আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৬
ইশিকা ইসলাম ইশা
কেঁদে কেঁদে ফুলে উঠা মুখখানার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তীব্র।বৌ কাঁদছে আর সে দেখছে।না থামতে বলছে আর না চুপ করাচ্ছে। শুধু মন্ত্র মুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছে।ফুলো ফুলো শামরাঙা মুখটা দারুন লাগছে।তবে এতোক্ষণ নিরবে সহ্য করলেও এবার তীব্র কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,
“বৌ “আপনি কাঁদছেন কেন? ৩৫ মিনিট পার হয়েছে ।আর কতোখন কাঁদবেন?বলে তাকালো ঘড়ির দিকে!রুপের সাথে কথা হওয়ার পর রিদির রুমে এসে দেখে রিদি কান্না করছে। তীব্র থামাতে চাইলেও থামাই না। অদ্ভুত ভাবেই ঐ কান্নারত মুখটা তার দারুন লাগছে।ভেজা ভেজা আঁখি যুগল তাকে খুব করে টানছে।টানা টানা চোখের ভেজা ভেজা পাপড়ি গুলো অদ্ভুত ভাবেই তাকে টানছে।ছুতে ইচ্ছে করছে।
রিদি তীব্রর কথায় একটু গুটিয়ে বসল।ভয়ে ভয়ে বলল,
জানি না!
তীব্র ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।হুট করেই নিজের মধ্যে এতো ধৈর্য দেখে নিজেই অবাক হচ্ছে।এই যে এতক্ষন পর বৌয়ের থেকে জানিনা শুনল।তবুও রেগে গেল না।এতো ধৈর্য তীব্রর আদো কখনো ছিল বলে মনে হয় না। তীব্র আবারো গলার স্বর নরম করে বলল ,
কাঁদছেন কেন? কপালে বেশি পেইন হচ্ছে?
তীব্রর এমন আদুরে গলায় বলা কথা শুনে রিদি ডুকরে কেঁদে উঠলো। তীব্র ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে কিছু বলার।৫মিনিট পর রিদি বলল,
আপনি দয়া করে রুপ আপুকে বিয়ে করে নিন।রুপ আপু আপনাকে খুব ভালোবাসে। আর রুপ আপু একদম পরির মতোই সুন্দর!
তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো রিদির দিকে। গম্ভীর মুখে বলল,
এই জন্য ই কাঁদছেন কি??
রিদি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমি আপনাদের কথা শুনেছি।আপনি বলেছেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।তার মানে আপনি আমাকে ভোগ করতে চান!আপনি খুব খারাপ!আমি থাকব না আপনার সাথ……
কথা শেষ করার আগেই রিদির চোখ উল্টে যাওয়ার উপক্রম মুখটা মূহূতেই রক্ত লাল হয়ে উঠল।এই বুঝি প্রানটা শেষ।রিদি ছটফট করতে লাগলো।অথচ নিষ্ঠুর তীব্র তখনো শক্ত করে চেপে ধরে আছে রিদির গলা।রিদি ধীরে ছটফটানি কমাতেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে বিছানায়।রিদি জোরে জোরে শ্বাস নিতে চেয়েও পারছিল না।শ্বাস জোরে টানার ও বিন্দু মাত্র শক্তি পাচ্ছে না। হাঁপানি রোগীর মতো হা করে শ্বাস নিতেই তীব্র হামলে পড়লো ঠোঁট জোড়ার উপর!রিদির মনে হচ্ছে আজরাইল জান কবজ করতে এসেছে। শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। একবারে শরীর ছেড়ে দেওয়ার আগ মুহূর্তে তীব্র ছাড়ে রিদিকে।রিদি নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইলো। কাঁটা ঠোঁট থেকে রক্ত চুঁইয়ে পরছে। তীব্রর রাগ তখনো কমেনি।হুট করেই রিদিকে টেনে নিয়ে এলো নিজের কাছে।রাগে হিসহিসিয়ে ভয়ংকর কন্ঠে চেঁচিয়ে বলল,
দু টাকার ও যোগ্যতা নেই তোর তুই তীব্র চৌধুরীর বৌ হতে পারিস!তোর মতো মেয়েকে তীব্র চৌধুরী দু চোখে দেখাও জরুরি মনে করে না।তোর কালো শরীর এ আমার পা ও কোনদিন স্পর্শ করবে না আর তোকে কি না আমি তীব্র চৌধুরী ভোগ করবববব….
এই এই এই!তুই নিজেকে কি মনে করিস? হ্যাঁ বল??কি মনে করিস?আমার ধৈর্য্য পরিক্ষা করেছিলি। আমার ধৈর্য্য আছে ?তোর মনে হয় ?
ছ্যা বালের মেয়ে মানুষ!
এই এই!আজকের পর ঠিক এই মুহূর্তের পর যদি তোকে এই বাড়িতে দেখি এরপর তোর অস্তিত্ব ও মিটিয়ে দেব আমি!আজ এখুনি এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে সরে যাবি।তোকে এক মূহুর্ত এখানে সহ্য করব না আমি।বলেই রিদির হাত টান ধরে টেনে হিচরে বেড থেকে নামাই। শক্তিশালী তীব্রর সাথে রিদি পা মিলাতে হিমশিম খেল। তীব্র ক্ষোভের বসে সিড়ি দিয়ে নামতেই নাজমা চৌধুরী ছুটে এলো।রিদির বিধ্বস্ত আহত অবস্থা দেখে মূহুর্তে থম মেরে দাঁড়ালো।
কি করছিস তুই ওর সাথে?? কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
তীব্র কোন উত্তর না দিয়ে টেনে নিয়ে বাইরে গেল।লাবিব তীব্রর আগমনে স্থির হয়ে দাঁড়াল। কিছু বুঝার আগেই তীব্র বলল,
একে নিয়ে রুপেস মির্জার জেলে রেখে আসবি।ভুলে এমুখো করবি না। আর যদি রাস্তায় মরে যায় দাফন করে দিবি।আর তুই !! তোর এই চেহেরা!! এই চেহেরা ভুলেও যদি আমার সামনে পড়ে তো তোর বাপসহ তোকে একদম দাফন করব! শোন ওর বাপকে ভালো করে বুঝিয়ে আসবি!
তীব্রর ভয়ংকর চিৎকার এ রুহ পর্যন্ত কেঁপে উঠলো লাবিবের। তীব্র ঠিক প্রথম দিনের মতোই কথা শেষ করে রিদিকে আবর্জনার মতো ছুড়ে ফেলল গাড়িতে। রিদি নিভু নিভু চোখে দেখল তীব্র কে।আজ আর ভয় পেল না তবে কষ্ট হলো।বুকের ভেতর কেমন চিনচিনে ব্যথা টের পেল।এরপর!! এরপর সব অন্ধকার হয়ে আসল ধরনী জুড়ে।
মির্জা বাড়িতে চলছে তুমুল ঝরগা।আমেনা বেগম ফুঁসে ফুঁসে উঠছে!রুপেস মির্জার সাথে তুমুল ঝরগা বাধিয়েছে।সে কিছুতেই রিদিকে এই বাড়িতে থাকতে দিবে না।রুপেস মির্জাও রিদিকে নষ্টা মেয়ে বলে আখ্যায়িত করেছে।রিদি এতো কথা শুনেও নিরব হয়ে তার ঘরে আছে।লাবিব যতক্ষণ ছিল কেউ টু শব্দ পর্যন্ত করেনি কিন্তু লাবিব আর গাড যেতেই আমেনা আর রুপেশর তিক্ত কথা শুরু হয়েছে।যা নয় তাই বলেছে।
এই নষ্টা মেয়েকে আমি কিন্তু ঘরে রাখব না বলে দিলাম!বড়লোক পোলা আইসা তুলে নিয়ে ভোগ কইরা রাইখা গেছে।রাখবে না আবার কি আছে ঐ কালোকুটির মধ্যে ওমন পোলা কি দেইখা এই কালোকুটিরে রাখবো।তুমি ওকে বলো আমার বাড়ি থেকে চলে যেতে।আমার মাইয়্যা এখনো অবিবাহিত হেইডা মনে রাখন লাগবো।
আমেনার শুদ্ধ অশুদ্ধ কথায় বিরক্ত হয়ে তাকালো রুপেস মির্জা।তার চেহেরায় চিন্তার ছাপ।
এতো ঘ্যান ঘ্যান করো কেন?থামো!
আমেনা তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে বলল,
আমি বললে তো তোমার ঘ্যান ঘ্যান লাগবোই।আজ আমি বলে দিচ্ছি ঐ মেয়ে বাড়ি থেকে না বের হলে আমি জান দিয়ে দিবে।
জান দিবা তো বসে আছো কেন?দিয়ে দাও।আমার নাতিডা শান্তি পায়।
লতিফা বেগমের কথায় আমেনা চওড়া গলায় বলল,
আমি মরলে তো আপনাদের শান্তি!বলেই ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেঁদে উঠলো।
লতিফা আমেনার কথা তোয়াক্কা না করে এগিয়ে গেল রিদির রুমের দিকে! মোলায়েম কন্ঠে বলল,
রিদু দরজা খোল!রিদু!আমি তোকে এই বাড়ি থেকে নিয়ে যাব বেরিয়ে আয়।আজ আর তোকে নিয়ে যেতে বাধা দিবে না চলে আয়!দাদির কথা শোন।রিদু!!রিদু দিদিভাই শোন আমার কথা!আমার কথা শোন রে!আয় রে রিদু!এই নরক থেকে বের হয়ে আয়।
অনেকবার ডাকার কয়েক মিনিট পর হুট করেই ঘরের দরজা খুলে বের হল রিদি।রিদিকে দেখেই লতিফা বেগম নাতিকে জরিয়ে ধরলো।রিদির এক হাতে বড় একটা ব্যাগ!চোখ মুখ একদম শান্ত কঠিন।লতিফা বেগম দেরি না করে রিদির হাত ধরে টেনে নিয়ে দরজার দিকে যায়।এতো বড় একটা ব্যাগ দেখে আমেনা চেঁচিয়ে উঠলো,
এই তোমার মেয়ে আমার ঘর থেকে কি কি চুরি করেছে দেখো!এতো বড় ব্যাগ!!দেখি দেখি কি কি চুরি করেছিস।কথাটা বলেই আমেনা ব্যাগে হাত দিতেই রিদি খুব শান্ত ভাবে বলল,
এতে কিছু নাই তোমারদের। শুধু আমার মায়ের মায়ের জিনিস আছে।
রিদির শক্ত মুখের শান্ত কথা শুনে আমেনা কিছুটা অবাক হল।তবে লতিফা বেগম যাওয়ার আগে বলল,
তবে যাওয়ার আগে তাচ্ছিল্য হেসে রুপেস মির্জার উদ্দেশ্য বলে,
আল্লাহ ছাড় দেয় ছেড়ে দেয় না।যার জন্য তোর মতো জানোয়ারের ছাড় ছিল সে আজ তোর বাড়ি থেকে বিদায় হচ্ছে।
লতিফা বেগম রিদির হাত শক্ত করে ধরে বের হয়ে আসল।রিদি রোবটের মতো লতিফা বেগমের সাথে পা মিলালো ।লতিফা বেগম রিদিকে নিয়ে বের হতেই সামনে এসে দাড়ালো এক পুরুষ অবয়ব।রিদি নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকালো মানুষটার দিকে,
তুই ঠিক আছিস রিদু??
রিদি কিছু বলল না। শুধু নির্বিকার ভঙ্গিতে মাথা নাড়াল।রায়ান ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে রিদির ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে এলো। রায়ান রিদির বড় চাচার ছেলে।
নিজের বোনের মতোই ভালোবাসে রায়ান রিদিকে। অনেকবার রিদিকে এই নরক থেকে নিয়ে যেতে চেয়েও পারেনি।রিদি তার মায়ের স্মৃতি ছেড়ে আসতে চাইনি আর না আমেনা তাকে আসতে দিয়েছে।বিনা বেতনে কাজের মেয়ে যে পেয়েছিল।
আমাদের কথা শুনে আগে আসলে তোকে এই দিন দেখতে হতো না রিদু!
লতিফা রিদির দিকে তাকিয়ে ছোট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।বাসায় আসতেই দেখে বড় চাচা বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করছে।বিশাল বড় বাড়িটি একদম গ্রামের বাড়ির মতোই সুন্দর।পাকা বিশাল দোতলা বাড়িটি তার দাদার।এখানেই নাকি সবার জন্ম।তবে বাড়িতে গুটিকয়েক কাজের লোক বড়চাচা,চাচি আর দাদি ছাড়া তেমন কেউ থাকে না।ছোট চাচা শহরে থাকে।আর তার বাপ সে নিজের মতো আলিশান বাড়ি তৈরি তো করেছে তবে সামান্য ব্যবসায়ী হয়ে এতো কিছু কিভাবে সম্ভব!!এটা নিয়েও অনেক কানাঘুষা শুনতে হয়।রিদিকে দেখেই ছুটে এলেন তিনি,
রুপেস তোর গায়ে হাত তুলেছে?কি করেছে বল?
রিদি মৃদু গলায় বলল,
কিছু করে নি!
এমন একটা শয়তান হয়েছে দিনদিন।যাগ গে তুই আয় ভেতরে একটু পরেই ফজরের আজান দিবে নামাজ পড়ে রেস্ট কর!
রিদি মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ চলে গেল। এখানে সবার থাকার জন্য আলাদা আলাদা ঘর আছে।রিদি চলে গেল দিয়ার শয়ন কক্ষে।আগে দিয়া আর রুপেস এই রুমেই থাকত!থাকত বলতে রুপেস বেশি সময় বাইরের কাটাতো।তবে রিদির জন্মের পর কখনো এখানে থাকা হয়নি।হয়নি বলতে রুপেস কখনো তাঁদেরকে এই বাড়িতে থাকতে দেয় নি।
রিদি ধীর পায়ে ঢুকল রুমে।রুমের দিকে একবার নজর বুলিয়ে মেঝেতেই ধপ করে বসে পড়ল। নিজেকে আর সামলাতে না পেরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। চিৎকার করে কাঁদতে গিয়েও মুখ চেপে ধরল।
কেন এতো কষ্ট হচ্ছে আমার?যখন আমাকে বের করে ঐমন ঘৃনার দৃষ্টিতে দেখল।আমার হৃদয় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। কেন??আমি কি করেছি?ঐ মানুষটার থেকে দূর হতেই এতো শূন্যতা সৃষ্টি হলো কেন?কেন মনে হচ্ছে আমি ঐ রাক্ষস মানুষটা ছাড়া দম আটকে মারা যাব!কেন?দাদি কেন আমাকে ঐ বাড়ি থেকে চলে যেতে বলতে চাইল? কিসের রাগ আমার উপর?কেন সবাই রুপ আপুর করা কাজে আমাকে দায়ি করছে??আমি তো নিজের কানে শুনলাম তীব্র চৌধুরী আমাকে ভালোবাসে না!বাসে না ভালো!তবে আমার মতো মেয়েকে শুধু ভো……
আর ভাবতে পারল না রিদি ডুকরে উঠলো আবার। মনে পড়ল ঙ্গান ফিরার পরের ঘটনা। ঙ্গান ফিরার পর রুপের জন্য চিন্তা হচ্ছিল তাই কোন কিছু না ভেবে রুপের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই রুমে ঢুকে তিরা চৌধুরী আর রাইফা চৌধুরী!রাইফা রিদির দিকে তেড়ে এসে বলে,
তুই আজকেই এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি!তোর যা লাগবে যত টাকা লাগবে তুই সব পাবি।এই নে এখানে ১০লাখ টাকা আছে আর এই নে চেক ইচ্ছে মতো এমাউন্ট বসিয়ে নিস!
বলেই রিদির দিকে টাকার বান্ডিল ছুড়ে মারে।রিদি হচকচিয়ে তাকাল রাইফার দিকে।একবার টাকা তো একবার রাইফার দিকে তাকালো।
আমি কিছু করি নি বিশ্বাস করুন!আমি জানতাম না রুপ আপু এমন কিছু করবে।আমি.….
তুই কি তুই কি হ্যাঁ!!আমার মেয়ে তোকে বোনের মতো ভালোবাসল আর তুই তার বদলে তার ভালোবাসার মানুষটিকে ছিনিয়ে নিচ্ছিস!ছি লজ্জা করে না তোর!!করবে কিভাবে মায়ের মতোই তো হয়েছিস স্বার্থপর।
এই মেয়ে তুমি যদি মনে করো তীব্র তোমার প্রতি দূবল বা তোমাকে ভালোবাসে তবে ভুল ভাবছ!তীব্র আমার সন্তান! আমি ওর মা!আমি তোমাকে বলছি!তীব্র কখনো তোমাকে ভালোবাসবে না।হয়তো তোমার শরীর ওকে টানছে তাছাড়া আর কিছু না। পুরুষ মানুষ বাড়িতে বৌ নামক যদি আর্কষনীয় শরীর থাকে তবে….
তুমি নিশ্চয় বুঝেছ আমি কি বলছি!!
রিদি তিরা বেগমের কথায় একমত হতে পারল না।মন সাই দিল না তিরা বেগমের কথায়।ভালো হয়তো বাসবে না কিন্তু সন্মান টুকুও তীব্র তাকে করে না??করে অবশ্যই করে!না হলে ঐ বৌ ডাকে আমার এমন অনূভুতি কেন হয় ?যেন ডাকটা শুধু আমার জন্যই বরাদ্দ!
শোন মেয়ে রুপের সাথে কারো তুলনা হয় না। রুপ একটা হূরপরি। তাছাড়া সামনে বিরিয়ানি রেখে কেউ পান্তা ভাত খেতে যায় না!আমি তোমার ভালোর জন্যই বলছি তুমি চলে যাও যা লাগবে যত লাগবে পাবে! শুধু তীব্রর জীবন থেকে চলে যাও!(তিরা)
কাকে বোঝাচ্ছেন ভাবি!ঐ মায়ের মতোই স্বার্থপর!(রাইফ)
রিদির চোখ ছলছল করছে।আর সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে! উদ্দেশ্য দাদির ঘর!দাদির কাছে গেলে দাদি নিশ্চয় তাকে ভুল বুঝবে না।দাদি তো সব জানে!রিদি নাজমা চৌধুরীর ঘরে সামনে গিয়ে দাড়ালো।ঢুকতে গিয়েও থেমে গেল ভেতর থেকে দাদির কথার আওয়াজ আসছে,
তুমি কি বলতে চাইছ আরফিন?
আমি বলতে চাইছি আম্মা আপনি তীব্রর সাথে রিদিতার বিয়ে দিয়ে ঠিক করেন নি আপনি জানতেন আম্মা রুপ তীব্র কে কতোটা ভালোবাসে!
আমি তোমাকে আগেও বলেছি তিশার ইচ্ছে ছিল…..
ও কাম অন!সেই কোন সময়ের কথা বলছেন আপনি?
তিশা তীব্রর কাছে কি তুমি জানো আরফিন।
হ্যাঁ আমি জানি! কিন্তু তীব্র কখনো ঐ মেয়েকে নিয়ে সংসার করবে না। দুদিন পর ওকে আর ভালো লাগবে না ছুঁড়ে ফেলবে!
তীব্র সম্পর্কে এই ধারনা তোমার!
আমি যা দেখছি তাই ই বলছি আম্মা!ঐ মেয়েকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিন!
দিয়ার মেয়েকে আমি বের করে দিব!তুমি এ কথা বলছ আরফিন??
হ্যাঁ আমি বলছি!যা ছিল সব অতীত!এখন আমার মেয়ে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট।
তোমার মনে হয় তীব্র ওকে যেতে দিবে?
দুদিন পর বের করে দিক এর চাইতে ভালো নাকি সন্মান টুকু তার সাথে থাক!আর যদি ঐ মেয়ে এই বাড়িতে থাকে তবে আমি এই বাড়িতে থাকব না আম্মা!
আরফিন!!!
আমাকে মাফ করবেন আম্মা!
ঠিক আছে! আমি বলব ওকে বের হয়ে যেতে।বলব চলে যেতে।খুশি এবার তুমি!মা মরা মেয়েটার সাথে সবাই ই খারাপ আচরন করবে তাই তো স্বাভাবিক!!
আরফিন কিছু বলল না।রিদির প্রতি সে যথেষ্ঠ কেয়ারফুল হলেও রুপ যে তার প্রান!
রিদি আর দাড়াল না। শক্তিহীন পায়ে শুধু হাঁটতে লাগলো।বুকের ভেতর কেমন যেন করছে।মনে হচ্ছে সব যেন শেষ হতে চলছে। ভাবনা যেন মূহুর্তে সত্য প্রামানিত হলো।শেষ হওয়ার কথা ভাবতে না ভাবতেই রুপ আর তীব্রর কথা শুনে রিদি আর পারল না সহ্য করতে।তীব্র আর রুপের পুরো কথাটাই শুনেছে রিদি তার কিশোরী নরম মন ভুলবশত ভেবেই বসল তীব্র তাকে ভোগ করতে চাই!তাইতো তখন ভোগের কথা বলেছিল।
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৫
নিজের সন্মান নিয়ে চলে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু ভোগ বলার পর তীব্রর আচরন তাকে শারীরিকভাবে না নির্মম ভাবে আঘাত করেছে।সে তো ভেবে ছিল এখন সে ভালো থাকবে!তবে কিসের এই অস্থিরতা কিসের এই শূন্যতা!কেন এতো জ্বলছে ভেতরে মনে হচ্ছে ভেতর টা পুড়ছে।রিদির কাছে এই অনূভুতি ই নতুন। হয়তো জানে না ভালবাসা ম্যাজিক এর মতো । ভালোবাসা ঔপন্যাসিক হলেও সত্য যে ভালবাসা রয়ে সয়ে হয় না।হুট করেই হয়।রিদির মনে তীব্র নাম গাঁথা হলেও অবুঝ সপ্তদশী এখনো বুঝতে পারে নি সেই অনূভুতির নাম কি! কিন্তু ভুলটা ঠিকই বুঝেছে।এই ভুল দুইজনকে কোন দিকে নিয়ে যাবে। দূরত্ব কমবে না বাড়বে।নাকি শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে সব।