আপনাতেই আমি পর্ব ৪৩
ইশিকা ইসলাম ইশা
রাত বাজে ৩:০০,
তীব্র হসপিটালের রিদির রুমে ঢুকে দেখে রিদি ঘুমিয়ে আছে।রিদিকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে তীব্রর অভিমান হলো। দুপুরে রাগ করে ভেবেছিল এই নারীর সংস্পর্শে সে আর আসবে না।তাকে তো এই নারী বিশ্বাস ই করে না।কেন আসবে সে এই নারীর কাছে!
কিন্তু সে ব্যর্থ!!পারছে না এই নারী বিহীন বাঁচতে।শ্বাস আটকে আসছে এই নারী ছাড়া।অথচ সে আরামে ঘুমাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ঘুম থেকে তুলে কয়েকটা ঠাস ঠাস করে থাপ্পর মারতে!সে নির্ঘুম রাত পার করেছে আর এই মেয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে।
তীব্র এতো কিছু ভেবে এগিয়ে গেল রিদির কাছে। ড্রিম লাইটের আলোতে রিদির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল কিছুক্ষণ।কি মায়াবী একটা চেহেরা!!তীব্র ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।চেনা স্পর্শে রিদি নড়েচড়ে উঠে।তবে ঘুমের ওষুধের কারনে চোখ খুলতে পারল না। তীব্র আর দেরি না করে রিদির সাইডে একটু জায়গা করে শুয়ে পড়ল। তবে জরিয়ে ধরলো না রোজকার মতো।ঠিক কয়েক মিনিট পরে রিদিই তীব্রর বুকের মাঝে ঢুকে গেল। তীব্র অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রিদির দিকে।এই মেয়ে না ঘুমিয়ে ছিল!
রিদি চোখ বন্ধ রেখেই ঘুম ঘুম কন্ঠে বলা কথায় যেন নেশা মেশানো,
সরি!! আমি আর আপনাকে বকবো না তো!! এত্তো গুলা সরি! খুব ভালোবাসি তো আপনাকে!আমি আপনাকে কাউকে দিব না।আমি অনেক ভাল………..
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রিদির পুরো কথা শেষ করার আগেই তীব্র বন্ধ করে দেয় রিদির মুখ।মান, অভিমান, রাগ জমা হয়ে অন্যরকম এক যন্ত্রণার পুরোটাই রিদির ঠোঁটের উপর দিয়ে প্রকাশ পেল। প্রথমে রিদি একটু ছটফট করলেও ছাড়ল না তীব্র।একটু পরে রিদির কোন রেসপন্স না পেয়ে ঠোঁট ছেড়ে তাকাল রিদির দিকে।লাল হয়ে যাওয়া ঠোঁট দুটো কিছু বিরবির করছে!! তীব্র কান রিদির মুখের কাছে নিয়ে শুনতে পেল রিদির মোহনীয় কন্ঠস্বর,
আমি চুমু খেতে পারছি না তো!খুব ঘুম পাচ্ছে!
তীব্র রিদির কথায় না চাইতেও ফিক করে হেসে দিল।
পরপর কয়েকটা ছোট ছোট চুমু দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে রাখল।ঠিক ৭ মিনিট পর রিদিকে কোলে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়ল। বাইরে গাড তীব্র কে দেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ম্যাডামের সব জিনিসপত্র নিয়ে আসুন গাড়িতে।কথা অনুযায়ী কেবিনে থেকে রিদির ফোন,ব্যাগ, ফাইল সব নিয়ে বেরিয়ে আসল। তীব্র রিদির যাওয়া পেছনে থেকে এক জোড়া চোখ শুধু দেখে গেল ছলছল নয়নে।
গাড়িতে বসে রিদিকে নিজের কোলে ভালো করে তুলে নিতেই লম্বা দুটো বেনি গিয়ে ঠেকল সিটের নিচে পর্যন্ত। তীব্র দক্ষ হাতে বেনি দুটো দুপাশে রেখে দিল।পেছনের লাইট অফ করে রিদিকে বুকের মাঝে জায়গা করে দিয়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরল। ড্রাইভার গাড়ি চালু করতেই আরো শক্ত করে ধরল তীব্র!হয়তোবা রাগ থেকে নয়তোবা নিজের অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে নেওয়ার চেষ্টা।এদিকে চেপে ধরায় ব্যাথা পেয়ে কিছুটা নড়ে উঠলো রিদি।ঘুমের মাঝেও তীব্রর রাগের আভাস পেল যেন।ঘুমে চোখ খুলতে না পারলেও একটু নড়ে চড়ে বুকের একপাশে জোরে কামড়ে দেয় রিদি।তীব্র চুপচাপ দাঁত খিচে সহ্য করে নিতেই নরম ঠোঁটের ছোয়া যেন শরীরের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দিল। উষ্ণ স্পর্শে শিহরিত হল শীরর। তীব্র উত্তেজনায় শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পেয়ে যেন বহুগুণ হল।তীব্র নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে অসহায় ব্যাক্তি মনে করল।এই মেয়ে তাকে মূহুর্তেই বেসামাল করতে পারে। কিন্তু সে তো সভ্য পুরুষ!! বৌয়ের অসুস্থতার সুযোগ তো নিতে পারে না।তাই নিজেকে সামলিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বসে ।
মনে মনে ভাবে এই মেয়ের কি ক্ষমতা!!! তাকে মুহুর্তে বেসামাল করতে পারে, মুহুর্তে রাগাতে পারে, মুহূর্তে রাগ কমাতেও পারে। গাড়িতে পুরোটা সময় তীব্রর অস্থিরতায় কাটে আর এদিকে রিদি সে তো শান্তিতে তার আশ্রয় স্থলে নাক মুখ ডুবিয়ে আছে।সে হয়তো জানে না তার উষ্ণ নিঃশ্বাস কারো বুকে ঝর তুলছে।
খুব সকালেই ঘুম ভেঙ্গে যায় রিদির। পিটপিট করে চোখ মেলে নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করতেই মাতাল করা সুবাস নাকে এসে লাগল।রিদি জানে এটা কার ঘ্রাণ।তাই দেরি না করে আবারো এই সুবাস পেতে তীব্রর গলায় মুখ ডুবাল।প্রান ভরে শ্বাস নিয়ে হুট করে কাল মোনার কথা মনে হতেই রেগে গলায় বাইট করতেই তীব্র ঘুমের মাঝেই রিদিকে ছাড়াতে চাইলে রিদি আরো জোরে কামড়ে ধরে।তীব্র বিরক্ত হয়ে রিদিকে ছাড়িয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
অসভ্য মেয়ে!!এসব কি শুরু করেছেন?সকাল সকাল মুডে আছেন নাকি?
রিদিও সেম তেজ নিয়ে বলে,
অসভ্য ছেলে!! আপনি কেন আমাকে মিথ্যা বলেছেন??
তীব্র ভু কুঁচকে বলে,
কি মিথ্যা বলেছি!!
রিদি রাগে কিটমিট করে বলে,
মোনা আপনার জিএফ ছিল!এটা! কেন বলেছেন?? বলেন??
তীব্র আগের মতোই ভু কুঁচকে বলে,
সত্যিই বলেছি!সি ওয়াজ মাই জিএফ!
রিদি রাগে দুঃখে বলে,
ও আপনার নামমাত্র জিএফ ছিল।সবটা শুনেছি আমি! মোনা নিজে বলেছে আমাকে!আপনি কি চাইছিলেন হ্যা!!!কি চাইছিলেন!!আমি আপনাদেরকে সুখের সংসার করতে দিয়ে চলে যাই!
তীব্র কুঁচকে থাকা ভূ আরো একটু কুঁচকে বলে,
যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন বুঝি!!
রিদি তো ফুল এনার্জি নিয়ে আজ ঝরগায় নেমেছে।তাই সাথে সাথেই উওর দেয়,
হ্যা ভেবেছিলাম! কিন্তু আপনার মতো অসভ্য পুরুষকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব ভেবেছেন!!দিব না!আপনাকে আমি কঠিন শাস্তি দিব! অসভ্য পুরুষ!ঘরে বৌ রেখে বাইরে ফূর্তি করবে!তা হবে না!
রিদির এতোক্ষণের কথা শুনেই নি তীব্র!তার মস্তিষ্ক এখনো সেখানে আটকিয়ে আছে,
“হ্যা ভেবেছিলাম”।রাগে রক্তিম হয়ে উঠছে চোখ জোড়া।হাজার বার ওয়ান করার পরেও এই” ছেড়ে
যাওয়া”কথাটি রিদির মুখ থেকে বের হয়েছে।তীব্র রিদির সব কথা শুনলেও ছেড়ে যাওয়া ওয়ার্ড টা শুনতে পারে না।
এদিকে রিদি সে তো বাঁচাল এর মতো বলেই যাচ্ছে । তার হুস নাই রাগে সব বলা গেলেও!!”ছেড়ে যাওয়ার” কথা বলা যাবে না। কিন্তু রিদি সেটাই বলেছে।
রিদি হুট করে তীব্রর দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে যায়। এতক্ষন রাগের মাথায় কি কি বলেছে ভাবতেই শুকনো ঢোক গিলল।হুট করেই মনে হচ্ছে তার শরীর ক্রমশ খারাপ হচ্ছে।ভয়ে নাকি অন্যকিছু!!!রিদি মনে মনে দোয়া পড়েছে আর বলছে, রিদি রে এই লোক তোকে এবার সত্যি গলা চেপে ধরে বলবে,
ছেড়ে যাবি না!!যা !!একদম উপরে চলে যা!!
তীব্রর তার দিকে আগানো দেখে ভয়ে মনে হচ্ছে শরীর গুলাচ্ছে।আদো ভয়ে শরীর গুলিয়ে উঠে নাকি আপাতত সে নিজেই মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়ে বুঝল না।তবে নিজেকে আর বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারল না।হলহল করে বমি করে দিল। এতোক্ষণ ঝরগা করা মেয়েটি মুহূর্তে নেতিয়ে পড়ল।চারদিকে সব কিছু আবছা হয়ে এলো রিদির।হাত বাড়াল তীব্রর দিকে।
এদিকে তীব্র হুট করেই রিদির অসুস্থতায় এখনো বুঝে উঠতে পারছে না।তবে রিদির হাত বাড়িয়ে দেওয়াই খপ করে হাতটা ধরে টেনে নিতেই রিদি ঢলে পড়ে তীব্রর গায়ে।
পিটপিট করে চোখ খুলে সকালের মতো ঘ্রাণ না পেয়ে ভালোভাবে চোখ মেলে তাকাই রিদি।তবে এবার প্রথমমেই তীব্রর মাতাল সুবাস না …..
ভেসে এলো পরিচিত কন্ঠ।আশেপাশে তাকিয়ে সবাইকে দেখে উঠে বসতেই দাদি বলে,
উঠতে হবে না দিদিভাই শুয়ে থাকো!!
রিদির শরীর দূবল লাগছে।তবে সবার দিকে তাকিয়ে অবাক হল । সবাই এমন মিটমিট হাসছে কেন?রিদি একটু মনে করার চেষ্টা করে মনে পড়ল সে তো তীব্রর সাথে ঝরগা করছিল।তারপর হুট করেই তার শরীর গুলিয়ে উঠে বমি ও করে এরপর কি??সে অসুস্থ আর সবাই হাসছে কেন?
আপনারা এভাবে হাসছেন কেন??
দাদি:সে কি তুমি জানো না!!
রিদি বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়ায়।সে জানে না।
রিদির মাথা নাড়াতেই খেকিয়ে উঠে তীব্র!হুট করে তীব্রর আওয়াজ শুনে চমকে উঠে রিদি।
এই!!এই!!মেয়ে নাকি মেডিকেল স্টুডেন্ট!! আই যাস্ট কান্ট বিলিভ!হাউ ইরেসপন্সেবল সি!!
রিদি ভয়ে দাদির কাছে ঘেসে বসে ।ভয়ার্ত চোখে তীব্রর দিকে তাকিয়ে আছে। বেচারি বুঝছে না সে কি এমন করল!!
আমির:আহা থাম! সবসময় মেয়েটাকে এভাবে বকাবকি করবি না তো!!আর এই সময় তো আরো না!!
কিন্তু তীব্র এখনো কটমট করেই তাকিয়ে আছে রিদির দিকে।রিদি শুকনো ঢোক গিলে বলে,
এভাবে তাকাচ্ছেন কেন?আমি কি করেছি?দাদি আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও এখানে আমি থাকব না।মামু তোমার রগচটা ছেলে আমাকে তুলে আছাড় মারবে!!
তীর:এমা এতো বড় গুড নিউজ শুনে ও তো অঙ্গান হতে হতে বেঁচেছে!!আমি সিউর আজ তোমাকে তুলে আছাড় মারবে না!!
রিদি:গুড নিউজ!!
রুপ:তুই মা হবি রিদি!!! আমি বড়মা হব !তীর বড় বাবা!
রিদির মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়।চোখে ছলছল করছে পানি। খুশিতে আত্মহারা!!! কোন কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে! তবুও অনেক কষ্টে বলল,
সত্যি আমি মা হবো!!
রুপ জরিয়ে ধরলো বোনকে।সে জানে মা হওয়ার খুশিটা।বোনের ইমোশানও বুঝছে।একটা মেয়ের কাছে এটা অনেক বড় পাওয়া।যদিও রিদি আগে একবার তার বাচ্চা হারিয়েছে।তবে আল্লাহ যা করে ভালোই করে।
তীব্র শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিদির দিকে।সে খুশি হলেও আপাতত রিদির ওপর দ্বিগুণ রেগে আছে।পারে না তো মেয়েটাকে এখুনি চারটা গুলি করে দেয়!!সে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট।কদিন পর নিজে ডক্টর হবে।অথচ নিজের দিকেই কোন নজর নেই।মাসিকের ডেট পার হয়েছে সপ্তাহ খানেক আগে। কিন্তু তার এদিকে কোন হুস নেই।আছে তো বরের জিএফ আসার শোক নিয়ে।এই মেয়ে কি বোঝে না!এই অসভ্য মেয়ে ছাড়া তার কাউকে সহ্য হয় না!!ভালোই তো ছিল আগে সভ্য,শান্ত।আদরে আদরে দিন দিন মহা বিয়াদব হচ্ছে।তীব্র রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যায়।
আপনাতেই আমি পর্ব ৪২
রিদি তীব্রর যাওয়া দেখে তোয়াক্কা করল না।সে আজ ভীষণ খুশি।সে জানে তার বর রেগে আছে।তবে এতো বড় খুশির খবর পেয়ে নিশ্চিত রাগ বেশি সময় টিকবে না।
দাদি,রুপ মিলে তাকে থাকা খাওয়ার অনেক পরামর্শ দিয়েছে আর খাবার হাজির ও করেছে ইতিমধ্যে।রিদি আবাক হয়ে দেখছে শুধু তাদের ভালবাসা।