আপনাতেই আমি পর্ব ৩
ইশিকা ইসলাম ইশা
রাত প্রায় ২.৪০
হুট করেই রিদির ঘুম ভেঙ্গে যায়।এপাশ ওপাশ করে যখন ঘুম আসছে না। তখন বেলকনিতে গিয়ে দাড়ায় রিদি। চারদিকে লাইটে ঝলমল করছে। এমন সাজানো আগে কখনো দেখেনি।বন্দি জীবনে থেকে অনেক কিছূই স্বচক্ষে দেখা হয়নি রিদিতার।বাবার সাথে কয়েকবার গ্রামের মেলায় গিয়েছিল তবে সেটা অনেক আগে।
ফেইরি লাইটে পুরো বেলকনি সাজানো। চারদিকে কতো আলো।রিদি বাইরে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বেকানো বিল্ডিং এ তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে যাই।বেকানো বিল্ডিং টা জমকালো সুন্দর লাগছে। আনমনেই বলে উঠে বাহহহ….
হঠাৎ করেই কিছুর পড়ার শব্দ চমকে উঠে রিদিতা।পিছনে ফিরে দেখে তীব্র দাড়িয়ে আছে।হাতে ভাঙ্গা কাঁচের বোতল। চোখ লাল হয়ে আছে।রিদি ভয় পেয়ে যায়। তীব্র একপা একপা করে রিদির কাছে আসতেই থেমে যায়।রিদি ভয়ে কাঁপছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। সুন্দর মানুষের ভয়ংকর রূপ দেখে শরীর কাঁপছে।
সাহস করে কিছু বলার আগেই তীব্র নজর রিদিতার পুরো শরিরে বুলিয়ে নেয়।রিদি এবার ভূমিকম্পের মতো কাঁপছে।আজানা ভয়ে বুক দুরুদুরু করছে।হুট করেই তীব্র ভাঙ্গা কাঁচের বোতল রিদির গলায় চেপে ধরে।রিদি চিৎকার করে উঠে আশেপাশে তাকালো। পুরো শরির ঘামছে।ফ্যানের বাতাসেও তরতর করে ঘামছে।সকাল হয়ে গেছে।রিদি ভয়ে ঢোক গিলে। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝল এটা সপ্ন।স্বপ্ন ছিল ভেবেই সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে বাড়িতে কেউ এখনো উঠে নি।৫.৫০বাজে।বাইরে বের হতেই মিষ্টি বাতাস গায়ে লাগে।ওরনা ভালোভাবে জরিয়ে। বাগানের দিকে আসে। ফুলগুলো ছুয়ে ছুয়ে দেখছে।বাহারি রকমের ফুল আছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কয়েকটি ফুল তুলে নিজের বেনীতে লাগিয়ে খিলখিল করে হাসে রিদি। হঠাৎ ই নজর যায় বেকানো বিল্ডিং এর দিকে।দোতালায় দাঁড়িয়ে আছে তীব্র।দু হাত পকেটে গুঁজে তাকিয়ে আছে রিদির দিকে।পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করছে চোখ দিয়ে।রিদি কেঁপে উঠে এমন তাকানো দেখে।স্বপ্নের কথা মনে হতেই দ্রুত পিছন ঘুরে দাড়াই।এই লোক তার কাছে অসহ্য।আবারো ফুলের দিকে মনোনিবেশ করতে লাগল। হঠাৎ ই মনে হচ্ছে কেউ তাকে খুব কাছে থেকে দেখছে।রিদি পিছনে ঘুরতেই ধাক্কা খায়।মাথা উঁচু করে তীব্র কে দেখেই চমকে উঠে।এই না বেলকনিতে ছিল।
নাম কি??
চমকের মাঝেই এমন প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত হলেও নিজেকে সামলে নেয়।পরক্ষনেই তীব্রর ব্যবহার এর কথা মনে হতেই রাগ হয় রিদির।তবুও ভদ্রতা সহিত বলে,
রিদিতা।
উহম…নামটা পছন্দ হয়নি।তোমার নাম রাখা উচিত ছিল বিনাশিনী।তীব্রের কথায় থতমথ খেতে ক্যাবলার মতো তাকাই রিদি। পরক্ষনেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তীব্রর গায়ে কিছু নেই পড়নে শুধু একটা টাওজার।রিদি চলে আসতে নিলে তীব্র বলে,
তোমার বয়স কত??
আপনাকে কেন বলব!!
তুমি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছ??
জানার প্রয়োজন মনে করছি না।
ওদিক ঘুরে কেন কথা বলছ??সাহস নেই বুঝি??
যথেষ্ট আছে।আগে কাপড় পড়ুন।
তীব্র হাসল। কিন্তু নজরে আসলো না ।
যদি না পড়ি!!
লজ্জা কি বেঁচে খাইছেন??
সেটা কখনো ছিল না।
কোথাকার কোন রাজা যেন।আপুর সাথে আপনার বিয়ে হলে আপনি আমার দুলাভাই হবেন কিন্তু আমার আপনার মতো দুলাভাই চাই না।
কেন??স্বামী চাই বুঝি??
রিদি সব ভেবে তাচ্ছিল্য হাসে।আপনার কথা শেষ হলে আমি যাব??
আমি কি ধরে রেখেছি!!
আঙ্গে না।ম্যানারস বলে তো কিছু আছে।ওহহ আমি আবার কাকে বলছি।যার মাঝে ম্যানরস এর ছিটে ফোঁটাও নায়।
তোমার মনে হয় না তুমি বেশি বলছ। থাপ্পর নিশ্চয় ভুলো নি।
তীব্রর আপমানের কথা মনে হতেই অশ্রুকনা বেরিয়ে আসতে চাইলে রিদি তা দিল না।সে কাঁদবে না,আর কতোই কাঁদবে সে।কান্নারাও মনে হয় বিরক্ত হয়ে বলে, “আর কত এবার আমাদের ও রেস্ট দে”রিদি কিছু না বলে চলে আসতে গিয়েও পারল না।
হুট করেই তীব্র রিদি কে টেনে বুকে জড়িয়ে চেপে ধরল।রিদি হতভম্ব।খালি বুকে মাথা সহ শরীর লাগতেই কেঁপে উঠল ।
কোথাথেকে গুলি এসে তীব্রর হাত ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়।গলগলিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে।হতদন্ত হয়ে ছুটে আসে গাড।রিদিকে এখনো বুকে চেপে ধরে আছে তীব্র।গাডদের চেঁচামেচির শব্দে রিদির হুস আসে।হাবার মতো মুখ তুলে তীব্রর দিকে তাকায়।রেগে লাল হওয়া মুখ দেখতেই রিদি কেঁপে উঠল।সরাতে চাইলেই ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকাল তীব্র।তবুও নিজেকে ছাড়িয়ে নিতেই চোখ যায়।রক্ত পড়া হাতের দিকে।কি হল না হল কিছুই বুঝছে না রিদি। কিন্তু রক্ত পড়তে দেখে গায়ের ওরনা বের করে হাতে বেঁধে দেয় রিদি।ভয়ে ভয়ে এবার তাকায় তীব্রর মুখের দিকে কেমন শান্ত হয়ে আছে।রিদি আশেপাশে তাকায়। ইতিমধ্যে বাড়ির সবাই উপস্থিত।রিদি এখনো হতভম্ব কি হললল……!!
আমিরের কথায় সেদিকে তাকাই রিদি
আমির:এতো সিকিউরিটি থাকার পরেও হামলা হল কিভাবে??
রিদি মামার কথায় কিছুটা বুঝলো।মাথা খাটালো।ভাবল কিছু।বুঝলো কেউ তীব্র কে মারতে গুলি চালিয়েছে।
আমির: তীব্রর ওপর হামলা করার সাহস কার!!কলিজা টেনে বের করব। তীরররররর….
আমিরের রাগ দেখে রিদি ঘাবরে যায়। তীব্রর দিকে তাকিয়ে দেখে তীব্র শান্ত।
হামলা আমার উপর হয় নি!!!তীব্রর কথায় সবাই হতবাক হয়ে তাকায়।আমির হতবাক হয়ে বলে,
মানে!!!!
গুলিটা আমাকে উদ্দেশ্য করে মারা হয়নি।আর গুলিটা সামনের কোন বিল্ডিং থেকে গুট করা হয়েছে।
তীর:কি বলছিস তীব্র! তুই ছাড়া কে আছে…..
তীর কিছু আগে বলতে গিয়েও থেমে যায়।অবাক হয়ে উচ্চারণ করে “রিদিতা”।
তীরের কথায় হচকচিয়ে যায় সবাই।রিদি! কিভাবে সম্ভব!!রিদি নিজেও হতবাক।তাকে!কে?আর কেনই বা মারতে চাইবে?সে কি করেছে?রিদির ভাবনার মাঝেই নজর যায় তীব্রর হাতের দিকে গলগলিয়ে রক্ত পড়ছে।
রিদি রক্ত দেখে বলে মামা ডাক্তার ডাকুন। ভাইয়ার হাতে রক্ত।রিদি এগিয়ে আসতে চাইলে তীব্র হুংকার দিয়ে বলে,
ডোন্ট টাচ মি!ডোন্ট ইউ ডেয়ার!
রিদি ফুসে উঠল।রাগে রি রি করে উঠল শরীর।আর কিছু না বলে তীব্রর ডান হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।তীব্র যেন পা মেলালো।তাকালো সেই ধরে রাখা হাতের দিকে।
এই মেয়েটা কিছুক্ষণ আগেও তার সাথে ঘুরে কথা বলেছে কারন সে গায়ে কিছু দেয়নি অথচ এখন তার ই হাত শক্ত করে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে।সবাই রিদি আর তীব্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রুপালি ঘোলাটে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের যাওয়ার দিকে।ব্যাথাটা ঠিক কোথায় ??তা হয়তো ধরতে পারছে না রুপালি।
তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিদিতার দিকে।রিদিতা কাপা কাপা হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। কিন্তু যতবার তুলা দিয়ে সাফ করছে রক্ত আরো মনে হচ্ছে বের হচ্ছে।রিদিতার টলমলে চোখে থইথই করছে পানি শক্ত মেয়েটা খুব করেই আটকে রেখেছে।এলোমেলো চুলে তখনকার গোজা ফুল গুলো এখনো লেগে আছে।ফুলের সুবাস আসছে।ঘন পাপড়ি গুলো বিনা ঝাপটিয়ে শান্ত হয়ে আছে।ঠোটের ঠিক বা পাশের তিলটা যেন শ্যামাবতীকে আকষনীয় করে তুলেছে।এতটুকু মেয়ের রক্ত,কাটা,ক্ষত দেখেও বিন্দুমাত্র ভয় নেয়।যেন সে ভীষন অভিঙ্গ।ওরনা ছাড়া থাকায় গলার রগ বরাবর ছোট দু’টো তিল নজরে আসে তীব্রর।তীব্র মনে মনে “তিলবতী” নামটা উচ্চারিত করে।
ধন্যবাদ!!
তীব্র শুনল।কিছু বলল না।সে এখনো সামনে বসে থাকা শ্যামকন্যা কেই পর্যবেক্ষণ করছে।মাঝে মাঝে ফু দিচ্ছে হাতে তাতে ঠোট দুটো চুমুর মতো হচ্ছে সেটাই তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে তীব্র। হঠাৎ আমেনা তীব্রের সামনে রিদির চুলের মুঠি ধরে টেনে ফ্লোরে ফেলে।
কালোকুটি!!আপয়া!!
আসতে না আসতেই আমার ভাইয়ের ছেলের জীবনে ঝুকি নিয়ে এসেছিস।রিদি শান্ত হয়ে আছে।এসবে অভ্যস্ত সে।অকারনে মায়ের হাতের মার খাওয়া তার যেন অভ্যাস।আমেনার চিৎকার শুনে সবাই ছুটে আসে।
রিদিতার শান্ত মুখ দেখে ভয়ংকর কাজ করে তীব্র।উঠে এসে ঠাসসস করে থাপ্পর মারে রিদিকে।এবার রিদি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে গালে হাত দিয়ে। শুধু রিদি না সাথে আমেনা সহ বাকি সবাই।আরো হতবাক করতে রিদির গলা চেপে ধরে তীব্র।রিদির শ্যামরাঙ মুখখানা রক্তিম হয়ে আসে।রিদির দম প্রায় আটকে যেতেই তীব্র রিদি কে ছেড়ে দেয়।কে কি করবে সবাই তো আজ কেবল নতুন রূপ ই দেখছে।রিদি শ্বাস নেয় জোরে।তীব্র রিদির মাথা নিজের খালি বুকে এলিয়ে দেয়।রিদি ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। রুপালি এসে রিদিকে জরিয়ে ধরে।
আপনাতেই আমি পর্ব ২
এই মেয়ে আমার বাসায় চায় না আমি! ওকে যদি এখানে দেখি তো বাকি দমটুকু ও নিতে পারবে না।বলেই রুমে চলে যায়।
ছেলের এমন রুপ দেখে আমির ধপ করে সোফায় বসে পড়ে।কারো মুখে কোন কথা নেই।সবাই নির্বাক। কি থেকে কি হল!!