার্ডদের কেউ নয়— ওরা ছিল অন্য কেউ, রাসেলের লোক! তবে বোকা মেহনূর এখনও এ সম্পর্কে অবগত নয়
দুজন নারী গার্ড তাকে শক্ত করে ধরে নিয়ে ওকে গাড়ি থেকে বের করে অন্য গাড়িতে জোর করে উঠে যায়। মেহরাজ প্রতিরোধের চেষ্টা করে, কিন্তু শক্ত হাতে ওকেও বেঁধে ফেলে গাড়িতে প্রবেশ করানো হয়”!
মেহনূরের এখনও ভয় করছে না “! সে এখনও মনে করছে এটা এহসানের কাজ “! তাই একটুও ভয় করছে না “!
একসময় ওদের দুজনকে একটা পুরনো গুদামের উঠানে নামানো হয়। সেখানে লোহার চেয়ার, ভাঙাচোরা কাঠের বাক্স আর আবর্জনার স্তূপ।
আর তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে রাসেল— এক কদর্য হাসি মুখে।
মেহনূরের ধারণা তার সামনে স্পষ্ট ভুল প্রামান হয়”! মেহনূরের ভয়ে কলিজা শুকিয়ে আসছে “!
এরা কারা কেন এমন করছে “! সে তো মনে করেছিল এটা এহসানের কাজ কিন্তু এটা তো ভুল
রাসেল কে মেহরাজ রা চিনে “! ওদের পুরো পরিবার কেই চিনে ‘!
মেহরাজ রাগে গর্জে ওঠে,বলে
— রাসেল! তোদের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আমাদের ছেড়ে দে, আমরা চলে যাব!
রাসেল বিশ্রীভাবে হেসে বলে,
— অবশ্যই তোদের ছাড়ব, তবে তার আগে আমার কিছু কাজ হাসিল করতে হবে!
মেহরাজ চেয়ার থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। হাত-পা বাঁধা, কিন্তু চোখে আগুন।
— কি কাজ হাসিল করতে চাস তুই?
রাসেল একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক লোকের দিকে তাকিয়ে ইশারা করল। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি এগিয়ে এসে মেহরাজের কাঁধে কিছু একটা পুশ করল।
কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই মেহরাজের চোখে অন্ধকার নেমে এল। সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল
মেহনূর আতঙ্কে ছটফট করতে লাগল। তার বুক ফেটে কান্না আসছে, কিন্তু গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না। তার কাঁপতে কাঁপতে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে
— আমার ভাইজানকে কী করছেন! দয়া করে এমন করবেন না!
কিন্তু এসব বলতে পারবে না “! এরা পরপুরুষ যদি এখানে এহসান থাকত তো “,তো সে চিৎকার করত
কিন্তু এখানে এহসান নেই…
এহসান থাকলে সে চিৎকার করত, প্রাণপণে গলা ফাটিয়ে প্রয়োজনে গালাগালিও করত কান্না করত ।সে সময় এহসান ঠিকিই, তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলত—
“তুমি এভাবে কাঁদলে, আমার অন্তরও কেঁদে ওঠে!”
কিন্তু বাস্তবতা নিষ্ঠুর। এখানে কেউ তাকে বাঁচাতে আসবে না। মেহনূর ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে কি হবে? কি করবে? কেন হচ্ছে? কেনই বা তার সাথেই সবসময় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে? কেন এত নির্মম পরিস্থিতির শিকার সে হয়?
ঠিক তখনই এক লোক হেসে বলে,
— এহসান তালুকদারের বউ কথা বলতে পারে নাকি ভাই?
মেহনূরের বুক ধক করে ওঠে!
আরেকজন যোগ দেয়,
— মেয়ে তো হাফেজা, পরপুরুষের সামনে গলা তোলে না!
আরেকজন ঘৃণ্য হাসি দিয়ে বলে,
— তাই নাকি? তাহলে গলা নয়, মুখ দেখে নেই!
কথাটা শুনে মেহনূর আতকে ওঠে। তার শরীর কেঁপে ওঠে। হাত-পা শক্ত হয়ে আসে।
কিন্তু রাসেল ধমক দিয়ে বলে,
— যেমন আছে, তেমনই রাখ! জামাই না এলে শুধু মুখ কেন, সারা শরীরও দেখা যাবে!
মেহনূরের চোখে পানি জমে আসে। সে চিৎকার করতে পারে না, দৌড়াতে পারে না, প্রতিরোধও করতে পারে না। একটাই নাম তার হৃদয়ের গহীন থেকে বের হয়ে আসে—
“আল্লাহ…!”
সে কাঁপতে কাঁপতে মনে মনে দোয়া করতে থাকে—
“রক্ষা করুন, মাবুদ! যদি আপনার রহম না হয়, তাহলে আমি শেষ!”
এদিকে এহসান এই ভিডিও দেখে”!
এহসান স্তব্ধ হয়ে যায়, কি হচ্ছে কি “! মেহনূর ওখানে কি করছে রাসেলের কাছে কিভাবে কি করে “!
তখনি এহসানের মোবাইল ফোন আসে। এহসান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজেকে সামলিয়ে ফোনটা ধরে। ফোন ধরতেই ও পাশ থেকে একজন বিশ্রী হাসি দিয়ে বলে,
—এহসান তালুকদার, কেমন দিলাম, ভালো লেগেছে নাকি?
এহসান দাঁত চেপে বলে,
—রাসেল, তুই তোর সীমা ভুলে যাচ্ছিস, সাহস বেশি দেখি ফেলছিস।
রাসেল এতে আরও বিশ্রী হেসে বলে,
—-সাহস তো করতে চাইনি, কিন্তু তুই সাহস করতে বাধ্য করেছিস। কিছুদিনের মধ্যে আমার দুই ভাইকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছিস। আমার ভাইটা দেশ ছেড়ে গিয়েও নিস্তার পায়নি।
এহসান দাঁত চেপে বলে,
—তোর যা শত্রুতা আমার সাথে, আমার নারীকে কেনো এতে টানলি?
রাসেল বিশ্রী হেসে বলে,
—-তোর দুর্বলতাই তো আমার সফলতা।
এহসান নিজের রাগ সামলিয়ে বলে,
—কি চাস তুই?
রাসেল মেহনূরের দিকে এক পলক তাকিয়ে ফোনে বলে,
—তোকে চাই, তুই শুধু একা চলে আয়, আর তোকে মেরে আমি নিজের ক্ষোভ মিটিয়ে নেব, আর নইলে…
এহসান বাজখাঁই গলায় বলে,
—নইলে কি, স**রে***র বাচ্চা, কি করবি তুই?
রাসেল বিশ্রী হেসে বলে,
—নইলে তোর নারীর ছোট্ট শরীর আমার শরীরে সাথে মিশে যাবে। মা-বোন আমাদেরও আছে, তাই এখনও কিছু করিনি। কিন্তু দেড় ঘন্টার মধ্যে না আসিস, তো তোর নারীর মৃত্যু আমার হাতে, তাও ইজ্জত ছাড়া! তাই চুপচাপ আমার আগের আস্তানায় চলে আয়।
তারপর আবার হুমকি দিয়ে বলে,
—সাবধান, কোনো চালাকি যেন না হয়।
এ বলেই রাসেল ফোন কেটে দেয়। এহসানের রাগে শরীর জ্বলতে থাকে। হাসিব, জয়নালও সবই শুনেছে।
এহসান অস্থির গলায় বলে,
—তোরা যা করার কর, আমি যাচ্ছি ওখানে।
হাসিব আর জয়নাল বলে,
—ভাইজান, আপনি যান, আমরা ব্যবস্থা করছি।
এ বলে দুজনে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। এহসান হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি চালু করে উদ্দেশ্য রাসেলদের আগের আস্তানায়! এহসানের রাগ হচ্ছে খুব রাগ হচ্ছে “! নিজের উপর রাগ হচ্ছে “! কেন যে সে মেহনূর কে একা রেখে আসতে গেল ঐ কাপুরুষ দের কাছে “! আর কেনোই বা সে বিশ্বাস করতে গেল নিজের নারী কে “! এই নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পড়েছে আরেক মহা ঝামেলায় রাতের ঘুম হয়েছে হারাম এর উপরে এই বেয়াদ্দব নারীর বেয়াদ্দবি”!
এহসান গাড়ি চালাতে চালাতে হাসিব কে ফোন দেয় আর বলে
+– আজকের জনসভার নিরাপত্তার জন্য যে থাই স্নাইপার গুলো এনেছি ওগুলো কেই পাঠিয়ে দে ভাই”! পরিস্থিতি ঠিক লাগছে না “!ওখানে আমার বেগম আছে ‘! কি থেকে কি হয়ে যাবে রাগে না কি করে ফেলি “!
হাসিব উওর দেয়
—- আচ্ছা ভাইজান দশ মিনিটে সব হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ
মেহনূর ভয়ে কুঁকড়ে উঠছে। সব তারই দোষ। যদি সে বিশ্বাসঘাতকের মতো না চলে যেত, তবে এমন কিছুই হতো না।তার কারণে হয়তো আজ তার ভাইজানও মারা যাবে”!
আচ্ছা, এহসান কি আসবে ওকে বাঁচাতে?
না, আসবে না। নিশ্চয়ই আসবে না, কারণ এহসান তাকে বলেছিল একদিন যে যারা তাকে দোয়া দেয়, তাদের সে ঘৃণা করে।
আচ্ছা, তাহলে কি মেহনূরকেও সে ঘৃণা করবে? এখন এতক্ষণে হয়তো এহসান জেনেই গেছে যে সে পালিয়েছে তার থেকে।
মেহনূর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ভাবে, আল্লাহর হাতেই সব। আমার রব নিশ্চয়ই এমন কিছু আমার সাথে করবেন না!
কিছু মুহূর্ত পার হয়, মেহনূরের ভয় লাগতে শুরু করে। যদি এহসান না আসে, তো তাকে নিশ্চয়ই এই পশুগুলো মেরে ফেলবে, সাথে তার ভাইটাকেও। মেহরাজের এখনও জ্ঞান আসে নি!
অচেতন হয়ে চেয়ারের সাথে বাঁধা রয়েছে।
মেহনূরের অঝোরে চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে, এক ভয়াবহ মৃত্যু সামনে দেখতে পাচ্ছে। নিজের সব হারিয়ে মরে যাওয়ার দৃশ্য যেন তার চোখের সামনে স্পষ্ট ভাসছে।
সব শেষ হয়ে যাচ্ছে, কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে কষ্টে, কিন্তু কিছু করতে পারছে না।
এহসান যদি তার সাথে এমন কিছু করত, তো চিৎকার করত, গালি দিত, প্রয়োজনে কামড়ও দিত, তবে এতটাও ভয় পেত না!
এহসানের বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে কাঁদতো, কিন্তু এখন এটা কেবল স্বপ্নেই মানায়!
এহসান আসবে না এখানে, আর তার এহসানের বুকে মাথা রাখা হবে না। চিরতরে হারিয়ে যাবে তার অস্তিত্ব “!
এহসানের মুখটাও হয়তো আর দেখতে পারবে না! কেন জানি এ ভেবে কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে, ভেতর শুকিয়ে আসছে।
এই ভয়ংকর মুহুর্ত এসেও তার আপনজন দের কথা মনে আসলেও “! যাকে সে সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করে, কেন জানি তারজন্য ভেতর টা ফেঁটে যাচ্ছে “! তার বুকে মাথা রাখার জন্য প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে “!
এহসান গাড়ি নিয়ে পৌঁছায় সেই জায়গায়। এহসান গাড়ি থেকে নামতেই দুটি লোক তাকে গেটের দিকে নিয়ে আসে।
এহসানকে গেটের দিকে আসতে দেখে মেহনূর অবিশ্বাস্য চোখে সে দিকে তাকিয়ে রয়। মনে হয় হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো কিছু দেখেছে সে!
মেহনূরের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে, তার মতো বিশ্বাসঘাতক নারীর জন্য এহসান নিজের জানের মায়া ছেড়ে দিয়েছে!
রাসেল বিশ্রী হেসে এহসানের দিকে তাকিয়ে বলে,
— এসে গেছিস! আমি জানতাম তুই আসবি। কারণ তোর বউ তো তোর আত্মা!
এহসান এক পলক তাকায় মেহনূরের দিকে— চোখে অগ্নি, অথচ মুখভঙ্গি স্থির। এরপর রাসেলের দিকে চোখ তুলে ঠান্ডা গলায় বলে,
— আমার নারীকে ছেড়ে দে, আমার সাথে যা করার কর।
রাসেল একটা পিস্তল হাতে নিয়ে এহসানের চারপাশে ধীর গতিতে হাঁটতে থাকে, হেসে বলে,
— তুই তোর নারীকে এত ভালোবাসিস যে নিজের প্রাণটা অবধি দিয়ে দিচ্ছিস! কী প্রেম, হাহাহা!
এহসানের কপালের রগ ফুলে ওঠে, রাগে চোখদুটি ধপধপ করছে, কিন্তু নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
— তোর এসব জানার দরকার নেই। তুই যা করার আমাকে কর, আমার নারী ওর ভাইকে ছেড়ে দে। আমাকে মেরে দে!
রাসেল তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
— এই দিনটার জন্য আমি কত টাকা উড়িয়েছি, কত পরিকল্পনা করেছি! আমার দুই ভাই মরেও গেল, কিন্তু তোকে কেউ মারতে পারল না। অথচ আজ, একটা তুচ্ছ মেয়েছেলের জন্য তুই নিজেকে আমার হাতে তুলে দিলি! বুঝতেও পারিনি যে এমন দিন আসবে!
এহসান দাঁত চেপে বলল,
— যা বলার আমায় বল! আমার নারীর নামে একটা বাজে কথা বললে, জিব ছিঁড়ে ফেলব!
রাসেল আবারও কদর্য হাসিতে ফেটে পড়ে বলে,
— ও আচ্ছা! এখনও এত সাহস দেখাচ্ছিস? তোকে সামনে বসিয়ে না হয় তোর নারীকেই শেষ করে দেই! তাও বিশ্রীভাবে!
এহসানের শরীরজুড়ে বিদ্যুৎ খেলে গেল। মাটির নিচ থেকে যেন আগুন বেরিয়ে আসছে, কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়। কারণ তার বেয়াদ্দব নারী, তার প্রাণ এখনও ওদের হাতে বন্দি, যদি কিছু করে ফেলে?তাই নিজেকে সামলিয়ে নেয়
রাসেল আবার বলে,
— শেষ ইচ্ছে আছে তোর? থাকলে বলে ফেল, কারণ তোকে ভয়ংকরভাবে মারব!
এহসান রাসেলের কথায় মেহনূরের দিকে তাকায়। চোখে গভীর এক মায়া, যেন সে পৃথিবীর সব কিছু ভুলে গেছে।
মেহনূরের বুক ধক করে ওঠে। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও কীভাবে এই পুরুষ এত ভালোবাসার দৃষ্টি দিতে পারে! অথচ সে তো ওকে দেখতে পারছে না, পারবেই বা কী করে— তার সারা শরীর যে ঢাকা!
এহসান মেহনূরের দিকে তাকিয়েই গভীর গলায় বলে
— আমার নারীকে কিছু মুহূর্ত জড়িয়ে ধরতে চাই।
মেহনূর আরও অবাক হয়ে যায়। মৃত্যুর আগে এ কেমন শেষ ইচ্ছে!
তার মনে হচ্ছে, যদি সত্যি আজ এহসান মারা যায়, তবে কি আর কখনও সেই পাপিষ্ঠ বুকের ওপর মাথা রাখা হবে না?
আর কেউ কি কোনোদিন তাকে “বেগম, ভালোবাসি তোমায়” বলে বলবে না? আর কেউ কি জোর করে জড়িয়ে ধরবে না?
সে কি সত্যিই এহসানকে হারিয়ে ফেলবে? সত্যিই কি? না! না, আল্লাহ তো আছেন!
রাসেল এবার হাসতে হাসতে বলে,
— সত্যি! তোর মতো সিংহও ভেজা বেড়ালের মতো হয়েছে! তা-ও একটা তুচ্ছ মেয়ের জন্য!
এহসান এবার ধমকে ওঠে,
— আমার নারী তুচ্ছ নয়! আমার নারী আমার দুনিয়া!
রাসেল একটা নারী গার্ডকে ইশারা করে বলল,
— ওর নারীর বাঁধন ছেড়ে দাও। শেষবারের মতো জড়িয়ে ধরুক! তারপর তো ওর গলাও কেটে ফেলব!
মহিলা গার্ড এসে মেহনূরের বাঁধন খুলে দিল।
মেহনূর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে, কিন্তু অনেকক্ষণ বসে থাকায় পা অবশ হয়ে গেছে। ফের বসে পড়ে। কয়েক মুহূর্ত পর উঠে এহসানের দিকে এগিয়ে আসে।
তার মাথায় শুধু একটাই ভাবনা— “আমার পাপিষ্ঠ পুরুষ আমার জন্য যদি মরে যান, তবে আমি কেমন করে বাঁচব এই অপরাধবোধ নিয়ে ? আমি বাঁচতে পারব? সত্যি কি বাঁচতে পারব? এই পাপিষ্ঠ পুরুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে?
এহসানের সামনে দাঁড়াতেই এহসান নিরলস চোখে ওর পানে তাকায় “! মেহনূর তাকিয়ে থাকে মারাত্মক সৌন্দর্য ঘেরা নিজের পাপিষ্ঠ পুরুষের পানে “! এহসান মেহনূর কে মলিন কণ্ঠে বলে,
— জড়িয়ে ধরবি একবার, বেয়াদব নারী আমায়?
মেহনূর ছলছল চোখে একপলক তাকায় এহসানের পানে!
অন্য সময় হলে হয়তো সে রেগে যেত, তর্ক করত, কিন্তু এখন বুকটা শুধু কেঁপে উঠছে। কান্না চেপে ফিসফিস করে বলে,
— হ্যাঁ, ধরব! সবসময় তো আপনি আঁকড়ে ধরেন আমায়, আজ না হয় আমিই আঁকড়ে ধরলাম আপনায়!
এই বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে এহসানকে জড়িয়ে ধরে মেহনূর! এহসানের পিঠের চাদর আর পাঞ্জাবি খামচে ধরে বিড়ালের মতো ঘাপটি মেরে মাথা রাখে তার বুকের ওপরে। মেহনূর ভাবছে এটাই হয়তো শেষ “!
এহসান মৃদু হেসে মনে মনে বলে,
— ” একটু হলে অনুভব করো তুমি, নিজের অস্তিত্ব হারানোর ভয়ের অনুভূতি ঠিক কতটা ভয়ানক!”
মেহনূর মাথা তুলে এহসানের মুখশ্রী পানে তাকিয়ে বলে,
— ওরা কি সত্যি আপনাকে মেরে ফেলবে? আমি কি আর কোনোদিন আপনার বুকে মাথা রাখতে পারব না?
এহসান মলিন গলায় বলে,
— না, পারবি না। এটাই শেষ!
মেহনূরের কলিজা ধক করে ওঠে।
— ওদের বলবেন, আপনার সঙ্গে আমাকেও যেন মেরে ফেলে!
এহসানের বুক কেঁপে ওঠে। এই মেয়ে কী বলছে!
সে মেহনূর কে নিজের দু-হাত দিয়ে আগলে নেয় অতঃপর মেহনূরের কপালে হিজাবের উপরি নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
— তোমার জন্য প্রাণ দিচ্ছি আমি, কারণ তুমি বাঁচবে বলে।বুঝলে? আমার বোকা নারী!
মেহনূর ফিসফিস করে বলে,
— আপনি আমার মতো বিশ্বাসঘাতক নারীর জন্য কেন নিজের প্রাণ দিচ্ছেন?
এহসান মৃদু হেসে বলে,
— সে তুই যা-ই হোস, দিনশেষে তো তুই আমারি এক পবিএ অস্তিত্ব ! তাই নিজের পবিত্র অস্তিত্ব কে বাঁচানোর জন্য না-হয় নিজের পাপি অস্তিত্ব কে উৎসর্গ করলাম”!
ঠিক তখনই রাসেল বিকট গলায় চেঁচিয়ে ওঠে,
— এই তোদের ফিসফিসানি বন্ধ কর! আর এই এহসানকে বেঁধে ফেল, মৃত্যুর জন্য তৈরি কর!
মেহনূর এই চিৎকারে ভয়ে এহসান কে জড়িয়ে, ধরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আর কান্না করতে করতে বলে-
—- আপনাকে নিয়ে যেতে দিব না, যাবেন না আপনি চলে যান, আমি মরে গেলে কিচ্ছু হবে না আপনি নিজের প্রান আমার জন্য শেষ করবে না
এহসান কিছু বলে না মুচকি হেসে মেহনূর কে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে “! আর মনে মনে বলে
— মায়ায় জড়িয়ে গেছো তুমি ভয়ংকর ভাবে জড়িয়ে গেছো তুমি এই পাপিষ্ঠ পুরুষের মায়ায়”!
হঠাৎ…
চারদিকে হেলিকপ্টারের গর্জন শুনা যায় যেন বিশাল আকাশের বুকে বাজ পড়ার মতো, প্রতিটি ধ্বনি যেন মাটিতে গভীর শীতলতা সৃষ্টি করছে।
রাসেল আর তার লোকজন দ্রুত আকাশের দিকে চোখ ফিরিয়ে দেখে, কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। এই এলাকা—তাদের জটিল পরিকল্পনার জায়গা—এখানে তো কিছু ঘটার কথা ছিল না।
কিন্তু তারপরেই—এক পলক সময়ের মধ্যেই—দুটি হেলিকপ্টার থেকে তীব্র আলোর ঝলক আর সাথে গুলির শব্দে পুরো এলাকা কাঁপতে শুরু করে।
সেই গুলি যেন ঠিক নিশানা করে একে একে রাসেলের প্রতিটি লোকের মাথায় আঘাত করে। সঠিক নিশানা, সুনিপুণ দক্ষতায়, মুহূর্তের মধ্যে রাসেলের দলটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
মেহনূর গুলির শব্দ শুনে ভয় পেয়ে ওঠে। মনে হয় যেন কেউ এহসানকে লক্ষ্য করে গুলি করছে। সে এক মুহূর্তও না ভেবে আরও শক্ত করে এহসানকে জড়িয়ে ধরে, যেন তার শরীরের মধ্যে সুরক্ষা পেতে পারে। তার মনে একটাই ভাবনা—যদি এহসানকে গুলি করে ফেলে, তবে অন্তত তার নিজের শরীরও তা ভাগ করে নিতে পারবে। একসাথে চলে যাবে তারা পরকালে, যদি এমন কিছু ঘটে।
আত্মার আগলে পর্ব ২৪
কিন্তু ঘটল সম্পূর্ণ অন্য কিছু।
রাসেল হতভম্ব হয়ে চারপাশে তাকিয়ে থাকে। । তার চোখে অবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট—এই কী ঘটছে? রাতের এই অন্ধকারে, এত নিখুঁত নিশানা! এত নিখুঁতভাবে কোন লোককে উপরের দিকে তুলে ফেলা, এমনটা তার কল্পনায়ও ছিল না।
ঠিক তখনই, এহসানের লোকজন গাড়ি নিয়ে গুদামের বিশাল উঠনে ঢুকে পড়ে। তাদের পেছনে বিশাল সাইরেনের শব্দ, দৃঢ় পদক্ষেপ, আর ঝকঝকে কালো গাড়ি। সবাই এক সুরে এগিয়ে আসে—মাথা নিচু, চোখে সন্ত্রাসের ঝলক, প্রস্তুত হয়ে।
এহসান এক দৃষ্টিতে রাসেলকে দেখে, কণ্ঠে কোনো রাগ নেই, বরং চিরন্তন শীতলতা
—”এখন কি বলবি কুত্তার বাচ্চা ** প্রস্তুত হয় এক ভয়ংকর মৃত্যুর জন্য
