আদিল মির্জা’স বিলাভড পর্ব ৫

আদিল মির্জা’স বিলাভড পর্ব ৫
নাবিলা ইষ্ক

এলেন ফোনে কথা বলে এসে আদিলের কানের কাছে ধীর কণ্ঠে জানাল –
‘বস, নাদিমের খোঁজ পাওয়া গেসে। রাইট নাও ক্যাসিনোতে আছে। গ্যাম্বলিং করছে।’
আদিলের চোয়াল শক্ত হলো। কিছুক্ষণের জন্য মাত্র। পরমুহূর্তেই মেয়ের সান্নিধ্য অনুভব করে শান্ত হয়। বিপরীতে কিছু বলে না। কাঁধে জগৎ-সংসারের কাজের ভার থাকা সত্ত্বেও সে দিব্যি মেয়েকে নিয়ে বসে আছে লিভিংরুমের ডিভানে। তার বাম পাশে শান্ত আর এলেন দাঁড়িয়ে আছে। ফ্লোরে পুতুলের স্তুপ। হৃদি আইপ্যাড হাতে নিয়ে বসে আছে বাবার কোলে। তার ঘুম আসছে না। অনেকক্ষণ ধরে বায়না করছে এটা-সেটার। রাতের তখন বারোটা পনেরো। ঘেঁটেঘুঁটে কী যেন দেখছে! আদিল একটা ফাইল বাম হাতে ধরে নজর বোলাচ্ছিল। হঠাৎ হৃদি উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল –
‘ড্যাডিই…লুক এট দিস পিকচার। ইজন্ট ইট বিউটিফুল?’

আদিল অনাগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও মেয়ের বাড়িয়ে ধরা আইপ্যাডের স্ক্রিনে তাকাল। তারপর আর দৃষ্টি ফেরাতে পারল না। অনেকটা সময় যাবত। স্ক্রিনে একটি ছবি। মিস রোযা আর তার মেয়ে হৃদির। দুজনের পরনে লাল রঙের পোশাক। সম্ভবত ছবিটি হৃদির স্কুলে তোলা। কোনো প্রোগ্রাম ছিলো বুঝি? আদিল কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে দৃষ্টি ফেরাল। বলল –
‘সোনা, এবার তোমাকে ঘুমাতে হবে। হুম? স্লিপ টাইট ফর ড্যাডি। আর দুষ্টুমি করা যাবে না।’
হৃদি এবারে বাধ্য মেয়ের মতো মাথা দোলাল। চোখ দুটো ছোটো ছোটো হয়ে এসেছে ওর। বাবার গালে ছোটো ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। আইপ্যাড ডিভানে রেখেই মরিয়ম বেগমের হাত ধরে ওপরে চলে গেলো। আদিল আরাম করে বসল এবার। বাম হাতটা ডিভানের হাতলে রেখে ডান হাতে আইপ্যাডটা তুলে নিতে নিতে বলল –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘দ্যাট ড্যান্সার গার্ল, ওয়াজ শি এইবল টু সিডিউস হিম?’
‘পেরেছে। সম্ভবত রাত কাটাবে ওখানেই…’
আদিল নাকমুখে শব্দ করে। আইপ্যাডের ফটোসে ঢুকে এক এক করে ছবিগুলো দেখতে থাকল। মিস রোযার সাথে হৃদির অনেক অনেক ছবি, ভিডিও। মিস রোযার একার ছবিও আছে। সম্ভবত হৃদি তুলেছে। আদিলের যখন ঘোর কাটল ততক্ষণে সে আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করল পনেরো মিনিট ধরে সে ছবি, ভিডিও দেখে গেছে। হতবিহ্বল হয়ে দৃষ্টি তুলে দেখল এলেনের চোয়ালটা ঝুলে আছে। শান্ত অশান্ত দৃষ্টিতে বারেবারে তাকাচ্ছে। আদিল আইপ্যাড রেখে উঠে দাঁড়াল, গলাটা পরিষ্কার করে গম্ভীরমুখে বলল –

‘লেটস গো।’
শান্ত বসের পেছনে চলল তখুনি। কিছু পা গিয়ে ফের ফিরে এলো। সোফা থেকে আইপ্যাডটা তুলে নিয়ে গেলো সাথে করে। এলেন বিরক্ত হলো, সাথে আশ্চর্যও। এই রাত করে মোট আটটা গাড়ি একসাথে বেরোলো মির্জা বাড়ি থেকে। সুনসান নীরবতা রাস্তা জুড়ে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় মেইন রোডে ছোটা কালো রঙের এতগুলো গাড়ি একসাথে যাওয়াটা রাজকীয় দেখাল, ভীতি সৃষ্টি করতে পারদর্শী।
‘এটা এখানে কেনো?’
আদিলের প্রশ্নে মিইয়ে গেলো শান্ত। তাকাল বসের মুখের দিকে। রেগে আছে নাকি বুঝতে পারল না। আইপ্যাডটা সে পাকামো করে এনেছে। পাকামোতে সে বরাবরই সেরা। এলেন নাকমুখ কুঁচকাল। শান্ত মাথাটা সরাতে চেয়ে বলল –
‘য-যদি লাগে।’

আদিল হাত তুলে মার তে গিয়েও শেষমেষ মা রল না। আইপ্যাডটা তুলে নিলো হাতে। ফের ঘাঁটতে থাকল।
এই ক্যাসিনোটা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রভাবশালী সব মানুষের যাতায়াত এখানে। কী হয় না এখানে? গ্যাম্বলিং, বার ডান্স, প্রোস্টিটিউট বানিয়ে চওড়া দামে বেচাকেনা! গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আইপি কার্ড ব্যতীত প্রবেশ নিষিদ্ধ। এমনকি এই ভি-আইপি কার্ডও অনেক প্রভাবশালীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। ক্যাসিনোটা আইনগত ভাবে অবৈধ হলেও আইনের সুরক্ষায় আছে মোটা অংকের টাকার প্রভাবে। ক্যাসিনোর পেছনে আছে বড়সড় সব পাওয়ারফুল লোকেদের হাত। তারমধ্যে শেয়ারহোল্ডারের একজন স্বয়ং আদিল মির্জা।

তার ভি-আইপি কার্ড দেখানোর প্রয়োজন হয় না। গাড়ির নাম্বার দেখলেই ঢুকতে দেওয়া হয়। আজও ব্যতিক্রম নয়। সিকিউরিটি অতিক্রম করে যখন পৌঁছাল ততক্ষণে নাদিম গ্যাম্বলিং ফেলে এক সুন্দরী বার ড্যান্সারের সাথে ওপরের হোটেল রুমে ঢুকেছে। আদিল সময় নিলো। তখুনি গেলো না ওপরে। গিয়ে বসল স্টেজ থেকে খানিকটা দূরে, সাদা কাচের আড়াল করা রুমের সোফায়। তার সামনের টেবিলে কার্ড, মদ সাজানো। লাল বাতির আলোয় চারপাশটা ড্রিমি। স্টেজে স্ট্রিপ ড্যান্স করছে বেশ সুন্দরী এক নারী। ইংরেজি একটা গান প্লে হচ্ছে ব্যাকগ্রাউন্ডে। গ্যাম্বলিং রেখে বাকিরা খারাপ চোখে আপাতত স্টেজের দিকেই চেয়ে আছে। ড্যান্সার আপাতত গায়ের ওপরের অংশ খুলতে ব্যস্ত। ওসময় একজন এসে দাঁড়াল –

‘মির্জা সাহেব যে! আসুন খেলা যাক।’
আদিল একপলক চেয়ে একটা সিগারেট বের করতে নিয়ে বলল –
‘বসুন মিস্টার চ্যাটার্জি!’
দিকপাল বসল। তার পেছনে চারজন বডিগার্ড। শান্ত লাইটার জ্বালিয়ে ধরল বসের মুখের সামনে। আদিলের ঠোঁটে সিগারেট চেপে ধরা। মাথাটা বাড়িয়ে ওভাবেই সিগারেটে আগুন ধরাল। সোজা হয়ে বসে এবারে তাকাল মিস্টার চ্যাটার্জির দিকে। ভদ্রলোক হেসে স্টেজের দিকে ইশারা করে বললেন –
‘নতুন মাল। ডিরেক্টরের ফেভারিট। একমাস তার সাথে প্যানথাউসে ছিলো। এযাত্রায় ক্যাসিনোতে রেখে গেছে। নেয়ার ইচ্ছে আছে নাকি?’

আঙুলের ভাঁজে চেপে রাখা সিগারেট ঠোঁট ছুঁয়ে আদিল তাকাল স্টেজে। অর্ধ নগ্ন একটি শরীর। নানান অঙ্গভঙ্গিতে নাচছে, এদিকেই তাকাচ্ছে। কতো দুষ্টু ইশারা, চোখের দৃষ্টি। অথচ আদিলের কিছুই অনুভব হলো না। নির্বিকার ভাবে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। এযাত্রায় উঠে দাঁড়াল। বলল –
‘হাও এবাউট আই গিফট হার টু ইউ মিস্টার চ্যাটার্জি?’
হাসল দিকপাল, ‘আই ওন্ট মাইন্ড।’

আদিল ইশারা করে তার লোকজন নিয়ে ওপরে চলে এলো। তার পরনের কালো কোট এলেনের হাতে। ভেতরের সাদা শার্টের বুকের চারটা বোতামই খোলা। দোতালার একেবারে পেছনের বায়ান্ন নাম্বার রুমটাতেই নাদিম। রুমের বাইরে যেই তিনজন বডিগার্ড ছিলো, তারা আপাতত আদিলের লোকের কন্ট্রোলে। সে আঙুলের ইশারা করতেই, শান্ত চাবি দিয়ে দরজা খুলে ফেলল। ভেতরে সাদা বাল্বের আলোয় সবটা পরিষ্কার। নগ্ন দুটো শরীর ব্যস্ত ছিলো। হঠাৎ আওয়াজে চ্যাঁচাল নাদিম তবে নগ্ন শরীরের নারীটির কোনো হেলদোল হলো না। আরামসে সরে এলো নাদিমের নিচ থেকে। গায়ে পাতলা ওড়না পেঁচিয়ে এসে দাঁড়াল একপাশে। নাদিম নিজের লোকদের ডাকতে নিয়ে পিছু ফিরতেই চমকে গেল।

আদিলের খামখেয়ালিপনা আর নেই। রাগে হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে বসেছে। সে সব মেনে নিতে পারে, সহ্য করে যেতে পারে। কিন্তু তার মেয়ে! তার মেয়ের দিকে হাত বাড়ানোর স্পর্ধায় ভয়ের তাণ্ডব ঘটিয়ে ছাড়বে। শান্ত দরজা লক করেছে। নাদিম তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নামতেও পারিনি— আদিলের হাতের জ্বলন্ত সিগারেট সোজা ওর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যায়গা ছোঁয়। নাদিমের চিৎকারে যেন রুমের প্রতিটি দেয়াল কাঁপল। কাঁপল না আদিলের দৃষ্টি। চার-পাঁচটা শক্ত ঘুষিতে নাদিমের চোয়াল ভেঙে র ক্ত গড়াল মুখ দিয়ে। আদিল হিসহিসিয়ে উঠল চাপা গলায় –
‘আই উইল নট কিল ইউ রাইট নাও। তোকে আমি জাহান্নাম দেখাবো। ধীরে ধীরে….’

‘আপনি?’
শান্ত গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে বলে, ‘গুড মর্নিং মিস রোযা। ধ্রুব অসুস্থ। বেড রেস্টে থাকবে কিছুটা সময়। ওর অনুপস্থিতিতে প্রিন্সেসকে প্রটেক্ট করার দায়িত্ব আমার।’
রোযা আর প্রশ্ন করে না। মাথাটা দোলায়। গাড়িতে উঠে বসে। সূর্য ওঠেনি এখনো। চারিপাশটা মৃদু অন্ধকার। রোযার ঘুম হয়নি পুরোপুরি। নতুন গেমিং সেট পেয়ে রাতভর রাজু ভীষণ হৈচৈ করেছে। নিপা বেগম উৎসাহের সাথে শাড়ি চারটা ট্রায়াল দিয়ে দেখিয়েছেন অনেকটা সময় ধরে। আজিজুল সাহেব একটু পরপর এসে পাইপ স্মোকিংটা কোথায় রাখা হয়েছে তার খোঁজ করতে চাইছেন। মেয়ের ভয়ে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলেন না। এসব নিয়ে দুটো পর্যন্ত সজাগই ছিলো রোযা। পরে বিরক্ত হয়ে ঝাড়ি মারতেই পালিয়েছে সব। এখন এই পথটুকু ঘুমিয়ে পাড় করবে সে। কাঁধ ব্যাগ থেকে আই মাস্কটা বের করে চোখে দিয়ে— গাড়িতে হেলান দিয়ে রইল। শান্ত কিছু বলার জন্য মুখ খুলেছিল। মিরোরে রোযার হাবভাব দেখে পরমুহূর্তেই মুখটা বন্ধ করে ফেলল। সারারাত ঘুমানো হয়নি। চোখ দুটো লাল। মেজাজটা ভালো না। অথচ খুব সুন্দর একটা ঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে গাড়ির ভেতর। মিষ্টি, সুদিং। তার ভালো লাগছে। শান্তর তখুনি জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করল,

‘মিস রোযা, আপনি কি একটু আমার বসের ঘরে গিয়ে বসবেন? বসের চওড়া মেজাজটা ঠান্ডা হয়ে আসতে পারে।’
তা আর করা হলো না। গাড়ি যখন মির্জা বাড়ির ভেতরে গিয়ে থামল ততক্ষণে সূর্য উঠেছে। রোযা তখনো ঘুমিয়ে আছে। শান্ত দু-বার ঘুরেফিরে মিরোরে তাকাল। ডাকবে, ডাকবে করেও ডাকতে পারল না। কিছুক্ষণ বসে থেকে এবারে চুপচাপ বেরিয়ে এসে দাঁড়াল। এলেন অদূরেই দাঁড়িয়েছিল। এযাত্রায় ভ্রু তুলে তাকাল প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে। সেই দৃষ্টি শান্ত দেখেও দেখল না। রোযার ব্যাকসিটের দরজা খুলে ধরল। গলা খাঁকারি দিতেই নড়েচড়ে ওঠে রোযা। আই মাস্ক সরিয়ে আশপাশটা দেখে দ্রুতো বেরিয়ে আসে। শান্ত বলল –
‘আজ আপনার প্রিন্সেসের সাথে স্কুল যেতে হবে না। বস যাবেন সাথে।’

আদিল মির্জা’স বিলাভড পর্ব ৪

রোযা বোঝার ন্যায় মাথা দোলাল। গতকাল এতো বড়ো আক্রম ণ হলো বলে কথা। যদি পুনরায় আক্রমণ করে? রোযার নিজেরই ভয় হচ্ছিল। সেখানে আদিল মির্জা হৃদির বাবা। নিশ্চয়ই চিন্তিত! সাথে যাওয়াটাই বরংচ স্বাভাবিক।
রোযা সোজা ভেতরে ঢুকল। মরিয়ম বেগমকে আজ দেখা গেলো না। রোযা চলে এলো হৃদির রুমে। মেয়েটা এখনো ঘুমুচ্ছে। রোযা তৎক্ষণাৎ ওকে তুলল না। নিজে আগে মুখে পানি দিয়ে এলো। এবারে গিয়ে বসল হৃদির মাথার কাছটায়। ডাকল মিষ্টি করে –
‘প্রিন্সেস…’

আদিল মির্জা’স বিলাভড পর্ব ৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here