আপনাতেই আমি পর্ব ৫
ইশিকা ইসলাম ইশা
তুমুল ঝগড়ার এক পর্যায়ে রিদকে টেনে নিয়ে আসে রাদিফ।রিদ বোনের গলার দিকে তাকিয়ে তেড়ে যেতে চাইলো তীব্রর কাছে।আমেনা বেগম হুংকার দিয়ে বলে,
খবরদার রিদ তোর জন্য যদি রুপালির বিয়ে ভাঙ্গে আমি এই কালোকুটি কে বের করে দেব ঐ বাড়ি থেকে।এই কালি মরেও না ঘাটাও ছাড়ে না।তোর জন্য যদি রুপালি কষ্ট পায় তোকে আমি ছাড়ব না।
ছিইইইইই…..
শত মা ও আপনার মতো হয় না চাচি।মেয়ে না হয়, মানুষ ই মনে করেন।আজ যদি রিদির জায়গায় রুপালির সাথে এমন হতো মেনে নিতেন?
রিদ তাচ্ছিল্য হাসে কাকে কি বলছ ভাইয়া!
মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানো রিদি কে নিয়ে কোথাও দূরে চলে যায়।এমন মা যার আছে তার তো শ্বাস নেওয়াও কঠিন।রাদিফ তাকালো রিদের দিকে।রিদ বেশ বুঝদার ছেলে বয়স কম হলেও বেশ বুদ্ধিমান।
আজ রাতটা তোমার ফ্লাটে থাকব আমি আর রিদি। সকালে বাসায় ফিরে যাব। কিন্তু এখানে আর একমহুর্ত ও থাকব না।রিদি তোর কাপড় নিয়ে আয়।রিদি ভয়ে ভয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। রিদিকে মায়ের দিকে তাকানো দেখে রিদ বিরক্ত হলো।নিজে সবজামা ব্যাগে ভরে নিল।রিদ রুপালি কাছে আসে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলে,
আমি তোর খারাপ চাইবো না রুপ।তবে নিজের চোখে এতো কিছু দেখে তুই যদি তার সাথে থাকতে চাস আমি মানা করব না।তবে আমি কখনো তীব্র চৌধুরীরে ক্ষমা করব না।আর না কখনো রিদি বা আমি এই বাড়িতে আসব। রুপালি চমকে তাকালো ভাইয়ের দিকে।রিদ আর সে একই বয়সের হলেও রিদ সবসময় বড় ভাইয়ের মতো থেকেছে। বিশেষ করে রিদির ক্ষেএে।আর রিদ যা বলে তা করেই ছাড়ে।রুপালি টলমল চোখে তাকালো ভাইয়ের দিকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমির চৌধুরী নিশ্চুপ হয়ে রিদের কথা শুনছে।তার কি বলার আছে।অন্যায় তো তার।তার ছেলের।রিদ এবার এগুলো মামার দিকে।প্রথম দিনেই বুঝেছে লোকটা ভালো।তাই তো বিয়েতে রিদির সাথে আসতে হয়েছে তাকে।ভেবেছিল এখানে হয়তো মানুষ গুলো রিদিকে অপমান করবে না। কিন্তু এখানে অপমান আর কি আঘাত করতেও ছাড়ে নি।
মামা আমি জানি আপনি রিদিকে মেয়ের মতো ভালোবাসেন। কিন্তু রিদি এখানে সেভ না।আর না আমি এখানে ওকে রাখতে চায়।বাবা নেই,মা থেকেও নেই,আমি ছাড়া ওর কেউ নেই। কথাটা যেন কোথাও গিয়ে বিধল আমির চৌধুরীর।রিদ বলল বোনকে আমি ভীষন ভালোবাসি আমি ওর জীবন রিস্ক এ রাখতে চায় না।তাই চলে যাচ্ছি।আর কখনো এই বাড়ির মুখো হবো না।আমাকে মাফ করবেন।তবে আমার বোন কথাটা ঠিক বলেছে,” রক্ত কথা বলে” বলেই মায়ের দিকে তাকালো রিদ।আমেনা কটমট করে তাকিয়ে আছে।রিদ রিদির হাত ধরে টেনে বের হতেই নজরে আসে সদর দরজায় দাড়ানো তীব্র কে।তীব্র দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।যেন এখানে কোন নাটক চলছিল আর সে দর্শক এর ভুমিকা পালন করছে।।রাদিফ তীব্র কে দেখে রেগে যাই।তেড়ে যেতে চাইলে রিদি ঝট করেই রাদিফের হাত ধরে ফেলে।রাদিফ তাকায় ধরে রাখা হাতের দিকে সাথে তাকাই তীব্র ও। রাদিফ চোখ তুলে তাকায় রিদির মুখের দিকে।মাথা নেড়ে না বোঝাচ্ছে।রাদিফ রাগে কটমট করতে করতে বের হতে হতে রিদ কে বলে,
রিদ আমি বাইরে ওয়েট করছি।
রিদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তীব্রর দিকে।তবে তীব্রর দৃষ্টি রিদির হাতের দিকে।সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রিদির হাত দেখছে।রিদ চোখ সরিয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে অন্য হাতে রিদির হাত ধরে। দরজায় এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে তীব্র।কিছুটা এলোমেলোও লাগছে তীব্রকে।রিদ রিদিতাকে নিয়ে হেটে তীব্র কে ক্রস করে এগিয়ে যেতে থাকে।তীব্র ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে রিদিতার যাওয়া।
রাত তখন ১.৪০,
রাদিফের বাসায় পৌঁছেছে ওরা।রিদ বোনকে রুমে রেখে ফ্রেশ হতে বলে।রিদিতা কাপড় চেঞ্জ করে ধপ করেই শুয়ে পড়ে বেডে।না শরীর আর চলছে না মন!!
কোন কিছু যেন সায় দিচ্ছে না।চোখে ঝরছে শুধু নোনাজল।তার ভাগ্যে একটু ভালো হলে কি এমন ক্ষতি হতো। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে আসে।একটু শান্তির আশায়।
পাল্টায়,রং বদলায়।দিন পেরিয়ে মাস,মাস পেরিয়ে বছর সময় তার নিজস্ব গতিতে চলতে থাকে।সময় কোন কষ্টের জন্য থেমে থাকে না।গতি কমিয়েও দেয় না।কাটায় কাটায় আজ প্রায় ১৮ মাস পেরিয়েছে মানে দের বছর।শীত আবারো ধরনীতে ফিরে এসেছে।সময় যেমন পেরিয়েছে বদলেছে মানুষ। এসএসসি পর এখন কলেজে পড়ছে রিদিতা।এইতো এইবার এইচএসসি দিবে।রিদ এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।রুপালি বিয়ে করে সংসার নিয়ে ব্যস্ত।রাদিফ সেই আগের মতোই আছে। বড়চাচি চাইলেও ছেলেকে বিয়ে দিতে পারে নি। তবে রাদিফ এর অব্যাক্ত ভালবাসা আজও অজানা রিদিতার।রাদিফ খুব সাবধানে নিজেকে সামলে রেখেছে।প্রিয় মানুষটার এক ঝলক দেখেই মন শান্ত করছে।ছোট চাচীর মেয়ের ও বিয়ে হয়েছে।
বাড়িতে আজ রান্নার ধুম পড়েছে দের বছর পর আজ বাড়িতে আসছে রুপালি।দের বছরে বোনের সাথে হাতে গুনা ৪-৫বার কথা হয়েছে।কথা রিদি বললেও এড়িয়ে চলেছে রুপালি। কারন জানে না রিদি আর না জানতে চাই। থাক কিছু অজানা।ভালো আছে সুখে আছে এটাই বড় কথা।তবে কষ্ট হয় ভীষন কষ্ট হয় যখন হাতে গোনা আপন কয়েকজন তাকে এভাবে দূরে সরিয়ে দেয়।তবুও মেনে নিয়েছে রিদিতা।না মেনে উপায় কি তার।
বোনের পছন্দের সব খাবার রান্না করে রেখেছে।রিদ তাকে পড়াশুনা ছাড়া কোনকিছু করতে বারন করেছে।রিদ !!! ও হ্যা রিদের ও অনেক পরিবর্তন হয়েছে।রিদ এখন ঢাকায় থাকে। পড়ালেখার পাশাপাশি রাদিফের সাথে অফিসেও বসে।সাথে পরিবর্তন হয়েছে আমেনা বেগমের ,আমেনা বেগম এখন আর আগের মতো রিদিকে মারধর, গালিগালাজ করে না।
চৌধুরী বাড়ি থেকে রিদিতা আসার প্রায় মাসখানেক পর আসে আমেনা বেগম। কিন্তু রূপালিকে আনে না।একাই আসে।রুপালির নাকি ও বাড়িতে থাকা জরুরি এখন তাই ও ওখানেই থাকবে।এ নিয়ে কেউ কিছু বলে নি আমেনা কে।কেউ বললেও আমেনা শুনবে না।এরপর থেকে খুব একটা ঘাটায় না রিদিকে।রিদিও আগের মতো মা,মা করে না দূরেই থাকে।
বড়চাচি:রান্না শেষ হয়েছে…..
রিদিতা:হুম চাচী…..
ছোটচাচি:এই রিদি আমার মেয়েটার জন্য ওর পছন্দের হালুয়া করেছিস কি?? আমার মেয়ে ও শশুর বাড়ী থেকে ১মাস পর আসবে আজ।
রিদিতা:জি চাচি……
বড়চাচি চলে আসতে চাইলে ডাক পড়ে রাদিফের।কফি খাবে সে।রিদিতা রাদিফের কফি করেই রেখেছিল।সেটা চাচির হাতে দেয়।বড়চাচি অবাক হলেও কিছু না বলে কফিটা নিয়ে চলে যায়।সামনে আসতেই নজরে আসে রাদিফের হাসোজ্জল মুখশ্রী।সে সবটাই আড়ালে থেকে দেখেছে।বড়চাচির থেকে কফি নিয়ে যেতে যেতে বলে,
ধন্যবাদ।
বড়চাচি রাদিফের হাসোজ্জল মুখশ্রী দেখে খুশি হতে পারল না।সব মা ই ছেলের ভালো চাই। রাদিফের ভালো রিদিতার সাথে কখনোই হবে না। কারণটা আমেনা বেগম। তিনি জানেন আমেনা ভয়ংকর মহিলা।তাই তো ছেলে রিদিকে ভালোবাসেও তাই তিনি নিজের কসম দিয়ে আটকে রেখেছে। তিনি হয়তো জানেনা কসম দিয়ে হাত,পা বাঁধা যায়! মন কি বাঁধা যায়।মন তো তার মতোই রিদি কে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে চেঁচিয়ে উঠে।বড়চাচি রিদিকে জেরা করে বলল,
তুই রাদিফের কফি করলি কেন??রাদিফ আমার হাত ছাড়া কারো হাতের কফি খায় না তুই জানিস না!
রিদি থতমত খেয়ে গেল।সে কি এমন ভুল করল বুঝলো না।
আসলে চাচি আপনার শরীর খারাপ।ডাক্তার তো আপনাকে গরমে আসতে মানা করেছে।তাছাড়া আমি তো রান্না করছিলাম ই তাই!!
বড়চাচি তাকালো রিদির মুখের দিকে।মেয়েটাকে এভাবে বলা উচিত হয়নি।এমনিতেই মেয়টাকে বাড়ির কেউ তেমন পছন্দ করে না। আচ্ছা কাজ কর।বলে তিনি চলে গেল।
রুপালি ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। খুব সাবধানে এসে সোফায় বসেছে।মেয়েকে কাছে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে উঠেছেন আমেনা।রিদি দূর থেকে বোনকে দেখছে রুপালির রুপ যেন শতধিক বেড়েছে।কি সুন্দর লাগছে। তীব্র ভাই আর আপু দুইজনের বাচ্চা নিশ্চয় ভীষন সুন্দর হবে।মনে মনে ভীষণ খুশি হল।রিদিতা দূর থেকে তীর কে দেখল ধীর পায়ে এসে বসল রুপালির পাশে।রুপালি মুচকি হাসল।আমেনা নানা রকমের নাস্তা হাজির করল সামনে। তা দেখে ভু কুঁচকে তাকাই রিদি।রিদি নিজে তো সব আলাদা সাজিয়ে রেখেছিল।সেটা না দিয়ে এগুলো নতুন করে নিয়ে এসেছে কেন?? আচ্ছা দেখতে পায় নি নাকি তার রাখা নাস্তা গুলো!
এই পুচি শোন!(পুচি মিজা বাড়ির কাজের মেয়ের মেয়ে)
হ আপা কন????
পুচি আমি যে সব রেডি করে রেখেছি সেটা দেয় নি কেন??
মেজ চাচি কইছে রুপালি আপার পোলা নাকি কালা হয়বো তাই আপনার হাতের কিছু দিতে হেই না করছে!!
ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল পুচির দিকে।না চাইতেও গড়িয়ে পড়ল পানি।
কাইদেন না আপা…
আমিও তো আপনার চাইতে মেলা কালা।তই আমারে তো দিবার মানা করে নাই।হুনেন আপা মেজচাচি আপনার নিজের মা না।হইলে এমনে কইত না!!
অবাক চোখে তাকাই রিদি পুচির দিকে…
আসলেও কি তাই!!!মা তো প্রায় বলে তাহলে কি আমি !!!!!!রিদির বুক কাঁপল কথাটা ভেবে।
আমার মা আমারে আবার মেলা ভালোবাসে আপা।হেই কয় আপনার মতো ভালা মানুষ হইতে।আপনে কত ভালা গান করেন।কতো ভালা রান্না করেন। পড়াশুনা কতো ভালা।আরো কতো গুন আপনের।হেই গুন তো মেজ চাচির ও নাই।
রিদিতা নিজেকে সামলে পুচির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
মায়ের আদর কেমন হয় রে পুচি??
অনেক ভালা আপা!!মুই তো আম্মার কোলে হুইয়া আকাশের চাঁদ দেখতে দেখতে কখন ঘুমাইয়া যায়।আম্মা আমারে অনেক আদর করে আপা!!
আচ্ছা যা।আমি রুমে যাই।আর শোন আজ সব পড়া করে তবেই আসবি ক্লাসে বুঝলি।
হ আপা!!
রিদি হাসলো,
হ আপা না,হুম আপু।
হুম আপা…
থুক্কু আপু।তই আমি যাই।
আপনাতেই আমি পর্ব ৪
পুচি চলে যেতেই রিদি রুমে চলে আসে।কা্না আসলেও তা দমিয়ে রাখে রিদি।না শক্ত হতে হবে। কথাগুলো নিজ মনে বলে পড়ার টেবিলে বসে ।এদিকে খেয়াল ও করল না।রুপালির সাথে তীব্রর জায়গায় তীর ভাইয়াকে।