আপনাতেই আমি পর্ব ৪৫

আপনাতেই আমি পর্ব ৪৫
ইশিকা ইসলাম ইশা

অন্ধকার ঘরের এক কোনায় বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে রিদি।বুকে জরানো ছোট বাবুর কয়েকটি জামা তীব্র হাত বাড়ালো জামা নেওয়ার জন্য কিন্তু কি ভেবে যেন হাত গুটিয়ে নিল। মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল কান্নার দাগ । বাইরের লাইটের আসা আলোয় শ্যামরাঙা মায়াবী মুখ খানা দেখে একধ্যানে কিছুক্ষণ দেখল তীব্র ।এরপর তাচ্ছিল্য হাসল।ধীর আওয়াজে বলল,

মায়া!! মায়াবী!তীব্র চৌধুরীকে বস করতে পেরেছেন আপনি!কি মায়ায় বেঁধেছেন বলেন তো!!তীব্র চৌধুরীর কথা অমান্য করে এমন মানুষ তো তীব্র তার জীবনে দূর আশেপাশেও রাখত না।অথচ দেখেন আপনি সর্বদায় তীব্র চৌধুরীর কথা আমান্য করেন। তবুও সে আপনাতে আবদ্ধ।তীব্র চৌধুরী নিজের মতো মানুষ কে চালাতে পছন্দ করে,অথচ আপনি তাকে আপনার মতো চালাচ্ছেন।আর সে চলছেও!ভাবা যায়!!
তীব্র কথা গুলো বলে একটু থামল।হাটু মুড়ে বসল ঘুমন্ত রিদির সামনে।তীব্র চৌধুরী বরাবরই আপনার কাছে পরাজিত।সে চাইলেও আপনার সাথে লড়তে পারে না।আপনি তার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা। আবার সবচেয়ে বড় শক্তি।
তীব্র দূর্বল কোথায় জানেন!!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আপনাকে ছাড়া থাকতে হবে! বাঁচতে হবে!এটা ভাবলেও নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।এটা তার দূর্বলতা। ভীষণ ভাবে দূবল সে আপনার কাছে। আর আপনি সেই দূর্বল জায়গায় বার বার আঘাত করছেন।
তীব্র আবারো একটু থেমে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে রিদির দিকে তাকিয়ে বলে,আমি নিজের জিনিস অন্য কারো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রাখি। আমার ব্যবহৄত টিস্যু ও অন্য কেউ ব্যাবহার করার সাহস পায় না।আমি যদি আমার সামান্য টিস্যু নিয়ে এতো পজেসিভ হই।তাহলে!!তাহলে আপনার মধ্যে আমার জান আছে সেটা নিয়ে আমি কতোটা পসেসিভ হতে পারি! আবার আমার জানের মধ্যে ছোট্ট একটা প্রান আছে সেই প্রান টাও আমার।গলা ধরে এলো তীব্রর। ধরা গলায় বলল আমি ঐ প্রানটাকে চাই।খুব করে চাই !!!

কিন্তু দেখেন আপনি বুঝছেন না আমাকে।জেদ করে বসে আছেন। বাচ্চা চাই! বাচ্চা চাই!! একবারও ভাবছেন না আমার কথা।আপনি না থাকলে আমি কিভাবে থাকব!আপনি না থাকলে আমিও নাই।তাহলে এই বাচ্চা থাকবে কার কাছে!!অনাথ হয়ে যাবে না!আমি কিভাবে ওকে এই পৃথিবীতে একা রেখে যাব!!
আমার দুই প্রান টাকেই চাই।চাই মানে চাই! কিন্তু আপনি বলেন না,যে আমি সবার সাথে লড়তে পারলেও ভাগ্যের সাথে লড়তে পারব না।আর সেই ভাগ্য যদি আপনাকে নিয়ে নেয়।তখন!!! আবারো গলা ধরে এলো তীব্রর।নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে!আজ যেন তার কথা গোলমাল পাকছে।কি বলছে কেন বলছে জানে না।তবে বলতে ইচ্ছে করছে।সব সময় সাজিয়ে কথা বলা মানুষটা আজ ছন্নছাড়া কথা বলছে।মনের ভেতর অস্থিরতা টের পাচ্ছে।কি করবে সে?
তীব্র জানালার বাইরে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।নিজেকে এতোটা অসহায় কোন দিন লাগে নি তীব্রর। আবারো রিদির দিকে চোখ যেতেই দেখে রিদি হেলে পড়ছে।তীব্র দ্রুত উঠে রিদির পাশে বসেই মাথা এসে তার কাধের সাথে লাগে। তীব্র রিদিকে না দেখে আবারো চাইল আকাশের দিকে।একটু পর রিদিকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিল।

কারো ডাকে ঘুম ভাঙ্গে রিদির।চোখ খুলে রুপ কে দেখে অবাক হয়ে বলে,
দরজা কিভাবে খুললে??
রুপ মুচকি হেসে বলে,
তীব্র খুলেছে!আমি না!
রিদি চট করে নিজের অবস্থান দেখে বুঝল তীব্র এসেছিল।চোখ ছলছল করে উঠল রিদির।
আপু তীব্র কোথায়??
বেরিয়ে গেল কিছুক্ষণ আগে। যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেল তোকে রাতের খাবার খাইয়ে দিতে।এই অবস্থায় না খেয়ে থাকা ঠিক হবে না।
রিদি কিছু বলার আগেই দাদি আর আমির ঢুকে।সবাই একদম নিশ্চুপ।চেয়েও পারছেনা স্বাভাবিক হতে।আমির রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

খেয়ে নে মা!!
রিদি ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয়।
তীব্র কোথায় মামা!!
আমির ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,
বাইরে যাইনি।হয়তো ওর বিল্ডিং এ আছে।না খেয়ে থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বি।খেয়ে নে।সবার জোরাজুরিতে দু লোকমা মুখে দিলেও এরবেশি গলা দিয়ে খাবার নামল না। মন চাইছে তীব্রর বুকে মাথা রেখে শান্তিতে থাকতে।ছটফট করছে ভেতরটা।হুট করেই যেন কোথা থেকে ভেসে আসছে গিটারের সুর।এই বাড়িতে তো কেউ গান করে বলে জানা নেই রিদির।তবে আমিরের কথায় অবাক হয়ে তাকালো রিদি,
আম্মা তীব্রর গিটারের সুর এটা !!দাদি হচকচিয়ে তাকাল আমিরের দিকে। হ্যাঁ!!

রুপা অবাক হয়ে বলে,
তীব্র গিটার বাজায়!!!
আমির আফসোসের সুরে বলে,
গানও করত!!
গান!!!!
হুম গান।ওর মায়ের থেকে পাওয়া সুর ওর।তিশাও অনেক ভালো গান গাইত। তীব্র মেডিক্যাল এর স্টুডেন্ট হয়েও গানে তার খ্যাতি ছিল ভাসিটি জুরে। বিভিন্ন ফাংশনে গানের জন্য ডাকা হলেও তীব্র যেত না।গান তার ভাললাগা ছিল সে এটাকে প্রফেশন করতে চায় নি।যখন ভালোলাগত তখন গিটার তুলে গান গাইত। কিন্তু তিশা মারা যাওয়ার পর তীব্রর ভালোলাগা গিটার ও পড়ে রইলো অন্ধকার স্টোর রুমে।
সব শুনে রুপ অবাক হল।আর কতো রুপ আছে এই ছেলের। আল্লাহ কি সব ট্যালেন্ট এই ছেলেকেই দিয়েছে। রুপ ভাবনা থেকে বেরিয়ে রিদির দিকে তাকিয়ে দেখল রিদি নেই।রুপ খুজল না।সে জানে গিটারের সুর তাকে কোথায় নিয়ে গেছে।
রিদি তীব্রর ৩ তালা বিল্ডিং এর ছাদে এসে থামে।কি মারাত্মক কন্ঠস্বর।

“🎶🎶🎶🎶🎶🎶🎶
“”ওরে
ইচ্ছে করে বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখি তারে
(গানের গলায় যেন আবেগ মেশানো)
যেন ,না পারে সে যেতে আমায় কোনদিনও ছেড়ে
(রিদি যেন বুঝতে পারছে তীব্রর কষ্টের কথা)
আমি এই জগতে তারে ছাড়া
থাকবো না গো থাকবো না …..
(রিদি ধীর পায়ে এগিয়ে এলো কিছুটা)
তারে একজনমে ভালোবেসে
ভরবে না মন ভরবে না 🎶🎶🎶🎶

আপনাতেই আমি পর্ব ৪৪

তীব্র এইটুকু গেয়েই থেমে গেল ।থেমে গেল না বাধ্য হয়ে থামল ছুটে এসে জরিয়ে ধরা মেয়েটাকে ধরতে গিয়ে গিটার টা নিচে পড়ে গেল। বন্ধ হলো গান।তীব্র কিছুটা ছাদের ধার ঘেষে বসে ছিল।রিদিকে বুকে শক্ত হাতে জরিয়ে সরে আসে তীব্র। ধারনা ছিল না রিদি আসবে,
আমাদের বাচ্চা কে মেরে ফেলবেন না তীব্র!!প্লিজ!
কথাটা কলিজায় গিয়ে লাগল তীব্রর।বাধন একটু শক্ত করে বসে রইল সেভাবে।সে চাইলেও তো পারবে না।মায়াপরির মায়ায় সে বাধ্য।
ইসসস দুনিয়াতে এতো মায়া কেন!!আগের তীব্র ই তো ভালো ছিল। এখানকার তীব্রর মাঝে তো মায়ায় ভরপুর। যদিও তা অন্য জায়গায় খাটে না।এই এক জায়গায় এসেই থেমে যায় সে।

আপনাতেই আমি পর্ব ৪৬