আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৩

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৩
ইশিকা ইসলাম ইশা

টিক টিক করে ঘড়িতে তখন ৩টার কাছাকাছি। নিস্তব্ধ গভীর রাত।এতো রাতে বিষন্ন মনে মেরুন একটা শাড়ি গায়ে জরিয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে রিদিতা। শাড়িটা ওর মায়ের।খুব মন খারাপ থাকলে মায়ের গন্ধে মিশে থাকা এই শাড়িটি অধিক প্রিয় হয়ে উঠে। মনে হয় মা আছে।তাকে আগলে রেখেছে।রিদির কাগজপত্র আনার সময় লাবিব তার বই সহ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে এসেছিল।সেই সুটকেসে ই ছিল মায়ের শাড়িটি। কেঁদে কেঁদে ফুলে উঠা মুখখানা মায়ের কথা ভেবে আবারো কান্নায় ভেঙে পড়ল।মায়ের প্রতি তার হাজারো অভিযোগ।কেন? কেন তাকে এতিম করে চলে গেছ??এত বড় দুনিয়ায় তাকে একা করে কেন চলে গেল? এখানে তার আপন কেউ নেই। কেন নেই??নাকি থেকেও নেই!!

রিদি কান্নারত মুখটা তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।দুটোদিন!দুটোদিন সে ঘরবন্দি করে রেখেছে নিজেকে।সেদিন ভোরে তীব্র যাওয়ার পর থেকেই নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে। তীব্রর আচরনে তার মনে তীব্র ভয়ের সৃষ্টি হয়েছ। হুট করেই একটা মানুষ তার স্বাভাবের বাইরে আচরন করছে এতে রিদির মনে ভয় স্বাভাবিক।সেদিন ভোরে তীব্র তাকে কোথায় নিয়ে গেছিল?তারপর ঐসব কথা যা দাদিকে বলল।দাদিকে তো বলেছিল” বৌ “। “আমার বৌ “তারপর!!তারপর কি ধরনের নির্লজ্জ কথাগুলো বলল!!ভাবলেও রিদির রুহ পর্যন্ত কেঁপে উঠে ভয়ে।মনে মনে উদয় হয় অনেক প্রশ্ন!!হুট করেই এতোমাস পর তীব্রর বৌ বৌ করাটাই রিদির যেন তালগোল পাকাচ্ছে।সে তো জানত কোন এক কারনে তীব্র তাকে বিয়ে করে ঐ নরক থেকে বের করে এনেছে। আর তার আঠারো বছর বয়স হলেই ডিভোর্স দিয়ে রুপ কে বিয়ে করবে। তাছাড়া সে এখনো এটা জানে না তার মায়ের সাথে এ বাড়ির কি সম্পর্ক?কেন তারা ওকে ঐ নরক থেকে নিয়ে এলো?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আবার হুট করেই রিদির মনে আরো একটা প্রশ্নের উদ্ভব হয়।তীব্র কি তাকে পছন্দ করে??এই প্রশ্নটা করার সাথে সাথে ভেতর থেকে কেউ তাচ্ছিল্য করে বলে নিজের চেহারা দেখেছিস??রিদি তখন তাকে প্রশ্ন করে সত্যি ই সে খুব খারাপ দেখতে??সাথে সাথে আবারো ভীতর থেকে কেউ ধিক্কার জানিয়ে বলে তীব্রর পা দেখেছিস!পা!সেটা তোর মুখের চেয়েও সাদা!কোন ঙ্গানে ভাবিস তীব্র তোকে পছন্দ করে!পরীর মতো সুন্দর মেয়ে রুপালি সেই তার যোগ্য।রুপ তো এমন যেন রুপকথার কোন রাজকন্যা রুপালি। ওমন একটা পরী সামনে রেখে কি তোর মতো কালা ভুতরে দেখে পছন্দ কেন করবে??আমেনা তোরে কি বলে মনে নাই!!,কালোকুটি!!তুই কালোকুটি!তোকে তীব্রর মতো কোন সুদর্শন পুরুষ পছন্দ করবে না মিলিয়ে নিস।আরে!! পছন্দ কি সে তোকে দু চোখে দেখবে এটারো কোন যোগ্যতা নেই তোর বুঝেছিস!!!
রিদির মন বিষিয়ে উঠল।ওমন পুরুষ তার জন্য না।এটা সে জানে
কিন্তু সে তো আর তার কাছে যাইনি!তাকে চাইনি!তবে কেন? কেন তার সাথে এমন হচ্ছে! তীব্র কি চাইছে!!কি চাইছে?

নিজের মনের সাথে রিদির চলা দ্বন্দ্বে সে এতোটাই মগ্ন যে কেউ যে ওর ঠিক এক হাত দূরে পিছনে দাঁড়িয়ে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে এতো তার বিন্দুমাত্র ধ্যান নেই।সে তো আকাশের দিকে তাকিয়ে মায়ের কাছে ছোট্ট বাচ্চার মতো অভিযোগের ঝুলি নিয়ে বসেছে।
এদিকে কান্নার ফলে ফুলকো ফুলকো চোখ গুলো যে কারো বুকে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে তাতে তার বিন্দুমাত্র ধ্যান নেই। ঠোঁট উল্টে ফুঁপিয়ে কাঁদা দেখে যে কারো অস্তিত্ব নড়বড়ে করছে এতেও তার কোন ধ্যান নেই ।এলোমেলো আচলে মেরুন শাড়ি পরিহিত শ্যামল মায়াবতী কন্যাকে যে কতোটা আবেদনময়ী লাগছে আর কেউ যে তাকে পুরোপুরি স্ক্যান করছে এতেও তার ধ্যান নেই।সে ব্যাস্ত অভিযোগ করতে।

কিন্তু অভিযোগ শেষ করার ঠিক কয়েক মিনিট পরেই কেউ হুট করেই রিদির শাড়ির ভাজে উন্মুক্ত পেট চেপে ধরলো। কোন কিছু বোঝার আগেই ঠোঁট আকরে ধরল কেউ।প্রথমে রুঢ ভাবে কিস করছিলো কিন্তু পরে সফট ভাবে চুষতে থাকল নরম ঠোঁট দুটো।এদিকে রিদির হুস আসতেই থাক্কা থাক্কি করলেও নিজেকে সরাতে পারল একবিন্দু ও।বরং আরো গভীর ভাবে জরিয়ে নিল লোকটা।তবুও রিদি থেমে নেই নিজেকে ছাড়ানোর অপ্রান চেষ্টা করছে। মিটমিট আলোই বুঝা যাচ্ছে না আসলে লোকটা কে?লোকটা তাকে কিস করা অবস্থায় ই নিজের সাথে টেনে নিয়ে এলো ছাদের ছোট ঘরে ।যাকে কুঁড়েঘর বললেন চৌধুরী নিবাসের কুঁড়েঘর মানে বিশাল বড় ঘর।ঘরে কিছু পুরানো জিনিস আর একটা খাট আছে।তবে রুম একদম পরিষ্কার।

রিদি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ধস্তাধস্তি করতেই লাইটের মৃদু আলোয় তীব্রর মুখখানা চিনতে ভুল হলো না রিদির।রিদি যেন জমে গেল। ধস্তাধস্তি থামিয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল।এতে যেন তীব্র উম্মাদ এর মতো আরো গভীর ভাবে আকরে ধরল রিদির ঠোঁট জোড়া।এক সময় ধপাস করে পড়ল বিছনায় দুইজনেই। তুলতুলে নরম বিছনায় রিদির উপর সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দিল তীব্র।রিদির দম বন্ধ হওয়ার যোগার।নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আবারো ধস্তাধস্তি করতেই রিদির ঠোঁট ছেড়ে দিল।রিদি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
এর মাঝেই শোনা গেল নেশাক্ত কন্ঠস্বর,
নাইস লিপস….ছাড়তে মন চাইছে না!!যাস্ট ২০ মিনিট কিস করেছি!!নট ব্যাড….. হাইস্ট স্কোর!!!!!বাট আই ওয়ান্ট দিস মোর!!আই যাস্ট ওয়ান্ট ইউ ডিপলি! এন্ড ইউর স্মেল!আহহ!!মারাত্বক!!
রিদি আহাম্মক এর মতো তাকালো তীব্রর দিকে।ভয়ের চেয়ে বেশি অবাক হল তীব্রর কথায় সময় কিভাবে মনে রেখেছে!! আশ্চর্য!!!
তীব্রর নিলাভ আর্কষনীয় চোখ জোড়া দেখে রিদি অবাক হয়ে তাকালো।কখনো সরাসরি তীব্র কে এভাবে দেখে নি রিদি। তীব্র কে দেখার সাহস ই হয় নি।কারন তীব্র তার কাছে একটা আতঙ্ক!আর আতঙ্ক ভয়ের সৃষ্টি করে!ভালবাসা না।

তীব্র রিদিকে এমন নিভয়ে মুগ্ধতা নিয়ে তাকাতে দেখে বাঁকা হাসল।হুট করেই রিদির ঠোঁটের একপাশে ঠোঁট চেপে চুমু দিতেই রিদির হুস ফিরল!! কয়েক মিনিট শান্ত হয়ে থাকা মেয়েটা আবারো ছটফট করতে শুরু করল। ততক্ষণে তীব্র মুখ গুজেছে গলার ভাজে।জোরে নিঃশ্বাস টেনে মিশিয়ে নিচ্ছে শরীরের সুবাস।এরপর গলার একটু নিচে জোরে বাইট দিতেই রিদি আর্তনাদ করে উঠে। দুহাতে সরাতে চাইলে কামড় দেওয়া যাইগায় ছোট ছোট চুমু দিতেই শিহরত হয় রিদি। কিন্তু তবুও থেমে নেই তার ছটফটানি।হুট করে হাতের কাছে ভাঙ্গা একটা ল্যাম্প পেতের সাজোরে হিতাহিত ঙ্গান হারিয়ে আঘাত করল মাথায়। তবুও তীব্র রিদির ঠোঁটে আরো বেশ কিছুক্ষণ চুমু খেল।রিদি নিজেকে ছাড়াতে না পেরে পরপর আঘাত করতেই তীব্র নিজের ভর ছেড়ে দিল রিদির উপর।রিদির দম বন্ধ হয়ে এলো।ভারি শরীরটা নিচে চাপা পড়ে শরীর অসাড় হয়ে এলো। তীব্র মৃদু হেসে রিদির গলায় শক্তি প্রয়োগ করে কামড়ে দিলো।রিদি আর্তনাদ শুনে ফিসফিস করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
ঠোঁট জোড়া আপনার মারাত্মক মিষ্টি “বৌ”। শুধু ঠোঁট যদি মিষ্টান্ন ভান্ডার হয় তবে আপনি পুরোটা…..আই লাভ ইট বৌ।আই লাভ ইট…..

বলতে বলতে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে নিল। মাথায় পরপর আঘাতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে সেখান থেকে রক্ত চুইয়ে পড়ছে।রিদি তখন ভয়ে আতঙ্কে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।কোনমতে রিদি তীব্রর নিচে থেকে বের কাঁপতে লাগলো।ওর হাত!!ওর হাতে তাজা আঠালো লাল রক্ত!রিদি আঁতকে উঠে ঝটপট তীব্রর মাথার কাছে বসল।তীব্রর আঘাত করা জায়গা থেকে রক্ত পড়তে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো।ভয়ে ভয়ে বলল,

আমি ইচ্ছে করে করি নি!আমি আপনাকে মারতে চাইনি! আল্লাহ!!এখন কি করব!!রিদি পাগলের মত আশেপাশে তাকালো।কোথাও তেমন কিছু না পেয়ে আবারো ডুকরে কেঁদে উঠলো! কি মনে হতেই ঝট করে নিজের শাড়ির আঁচলের অনেকখানি ছিঁড়ে চট করে তীব্রর মাথা নিজের কোলে নিয়ে বেঁধে দিল ছেড়া আঁচল খানি।রিদি তখনো কান্না করছে।ভেতরে ভেতরে অপরাধ বোধ কাজ করছে। হসপিটালে নিতে হবে!! কিন্তু কাকে ডাকবে??দাদি?? দাদির কথা মনে হতেই রিদি বাইরে ছুটতেই সিড়ির কাছে লাবিব কে দেখে ভরকে গেল।লাবিব সিড়ির ২য় তলায় দাঁড়িয়ে ছিল।রিদিকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে অবাক হল।বস তো রিদি কে ছাদে দেখে ছাদে গেল। প্রায় ৩০মিনিট ধরে সে এখানে দাঁড়িয়ে আছে।হলো টা কি তাহলে!!লাবিব রিদিকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই রিদি ঘাবরে গিয়ে বলল,
আমি ইচ্ছে করে মারি নি!!আমি মারি নি!!

কথাটাটুকু বলেই দৌড়ে নিচে নেমে গেল।লাবিব হতভম্ব হয়ে রিদির যাওয়া দেখল।রিদি কি বলে তা এখনো মাথায় ঢুকে নি।তবে আর না ভেবে লাবিব সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে ছাদে এসে থামল। আশেপাশে তীব্র কে না দেখে ঘরে ঢুকতেই দেখে তীব্র খাটে বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে।মুখে তার কুটিল বাঁকা হাসি। মাথায় রিদির শাড়ির আঁচল বাধা!!লাবিব তীব্রর দিকে তাকিয়ে রইল কেবল!!!
কি ভেবেছিলেন তীব্র ঙ্গানহীন!! উহু তীব্র সঙ্গানে এই অভিনয় টুকু করেছে।তীব্রর কাছে এমন আঘাত কোন ব্যাপার না।এমন আঘাত পেয়ে যদি বৌয়ের রসালো ঠোঁট জোড়ার স্বাদ নেওয়া যায় তবে এমন আঘাত সে রোজ খেতে প্রস্তুত। তীব্রর বাকা হাসি দেখে লাবিব কিছু বলল না।তবে বুঝল তীব্র নিশ্চয় কোন কুটিল চাল চেলেছে!
বস আপনি ঠিক আছেন!!
তীব্র মৃদু হেসে বলল,

বিয়ের পর বৌ কাছে না থাকলে কি আর ভালো থাকা!!
লাবিব তীব্রর কথায় হচকচিয়ে তাকাল। তীব্র সেসব তোয়াক্কা না করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
এদিকে রিদি শাড়ি ছেড়ে কোন মতে সালোয়ার কামিজ পড়ে ভয়ে দেওয়াল ঘেঁষে বসে পড়ল।রিদির ভেতর অপরাধে জর্জরিত হয়ে আছে।ডুকরে কেঁদে উঠলো আবারো। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়েছে।ঘুম ভাঙল তখন জোৎস্না খালার ডাকে!বাইরে থেকে তীব্রর আওয়াজ শুনে ভয়ে দরজা খুলল না রিদি। কিন্তু পরে নাজমা চৌধুরীর কথায় বাধ্য হয়ে দরজা খুলে দিয়েছিল।
বর্তমান
তীব্র রিদিকে ভালোভাবে কম্বল মুড়িয়ে দিয়ে কালকের কামড় দেওয়া জায়গায় মলম লাগিয়ে দিল।রিদির গায়ে জ্বর এসেছে। তীব্র কোনমতে ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে। কয়েকদিন অঘুম কাটানোর জন্য রিদি এখন ঘুমাচ্ছে।এর মধ্যে ঙ্গান ফিরেছিল তবে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় নি রিদি বরং তীব্র জ্বরে কাহিল হয়ে উষ্ণতা খুজেছে তীব্রর বুকে।জ্বরের ঘোরে তীব্রর বুকের উষ্ণতায় ভরা আশ্রয়ে ঠায় নিয়েছে। তীব্র মলম রেখে রিদির উষ্ণ মুখটা ছুয়ে দিল। কিছুক্ষণ রিদির দিকে চেয়ে উঠে গেল!বাইরের রুমে বসে আছে নাজমা চৌধুরী। তীব্র গিয়ে বসল একদম নাজমা চৌধুরীর সামনে।

ভালোবাসো?
কাকে?
রিদির কথা বলছি!
জানি না!
ভালোবাসা বোঝো??
উহু!!হয়তো না!!
রুপ তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে তীব্র!
তো???
রিদি কিন্তু এখনো তোমাকে ভয় পায়!ভালোবাসে না!
ভালবাসা চাই না। শুধু ওকেই চাই!
ভালবাসা ছাড়া সংসার টিকে না!!
আমি টিকাতেও চাই না!
কি বলতে চাইছ??তুমি রিদির সাথে সংসার করবে না!তবে কেন ওর প্রতি তোমার এই আকর্ষন।
বলা জরুরি নয়!!

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১২ (২)

আশা করছি তুমি অন্তত ততটা নিচেও নামবে না! তোমার অধিকার আছে রিদির উপর! লিগ্যাল অধিকার! কিন্তু মনে রেখ আমি থাকতে রিদির ক্ষতি তুমি করতে পারবে না।
তীব্র হাসল! তাচ্ছিল্য হাসি!
সে যে আমার ক্ষতি করেছে তার বেলায়!এতোবড় ক্ষতির দাম তো দিতেই হবে! আফটার অল তীব্র চৌধুরীর ক্ষতি বলে কথা।আপোশ করা মানা!

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৪