আপনাতেই আমি পর্ব ৩১
ইশিকা ইসলাম ইশা
চৌধুরী বাড়ির প্রতিটি কোনায় কোনায় একটাই কথা তীব্র বিয়ে করেছে।তাও নাকি এমন শ্যামলা মেয়ে কে। কেউ কেউ আবার বলছে মেয়ের কাটিং সুন্দর কিন্তু কালো।তীব্রর মতো ওমন ছেলের সাথে মানাই নি।কেউ বলছে নিশ্চয়ই কোন ঘাপলা আছে।না হলে ওমন সুন্দর ছেলে কি না কালো মেয়ে বিয়ে করে।কেউ আবার হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে।পারে না তো এখুনি কাঁচা চিবিয়ে খায় রিদিকে।
রিদি বিরক্ত হয়ে উপরে চলে এসেছে।সে জানত তাকে এসব শুনতে হবে।তাই তো সে জানাতে চাই নি। কিন্তু তীব্রর কান্ডে সবাই জেনে গেছে।সে তো বিন্দাস আছে আর সব কথা রিদিকে শোনা লাগছে।
রিদি এসে রুমের দরজা খুলতেই কেউ তার হাত ধরে টান দেয়।ঠাসস করে থাপ্পর মেরে বলে,
কি তাবিজ করে বিয়ে করেছিস তুই বল??
চৈতির এমন কথার আগা মাথা কিছুই বুঝল না রিদি।গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।চৈতি রেগে বলে,
আমি ভালোবাসি তীব্র কে।ও শুধুমাত্র আমার।বলে আবারো মারতে উঠলে হাত ধরে ফেলে রিদি।
একদম গায়ে হাত তুলবেন না।বড় বলে আপনাকে কিছু বললাম না।আর তীব্র কে ভালোবাসেন তো গিয়ে বলেন পারলে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে সংসার করেন।এমন ভুল আর কখনো করবেন না।আজ বড় বলে ছেড়ে দিলেও এরপর কিন্তু হাত আমারো আছে।
কথাটা বলেই রিদি চলে আসে। কান্না পাচ্ছে ভীষণ।তীব্র,তীব্র,তীব্র এই মানুষটা তার চাই না।চাই না তার এমন সুন্দর নষ্টা পুরুষ।রিদি দৌড়ে বাথরুমে চলে আসে। কিছুক্ষণ পর বের হতেই দেখে তীব্র সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। রিদি বের হতেই তীব্র রিদির কাছে এসে থুতনি ধরে মুখটা উচু করে এপাশ ওপাশ দেখল।রিদি নিজেকে ছাড়ানোর আগেই তীব্র রিদির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।চার কদম যেতেই থেমে কোলে তুলে নিল রিদিকে। রিদি হতবাক হয়ে দেখে যাচ্ছে শুধু।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তীব্র রিদিকে সবার সামনেই কোলে করে নিচে নিয়ে আসে।রিদি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ই চোখ যায় সোফায় বসে থাকা চৈতির দিকে। স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে দু গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ। চৈতি রিদিকে দেখা মাত্রই ছুটে এসে রিদির পা জড়িয়ে ধরে,
সরি ভাবি!!আমাকে মাফ করে দিন!!
রিদি কিছু বুঝলো না।কি হয়েছে।তবে তীব্রর দিকে তাকিয়ে বুঝল তীব্র রেগে আছে।
ঠিক আছে ছাড়ুন!!
চৈতি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তীব্রর দিকে তাকাল।তীব্র সবার সামনে বলল রিদি তার বৌ।মিসেস রিদিতা তীব্র চৌধুরী কথাটা সবাই মাথায় রাখবেন!কথাটা বলেই রিদিকে আগের মতো কোলে তুলে নিল।সিড়ি বেয়ে উপরে এসে রুমে নিয়ে আসল। আবার কোন কথা ছাড়াই রুমে দিয়ে চলে গেল।রিদি অবাক হয়ে ছিল শুধু।
কুরবানীর মাংস বিতরণ চলছে। চৌধুরী বাড়ির সামনে সিরিয়াল করে লম্বা লাইন।একদিকে আমির আর অন্য দিকে তীর গোশত বিতরন করছে।তীব্র মাংস কাটা আর প্যাকেট করার দিক দেখছে।যদিও কোনবার সে এসবে আসে না।এবার তীব্র কে দেখে অবাক হয়েছেন আমির।রিদি সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।তিন্নি কে কোলে নিয়ে।দূর থেকে দেখছে সব।পাশেই বিভিন্ন খাবার সাজিয়ে রাখা আছে।বাইরে থাকায় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে তিন্নি তাই রিদি ওকে নিয়ে বাগানের সাইডে আসে।এদিকটাই বাতাস বইছে সুন্দর।
ছোডু ম্যাডাম!ছোডু স্যার খুজতাছে আপনারে??
রিদি বিরক্ত হয়ে বলল,
খুজুক!!
এই মাত্র না দেখল আমি তিন্নি কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।ক্ষনিকে কি আমি পালিয়ে যাব আজব!!
একটু পরেই তীব্র আসে,
তিন্নি কে কোলে তুলে নেয় রিদির থেকে।তিন্নি চাচু কে পেয়ে খুশি হল যেন! ঠিক সেই সময় কোথা থেকে একটা ৩,৪বছরের বাচ্চা দৌড়ে এলো এসেই জরিয়ে ধরলো রিদিকে।ঝট করে জরিয়ে ধরায় ব্যাথা পেল রিদি।ব্যাথায় আহহহ করে উঠতেই কোথা থেকে ছুটে আসে একজন মহিলা। মহিলার পেছনে পেছনে ছুটে আসে একজন গার্ড।তীব্র তিন্নি কে ন্যানির কাছে দিয়ে রিদির সামনে বসল।বাচ্চাটি তখনো রিদিকে জরিয়ে ধরে আছে।তীব্র কে দেখে ভয়ে আরো শক্ত করে ধরল।
গাড এসে বাচ্চাটিকে ছাড়াতে চাইলে রিদি ইশারায় মানা করল। তীব্র বাচ্চাটাকে না সরিয়ে শুধু হাত রাখল রিদির পেটে যাতে চাপ না পড়ে।রিদি তীব্রর হাত সরাতে চাইলে তীব্র বলে ব্যাথা পাবেন বেগম সাহেবা।
রিদি লজ্জায় রাগী দৃষ্টিতে তাকালো তীব্রর দিকে।তীব্র সেসব তোয়াক্কা না করে ধীরে ধীরে হাত বুলালো বাচ্চাটার মাথায়। বাচ্চাটা রিদিকে জরিয়ে ধরেই তাকালো তীব্রর দিকে।
তোমার নাম কি বেবি!!
তখনি ছুটে আসা মহিলাটি বলল,
মাফ করবেন স্যার!!আসলে আমি ধরতে ধরতেই ছুটা আসছে। এই এইখানে আয়!!মহিলাটির রাগী দৃষ্টি দেখে ছেলেটা মুখ চেপে ধরল রিদির পেটের দিকে।
আমি যাব না তুমি ভালো না।
ছেলেটির কথায় রিদি মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
কি হয়েছে বাবু??
মা মারছে!
কেন??আপনি মেরেছেন কেন?
ঐ মানে খাবার দেখে খেতে চেয়েছে।এখানের কাজ শেষ করেই বাড়ি গিয়ে ভাত বসাবো।এই নাজু এদিকে আয়।তোর জামা নোংরা হয়ে আছে।
তীব্র ইশারায় গাডকে খাবার আনতে বলে।ছেলেটাকে বলল,
তুমি খাবার খাবে??
গম্ভীর গলায় বলা কথা শুনে ছেলেটা কিছু বলল না।রিদি কিটমিট করে বলল,
একটু ভালোবেসে বলেন।
তীব্র অসহায় চোখে তাকাল,
রিদি আদুরে ডাকে ছেলেটাকে ডাকলে ছেলেটা রিদির কথা শুনে। ছেলেটা রিদিকে ছেড়ে দিলে তীব্র হাত সরিয়ে নেয়।রিদি বাচ্চাটাকে নিয়ে চেয়ারে বসে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়।তীব্র দূর থেকে দেখল রিদি কে।মনে কোথাও যেন নিজের অনাগত বাচ্চাটার কথা স্বরন হচ্ছে।আজান্তেই চোখে পানি চলে আসলো।তীব্র সানগ্লাস টা পড়ে নিল।যার অস্তিত্ব ই নেই তার জন্য কতো মায়া।
রুপালি ব্যাস্ত থাকায় তিন্নি আজ দুপুরে রিদির কাছে ঘুমিয়েছে। তিন্নি কে ঘুম দিতে গিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়েছে।তীব্র রুমে এসে সোজা ফ্রেশ হতে যায়। জীবনে প্রথম আজ এসব করেছে সে।ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসতেই নজর যায় রিদির আর তিন্নির দিকে। দুইজনেই ঘুমাচ্ছে।তীব্র রিদির তিন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।এরপর চাইল রিদির দিকে। তিন্নির গায়ে একহাত দিয়ে ঘুমাচ্ছে। দুইজনকে দেখে তীব্রর মনে কষ্ট হল।উঠে আবারো বাইরে চলে এলো।
ঈদ শেষে এখন যে যার মতো ব্যাস্ত সময় পার করছে।যে যার কাজে ব্যাস্ত সবাই।পার হয়ে যাচ্ছে সময়।তীব্র বাসায় ফিরে ঠিক ৮টায়।রিদি আসার পর তীব্র জলদিই বাসায় ফিরে আসে।যদিও রিদি মজনুর মতো করে তীব্র কে তেমন পাত্তা দেই না।তীব্র আসলেও রিদি তিন্নির সাথে ব্যাস্ত থাকে।এই নিয়ে তীব্র কোন অভিযোগ করে না।তীব্র এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসতেই রিদি আসল।
আম্মা আর রাদিফ ভাইয়া কোথায়??
তীব্র ল্যাপটপ এর স্কিন এ তাকিয়ে বলল,
আপনাতেই আমি পর্ব ৩০
আমি জানি না!!
আমার এক্সিডেন্ট এর পর থেকেই আম্মা আর রাদিফ ভাইয়া কে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না কেন?আপনি নিশ্চয়ই জানেন ওরা কোথায়??
আমি জানি না ।বলেই বাইরে চলে গেল তীব্র।তার রাগ বাড়ছে।রাগে রিদির ক্ষতি চাই না।তাই বাইরে চলে যায়।