আত্মার আগলে পর্ব ৪৫
সানজিদা আক্তার মুন্নী
— হারামির বাচ্চা, তোর এত বড় সাহস হয় কী রে? আমার বউয়ের কথা জিজ্ঞেস করিস?
চোখে রক্তিম আগুন, মুখের প্রতিটি শব্দ যেন গরম ছুরির মতো। এহসানের হাত তখন এক লোকের শার্টের কলারে, আঙুলের চাপ এতটাই দৃঢ় যে লোকটার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
— তোকে একবার না বলেছিলাম? আমার বউয়ের নাম মুখে আনবি না। সর**রের বাচ্চা!
চারপাশে থমথমে নীরবতা। কেউ নড়াচড়াও করছে না। হাসিব অবাক নয়, সে জানে—এহসানের রাগ আগুন ছোঁয়ালে ছাই হয়ে যায়।
আজকের ঘটনাটা শুরু হয়েছিল খুবই সাধারণভাবে। সভা শেষ করে এহসান অফিসে ফেরে। বোর্ড মিটিং শেষ করে সে লিফটে ওঠে। সঙ্গে ছিল হাসিব আর শেয়ার মার্কেটের একজন পার্টনার। হালকা গল্প হচ্ছিল, কেউ কিছু ভেবেও দেখেনি।
লোকটা নিছক হেসে হেসেই বলে ফেলেছিল—
— তা স্যার, আপনার ওয়াইফ কেমন আছেন?
সেই কথাটাই যেন স্নায়ুর ভেতর বিস্ফোরণ ঘটায়। বাইরের দুনিয়ার কাছে কথা ছোট—ভদ্রতা, সৌজন্য। কিন্তু এহসান? তার কাছে এ কথা বিষের মতো। কেন একজন পুরুষ তার স্ত্রী সম্পর্কে জানতে চাইবে? কেন? কে দিয়েছে তাকে এই অধিকার?
সে মুহূর্তেই মানুষটা বাঘ হয়ে ওঠে। দম বন্ধ করা রাগে তার দেহ কাঁপে। এক টানে লোকটার কলার চেপে ধরে সে।
লোকটা আতঙ্কে ঢোক গিলে। চোখে বিস্ময়, গলাটাও যেন শুকিয়ে গেছে।
মনের ভেতর সে নিজেকেই গাল দেয়— “এই নাটক করতে গিয়েই তো বাঘকে জাগিয়ে তুললাম!”
সে হাতজোড় করে, ভাঙা কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে বলে—
— স্যা… স্যার, সরি… আমি বুঝতে পারিনি।
ঠিক তখনই টিং করে লিফটের দরজা খুলে যায়। বাইরে আলো এসে পড়ে।
এহসান এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে, তারপর ধীরে ধীরে তার কলার ছেড়ে দেয়। নিজের কোট ঠিক করতে করতে, ঠোঁটে একরকম হেসে, কিন্তু চোখে হিমশীতল বার্তা রেখে বলে—
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— আর যদি তোর মুখে আমার স্ত্রীর নামও শুনি… তোর গর্দান থাকবে আমার হাতে। বুঝলি?
তার গলায় কোনো চিৎকার নেই, কিন্তু ভয় ঠিকই জমে যায় বাতাসে।
হাসিব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে জানত এই মুহূর্তটা ভয়ানক হতে পারত। ভাবছিল, এবার বুঝি রক্ত মুছতে হবে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তা হয়নি।
সে নিচু স্বরে বলে—
— ভাইজান, দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
এহসান লোকটাকে এক ঠেলা দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। বুকভরা বাতাস টেনে নিয়ে হালকা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
— চল।
পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা তখনো কাঁপছে। আর লিফটের দরজা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়।
নরম আলোয় আলোকিত ঘরের এক কোণে এশার বিছানার সামনে বসে আছে নূরি। গালে চিন্তার রেখা, কপালে ভাঁজ। নিরলস চোখে তাকিয়ে বলছে ধীরে—
— ইসস… কত কষ্ট হচ্ছে তোমার। এত জ্বর হলো কিভাবে?
তার প্রশ্নে এশা হালকা আঁচড়ে চমকে ওঠে। একটু অবাক হয়ে বলে—
— কেনো? তোর কিছু হয়নি?
নূরি অবাক হয়ে চুল সরিয়ে কপাল কুঁচকে তাকায়—
— কি হবে আমার?
এশা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে, তারপর চোখ খুলে ধীরে বলে—
— ওহহ… তার মানে আমার ভাতিজা এখনও তোর সাথে কিছু করেনি… তাই বোধ পাচ্ছিস না।
এতটা সরাসরি কথা শুনে নূরি থমকে যায়। ওর চোখে ভ্রু কুঁচকে ওঠে, মুখে বিস্ময়—
— এসব কি বলছো তুমি?! আমি কিছুই বুঝলাম না।
এশা মুচকি হেসে নূরির হাত নিজের মুঠোয় নেয়, কোমলভাবে বলে—
— ছোট্ট পরি… বুঝবি, বুঝবি সব বুঝবি। আরেকটু সময় যাক, দেখবি কেমন করে বুঝে যাবি…
নূরি হেসে ফেলে। “ছোট্ট পরি” শুনে যেন মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। তার খিলখিল হাসির শব্দে চারদিক প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
এশা ওর হাসির দিকে তাকিয়ে ওর এক গাল টেনে বলে—
— তুই এভাবে হাসিস না রে মা… তোর এই হাসিতে আমার ভাতিজা একদিন হারিয়ে যাবে… চোখে চোখে ডুবে যাবে।
নূরি লজ্জায় পড়ে যায়। মুখ লুকিয়ে বলে—
— তোমার ঐ ঠোঁটের পাশে কাটা দাগটা লুকিয়ে রেখো, নয়তো আমিও আমার ভাইজানকে পাব না।
এশা মুগ্ধ হয়ে নিজের গালে হাত দিয়ে বলে—
— সত্যি সুন্দর নাকি? তোর ভাইজান বলে, কিন্তু আমার বিশ্বাস হয় না কখনও…
নূরি এবার আর চুপ থাকতে পারে না। গভীর মায়া নিয়ে বলে—
— তুমি মায়াবী একটা মানুষ, এশা আপু। ভাইজান-এর কপাল ভালো, এমন মায়াবতী স্ত্রী পেয়েছে।
ঠিক তখনই দরজায় এক চিমটি সঙ্গীতের মতো ভেসে আসে মেহরাজের কণ্ঠ—
— মায়াবতীর মায়াটা দেখলি রে বইন তুই? আর উষ্টাবতীর উষ্টাগুলোও খেলিও না, দেখলিও না…
নূরি মুচকি হেসে মুখ লুকায়। ভাইজান যে ইচ্ছা করে এমন করে উস্কায়, সে তো জানেই।
মেহরাজ আবার বলে ওঠে—
— নূরি, যা… তাড়াতাড়ি যা। মেহরুবকে দেখলাম কী নিয়ে যেন রাগে ফাটতে ফাটতে বাড়ি এলো। কী হলো কে জানে…
নূরির মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে যায়। সকালে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়া মেহরুবের মুখটা মনে পড়ে যায় তার। চিন্তায় ভুরু কুঁচকে যায়, দৌড়ে ঘর ছাড়ে সে।
নূরির যেতেই ঘরটা যেন একটু নীরব হয়ে ওঠে। মেহরাজ দরজায় দাঁড়িয়ে একটু অপেক্ষা করে, তারপর আলতো পায়ে এশার দিকে এগিয়ে আসে। একেবারে ওর সামনে এসে ঝুঁকে পড়ে।
এশা চমকে ওঠে। বুক ধকধক করে ওঠে। চোখে ভয়ের আভা। মেহরাজ আবার কিছু অপ্রত্যাশিত করে বসবে না তো?
কিন্তু মেহরাজ ঠোঁটে এক মিষ্টি হাসি রেখে বলে—
— এশা মনি, ভয় পেয়ো না। তোমার সাথে কিছু করবো না আমি…
এশা চোখ বন্ধ করে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে। স্বস্তির ছোঁয়া মনের ভেতর জড়িয়ে ধরে।
ঠিক তখনই মেহরাজ হঠাৎ এক ধাক্কায় ওকে বিছানায় ফেলে। কোনো সময় না নিয়ে নিজের মাথাটা রাখে এশার বুকের উপর। ফিসফিসিয়ে বলে—
— শুধু এই বুকটায় কিছু মুহূর্ত মাথা রাখতে চাই…
এশা এবার কিছু বলে না, শুধু মুচকি হেসে তার চেনা সেই কোমলতা নিয়ে এক হাতে মেহরাজের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়, আর অন্য হাতে চুলে বিলি কাটে।
মেহরাজ চোখ বন্ধ করে বলে—
— ঘুমিয়ে যাও বেগম… গতরাতে একটুও ঘুমাতে দেইনি তোমায়… আজ একটু ঘুমিয়ে নাও…
এশা নিঃশ্বাস ফেলে ধীরে বলে—
— হুম… তুমিও ঘুমিয়ে যাও…
মেহরাজ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে এশাকে। দুজনেই তলিয়ে যায় এক গভীর নিদ্রার আলিঙ্গনে… সেখানে ছিল না কোনো ব্যথা, শুধু নিঃশব্দে ভালোবাসা।
—
ঘরটা নিস্তব্ধ।
বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি, ভেতরে যেন জমে থাকা এক বাষ্প।
নূরি হাতে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে পা রাখে।
চোখে ভয়, হৃদয়ে কাঁপুনি।
সে জানে—আজ ঝড় উঠবে, হয়তো সে ঝড়ে আবার ভেসে যাবে তার নিরীহ মন।
মেহরুব রেগে আছে।
আজ অফিসে কিছু জোচ্চোর ধরা পড়েছে—যারা গোপনে কোম্পানির গোপন ফাইল বাইরের লোককে পাঠিয়ে দিচ্ছিল।
তাদের আজ হাতেনাতে ধরা হয়েছে, কিন্তু…
তার আব্বা—তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন, কোম্পানি থেকে বেরও করেননি।
এটা মেহরুবের সহ্য হয়নি।
সে হাজারবার বলেছে—বিশ্বাসঘাতককে বিশ্বাস করা যায় না।
তবু তার কথা কেউ শোনে না।
এই সব ভাবনার মধ্যে নূরি কাঁপা কাঁপা পায়ে মেহরুবের সামনে এসে দাঁড়ায়।
পানির গ্লাসটা তার দিকে এগিয়ে দেয়।
মেহরুব দাঁত চেপে পানি নেয়।
“বিসমিল্লাহ” বলে এক ঢোক খেয়ে গ্লাস নামিয়ে রুক্ষ গলায় বলে—
— “কোথায় নাই হয়েছিলি? কখন আমি ঘরে এলাম জানিস?”
নূরি গলা জড়ানো স্বরে জবাব দেয়,
— “ঐ… ঐ এশা আপুর জ্বর উঠেছিল, তার কাছে ছিলাম।”
মেহরুব ধমকে ওঠে,
— “এশার জ্বর উঠেছে, ভাইজান আছেন! তুই ওখানে কী করবি? তোর বুদ্ধি নেই বুঝিস না, আমার স্বামী ফিরবে, আমি যেন ঘরে থাকি!”
নূরি ধীরে ধীরে মাথা নিচু করে ফেলে।
ঠোঁট কাঁপে, কিন্তু সে কিছু বলে না।
মেহরুব আবার বলে,
— “কি বুঝবি না তুই? হুম? জানিস না, বাইরে থেকে এসে তোকে একবার দেখার জন্য মন মরে ওঠে! তুই তো এখনো বাচ্চা রয়ে গেছিস, কিছুই বুঝিস না!”
নূরি চুপ।
সে জানে—রেগে থাকা পুরুষ মানুষ কী বলে, তা নিয়ে তর্ক করা বোকামি।
তর্ক করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না, বরং হারিয়ে ফেলা যায়!
সে জানে, যে নারী স্বামীর মুখে মুখে কথা বলে, সে নারী আর যাই হোক সে মুত্তাকী হতে পারে না “! তাই নূরি চুপচাপ সব শুনে যায়
সে মাথা নিচু করে বলে—
— “আচ্ছা… আমি খাবার নিয়ে আসি…”
মেহরুব কিছু বলে না।
সে চুপচাপ বসে থাকে।
হঠাৎ ওর চোখে পড়ে—নূরির মুখটা নিস্তেজ, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, চোখে কষ্টের ছায়া।
সে একটা শব্দও করেনি…এই নূরি তো তার ফুল।
যে ফুল ঝড়েও পাপড়ি ফেলে না, কেবল গন্ধ ছড়ায়।
মেহরুব দম নেয় ধীরে।
তার কণ্ঠ বদলে যায়—
আলতো, কোমল…
— “নূরি ফুল…”
নূরির বুক কেঁপে ওঠে।
এই ডাক… এই নাম…এ টা তার কলিজায় গিয়ে বাজে।
সে ধীরে চোখ তুলে তাকায় মেহরুবের দিকে।
আর ওর চোখে দেখে—অভিমান নয়, অপরাধবোধ।
মেহরুব হাত বাড়িয়ে ইশারা করে,
— “আমার বুকে আয়, একটিবার… নূরি ফুল…”
নূরি অবাক।
এই না কিছুক্ষণ আগেও ঝড় উঠেছিল?
সে ধীরে ধীরে কাছে গিয়ে মেহরুবের পাশে বসে।
— “আপনি গোসল করে নিন… আমি বসলে হবে না, খাবার নিয়ে আসতে হবে তো আপনার জন্য…”
মেহরুব হেসে ফেলে।
হাত বাড়িয়ে নূরি ফুলকে কাছে টেনে নেয়।
চুপচাপ বুকের ভেতর জড়িয়ে রাখে নূরি কে, যেন এটাই তার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।
নূরি মাথা রাখে ওর বুকে।চোখ বুজে থাকে, অনুভব করে…
এই বুকে যত রাগ হোক, তার ঠাঁই আছে।
মেহরুব মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,
— “নূরি ফুল, রাগ করেছিস?”
নূরি ঘামের গন্ধ মেশানো শরীরটা জড়িয়ে ধরে বলে,
— “না, একদম না… কেন রাগ করব?”
— “এই যে বকলাম এত…”
— “মাহরাম তো… হুটহাট বকতেই পারেন। তাতে রাগ কেন করব?”
মেহরুব মুচকি হেসে ওকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
এই তো তার শান্তি, তার ঘর, তার নূরি ফুল।
রাত প্রায় দশটা।
মিটিং রুমের ভেতর, সাদা আলোয় আলো ঝলমল করছে।
এহসান এবং আরিফ সামনাসামনি বসে আছে, মাঝখানে একটি দীর্ঘ টেবিল।
এহসানের চোখের কোণে অদৃশ্য এক তীক্ষ্ণতা, তার মুখাবয়ব একেবারে শান্ত।
আরিফ হাতের আঙুলে চাপ দিয়ে বসে, চোখে তার অস্থিরতা স্পষ্ট, তবুও চেষ্টা করছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
এমন সময় একটা ফোনকল আসে।
— “তুই রাজি?”
কণ্ঠটা ঠান্ডা, অথচ একরকম চাপা রাগে ভরা।
আরিফ জমিদার
আরাশ জমিদার বড় ছেলে, ‘AT Holdings’-এর প্রতিষ্ঠাতা।
এহসান কিছুটা দেরি করে উত্তর দেয়,
— “তুই জানিস, আমি যা কিনি, সেটা টিকিয়ে রাখতে জানি,”
তার গলায় একটুও কাঁপন নেই।
গলার গভীরতা, ঠান্ডা শীতলতায় সবার কাছে অদৃশ্য এক রহস্য লুকিয়ে আছে ।
আরিফ কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে যায়।
তার কোম্পানি এখন এক বিশাল রিক্সের মুখে দাঁড়িয়ে।
নতুন এক্সপানশনে গিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকার লোনে ডুবে গেছে।
ব্যাংক ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে, শেয়ারগুলো একের পর এক পড়ে যাচ্ছে।
এমন সময়ে এহসান উঠে আসতেছল।
সাদা পাঞ্জাবির ভাঁজে ভাঁজে সে বহন করে হিমশীতল আত্মবিশ্বাস,
যেটি তাকে অদ্ভুত এক শক্তি প্রদান করে।
আরিফের সঙ্গী হওয়ার অর্থ কি তা ভালোভাবেই বুঝে।
আরিফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
— “তুই ৫০% শেয়ার নিবি?”
এহসান ওর দিকে তাকিয়ে বলে
— “হ্যাঁ। পুরো হিসাব-নিকাশ করা হয়েছে। তোর কোম্পানির বর্তমান ভ্যালু ৬০ কোটি। আমি ৩০ কোটি দিয়ে অর্ধেক মালিকানা নিব।”
আরিফ দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকে,
মনের মধ্যে আকাশ-বাতাস ছেঁকে ধরে চাপ।
তার অস্থিরতা, ভীতি, গ্লানি, সব যেন একসাথে তাকে গ্রাস করে।
— “মানে আমার পিতার গড়া সাম্রাজ্যে তুই আসতে চাস?”
এহসান একটু পেছনে হেলে বসে।
এহসান হেসে বলে
— “তোর পিতা সাম্রাজ্য গড়েছে, ঠিক। কিন্তু সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার খেলা আলাদা। তুই পারিস না তা, আমি পারি।”
— সাম্রাজ্যের অধিকার হওয়া যেমন মুখের কথা নয়, তেমন তা টিকিয়ে রাখাও মুখের কথা নয়!
আরিফের চোখে বিরক্তি জমে।
এহসান অবশ্য জানে, তার প্রতিটি শব্দ চিহ্নিত হতে থাকবে,
এটা কেবল এক হিসেবের খেলা নয়, বরং একটি অপরিহার্য অস্তিত্বের সংকেত।
আরিফ বুঝে গেছে—এহসান কেবল টাকা দিতে আসেনি,
সে এসেছে রাজত্বের অর্ধেক ছিনিয়ে নিতে।
কিন্তু আশ্চর্য, কেন যেন তার মনে হচ্ছে—এই ছেলেটা,
এই ভয়ঙ্কর ঠান্ডা মুখটা—তার পাশে থাকলে
সম্রাজ্য টিকবে। এমনকি হয়তো বড়ও হবে।
চুপচাপ বলল,
— “তুই শুধু টাকা দিবি, না সিদ্ধান্তেও থাকবি?”
এহসান হেসে উঠল একবার, ঠাণ্ডা একটা হাসি—
হাসির মধ্যে এক ধরনের নির্লিপ্ততা,
যেন তার মনুষ্যত্বটাই যেন একধরনের রহস্য হয়ে উঠেছে।
— “যেখানে আমার টাকা, সেখানে আমার চোখও থাকবে। আর রাজত্ব ভাগ হলে, সিংহাসনে বসে থাকাটাও ভাগ হয়… তাই না?”
আরিফ কিছুটা চুপ হয়ে যায়, চোখে এক ধরনের অজানা শঙ্কা।
এহসান তার দিকে তাকায়, যেন সে জানে, আরিফের কাছে কোনো উত্তর নেই।
যতটা ভয়ঙ্কর সে, ততটাই একে অপরকে চেনার জন্য তৈরি।
এহসান শ্বাস ফেলে, আরিফকে বোঝায়,
— “তুই যতটা ভয় পাস, আমি ততটাই জানি।”
আরিফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
—- “আমার কোনো ক্ষতি হবে না তো “!
এহসান মুচকি হেসে বলে
—” আমি এহসান রক্তের খেলা যেমন খেলতে পারি। তেমন বাজারের খেলাও ভালো মতেই খেলতে পারি!
আরিফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে “!
— আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমরা এখন থেকে এক সাম্রাজ্যের দুই মালিক “!
এহসান শুধু মুচকি হাসে “! তার পরিকল্পনা তো আরও দূর আর বিবৎস ‘!
এহসান জানে—এটা কেবল শুরু।
যতটুকু গুণগ্রাহী হয়ে উঠবে, ততটুকু এশিয়ার ব্যবসার ইতিহাস বদলে যাবে।
বেলকনির কোণে রাখা বড় হাতাওয়ালা আরামদায়ক সোফাটিতে আধশোয়া হয়ে বই পড়ছে নূরি। রাতের খাবার খেয়ে, ওযু সেরে, আরাম পেয়ে গিয়েছে শরীরটা। একটা সাদা চাদর গায়ে টেনে, মাথা এলিয়ে দেয় সোফার হাতায়। বাতাসে চুলগুলো একটু এলোমেলো হয়ে উড়ছিল। চোখে-মুখে প্রশান্তি আর বইয়ের পাতায় ডুবে থাকা এক নীরব ভালোলাগা।
ঠিক তখনই বেলকনির ভেতরে পা রাখে মেহরুব।
চোখে পড়ে নূরির শান্ত অবয়ব। এমনভাবে আধশোয়া, যেন বইয়ের পাতার ভেতরেই হারিয়ে গেছে। মেহরুব ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে নূরির সামনে দাঁড়ায়। নূরি প্রথমে খেয়াল করেনি, তারপর মুখ তুলে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে।
মেহরুব মুচকি হেসে বলে ওঠে—
— নূরি ফুল, তোর বুকে একটু মাথা রাখি?
প্রশ্নটা এমন হঠাৎ, এত গভীর আদরে মোড়া, যে লাজে পড়ে যায় নূরি। কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফিসফিসিয়ে বলে—
— আচ্ছা…
মেহরুব ধীরে ধীরে উঠে আসে সোফায়, আলতো করে মাথা রাখে নূরির বুকের উপর। দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওকে। নূরি চোখ বুজে ফেলে। বুক ধকধক করে ওঠে, যেন শ্বাসটাও আটকে আসছে।
এক হাতে বইটা টেবিলের ওপর রেখে দেয় সে। তারপর ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে মেহরুবের চুলে বিলি দিতে থাকে।
মেহরুব নিচু গলায় প্রশ্ন করে—
— নূরি ফুল… দিবি আমায় স্বামীর অধিকার?
প্রশ্নটা শুনে বুক ধড়াস করে ওঠে নূরির। ভ্রু কুঁচকে তাকায় না, বরং চোখ বুজেই ফিসফিসিয়ে বলে—
— সে তো পেয়েছেনই… আর কি দিব… দিলামই তো…
মেহরুব মুখ তুলে ওর থুতনিতে আলতো একটা চুমু দিয়ে বলে—
— আমি আরও চাই…
নূরি বুঝে ফেলে ও কি চাইছে। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায় না। লজ্জায় চোখ বন্ধ করে রাখে। বুকের ভিতরটা কেমন কেঁপে ওঠে তার।
মেহরুব নূরির লজ্জার হাসি দেখে খিলখিলিয়ে হেসে ফেলে—
— মিসওয়াক দিয়ে ওযু করেছিস?
নূরি চোখ না খুলেই বলে—
— হুম…
মেহরুব ধীরে ধীরে নূরির গলায় মুখ রেখে দেয়। স্পর্শে কেঁপে ওঠে নূরি। ছটফট করে উঠে বলে—
— এগুলো… এখানে না… ঘরে চলুন… এটা বেলকনি…
মেহরুব এক চোঁখে তাকিয়ে বলে—
— তো চারদিকে পর্দায় ঘেরা… মাঝখানে আমি আর তুই… মাথার ওপর শুধু আকাশ… এতে সমস্যা কোথায়?
নূরি মুখ লুকিয়ে বলে—
— আপনার লজ্জা করে না এসব বলতে?
মেহরুব হেসে ফেলে—
— বউ হস তুই আমার… তোর সামনে লজ্জা পাওয়া আর পুকুরে ডুবে মরা এক জিনিস রে!
নূরি চোখ বুজে মাথা ঝাঁকায়। নূরি তাও নড়াচড়া করতে শুরু করে”! মেহরুব ওর কপালে পড়ে থাকা চুল সরিয়ে দিতে দিতে বলে—
— এত নড়িস না, নূরি ফুল…
নূরি একটু থেমে শান্ত হয়। হৃদয়ের গভীরে অনুভব করে মেহরুবের ভালোবাসার স্পর্শ। সেই স্পর্শ ধীরে ধীরে ছুঁয়ে যায় ওর সমস্ত মুখশ্রী। সময় থেমে থাকে যেন।
মেহরুব নূরির কাঁধ থেকে ওড়নাটা সরিয়ে নিয়ে নিচু গলায় বলে—
— পড়…
اللهم جنبنا الشيطان وجنب الشيطان ما رزقتنا
নূরি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। সমস্ত লজ্জা, সংকোচ ঝরে যায়। ভালোবাসা আজ দেয়াল ভেঙে বেড়িয়ে আসে।
চারদিকে নিস্তব্ধতা… শুধু ভেসে আসে নূরির খিলখিল হাসির শব্দ।
এই মিষ্টি, পবিত্র, হালাল ভালোবাসায় আকাশ যেন সজল হয়ে ওঠে।
মেহনূর বেলকনিতে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। নিরলসভাবে, চোখে এক অস্থিরতা।
নিজের বুকের ভেতর শূন্যতা যেন গিলে খাচ্ছে।
— “কেন জানি সব শূন্য লাগে। গলা দিয়ে খাবার নামে না, বুক ধুকপুক করে, মনে হয় দম বন্ধ হয়ে আসছে। একমাত্র কারণ—এহসান… আর তার পাপ।”
আজ সারাদিন একই ভাবনা মাথায় ঘুরছে—
এই পাপের পরিণতি কী হবে? এত ভয়ংকর পাপের পরিণতি কী হতে পারে?
তখনই জানায়, এহসান চলে এসেছে। অভ্যাস অনুযায়ী দ্রুত পা ফেলে নিচে এসে সদর দরজা খুলে দেয়।
প্রতিদিনের মতো আজও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এহসান। ক্লান্ত মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।
দরজার ফ্রেমে দাঁড়িয়ে হাত বুকে দিয়ে, মেহনূরের দিকে তাকিয়ে সালাম দেয়:
— “আসসালামু আলাইকুম।”
মেহনূর তাকিয়ে থেকে উত্তর দেয়:
— “ওয়ালাইকুম সালাম।”
এহসান কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখে, তারপর তাকিয়ে থাকে মেহনূরের দিকে, যেন সারাদিনের তৃষ্ণা মিটিয়ে নেয় সেই দৃষ্টিতে।
মেহনূর তা দেখে নিজে নিজে বলে:
— “লুইচ্চার মতো তাকিয়ে থাকে! লজ্জা শরম করে না?”
এহসান মুচকি হেসে বলে:
— “লুচ্চামির কী করলাম তোর সাথে আমি? বেয়াদব নারী!”
মেহনূর কড়া চোখে এহসান এর দিকে তাকিয়ে, অন্য দিকে চলে যেতে যেতে বলে:
— “নাটক না করে ঘরে আসুন। খেয়ে দেয়ে আমায় মুক্তি দিন। আপনি তো আমাকে বান্ধী বানিয়ে রেখেছেন। তাইতো আপনার জন্য রাতভর অপেক্ষা করতে হয় আমার, তারপর যখন ইচ্ছে আসবেন, এসে নাটক গান করবেন।”
এহসান হাসতে হাসতে ঘরে প্রবেশ করে, দরজা লাগিয়ে দেয়।
নিজের মনেই বলে:
— “সাহেবের বেগম আজ রেগে আছেন, তাই সাবধানে কথা বলার দরকার।”
গোসল করার উদ্দেশ্যে কক্ষে প্রবেশ করে এহসান।
কিছুক্ষণ পর মেহনূর খাবার নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। সে জানে, দুনিয়া উল্টে গেলেও এহসান নিজে নিচে গিয়ে খাবার খাবে না।
তাই নিজেই খাবার নিয়ে আসে।
এহসান তখন লুঙ্গি আর গেঞ্জি পড়ে কক্ষে বের হচ্ছিল, কারণ মনে হচ্ছিল মেহনূর আসবে না খাবার নিয়ে, আর রেগেও আছে। সে ভেবেছিল, নিজেই খেয়ে নিবে। কিন্তু তখনই দেখে, মেহনূর রেগে ফুঁসতে ফুঁসতে তার কক্ষে প্রবেশ করেছে।
এহসানের ঠোঁটে আলতো হাসি ফুটে ওঠে, এবং বিছানায় বসে যায়।
মেহনূর খাবার নিয়ে এসে কিছু না বলেই ওর মুখের সামনে ধর দেয়।
এহসান তাকিয়ে থাকে।
মেহনূর দাঁত চেপে বলে:
— “লজ্জা করে না, বিরক্ত লাগে না, আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে?”
এহসান মুখের খাবার গিলে বলে:
— “তোমার বেলায় আমার লজ্জা, বিরক্তি—দুটোরই কোনো অস্তিত্ব নেই।”
মেহনূর বলে:
— “তাহলে তো খারাপ, খারাপের এসব লাগে না।”
এহসান মাথা নাড়িয়ে হেসে ওঠে। সারাদিনের ক্লান্তি যেন মুছে গেছে মেহনূরের আদরে।
তারপর আলতো করে মেহনূরের পেটে হাত বুলিয়ে বলে:
— “কবে যে তোমার গর্ভে আমাদের পাপ কলঙ্কের ভালোবাসার অস্তিত্ব জন্ম নিবে।”
মেহনূর কঠিন কণ্ঠে বলে:
— “আমি চাই না আমার সন্তান এই পৃথিবীতে আসুক, কোনো নিকৃষ্ট পিতার অস্তিত্ব হয়ে।”
এহসান মেহনূরের কোমর জড়িয়ে ধরে বলে:
— “কিন্তু আমি চাই আমাদের ভালোবাসার অস্তিত্ব পৃথিবীতে আসুক—পাপ পবিত্র ভালোবাসার চিহ্ন হয়ে।”
মেহনূর স্তব্ধ হয়ে যায়। চোখ টলমল করতে থাকে।
সেও তো চাইত এমন একটা সুন্দর পরিবার, যেখানে থাকবে এহসান, তার আপন পুরুষ, সে তাদের ভালোবাসার অস্তিত্ব… কিন্তু তা আর হলো কই?
মেহনূর কাঠগলায় বলে:
— “নিকৃষ্টদের অস্তিত্ব নিকৃষ্টই হয়। এহসান তালুকদার, আমি চাই না কোনো নিকৃষ্ট অস্তিত্বের জননী হতে।”
এহসানের বুক ধক করে ওঠে। মেহনূরের এমন কথায় কি করে পারলে এত কষ্টদায়ক কথা বলতে?
এহসান মেহনূরকে ছেড়ে দেয়, মনটা তিক্ত হয়ে ওঠে।
মেহনূর এহসানের দিকে খাবার এগিয়ে দেয়, কিন্তু এহসান হাত দিয়ে না বলে:
— “গলা দিয়ে নামবে না, প্রিয়তমা।”
মেহনূর নিজেই লজ্জায় পড়ে যায়, কিন্তু কী করবে? এটা তো সত্যি—এহসানকে এমন কিছু বলেছে, যা তাকে খুব খারাপ লাগছে।
মেহনূর দীর্ঘশ্বাস ফেলে কক্ষে বেরিয়ে যায়।
এহসান পানি খেয়ে বালিশ আর কাথা নিয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়।
চারপাশে পর্দা টেনে নেয়।
বালিশ রেখে মেঝেতে গা এলিয়ে দেয়, যেন কিছু সময় শান্তি পায়।
এহসান আগেই ওযু করে নিয়েছে। চোখ বন্ধ করে, মনে মনে বলে:
— “পাপিষ্ঠকে ভালোবাসো বা না ভালোবাসো, তার অস্তিত্ব তোমায় বয়ে বেড়াতে হবে, প্রিয়তমা।
যদি ঝলসে যাই পাপে আমি, তবে তুমি নাহয় বাঁচবে আমার রেখে যাওয়া অস্তিত্ব নিয়ে ।”
মেহনূর ঘরে এসে এহসানকে না দেখে ভাবতে থাকে, হয়তো বেলকনিতে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাথরুমে প্রবেশ করে ওযু করে নেয়।
ওযু করে এসে দেখে, এহসান এখনও বেলকনিতে শুয়ে আছে!
মেহনূর রেগে গা চড়িয়ে, ধীর পায়ে বেলকনিতে এগিয়ে যায়।
এহসান সেখানে শুয়ে আছে। এটা দেখে মেহনূরের খুব রাগ হয়, কারণ সে জানে—
এহসান জানে, মেহনূর তার বুক ছাড়া ঘুমাতে পারে না, তবুও এখানে ঘুমাচ্ছে!
মেহনূর এগিয়ে এসে এহসানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে:
— “আপনি আমার দুর্বলতা জানেন, তাই শাস্তি দিচ্ছেন!”
এহসান চোখ খুলে তাকিয়ে বলে:
— “আমি কী করলাম আবার?”
মেহনূর নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁত চেপে বলে:
— “আমি কীভাবে ঘুমাব, জানেন না? আমি আপনার বুক ছাড়া শান্তি পাই না, তাহলে এখানে এসেছেন কেন?”
এহসান মুচকি হেসে বলে:
— “যাকে ভালোবাসো না, তার বুকে কীভাবে ঘুমাতে চাও, নির্লজ্জ নারী!”
মেহনূর গলা বাড়িয়ে বলে:
— “ঘৃণা করি আপনাকে, আমি ঘৃণা করি, কিন্তু এই বুক—শুধু আমার, আমার, আর আমি আমার জায়গা কখনোই ছাড়ব না।”
এহসান মুচকি হেসে উঠে, মেহনূরের বেকুফ জেদ দেখে।
একটানে মেহনূরকে নিজের উপর ফেলে দেয়। মেহনূরও ঠিকঠাক হয়ে মাথা রাখে, সেই বুকেই।
এহসান মেহনূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, এক হাতে গাল টেনে বলে:
— “চল, একবার ঘুরে আসি, তোমার আমার নিকৃষ্ট অস্তিত্বের খোঁজে।”
মেহনূর এহসানের হাত ঝাড়ি মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে:
— “একশো হাত দূর রাখুন, নিজের হাত। খবরদার, এমন কিছু ভাববেনও না।”
এহসান মুচকি হেসে মেহনূরকে বালিশে শুইয়ে দেয়।
মেহনূর কড়া চোখে তাকিয়ে বলে:
— “আমায় ছুঁবেন না, আপনার স্পর্শ আমার জন্য কলঙ্ক।”
এহসান মুচকি হেসে মেহনূরের কানে ফিসফিসিয়ে বলে:
**— “আজ আবারও তোমার সর্বাঙ্গ কলঙ্কিত হবে, প্রিয়তমা “!
আত্মার আগলে পর্ব ৪৪
এহসান মেহনূরের গালে নিজের গাল ছুঁয়ে দেয়, মেহনূরের গালে বিধে যায় তার দাড়ি, মেহনূর ভয়ে এবং ঘৃণায় দুই হাত দিয়ে খাবলে ধরে বেলকনিতে বিছানো কাপড়ের কার্পেট।
এহসান বলে,
— পড়ো।
اللهم جنبنا الشيطان وجنب الشيطان ما رزقتنا
[“হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তান থেকে রক্ষা করুন এবং যে সন্তান আপনি আমাদের দান করবেন, তাকে শয়তান থেকে দূরে রাখুন।”]
মেহনূরও পড়ে নেয়, সে জানে, এ পুরুষ বেসামল হলে এ পুরুষকে সামালানো দায়, তাই আর বাঁধা দেয় না।