আপনাতেই আমি পর্ব ২৭
ইশিকা ইসলাম ইশা
সামনাসামনি বসে আছে আমির চৌধুরী আর তীব্র।
তুমি কি আমাকে নিশ্চিত হয়ে বাঁচতে দিবে না তীব্র??
তীব্র তাকালো বাবার দিকে কিন্তু কিছু বলল না।
বাংলাদেশ এ আছো একবারো জানানোর প্রয়োজন মনে করো নি! তুমি কি চাও তীব্র? সারাজীবন এভাবে থাকতে!কোন ফিউচার আছে তোমার?একা সারাজীবন পার করা যায়??
তীব্র শান্ত স্বরে বলল,
বিয়ে করে বৌ আছে। সেখানে সারাজীবন একা থাকব কেন??
আমির চৌধুরী বিরক্ত হয়ে বলল,
আমার সাথে ফাজলামি করছো কেন?
তীব্র হাসল।ছেলের উপর ভরসা নেই???
না থাকাই স্বাভাবিক।মাঝে মাঝে নিজেকেই নিজের চেনা লাগে না।
আছে!একশত ভাগ আছে! কিন্তু বিয়ে করে বৌ নিয়ে সংসার করবে এমন ভরসা নেই!
তীব্র আবারো হাসল,
আমির অবাক হল।গোমড়া মুখো ছেলে তার! কি যেন্তু হাসলে কতোটা প্রাণোচ্ছল লাগে।হাসিটা যে দেখা যায় না কখনো!!তাই তো আজ ছেলের হাসিতে অবাক হয়েছে।
বৌ নিয়ে সংসার প্রায় ১ বছর ১০মাস ১২ দিন ১৩ ঘন্টা চলছে।আমির ছেলের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকাল।ছেলের চোখে তিনি জড়তা দেখছেন না।তার মানেমিথ্যা বলছে না।তার মানে কি সত্যি!!
তীব্র বাবার হতভম্ব মুখ দেখে হাসল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বৌ দেখে অবার ঙ্গান হারিয়ে ফেলো না!!
ছেলের রসিকতায় অবাকের উপর অবাক হল আমির।সামনে রাখা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ঢকঢক করে শেষ করল।
বৌ দেখতে তো পাবে কিন্তু বলতে পারবে না!!
মানে!!কি বলতে চাইছো!!
বলতে চাইছি না দেখাচ্ছি!বৌ দেখে হাজারো প্রশ্ন তোমার মাথায় আসবে।সব প্রশ্নের উত্তর পাবে।তবে আমি না বলা পর্যন্ত তুমি কাউকে বলতে পারবে না।সময় হলে আমি সব জানাবো!!
আমির শুকনো ঢোক গিলল,
ছেলের মাফিয়া মাথায় কোন খিচরি পাকিয়েছে আল্লাহ জানে!!
তীব্র কল করে লাবিবকে।কল করার ১০মিনিটের মাথায় নক করে কেউ।তীব্র আসতে বললে একরাশ বিরক্তি নিয়ে প্রবেশ করে রিদিতা।অযথা তাকে ডাকলে আজ কথা শুনিয়েই ছাড়বে।এমনিতেই গরমে অতিষ্ঠ নিজে তো এসির নিচে বসে থাকে। শরীর ও ভালো লাগছে না।সব কিছু বিরক্ত লাগছে তার।
এদিকে রিদিকে দেখে অবাক হয় আমির সাহেব!!রিদিও আমির চৌধুরীকে দেখে অবাক হয়।
রিদিতা!!!
রিদিতা আমির চৌধুরীকে দেখে খুশি হয়ে সালাম দেয়।আমির রিদিতাকে বুকে জরিয়ে বলে।
কেমন আছিস মা??
আমি ভালো তুমি কেমন আছো??
যার এমন একটা ছেলে থাকে সে কিভাবে ভালো থাকে বল!!রিদি আর চোখে তাকাল তীব্রর দিকে।
তোর বর কেমন আছে? ঢাকায় থাকিস অথচ দেখা হয়নি!!তুই এই হসপিটালে মানে??
রিদি হাসল,
বলছি বলছি!!আমি এই হসপিটালের স্টুডেন্ট।
কিহহহহহ???
তুই ডাক্তারি পড়ছিস??
হুম!!
মানে!!কিন্তু তোর মা যে বলল মজনু সামান্য একটা কিসের চাকরি করে!!
সব বলব তোমাকে!! কিন্তু ওনি আবার কিছু মনে করবেন নাকি?ওনার ডিস্টার্ব হয় যদি।
আরে ওকে ছাড় তো।আয় এখানে বস। একবারো এই মামুর কথা মনে হয় নি তোর!! এখানে আছিস অথচ একবারও আসিস নি ?? জানিস!!একবার রিদ কে তোর কথা জিজ্ঞেস করায় কিছুটা রেগে বলেছিল,
আমার বোন ভালো আছে গরিব স্বামীর সাথে! আপনারা আমার বোন থেকে দূরে থাকবেন।আমি জানি সেদিনের ঘটনার জন্য রিদ রেগে আছে।রাগ টা স্বাভাবিক ই।
এসব ছাড়ো!আমি খুব ভালো আছি!তোমরা শুধু দোয়া করো!!
আমার দোয়া সবসময় তোর সাথে আছে রে মা!!
দুইজনের কথাবার্তা চলতেই থাকল। আমির রিদিকে অনেক প্রশ্ন করেছে।রিদি থেমে থেমে উওর ও করেছে অবশ্য।মজনুর চাকরির জন্য তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছে।রিদির হাতের রান্না খেতে চেয়েছে। রুপালি,ওর বেবি,তীর ,নানী!সবার পর্ব শেষ করেছে। কথায় কথায় সময়ের খেয়াল নেই কারো।তীব্র মুগ্ধ হয়ে দেখছে বৌ কে।বৌ শশুরের গল্প মন দিয়েই শুনল তীব্র। তবে এটা বুঝল তার বাবা রিদিকে দেখে খুশির চক্করে তার বৌয়ের কথা হয়তো বুঝতে পারে নি।
তীব্র খেয়াল করল রিদি কথা বলতে যেন হাঁপিয়ে যাচ্ছে। তীব্র এবার কথা বলল।
সব কি আজকেই শেষ করবেন নাকি!!আজ আপনাদের শেষ দেখা না।
তীব্রর কথায় রিদি,আমির দুইজনেই হাসল। তীব্র অবাক হল এভাবে হাসার কি আছে!!সে কি এমন বলল!!তাছাড়া রিদির কি হয়েছে সেটা জানতে হবে।সকালে তো ভালোই দেখল।এখন এমন মুখটা মলিন লাগছে কেন?? তীব্র হিসেবে সে কথাটা জিঙ্গেস করতে পারে না।আজ তো ক্লাস ও নাই!!তাহলে এতো মলিন কেন মুখ!!
দুইজনের কথার ঝুলি শেষ হলো মেঘ আর আয়ানের প্রবেশ করায়।রিদির দেরী হওয়াই চিন্তিত হয়েই এসেছিল দুইজন।মেঘ অবাক হল আমির চৌধুরীর ব্যাক্তিত্ব দেখে।কি সুন্দর ব্যবহার তার।আয়ান যদিও আগে দেখা করেছে তার সাথে।তবে তীব্র তার মামাতো ভাই এটা জেনে অবাক হয়েছে।সব জানলেও তারা সম্পর্ক জানত না।
আয়ান:রিদি তুই আয় তাহলে আমরা যাচ্ছি।পুচি বসে আছে একা!!বলে ওরা চলে যায়
আমির:আমি খুব খুব দোয়া করি।তুই খুব সুখী হ।
রিদি হাসল।আজ প্রথম তীব্রর প্রতি রাগ,ঘৃনা হল না তার। হাসিমুখে বের হল কেবিন থেকে।আমির চৌধুরীও খুশি মনে বসলেন তীব্রর সামনের চেয়ারে।হাসিহাসি মুখ করেই বললো,
কি ব্যাপার যাকে এক মিনিট সহ্য হয় তাকে এতোক্ষণ সহ্য করলে যে!!
তীব্র কিছু বলার আগেই আমির আবারো বলে,
ওহ তোমার বৌ কোথায় ডাকো!!রিদিতার সাথে কথা বলতে গিয়ে তো ভুলেই গেছিলাম।দেখি তোমার বৌ কে!!আমি বাপ হয় তোমার আমাকে চান্দু বানাতে পারবে না।
তীব্র হাসল,
ছেলের হাসি হাসি মুখ দেখে ভালো লাগলো আমিরের।
দোয়া করি তোর হাসি সবসময় এভাবেই তোর ঠৌটে থাকুক।রিদিও বর নিয়ে সুখী হোক।এখন ডাক তোর বৌ কে!!
তীব্র ঠোট চেপে হাসল।বলার আগে কল করল লাবিব কে!
এতোক্ষণ তো বৌ কে দেখালাম ই।
কোথায়!!এক মিনিট!!পরে যে মেয়েটা আসল সে!!মেয়েটা বেশ সুন্দর আমার পছন্দ হয়েছে।
তীব্র বিরক্ত হল।তার বাবা কি মানতে পারবে না রিদি তার বৌ!!
আমার বৌয়ের নাম মিসেস রিদিতা তীব্র চৌধুরী।
ওহহ রিদ…….
কিহহহহহহহ???????
আমির চৌধুরী সব শুনে থম মেরে বসে আছে।তার এখনো বিশ্বাস হয়নি ব্যাপারটা ।তার ছেলের মতো একরোখা,জেদি, অহংকারী,আরো আপাতত মনে পড়ছে না,ছেলে নাকি রিদিকে ভালোবেসে এতো কিছু করেছে।এটা!এটা আদো সম্ভব তিনি ছেলেকে চিনে কারন ছাড়া সে একটা কাগজ ও সরিয়ে এখানে থেকে ওখানে রাখে না।
লাবিব হাতের কিছু রিপোর্ট নিয়ে কেবিনে ঢুকে আমির কে এভাবে বসে থাকতে দেখে ভু কুঁচকে তাকাল।আমির চৌধুরীর জন্য তার ভীষণ মায়া হয়।আহারে এমন সাদাসিধে মানুষের এমন জলজ্যান্ত আগুন ছেলে।
সত্যি করে বল কি চাইছিস তুই?তুই কি বদলার ভাবনা থেকে এতকিছু করেছিস??
তীব্র অবাক হল না।কাঠ কাঠ গলায় বলল,
কি করেছি জানি না!!বৌ আমার চায়।চায় মানে চাই।সব কিছুর উর্ধ্বে আমার ওকেই লাগবে।
আমির ছেলের চোখে ভালবাসা দেখলেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। তবে মনে মনে সে খুশি।খুশিতে লুঙ্গি ডান্স দিবে সে।তবে একদিকে খুশি হলেও বোনের এমন চাওয়া বুঝল না আমির।
আমু কি চাই!!কেন ডিভোর্স করাতে চায়??
সেটাই তো খেলা।তোর বোন উরফে আমার শাশুড়ি নোংরা খেলায় নেমেছে!!
রিদি এসব জানতে পারলে কি হবে??
তীব্র তাকালো বাবার দিকে,
আপনাতেই আমি পর্ব ২৬
ছেলের অসহায়ত্ব বুঝলো হয়তো আমির।এক হাত মাথায় বুলিয়ে জরিয়ে ধরলো।ছেলে তার লাইন এ এসেছে এতেই সে খুশি।ছেলেকে ভালোই চিনে আমির।কার কোন খেলা সেসব সামলানোর মতো তীক্ষ বুদ্ধি আছে তীব্রর। চিন্তা শুধু রিদিকে নিয়ে। অসীম বিশ্বাস করে মজনুকে রিদি। সত্যি জানার পর কতোটা কষ্ট পাবে।সামলাতে পারবে তো!!