আধার রাতের আলো পর্ব ১৯

আধার রাতের আলো পর্ব ১৯
নুসাইবা ইভানা

বর্ষা একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলে,হয়তো দশলাখ টাকা নয়তো নুর যে কোন একটা আমাদের দিতেই হবে। আলো বেগম বললেন কু’কু’রকে তো হাড্ডি দিতেই হয় নয়তো কু’কু’র ঘেউ, ঘেউ করতেই থাকে। তাই তোদের জন্য হাড্ডি রেডি রেখেছি।আদিয়া আমার চেক বইটা নিয়ে আয়।

বর্ষা হুরের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,এই রুপ দিয়েই বুঝি বড়লোকের ছেলেদের হাত করো?
আলো বেগম কপাল কুঁচকে বলেন,যে যেরক সেতো অন্য কে সেরকম-ই ভাববে।
আদিয়া চেক নিয়ে আসতেই আলো বেগম চেক সাইন করে বর্ষার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে,এবার আশাকরি তোদের নোংরামি বন্ধ করবি?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বর্ষা হেসে বলে,এই মেয়েও মনে হয়না স্থায়ী হবে আজ হোক বা কাল চলে তো যাবেই।
হুর কিছু বলবে, আদিয়া হুরের হাত ধরে ইশারায় থামতে বলে।
বর্ষা চলে যেতেই আদিয়া বলে,জেনে বুঝে কু’কু’রের লেজে পারা কেন দিবে। এসব মেয়েদের সাথে তর্ক না করাই ভালো।
বর্ষা চলে আসলো বিথী বর্ষা কে দেখে বলে কিরে কাজ হলো? হুম হয়েছে। কিন্তু ঝামেলা হলো না আম্মি আগেই আমাকে টাকা দিয়ে দিয়েছে। এই নে ফিফটি তোর ফিফিটি আমার।বিথী বর্ষাাকে টাকার ভাগ দেবে না এনিয়ে দু’বোনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেলো এক পর্যায়ে গায়ে হাত দেয়া শুর হলো।

রেহানা বেগম পুলিশে খবর দিলেন।
পুলিশ এসে দেখে দু’বোন মা/রা/মা/রি করে একজন আরেকজনকে র/ক্তা/ক্ত করে ফেলেছে।
রেহানা বেগম পুলিশকে সবটা খুলে বললেন। পুলিশ দু’বোনকেই গ্রেফতার করে নিয়ে গেলো। টাকা গুলো পুলিশ হেফাজতে ফুয়াদের কাছে পৌঁছে গেলো।
রেহানা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলেন,”পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না”

দুপুর দু’টো বাজে ফুয়াদের ডিউটি শেষ। ফুয়াদ নিজের কেবিন থেকে বের হবে ঠিক তখনি ফুয়াদের মোবাইলটা স্ব শব্দে বেজে উঠলো। মুচকি হেসে রিসিভ করেই বলে, আসসালামু আলাইকুম বিবিজান।ওপাশ থেকেও এক সাথে সালাম আসলো। হুর বলল,ডাক্টার মশাই চলুন আজ বাহিরে কোথাও খেতে যাই তুমি আর আমি?

-ঠিক আছে বিবিজান তবে রাতের ডিনার এখন বাসায় আসছি। আবার চেম্বারেও তো বসতে হবে।
– তোমার কাছে কতটা সময় আছে চেম্বারে বসার আগে?
– পাঁচটায় বসবো।
– তাহলে তুমি বের হও আমি ড্রাইভার কে নিয়ে আসছি।
– এখন না বের হলেই নয়!

– “বড্ড বাজে ডাক্তার তুমি ” নিজের বৌয়ের রোগ সারাতে জানোনা।আমি বলছি এখন যাবো তারমানে হলো তুমি বলবো জোহুকুম মেরি বিবিজান তা- না উল্টো বাহানা দেখাচ্ছ!
– জোহুকুম মেরি হুর পরি আপনার খেদমত বান্দা হাজির। এবার তাড়াতাড়ি চলে আসুন হৃদয়ের রানী।
– এক্ষুনি বের হবো।
হুর রেডি হয়ে বের হওয়ার আগে আলো বেগমকে বলে গেলো। নুরকে সাথে নিয়েই বের হতো কিন্তু যেসব কথা হুর বলতে চায় তা বাচ্চাদের সামনে না বলাই ভালো।

ফুয়াদ রেস্টুরেন্টে একটা কেবিন বুক করে অপেক্ষায় আছে তার হুর পরির। কিন্তু আশ্চর্য কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে হুরের কোন দেখা নেই। এদিক ওদিকে খুঁজতে লাগলো। হুর চট করে সামনে এসে বলে, ডাক্টার এই যে তোমার রুগী।
ফুয়াদ তাকিয়ে থেকে হুরের চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

ফুয়াদ একটু নিচু হয়ে হুরের কানের সামনে মুখ এনে বলে দিন দুপুরে আমার ঘাড়ে পেত্নী ভর করেছে।
হুর ফুয়াদের হাত ধরে বলে,এ পেত্নী যে সে পেত্নী নয় ডাক্তারের বউ পেত্নী। এবার চলুন ভেতরে।
দু’জনে পাশাপাশি বসে আছে। হুর বারবার চারে দিকে তাকিয়ে দেখছে।
ফুয়াদ বললো,কেউ যত মনযোগ দিয়ে এই ছোট রুমটা তাকিয়ে দেখছে ইশশ এরকম মনযোগ দিয়ে যদি আমাকেও দেখতো।

হুর হেসে বলে,জানেন আমি জীবনে প্রথম বার এমন রেস্টুরেন্টে আসলাম। তাই একটু দেখছি। আর বাসায় যেয়ে তো আমার ডাক্টার কে আমি দেখতেই থাকবো দেখতেই থাকবো।
-আচ্ছা খাবার চলে আসবে।এবার খাবার খাওয়া আগে অন্তত আমার দিকে একটু তাকাও।
– এই নিন স্থীর করলাম আমার দৃষ্টি আপনাতে।
– বিবিজান একটা গানের দু’লাইন বলি? কোন মিউজিক নেই কিছু নেই। শুধু আমার বলতে ইচ্ছে করছে আমি বলবো। প্লিজ মানা করো না হুর পরি?
– আচ্ছা বলেন শুনি।

ফুয়াদ হুরের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমায় দেখতে দেখতে আমি যেন অন্ধ হয়ে যাই। দুনিয়াতে তুমি ছাড়া কিছু দেখার তো আর নাই।
হুর হেসে বলে,থাক এতো অন্ধ হতে হবে না। পরে অন্ধ ডাক্তারের বউ বলবে লোকে।

– দিলে তো আমার রোমান্টিক মুডের তেরোটা বাজিয়ে।
– বেশ করেছি।এখানে আমি একান্তে তোমার সাথে কিছু কথা শেয়ার করতে এসেছি। হানিমুনে আসিনি।
– কি কথা বলো।
– আগে কথা দাও ছ্যাত করে উঠবে না।আমার কথা শুনবে বুঝবে তারপর ঠান্ডা মাথায় ডিসিশন নেবে।
– ওকে কথা দিলাম।
– আমি এতো ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে বলতে পারিনা। সোজাসাপটা বলছি, আদিয়া আপু প্রেগন্যান্ট।
– কিহহহহহহহ!কি বলছো এসব মাথা ঠিক আছে তোমার! আমি নাহিদকে ভালো করে চিনি নাহিদ কখনো এমনটা করবে না।

– আরে শুনবা তো আমার পুরো কথাটা আগেই বলা শুরু করছো।নাহিদ ভাইয়ার সন্তান তার গর্ভে না। অন্যকারো সন্তানের মা হতে যাচ্ছে সে।আগেই রিয়েক্ট করো না কথাটা শুনো পুরোপুরি। আদিয়া আপু নিজের ইচ্ছে তে এমনটা করেনি। তবে আমিও মানছি ভুলটা তার ছিলে কিন্তু তাই বলে তো এই অবস্থায় তাকে একা ছেড়ে দেয়া যাবে না। সে যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তখন আমাদের উচিৎ তার পাশে থাকা।

ফুয়াদ স্তব্ধ তার বোন এতো জঘন্য একটা কাজ করে ফেললো তারই নাকের ডগায় বসে!
হুর উঠে এসে ফুয়াদের মাথাটা নিজের বুকে আগলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,দেখো মন খারাপ করো না। এখন নিজেকে শান্ত রেখে একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।আদিয়া আপুর অবাদ চলাফেরা তাকে দিয়ে এই জঘন্য কাজ করিয়েছে।

ফুয়াদ দু’হাতে হুরের কোমড় জড়িয়ে ধরলো।হুর ফুয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এমন সময় ওয়েটার খাবার নিয়ে হাজির।
হুর ফুয়াদকে ছাড়িয়ে দূরে সরে গেলো। ফুয়াদ হুরের হাত ধরেই রেখেছে। হুর দাঁড়িয়ে আছে ফুয়াদ বসেই আছে। দু’জন মহিলা ওয়েটার এসে খাবার রেখে গেলো। তারা চলে যেতেই ফুয়াদ হুরের হাত টান দিয়ে হুরকে নিজের কোলে বসালো। ফুয়াদ ধীর কন্ঠে বললো,বাবার মৃত্যুর পর মা আমাদের একাই বড় করছেন।

রেহানা খালামনি আর আমরা এক পরিবারের মত ছিলাম। বিথীকে আমি কখন অন্যরকম চোখে দেখিনি।কিন্তু খালামনি আর মা আমার বিয়েটা বিথীর সাথে দিয়ে দেয়ে।ও পার্মানেন্ট আমাদের বাসায় থাকা শুরু করে আর আদিয়াকে নিয়ে এখানে সেখানে যাওয়া শুরু করে প্রথম এটাকে আমরা বেশি আমলে নেইনি। কিন্তু ধীরে ধীরে আদিয়া উগ্র হতে থাকে। এর মধ্যে বিথীর ও এফেয়ার শুরু হয় অন্য কারো সাথে। আমার ছিলো পরিক্ষা আমি পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো নিমিষেই। বিথী চলে যাওয়ার পর আদিয়াও ঝগড়াঝাটি করে হোস্টেলে চলে যায়। আমি রাতের বেলায় নে/শা আর দিনে ডিউটি করে পার করতাম।

হুর কিছু বলতে চাইলো। ফুয়াদ হুরের ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বলে, আজ আমি বলবো তুমি শুনবে।পড়ুয়া ছেলে আমি পড়া লেখা ছিলো আমার নে/শা। তাই কখন প্রেম হয়নি। বিথী ছিলো আমার প্রথম অনূভুতি।ওর চলে যাওয়ার পর আমার সব মেয়েদেরকে অবিশ্বাস হতো। কিন্তু একদিন হুট করেই মা আমাকে তোমাকে বিয়ে করার কথা বলে। সেদিন মায়ের সাথে আমি খুব রাগারাগিও করি। কিন্তু মা হাল না ছেড়ে তোমার গুনো গান করতেই থাকতেন। সেদিন তোমার পার্স রেখে যাওয়াতে আমাদের ভাগ্য এক হয়েছে।তুমি এসেছো আমার হৃদয়ের আলো হয়ে।

হুর ফুয়াদের কপালে চুমু দিয়ে বলে, আপনি হলেন আমার ভাগ্যের আলাদীনের চেরাগ। আমি শুধু একজন স্বামী পাইনি পেয়েছি একজন মানবতার ফেরিওয়ালা। যে আমার পরিবারের সবার জীবন রাঙিয়ে দিয়েছে। আমি সব খবর পেয়েছি। জানো হিরা আপু সেদিন ফোন করে বলল,তার হ্যাসবেন্ট রিহাবে আছে সে অতি তাড়াতাড়ি নে/শা থেকে ফিরে আসবে তাদের একটা সুস্থ সংসার হবে।আমার ভাইয়ের অপারেশন আর বাবাকে দোকান নিয়ে দেয়া।এসব শুনে আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধ আকাশ সম বেড়ে গেছে।

ফুয়াদ হুরের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,তোমার আর আমার বলতে এখন কিছু নেই।”যা আছে সব আমাদের”
হুর ফুয়াদের ঠোঁটে আলত চুমু খেয়ে বলে,আপনাকে এতো ভালো হতে কে বলেছে!
ফুয়াদ মুচকি হেসে বলে,আমার হুর পরি।

আধার রাতের আলো পর্ব ১৮

আসসালামু আলাইকুম। দেখতে দেখতে একদম শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। ইনশাআল্লাহ অন্তীম পর্ব পরশু পেয়ে যাবেন।এই পর্যন্ত কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেননা।
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

আধার রাতের আলো শেষ পর্ব