আপনাতেই আমি পর্ব ৭১

আপনাতেই আমি পর্ব ৭১
ইশিকা ইসলাম ইশা

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একটা ব্যাপার আছে।এরা হাজার ঝরগা করলেও কারো উচিত নয় তাদের মধ্যে বলা।কারন স্বামী স্ত্রীর মান, অভিমান,রাগ, অভিযোগ সব একে অপরের প্রতি থাকলেও ভালবাসার পরিমাণ তার থেকে অধিক থাকে।
আমির ছেলের বেপোরোয়া স্বভাব সম্পর্কে অবগত হলেও তিনি এটা সিউর তীব্র রিদিকে ভালোবাসে। ভালোবাসে মানে কিন্তু আর দশটা স্বামী স্ত্রীর মতো না।একদম পাগলের মতো ভালোবাসে! দুনিয়া এদিক ওদিক হলেও তার রিদিকে চাই!!মোট কথা সে সংসার করার মতো ছেলে তো ছিল না!!তবে রিদির সাথে মজনু হিসেবে তার সংসার ছিল চমক!!চমক বলতে সত্যিই চমক!! তীব্রর মতো নির্দয়,হৃদয়হীন মানুষের বুকে যে কারো প্রতি অগাধ ভালোবাসা থাকতে পারে তা সত্যিই ম্যাজিক এর মতোই আমির সহ পরিচিত যারা জানে তাঁদের কাছে!শত শত সুন্দরী রমনীর মাঝে শ্যামকন্যা মেয়েটি তার নির্দয়, নির্মম, হৃদয়হীন বুকে প্রেমের সূক্ষ্ম ঝর তুলেছে।যা ধীরে ধীরে তুফান আকার ধারন করেছে।

তিনি নিজের ছেলেকে যতটুকু বুঝে তাতে তিনি সিউর এর মাঝে কিছু তো ব্যাপার আছে!! জটিল কোন ব্যাপার!!নয়তো তীব্র রিদিকে নিজের থেকে এক ইঞ্চি ও দূরে সরিয়ে রাখবে না।
আমির কথা গুলো ভেবে তাকালো রোজের দিকে!! বাবার সাথে রোজের বেশ সখ্যতা আছে। সকাল সকাল বাবার কোলে চরে বাগান ভ্রমন করছে!! তীব্র ও বুক পকেটে ভরে বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে মেয়েকে নিয়ে!!মাঝে মাঝে আদর করছে!! আবার কখনো এটা ওটা বলছে!! আমির কখনো ভাবে নি তীব্রর সাজানো, গোছানো সংসার বেঁচে থাকতে কখনো দেখবেন তিনি!! এখনো মাঝে মাঝে তীব্রকে বাসায় বেশিক্ষণ দেখলে মনে হয় চাঁদ, সূর্য সব উল্টা দিকে থেকে উদয় হচ্ছে!! তীব্র যতক্ষণ বাসায় থাকে তার কোলে অবশ্যক রোজ থাকবেই!!মেয়ে ও বাবাকে পেলে সব ভুলে যাই!!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমির স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রুমে চলে গেলেন। তার একটাই প্রার্থনা এখন তার ছেলে মেয়ে গুলো যেন সবসময় ভালো থাকে।
রিদি পিটপিট করে চোখ খুলে নিজেকে শোয়া অবস্থায় পায়।রাতে ঘুম না হওয়াই মাথাটা বেশ ধরেছিল।রোজ কাল অনেক জালিয়েছে।খুব সকালে রোজ উঠার শব্দ টের পেলেও রিদি ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে ছিল!!সে জানে তীব্র রোজ কে সামলে নিবে।
রিদি উঠে বসে ।বিছানা ঠিক করে বেলকনিতে যেতেই দেখে বাপ বেটি মর্নিং ওয়াল্ক ইনজয় করছে!!রিদি রেলিং এ হাত রেখে দেখছে বাপ মেয়ে কে!!
সেদিনের পর আজ দুটোদিন পার হয়েছে!! তীব্র আর তার মাঝে সব ঠিক হলেও এখনো সেই একটা কারন মনের কোনে রয়েই গেছে!এমন না যে রিদি চেষ্টা করে নি কিন্তু তীব্র বরাবরই বলেছে ভালোই আছি জান।কেন ধংস চাইছেন!! কথার যথার্থতা বুঝছে না রিদি!! তীব্র কি চাইছে!!

সময় টিক টিক করে এগিয়ে যাচ্ছে!! সেকেন্ড থেকে মিনিট,মিনিট থেকে ঘন্টা,দিন। চারদিকে তখন তপ্ত রোদ!!খা খা রোদে চারদিকে যেন আগুন পড়ছে।এই রোদের মাঝেই হেটে চলছে নীর।কলেজ শেষ করে এখন বাসায় যাবে সেই উদ্দেশ্যে ই হাটতে শুরু করেছে।সামনে বাসস্ট্যান্ড। সেখানে থেকে বাসে করে বাসায় ফিরবে।বাস স্ট্যান্ড এর সামনে এসে দেখে বাস এখনো আসে নি।এখনো প্রায় ১০_১৫ মিনিট বাকি!!নীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে!!কিছুটা দূরে বসার জায়গা দেখে সেখানে বসে নীর।ফোনটা বের করে দেখতেই হুট করে হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিল কেউ।নীর হচকচিয়ে তাকাল পাশে বসা ব্যাক্তির দিকে!!চমকে উঠে বললো,

আপনি!!!!!!!!!
অন্য কাউকে আশা করেছিলে???
আপনি!! এখানে???
কেন আসতে পারি না!!এটা পাবলিক প্লেস!!যে কেউ আসতে পারে!!
আমি সেটা বলি নি!!
তবে কোনটা বলেছ???
না মানে হুট করে আপনাকে দেখলাম!!
আমার কি তোমাকে জানিয়ে আসা উচিত ছিল!!!তবে জানিয়েই আসতাম যদি তুমি আমার ফোন ধরতে!!!
এখানে কি কাজে এসেছেন????
হ্যাঁ!! জরুরী কাজে এসেছি!!
ওহহ আচ্ছা!!তাহলে আমি আসি আজ!আমার বাস চলে এসেছে!!!বলে উঠতেই রায়ান নীরের হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়।
আমি কি বলেছি চলে যেতে!!

হাত ছাড়ুন!!বাস মিস হয়ে যাবে!!
হলে হোক!!!
এমন করছেন কেন?? ছাড়ুন!!!
ছাড়ব তার আগে আমার প্রশ্নের সঠিক সঠিক উত্তর দিতে হবে!!
মানে!!!
এতো মানে বোঝাতে পারব না!!আমার ফোন রিসিভ করো না কেন???
রিদি আপু এখন আর আমাদের সাথে থাকে না!!রিদি আপু ব্যাতিত আপনার সাথে আমার আর কোন কথা থাকতে পারে না!!তাই!!!
রিয়েল???
হুম!!!
কিন্তু আমার কথা আছে তোমার সাথে!!গাড়িতে উঠো!!

আমি কোথাও যাব না!! বাসায় যাব হাত ছাড়ুন!!!
রায়ান বেশি কথা না বলে নীর কে টেনে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টাট দেয়!!নীর কিছু বলতেই রায়ানের এক ধমকে চুপ হয়ে যায়!! রায়ান গাড়ি এনে থামাই একটা নিরিবিলি জায়গায়!!গাড়ি থেকে নেমে নীর কে বের করে বলে,
এখন বলো সমস্যা কী তোমার!!!
আমার কি সমস্যা…..
সেদিন দেখলাম পুরানো প্রেমিকের সাথে খুব কথা বলছিলে!!!
আপনি!!! কিভাবে জানলেন?!!?
সেটা বলা জরুরি মনে করছি না!!তা পুরানো প্রেম জেগে উঠেছে বুঝি!!!
নীর কিছু বলার আগেই রায়ান বলল,

আমি কিছু শুনতে আসি নি!! বলতে এসেছি!বিয়ে করতে চায় তোমাকে!!তুমি কি রাজি!!!দেখো আমি ওতো সতো করতে পারব না সরাসরিই বলছি!!!তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?
নীর হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে রায়ানের দিকে!! রায়ান নীরের সাথে একটু ক্লোজ হয়ে দাঁড়ায়। একহাত গালে রেখে বলে,
নীর!!!আমি তোমার সাথে আমার বাকি জীবনটা কাটাতে চাই!!আমি জানি না তুমি কেন আমাকে ইগনোর করছ এতোটা দিন!!
নীর হুট করেই বলল,
একটা রেপিষ্ট মেয়েকে বিয়ে করতে চান?? যার কাছে আপনাকে দেওয়ার মতো কিছু নেই!!!
শরীর কে বিয়ে করতে চাইছি না!!বলতে পারো মনটাকে বিয়ে করতে চাইছি! একাকী একটা সঙ্গী চাইছি!!আমাকে বুঝবে,ভালোবাসবে!!ব্যাস!!!

নীরের চোখ ছলছল করে উঠলো।নিজেকে সামলে বলল,
এমন মেয়ে তো অনেক পাবেন!বরং সুন্দরী মেয়ে পাবেন!!
যদি বলি তোমাকেই চাই!!!
নীরের চোখের পানি টপটপিয়ে পড়তেই রায়ান আলতো হাতে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়!!নরম সুরে বলে,
ভালোবাসি কি না জানি না!!তবে ভালোবাসতে চাই!!এতোটা কি ছেড়ে যাওয়ার কথা কখনো না ভাবতে পারো!!দেবে সেই অধিকার!!
নীর ফুঁপিয়ে উঠল।ঝট করেই জরিয়ে ধরলো রায়ান কে! রায়ান অবাক হলেও আলতো করে জরিয়ে ধরলো নীর কে!!ছটফট করতে থাকা মনটা শান্ত হল। গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে আলতো করে চুমু খেল কপালে!!!

‘আমি হসপিটালে জয়েন করতে চায় তীব্র!
তীব্র হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে থেমে গেল।পরমূহূতে ঘড়িটা খুলে রিদির দিকে তাকায়!
‘কিছুদিন পর থেকে জয়েন করুন!!
কেন???
তীব্র রিদির দিকে তাকিয়ে বলল,
রোজ এখনো অনেক ছোট!!
‘রোজ ছোট নাকি অন্য কোন কারন!!!
তীব্র একটু চুপ থেকে বলে,
ফুপি বাসায় এসেছে!!!
এটা আমার কথার উত্তর না তীব্র!!
আপনি তো উওর ও দিলেন না!!যান গিয়ে মায়ের সাথে দেখা করে আসুন!!
রিদি কিছুটা অবাক হলেও মুচকি হেসে বলে,

আপনি তো বলেছেন আমার আপনি ছাড়া আর কেউ নেই!!মা ও না!!তাহলে!!!
তাছাড়া আমার মনে হয় না আমি ওনার সামনে গেলে ওনি খুশি হবেন!আপু আছে তো!!
তীব্র রিদির দিকে তাকালো।রিদির চোখে পানি টলমল করছে।মায়ের প্রতি অনেক অভিযোগ রিদির। তীব্র হুট করেই রিদিকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
‘জান!!!! ভালোবাসি!!!
রিদি কাঁদো কাঁদো মুখ তুলে তীব্রর দিকে তাকালো!! তীব্র রিদির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
‘আই লাভ ইউ ‘আই লাভ ইউ!!আই লাভ ইউ মোস্ট!’
রিদি চুপচাপ তীব্রর বুকের ধুকপুক শব্দ মন দিয়ে শুনছে।এর মাঝেই রোজের কান্নায় দুইজনে বিছনায় তাকিয়ে দেখে রোজ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে!!তীব্র হেসে উঠলো!!রোজ কে কোলে তুলে আদর করতেই থেমে গেল রোজ!!
বুঝলেন জান!!আপনার মেয়ে কিন্তু ভীষণ হিংসুটে!!
আমার রোমান্টিক মোমেন্টের ১৩ টা বাজিয়ে দিল।বলে রোজ সহ রিদি কে জরিয়ে ধরলো।

নাস্তার টেবিলে বসে আছে সবাই।রিদি তীব্রর নাস্তা রেডি করে টেবিলে রাখতেই তীব্র নিচে নেমে আসে!
রোজ বাবার কোলে বসে আছে।যেহেতু ছয় মাস হয়েছে তাই একটু একটু করে দুধের পাশাপাশি খাবার খাওয়াই রিদি। তীব্র মেয়ের সাথে সাথে মাকেও খাইয়ে দিচ্ছে।এটা এখন আর তেমন কিছু না!!তাই লজ্জা পেলেও মেনে নিয়েছে সবাই। তৃপ্তি বাবার হাতে খেতে খেতে তীরের উদ্দেশ্য বলে,
‘পাপা আম্মুতে তাইয়ে দাও!!!
তৃপ্তির কথায় বিস্তর হাসল তীর,
তোর মা লজ্জায় কাঁপা কাপি করবে!!কথাটা বলেই আড়চোখে তাকালো বাবার দিকে!!
আমির বিরক্ত হয়ে বলে,
লজ্জাহীন পরিবার!!!একদম চাচুর মতো হয়েছে!!
দূর থেকে আমেনা এসব দেখে নিরাশ চোখে চাইলেন সবার দিকে!!
কথাটা তীব্রর উদ্দেশ্য বলল তা তীব্র ভালোই জানে!!তীব্র ও কম নাকি!!
আমি তো শুনেছি তুমি নাকি আম্মু কে ছাড়া খাবার খেতে না!!মাঝে মাঝে চুপি চুপি কিচেনে…..
আমির কিটমিট করে বলে,

চুপ করো!! অসভ্য ছেলে!!!আমির লজ্জা পেলেও তা সাইডে রেখে গম্ভীর মুখে বলল,
আমেনাকে এই বাড়িতে কেন এনেছো??
তীব্র খেতে খেতে বলে,
তার বাবার বাড়ি!! আসতেই পারে!!
মূহুর্তের মধ্যে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে ডায়নিং টেবিলে।আমির ক্ষিপ্ত মেজাজে বলে,
ও কি করেছে! তুমি ভুলে গেলেও আমি ভুলতে পারি নি!!
তীব্র চটপট বলল,

আপনাতেই আমি পর্ব ৭০

ভুলার ট্রায় করো ভুলে যাবে!!আপাতত ফুপি উরফে শাশুড়ি এই বাড়িতেই থাকবে!!
সবাই তীব্রর দিকে তাকিয়ে আছে।তীব্র তো তার ক্ষতি করা মানুষ কে এক বিন্দু ছাড় দেয় না।তবে!!!কি চাইছে তীব্র!!কি চলছে তার মাথায়! সবার প্রশ্ন অনেক হলেও!!জানে তীব্র না বললে উওর পাওয়া সম্ভব না!!!

আপনাতেই আমি পর্ব ৭২