আপনাতেই আমি পর্ব ৮
ইশিকা ইসলাম ইশা
ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ তাকে দেখছে।খুব কাছে থেকে দেখছে। কারো নিঃশ্বাস এসে বাড়ি খাচ্ছে মুখে।রিদি ভয় পেয়ে চট করে উঠে বসে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে না দেখে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ।আশেপাশে আবারো ভালো করে তাকিয়ে মনে পড়ল কাল রাতের কথা।কাল তো সে মজনু সাহেবের বৌ হয়ে এবাড়িতে এসেছে।রাতে খাওয়াদাওয়ার পর মজনু নিজের জন্য নিচে বিছানা করে রিদিকে চৌকি তে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।চৌকি টা খুব বেশি বড় না হলেও খুব ছোট ও না।দুজন আরামে ঘুমানো গেলেও রিদির অসস্তি লাগছিল।যদিও সে বলে নি কিছু মজনু নিজেই বিছানা পেতেছিল নিচে।
রিদি জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল।এরপর চোখ বুলাল রুমে।দেওয়ালে একটি টাঙানো ঘড়ি দেখতে পেল।ঘড়িতে সময় তখন ৭.৪০। মজনু রুমে নেই।রিদি ধীর পায়ে বাইরে বের হল।বাড়িটা ছোট।তবে বিশাল এড়িয়া জুরে।মনে হয় মাঠের মাঝে ছোট্ট একটা বাসা।উপরে টিনের চালা, দেওয়াল টা ইটের ই।সামনে পাকা বারান্দা।ঘরের ঠিক মাঝ বরাবর পিছনের দিকে একটা বিশাল গাছ। রিদিতা বারান্দা ছেড়ে সামনে উঠানে এসে দাঁড়ায়। কিছু দূরে গাছের নিচে মজনু ব্যায়াম করছে।দু হাতে দুটো ইট নিয়ে মাসালস ফোলাচ্ছে।তা দেখে রিদি হেঁসে উঠল।কারন ইট তো আর ডাম্বল না তাই ধরতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে মজনু মিয়ার।
রিদির হাসির শব্দে মজনুর হাত থেকে ডাম্বল পড়ে পায়ে গিয়ে লাগতেই মজনু তিড়িং করে লাফিয়ে উঠলো।তা দেখে আরো হাসি পেল রিদিতার। খিলখিল করে হেসে উঠল।রিদির হাসিতে যেন মুখরিত হচ্ছে চারপাশ।সেই হাসিই মুগ্ধ হয়ে দেখছে মজনু।রিদির হাসি যেন থামতেই চাইছে না।মজনু এগিয়ে গিয়ে খাতায় কিছু লিখে বাড়িয়ে দেয় কাগজ টা।মজনু কে দেখে হাসি থামিয়ে দেয় রিদি।হাতের চিরকুট টা খুলে পড়তে লাগে,
“এইভাবেই সবসময় হাসবেন বেগম সাহেবা।আপনার হাসিতেই আমি স্বার্থক”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রিদি তাকালো মজনু মিয়ার দিকে,এই কথাটা তো আজ পর্যন্ত ভাই ছাড়া কেউ বলে নি।রিদ মাঝে মাঝে বলত “শোন রিদি কান্না সমস্যার সমাধান না, বুদ্ধি খাটিয়ে হাসিমুখে লড়াই করলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যায় “তোর হাসিতেই তো আমিও হাসি তাহলে তোর উচিত সবসময় হাসতে থাকা।রিদের কথা মনে হতেই রিদির মনটা খারাপ হয়ে যায়।রিদ কি জানে ছোট বোনের বিয়ের কথা। জানলে কি করবে?রেগে গিয়ে যদি অঘটন ঘটিয়ে ফেলে।রিদের রাগ বেশি অল্পতেই রেগে যায়।
মজনুর স্পর্শে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে রিদি, মজনু ইশারায় জিজ্ঞেস করছে,কি হয়েছে?আপনি ঠিক আছেন?
মজনুর স্পর্শে শিহরিত হয় রিদি,জানেনা কেন হয়!তবে হয়।স্বামী বলে কি!কবুলের জোর কি এতোই বেশি যে আল্লাহ মুহূর্তে একে অপরের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করে দেয়।তবে সে কি মজনু কে ভালোবাসে।কই নাতো! আচ্ছা কাউকে ভালবাসলে বুঝবে কিভাবে তাকে ভালোবাসে।রিদি ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে।
আমি ঠিক আছি।
মজনু খাতায় লিখে,
আমার স্পর্শ খারাপ মনে করবেন না বেগম সাহেবা।আমার স্পর্শ আপনার জন্য পবিত্র।রিদি চমকে উঠে।সে কিভাবে জানল !!
রিদি কথা ঘুরাতে বলে,
আসলে কাল থেকে একটানা এই শাড়িটা পড়ে আছি।আসার সময় কোন জামা আনা হয়নি..
রিদির কথা শেষ হওয়ার আগেই মজনু লিখে,
আপনি বাথরুমে এ যান আমি সকালে পানি তুলে রেখেছি।আমি এখুনি আপনার কাপড় এনে দিচ্ছি গোসল সেরে নিন।রিদি কে কিছু বলতে না দিয়ে ঘরের দিকে গেল মজনু মিয়া।রিদি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে বাথরুমের সামনে দাড়াল। চারপাশে ফাঁকা পড়ে আছে।মনে হচ্ছে কেউ এখুনি চলে আসবে।রিদি ঠাই সেখানেই দাড়িয়ে রইল।মিনিট দশেক পর সেখানে উপস্থিত হয় মজনু।রিদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খাতায় কিছু লিখে খাতে দেয়,
“ভয় পাবেন না বেগম সাহেবা আমি আছি”
রিদি মজনুর দিকে তাকায়,
মজনু হাতে একটা শাড়ি রিদিতার হাতে দেয়।ইশারাই বোঝায় যেতে।রিদি দোনোমনো করে বাথরুমে ঢুকে।গোসল সেরে বের হতেই দেখে মজনু রাতের মতো ওদিক ঘুরে দাড়িয়ে আছে।রিদি গলা খাঁকারি দিতেই মজনু ঘুরে তাকায়।রিদিকে দেখে থ মেরে সেখানেই দাড়িয়ে থাকে। এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিদিও নিজেকে দেখে সে শাড়ি পড়তে পারে,বেশ ভালোই পারে শাড়িতে তো কোন সমস্যা নাই।তাহলে কি মুখে কিছু লেগে আছে।রিদি হাত দিয়ে মুখ ঘসে,না কিছুই তো নেই।রিদি গলার আওয়াজ একটু জোরে করে বলে সরুন…
মজনুর তাও কোন হেলদোল নেই দেখে রিদি ভু কুঁচকে তাকায়!
কি সমস্যা!!সরুন….
মজনু জোরে আওয়াজ শুনে হকচকিয়ে সরে যায়।রিদি পাশ কাটিয়ে ভেজা গামছা চুল থেকে খুলতেই ঝরঝর করে হাটু ওবদি নেমে আসে চুল।মজনু এবার বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। শুকানো কয়েকটা ঢোক গিলে।হনহন করে অন্য দিকে চলে যায়।রিদি গামছা মেলে পেছনে ফিরে দেখে মজনু কোথাও যাচ্ছে।রিদি রুমে এসে বিছানায় বসে।টেবিলের উপর একটা আইনা দেখে সেটা হাতে নেয়।আইনায় নিজেকে দেখে কিছু বুঝতে পারে না মজনু তখন ওভাবে কেন তাকিয়ে ছিল!!!
সকালের নাস্তা বাইরে থেকেই এনেছে মজনু।নাস্তা করে রিদি আশেপাশে ঘুরে দেখে।নিজের গ্রাম হলেও কখনো এদিকে আসা হয়নি রিদিতার।রিদিতা ঘুরতে ঘুরতে পুকুর পাড়ে এসে দেখে মজনু পুকুর পাড়ে বসে পুকুরে ঢিল ছুড়ছে।রিদিতা ডাক দিল,
শুনুন….
রিদিতার কথায় মজনু পেছন ঘুরে রিদিতার দিকে তাকাই। মজনু মনে মনে কয়েকবার আওরাই “মুগ্ধতার রানী আপনি বেগম সাহেবা”। মজনু ভালো করে দেখে রিদি কে।খয়েরির মাঝে লাল শাড়ি পড়হিত মায়াবতী কন্যাকে। শাড়িতে নারী আজ যেন প্রমান করে দিয়েছে রিদিতা।না কোন সাজ না কোন কিছু তবুও যেন দেখতেই ইচ্ছে করছে। মজনু কে এভাবে তাকাতে দেখে অসস্তি লাগছে রিদির।সে বুঝে না এভাবে দেখার কি আছে।মজনু রিদিতার দিকে তাকিয়ে দেখে রিদিতা কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মজনু ইশারায় পাশে বসতে বলল।রিদি পাশে বসল নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
দুপুরের খাবার আমি রান্না করতে চায়।
মজনু রিদিতার দিকে তাকাল,পকেট থেকে একটা খাতা কলম বের করে লিখল তাতে,
তাহলে আজ আপনার হাতের বিরিয়ানি খাব। শুনেছি খুব টেষ্টি!!
রিদিতা একটু হাসল,
আপনি কিভাবে জানলেন আমি বিরিয়ানি ভালো রান্না করি?
মজনু আবার খাতায় লিখল,
শুনেছিলাম আপনার বাসার কাজের মেয়ের পুচির মায়ের কাছে।
রিদিতা এবার মজনুর হাত থেকে খাতা কলম নিয়ে তাতে লিখল কি কি লাগবে।লেখা শেষ করে খাতাটা মজনুর হাতে ধরিয়ে দেয়।এই সব নিয়ে আসুন।
মজনু খাতায় লিখল ছোট্ট করে” ধন্যবাদ।”
রিদিতা হাসল।একটু পর বলল,
আপনি কি ঐ বাড়িতে কাজে যাবেন??
মজনু রিদির দিকে তাকাই,ইশারাই না বোঝায়।রিদিতা থেমে বলে,
আমার জন্য আপনার বেশ কষ্ট হয়ে গেল তাই না।আসলে আমি চাই না আপনি ঐ বাসায় কাজ করেন।ঐ বাড়ির জামাই আপনি।সেখানে কাজ করা শোভা পায়না আপনার।
মজনু খাতায় লিখে রিদির হাতে দেয়,
আপনি বললে,ঐ বাড়ির এি সীমানায় ও যাব না ।এই তো সামান্য চাকরি।
রিদি লেখাটা পড়ে বলে রেগে বলে,
আসলে কি চায় আপনার??কেন আমাকে এতো প্রয়োরিটি দিচ্ছেন?এসবে অভস্ত না আমি।
মজনু হঠাৎ রিদির এমন কথায় কিছুটা ঘাবরে যায়, তাড়াতাড়ি খাতায় লিখে,
অভ্যাস করুন বেগম সাহেবা।আপনি ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে কেউ নেই,কিছু নেই।আপনি ই সব আমার।#আপনাতেই আমি বেগম সাহেবা।ক্লান্ত পথিক এর মতো ঠিকানা খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে ঠিকানা পেয়ে,তা কোন মূল্যে হারাতে চাই না।আপনি আমার শেষ ঠিকানা বেগম সাহেবা।
রিদি লেখাটা পড়ে ঊঠে চলে যায়,যেতে যেতে ভাবে ভাইয়া বলে “দুনিয়াতে সবাই স্বার্থে ব্যবহার করবে তোকে রিদি “ভাইয়ের কথাটা মনে হতেই সব যেন বিষিয়ে তুলেছে। মজনু কেন তাকে এতো গুরূত্ব দিচ্ছে।কি স্বাথ তার!কি চায় সে! তবে ভালোবাসে বলল যে!!আদো কি ভালোবাসে !কেন ভালোবাসবে আমাকে কি আছে আমার মাঝে।আমি তো কুৎসিত দেখতে।কোই আগে তো কেউ কখনো এভাবে বলে নি। তাহলে আজ কেন! সুন্দর বলতে তো হওয়া উচিত আপুর মতো ভুবন ভোলানো সুন্দর।ঠিক কোন উপন্যাসের গল্প কন্যার মতো।
সব ভেবে রিদির চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল।আসলে গুরুত্বহীন হয়ে বাঁচতে বাঁচতে একদিন যদি কেউ সামান্য গুরুত্ব ও দেয় তাহলেও সেটা আমাদের কাছে বিশাল ব্যাপার লাগে মনে হয় নিশ্চয় কোন স্বাথ আছে। তেমনটাই রিদির কাছে মনে হচ্ছে।তাছাড়া হুট করেই তো আর কারো প্রতি বিশ্বাস স্থাপন হয় না।বিশ্বাস করতেও সময় প্রয়োজন।
রিদির ভাবনার মাঝেই কারো ডাকে চমকে উঠে রিদি।
রিদিইইইই……
রিদিতা পেছনে ফিরে দেখে রিদ দাঁড়িয়ে আছে।রিদকে দেখে রিদিতা ছুটে যায়। এতক্ষনের ভাবনা চিন্তার পর বিশ্বস্ত একটা মানুষ পেয়ে কোন ভাবনা ছাড়া ছুটে যায় রিদিতা।ভাইকে জরিয়ে ধরেই কাঁদতে শুরু করে।রিদ রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।এরি মাঝে সেখানে উপস্থিত হয় আমেনা বেগম।রিদ সকালে সবটা শুনেই ছুটে এসেছে। বাসায় তুমুল কথাকাটাকাটি হয়েছে আমেনার সাথে।রিদ যখন রেগে বলল সে রিদিকে নিয়ে ঢাকা চলে যাবে তখন আমেনা বেগম ঘাবরে যান।তিনি জানেন ছেলের রাগ কতো।তাই তো ছেলের পিছন পিছন এসে পৌঁছেছে তবে মজনুর এমন বাড়ি দেখে সে নিজেও কিছুটা অবাক হল।এমন বাড়িতে তো তার কাজের মেয়েরাও থাকে না।সে তো আর এসব ভেবে চিন্তে বিয়ে দেয় নি।
কাদিস না রিদি ভাইয়া আছি তো!!চল তোকে নিতে এসেছি।
আমেনা বেগম ও একমত হয়ে বলে,
আমিও সেটাই বলেছি বিয়ে হলেও তাকে তো বের করে দেয় নি।
রিদি ভাইকে ছেড়ে দেয়। এবার আমেনা বেগম এর দিকে তাকিয়ে বলে,
আমি যাব না ভাইয়া।
রিদ:কেন যাবি না?
রিদি তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
আমি কোন বাড়িতে যাব ভাইয়া?কোন বাড়ী?যে বাড়ির মানুষ আমাকে আবর্জনা ছাড়া কিছু মনে করে না।যাদের কাছে আমার কোন মূল্য নেই।
রিদ বুঝল বোনের কথা।
আমি থাকলে এসব হতে দিতাম না। এখনো দেরি হয়নি তুই চল আমার সাথে বাকি সব সামলে নিব।তুই পড়াশুনা করবি তার স্বপ্ন পূরন করবি রিদি।
আমার জীবনে স্বপ্ন বলে কিছু বাকি নেই ভাইয়া।চলে যাও তুমি।
রিদ রেগে বলে,
পাগল হয়েছিস এমন পরিবেশ এ থাকতে পারবি।
ঐ বাড়ির পরিবেশ থেকে তো ভালো ভাইয়া।রিদ তাকালো রিদির দিকে বোনটা কি একদিনে বড় হয়ে গেল।আগে তো রিদ যা বলত তাতেই হ্যা বলত।নাকি মায়ের অত্যাচার থেকে মুক্তির পথ পেয়েছে।রিদ আবারো বলল,
ফিরে চল রিদি।
রিদি এবার চেঁচিয়ে উঠলো,
কোথায় যাব ভাইয়া? কোথায়?ঐ বাড়িতে কে আছে আমার?কার কাছে যাব?কার কাছে যাব বলতে পারো?
আমার ভাগ্য এতো খারাপ কেন ভাইয়া? ছোট থেকে ঐ বাড়িতে এতো মানুষ থাকা সত্ত্বেও আমি একা বড় হয়েছি।মা নামক মানুষ টা থাকলেও তার আদর,ভালবাসা পায়নি।শত মায়ের থেকেও খারাপ ব্যবহার করেছে ওনি।অথচ তোমকে আর রুপ আপু কে কতো ভালোবাসে।মা থেকেও মায়ের ভালোবাসা পায়নি,বাবাও আমাকে একা করতে চলে গেল,তুমিও তো আমাকে একা ফেলে গেছ ভাইয়া।
সারাদিন পড়ে থাকলেও যে মা একবার এসে দেখে না সেই মায়ের কাছে যাব?যাব না।
তোমার মায়ের কাছে আমি মৃত।আমি কখনো ঐ বাড়িতে ফিরব না।এতে আমাকে গাছতলায় থাকতে হলেও থাকব তবুও আমি ফিরব না।
আমেনা ক্ষিপ্ত মেজাজে বলল,
দেখছিস ওর কথা শুনছিস!বিয়ের একদিন ও হয়নি তাতেই চটাং চটাং কথা বলতে শিখে গেছে।চল এখুনি চল তুই আমার সাথে তোর ছাল আজ না বের করেছি আমার নাম ও আমেনা না।বলেই আমেনা রিদির দিকে তেড়ে আসে।
আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমেনা বেগম আমি এখন আপনার মেয়ে না।কালই আপনার সাথে আমার সম্পর্ক শেষ।
আমেনা রেগে রিদিকে থাপ্পর মারতে চেয়েও পারল না।মজনু সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।যার ফলে থাপ্পর টা গিয়ে মজনুর গালে লেগেছে। মজনু ঠাই দাড়িয়ে আছে।মাথা নিচু করে। সুঠামদেহী পুরুষ সামনে থাকায় রিদিকে দেখা যাচ্ছে না।
রিদ রেগে বলে,
রিদি ঠিক বলেছে।আপনার মতো মানুষের কাছে থাকার চেয়ে অচেনা মানুষটার কাছে থাকাই ভালো।
আমেনা রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
সেই আমার কাছেই আসতে হবে দেখিস।বলে গটগট করে চলে যায়।
রিদি তাচ্ছিল্য হাসে।
রিদ মজনুর দিকে তাকাই। মজনু কে তার কখনো খারাপ লাগেনি।পোশাক টা একটু আলাদা বলতে গেলে বাংলাদেশের বাইরে হয়তো।রিদ এগিয়ে আসে। মজনু রিদের দিকে তাকাই।
রিদ মজনুর দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।তারপর ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলে,
আপনি হয়তো বয়সে আমার চেয়ে বড়। কিন্তু আমি রিদির বড়।মানে আপনারো বড়।এই কয়মাসে আপনি হয়তো কিছুটা জানেন ওর ব্যাপারে।কখনো যদি মনে হয় আপনি ওকে আপনার কাছে রাখবেন না। শুধু একটা কল করে বলবেন।আমার বোন আমি নিয়ে যাব।রিদি এবার ফুঁপিয়ে উঠে।রিদ রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়।
মজনু রিদির হাত শক্ত করে চেপে ধরে রুমে নিয়ে আসে।রিদি নিশ্চুপ থেকে বলে,
মা কেমন হয় মজনু সাহেব? মজনু আহত দৃষ্টিতে তাকাল সে জানে মা কেমন হয় কিন্তু সে রিদির কষ্ট বাড়াতে চায় না।।রিদি ফুঁপিয়ে উঠল।
আমার মা এমন কেন মজনু সাহেব!কেন?আমি কি করেছি?গায়ের রং তার মতো হয়নি তাই আমার ওপর এতো রাগ। কিন্তু এতে আমার কি দোষ বলুন। সৃষ্টিকর্তা কেন আমাকে এভাবে বানিয়েছে।কেন তার মনমতো বানায় নি??কেন??
রিদি আর্তনাদ করে উঠলো কেনননননন???
মজনু শুনল সেই চিৎকার।বুঝল তার প্রিয়তম বেগম এর কষ্ট।ধীরে এগিয়ে বসল রিদির কাছে।চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে দু হাত মেলে দিল!
আপনাতেই আমি পর্ব ৭
রিদি চমকালো,ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল মজনুর দিকে।মজনু ইশারায় কাছে আসতে বলল,রিদির ভয়ের সাথে কিছুটা লজ্জা ও লাগল।রিদি ধীরে ধীরে মজনুর কাছে আসে দু হাতের মাঝে নিজেকে লুকিয়ে মাথা রাখল বুকে। স্পর্শে শিহরিত হল, লোম কূপ দাড়িয়ে কাটা দিয়ে উঠল শরীর।নাকে এসে বারি খেল মিষ্টি ঘ্রাণ।রিদির দুহাত গিয়ে থামলো পিঠে। কেঁপে কেঁপে উঠলো শরীর। মজনু রিদিকে না ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।সে বুঝল রিদির কম্পন।এক হাত মাথায় রাখল।রিদি আদুরে স্পর্শে ফুঁপিয়ে উঠলো আবার। কাঁদবে না কাঁদবে না করে কেঁদে দিল।মজনুর প্রসস্ত বুকে ভরসা পেল রিদি। কাঁদল বেশ কিছুক্ষণ। মজনু শুধু ভরসার একটা হাত মাথায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে।যেন বলছে “আমি আছি তো আপনার পাশে বেগম সাহেবা”