আপনাতেই আমি পর্ব ৬৭
ইশিকা ইসলাম ইশা
সবেই অনেক কয়টা রোগী দেখে ক্লান্ত হয়ে বসেছে রিদি! হুট করে দরজায় টোকা দেওয়াই রিদি ঠিক হয়ে বসে আসতে বলতেই হুরমুর করে রুমে ঢুকে লাবিব!লাবিব কে দেখে রিদি ভূ কুঁচকে তাকাল।লাবিব আমতা আমতা করে বলে,
ভাবী!!!!!
লাবিব ছোট ছোট চোখ করে বলল,
সমস্যা কি ভাইয়া!!!
লাবিব একই সুরে বলল,
ভাবি আসলে!!
রিদি বিরক্ত হয়ে বলল,
আসলে কি??
লাবিব এবার বলল,
ভাবি!!বস আপনাকে কেবিনে ডেকেছে!!
সাথে সাথে রিদি কটমট করে বলল,
আমি কি আপনার বসের পিএ লাগি!
লাবিব অসহায় হয়ে চেয়ে আছে।এই স্বামী স্ত্রীর চক্করে তার এবার পাগলাগারদে ভর্তি হওয়া লাগবে।বসের উচিত রিদিকে নিজের সাথে বেঁধে রাখা।তাহলে বস যেখানে রিদি সেখানে।
ইয়ে মানে আসলে!!
রিদি বিরক্ত হয়ে বলে,
ভাইয়া আমি ক্লান্ত!!রোজ কে দিয়ে যান দরকার পড়লে !!অবশ্য দরকার হবে না।মেয়ে বাবা কে পেলে তো দুনিয়া ভুলে যায়!!হু!!
কিন্তু আমি যাব না!!আর খবরদার যদি আপনার বস আমার কেবিনে আসে তো!!!
লাবিব অসহায় মুখে রিদির দিকে চেয়ে বের হয়ে আসে। একবার রিদি আর একবার বস বাপরে!!! সে এবার ক্লান্ত!!
লাবিব যেতেই রিদি চেয়ারে শরীর এলিয়ে বসে। সেদিনের পর পার হয়েছে আরো দুটো দিন।দুটো দিন রিদি টোটাল কথা অফ করেছে তীব্রর সাথে।কারন রিদি তীব্র কে জিজ্ঞেস করেছিল কেন এসব হয়েছে তাঁদের সাথে। তীব্র বলেনি!!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বলেনি এমন না!!বলতে চাইনি।তীব্র চায় না সদ্য আঘাত সেরে উঠা জায়গাটা আবারো আঘাত পাক।
বাবা!!রিদি তার বাবাকে ভীষণ ভালোবাসে!তিক্ত সত্য সে না জানলেও তার ছোট বেলার বাবার সাথে কাটানো স্মৃতি টুকু সে খুব যত্ন করে মনে গেঁথে রেখেছে।তাই আপাতত তীব্র চাইছে না রিদি কিছু জানুক।না চাইতেও অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছে সে।আর কোন কষ্ট দিতে চায় না তীব্র। আর এই না বলাটাই রিদির রাগের কারন!! তাছাড়া সেদিন মোনার সাথের ব্যাপারেও কিছু বলে নি তীব্র। শুধু বলেছে,
“সময় আসলে বলব”
আর এতেই রিদি ক্ষিপ্ত!!এতো সাসপেন্স কেন বাড়াচ্ছে তীব্র! কেন তাকে সত্যি বলছে না!!কেন তার চারদিকে রহস্যর জাল বিছানো।তাই সে কঠিন পন করেছে তীব্রর সাথে আর কোন কথা বলবে না!!
এদিকে বেচারা লাবিব কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে তীব্রর সামনে।বস তাকে কোন কাজ বলেছে আর সেটা হয়নি।এবারই প্রথম!তাই কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে!! তীব্র লাবিবের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল,
তোর ভাবী বলে ভীষণ ভালো!! শান্ত,নম্র, ভদ্র!! কিন্তু আফসোস তুই জানিস ই না!!তোর ভাবিরও রাগ,জেদ অধিক।আমি জানতাম ও আসবে না!!
লাবিব মাথা নিচু করে ফেলল,
সরি বসসস!!!
তীব্র উওরে তার আচরণ গত ভাবে উদ্ভদ প্রশ্ন করল,
কাউকে ভালোবাসিস!!
লাবিব চট করে মাথা তুলে অবাক হয়ে তাকালো তীব্রর দিকে।তীব্রর ঠোঁটে বাঁকা হাসি। লাবিব ভাবুক হয়ে বলল,
বিয়ে প্যারা বস!!!
তীব্র আবারো বাঁকা হাসল,
আমি একা কেন প্যারা নিব!!তুই ও নিবি!!মেয়ে খুঁজে ফেল!!
লাবিব শুকনো ঢোক গিলল।বস তার বিয়ে নিয়ে পড়েছে কেন?এই বস ই জয়েন হওয়ার আগে বলেছিলো বিয়ে নামক প্যারা কখনো নিবি না। বিয়ে ছাড়া ইনজয় করলে আমি মাইন্ড করব না!!অথচ আজ সেই নাকি বিয়ের করার হুমকি দিচ্ছে।এসব ভাবলেও মনে হয় তীব্র যেন তীব্র না!!হায়য়য়য়য়…..
আজ আরো ২দিন পার হয়েছে।মোট চারদিন রিদি তীব্রর সাথে কথা তো দূর সোজা মুখে দেখে নি পর্যন্ত!!তীব্র কথা বলতে চাইলে রিদি ইগনোর করে গেছে।
তীব্রর মেজাজ বেজায় চটে আছে আজ!রিদির তাকে ইগনোর করা সহ্য হচ্ছে না আর!! কেন মেয়েটা বুঝছে না তার কষ্ট হচ্ছে!!এতো কাছে থেকেও রিদির থেকে দূরত্ব তার সহ্য হচ্ছে না!
রিদি সবেই গোসল থেকে বের হয়ে আয়নার সামনে দাড়াতেই হুট করেই তীব্র কোথা থেকে এসে এক টানে দেওয়ালে চেপে ধরে গলায় মুখ গুজল!!রিদি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ গলায় চিনচিনে ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে তীব্র আরো শক্ত করে চেপে ধরে আবারো কামড় বসাল।
রেগে রিদির থুতনি চেপে ধরে বলল,
“আর কতো!!!আর কতো!!আর কতো জ্বালাবি বল!!কেন ইগনোর করছিস!!
রিদিও আজ তীব্রর মতো সেম তেজ দেখিয়ে বলল,
অসভ্য লোক!!ছুবেন না আমায়!!আমি আপনার ভোগ বস্তু না!! পেয়েছেন কি আমাকে??যখন ইচ্ছা কাছে টানবেন যখন ইচ্ছা ছুড়ে ফেলবেন!!আবার কোন কিছু আমাকে বলবেন ও না!! চারদিকে এতো রহস্য!!আমি ধোঁয়াশাই আছি তীব্র!!পারছি না আর!!না পারছি মেনে নিতে!!না পারছি ছেড়ে দিতে! এতো দিন বেঁচে ছিলাম আমার সন্তানের সাথে জান্নাতে দেখা করার জন্য!!আর আজ বেঁচে আছি আমার মেয়ের সাথে দুনিয়ায় বাচার জন্য!!আমি মেনে নিতে পারছি না!!নিতে পারছি না আপনাকে!!পারছি না আপনাকে ভরসা করতে!!যদি শরীর ছুয়ার ইচ্ছে হয় তো করুন আমাকে ভোগ তবুও বাঁচতে দিন!!!
রিদির কথা এতোক্ষণ মনোযোগ দিয়ে শুনলেও শেষের কথায় হাত ঢিলে হয়ে এলো তীব্রর! রক্ত লাল চোখে চাইল রিদির দিকে!! একহাতে মুখ চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“তোর শরীর ভোগ করতে চায় আমি!!
রিদি নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে!!রিদির চুপ থাকা তীব্রর মেজাজ আরো খারাপ করল!!রেগে আয়নায় বারি দিতেই রিদি ঝট করে জরিয়ে ধরে!! তীব্র সাথে সাথে রিদিকে ছাড়িয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় নিচে!!রাগে মনে হচ্ছে তীব্রর শরীর দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে!! তীব্র নিচে বসা রিদির গাল চেপে ধরে বলে,
“আই প্রমেস ,,আর আসব না তোর কাছে!!মুছে ফেলব তোকে!মনে রাখিস!!তীব্র নিজের প্রমেস ভুলে না!!বলে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে রুম থেকে বের হয়ে গেল”
তীব্র বের হতেই রিদি ডুকরে কেঁদে উঠলো!! অসহ্য যন্ত্রণা আবারো তাকে ঘিরে ধরেছে।না পারছে মেনে নিতে!না পারছে ছেড়ে দিতে!! রহস্যে ঘেরা চারদিকে সব কিছু ধোঁয়া ধোঁয়া তার কাছে!!!
এদিকে তীব্রর রাগ আজ ১০০ভাগ !! হিংস্র তীব্র যেন জেগে উঠেছে অনেক দিন পর!!রাগে ইচ্ছে করছে সব ধংস করে দিতে!!সব!!!
নীর রোজ কে নিয়ে বাগান থেকে উপরে উঠতেই থমকে যায় তীব্রর ভয়াবহ লাল চোখ দেখে!!তীব্র নীরের দিকে না তাকিয়ে চলে যেতেও থেমে যায়!!
রোজের কান্না শুনে।মেয়েটার বয়স অল্প হলেও বাবার ঘ্রানেই বাবাকে চিনে ফেলে।
রাগে তীব্রর শরীর কাঁপছে।সে চাইছে না রোজ তাকে এখন দেখুক বা ভয় পাক!!এই ভেবে আবারো চলে যেতে গিয়েও রোজের কান্নায় থেমে যায় তীব্র।এদিকে নীর রোজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আছে। একবার রোজ তো একবার তীব্র কে দেখছে।হুট করে তীব্র দ্রুত এসে মেয়েকে কোলে তুলে বুকে চেপে ধরে।গালে মুখে পরপর চুমু দিয়ে বলল,
“এই যে মামনি আমি কাঁদে না জানপাখি!!!
রোজ তীব্রর আদুরে কথায় থেমে বাবার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকায়!!মেয়েকে এভাবে তাকাতে দেখে তীব্র শান্ত হয়ে এলো। রক্ত লাল চোখ পরিনত হল নিলাভ চোখে!!মুখের হিংস্রতার জায়গায় ফুটে উঠল বিস্তর হাসি!!
তীব্রর হাসি দেখে রোজ ও ফোকল দাঁতে হেসে ফেলল।রোজকে হাসতে দেখে তীব্রর হাসি চওয়া হল!!মনে মনে আল্লাহকে লক্ষ্য কোটি ধন্যবাদ জানাল!!মায়ের পর রিদি আর রিদির পর ছোট্ট পাখিটাকে তার জীবনে পাঠানোর জন্য।তীব্রর রাগ কমে রোজে কে সাথে নিয়ে বাগানে গেল!!বাবা মেয়ে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর রোজ ঘুমিয়ে পড়ল বাবার বুকে!!রোজ ঘুমাতেই তীব্র নীরের কোলে রোজ কে দিয়ে বলল,
মা মেয়ের খেয়াল রেখো! কিছু গাড এখানে থাকবে!তোমাদের সুরক্ষায় জন্য।কথাটা বলেই তীব্র ঝরের গতিতে নীর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গাড়িতে বসে শশশশ করে গাড়ি টান দিল!!তীব্রর গাড়ি বের হওয়ার সাথে সাথে আরো দুটো গাড়ি বের হল!! নীর সেই অবাক হয়েই আছে!!তার এখনো মাথায় কিছু ঢুকছে না কি হয়েছে!!!নীর রোজ কে উপরে এনে শুইয়ে দেয়।রিদির রূমে যেতেই রিদিকে ফ্লোরে বসে থাকতে দেখে চমকে উঠে।রিদির কাছে এসে কিছু বলতেই রিদি নীর কে জরিয়ে ধরে কেঁদে দেয়!!
“”কি করব আমি নীর??বলনা!!! আমার অসহ্য লাগছে সব!!
নীর কিছু না বুঝলেও এটা বুঝল রিদি আর তীব্রর মাঝে হয়তো ঝামেলা হয়েছে।নীর কি বলবে!!কোন মতে রিদিকে উঠিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল!!নীর একটু চুপ থেকে বলল,
জানিনা তোমাদের মাঝে কি হয়েছে? কিন্তু শুধু এটা বলব ভাইয়া তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে আপু!কথাটা বলেই নীর চলে আসে।সে জানে না কি হয়েছে?কেন রিদি কাঁদছে!তবে কেন যেন কথাটা বলতে ইচ্ছে হল!সে কি কিছু ভুল বলল!!নীর ছোট্ট
একটা নিঃশ্বাস ফেলে রোজের কাছে গেল।
আজ প্রায় ৭দিন হতে চলল।তীব্রর কোন খোঁজ নাই।লাবিব অনেক ট্রায় করেও তীব্রর খোঁজ নিতে ব্যর্থ।তাছাড়া তীব্র না চাইলে তার খোঁজ পাওয়া সম্ভব না।এমনটা আগেও অনেক বার হয়েছে।তবে তীব্রর জীবনে রিদি আসার পর এই প্রথম তীব্রর খোঁজ করে পাওয়া যাচ্ছে না।এতে রিদি নিজেও বেশ চিন্তিত।রিদি ক্লান্ত শরীর নিয়ে কেবিনে ঢুকতেই দেখে নীরের কোলে রোজ ঘুমাচ্ছে।মেয়েটাও বাবা ছাড়া থাকতে চায় না এখন!
রিদি কেবিনে ঢুকার কয়েক মিনিট পর ই রুমে ঢুকে ডঃ মিতু!!মিতু কিছুটা রেগে রিদিকে বলে,
“তুমি তখন কেন কোনো উত্তর করলে না রিদি??
রিদি ঘুমন্ত মেয়েকে কোলে তুলে বুকে চেপে ধরল।রোজ কে বুকে নিতেই চোখ ভিজে উঠল রিদির। রোজ কে বুকে নিতেই ক্লান্ত শরীর যেন চাঙ্গা হল। তবুও ক্লান্ত হয়ে আসা শরীর চেয়ারে এলিয়ে বসে বলল।
“কে কি বলল তাঁতে আমার কিছু যায় আসে না!!রোজ আমার মেয়ে।ওর বায়োলজিক্যাল মাদার আমি!এটা আমাকে প্রামান করতে আমাকে হবে না!!তাছাড়া লোকের কাজই কথা করা!!আর ওর বাবা কে?সেটা এই মূহুর্তে আমি বলতে চাই না!!
মিতু ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
রিদি আমি জানি তোমার হয়তো এসবের পেছনে কোন না কোন রিজন আছে। তবে হসপিটালের সবাই জানে এটা তোমার বাচ্চা না! এখন বলছো রোজের বায়োলজিক্যাল মা তুমি!!কিভাবে সম্ভব! দেখ রিদি!আমি তোমার খারাপ চাই না।তবে এতে মানুষের খারাপ কথাও সহ্য হচ্ছে না!!তুমি কিভাবে সহ্য করছো!!
রিদি ঘুমন্ত রোজের গালে চুমু দিয়ে বলল,
কারন আমি জানি রোজ আমার মেয়ে!!
তাহলে রোজের বাবা কে??
রিদি মুচকি হেসে বলল,
রোজের বাবা নিজেই বলবে রোজ তার মেয়ে???
মিতু অবাক হয়ে বলল,
মানে??
রিদি আবারো মুচকি হেসে বলল,
রোজ অবৈধ নাকি বৈধ তার উওর সবাই ঠিক
পাবে!
মিতু আবারো একই ভঙ্গিতে বলল,
তুমি কি বলতে চাইছ!!!
রিদি একটু চুপ থেকে বলল,
আমি কারো প্রশ্নের উত্তর করছি না !এর মানে এই না আমি জবাব জানি না!! কিন্তু আমি চাই সে নিজে বলুক রোজ তার মেয়ে!!কারন আমি জানি সে রোজের ব্যাপারে এসব কথা সহ্য করবে না!!
ডঃ মিতু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
আপনাতেই আমি পর্ব ৬৬
আর ডক্টর তীব্র চৌধুরীর সঙ্গে তোমাকে জরিয়ে যে বাজে মন্তব্য করছে সেটা!!!
রিদি একই ভঙ্গিতে বলল,
সেটা তীব্র চৌধুরী ভালো জানে!!তার ব্যাপার সে দেখবে!!
ডঃ মিতু আবারো দীর্ঘশ্বাস ফেলল।নীর তো অবাক হয়ে চেয়ে আছে।রিদি কি বলছে!!
আজ প্রায় ৭দিন তীব্রর খোঁজ নাই।তাহলে সে কিভাবে সব বলবে!!!