আপনাতেই আমি পর্ব ৪৮
ইশিকা ইসলাম ইশা
দেখতে দেখতে সময় এসে ঠেকেছে ৮ মাসে।রিদির বর্তমানে চলছে আট মাস।ভারী পেট নিয়ে পরিক্ষার কক্ষে প্রবেশ করতেই এগিয়ে আসে মেঘ -আয়ান। আয়ান ক্ষিপ্ত মেজাজে বলে,
আয়ান:তোর পরিক্ষাটা না দিলে কি চলছিল না রিদু?এই সিরিয়াস সময়ে তোকে কেন এলাও করল তীব্র স্যার সেটাই বুঝছি না।১বছর পর ডাক্তার হলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত না!!
মেঘ: আয়ান ঠিক বলেছে রিদু!!
রিদি:আর কতো সুবিধা নেব বল তো!নোটস সহ বাকি সব বাসায় বসেই পেয়ে গেছি। পরিক্ষা না দিলে সব কষ্ট বৃথা যাবে!!
মেঘ:তাই বলে এই অবস্থায়!!বড় ব্যাপার!! ভাইয়া তোকে এলাও করল!!!
রিদি:তোর মনে হয় ওনি আমাকে এলাও করবে!অনেক খাটাখাটুনি পর মেনেছে।
মেঘ আয়ান আরো কিছু বলার আগেই সেখানে তিনজন টিচার উপস্থিত হয়।তার মধ্যে তীব্র আছে।রিদির জন্য তীব্র আলাদা বসার ব্যবস্থা করেছে একই রুমে সিরিয়াল অনুসারে হলেও রিদির চেয়ার আলাদা। রিদি নিজের জায়গায় বসতেই খাতা দেওয়া শুরু হয়।ঐকটু পরে প্রশ্ন ও দেওয়া হয়। প্রশ্ন দেখে রিদি ভু কুঁচকে তাকাল।সব প্রশ্ন তার পড়া।রিদি লিখা শুরু করতেই আশেপাশের ফিসফিস কথা শুনে অবাক চোখে তাকাল তাদের দিকে।
বরের হসপিটাল যেহেতু নিশ্চয় প্রশ্ন আগেই পেয়েছে!!
দেখছিস না পেয়েই লেখা শুরু করে দিয়েছে!
এমন ঢং করে আবার পরিক্ষা দিতে আসার কি হয়েছে?সে তো এমনিতেই পাশ!!
হ্যা ভবিষ্যতের অটোপাশ ডক্টর!!
চেয়ার দেখেছিস!!একদয় আরাম দায়ক চেয়ার দিয়েছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরো অনেক কিছু বলছে তবে রিদির আর শুনতে ইচ্ছে হলো না।নিজেকে শক্ত করে লেখায় মনোযোগ দিল।তবে মানুষ তো!!চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোটা পানি যা গিয়ে পড়ল খাতার ওপর। সাবধানে চোখের পানি মুছে মাথা নিচু করে লেখায় মন দিল। কিন্তু এতো সাবধানতার পরেই কারো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আটকে গেল।ভেজা চোখ মূহুর্তের মাঝেই এলোমেলো করে দিল তীব্রকে । আশেপাশের ফিসফিসানি তীব্রর কানেও এসেছে।সে চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে।পারলে এখুনি গিয়ে চারটা চর বসিয়ে আসত মেয়েগুলাকে।তীব্রকে আড়চোখে একবার দেখল ডঃ আশিক মাহমুদ।ডঃআশিক একজন বুদ্ধিমান ডক্টর আশেপাশে ফিসফিসানি তার কানেও এসেছে। তীব্রর রাগ সম্পর্কে তার ধারনা আছে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সে শক্ত মুখে বসা তীব্র কে আরো একবার দেখে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
সবাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বজায় রাখুন!আর আপনাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা। হসপিটালের প্রশ্ন কখনো আজ পর্যন্ত পরিক্ষার আগে কেউ পায় নি।সেই যে ব্যাক্তি ই হোক না কেন!!এগুলো আগে ডঃ তীব্র চৌধুরীর হেফাজতে থাকলেও তিনি এবার প্রশ্নপত্রের দায়িত্ব থেকে দূরে থেকেছেন।কারন টা আপনাদের জন্যই।আপনাদের সাথেই পরিক্ষা দিচ্ছে ওনার স্ত্রী মিসেস রিদিতা তীব্র চৌধুরী। বিষয়টি নিশ্চয় বুঝেছেন!!তাই শান্তি পূর্ণ পরিবেশে পরিক্ষা দিবেন আশা করছি।
সবাই একবার রিদিতা আর তীব্র কে দেখে লেখায় মনোযোগ দিল।তাদের ফিসফিসানি যে স্যারদের কানে যাবে আশা করেনি। তীব্র সবকিছু মনিটর করে বেরিয়ে গেল।তার কাজ ছিল এতটুকুই। এখন নিজের রুমে বসে পরিক্ষা রুমের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছে।চেক বলতে রিদিকে দেখছে শুধু।মেয়েটা লেখায় ব্যাস্ত।তীব্র চাইলেই রিদিকে সব সুবিধা দিতে পারত তবে রিদি চাইনি সেসব। যেখানে তার জীবন আছে ঝুকিতে সেখানে সে পরিক্ষা দিচ্ছে।
ক্লাসে তীব্র আসতে না দিলেও আয়ান মেঘের কাছে থেকে নোট নিয়ে পড়েছে রিদি।তীব্র চাইলেই প্রশ্ন এনে দিতে পারতো কিন্তু এতে সবার প্রতি অন্যায় করা হবে।তাই সে এসব এর দায়িত্ব থেকেই দূরে থেকেছে।যেন এটা নিয়ে কারো মাঝে কোন অযাচিত কথা না হয় অথচ হলো তাই।
পরিক্ষার খাতা নিতেই রিদি চেয়ারে আরাম করে বসল। মেঘ আয়ান দুইজনেই এসে রিদির পাশে বসল।
আয়ান:ওরা যখন বলছিল তখন চুপ করে ছিলি কেন??বলতে পারিস নি কিছু!
মেঘ:তোর উ…….
মেঘ কিছু বলার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় তীব্র।বসা অবস্থায়ই রিদির হাতে জুসের গ্লাস ধরিয়ে দেয় তীব্র। রিদি অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে তীব্রর দিকে।সেদিকে তীব্রর কোন ধ্যান নেই।সে প্রেসার মাপতে ব্যস্ত।
বুঝলে আয়ান কিছু মানুষ শুধু আমার সাথেই পারে। বাকি সবার বেলায় তো সে ধোয়া তুলসী পাতা।
তীব্রর কথার মানে বুঝে আয়ান হেসে তাকালো রিদির দিকে।মেয়েটাকে যেন আরো বেশি মায়াবী লাগছে। অনেক দিন দেখা হয়নি রিদিকে।সে অন্য কারো এটা মন মানতে চাই না এখনো। আয়ান গোপনে একটা শ্বাস ফেলে বলল,
ঠিক বলেছেন স্যার!!!মেয়েরা এমনি সাজে যেন ভাজা মাছ উলটে খেতে পারে না।পারে শুধু কাঁদতে। কাঁদতে দিন এদের।এরা সেদিকে এক্সপার্ট।
রিদি কটমট করে বলল,
মেঘ তুই কিছু বলছিস না কেন?
তীব্র:মেঘ কি বলবে!!চল কিছুক্ষণ রেস্ট করে বাসায় যেতে হবে।রিদি কটমট করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে উঠে দাড়াতেই তীব্র কোলে তুলে নেয়।রিদি হতভম্ব হয়ে তীব্রর দিকে তাকিয়ে আছে।রিদি কিছু বলার আগে তীব্র বলে।
আয়ান মেঘলা তোমাদের বান্ধবী লজ্জা পাচ্ছে!!অথচ দিনে ঘণ্টায় ঘন্টায় আমার কোলে উঠে বসে থাকে।
মেঘলা হো হো করে হেসে উঠল।রিদি তীব্রর কথায় লজ্জায় আরষ্ট হয়ে মিয়িয়ে গেল।তীব্র রিদিকে লজ্জা পেতে দেখে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।যাক মন অন্যদিকে ঘুরেছছ।কেবিনে আসতেই রিদিকে চেয়ারে বসিয়ে দেয় তীব্র।কোন কথা ছাড়াই অন্য চেয়ারে বসে রিদির পা নিজের কোলে তুলে নেয়।
আরে কি করেছেন??
যা রোজ করি!!
এখন আমরা হসপিটালে!!
তো!!!!
তো??তো কি? মানুষ দেখলে কি ভাববে?
কোথায় মানুষ??
না মানে বলছিলাম!
কি বলছিলে??
ভালোবাসি।
তীব্র হেসে উঠলো।প্রানখোলা হাসি।এই হাসি দেখলে দুনিয়ার সব কষ্ট দূর হয়ে যায় রিদির।রিদি ফটাফট তীব্রর ঠোট ঠোট ছোয়াল।তীব্র অসহায়ের মতো করে বলল,
এতো ছোট স্পর্শ কেন!!
হু!!এই টুকুই পাবেন!
বেবিটা আসতে দাও।তোমাকে তো আমি দেখে নিব।সুযোগে সদ ব্যাবহার তাই না!!
হু। আমিও দেখে নিব!!
তীব্র রিদির দিকে তখনকার জুসের গ্লাস দিয়ে বলে।জলদি খেয়ে নিন।বলেই রিদির ফুলে যাওয়া পা জোড়া আলতো হাতে মালিশ করতে লাগল।রিদি খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তীব্রকে দেখছে এই কয় মাসে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে তীব্রর।চোখের নিচে কালি জমেছে।কতো নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে তার জন্য।হারানোর ভয়ে জেগে থেকেছে।ইসসস রাজকপাল রিদির।
আপনাতেই আমি পর্ব ৪৭
রিদির ভাবনার মাঝেই তীব্রর কাজে হতভম্ব হয়ে গেল।লোকটা সবসময় এমন করে। অসভ্য পুরুষ!!
একটু পরে রিদিকে ছেড়ে ঠোট মুছে নিজের জায়গায় বসে তীব্র।
জলদি ফিনিস করেন!না হয় আমি খাওয়াতে জানি।
রিদি মুখ ফুলিয়ে জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে মুখে তোলে।মনে মনে খাবার নিয়ে অত্যাচার করার জন্য হাজারটা বকাবকি করছে।তীব্র রিদির বিরবিরানি দেখে মুচকি হাসল।