আপনাতেই আমি পর্ব ৬৩

আপনাতেই আমি পর্ব ৬৩
ইশিকা ইসলাম ইশা

হসপিটালের সামনে সব ডক্টর সহ বিশিষ্ট কিছু মানুষজন ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আজ হসপিটালে বিশেষ ডক্টর আসবে।নাম এখনো বলে নি তবে মনসুর আলী সবার উদ্দেশ্যে বলেছে সবাই যেন তার কাজের প্রতি সতর্ক থাকে।
১০টা বাজতে ঠিক ১মিনিট বাকি।শোন শো করে পরপর চারটা গাড়ি এসে প্রবেশ করল হসপিটালের সামনে।চকচকে কালো গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসল কালো পোশাক পড়া গাড।সবার হাতেই একটা করে গান আছে।এরপর মার্সিডিজ চকচকে কালো গাড়ির দরজা খুলে দিতেই নেমে আসে সেই বিশেষ ব্যাক্তি উরফে ডক্টর তীব্র চৌধুরী।পড়নে তার ফুল ব্ল্যাক সুট। চোখে রোদচশমা।হাতে ব্রান্ডের চকচকে কালো ঘড়ি।৬ ফুটের বলিষ্ঠ দেহী আর্কষনীয় পুরুষ।সাদা শরীরে কালো রং যেন তার জন্যই বরাদ্দ। সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কয়েকজন তো বলাবলিও করছে,

“এটা ডক্টর না নায়ক??
“আমি তো জীবনেও এতো সুন্দর পুরুষ দেখি নি!!
“ইসস মনে হচ্ছে চকলেক খেয়ে ফেলি!!
“ডক্টর তীব্র চৌধুরী!!মানে ওনি নাকি মাফিয়া!!
“এতো সুন্দর মাফিয়া হলে আমি তো তার হাতে মরতেও প্রস্তুত!!
সবাই যেন চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে তীব্রকে।এদিকে মনসুর আলী এগিয়ে গিয়ে তীব্রর সাথে হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় করলো।
তীব্র আড়চোখে আশেপাশে তাকাল।রিদিকে না দেখে ভু কুঁচকে এলো তার।
এদিকে রিদি রোজ কে কোলে নিয়ে দ্রত পায়ে গেটের কাছে আসতেই তাড়াহুড়োয় উষ্ঠা খেয়ে পড়তে নিলেই রোজের মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে দেওয়ালে বারি খাওয়ার আগেই শক্ত পোক্ত কারো বাহুতে আটকে পড়ে। যার দু হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে তার সাথে।রিদি চট করেই মুখ তুলে সামনে তীব্র কে দেখে অবাক হয়ে বলল,
আপনি!!!!!!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সবার দৃষ্টি তাদের দিকে।যেন অকল্পনীয় কিছু দেখেছে।তীব্রর হুট করেই ওভাবে ছুটে যাওয়া দেখে অবাক হয়েছিল সবাই।
মনসুর আলী চিন্তিত হয়ে বলল,
রিদিতা তুমি আর রোজ ঠিক আছো??
রিদি মনসুর আলীর কথায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রোজের দিকে তাকাল।রোজ ঠিক আছে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
মনসুর আলী আবারো বলে,
রিদিতা ওনি ডক্টর তীব্র চৌধুরী। বিশেষ ব্যাক্তি মানে বিশেষ ডক্টর হিসেবে যে এখানে জয়েন হয়েছে। তোমার ওনাকে ফুল দিয়ে বরন করার কথা!তুমি কোথায় ছিলে?
রিদিতা ছোট ছোট একটা শ্বাস ফেলে বলে,

আসলে স্যার রোজ এতো ভিরে কান্না করছিল তাই একটু সাইডে গেছিলাম।
ওহহ ওকে! ডক্টর চৌধুরী ও রিদিতা আপনার এসিস্ট্যান্ট ডঃ হিসেবে কাজ করবে আর বাচ্চাটা!!!
তীব্র হাত দিয়ে থামিয়ে বলে,
আমি জানি!!
মনসুর আলী রিদিকে বলল,
ওনাকে বরন করো।
রিদি তীব্রর দিকে তাকিয়ে ডঃ মিতুর হাতে থেকে ফুলের বুকে নিয়ে তীব্রর হাতে দিয়ে বলল,
ওয়েল কাম স্যার!
তীব্র রিদির বিরক্ত মাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে হাত বাড়িয়ে বলে,
ধন্যবাদ !!মিসেস রিদিতা ত……
রিদি হাত না মিলিয়ে চট করে বলল,
মিস রিদিতা ইসলাম !নাথিং এলস….
তীব্র বাকা হাসল!

মনসুর আলী নিজেও যে ফরমেলিটি করছেন তা তিনি জানেন। তবে সকলের সামনে ফরমেলিটি তো করতেই হবে না হলে হয়তো সবাই সন্দেহ করবে।
আব আসুন আমি সবার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। পরিচয় পর্ব শেষ হতেই তীব্র রিদিতার উদ্দেশ্য বলল,
কাম টু মাই কেবিন!!রাইট নাও!!আই রিপিট!!রাইট নাও!!
রিদি কটমট করে তাকালো তীব্রর দিকে।বাধ্য হয়ে তীব্রর পিছু পিছু যেতে হচ্ছে।রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলল পেটের ব্যাথাটা মাঝে মাঝে বেশি হয়। হসপিটালের রোগী দেখা তাও রোজকে নিয়ে যেন অসম্ভব হয়ে পড়ে।রোজ কারো কাছে সহজে যাই না।কারো কাছে খাই না!কারো কাছে ঘুমাই না!!সবসময় তার রিদিকে চাই!তারওপর তীব্রর আসার জন্য তাকে সব নিজে হাতে গুছাতে হয়েছে। রিদি বুঝতে পারল তার শরীর কিছুটা খারাপ! তাছাড়া কয়েকদিন থেকে ওষুধ ঠিক মতো খাওয়া হয়নি।তার ওপর মানসিক ভাবে অসুস্থ করার মতো মানুষ তো আছেই তার জীবনে। তীব্র কেবিনে ঢুকার পর রিদি দরজায় দাঁড়িয়ে বলে,

স্যার আসব!!
আসুন!!!
রিদি ঢুকে ডোর লাগাতেই হুট করেই তীব্র এসে রোজ কে কোলে তুলে নেয়।রোজ ঘুম ঘুম চোখে তীব্র কে একবার দেখে রিদির বুকে যেভাবে মিশে ছিল সেভাবেই মিশে যায়।
তীব্র রিদির হাত টেনে সোফায় বসিয়ে দেয়।রোজের গালে পরপর কয়েকটা ছোট ছোট চুমু দিয়ে পিঠের জায়গাটা দেখে পাশের দোলনায় শুইয়ে দেয়।
রিদি রুমে দোলনা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।এই রুমে দোলনা কে আনল!!রিদির ভাবনার মাঝেই তীব্র রিদির পেটের উপর হালকা চাপ দিয়ে রেগে বলল,
ওষুধ কয়দিন খাননি!!!
রিদি বিষ্ময়ে হা হয়ে আছে!!যেন রিয়্যাক্ট করা ভুলে গেছে।তীব্র রিদির দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে পকেট থেকে ওষুধ বের করে পানি এনে বলে,

খেয়ে নিন!!!
রিদি রেগে বলল,
সমস্যা কি আপনার!
তীব্র শান্ত স্বরে বলল,
আপাতত আপনি আমার সমস্যা!! যাস্ট দু মিনিটে!! ওষুধ খেয়ে যা বলার বলেন!!
রিদি রেগে ওষুধ ছুড়ে ফেলে বলল,
আপনি চাইছেন টা কি!!
তীব্র শীতল কন্ঠে বলল,
আস্তে রোজ উঠে যাবে!!কথাটা বলে আরো একটা ওষুধ খুলে রিদির মুখ চেপে মুখে ঢুকিয়ে পানি দিয়ে চেপে ধরলেও রিদি ফেলে দিল।
দূরে থাকুন!! আমার থেকে!!

এবার তীব্রর রাগ হলো।পেট ব্যাথায় অস্থির হয়েও জেদ ধরে বসে আছে। তীব্র এবার হাটু গেড়ে বসল রিদির কাছে।নিজের মুখে পানি আর ওষুধ নিয়ে রিদির দু হাত একহাতে ধরে অন্য হাতে রিদির খোপা টেনে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে নিজের মুখ থেকে রিদির মুখে ওষুধ দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল।রিদি ওষুধ গিলতেই তীব্র এবার সফটলি রিদির ঠোঁট জোড়ায় মেতে উঠলো। রিদি ছাড়াতে চেষ্টা করেও পারল না। হুট করেই রিদি শান্ত হয়ে এলো। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল। শুধু যে একা রিদির তা নয়।তীব্রর চোখেও আজ পানি।যাকে ছাড়া এক দিন থাকতে পারে না।তাকে ছাড়া কতোটা দিন পার করেছে।কিভাবে পার করেছে তা শুধু সেই জানে।

ঠিক কতো মিনিট পার হয়েছে জানা নেই।রিদির হুস ফিরতেই নিজেকে ছাড়াতে চাইলে তীব্র আরো শক্ত করে চেপে ধরে।সে আজ উম্মেদনায় মত্ত।এই নেশাময়ীর নেশা একবার করলে সব ভুলে যাই সে।
ঠিক ১০মিনিট পর রিদিকে ছেড়ে গলায় মুখ গুঁজে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে তীব্র।রিদির শক্তি যেন ফুরিয়ে গেছে। দমবন্ধ হয়ে আসছিল প্রায়।হুট করেই তীব্র গলার নিচে কামড়ে ধরলো।রিদি ছটফট করে ছাড়াতে চাইলেও পারল না।তীব্র কামড় দেওয়া জায়গায় ছোট ছোট চুমু দিয়ে রিদির দিকে তাকালো।রেগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
ছাড় দিয়েছি জান!ছেড়ে দিই নি!
রিদি তীব্র কে সরাতে সরাতে বলল,
ছেড়েই তো দিয়েছেন! ছাড়ুন আমাকে!!
তীব্র রিদিকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে আবারো গলায় মুখ গুঁজে মিহি কন্ঠে বলল,

উহু..ছাড়ব বলে তো ধরিনি জান!আপনার পাওনা শাস্তি তো শুরুই হলো মাএ।আমাকে কষ্টে রাখার শাস্তি পাবেন না তা কি হয়!!তীব্র চৌধুরী সুদ আসলে পূরন করে নিবে। প্রতিদিন এই টচার সহ্য করতে প্রস্তুত হন!! তীব্র কিন্তু ভালো মানুষ না।
রিদি তীব্রর কথাগুলো শুনলেও কোন রিয়্যাক্ট করতে পারল না।চোখ ভেঙ্গে ঘুম নেমে এলো।হুট করে এমন ঘুম আসায় রিদি ঘুম ঘুম চোখে প্রশ্ন করল ,
কি ওষুধ খাওয়ালেন??মেরে ফেলতে চান নাকি!!মেরেই ফেলুন! প্রতিদিন একটু একটু করে মরার চেয়ে একেবারেই মেরে ফে……..
হুসসসস….

আপনাতেই আমি পর্ব ৬২

ব্যাথার সাথে ঘুমের ওষুধ দিয়েছি। ঘুমান!!
রোজ..,রোজ কা ন্না ক…….বলতে বলতেই ঘুমে ঢলে পড়ল। তীব্র দক্ষ হাতে রিদিকে বুকে এনে চেপে ধরল।সোফা থেকে তুলে বেডে শুইয়ে দিয়ে কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোয়াল।
“রোজ কে বাবা সামলে নিবে।আপনি আরাম করেন”
কথাটা বলেই আবারো ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছোয়াল তীব্র।দু হাতের মুঠোয় রিদির ঘুমন্ত মুখটা নিয়ে ঠোঁট ছোয়াল চোখে যা থেকে এখনো গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল।

আপনাতেই আমি পর্ব ৬৪