আপনাতেই আমি পর্ব ৬২
ইশিকা ইসলাম ইশা
সবেই সূযিমামা উদয় হয়েছে ধরনী জুড়ে। চারদিকে তখন কিচিরমিচির আওয়াজ তুলে পাখিরা জানান দিচ্ছে সকাল হয়েছে।রিদির ঘুম কিছুটা হালকা হতেই হাত বাড়িয়ে রোজের গায়ে হাত দিল।তবে মনে হচ্ছে সে কোন শক্ত কিছুর সাথে অবদ্ধ।ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই নজরে আসল ঘুমন্ত রোজের মুখ।রিদি রোজের দিকে থেকে চোখ ফিরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে মাথা উঁচু করে একটু উপরে তাকাতেই নজরে এলো তীব্রর ঘুমন্ত মুখটা।রিদি একবার রোজ তো একবার তীব্র কে দেখল।হুট করেই মস্তিষ্ক সচল হতেই তীব্রর বুকে থেকে উঠতে চাইলে পারল না। শক্ত হাতের বাধন তার কোমর জরিয়ে ধরে আছে।রিদি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোচরামরচি করতেই তীব্র ঘুমন্ত কন্ঠে বলে,
এভাবে নড়চর করছেন কেন?বাবু উঠে যাবে।নিজে ঘুমান আমাদেরও ঘুমাতে দিন
তীব্রর কথায় রিদি রেগে বলল,
ছাড়ুন!!
তীব্র চোখ বন্ধ রেখেই ফিস ফিস করে বলল,
আস্তে আস্তে মেয়ে উঠে যাবে!
আপনি এখানে কেন??
তীব্র এবার চোখ খুলে রিদির দিকে তাকালো,
তো কোথায় থাকব!!
রিদি কটমট করে বলে,
অসভ্যর মতো জরিয়ে আছেন কেন ছাড়ুন!! যেখানে ইচ্ছা সেখানে থাকেন।খবরদার আমাদের আশেপাশে আসবেন না!!
কথাটা বলতেই রিদির চোখে পানি টলমল করল!তীব্র সেই টলমলে দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল। একগুচ্ছ অভিমান আর রাগের আভাস পেলেও রিদির চোখে তার জন্য ঘৃনা দেখছে না।তীব্র হাসলো!!এতো কিছুর পরে তো রিদির চোখে তার জন্য ঘৃনা থাকার কথা কিন্তু ঐ ডাগর ডাগর চোখে তার প্রতি তীব্র অভিমান আর ব্যাথিত হৃদয়ের অতনাদ দেখতে পাচ্ছে তীব্র।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তীব্র রিদির কথায় কোমরে চাপ একটু জোরালো করে বলল,
যেখানে ইচ্ছা সেখানেই তো আছি!!
তীব্রর এমন খামখেয়ালি কথায় রিদির রাগ, অভিমান , অভিযোগ মিলিয়ে মিশ্র অনুভূতির বেড়াজালে রাগ কে জিতিয়ে বলল,
খবরদার ছুঁবেন না আমাকে!!
কথাটা বলে রিদি নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।তীব্র ,রিদির এই নরচরে নড়ে উঠলো রোজ।তীব্র এবার দুই হাতে মেয়েকে বুকে ভালোভাবে জরিয়ে নিল।বাবার বুকের উষ্ণতায় আবারো ঘুমিয়ে পড়ল রোজ।রিদি রোজের ঘুম ভাঙ্গাতে চাই না! কিন্তু তাকে তীব্রর বিষয়টা ভাবাচ্ছে।রোজ তো সে ছাড়া কারো কাছে ঘুমায় না তবে তখন তীব্রর কোলে কেন শান্ত হয়ে গেল,এখন তীব্রর বুকে কি আরামে ঘুমাচ্ছে।তখন তীব্র হুট করে কোথায় থেকে এলো? আবার রোজের ব্যাথা পাওয়ার বিষয়টি কিভাবে জানল?রুম লক ছিল!তাহলে চাবি কোথায় পেল?? সবচেয়ে বড় ব্যাপার রোজের প্রতি তীব্রর এতো ভালোবাসা কেন?যেন তার মেয়ে!!সব ভেবে রিদির অসহ্য লাগছে।তবে কিছু জিজ্ঞেস করতেও পারছে না!রোজের আচমকা ঘুম ভাঙ্গলে কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়ে পড়বে।রিদি যতটুকু বুঝে মেয়ে তার মিষ্টি হলেও প্রচুর জেদি। তাই শত রাগ নিয়ে বাইরে বের হতে গিয়েও হলো না। বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।বেলকনিতে দেওয়া পদা টেনে ফ্লোরে বসে পড়লো দেওয়াল ঘিসে।সব কিছু অসহ্য লাগছে তার!বিশেষ করে তীব্রর অচারন।এমন ভাব ধরছে যেন তারা সুখে সংসার করছে।রিদির রাগ বাড়ছে। ছদ্মবেশীর সাথে মুখোশধারী ও বটে।এবার সে কিছুতেই আর গলবে না।তবে কিছু প্রশ্নের জবাব তার চাই!!!
প্রায় অনেকটা সময় পর রিদি রুমে এসে দেখে তীব্রর বুকের উপর শুয়ে আছে রোজ।ঘুম ভেঙ্গে গেছে।দুপা দুপাশে দিয়ে তীব্রর দিকে তাকিয়ে হাসছে।রিদিকে দেখে তীব্রর কোল থেকেই রিদির দিকে মাথা কাত করে হাসছে।রিদি মেয়েকে দেখে তীব্রর উদ্দেশ্য বলে,
“কাল কারা রোজ কে কিডন্যাপ করতে এসেছিল??
তীব্র মেয়ের সাথে কথা বলতে বলতেই বলে,
“তেমন ইম্পর্ট্যান্ট কেউ না!
রিদি কটমট করে বলল,
“কিন্তু রোজ কে কেন কিডন্যাপ করতে চাই!!
তীব্র উওর করল না।সে ব্যস্ত মেয়ের সাথে।
রিদির রাগ হলো। তীব্র কখনো নিজ থেকে কিছুনা বললে কখনো সোজাসুজি কথা বলবে না জানে রিদি।
“তার মানে বলছেন যে সত্যি ওনি রোজ কে কিডন্যাপ করতে এসেছিল!!
তীব্র রোজের সাথে কথা বলতে বলতে আবারো বলে,
আপনিই তো বললেন!!
রিদির রাগ যেন তীব্র হলো অনেক ভেবেছে এতোক্ষণ সে তাই সোজাসুজিই প্রশ্ন করল,
রোজ কে??ওর আসল পরিচয় কি??
তীব্র এবার রিদির দিকে তাকিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
“সেটা তো আপনার জানার কথা!বাবু তো আপনার কাছে থাকে!
রিদি তীব্রর রগে রগে পরিচিত তাই কটমট করে বলল,
নাটক বন্ধ করেন! সোজাসুজি বলেন রোজ কে??
তীব্র একই ভঙ্গিতে বলে,
আমি কিভাবে জানব!! আশ্চর্য!!
তাহলে কাল রোজ কিডন্যাপ হওয়ার সাথে সাথে আপনি কোথা থেকে আসলেন?জানলেন কিভাবে আমাদের সিচুয়েশন এর কথা!!আর তখন রোজের পিঠের ক্ষতের কথাটাই বা কিভাবে জানলেন!! সবচেয়ে বড় কথা আমরা এই শহরে আছি সেটা কিভাবে জানলেন!!
তীব্র মনোযোগ দিয়ে রিদির কথা শুনে মেয়েকে কোলে নিয়ে বিছনায় বসে। রোজ কে বিছনায় শুইয়ে তাকালো রিদির দিকে। একধ্যানে রিদির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিদি কেপে উঠল।ঠিক প্রথম দিনের মতোই নেশাময় চাহনি।যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্ক্যান করে চলছে রিদিকে।রিদির অস্বস্তি না হলেও এমন চাহনিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। তীব্র বিছনার পাশে বালিশ দিয়ে রিদির কাছে এসে ওর শরীর ঘিসে দাড়ালো।মুহূতেই রিদির শরীর কেঁপে উঠলো। একহাত দিয়ে রিদির কোমর জড়িয়ে রিদির কানে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“আপনি এতো নেশাময়ী কেন জান! আপনার নেশা সব নেশাকে হার মানায়”
রিদির শরীর শিহরিত হল।থরথর করে কেঁপে উঠলো পুরো শরীর। কিন্তু পরক্ষনেই রিদি এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিয়ে রেগে বলল,
“খবরদার! খবরদার! মিস্টার তীব্র চৌধুরী!আমাকে সস্তা ভেবে ভুল করবেন না।যে শরীর অন্য নারী ছোঁয়া পেয়েছে ,যে মনে অন্য নারী প্রবেশ করতে পারে। না সে মন চাই ,আর না সে মানুষটাকে চাই।
ঘরে সুন্দরী বৌ রেখে বাইরের মেয়ের দিকে বাজে নজর দিয়া বন্ধ করুন।আপনি আপনার পরিবার নিয়ে সুখে থাকেন আর আমাকেও থাকতে দিন ।আমার থেকে দূরে থাকুন।এই দূরত্ব শেষ হবার না। আর না আপনি আমার মনের কোথাও আছেন!সব শেষ। আমি আমার রাস্তায় আপনি আপনার!
কথাটা বলেই আর এক সেকেন্ড ও না দাঁড়িয়ে রোজ কে কোলে করে বেরিয়ে যায় রিদি।বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে।কি অসহ্য যন্ত্রণা!যে মানুষটা তার জীবন ছিল।সেই মানুষটা আজ তার জীবন থেকে দূরে ”
এদিকে রিদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ধপ করে নিচে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে তীব্র। এলোমেলো চুল গুলো কপাল এসে পড়ে আছে। চোখের নীলাভ মনি হয়ে উঠেছে রক্ত লাল।যে নীলাভ চোখ সবার আকর্ষন কারে!! সেই নীলাভ চোখ হয়ে উঠে রক্ত লাল।হুট করেই তীব্র বাঁকা হাসল!!বিরবির করে বলল,
আপনার থেকে আর দূরে থাকলে আমি শেষ হয়ে যাব জান! আর আমি তো আমার রাস্তায় ই আছি। আমার রাস্তা চলাটা যে আপনাতেই শুরু আবার আপনাতেই শেষ।আর আর কি যেন বললেন,
আমি আপনার মনের কোথাও নেই!!হায়য়য়….
আপনার সবটা জুড়ে শুধু আমি আর আমিই।বলেই আবারো বাঁকা হাসল ”
তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পার হয়েছে!! কেটেছে দুটো দিন!রোজের পিঠের দাগটা অনেকটা কমে গেছে।রিদি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রোজ কে বুকে চেপে ধরে চোখ বুজল। ক্লান্ত সে!আজ হসপিটালে অনেক কাজ ছিল। হসপিটালে চিফ গেস্ট আসবে। আপাতত কিছুদিন এই হসপিটালে কর্মরত থাকবে।মেজর কিছু অপারেশন তিনি নিজে এসে করবেন বলে জানিয়েছেন।সাথে হসপিটালের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও নিয়ে আসবে।এতে চিকিৎসা কিছুটা উন্নতি হবে।গ্রামের এই হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা খুব বেশি ভালো না।আর আগত ডক্টরের সকল দায়িত্ব এসে পড়েছে রিদির কাঁধে।আজ ওনার জন্য রুম তৈরি করা হয়েছে।তিনি নাকি খুবই স্ট্রিট ।সব পারফেক্ট চাই।মনসুর আলী রিদিকে সবকিছুর দায়িত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে যে গেস্ট আসবে।
সকাল থেকেই ব্যস্ত রিদি।আজ শুক্রবার।রোজ কে খাইয়ে রেডি করিয়ে নীরের কোলে দিতেই খেয়াল করে নীর কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে আছে।রিদি দুদিন ধরে খেয়াল করছে নীর কিছুটা চুপচাপ হয়ে গেছে।কি হয়েছে তা জিজ্ঞেস করবে করবে করেও করা হয় না।রোজ একটু একটু বড় হচ্ছে আর জালাচ্ছেও বেশি।এখটুতেই চিরচিরা হয়ে যায়।তাই বেশি সময় রোজের পেছনেই চলে যায়।
কোন সমস্যা নীল??
নীল মলিন হেসে বলল,
নাতো আপু!!
আমাকে বল কি হয়েছে?? ভাইয়ের সাথে কিছু হয়েছে? সেদিন বিয়ে থেকে এসেই খেয়াল করছি তুই কেমন চুপচাপ হয়ে গেছিস?
নীর অবাক হয়ে রিদির দিকে তাকালো মূহূর্তেই চোখের পানি টলমল করে উঠল,
আমি আবারও ভুল মানুষকে মন দিয়ে বসলাম আপু!!
কি হয়েছে?বলবি তো?ভাইয়াকে তোর মনের কথা বলেছিস?
না!!তোমাকেও তো বলিনি!তুমি কিভাবে বুঝলা?
রিদি চোখের পানি মুছিয়ে মুচকি হেসে বলল,
অনেকদিন ধরে তোর সাথে আছি। তাই হয়তো তোর চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছি।
সবাই তোমার মতো কেন বোঝে না!!
কি হয়েছে সেটা তো বলবি!! ভাইয়া কি তোকে বকেছে??
নীর মাথা নাড়িয়ে না বুঝায়।
তাহলে???
নীর ভাঙ্গা গলায় বলে,
সেদিন বিয়েতে তুমি রোজ কে নিয়ে যাবার পর আয়ান ভাইয়া আর মেঘ আপুর বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। বিয়ে শেষ হতেই আমি তোমার কাছে যাওয়ার জন্য বাইরে আসতেই হুট করেই একটা মেয়ে এসে ওনাকে জরিয়ে ধরে।আর দুইজন খুব হেসে হেসে কথা বলছিল। আচ্ছা আপু তোমার ভাইয়ের কি কোন পছন্দ আছে??
আমি জানি না!এই ব্যাপারে ভাইয়া কখনো কিছু বলে নি। তবে আমার মনে হয় তুই যদি ভাইকে পছন্দ করিস তোর বলা উচিত।
বলে কি করব?? সে তো অন্য জনকে পছন্দ করে!বাদ দাও ভুল মানুষকে মন দেওয়ার অভিজ্ঞতা আমার পুরোনো।
ভুল মানুষকে মানে??
নীর তাচ্ছিল্য হেসে বলে।আমি তখন সবেই এস এস সি দিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছি।বাসা থেকে কলেজ দূরে হওয়াই রোজ বাসে যাতায়াত করতাম। আমার সাথে আরো একজন যাতায়াত করত!ওর নাম ছিল নীলয়। নীলিমা নীলয় কি মিল নামের তাই না। আমার সাথে একই কলেজে পড়ত কিন্তু আমার এক ব্যাচ সিনিয়র ছিল। একদিন বাসের মধ্যে কিছু ছেলে আমাকে বিরক্ত করছিল বলে নীলয় ওদের খুব মারে।এরপর থেকে টুকটাক কথা হতে থাকে আমাদের।এর আগে কখনো কথা হয়নি আমাদের।টুকটাক কথা থেকে বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্ব থেকে ভালবাসা!!নীলয় হুট করেই আমাকে একদিন প্রপোজ করে।আমিও যেহেতু মনে মনে পছন্দ করতাম তাই হ্যা বলে দি।আমাদের কথা দুই পরিবার সবাই জেনে যায় আর মেনেও নেয়। তখন আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি।নীলয় তখন মেডিকেল চান্স পেয়েছে।আমাদের মধ্যে সব ঠিকঠাকই চলছিল।দেখা না হলেও রোজ কলে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে কাটিয়ে দিতাম অথচ টের পেতাম না। এইটুকু বলে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো নীর।একটু পর আবার বলতে লাগল,
সেদিন রাতে আমি নীলয় কে কল করলে একজন পুরুষ কল রিসিভ করে বলে নীলয় এক্সিডেন্ট করেছে হসপিটালে ভর্তি এখন। আমার পুরো পৃথিবী থেমে গেছিল ঐ কথায়।হুট করেই কাউকে কিছু না বলে রাতেই বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু মাঝ রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।অটো চালক বলে সামনে গেলে একটা মোড় আছে সেখানে থেকে রিকশায় পেয়ে যাব।আমি তার কথা মতো কিছুদূর যেতেই দেখি কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।ভয়ে আমার আত্মা শুকিয়ে গেলেও সাহস নিয়ে ওদের পার করতে চাইলেও পারলাম না।ওদের মাঝে একজন আমার হাত টেনে ধরে।অনেক ধস্তাধস্তি করেও ছাড় পেলাম না।ওরা আমাকে জঙ্গলের কিছুটা ভেতরে নিয়ে গেল। আমার মুখ বাঁধা তখন।তবুও আমি চেষ্টা করতে থাকলাম বাঁচার জন্য।হাতের কাছে যা পেলাম ছুড়ে মারলাম। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারলাম না ওদের মধ্যে একজন আমার হাত পা ধরে আরেক জন বিশ্রী নজরে আমাকে দেখছিল।সাথে সাথে আমার ওপর হামলে পড়ে।আমার গলায় কামড়……….
রিদির চোখে পানি টলমল করছে। নিজেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল নীর কে।নীর একটু থেমে বলে,
ঠিক কয়েক সেকেন্ড পর দরজা ভেঙে রুমে ঢুকে ফুল কালো পোশাক পড়া একজন বলিষ্ঠ দেহী পুরুষ।আমি ভাবলাম উনি ও হয়তো তাদের দলের। সবাই হয়তো খুবলে খাবে আমাকে। কিন্তু না সেদিন সে ফেরেস্তা হয়ে এসেছিল।
ধরে আনা লোক গুলোর মধ্যে একজন বলে,
ঐ সালা কে রে তুই??সাহস কিভাবে হয় এখানে আসার!!জান বাঁচাতে চাইলে চলে যা!!
আরেক জন:এই সালা যাস না কেন??এখন একটু মজা করব যা!!
আমি ভয়ে ভয়ে লোকটার দিকে তাকালাম।ভেবে ছিলাম হয়তো লোকটা চলে যাবে। কিন্তু লোকটা তার গায়ের কালো হুডি খুলে আমাকে জরিয়ে দেয়। মাস্কের আড়ালে গম্ভীর স্বরে বলে,
আর ইউ ওকে??
আমি তখন ভয়ে চুপসে আছি।হুডিটা গায়ে টেনে গুটিয়ে বসলাম।লোকটা আশেপাশে তাকিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসল। বলিষ্ঠ দেহী পুরুষ লোকটা একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে।একজন তাকে আঘাত করার জন্য আসতেই বসা থেকেই হাত মুড়িয়ে ধরে। লোকটা চিৎকার করে উঠে।আমি এসব দেখে ভয়ে আরো গুটিয়ে বসলাম।তখন আমার চোখ দিয়ে আর পানি পড়ছে না।বরং বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে দেখলাম লোকটাকে।কি সুন্দর শান্ত ভাবে বসে থেকেই লোকটাকে মেরে ফেলল। শুধু হাত মুড়িয়ে গলার সাথে পেঁচিয়ে জোরে টান দিতেই সে বিভৎস চিৎকার দিয়ে প্রান হারায়।
বাকি দুইজন তখন ভয়ে ভয়ে বলল,
কে??কে তুই?
তোদের সাহস দেখে আমি অবাক হয়েছি।ভুল জায়গায় হাত দিয়েছিস!! আমার কলিজায় আঘাত করেছিস!তোদের জন্য আমার মায়াবতীর চোখ দিয়ে পানি পড়েছে। যার চোখের পানি সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।যার গায়ে ফুলের টোকা দিতেও আমি ভয় পায় তাকে তোরা আঘাত করার চেষ্টা করেছিস!!!!!
বলতে বলতেই ওদের মধ্যে একজনের বুকে চকচকে ছুড়ি ঢুকিয়ে দেয়।২সেকেন্ড মাএ দুই সেকেন্ড এ শেষ।যেন এসবে খুব দক্ষ।একটার দম বন্ধ হতেই হুট করেই অপর জনের গলা কেটে ফেলে।মাথা শরীর থেকে আলাদা করে ফেলে আমি ভয়ে চিৎকার করে উঠে ঙ্গান হারিয়ে ফেলি।তবে চোখ বন্ধ হতে হতে ঝাপসা দেখতে পেলাম ভয়ংকর সেই মানুষটিকে।
এরপর ঙ্গান ফিরে নিজেকে হসপিটালে পায়।পাশে মা বাবা বসে আছে।আমাকে চোখ খুলতে দেখেই মা ডুকরে কেঁদে ওঠে।আমি মায়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে বুঝলাম আমি কথা বলতে পারছি না।একটু পরে ডক্টর এসে বলে ভয়ের কারণে আমার বাকশক্তি সাময়িক ভাবে হারিয়ে ফেলেছি।এরপর আমাকে বাড়িতে আনা হয়।
কিছুদিন যাবৎ নীলয়কে ফোন ম্যাসেজ করেও কোন লাভ হলো না। আমার সাথে এতো কিছু হয়েছে এটা জানার পরেও আসেনি একবারো। কিছুদিন পর আমার এক বান্ধবী এসে বলে নীলয়ের নাকি বিয়ে আজ!সে নাকি একবার দেখা করতে চাই আমার সাথে!!
“আমার বাবা মা তোমাকে মেনে নিবে না নীলিমা!
আমি তখনো কথা বলতে পারতাম না।তাই লিখেই বললাম কেন??
দেখ তুমি নিজেও জানো কি কারন।আর যাই হোক কোন পরিবার কোন ধর্ষিতা মেয়েকে বাড়ির বৌ হিসেবে মেনে নিবে না।আমি নির্বাক চোখে তাকিয়ে দেখলাম ঐ মানুষটাকে।যাকে ঘিরে কতো শতো স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম।
নীলয় আবার বলে,
আপনাতেই আমি পর্ব ৬১
আমার বিয়ে আজ নীলিমা। আমার পক্ষে তোমার সাথে সম্পর্ক গড়া পসিবল না।
সেদিন আমি নীলয়ের পা হাত পর্যন্ত ধরেছি। বারবার বলতে চেয়েছি আমি ধর্ষিত হয়নি।একজন ফেরেশতা আমাকে বাঁচিয়েছে। কিন্তু নীলয় সেদিন চলে গেছিল।অথচ আমার রিপোর্ট এ ভুল লেখা ছিল।আমি জানি আমি ধর্ষিত হয়নি। সত্যি বলছি আপু!! সেদিন আমি ধর্ষিত হয়নি। মানুষ রুপী ফেরেশতা আমাকে বাঁচিয়েছিল আপু!!!
রিদি নীর কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।রিদির চোখের পানি ও আজ বাধ মানছে না। তাদের দুইজনের গল্প আলাদা হলেও দুইজনেই ঠকেছে!! ভালোবেসে,বিশ্বাস করে।