আপনাতেই আমি পর্ব ২৬
ইশিকা ইসলাম ইশা
ডক্টরের সাথে কথা বলে রুমে আসতেই দেখে রিদি বসে আছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মজনুর দিকে। মজনু রিদির এভাবে তাকানো দেখে সন্দেহ করল। এগিয়ে আসল রিদির কাছে।দু হাত বাড়িয়ে দিতেই রিদি মজনুর বুকে চলে আসল।তীব্র সস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।রিদি বিরবির করে বলল,
আপনি বহুরুপী কেউ নন!আপনি আমার মজনু সাহেব!তাই না!!
বলে রিদি মাথা তুলে তাকাল তীব্রর দিকে।তীব্র রিদির মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করেই ঠোট ডুবালো ঠৌটে।রিদি চমকে উঠলেও তীব্রর অব্যাক্ত ভালবাসায় সায় দিল।রিদি মজনুকে এতোতাই ভালোবাসে যে সে রাদিফের বলা সব তুচ্ছ মনে হল।পুরো দুনিয়ার সাথে সে লড়তে রাজি মজনু সাহেব তার হলে। রিদি মনের কোনে কোথাও সন্দেহ বুনল না।ঠিক কতোটা বিশ্বাস করলে সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া যায়।অনেক না পাওয়ার মাঝে একটাই তো আসীম সুখের কাউকে পাওয়া তার !!কিভাবে পারবে অবিশ্বাস করতে!!
মানুষের জীবন পরিবর্তনশীল।দিন, সপ্তাহ,মাস পেরিয়ে আবারো দিন, সপ্তাহ মাস আসে।কাটতে থাকে সময়।কেটে গেছে আরো কয়েকটা মাস।
তপ্ত দুপুর, আকাশে সূর্য যেন দ্বিগুন তাপ ছড়াচ্ছে।সামনাসামনি বসে আছে মজনু আর আমেনা বেগম। আমেনা বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার চ্যাল্যা পালোয়ান,যাকে গাড বলেও আখ্যায়িত করা যায়।মজনুর সামনে মোটা অংকের চেক রেখেছেন আমেনা বেগম। মজনু উরফে তীব্র পায়ের পা তুলে বসে আছে চেয়ারে। তাকিয়ে আছে চেকের দিকে। শাশুড়ি হয়তো জানে না চেকে লিখা সামান্য টাকা তার রেগুলার খরচ।
যত টাকা চাই নিয়ে নাও!!চাইলে আরো পাবে। শর্ত একটা রিদিতাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাও।
মজনুর হাতের মুঠ করল শক্ত করে কিন্তু তবুও চুপচাপ থাকল।মজনু কে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে আমেনা বেগম বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ডং করছো কেন??কথা বলো??আমি জানি তুমি কথা বলতে পারো!!
মজনু তখনো নিশ্চুপ।আমেনা বেগমের রাগ হলো।কটমট করে বলল,
প্রায় দুই বছর হতে চলল,রিদির শরীর ভোগ তো করেছোই আর কি!!এই টাকা নাও আর চলে যাও।
মজনু নিশ্চুপ থেকে মাথার পাগরি খুলে টেবিল রাখল। প্রায় ১ঘন্টা পর মুখ খুলল,
পুরো বন্দোবস্ত করেই এসেছেন শাশুরি মা!!মেয়ের ডিভোর্স করিয়েই যাবেন দেখছি।
আমাকে এতো এটিটিউড দেখিয়ো না।যা বলছি করো!! তুমি জানো না আমি কে??
হো হো করে হেসে উঠল মজনু,
আমি যা জানি!তা আপনি নিজের থেকেও লুকিয়েছেন শাশুরিমা।
আমেনা হেলান দিয়ে বসল চেয়ারে।মজনুর চেহেরায় আলাদা এক আতঙ্ক দেখল নিজের জন্য।
কি বলতে চাও তুমি??
আমি বললে আপনি ঙ্গান হারানোর সম্ভবনা রাখেন শাশুরি মা!!
এতো কথা শুনতে চাইছি না।কতো টাকা নিলে রিদিকে ডিভোর্স দিবে তাই বলো!
কোন কিছুর বিনিময়েও আমি বৌ কে ছাড়তে পারব না। তাছাড়া মা হয়ে মেয়ের সংসার ভেঙ্গে দিচ্ছেন!এখনো তো আপনাকে নানী বানানোও বাকি!!
খবরদার!! আজেবাজে কথা বলবে না।তুমি আমার শর্ত ভুলে গেছ!!রিদিকে বিয়ে করার শর্ত ছিল রিদির আঠারো বছর বয়স হলে তুমি তাকে ডিভোর্স দিবে।
আমি বলেনি!আপনি বলেছেন আমি শুনেছি!!ব্যাস
ফক্কিনির বাচ্চা একদম সাহস দেখাবি না!রিদিকে আমি নিয়ে যাব!!খুব ভালোবাসে তাই না তার মজনু সাহেব কে। কিন্তু সে তো জানে না মজনু তাকে টাকার জন্য বিয়ে করেছে।
আপনি যে কলেজে পড়াচ্ছেন!সে কলেজের হেড আমি।একদম বিপরীত খেলা খেলতে আসবেন না।
দু টাকার চাকর আমাকে আমাকে রোপ দেখাচ্ছিস।এই নিজের স্ট্যাটাস ভুলে যাস।
মজনু হাসল!!আপনি এখানে, আমিও এখানে।পারলে আমার থেকে আমার বৌ আলাদা করে দেখান!!
আর একটা কথা বলে দি,বৌ ছাড়া কারো প্রতি মায়া,দয়া কাজ করে না আমার।যাস্ট মাইন্ড ইট।
কথাটা বলেই চলে যায় মজনু।আমেনা বেগম কটমট করে বলল আমার সাথে খেলতে আসিস না। ফলাফল ভালো হবে না।
মজনু হাসল শুধু।খেলা তো কেবল শুরু।
মজনুর সাথে আমেনা বেগমের সাক্ষাৎকার এর আজ ১৬দিন পার হয়েছে।আমেনা এখন ভাইয়ের বাসা মানে চৌধুরী বাড়িতে আছেন। রুপালির ছোট্ট মিষ্টি মেয়ে পুরো বাড়ি মুখরিত করে রেখেছে।আমির চৌধুরীর বাড়িতে এখন সবসময় হাসিখুশি থাকলেও আমির তীব্রর জন্য পুরোপুরি হাসিখুশি থাকতে পারে না।ছেলের খোঁজ নেয় অনেক দিন।মাঝে দু বার আসলেও আমেরিকা আবার ফিরেছে তীব্র।তীরের জন্য তার চিন্তা শেষ হলেও তীব্রর ভবিষ্যত নিয়ে সে চিন্তিত।এমন বেপোরোয়া ছেলেকে তিনি কিভাবে সামলাবে সেটাই তার জীবনে সবচেয়ে কঠিন ভাবনা।তবে এবার তিনিও পন করেছে ছেলের মতিগতি বোঝার অনেক হয়েছে তার মজি মতো জীবন লিড করা।তিনি ঠিক করেছেন আমেরিকা গিয়েই ছেলের সাথে কথা বলবেন তিনি।
পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে পাশে তাকায় আমির,
তীর কে দেখে বলে,
কোন খোঁজ পেয়েছিস??
তীব্র বাংলাদেশ এ ড্যাড!!
কিহহহ!!
খোঁজ নিয়ে জানলাম হসপিটালে বসেছে কিছুদিন আগে থেকে!!তুমি তো জানো ও কোথায় যায় কখন আসে এসব ও কখনোই কাউকে বলে না। ও নিজে জানাতে না চাইলে কখনো ওর খোঁজ পাওয়া সম্ভব না।
হসপিটালে বসেছে অথচ আমি জানি না!!ড:আশিক আমাকে জানানো দরকারি মনে করেন নি??
জানাতে চেয়েছিল কিন্তু তীব্রর জন্য বলতে পারেনি।আমার মনে হয় ও কিছু তো একটা করছে!
অন্ধকার জীবনে থেকে নিজেকে না হারিয়ে ফেলে!!আমি বাবা হয়েও কিছু করতে পারছি না।
আই ট্রাস্ট হিম ড্যাড।তীব্র যতো বরই মাফিয়া হোক না কেন মায়ের শেখানো শিক্ষা কখনো ভুলবে না।ওর রাগ,জেদ,ইগো সবটাই আকাশ ছোয়া হলেও আমার মনে হয় কোথাও তো আল্লাহ ওকে আটকাবে।আম্মু নিশ্চয় উপর থেকে কোন ব্যবস্থা করে দেবে।
ছেলের ছোট্ট একটা শ্বাস ফেললেন আমির চৌধুরী।ছেলেকে বাঁধতে তিনি সকল চেষ্টা করলেও ব্যাথ সে।
সকাল থেকে শরীর খারাপ করলেও পুচিকে স্কুলে নামিয়ে কলেজে এসেছে রিদি।মেঘ রিদির শরীর খারাপের কথা শুনে জোর করেই চেষ্ট করিয়েছে।
মজনু ভাইয়া জানে!!তোর এই অবস্থা!!
রিদি মাথা নাড়িয়ে না বলে,
সকাল থেকেই একটু বেশি খারাপ লাগছিল।অমি বলি নি কিছু।এমনিতেই আমাকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই।
তুই না!!আজ ক্লাস নেই আমাদের স্যার নাকি অসুস্থ!!
আয়ান কে দেখছি না!!
ও আছে কোন আনা,মিনা,টিনার সাথে।প্লে -বয় একটা।
এই এই খবরদার আমার হিরো নাম্বার ২কে নিয়ে আজেবাজে কথা বলবে না মেঘপু।
আয়ান পাশের চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
বুঝলে তো পুচি আমার মতো ভালো মানুষ পেলে যা হয়।
তুই পুচি কে আনতে গেলে বলে তো যাবি (রিদি)
তুই কোন ক্ষেত্রের মূলী তোকে বলতে হবে।আমার ছোট বৌ কে আনতে আমি যাব না তো কে যাবে(আয়ান)
রিদি কিছু না বললেও মেঘ বলে,
আইছে রে!!পুচির বিয়ের বয়স হতে হতে ওর মতো ডজন খানেক বাচ্চার বাপ হবি তুই!!হু ডং!!
আয়ান কথার উত্তর করল না।রিদিকে জিঙ্গেস করল।
কি বলল ডক্টর?কি হয়েছে?
কিছু টেষ্ট করতে দিয়েছে কাল রিপোর্ট আসবে।
বেশি খারাপ লাগছে!!মানে মজনু ভাইকে কল করব!!
না। প্লিজ ওনাকে কিছু বলিস না।গরমে হয়তো শরীর খারাপ করছে।
আয়ান ভাইয়া না বললেও আমি বলে দিব।কি হয়েছে তোমার!!(পুচি)
উফফফ সবকটা এক!!তুই ওনার চামচি গিরি করবি না।(রিদি)
খবরদার আমার ছোডু বৌ কে চামছি বলবি না!!(আয়ান)
তোর সাথে থেকে থেকে ড্রামা শিখছে ও দিনদিনই!!(রিদি)
আপনাতেই আমি পর্ব ২৫
আয়ান হাসলো।মেঘ দেখল সেই হাসি।উপরে উপরে হাসির পিঠে লুকিয়ে আছে একরাশ নিরাশা।কাউকে না পাওয়ার নিরাশা।জোর করে তার খেয়াল রাখতে না পারার নিরাশা।সাথে থেকে,পাশে থেকেও না পাওয়ার নিরাশা।মেঘ আয়ানের থেকে চোখ ঘুরিয়ে রিদির দিকে তাকালো। মায়াবী।আসলেও মায়াবী রিদি।আচ্ছা রিদি কি বুঝে না আয়ানের কেয়ার। নাকি শুধু তার চোখের পড়ে আয়ানের লুকায়িত কষ্ট।আয়ানের সাথে ছোট থেকে থেকেও কখনো এমন নিশ্চুপ অনূভুতি তার জন্য তৈরি হয়নি।সবটাই ভাগ্য।যা নেই তা নিয়ে আফসোস করে কি পাব সেটা!!