আত্মার আগলে পর্ব ৫৩

আত্মার আগলে পর্ব ৫৩
সানজিদা আক্তার মুন্নী

কেটে গেছে একটা মাস।গোটা মাসজুড়ে সিয়াম, ইবাদত আর আত্মশুদ্ধির সাধনায় কেটেছে সময়।আজ ২৯ রমজান। বাংলা হিসেবে শেষ রমজানের শেষ দিন।
ঘড়ির কাঁটা যেন ধীরে ধীরে ঈদের আগমন বার্তা দিচ্ছে।
আগামীকাল ঈদ।
ঈদ উপলক্ষে তালুকদার বাড়ির সব গার্ড ও কাজের লোকদের মধ্যে দু-একজন রেখে বাকিদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আজ তালুকদার বাড়ি প্রায় ফাঁকা।বাড়ির বিশাল প্রাসাদে একা মেহনূর।তার সঙ্গে আছে কেবল দুইজন মহিলা কাজের লোক।একটা নিঃস্তব্ধতা যেন ঢেকে রেখেছে গোটা বাড়িকে।
তালুকদার বাড়ির নিয়ম— ঈদের কেনাকাটা সব সদস্য একসাথে করেন।কিন্তু ব্যস্ততা আর সময়ের অভাবে এবছর একসাথে বের হওয়া হয়নি।তাই ঈদের আগের দিনেই সবাই তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যায় মার্কেটে।
এহসান ছিল বাড়িতেই।কিন্তু হঠাৎ এক জুরির ফোন কল পেয়ে তার মুখে ছায়া পড়ে।
মেহনূর ওর অস্বস্তি দেখে কোমল কণ্ঠে বলে—
— “আপনি যান। আমি একা পারব।আর মাত্র কিছু সময় পরেই তো সবাই চলে আসবে।”
এহসান আর কিছু না বলে বেরিয়ে যায়।শেষ মুহূর্তের কোটি টাকার ডিল— ফেলা যায় না!

মেহনূর বেলকনিতে বসে আছে! কোলের ওপর খোলা কোরআন।ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করছে।চারপাশে যেন অদ্ভুত এক প্রশান্তি।
হঠাৎ দূর থেকে ভেসে আসে গাড়ির শব্দ।সে কান খাড়া করে শোনে।কিন্তু শরীরের অবস্থা যা, তাতে উঠে দেখার শক্তি নেই।
মনে মনে ভাবে—হয়তো এহসান ফিরে এসেছে।না হয় সবাই ফিরছে মার্কেট থেকে।কিন্তু না… আফসোস!
এটা তাদের কেউই না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে এলি।তার সঙ্গে দুইজন মহিলা গার্ড।এলি মুখে রহস্যময় হাসি, চোখে প্রতিশোধের ঝিলিক।
সে দরজায় কড়া নাড়ে।ভেতর থেকে দরজা খোলে এক কাজের লোক।তার পেছনে আরেকজন দাঁড়িয়ে।
এলি দেখে কিছু বলার আগেই।তার সঙ্গে থাকা মহিলা গার্ডেরা দ্রুত স্প্রে ছুঁড়ে দেয় তাদের মুখে।
এক পলকে তারা অচেতন হয়ে পড়ে যায় মাটিতে।
এদিকে ওরা মুখ ঢেকে নিয়েছিল রুমাল দিয়ে আগেই— প্রস্তুতি সম্পূর্ণ ছিল।
এলি ধীরে ধীরে ঘরে ঢোকে।হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই সে এই দিনটার অপেক্ষায় ছিল।
এহসান কখনো ওর ক্ষতি করেনি।বরং তাকে ছেড়ে দিয়েছে— মুক্ত বাতাসে উড়তে।কিন্তু তাতেই তো বিপদ!
এটাই তো কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে!
প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে, এহসানের খবর রেখেছে এলি।
সে জানে— তালুকদারদের প্রাণ কে।এহসানের ধমনী যাকে ঘিরে— সে মেহনূর।
তাকে কব্জা করতে পারলেই শেষ হবে এহসানের সব অহংকার।

এলি সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে দোতলায়।বেলকনিতে বসে মেহনূর— তেলাওয়াতে ডুবে।আলতো হাওয়ায় ওড়ছে ওর ওড়না।
হঠাৎ সে টের পায়— কেউ এসেছে ঘরে।পড়ায় থেমে যায় সে।মনে করে— হয়তো এহসান এসেছে।
এলি এদিক-ওদিক খুঁজছে৷ মেহনূর কে।
মেহনূর বেলকনি থেকে আওয়াজ দেয়—
— “শুনুন! এদিকে আসুন।আমার আপনার দরকার আছে।”
এলি থমকে যায়।ধীরে পা ফেলে এগিয়ে যায় বেলকনির দিকে।তার মুখে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা।
মেহনূর তাকে দেখে চমকে ওঠে।
চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
— “তুমি!”
বলতে যাবে কিছু…তার আগেই এলি নিজের মুখে রুমাল তুলে ধরে।
মুখের সামনে স্প্রে করে দেয় ঠান্ডা নিঃশ্বাসের মতো বিষাক্ত গন্ধ।
মুহূর্তেই জ্ঞান হারায় মেহনূর।

তালুকদার বাড়ির শান্ত দুপুরের আড়ালেনেমে আসে এক অজানা অন্ধকার।একটি ভয়ংকর মোড় নিচ্ছে গল্প…ঈদের আগের দিন যে রূপ নিল বিভীষিকায়।

জঙ্গলের গভীরে নিঃস্তব্ধ এক বাংলো। চারপাশে শুধুই গাছের নিঃশব্দ ফিসফাস আর বাতাসে শীতল হাহাকার। সেই নির্জনতাকে ছিঁড়ে এহসানের ক্ষীণ শ্বাস-প্রশ্বাস।
সে হাঁটু গেড়ে বসে আছে, মেঝের ওপর। কপাল থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত চোখের কোণ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ঠোঁটে রক্তের ফেটা রেখা, গালের একপাশ ফুলে উঠেছে। পেছনে হাত বাঁধা, গায়ের পাঞ্জাবি রক্তে আর ধুলায় চিটচিটে। চোখে বিষণ্ন এক যুদ্ধ—ভেতরের যুদ্ধ।
এহসান এর সামনে চেয়ারবন্দি মেহনূর, যার আর্তনাদে কেঁপে উঠছে এই নির্জন বাংলোর প্রতিটি দেয়াল।
কণ্ঠে হাহাকার, আত্মার চিৎকার…
— আমার স্বামীকে ছেড়ে দিন… আল্লাহর জন্য ছেড়ে দিন… আমায় মারুন, আমায় শেষ করুন, কিন্তু ওকে না… ওকে কিছু করবেন না…!

মেহনূরের কণ্ঠ এতটাই করুণ, এতটাই বিদীর্ণ, যেন মেহনূর নিজে মৃত্যু চাচ্ছে, কেবল এহসানের জন্য।
এহসান চেয়ে থাকে স্তব্ধ হয়ে। বুকের ভিতর ধড়ফড় করে ওঠে। অথচ এই সেই এহসান, যে মৃত্যুর আর্তনাদকে খেলনার মতো দেখেছে, শত মানুষের কান্নাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। আজ… আজ যখন কান্না তার নিজের প্রাণ থেকে বের হচ্ছে, তখন মনে হচ্ছে হৃদয়টা ছিঁড়ে আলাদা হয়ে যাবে।
এলি দাঁড়িয়ে আছে পাথরের মতো মুখে, চোখে আগুন। নিজ হাতে প্রতিশোধ নিচ্ছে—বাবা আর ভাইদের মৃত্যুর। আর তার শিকার এহসান।
এহসান চাইলে এই মুহূর্তেই সব উলটে দিতে পারত, এলিকে গুঁড়িয়ে দিতে পারত। কিন্তু না, তার নারী… তার প্রাণ… মেহনূর আজ বন্দি এই নরকের হাতে। একটু ভুল, একটু আগ্রাসী প্রতিক্রিয়ায় সে ঝরে যাবে… চিরতরে হারিয়ে যাবে তার সেই স্নিগ্ধ ভালোবাসা।
এলি নিজের গাড়িতে করে এহসানকে নিয়ে এসেছে, মেহনূরের ছবি দেখিয়ে। কারণ সে জানে, এহসান নিজে না এলে কখনো আসবে না—আর যদি আসে, লোকজন নিয়ে আসবে। তখন এলি থাকবে না, তার নারী সুরক্ষিত থাকবে না। তাই সে নিজে এসেছে… একা।
এলি মেহনূরের সামনে এগিয়ে গিয়ে ঠাণ্ডা কণ্ঠে বলে—

— ভালোবাসো ওকে?
মেহনূরের চোখ জলে ঝাপসা। মাথা নেড়ে সে বলে—
— ভালোবাসি… ভীষণ ভালোবাসি… বুক ভরে, প্রান দিয়ে…।
এহসানের গলা শুকিয়ে আসে। বুকের মাঝে ছটফট করতে থাকে আবেগের দাবানল। এ প্রথম… সে শুনছে নিজের জন্য এই স্বীকৃতি, মৃত্যুর ঠিক আগে।
এলি আচমকা এক চড় বসিয়ে দেয় মেহনূরের গালে। শব্দটা বাংলোর নিস্তব্ধতায় ছুরির মতো কেটে যায়।
কিন্তু মেহনূর কাঁদে না। ফেটে কাঁদে এহসান।
— আমার নারীকে ছেড়ে দাও! আমার প্রতি তোমার শত্রুতা থাক, ওর প্রতি নয়! কেনো কষ্ট দিচ্ছ ওকে, কেনো?!
এলি ঘাড় ঘুরিয়ে হিম কণ্ঠে বলে,
— চুপ… এত কথা কিসের?
তারপর দাঁত চেপে, চোখ রক্তবর্ণ করে বলে—
— তুমি মুত্তাকী নারী হয়ে, এতটা নিকৃষ্ট একটা পাপীকে ভালোবাসো?
মেহনূর নিঃশব্দে বলে—
— ভালোবাসা নিকৃষ্টতা দেখে না… তাই নিকৃষ্ট’কেও ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি।
এলির চোখ আগুন হয়ে ওঠে। সে গর্জে ওঠে—
— তুমি জানো না পাপীদের ভালোবাসা মানে নিজের মৃত্যুর সাথে চুক্তি? পারবে ওর জন্য প্রাণ দিতে?
মেহনূরের চোখে অশ্রু ছলছল করে ওঠে। তারপর যেন মৃত্যুর সঙ্গে প্রেম করে নেয়া সাহসিকতায় সে বলে—
— পাপবিদ্ধকে ভালোবেসেছি, তার পাপের তাপেই তো জ্বলে মরতে হবে আমায় অন্তত কাল “! তাই প্রাণ দিলে আমার আপত্তি নেই…।

এলি একজনকে ইশারা করে। সে একটা চিকন, ধারালো তীর এগিয়ে দেয়। একই সঙ্গে মেহনূরের হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়।
মেহনূর উঠে দাঁড়ায়, পেটে যন্ত্রণায় মুখ কুঁচকে ওঠে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপছে সে—দেহে যন্ত্রণা, মনে ভয়, আর হৃদয়ে ভালোবাসা।
এলি ধীরে সামনে এসে বলে—
— আমি তোমার স্বামীর মতো নিকৃষ্ট নই। আমি তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি। তোমার সন্তানকে রেখেই ছেড়ে দিচ্ছি। তুমি বাঁচবে, ঠিক থাকবে… বোনের মতো… কেবল একটা শর্ত আছে।
মেহনূর স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। কণ্ঠ কাঁপে—
— কি… কি শর্ত…?
এলি তখন ঠোঁটে এক ভয়ংকর ঠান্ডা হাসি টেনে বলে—
— তোমায় এই তীর… চালাতে হবে… ওর বুকের মধ্যে!
মেহনূর যেন নিজেই একটা কাঠ হয়ে যায়। তার চোখে বিস্ময়, কণ্ঠে ভাঙা ফিসফিস—
— না… না… এটা সম্ভব না…!!
এহসান গম্ভীর, শান্ত, অথচ ছায়ার মতো ভয়ানক কণ্ঠে বলে—
— সম্ভব, প্রিয়তমা… পাপবিদ্ধদের বাঁচার অধিকার নেই…!
এহসানের চোখে আগুন। সে অনুভব করছে, আজ হয়তো তার প্রিয়তমা তার জন্য প্রাণ দেবে। এই সত্য এতটাই অসহ্য,।

এলি মেহনূরের সামনে এসে দাঁড়ায়। চোখে অদ্ভুত এক জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তীর ওর দিকে এগিয়ে বলে_
— যাও… যদি নিজের সন্তান আর নিজেকে ঠিক রাখতে চাও তাহলে ওর বুকে তুমি নিজে প্রথম তীর ঢুকাও। আমি চাই, ওর প্রিয়তমার হাতেই হোক ওর ধ্বংস।
শব্দগুলো বিষের মতো শিরা বেয়ে বয়ে যায়। হঠাৎই বাংলোর বাতাস আরও ভারী হয়ে ওঠে। এহসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চোখে এক অব্যক্ত অভিমান, এক নীরব প্রার্থনা। সে জানে, আর মাত্র কিছু মুহূর্ত… আর কয়েক মুহূর্তেই সব শেষ হয়ে যাবে। মেহনূর… নিশ্চয়ই তাকে মেরে ফেলবে। একজন মা নিজের সন্তানকে বাঁচাতে যা খুশি করতে পারে—সব।
এহসান চুপচাপ তাকিয়ে থাকে মেহনূরের দিকে। শুধু মৃত্যুর অপেক্ষা।
মেহনূর কেঁদে উঠে বলে—
— না… না আমি পারব না…!
কিন্তু এলি থেমে থাকে না। এক হাতে ছুরি তুলে মেহনূরের পেটে ঘেঁষিয়ে বলে—
— ঢুকিয়ে দেই?
তার আগেই এহসান চিৎকার করে ওঠে—

— না! না, এমন কর না! আমায় মারবে ও, আমায় মারবে!
তার কণ্ঠে আকুতি, বুকের গহীন থেকে উঠে আসা করুণ আর্তনাদ। সে কাঁপা গলায় বলে—
— পাপিষ্ঠদের বেশি দিন বাঁচতে নেই… মেরে ফেলো… তুমি আমায় মেরে ফেলো… আমি তোমার হাতে নিজের মৃত্যু চাই, প্রিয়তমা…
মেহনূরের চোখ ছলছল করে ওঠে। তার হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে যাচ্ছে ভেতর থেকে। এমন মুহূর্তে, এমন বিকট বাস্তবতার সামনে বুক ধকধক করে কেঁপে উঠছে বারবার।
মেহনূর এক পলক এহসানের দিকে তাকায়, অতঃপর এলির দিকে।
তারপর…
ধীরে ধীরে কাঁপা হাতে সেই তীক্ষ্ণ তীরটি তুলে নেয়। আঙুল কাঁপছে, তবুও তীরটি ধরে রাখে। বুকের ভেতরে জ্বলছে আগুন, মনে হচ্ছে—হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে শব্দহীনভাবে।
এহসানের বুক ধক করে ওঠে। সত্যিই কি তার ভয়ের আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে? এই তো—শেষ মুহূর্ত! কিন্তু তার মন বলে কিছুই হয়তো ভুল হচ্ছে না। তার চেয়েও বড় সত্য—এটাই তার পরম সৌভাগ্য। প্রিয়তমার হাতে মৃত্যু! কী অদ্ভুত এক প্রাপ্তি! কী ভয়ংকর এক সৌন্দর্য!

মেহনূরের পা কাঁপছে। সেই কাঁপা পায়ে সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে এহসানের দিকে। তীরটা শক্ত করে ধরে রাখে, যেন একটা সিদ্ধান্তের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে। হয়তো… এই মুহূর্তে সে নিজেকেই প্রশ্ন করছে বারবার।
তুই কি পারবি? পারবি তাকে মেরে ফেলতে? যাকে ভালোবেসেছিস জীবনের চেয়ে বেশি? যে মানুষটা তোকে তার পৃথিবী বলত… তুই পারবি?
এহসান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেহনূরের দিকে। তার চোখে এখনো ভাসছে সেই একরাশ মায়া… সেই নরম শীতলতা। যেন সে মৃত্যুকে নয়—ভালোবাসার প্রতিমূর্তিকে দেখছে। শেষবারের মতো।
— নিজের প্রিয় নারী… নিজের বেয়াদব নারী… নিজের আপন নার… নিজের প্রিয়তমা… নিজের স্নিগ্ধময়ী… নিজের কবুতরের বাচ্চাটা…
এই মুহূর্তে সবকিছু মিলেমিশে গেছে তার চোখে।
এহসান এর চোখ আটকে আছে মেহনূরের রূপে—

সাদা গোল একটা ড্রেসে আজ সে যেন কোনো অশরীরী বেদনার প্রতিমা। বড় কোনো ওড়না নেই, তবুও এক বিশুদ্ধতা জড়িয়ে আছে তার চারপাশে। চারপাশে থাকা সব মেয়ের মাঝেও সে আলাদা। মনে হচ্ছে সে কোনো নিঃশব্দ যোদ্ধা—ভালোবাসা আর যন্ত্রণার দ্বন্দ্বে পুড়ে যাওয়া এক অগ্নিশিখা।
ওর সাদা পোশাকে আজ এক অপার্থিব সৌন্দর্য। কালো ঘন চুল আজ খোপা করে নয়, বরং হাঁটুর নিচ অবধি ছড়িয়ে আছে… সেই চুলগুলো মৃদু বাতাসে দুলছে… মনে হচ্ছে এহসানের হৃদয়ের শেষ স্পন্দনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে।
আর সেই গোলাপি ঠোঁটজোড়া?
থাপ্পড়ের চিহ্নে রক্তে রঞ্জিত, তবুও… ভয়ংকর সুন্দর। ভয়ানক কোমল। তীব্র এক সৌন্দর্যে মোড়া। তার চোখ… সেই আঁখিজোড়া যেখানে এহসান হারিয়ে যেত বারবার, আজও… আজও সে তাতে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এবার সে জানে, এই হারিয়ে যাওয়া চিরকালের মতো হবে।
মৃত্যুর সীমানায় দাঁড়িয়ে এহসান হঠাৎ আলতো হেসে ফিসফিস করে ঠোঁট নাড়িয়ে বলে—

— আর আমার স্নিগ্ধময়ী নিজের স্নিগ্ধতায় আমায় রাঙাবে না… আর আমার প্রিয়তমা নিজের মায়াময়ী আঁখি দ্বারা আমার ন্যায় তাকাবে না… আর কখনো প্রিয় পুরুষ বলে জড়িয়ে ধরবে না…
ওর কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়। চোখ দুটি ছলছল করছে। হাসছে সে, কিন্তু সেই হাসি যেন শূন্য। যেন সমস্ত অনুভূতির অন্তিম সেই হাসির মধ্যেই লুকিয়ে আছে।
মেহনূরের হাত কাঁপছে। বুক ফেটে কান্না আসছে, কিন্তু সে নিরব। চোখ ফেটে জল গড়াচ্ছে, কিন্তু সে কেবল দাঁড়িয়ে আছে—হাতের তীর তার কলিজার দিকে তাক করা।
এই মুহূর্তে, দুটো মন… একে অন্যকে ছিঁড়ে খাচ্ছে ভালোবাসার ভয়ংকর পরিণতিতে।
মেহনূর ধীর পায়ে এগিয়ে এসে এহসানের সামনে দাঁড়ায়।
চোখে শূন্যতা, মনে ঝড়।কাঁপা হাতে ধরা তীরটি সে উঁচু করে, যেন কোনো কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু মুহূর্ত নীরবতা। তারপর…

সে তীরটি দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।হঠাৎই ঝাঁপিয়ে পড়ে এহসানের সামনে।দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে এহসান এর গলা।যেন এই বুক ছাড়া আর কোনো আশ্রয় নেই তার।ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় এহসানের গাল, কানে—
চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে—
— “আমি আপনায় ঘৃনা করি না…আমি আপনায় ভীষণ ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি!আপনি পাপিষ্ঠ হলেও আমি আপনায় ভালোবাসি..আপনি নিকৃষ্ট হলেও আমি আপনায় ভালোবাসি।আমি আপনায় ভীষণ… ভীষণ ভালোবাসি।”
মেহনূরের প্রতিটি শব্দ যেন বুক চিরে বেরিয়ে আসছে।
প্রতিটি বাক্যে জমে থাকা অশ্রু, প্রতিটি নিঃশ্বাসে অমোচনীয় যন্ত্রণা।
এহসানের চোখেও জমে থাকা কান্না আর ধরে রাখা যায় না।
ডুকরে কেঁদে উঠে এহসান ।
পুরুষের নাকি কাঁদতে নেই—কিন্তু আজ সে নিজেকে আর বাঁধতে পারে না।সে নিজেকেই প্রশ্ন করে—এত ভালোবাসার কি সে আদৌও যোগ্য?
নিজেকে কঠিন করে সে গলায় বলে—

— “তুমি আমায় মেরে ফেলো…নয়তো ওরা তোমায় মেরে ফেলবে।”
মেহনূর ওর গলা আরও জোরে জড়িয়ে ধরে।
চোখ বেয়ে অশ্রু গড়ায়, কিন্তু গলায় এক অদ্ভুত দৃঢ়তা—
— “আমি বাঁচলে এহসান তালুকদার এর সাথেই বাঁচব…মরলে তার সাথেই মরব।আমি নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে কী নিয়ে বাঁচব?পারব না বাঁচতে আমি…”
এহসান হাউমাউ করে কেঁদে উঠে—
— “জান… এমন করো না..মেরে ফেল আমায়…”
মেহনূর কেঁপে উঠে।
ওর চিৎকার যেন আকাশ কাঁপিয়ে দেয়—
— “আমি পারব না!আমি পারব না!আমি কখনোই পারব না!মরে গেলেও পারব না!”
এহসান ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।নিজের জন্য নয়—নিজের বেগম আর সন্তানের সম্ভাব্য মৃত্যুর জন্য এই কান্না।
এক অসহায় স্বরে বলে—
— “তুমি না বলেছিলে…পাপিষ্ঠ দের ভালোবাসতে নেই…
তাদের ঘৃনা করতে…তাহলে তুমি কেনো আমার জন্য প্রান দিবে?”
মেহনূরের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
তবুও ঠোঁট কাঁপে না, গলায় কাঁপন নেই—

— “পাপবিদ্ধ দের ভালোবাসা যায়..তাদেরও ভীষণ ভালোবাসা যায়।”
ফুপিয়ে আরও শক্ত করে এহসান কে জড়িয়ে ধরে বলে —
— “পাপিষ্ঠ দেরও ভালোবাসা যায়…তাদের ভালোবেসে প্রাণ অব্দিও দেওয়া যায়…আর প্রয়োজনে আমি মাহজাবিন মেহনূর,আপনার জন্য নিজের প্রাণ দিয়ে তা প্রমাণ করে দিব।”
ঠিক তখনই এলি রেগে তেড়ে আসে।
মেহনূরকে টেনে সরিয়ে নিতে যায়,কিন্তু মেহনূর এহসানের গলা ছাড়ে না।দুই হাত, বুক, চোখ—সব কিছু দিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকে তার প্রিয়তম পুরুষটাকে।
দুজন মহিলা এসে টেনে সরিয়ে নেয় মেহনূরকে এহসান থেকে।
কিন্তু মেহনূর পাগলের মতো ছুটে আসার চেষ্টা করে, চিৎকার করে বলে—
— “আমাকে আর কিছু মুহুর্ত থাকতে দিন না…আমার পাপবিদ্ধ পুরুষ এর পাপিষ্ঠ বুকে, দিন না থাকতে!”
এলি ধাক্কা দিয়ে এক চড় বসিয়ে দেয় মেহনূরের গালে!
এক মুহূর্তে সেই শুভ্র মুখ রক্তে ভিজে যায়…
এহসান চিৎকার করে উঠে—
কণ্ঠ ফেটে যায় যন্ত্রণায়—

— “আমার প্রাণ কে ছেড়ে দাও!আমায় মেরে ফেলো!দয়া করো… ছেড়ে দাও!”
এলি থমকে দাঁড়িয়ে, তাকায় তার চোখে চোখ রেখে।
ঠান্ডা স্বরে বলে—
— “আমিও এভাবে আকুতি করেছিলাম সেদিন…
কিন্তু তোমরা শুনোনি।”
চারপাশ থমথমে। হাওয়া যেন হঠাৎ জমে গেছে।
কেউ কথা বলে না। কারও নিঃশ্বাসের শব্দ পর্যন্ত স্পষ্ট শোনা যায়।এলি দাঁড়িয়ে দৃঢ়ভাবে। ঠোঁটে খেলা করছে হিংস্র হাসি।তার চোখে নেই ভয়, নেই দ্বিধা—শুধু প্রতিশোধের দীপ্তি।
সে ইশারা করে কাউকে।একজন ছায়ার মতো এগিয়ে এসে খুলে দেয় এহসানের বাঁধন।
এলি তখন উচ্চস্বরে হুংকার দেয়—

— “এহসান তালুকদার, চুপচাপ বসে থাকো। না হলে এই ছুরি তোমার স্ত্রীর পেটে গিয়ে ঢুকবে!”
তার হাতে চকচক করছে একখানা ছুরি।যা মেহনূরের পেটে থাক করা
সঙ্গে সঙ্গেই চারজন নারী গার্ড চেপে ধরে এহসানকে।তার কাঁধে চাপ দিয়ে জোর করে বসিয়ে ফেলে তাকে মাটিতে।
এহসান কিছু বলে না। সে জানে—এক পা এগোলেই, এক চিলতে প্রতিবাদ করলেই মেহনূরের জীবন থেমে যাবে।
এলি ধনুক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অদ্ভুত এক নীরবতায়।
ওর ঠোঁট বাঁকা, চোখে ঝলসে ওঠা প্রতিশোধের আলো।
সে ধীরে ধীরে তীরটি হাতে নেয়—লম্বা, কালো পালক দেওয়া তীক্ষ্ণ তীর।তীরটা ঠিক যেন বিষাক্ত সাপ, মাথা তুলেই ছোবল মারার অপেক্ষায়।
এহসানের বুক লক্ষ্য করে সে ধনুকের তার টেনে ধরে—
তার শরীর কাঁপে না, চোখ নড়ে না—হৃদয়ে নেই এক বিন্দু দয়া।তার বাঁ চোখের কোণ থেকে ছায়া পড়ে এহসানের বুকে।

ধনুকের তার চাপা একটা ‘টান’ শব্দ তুলে ছুটে দেয় তীর।
‘শ্ঁঞ্ঁঽ…’ – শিসের মতো এক বিভৎস আওয়াজ
বাতাস কাঁপিয়ে ছুটে যায় তীর—
সময় যেন ধীরে চলে, চারদিক নিঃশব্দ।
‘ফট্!’
তীরটা ঠাস করে বিঁধে যায় এহসানের বুকের মাঝখানে।
তীক্ষ্ণ ধাতব তীর শরীরের চামড়া ভেদ করে হাড়ের পাশ ঘেঁষে ঢুকে যায় মাংসের গভীরে।
রক্তের এক ফোয়ারা ছিটকে ওঠে—উষ্ণ, ঘন লাল।
এহসানের সাদা পাঞ্জাবি ভিজে লাল হয়ে যায় মুহূর্তেই,তীরের চারপাশে হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক শব্দে রক্ত লাফিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে আসে।
এহসান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড— নিঃশ্বাস আটকে গেছে, বুক ফুলছে আবার ধ্বসে পড়ছে।
তারপর… একটা গোঙানির শব্দ।সে , হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে—কিন্তু রক্ত থামছে না, মাটি এখন রক্তের পুকুরে রূপ নিচ্ছে।

দূরে বাঁধা মেহনূর সেই দৃশ্য দেখে এক দুনিয়া-বিধ্বংসী চিৎকারে ফেটে পড়ে।তার চোখ আকাশমুখী, বুক কাঁপছে কান্নায়।
মেহনূর কাঁপা গলায় বলে—
— “ ইয়া রব,!আমার এহসান! আমার অস্তিত্ব, আমার সব!হে আল্লাহ! হে আমার রব! আমি তো নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি!আপনি কোথায়, ইয়া রব? আপনি কিছু করুন!”
দুজন গার্ড ওকে জোরে ধরে রেখেছে।সে ছুটে আসতে পারে না।তবু ওর শরীরের প্রতিটি শিরায় কাঁপন—ওর চিৎকার যেন আকাশ কাঁপায়।
এহসান তাকিয়ে থাকে মেহনূরের দিকেই।তীরের আঘাত? সেটা কিছুই না।এই নারী, এই মেহনূরের কষ্টটাই তার বুক চিরে দিচ্ছে।সে বহু রক্ত দেখেছে, বহু মৃত্যু ঘটিয়েছে।
কিন্তু এই প্রথম, সে নিজে ভেঙে পড়ছে—নিজের নারীর কান্নায়।তবু সে বসে থাকে—চোখে শুধুই মেহনূর।
এলি দাঁতে দাঁত চেপে দ্বিতীয় তীর তোলে।
ধনুকের তারে তীরটা গেঁথে শ্বাস নেয়—একটা হিংস্র শ্বাস।
তারপর ছুঁড়ে মারে।

‘ঝ্ঁঞ্ঁঽ…’
দ্বিতীয় তীর ছুটে এসে ডান কাঁধে গেঁথে যায়!
মাংস ছিঁড়ে ধাতব তীক্ষ্ণতা হাড়ে ধাক্কা খায়।
‘ধাঁশ্!’
এহসান কেঁপে উঠে ঝাঁকুনি খায়, মুখ থেকে গোঙানির মতো শব্দ বের হয়।
কিন্তু এহসান চিৎকার করে না—চোখে এখনও আগুন!
আঘাত নয়, তার মৃত্যু আসছে মেহনূরের চোখের অশ্রু দেখে!
তবু শেষ হয়নি।
এলি তৃতীয়বার টেনে ধরে ধনুক।
তার মুখে ঠান্ডা হাসি—
— “আজ তুই শুধু মরবি না, টের পাবি কেড়ে নেওয়ার কষ্ট।”
তৃতীয় তীরটি ছুটে আসে মনে হয় মৃত্যুর শেষ বার্তা হয়ে।
‘ফুউউউ…’
এহসানের ডান পাঁজরের নিচে, খুব কাছ থেকে সেই তীর গিয়ে গেঁথে যায়।শরীরটা কেঁপে উঠে একবার, তারপর হঠাৎ থেমে যায়।
‘ঠাক্!’

তীরটা এত গভীরে ঢুকেছে যে তীরের পেছনের অংশটা পর্যন্ত দুলে ওঠে।
এহসানের শরীর কেঁপে উঠে আর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে—
চোখ খোলা, নিঃশ্বাস টলোমলো, হৃদয়… একান্ত মেহনূরের দিকে।
এহসানের বুকে রক্ত, চোখে জ্যোৎস্নার মতো শেষ আলো।
কিন্তু সে তাকিয়ে আছে একটিমাত্র দিকে—মেহনূরের চোখ।তার প্রাণ ত্যাগের আগের শেষ ঠিকানা।
এদিকে মেহনূর চিৎকার করছে, ছুটে আসতে চাচ্ছে।
কিন্তু সে বন্দী, বাধা, ক্লান্ত।
তার মুখ ভেসে যাচ্ছে চোখের জলে।
সে বলতে পারে না আর কিছুই, কেবল ফুপিয়ে ওঠে—
— “আমায় মেরে ফেলুন… আমার এহসানকে নয়…”
এলি এবার এগিয়ে আসে মেহনূরের দিকে।তার হাতে একখানা ছুরি—ধাতব, হালকা বাঁকা, সূচালো।ছুরির ধার চকচক করে উঠছে আলোতে—যেন জানে সে কোন মাংস কেটে দিতে চলেছে।
মেহনূরের মুখে কান্না, ভয়ে জমে থাকা চিৎকার,কিন্তু তার চোখে তখনো আশার ক্ষীণ আলো—যেন এখনো কিছু বাকি।
এলি এক মুহূর্ত থামে। তারপর—এক নিঃশব্দ ঝাঁপ!
দেখার আগেই ছুরিটা চলে যায় মেহনূরের পেটে।
‘চ্যাক্!’
মাংস কেটে যাওয়ার আওয়াজ।চামড়া ফেটে যায়, পেশি ছিঁড়ে যায়,
মেহনূর চিৎকার করে ওঠে—
একটা গলা ফাটানো “আআআআআহ!”মেহনূরের মুখ দিয়ে বের হয়।ছুরির ফলা তার শরীরে ঢুকে এক ইঞ্চি… দুই… তিন…

মেহনূর হা করে নিজের হাতে পেট চেপে ধরে, কিন্তু কিছু থামাতে পারছে না।
রক্ত গড়িয়ে পড়ছে গায়ের নিচে।মেহনূরের সাদা পোশাকে ছড়িয়ে পড়ছে লাল দাগ—প্রথমে ফোঁটা, তারপর স্রোত।
কেঁপে উঠছে, গায়ের প্রতিটি শিরা কাঁপছে যন্ত্রণায়।
মেহনূর চোখ দিয়ে কান্না নয়, রক্ত মিশে যাচ্ছে সাদা চোখের কণিকায়।
শরীর একদিকে কুঁজো হয়ে যাচ্ছে, কণ্ঠে রুদ্ধস্বরে ফিসফিস করে বলছে—
— “আমার পেটে তো আমাদের… আমাদের দুটো প্রাণ… ওদের তো কষ্ট হচ্ছে এভাবে…”
কণ্ঠ নিভে যাচ্ছে, কিন্তু বুকে তখনও প্রতিধ্বনি হচ্ছে গর্ভের আর্তনাদ।

এহসান কেঁপে ওঠে। ওর চোখে এখন শুধু পাগলামী।
এহসান গর্জে ওঠে,
— “ইয়া আরশের মালিক! হে আমার রব!আপনি কি এমনভাবে আমার পাপের শাস্তি দেবেন?আমার নারীকে রক্ষা করুন!ওর ভেতরে তো আমাদের দুই অস্তিত্ব লুকিয়ে আছে, মাবুদ! ওদের রক্ষা করুন!”
“কিন্তু আফসোস ওর পাপি অস্তিত্বের কারণে আজ ধ্বংস হয়ে গেল ওর পবিত্র অস্তিত্ব গুলো”!
কিন্তু কিছুই থামে না।রক্ত ঝরে, আর সময় থেমে যায়।
মেহনূরের ঠোঁট কাঁপছে।
রক্তে ভেজা মুখ তুলে ফিসফিসিয়ে বলে—
— “ ও এহসান… ওদের বলুল না … ওরা যেন আমার পেটে আঘাত না করে…আমার বুকে করে… আমার পেটের ভেতর তো আমাদের দুই অস্তিত্ব লুকিয়ে আছে … ওরা তো কষ্ট পাচ্ছে…”!
“এমন আর্তনাদ শুনে দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসছে মেহনূরের প্রিয় পুরুষ এর”! এত নির্মম!
চোখ বন্ধ হয়ে আসছে, তবু কণ্ঠ কাঁপছে।সেই কষ্ট, সেই প্রার্থনা—সেই ভালোবাসার সর্বশেষ নিঃশ্বাস।এক নারী মরে যাচ্ছে, কিন্তু তার মন পড়ে আছে ভেতরের দুটো প্রাণের জন্য।
এহসান নিঃশ্বাস নিতে পারে না।তার শরীর নিস্তেজ, কিন্তু বুকটা ফেটে যাচ্ছে—আর কিছুই করার নেই তার।
শুধু তাকিয়ে থাকে… নিঃশব্দে… অশ্রুভেজা দৃষ্টিতে।
এহসান হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। ব্যথায় আর কান্নাও আসে না—তবুও বুক চিরে, ছিঁড়ে, তীব্র বেদনায় ভেঙে পড়ে সে।

আর মেহনূর? ওর আর কাঁদার শক্তিও নেই। শরীরটা ধীরে ধীরে রক্তে লাল হতে শুরু করেছে, যেন প্রতিটি শিরায় বিষ ঢেলে দিচ্ছে কেউ।
হঠাৎ, এলি মেহনূরের চুল মুঠো করে ধরে এক টানে ওকে এহসানের বুকের উপর ছুড়ে ফেলে দেয়!
মেহনূরের পেটটা কেমন যেন কলকল করে উঠতে থাকে—মনে হচ্ছে, যেকোনো মুহূর্তে নাড়িভুঁড়ি সব বেরিয়ে পড়বে। অসহনীয়, বীভৎস এক যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে ও।
সেই সাথে গুমগুমিয়ে রক্তক্ষরণ—প্রচণ্ড ব্যথায় মেহনূর হঠাৎ টাশ করে এহসানের বুকের উপর এসে পড়ে। রক্তমাখা হাতে ও এহসানের পাঞ্জাবি আঁকড়ে ধরে। হাউমাউ করে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে—
— “আমি আর পারছি না! আমি পারছি না!”
এহসান কাঁপা হাতে মেহনূরের মাথায় হাত রাখে, ওকে শান্ত করতে চায়। গলার ভেতর থেমে যাওয়া কান্না গিলে ফেলে ফিসফিস করে বলে—
— “কেঁদো না… রব আছেন। তিনি সব ঠিক করে দিবেন। আর আমি তো আছিই না, প্রিয়তমা? সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ…”
কিন্তু যখন এহসান নিচে তাকায়, তার দৃষ্টি আটকে যায় মেহনূরের শরীরে।
তার প্রাণ ছিঁড়ে যায়।
মেহনূরের সাদা কামিজ আর পায়জামা রক্তে রাঙা— তার পবিত্র অস্তিত্ব এক নিঃশব্দ ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছে।
এহসান কাঁপতে থাকা হাতে মেহনূরের উরুতে হাত রাখে। নিজের হাতে লাগে একটু রক্ত। সেই রক্তমাখা হাত সামনে তোলে, কাঁপা কাঁপা গলায় বলে—

— “আমার সন্তান… আমার অস্তিত্ব… আমার সন্তান…”
তার গলা কেঁপে উঠে আবার।
— “বেগম, আমাদের অস্তিত্ব মিলিয়ে যাচ্ছে… সব ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে… সব…”
রক্তমাখা সেই হাত নিজের বুকে চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে—
— “ইয়া আরশের মালিক! আপনি দেখুন… দেখুন কিভাবে ওরা আমার নিষ্পাপ অস্তিত্বকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিল…”
মেহনূর কাঁদতে পারছে না। তার চোখের সামনে মৃত্যু দাঁড়িয়ে—একটি অশান্ত, নির্দয় ছায়া। অজস্র কষ্টের মাঝে, এক শেষ মুহূর্তে মেহনূর কষ্ট ভরা গলায় ফিসফিস করে বলে—
— “মৃত্যুর আগে বলে যাচ্ছি, আপনায় আমি ঘৃনা করি না,, আপনায় আমি ভীষণ ভালোবাসি… আমি আপনায় ভীষণ ভালোবাসি… ভীষণ!”
এহসান মেহনূরের মাথায় স্নেহভরে হাত বুলিয়ে দেয়, তার অশ্রু-filled চোখের দিকে তাকিয়ে বলে—
— “পাগলি, এসব বলতে নেই… তোমার কিছু হবে না, কিছু হবে না।”
কিন্তু মেহনূর, যার সমস্ত শরীর রক্তে ডুবে গেছে, আরও শক্ত করে এহসানের রক্তমাখা পাঞ্জাবি আঁকড়ে ধরে। সে জানে, এহসান তাকে শান্তনা দিচ্ছে, কিন্তু তাদের হাতে সময় খুবই কম। তার পেটের ভেতর প্রবল যন্ত্রণা—প্রাণের কাছে মৃত্যুর হালকা নিঃশ্বাস এসে পৌঁছাচ্ছে।
অল্প কষ্টে, আহত গলায় সে বলে—
— “আপনার বেয়াদ্দব নারী… আপনার সাথে অনেক বেয়াদবি করেছে। মাফ করে দিয়ে যান, সেই বেয়াদবি গুলো দুনিয়ার বুকে…”
এহসান যেন তার কলিজায় তীব্র এক তীর অনুভব করে। মনে হচ্ছে, আরও সাত-আটটা তীর বিধে দিয়েছে। এত কষ্টে সে মুখ খুলে, তার চোখে জল জমে ওঠে। বুঝে গেছে—তাদের আর বেশি সময় নেই, এই দুনিয়ার বুকে।

— “মাফ করে দিলাম, মন থেকে মাফ করে দিলাম… আমার করা অন্যায়গুলোও মাফ করে দিও, প্রিয়তমা।”
মেহনূর কিছুটা হাসে—একটি প্রশান্তির হাসি, যেন সেই হাসির মধ্যে সমস্ত কষ্ট হারিয়ে যাচ্ছে। তার চোখে এক অদ্ভুত শান্তি, আর এক অসম্ভব বোধ গাঢ় হয়ে ওঠে।
— “পরজন্ম বলে কিছু নেই… তবে পরপার বলে কিছু আছে। তাই সেখানে আমাদের আবারও দেখা হবে—এই কলঙ্কিত ভালোবাসার অন্তিম খোঁজে।”
এ বলে মেহনূর কাঁপা হাতে এহসানের বুকের দিকে হাত বাড়ায়!
মেহনূরের আঙুল ধীরে ধীরে তীরের গা বেয়ে নামতে থাকে।রক্তমাখা তীরটা তখনো এহসানের বুকের গভীরে গেঁথে— শ্বাসের সাথে সাথে কাঁপছিল হালকা করে।
সে জানে, এই তীরটা তাকে নিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে।
তবুও, নিজের কাঁপতে থাকা হাতদুটো দিয়ে সে সেই তীরটা তুলে নেয়—একটা নিষ্পাপ মমতায়, একটুখানি ব্যথা নিজের ভেতর টেনে নিয়ে।

নিজের চোখে তখন শুধু একটাই আকুতি—
“সে বাঁচুক, আমার প্রিয় পাপিষ্ঠ পুরুষটা বেঁচে থাকুক…”
তীরটা বেরিয়ে এলে রক্তের একফোঁটা ছিটকে পড়ে মাটিতে,এহসান তীব্র ব্যাথায় চোখ মুখ বুঁজে নেয়!
আর ঠিক তখনই, দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এলির চোখে পড়ে সেই মুহূর্ত।
সে স্থির, শান্ত… মুখে তীব্র ঘৃণার ছায়া।কোনো শব্দ করে না, কোনো চিৎকার নয়—শুধু ধীরে ধীরে তোলে আরেকটা তীর।
ওর চোখে কোনো হাহাকার নেই, কোনো আবেগ নেই—
শুধু প্রতিশোধের এক নিঃশব্দ প্রতিজ্ঞা।ধীরে, ভয়ানকভাবে ধীরে সে ধনুক টানে।তীরটা ছোঁড়ে এমন নিখুঁত কৌশলে, মনে হয় দীর্ঘদিন ধরে সে এই মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষায় ছিল।
তীর ছুটে আসে বাতাস চিরে—না গর্জে, না গম্ভীর হয়ে—
একটা ঠান্ডা নিঃশ্বাসের মতো…

তীরটা বিদ্ধ করে মেহনূরের পেট—তারপর ভেদ করে এহসান এর পেটে গেঁথে যায় দুজনে তীর দ্বারা ।
দুজনেই দুলে ওঠে।একটা নিঃশব্দ মৃত্যু নেমে আসে তাদের চারপাশে।
ব্যথায় দগ্ধ হয়ে মেহনূর হঠাৎই নুইয়ে পড়ে।ওর ডান হাতটা কেঁপে উঠে, অসহায়ভাবে মাটি খাবলে ধরে মেহনূর।
আঙুলের ফাঁকে ভরে ওঠে রক্তমাখা ধুলোর কণা।
আর অন্য হাতে এহসানের বুক আঁকড়ে ধরে শেষ শক্তিটুকু দিয়ে।এক গভীর কষ্ট আর মায়ার টানে সে এহসান কে নিজের শরীরের কাছে টেনে আনে।
আঁকড়ে ধরার কারণে মেহনূরের শাহাদাত আঙুল অসচেতনভাবে।
মুহূর্তের ভেতর আঙুলটা ঢুকে পড়ে এহসানের তীরবিদ্ধ পাজরের ক্ষতের গভীরে…একটা টুপ শব্দ হয়, নিঃশব্দ আর হাহাকারে মেশা।
এহসান এতে চিৎকার করে ওঠে না, কেবল কাতর শব্দ বেরোয় গলা দিয়ে।ব্যথায় এহসান এর চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।বাম হাতে আঁকড়ে ধরে সে একটা মাটির দলা—জোরে, এমনভাবে যেন সেই মাটি ছিঁড়ে নিতে চায় সমস্ত যন্ত্রণাকে।
দুজনের দেহ কাঁপছে—ভিতরে বাহিরে যন্ত্রণায়, ভালোবাসায়, মৃত্যুর ছায়ায়।
মেহনূর দম নিয়ে কালেমা পড়ে নেয়।
তারপর এক দীর্ঘ প্রশান্তির শ্বাস ফেলে, মনে মনে বলে—

— “আমি মারা যাচ্ছি… তবে প্রমাণ রেখে যাচ্ছি, পাপিষ্ঠদেরও ভালোবাসা যায়… তাদের দহনেও পুড়ে যাওয়া যায়… তাদের ভালোবেসে প্রশান্তির চিরনিদ্রাও গ্রহণ করা যায়।”
মৃত্যুর ছায়া এসে জড়িয়ে ধরে তাকে।
অন্তর ডুকরে কেঁদে ওঠে বলে—
— “না হতে পারলাম মা খাদিজার মতো দ্বীনদার আর স্বামীভক্ত।
না হতে পারলাম মা ফাতেমার মতো পর্দানশীল আর সংসারী।
না হতে পারলাম মা মারিয়ামের মতো পবিত্র।
না হতে পারলাম মা আয়েশার মতো জ্ঞানী,
আর না ছিল আমার মধ্যে বিবি আছিয়ার মত ঈমানী শক্তি।
আজ আমি এক লজ্জিত মুসলিম নারী হয়ে বিদায় নিচ্ছি এই দুনিয়া বুক থেকে।”
এহসান বুঝতে পারে— তার প্রাণের , তার ভালবাসার শেষ ঠিকানা, খুব শিগগিরই বিদায় নিচ্ছে।
এহসান কাঁপা হাতে নিজের আপন নারীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
কাতর গলায় বলে—
— “ঘুমিয়ে যাও, প্রিয়তমা… চিরতরে।আমার এই পাপিষ্ঠ পাঁজরে আবারও দেখা হবে, পরপারে।নতুন কোনো অধ্যায়ের সূচনা নিয়ে…!

আর কিছু বলতে পারে না এহসান।আর কিছু ভাবার শক্তি নেই মেহনূরের।
তবু, মেহনূরের খুব ইচ্ছে হচ্ছে এটা বলার—
— “পরপারে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালে, পাপমুক্ত হয়েই দাঁড়াবেন।নয়তো… নয়তো আমার মুখোমুখি হবেন না!”
মেহনূরের চোখের পাতা নিবে আসে। “কানে ভাসে ”
— তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা যদি কলঙ্কের হয় তবে এই কলঙ্কই আমার জন্য চিরন্তন,
–” তোকে আমি ভীষণ ভালোবাসি ভীষণ ”
–” বেয়াদব নারী, আর করিস না বেয়াদবি”
-‘থাকুক না তোমার আমার ভালোবাসা কলঙ্কে আর পাপে ঘেরা!
কিন্তু… আর কিছু বলতে পারে না মেহনূর।শুধু ঠোঁট কেঁপে ওঠে একটুখানি, তারপর স্তব্ধ।দম বেরিয়ে যায় চিরতরে—
ঠিক যেমন সে তাহাজ্জুদের দীর্ঘ রাতগুলোতে কেঁদে কেঁদে চাইতো।
“আল্লাহ… আমার মৃত্যু যেন হয় আমার পাপিষ্ঠ প্রেমিকের বুকে…”
হয়তো আল্লাহ কবুল করে নিয়েছেন তার সেই কান্নাভেজা মিনতি।হয়তো তার চোখের পানিই রবের পছন্দ হয়েছে—
তাই তো আপন পুরুষের আপব বুকে, তীরের আঘাতে সে শেষ হলো।
চিরনিদ্রা নিলো ভালোবাসার কবরঘরে, রক্তমাখা বুকে মুখ গুঁজে।

এহসানের শ্বাস ক্রমশ ভারী হয়ে উঠছে।তীর বিঁধেছে শরীরে, রক্ত ঝরছে—কিন্তু সে তাতে কষ্ট পাচ্ছে না।
তার যন্ত্রণা অন্যখানে।প্রিয়তমার এই ভয়ানক মৃত্যু তাকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে।
আজ সে বুঝতে পারছে নিজের ভুলগুলো।বুঝতে পারছে— যে একদিন একজন মুত্তাকী বান্দা হতে চেয়েছিল,যে আল্লাহর ইবাদত করত,সব কিছু আল্লাহর জন্যই করত,
সে-ই ব্যক্তি একদিন ক্ষমতার লোভে পড়ে নিজের অন্তর কলুষিত করেছে।
আল্লাহর নামে পাপকে নির্মূল করতে গিয়ে—নিজেই পাপী হয়ে উঠেছে।নিজেই ভয়ংকর হয়ে গেছে।
এটাই হয়তো আল্লাহর দুনিয়ায় দান করা বিচার।
এই নিষ্ঠুর, হাড়-ভাঙা ফল।
“আমি জানতাম আল্লাহর আজাব কত ভয়ংকর,তাঁর আয়াত পড়তাম প্রতিদিন,তবু কেন আমি ভুললাম…তবু কেন করলাম পাপ…”
এহসান কাঁপতে থাকা শরীরে বুঝতে পারে—তার অন্তর পুড়ছে তীব্র অনুশোচনায়,ভয়ংকর আত্মগ্লানিতে।
আজ সে জানে—
“যারা জেনে পাপ করে, তারা মুনাফেক।আর সেই ছায়া আমাকেও গ্রাস করেছিল।তাই এই ভয়াবহ পরিণাম।”
ঠিক তখনই…
এহসান এর কানে ভেসে ওঠে সেই ভয়ংকর আয়াত—
যে আয়াত সে একদিন নামাজে কাঁদতে কাঁদতে পড়ত…
> “فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ، الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ”
অবধারিত ধ্বংস তাদের জন্য, যারা নামাজ তো পড়ে, কিন্তু তারা তাদের নামাজে অমনোযোগী।
তার গলা ফেটে যায়, হাহাকারে ডুবে যেতে যেতে উচ্চারণ করে—
“হে আমার রব… এত দেরি করে বুঝলাম কেন?তুমি তো আগেই সাবধান করেছিলে…আমি তো জানতাম… তবু কেন শুনিনি?”

তার কণ্ঠস্বর তখন আর্তনাদে ভেঙে পড়ে।
একটা তীব্র, কষ্টে মোড়া আত্মচিৎকার উঠে আসে তার বুক ফুঁড়ে—
“আল্লাহ! আমি পাপ করেছিলাম, কিন্তু তুমি তো গাফফার…কেন আমার এই অন্তিম মুহূর্তে তুমি আমার প্রিয়তমাকে কেড়ে নিলে?”
তার দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে আসে, শরীর ঝিমিয়ে পড়ে।
তবু মেহনূরের নিথর মুখের দিকে তাকিয়ে সে যেন বলতে চায়—
“আমার সমস্ত অনুতাপ, সমস্ত আত্মসমর্পণ, এখন তোমার বুকেই জমা রইলো…পরপারে যদি দেখা হয়— আমার মুখোমুখি হবে তো?”
কিন্তু তার প্রিয়তমা আর কথা বলে না ‘! কালেমা পড়ে নেয়,এহসান “!
এহসান দীর্ঘ শ্বাস নেয়”! কিন্তু আর ফেলতে পারে না প্রান টা যে নেই”!

—আপন নারীকে #আত্মার_আগলে জড়িয়ে ধরে,
চিরনিদ্রায় ডুব দেয় এহসান তালুকদার।
এর চেয়ে সুন্দর পূর্ণতা আর কেমন হতে পারে?
প্রিয়জনকে আকড়ে ধরে,পারি জমানো সেই অনন্ত পরপারে—এ যেন প্রেমের পরিণতি, ভালোবাসার চূড়ান্ত বিস্তার।
তারা ভাগ্যবান, নিঃসন্দেহে—
কারই বা হয় এমন মৃত্যু?ক’জনই বা রোযা অবস্থায় প্রাণ ত্যাগ করে?আর ক’জনই বা প্রিয় মানুষটির সাথে।দুনিয়ার বন্ধন ছিন্ন করে।চিরন্তনের দিকে যাত্রা করতে পারে?
তারা পেরেছে।তারা পূর্ণতা পেয়েছে।তারা এক হয়েছে—দেহে নয়, আত্মায়, চিরতরে।
প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করিতে হইবে

আত্মার আগলে পর্ব ৫১+৫২

—এটাই তো বিধাতার নিয়ম।কিন্তু কজনই বা পারে সেই মৃত্যুকেএভাবে পরিপূর্ণ করে তুলতে?
মেহনূর…
ভাগ্যবতী সে,কারণ সে নিজের স্বামীর বুকে প্রাণ ত্যাগ করেছে।এ যেন ভালোবাসার চূড়ান্ত অর্ঘ্য।
শেষ পর্যন্ত,তারা একসাথে।একটি হৃদয়ে থেমে যাওয়া দুইটি স্পন্দন।একটিই নাম—অমর প্রেম।

আত্মার আগলে শেষ পর্ব