আপনাতেই আমি পর্ব ২৩

আপনাতেই আমি পর্ব ২৩
ইশিকা ইসলাম ইশা

তীব্রর করা সব কাজ বলছে রিদি মজনু কে। মজনু রিদি কে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজের কথাই শুনছে।
দেখছেন কি অসভ্য!!ছি…..
মজনু নিজেরি এতো খারাপ মন্তব্য শুনে হাসছে।আজ পর্যন্ত নিজের এতো এতো খারাপ কথা সে শোনেনি।শেষে কিনা বৌয়ের মুখেই শুনতে হচ্ছে।
খাওয়া শেষ হতেই রিদি স্টাডি নিয়ে বসেছে।তীব্রর দেওয়া কিছু কাজ তাকে করতে হচ্ছে। মজনু গিয়ে বিছানায় বসল।রিদি বিরবির করে তীব্র কে বকতে লাগলো।এতো কিছু করতে দেওয়ার জন্য। মজনু উরফে তীব্র নিজেকে এতো বকা নিয়ে মনে মনে হাসল।তার এই ঝগরাটে বৌটা শুধু তীব্রর সামনেই বের হয়।রিদি এতো পড়া করতে করতে বিরক্ত হল!পেছনে ফিরে তাকালো মজনুর দিকে। মজনু রিদির তাকানো দেখে ইশারায় বলল,

কি হয়েছে??
অসভ্য পুরুষ আমাকে অনেক পড়া দিয়েছে!!
তো কি হইছে! পড়ুন!(ইশারায়)
রিদি বিরক্ত হয়ে দু হাত বাড়িয়ে দিল বাচ্চাদের মতো কোলে নেওয়ার জন্য।
মজনু হাত বুকে ভাজ করে ইশারায় বলল,
আগে পড়ুন!
রিদি রেগে পড়তে লাগল!তীব্র হাসল।দু মিনিট যেতেই রিদি উঠে আসল।বই খাতা নিয়ে বিছানায় তীব্রর পাশে বসল।উঠে এসে আবার বসল মজনুর কোলের উপর মজনু হতবাক হয়ে আছে।মজনুর কোলের উপর বসে নিজের কোলে একটা বালিশ নিয়ে তাতে খাতা কলম নিয়ে লিখতে বসল। মজনু রিদির কান্ডে হাসল।দুহাতে জড়িয়ে চুমু দিল কপালে।রিদি লিখছে আর তীব্র দেখছে।বুঝার ভুলের জন্য লিখা ভুল হয়েছে রিদির! মজনু দেখল। ছোট একটা শ্বাস ফেলে রিদির মাথায় আবারো ঠোঁট ছোয়াল।রিদি লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে পড়েছে। মজনু রিদিকে শুইয়ে দিয়ে লেখা গুলো ঠিক করে দিল।আবারো এসে রিদিকে জরিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমাল।
আয়ান আর মেঘের খাতায় চোখ বুলালো রিদি।সে যে খাতায় ভুল করেছে সে ভেবেই কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফেলল।
আয়ান:ক্যা রে??এমন মুখ হুতুম পেঁচার মতো রাখছিস কেন?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রিদি:ভুল লিখেছি তাই!!
মেঘ:কি ভুল করেছিস!!
রিদি:এই পাট টা!!
এখন কি করবো বল তো!!খারুশ ব্যাটা নিশ্চয় আমাকে শাস্তি স্বরূপ আরো করতে দিবে।
মেঘ:দেখি ঠিক করা যায় কি না!!
মেঘ রিদির খাতায় দেখল সব ঠিক আছে।তুই কি ভুল করেছিস??
রিদি ভু কুঁচকে নিজের খাতা দেখে হতবাক হয়ে আছে।তার স্পষ্টভাবে মনে আছে এগুলো সে অন্য লিখেছিল।কারন সে কনফিউজড ছিল।তবে এসব ঠিক কে করল!!
আমি এসব ভুল!!

মেঘ:মজা করিস না তো!চল ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।রিদি এখনো হতভম্ব হয়ে আছে!এটা কিভাবে সম্ভব!!
আজ প্রিয়ন্তি ম্যামের ক্লাস।রিদি, আয়ান,মেঘ বসে আছে। ডঃ প্রিয়ন্তি কে দেখে ছেলেদের মাঝে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। হট কমেন্ট ও করছে সবাই।পড়ার থেকে ছেলেদের গুঞ্জন ই বেশি শোনা যাচ্ছে। প্রিয়ন্তির নজর রিদিতার দিকে চোখ পড়তেই প্রিয়ন্তির তীব্রর করা অপমান মনে পড়ল।রাগ হলো।এগিয়ে গেল রিদির কাছে।
তুমি কি আমার চেয়েও বেশি সুন্দর!!
রিদি হতবাক হয়ে গেল।সে তো সুন্দর ই না। সেখানে আবার তুলনা!!
জি!!!
তীব্রর সাথে কয়রাত কাটিয়েছো!!

রিদি এমন কথায় চরম অবাক,একজন শিক্ষিকা হয়ে এসব কি বলছে!!রিদির চোখের কোনে পানি জমেছে। মেঘলা নিজেও হতবাক প্রিয়ন্তি ম্যামের কথা শুনে। আয়ান দূরে বসায় সে শুনে নি কিছুই। মেঘলা প্রিয়ন্তির কথায় বলে,
কি বলছেন ম্যাম!রিদি ম্যারেড!!
প্রিয়ন্তি কিছু বলার আগেই রিদি ছুটে বেরিয়ে যায়।মেঘ ও রিদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সে হতবাক হয়ে আছে।
রিদি ছুটতে ছুটতে ধাক্কা খেল কারো সাথে।সামনে তীব্র কে দেখে রাগ হলো।তীব্র রিদিকে ছুটতে দেখেছিল দূর থেকে।তীব্র রিদির কান্না মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
এভাবে ছুটছ কেন??কি হয়েছে??
রিদি কিছু বলল না,

এড়িয়ে চলে যেতে চাইলেও তীব্র হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসে।রিদি ছুটার চেষ্টা করছে।রাগে, ক্ষোভে তীব্র কে ধাক্কা মারে। তীব্র তাল সামলাতে না পেরে পেছনে সরে যেতেই হাত পড়ে কাচের গ্লাস এর উপর।গ্লাস ফেটে হাতের ঢুকে যায় একটু।তীব্র অবাক হয়।রিদি চেঁচিয়ে উঠলো,
আমি বিবাহিত!! কতোবার বলব!! কতোবার বললে আপনারা মানবেন??
তীব্র অবাক হয়ে আছে এখনো।
আপনার সাথে আমি কয় রাত কাটিয়েছি??বলুন??
কেন আপনার সাথে আমাকে জরিয়ে খারাপ কথা রটাচ্ছেন!!আপনি কি চান?আমাকে কেন শান্তি মতো বাঁচতে দিচ্ছেন না!আমি আমার পৃথিবীতে অনেক সুখী দয়া করূন আমাকে!!
রিদির কথাগুলো তীব্রর কানে বাজছে!সে খারাপ কথা রটাচ্ছে??
রিদি কথাগুলো বলেই চলে যায়।তীব্রর মেজাজ গরম হয়ে আছে।রেগে ফোন করে লাবিব কে!
রিদির ক্লাসের সিসিটিভি ফুটেজ চায় রাইট নাও!আর তোর ভাবি বাইরে বের হয়েছে! কোথায় দেখে বল!
লাবিব ঝটপট বলে,

বস ভাবি তো দৌড়য়ে বের হয়ে যাচ্ছে।
আয়ান ,মেঘ ওরা নেই!!
না বস!ভাবি তো কাঁদছে বস!
তীব্র জানে এখন মজনু ছাড়া রিদিকে সামলনো কঠিন হবে। অতিরিক্ত চাপে ঙ্গান হারাতে পারে।রিদির উপর নজর রাখ আমি না আসা পর্যন্ত!!
তীব্র বের হতে হতে মেঘের ম্যাসেজ দেখে,
মজনু ভাইয়া……….
মেঘ পুরো ঘটনা মজনু কে লিখে পাঠিয়ে দেয়।
রাগে তীব্রর শরীর কাঁপছে! ইচ্ছে করছে প্রিয়ন্তিকে কেটে কুচি কুচি করতে।
পাকের একটা বেঞ্চ এ বসে আছে রিদি,
একমনে তাকিয়ে আছে পানির দিকে।সে বিবাহিত তবুও কেন তীব্রর সাথে তাকে জরিয়ে ফেলে। মজনু বিষয়টি জানলে কতোটা কষ্ট পাবে।রিদির ভাবনার মাঝেই মজনু এসে পাশে বসে। মজনু কে এই সময় এখানে দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় রিদি।

মজনু ইশারায় জিজ্ঞেস করে,
কি হয়েছে???
আপনি ?
রিদি ঝট করেই জরিয়ে ধরে মজনু কে। মজনু রিদিকে বুকে চেপে ধরে মাথায় পরপর কয়েকটা চুমু দেয়। মজনু রিদিকে উঠিয়ে নেয় কোলে।রিদি কান্না বাদ রেখে হতভম্ব হয়ে আছে।তীব্রর দিকে তাকিয়ে আশেপাশে দেখল।সবাই আশ্চর্য হয়ে দেখছে।এই মুহূর্তে রিদির কান্না সাইডে রেখে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। মজনু রিদির লজ্জা পাওয়া দেখে হাসল।যাক কান্না থেকে কোন কিছুতে তো গেছে তার মুড।
মজনু হিসেবে সে রিদিকে সামলাতে পারলেও প্রিয়ন্তিকে কে সামলাবে আজ!তীব্রর জানে হাত দেওয়ার সাহস করেছে! কলিজা টেনে বের করে দেখবে না।
গাড়িতে বসে বাড়ির পথেই যাচ্ছে প্রিয়ন্তি। কিন্তু গাড়ি বাড়ির পথে মোর না নিয়ে অন্যদিকে যেতেই হচকচিয়ে তাকাল রাস্তার দিকে।

আপনাতেই আমি পর্ব ২২

চেঁচামেচি বা কিছু বলার আগেই মুখ চেপে ধরল পিছনে থেকে। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে গেল।
কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে রিদি।বৌয়ের কান্না এতোক্ষণ ধৈর্য ধরে থামিয়েছে মজনু।রিদি নিজেকে খারাপ বলছে। একজনের বৌ হওয়ার পরেও আরেক জনের সাথে নাম জরিয়ে কতোটা বিশ্রী ভাবে বলেছে তাকে।একটা মেয়ের কাছে এই ব্যাপারটা ভীষণ কষ্টদায়ক যখন তার চরিত্র নিয়ে মানুষ খারাপ কথা বলে। মজনু হিসেবে সে শান্ত থাকলেও তীব্র হিসেবে সে ভয়ংকর! বৌয়ের কান্না এতোক্ষণ সহ্য করেছে এটাই তো অনেক।বৌয়ের কান্না তীব্রর পক্ষে সহ্য করা মানে বুকের ভেতর ছুরিকাঘাত সহ্য করা। তীব্রর কি এতো সহ্য ক্ষমতা আছে!!নেই তো!!

আপনাতেই আমি পর্ব ২৪