আপনাতেই আমি পর্ব ৪০
ইশিকা ইসলাম ইশা
রাত বাজে ১০টা ১০,
তীব্র উওাপে পুড়ছে রিদির সর্ব শরীর।রুপ জ্বর মেপে দেখল ১০৩ ডিগ্রি।গায়ে মোটা দুটো কম্বল জড়ানো তবুও শীতে কাঁপছে রিদি।দাদি রিদির পাশে বসে জলপট্টি দিচ্ছে আর দোয়া পড়ে ফু দিচ্ছে। হাই ডোজের ওষুধ খাওয়ানোর পরেও জ্বর নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
এদিকে আমির অনেকক্ষণ ধরে তীব্রকে ফোন করার চেষ্টা করছে কিন্তু বার বার নট রিচএবল বলছে।টেনশনে কি করবে বুঝছে না আমির।জ্বর যখন কমছেই না তখন দাদি রিদির মাথায় পানি দিতে বলল।রুপ,আর রহিমা মিলে রিদির মাথায় পানি দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিল।রাত প্রায় ১২.৫০ এর দিকে
রিদির জ্বর কমেছে কিছুটা।রিদি পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো। অবুঝ মন বার বার একটা নামই জপল।মন বলছে তীব্রর উষ্ণ বুকে মাথা রাখলেই সব যন্ত্রণা কমে যাবে।খুব করে চাইল এই সময় তীব্র কে। কিন্তু আশেপাশে তীব্র কে না দেখে রূপকে ইশারায় জিজ্ঞেস করল তীব্র কোথায়??রুপ স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
তীব্র এখনো আসেনি আর ফোন ও বন্ধ হয়তো বৃষ্টির কারনে কোথাও আটকে গেছে ,কোন কাজে আছে চলে আসবে তুই চিন্তা করিস না।রুপ বোনের মলিন মুখ দেখে আবারো বলল,
কিছু খাবি রিদু??
রিদি মাথা নাড়িয়ে না করল।রুপ তবুও জোর করে একটু খাইয়ে দিল কারন সেই সকাল থেকে তেমন কিছু খাইনি রিদি।যদিও রিদিকে খাওয়ার জন্য বলেছিল কিন্তু বলেছে সে বাইরে খেয়ে এসেছে। খাবার খাওয়ার একটু পরেই বমি করে ফেলল রিদি।বমির পর নিস্তেজ হয়ে চোখ বুজল।দু চোখ বেয়ে আঝোরে পানি পড়তে লাগল। রুপ রিদির কান্নার কারন হিসেবে ধরল ওর আসা জ্বর।তাই বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিল, জ্বর কমে যাবে কিছু হবে না। কিন্তু সেতো জানে না জ্বর আর কান্নার কারনটা ভিন্ন।
আকাশের অবস্থা খুব একটা ভালো না। অতি বৃষ্টির কারনে রাস্তায় পানি উঠেছে।আর এদিকে বৃষ্টির গতির সাথে আবারো বাড়ল রিদির জ্বর।আমির ফোন করল হসপিটালে।তীর বৃষ্টির মাঝেই রিদিকে কোলে তুলে রওনা দিল হসপিটালে সাথে গেল রুপ আর আমির।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হসপিটালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বাজল ৩.৩০,
রিদিকে ইমার্জেন্সি কেবিনে নেওয়া হয়েছে।অতিরিক্ত জ্বরের জন্য ইনজেকশন পুশ ও শরীরে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। ডক্টর আসাদ ছিল নাইট ডিউটিতে।আমিরের কল পেয়ে সে সব রেডি করেই রেখেছিল। সর্বোচ্চ ট্রিটমেন্ট না করলে তীব্র ওর গর্দান নিতেও দুবার ভাববে না।বৌ কে ভীষণ ভালোবাসে তীব্র।তীব্রর মতো ব্যাকা মানুষ ও নাকি বৌ কে ভালোবাসে। যতদূর জানত তীব্র রোজ নতুন মেয়ের সঙ্গ নেয়।যদিও মেয়েরা নিজ ইচ্ছায় তার কাছে আসে।আসবেই বা না কেন!তীব্রর মতো গুড লুকিং,হ্যান্ডসাম,রিচ, পাওয়ার ফুল মানুষ বলে কথা।তবে রিদির প্রতি ভালোবাসা দেখে ভীষণ অবাক হয় আসাদ।তার মতে নিঃসন্দেহে রিদি সুন্দর,মায়াবতী তবে এর চেয়ে অধিক সুন্দর মেয়ে তীব্রর আশেপাশে ঘুরঘুর করে।নিজ চোখে প্রিয়ন্তিকে দেখেছে তীব্রর জন্য কতো পাগল ছিল মেয়েটা।এটাই শুনেছে রিদিকে ভালবাসার পর নাকি কোন মেয়েতে
আসক্ত হয় নি তীব্র। মধ্যে বয়স্ক আসাদ তীব্রর জন্য দোয়া করে যেন রিদিকে নিয়ে ভালো থাকে।রিদি ও ভীষণ মায়াবী একটা মেয়ে। সবার সাথেই খুব সুন্দর তার ব্যবহার।না তীব্রর পাওয়ার ব্যবহার করে আর না দাপট দেখায়।রিদির চিকিৎসা শেষ করে মাথায় হাত বুলিয়ে বাইরে আসে ডঃ আসাদ।
সকালে ঘুম ভেঙ্গে যায় রিদির,
শরীরে অসহ্য ব্যাথা করছে।পাশে বসে ঘুমাচ্ছে রুপ। আশেপাশে আবারো তীব্র কে না দেখে চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল রিদির। শরীরের যন্ত্রণা থেকে মনের যন্ত্রণা বেশি মনে হচ্ছে।রিদি উঠে বসল।ধীর আওয়াজে রুপকে ডেকে দিল।রুপ ধরপরিয়ে উঠে আগে রিদির জ্বর চেক করল।জ্বর কমেছে দেখে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ।রিদি বোনের অস্থিরতা দেখে বলল,
তোমাদের বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম।
কি বলছিস!আগে বল এখন কেমন লাগছে??
ভালো।
তুই শুয়ে থাক আমি তীর কে বলে আসি!
তীর ভাইয়া এখানে আছে??
শুধু তীর না আব্বু ও আছে।কথাটা বলেই চলে গেল রুপ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তীর,রুপ, আমির, ডঃ আশিক মাহমুদ , ডঃ আসাদ রুমে ঢুকে।রিদির সাথে টুকটাক কথার মাঝেই হুরমুর করে রুমে ঢুকে তীব্র। কোন দিক না তাকিয়ে সোজা রিদিকে জরিয়ে ধরে।
কি হয়েছে আপনার জান?
রিদি কোন উত্তর করল না।
আমির ক্ষিপ্ত মেজাজে বলল,
কাল বিকেল থেকে জ্বর।তোমাকে হাজারটা কল করেও কোন খোঁজ নেয় কোথায় ছিলে তুমি?
তীব্র অসহায় চোখে তাকাল বাবার দিকে,রিদির গায়ের তাপমাত্রা চেক করে জরিয়ে ধরল আরো শক্ত করে।যেন বহুদিন পর জরিয়ে ধরেছে।সবাই দুইজনকে স্পেস দেওয়ার জন্য বের হতেই রুমে ঢুকে একটি মেয়ে।মেয়েটিকে চিনে রিদি। কালকে তীব্রর সাথে ক্যাফেতে বসা মেয়েটি।ওয়েস্টান ড্রেস আপে সুন্দর দেখতে মেয়েটি ধীর কন্ঠে বলল,
তীব্র তোমার ফোন তুমি আমার গাড়িতে ভুলে এসেছিলে?
তীব্র রিদিকে ছেড়ে মেয়েটার দিকে যেতেই রিদি বলে,
আপু আমাকে একটু হেল্প করো ওয়াস রুমে যাব। তীব্র রিদির কাছে আসতেই রিদি বলল,
দরকার নেই আপু আছে তো!!আপনি ওনার সাথে কথা বলুন।
বলেই তীব্র কে এক প্রকার ইগনোর করেই রুপের হাত ধরে ওয়াস রুমে গেল।রুপ কিছুটা অবাক হলেও বোনকে নিয়ে চলে গেল।
রিদি ওয়াস রুমে গিয়ে দাঁড়ালো বেসিনের আয়নার সামনে।নিজেকে দেখে নিয়ে চোখ মুখে পানি দিল।পানির সাথে কান্না মিশে গেলেও মনে ব্যাথা রয়ে গেল।
বেরিয়ে আসতেই দেখল দরজার বাইরে তীব্র দাঁড়িয়ে আছে। তীব্র হাত বাড়িয়ে রিদিকে ধরতে গেলেই রিদি হাত না ধরে বেরিয়ে আসে। শরীর দূর্বল থাকায় পড়ে যেতে নিলে তীব্র ধরে ফেলে।রিদি ছাড়াতে চাইলে তীব্র শক্ত করে ধরল।
ক্ষিপ্ত মেজাজে বলল,
সমস্যা কি?
রিদির ও রাগ হল,
আপনার ছোয়া আমার সহ্য হচ্ছে না এটাই সমস্যা!
তীব্র অবাক হয়ে বলল,
কি বলছেন এসব!!
কিছু না।আমাকে একা ছেড়ে দিয়ে প্লিজ এখানে থেকে যান।তীব্রর মেজাজ গরম হল।ছেড়ে দেব! ছেড়ে দেব মানে কি?? কিন্তু কিছু বলার আগেই রুমে ঢুকে রিদ।কাল রাতে শুনেছে রিদি হসপিটালে তাই ভোরেই বেরিয়ে পড়েছিল।রিদ এসেই রিদির পাশে বসে,
জ্বর বাধালি কিভাবে রিদু!!
রিদির যেন এমন আদুরে একটা কথার দরকার ছিল।ব্যাস সব কষ্ট নিমিসেই বেরিয়ে আসল।রিদ বোনের কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে কিছু বলার আগেই রিদি জরিয়ে ধরলো রিদ কে। সমস্ত আটকে রাখা কষ্ট যেন বেরিয়ে এলো। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল রিদি।রিদ অবাক হয়ে গেল।
ভাইয়া আমার এখানে ভালো লাগছে না!!
রিদ বুঝলো না বোনের কষ্ট।জ্বরে ভালো লাগছে না তাই বলছে ভেবে রিদ রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল,
জ্বর হয়েছে তো!ঠিক হলে ভালো লাগবে!
রিদির কষ্ট কমল না। আবারো বলল,
আমি এখানে থাকব না ভাইয়া। আমার ভালো লাগছে না।
রিদ বুঝলো না বোনের কি হয়েছে।তবে কোন কারণে কষ্ট পেয়েছে তা বুঝল।রিদিকে নিজের থেকে ছাড়াতে চাইলে রিদি ছাড়ে না।রিদি বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে।না হলে কান্নার ফলে দেখা যাচ্ছে আরো জ্বর বাড়বে।তীব্র চুপচাপ দাঁড়িয়ে রিদির কান্ড দেখছে।রিদ তীব্র কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
আব ভাইয়া আপনি বসুন!আসলে জ্বর হলে রিদি একটু এমন করে।ঠিক হয়ে যাবে।তীব্র শুনল রিদের কথা গিয়ে বসল সোফায়।তবে দৃষ্টি তার রিদির দিকে।রিদের জায়গায় অন্য কেউ হলে এতোক্ষণ জানে মেরে ফেলত না।তবে বৌয়ের ব্যবহার তাকে ভাবাচ্ছে। অস্থির লাগছে খুব। অশান্তি লাগছে ,আজানা কারণে রাগ বাড়ছে , ক্ষিপ্ত মেজাজটাও তরতর করে বাড়ছে।মন তার সাথে যুদ্ধ করছে এখন বৌ কে চায় তার।কাল রাতে ঘুমও হয়নি তীব্রর।একে তো বৃষ্টি তার ওপর ফোনের চার্জ শেষ। অস্থিরতায় পার করেছে সময় টুকু।মনে হচ্ছিল রিদি তাকে ডাকছে ,বৌ কষ্ট পাচ্ছে ,থামতে না পেরে তীব্র ঝরেই বেরিয়ে গিয়েছিল কিন্তু পথে ঝর বৃষ্টির জন্য গাছ পডে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিরতে পারেনি।তবে ভোর হতেই গাড়ি ডেকে অন্য গাড়িতে করে বাসায় ফিরে। তীব্র যখন বাসায় আসে তখন সবাই ঘুম।তাই রুমের লাইট না জ্বালিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসল। অন্ধকার রুমে বেডের কাছে এসে বসতেই মনে হল রিদি নেই।তীব্র লাইট জ্বালিয়ে দিতেই রিদিকে না দেখে অবাক হয়।উঠে বাইরে আসতেই দেখা হয় নামাজ পড়তে উঠা রহিমার সাথে।রহিমা তীব্র কে দেখে চমকে উঠে বলে,
ছোট স্যার আপনি কখন আইলেন??
তীব্র উওর না দিয়ে প্রশ্ন করল,
রিদিতা কোথায়??
তীব্র কে জন্মের ভয় পায় রহিমা। তীব্রর রক্তিম চোখ দেখে ভয়ে গরগর করে সব বলে দিল।যদিও রক্তিম চোখের কারন রাগ না অঘুম রাত পার করার ফল।রিদির কথা শুনে এক প্রকার ছুটে বেরিয়ে যায় তীব্র।ট্রাফিক,রাস্তায় ঝর পানির কারনে রাস্তা ব্লক এসবে আরো ক্ষিপ্ত হয় মেজাজ।
আপনাতেই আমি পর্ব ৩৯
হঠাৎ করেই রিদের ফোন বেজে উঠায় ধ্যান ভাঙল তীব্রর।রিদ ফোন রিসিভ করার জন্য পকেটে হাত দিতে গিয়ে বুঝল রিদি ঘুমিয়ে গেছে। তীব্র ও খেয়াল করল বৌ তার ঘুমিয়ে পড়েছে।চট করেই এগিয়ে এসে নিজের দিকে নিল রিদিকে।রিদ সৌজন্যে মূলক হেসে ফোন রিসিভ করার জন্য বাইরে গেল।তীব্র রিদিকে কোলে নিয়ে বসল বিছনায়।বালিশে মাথা রেখে রিদিকে নিজের ওপর নিল।রিদি ঘুমের ঘোরেই অভ্যাস অনুযায়ী তীব্রর বুকে মিশে গেল নিজ থেকে। যেন তার ঘুমের জায়গা ফেরত পেয়েছে। তীব্র হাসল। এতোক্ষণ যার ছোয়া সহ্য হচ্ছিল না এখন তাকেই আষ্টেপৃষ্ঠে জাপটে ধরেছে।রিদির শরীরের তাপমাত্রা এখনো আছে। হয়তো বেশি না।তীব্র চাদর টেনে নিল দুইজনের গায়ে।তীব্রর বুকের উষ্ণতা আর চেনা সুবাস পেয়ে মিশে গেল যেন তীব্রর সাথে।তীব্র বৌয়ের কপালে, গালে,মাথা নিচু করে চুমুর বষন করল।এরপর দু হাতের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রিদির তপ্ত নিস্তেজ দেহটা।হ্যা এখন শান্তি লাগছে।ভালো লাগছে তার।মন, মেজাজ দুটোই নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে তীব্র।