আপনাতেই আমি পর্ব ৮২
ইশিকা ইসলাম ইশা
কেটে গেছে দুদিন,
তীব্র রিদির চেকআপ করে রিপোর্টে গুলো দেখে গোপনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। রিপোর্ট সব ওকে।
রিপোর্ট ঠিক আছে!!!
রিদির কথায় তীব্র ছটফটে হাতে মেডিসিন রিদিকে খাইয়ে দিয়ে বলে,
একদম ঠিক আছে জান! চিন্তা করেন না।আমি আছি!আপনি শুধু রেস্ট করেন!আর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান।
রিদি বেশ কিছুক্ষণ তীব্রর দিকে তাকিয়ে রইল।গত দু’দিন থেকে দেখছে তীব্রর ছোটাছুটি।কখনো পেসেন্ট কখনো রোজ কখনো রিদির সেবা। শান্ত তীব্রকে দুদিন যেন ছটফটে করে দিয়েছে।রিদি একটু আহ করলেও অৎকে উঠছে।অথচ তীব্র এমন না।সে ঠান্ডা মাথায় সব কাজ করে।মনে হচ্ছে এই তীব্র নতুন।ক্ষনিকে ভয় পাওয়া তীব্রর পারসোনালিটির সাথে যায় না।রিদি দুদিনে দেখছে তীব্রর আতকে উঠা।রিদি বেশ কিছুক্ষণ তীব্রর ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে চেয়ে রইল। কিছু একটা ভেবে ডাকল তীব্র কে,
তীব্র!!!
তীব্র তড়িৎ গতিতে পেছনে ফিরে বলল,
কি হয়ছে??
এককাজ কতো বার করবেন।সব ঠিকঠাক আছে!
না আমি শুধু চেক করছিলাম!
এদিকে আসুন!
কি লাগবে? বলুন!
রিদি তীব্রর দিকে বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল,
আপনাকে!!
তীব্র মৃদু হেসে বলল,
আমি আছি তো জান! কিছু হবে না আপনার!
এদিকে আসুন!!
রিদির কথায় তীব্র বেডের খানিক জায়গায় বসে বলে,
কি হয়ছে??
রিদি গাড় ঘুরিয়ে দোলনায় শোয়া ঘুমন্ত রোজ কে দেখে বলল,
আপনি কি তীব্র চৌধুরী??
তীব্র ভু কুঁচকে তাকাল রিদির দিকে,
মজা করছেন??
না! সত্যিই আপনি কি তীব্র!!
মানে???
একই রুমে আমরা তিনজন!অথচ রোজ দোলনায়,আমি বেডে আপনি সোফায় কেন???
মানে??
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মানে তীব্র চৌধুরী যে নিজের স্বার্থ ছাড়া একপা বাড়ায় না সে দুদিন নির্ঘুম রাত পার করছে।অথচ হসপিটাল তার,বৌ তার, বাচ্চা তার!!ব্যাপার টা কেমন না!সে চাইলে ডাবল বেডের বিছানা করতে পারে না!!
তীব্র রিদির কথায় মৃদু হেসে বিরবির করে বলল,
একবার হারিয়ে ফিরে পেয়েছি তো! সেই মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করার মতো ক্ষমতা আর নেই।তাই রিস্ক নিতে চাইছি না।
তীব্র ধীরে বললেও রিদি শুনতে পেল।তবে ঐ কথা না টেনে বলল,
কাল থেকে আমার মেয়ে কেও চাই! শুধু আজকের জন্য আমার মেয়ে ছাড়া আপনাকে আমার কাছে ঘুমানোর পারমিশন দিচ্ছি।বলে একটু সরে তীব্র কে জায়গা করে দিল।
তীব্র অবাক হলেও অপেক্ষা করল না। মুচকি হেসে ধীরে ধীরে জায়গাটা টুকু দখল করে শুয়ে আবারো ধীরে ধীরে রিদির গলায় মুখ গুঁজে যতোটুকু পারল চেপে গেল। দুদিন পুরো নির্ঘুম কেটেছে তার।ভয়, চিন্তা,রাগ সব মিলিয়ে রাত কেটেছে নির্ঘুম। তাছাড়া রিদির শরীরের গন্ধ না পেলে ঘুম ধরা দেয় না।
রিদি মুচকি হেসে মুখটা ঘুরিয়ে চুমু খেল মাথায়। তীব্র নড়ে চড়ে রিদিকে আরো একটু ঢুকিয়ে নিল নিজের কাছে।বুকের ভেতর ঢুকিয়ে নেওয়ার যেন প্রয়াস তার।রিদি তীব্র কাজে কিছুটা ব্যাথা পেলেও শব্দ করল না।
ভয় পেয়েছিলেন তীব্র!!!
তীব্র কিছু বলল না!তবে রিদি উপলব্ধি করল ওর গলার কাছে ভিজে যাচ্ছে!!রিদি আবারো তীব্রর মাথায় আলতো করে চুমু দিল।রিদি আল্লাহর কাছে খুব করে চাই। তাদের জীবন দীর্ঘ হোক।এতো আদর,ভালবাসা। আল্লাহ যেন তাকে একদম ঢেলে দিয়েছে।এমন একটা পুরুষ তার জন্য এতোটা ডেসপারেট হবে এটা ভাবাও যেন তার কাম্য নয়।যার এক ইশারায় সুন্দরী মেয়ের লাইন লেগে যায় সে তার মাঝে কি পায়?রিদির দুইটা মানুষের মাঝেই তার স্বর্গীয় সুখ আছে।
রিদির ভাবনার মাঝেই খেয়াল করল তীব্র ঘুমিয়ে পড়েছে। রিদি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে তীব্রর হাতে হালকা চুমু দিয়ে একবার ঘুমন্ত মেয়েকে দেখে চোখ বুজল।
সকাল তখন বাজে ৭টা,
দিয়া সকালের নাস্তা নিয়ে এসেছে।রাতে রিদির কাছে থাকতে চাইলেও তীব্র দেয়নি।রিদিকে ছাড়া তার বাসায় থাকা সম্ভব না।আর রোজ তাদের কে ছাড়া থাকবে না।তাই রাতে তীব্র রোজ কে নিয়ে থেকেছে।
নবে মোচর দিয়ে দরজা ঠেলে রুমে ঢুকে দিয়া। হাতের ব্যাগ টা রেখে বেডের দিকে নজর যেতেই অবাক হয়ে গেল দিয়া। একটা বেডে তিনটা মানুষ একে অপরের সাথে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। রিদির বুকের একপাশে মায়ের সাথে লেপ্টে ঘুমাচ্ছে রোজ।আর দুহাত মা মেয়ে কে আগলে নিয়ে ঘুমাচ্ছে তীব্র।এই টুকু একটা বিছনায় তিনজনের এই দৃশ্য টুকু মন কাড়ল দিয়ার।ফোনে একটা ছবি তুলে বেরিয়ে আসল সে।এমন সুন্দর ঘুমটা আর ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করল না।মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল তারা যেন সারা জীবন সুখে থাকে।
কেটে গেছে ১টা মাস,
রিদি এখন পুরোপুরি সুস্থ।মায়ের এতো আদর ভালবাসা পেয়ে রিদি ধন্য। মায়ের মতো হয়তো কেউ হয় না।রিদির লম্বা সিল্কি চুল তেল দিয়ে বেনি করছে দিয়া।রিদি মায়ের ভালোবাসা টুকু উপভোগ করার মাঝেই রোজ গুটি গুটি পায়ে দেওয়াল ধরে কয়েক পা এগিয়ে ধপ করে পড়ে গেল। অদ্ভুত একটু ও কান্না না করে উঠে দাড়ালো একবার পেছন ফিরে বাবাকে দেখে মিষ্টি করে হাসল। আবারো মায়ের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যেতেই ধপ করে পড়ে গেল। তীব্র এবার হতদন্ত পায়ে রুমে ঢুকে বলল।
বেগম সাহেবার মা যদি মেয়েদের রেখে আমাদের ও একটু দেখত!!!
দিয়া মৃদু হেসে বলল,
কেন?? তোমার মেয়ে তোমার কাছে! আমার মেয়ে থাকুক আমার কাছে!!
তীব্রর ঝটপট উওর,
আপনার আর আমার দুইজনের মেয়েই ই আমার চাই!!ইয়ে মানে জান ঘুমাবো চলেন!!
রিদি চোখ বড় বড় করে তাকাতেই তীব্র আমতা আমতা করে বলল,
মানে রোজ !!রোজ ঘুমাবে!!তাই না আম্মু!!
রোজ একবার বাবা তো একবার মাকে দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকালো।
দিয়া ভান ধরে বলল,
তো তুমি ঘুম পাড়িয়ে দেও আজ।মেয়েটা কতোদিন পর এলো!!আজ থাকুক আমার কাছে।
তীব্র দিয়ার মজা বুঝলেও এখন তার বৌ চাই। সারাদিন পর বাসায় ফিরে বৌ কে না পেলে শান্তি লাগে না।সারাদিন রাখুন! রাতটুকু আমার কাছে! মানে!রোজের কাছে থাকুক।
তো রোজ কে দিয়ে চলে যাও!
রোজ আমাকে ছাড়া ঘুমাবেই না তাই না আম্মু!!
দিয়া মুচকি হাসল।বেনী শেষ হতেই বলল,
রোজ তো মাকে ছাড়াও ঘুমাই তো যাও তোমার সাথে নিয়ে!
তীব্র মুচকি হেসে বলল,
তাহলে আর কি শশুর মশাই কে বলি আজ আপনার পা ব্যাথা নিয়েই ঘুমান।কারন আজ তো……..
দিয়া হতদন্ত হয়ে বলল,
কি হয়ছে তোমার শশুরের??
আসার সময় বলল,
পা নাকি ব্যাথা করছে!হয়তো লেগেছে কোন ভাবে!আমাকে আসার সময় বলল!যাইই হোক!আপনি মেয়ের সাথে…..
সেকি কথা!আমাকে বলল না কেন?
মেয়ের সাথে সময় কাটাচ্ছেন তাই হয়তো!!!
এই রিদু আমি তোর আব্বুকে দেখি আসি!বলেই হতদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল।
আমিও আসছি!রিদি তেলের বাটি রেখে বেরিয়ে যেতে লাগলে তীব্র ঝট করেই রিদির কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,
আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
আরে ছাড়ুন!শুনলেন না আব্বুর পা……
আপনার আব্বুর জন্য আপনার আম্মু আছে তো জান!আমাকে একটু দেখেন প্লিজ। তাছাড়া কিছু হয়নি আপনার আব্বুর।হি ইজ ওকে!
মানে!!
মানে সিমপল!আই ওয়ান্ট ইউ নাউ! উহু!!! উই ওয়ান্ট ইউ নাউ!!মায়ের বাড়ি এসে আমাদের ভুলে যান আপনি!
রিদি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল,
একটা রাত থাকলে কি হতো!এক সপ্তাহ পর এলাম।
আই ডোন্ট কেয়ার!!আমার ঘুম হতো না!ঘুম নাহলে কাল আমার অপারেশন আছে!সো আই নিড রেস্ট!
রিদি বিরবির করে বলল,
অসভ্য!!
আমি আপনার কাছে চরম লেভেলের অসভ্য হতে চাই।এতোটা অসভ্য হতে চায় যাতে আপনার সাথে মিশে থাকতে পারি।জান।আপনার মনে হয় না রোজের একটা ভাইবোন দরকার!!
রিদি চোখ খিচে বন্ধ করে ছিল এতক্ষণ।তীব্রর কথায় চোখ খুলে বলল,
পাগল হয়েছেন!!একটা সামলাতেই আমি শেষ!!সরুন।
প্রসেস তো শুরু করতে পারি জান!!
খবরদার না!আপনি ভীষণ খারাপ তীব্র! সরুন।আমি থাকব না আপনার কাছে।
থাকতে হবে না!আমি রাখতে জানি!!
রিদি তীব্রর কথায় মুচকি হাসল।কালোর মাঝে যে কি পায় লোকটা!রিদিই কেন??
কথাটা আজো জানে না রিদি।আর না জানতে চায়।সে শুধু জানে এই পুরুষ টা তার একান্ত ব্যাক্তিগত পুরুষ।তার প্রিয় পুরুষ।তার জীবন।তার পরিপূর্ণ জীবনের একমাত্র অধিকারী।রিদি তীব্রর বুকে মাথা রাখল। শক্ত করে জরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।সে ভালো আছে ভীষন ভালো।এতোটা ভালো থাকা কি তার ভাগ্য ছিল।ছিল হয়তো!!
আপনাতেই আমি পর্ব ৮১
তীব্র আড়চোখে মেয়েকে দেখল।রোজ তার নতুন খেলনা নিয়ে ব্যাস্ত।মেঝেতে বসে তার খেলনায় মগ্ন সে।দুইজনে এবার গিয়ে বসল মেয়ের কাছে।রোজ মুখ তুলে তাকাল বাবা মার দিকে। এরপর তার খেলনা টা তীব্রর হাতে দিল। তীব্র ঘোড়া খেলনা চালু করতেই সেখানে তীক্ষ্ণ আওয়াজ সৃষ্টি হল।রোজ সেটা দেখে খুশি তে তালি দিচ্ছে। তা দেখে বিস্তর হাসল তীব্র।