আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৮
ইশিকা ইসলাম ইশা
মনসুর আলী চিন্তিত মুখে মেয়েটাকে দেখল। মায়াবী মুখখানা দেখে পালস চেক করতেই একজন নাস ছুটে এসে বললো,
আমি বলেছিলাম ওনি দূবল। তবুও রক্ত দিয়েছে!
মনসুর আলী রাগী গলায় বলল,
কি কারনে রক্ত নিয়েছেন আপনারা? জানেন না অসুস্থ অবস্থায় রক্ত নেওয়া যায় না।
নাসটি কাচুমাচু করে বলল,
স্যার আমরা মানাই করেছিলাম।কিন্ত বাচ্চাটার অনেক রক্ত ঝরেছে তাই ইমার্জেন্সি রক্ত প্রয়োজন ছিল আর ব্লাড ব্যাংক এ ও পজিটিভ রক্ত ছিল না।
মনসুর আলী ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
ওনাকে রুমে নিয়ে চলুন।আর স্যালাইন দিন!
জি স্যার!আসলে স্যার বাচ্চাটাকে মেয়েটা এক্সিডেন্ট অবস্থায় পেয়েছে।ও জানে না বাচ্চা টা কে?
মনসুর আলী অবাক হলেন না। প্রতিদিন প্রায় এমন কেস আসে হসপিটালে।হাসিব কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
তুমি গিয়ে মাহিরের খোঁজ করো হাসিব।আমি এই সিচুয়েশনে কিভাবে যাই!এটাও আমার দায়িত্ব!
হাসিব অবাক হল না।অনেক বছর ধরেই কাজ করছে মনসুর আলীর সাথে।লোকটা খুব দায়িত্বশীল। প্রতিটি কাজ করে দায়িত্বের সাথে।এই যে নাতি হারানোর ভয়ে তিনি ভেতরে অস্থির হয়েও দায়িত্ব পালনে পিছুপা হলেন না।
হাসিব হসপিটাল থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে যেতেই হতদন্ত হয়ে ছুটে এলো মাহিরা।সাথে আছে ছোট ভাই মির আলী। ততক্ষণে মনসুর আলী পরিস্থিতি দেখার জন্য কেবিনে প্রবেশ করতেই থমকে যান।সাদা শার্ট আর সাদা প্যান্ট পরিহিত মাথায় ব্যান্ডেজ করা নিথর দেহটা দেখে আঁতকে উঠলেন।আনমনেই বের হল,
মাহির!!!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নাসটি এবার কাচুমাচু করে বলল,
কি ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে বাচ্চাটা যে নিখোঁজ!!
মনসুর আলী উওর না দিয়ে বসলেন মাহিরের সিঊরে।মাথায় হাত বুলিয়ে পালস চেক করলেন।এরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ বাড়িয়ে চুমু দিলেন নাতির কপালে।নাস মেয়েটি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মনসুর আলীর দিকে। অচেনা একটা বাচ্চা কে এভাবে কেউ আদর করে তার জানা ছিল না। তবুও তার কিছু বলার নেই।সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো।
মনসুর আলী নাতিকে পেয়ে দ্রুত কল করলেন মেয়ের নাম্বারে। ঠিক কয়েক মিনিটের মাথায় হতদন্ত হয়ে ছুটে এলো ডঃ মাহিরা সুলতানা।পিছে পিছে এলো মির আলী।তারা ঘটনাস্থল থেকে ঘটনা জেনে এসেছিল হসপিটালে। মাহিরা সুলতানা ছেলেকে পেয়ে যেন আত্বা ফিরে পেল।ছেলের কপালে চুমু দিয়ে পাশে বসে রইলেন।চোখে তার অঝোরে পানি পড়ছে। একমাত্র সন্তান তার।
পাপা! মাহির এখন কেমন আছে??
ছেলের কথায় মির আলী দিকে তাকালো মনসুর আলী,
এখন ভালো আছে।চিন্তার কোন কারন নেই। রক্ত পড়ছে অনেক। তবে ভ্যাগিস মেয়েটা ছিল।
মির আলী ভূ কুঁচকে বলল,
কোন মেয়ে? কোথা থেকে এলো?মাহির কে কিভাবে পেল?
মনসুর আলী ছেলের দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকালেন। বিরক্ত কর কন্ঠে বলল,
এটা তোমার আদালত নই মির। এমন জেরা করছ!মেয়েটা মাহির কে হসপিটালে নিয়ে এসেছে আর নিজের কথা না ভেবে মাহির কে রক্ত দিয়েছে।মেয়েটা দূর্বল। আমার সামনেই ঙ্গান হারিয়েছে।এখন রেস্ট করছে।
মির গম্ভীর মুখে তাকালো মাহিরের দিকে। নিশ্চুপ মাহির কে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল মির আলী।মাহির অধিক চঞ্চল।তাই তো মায়ের হাত থেকে ছুটে রাস্তায় চলে এসেছে।তবে আল্লাহর কাছে কোটি কোটি ধন্যবাদ মাহির ঠিক আছে।
এর মাঝেই নাস রুমে ঢুকে মনসুর আলীর উদ্দেশ্য বলল,
স্যার! মেয়েটার ঙ্গান এখনো ফেরেনি!
মনসুর আলী নার্সকে বলল,
মেয়েটার শরীর ভীষণ দূর্বল।তাই হয়তো ঙ্গান ফিরতে সময় লাগছে। আপনি যান আমি আসছি!
জি স্যার!
কোন মেয়ে পাপা!!
মিরের প্রশ্নে মনসুর আলী বললেন,
জীবন বাঁচানো মেয়েটা!
মাহিরা সুলতানা ছেলের কপালে চুমু দিয়ে বাবার উদ্দেশ্য বলল,
বাবা আমি মেয়েটার সাথে কথা বলতে চাই! আমার ছেলের জীবন বাচালো তাঁকে ধন্যবাদ না দিয়ে কিভাবে থাকি!
মনসুর আলী মৃদু হাসলেন।এর মাঝে আবারো নার্সটি ছুটে এসে বলল,
স্যার মেয়েটির ঙ্গান ফিরেছে!(বলেই আড়চোখে তাকালেন মির আলীর দিকে।তার বার বার আসার কারন রিদি নয়।বরং মির আলী। সুদর্শন মির আলীকে দেখে হয়তো নাসটির পছন্দ হয়েছে।হবে বাই না কেন? যথেষ্ট সুন্দর আর সুদর্শন খ্যাতি অর্জন করা মির একজন ওকিল হিসেবে। গ্রামে তার ব্যাপক সুনাম।)
মির ব্যাপার টা ধরতে পেরে বেজায় বিরক্ত হলো।এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকানোর কি আছে। অদ্ভুত!!
মির বিরক্ত সহিত ফোন স্কল করতে করতে বের হলো রুম থেকে।মাহিরা সুলতানা রিদির ঙ্গান ফিরেছে শুনেই বের হয়ে গেছে রিদির কাছে।
রিদির ঙ্গান ফিরতেই সে হচকচিয়ে তাকাল প্রথমে ঘড়ির দিকে,
৩টা বেজে ৪০মিনিট তখন ঘড়িতে। তড়িঘড়ি করে উঠতেই মাহিরা হতদন্ত পায়ে এগিয়ে এসে বলল,
উঠো না! তোমার শরীর খুব দূর্বল!সবেই স্যালাইন শেষ হয়েছে!
রিদি হচকচিয়ে তাকাল অতি সুন্দরী এক রমনীর দিকে।মাহিরা এগিয়ে এসে হাত রাখল রিদির মাথায়। বিনয়ী স্বরে বলল,
নাম কি তোমার?
রিদিতা মৃদু গলায় বলল,
রিদিতা!
রিদিতা তোমাকে ধন্যবাদ দিলেও কম হবে!তুমি আজ আমার ছেলের জীবন বাঁচিয়েছ। তোমার এই উপকার আমি কোনদিন ভুলব না!
রিদি বুঝতে পারল যাকে আজ সে হসপিটালে ভর্তি করালো ইনি সেই বাচ্চার মা।
ধন্যবাদ এর কি আছে আপু!এটা আমার দায়িত্ব!
আচ্ছা কি খাবে বলো?খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই!
না আপু!আসলে অনেক দেরি হয়ে গেছে!আমাকে যেতে হবে। বাসায় সবাই হয়তো খুব চিন্তা করছে।
কিন্তু!!
আপু প্লিজ! আমি বাবুটাকে দেখেই চলে যাব!
ঠিক আছে!তবে তোমাকে বাসায় কিন্তু আমাদের গাড়ি দিয়ে আসবে!
না না আপু আমি যেতে…
কোন কথা না!তুমি জানো না তুমি আজ কতো বড়ো উপকার করেছো।এই টুকু তো করতে দাও।না করো না প্লিজ।
রিদি আর কিছু বলল না।মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।
বেডে হেলান দিয়ে চপচপ করে কিটক্যাট খেতে ব্যস্ত একটা বাচ্চার দিকে তাকালো রিদি। মিষ্টি দেখতে একটা বাচ্চা।যখন এক্সিডেন্ট হয়েছিল তখন রক্তে লাল হয়ে ছিল মুখখানা।রিদি একটা ওরনা ব্যাগ থেকে নিয়ে ভালোভাবে শরীরে পেঁচিয়ে মাথায় দিয়েছে।হিজাব টা যেহেতু আর ব্যবহার করতে পারবে না তাই একটা ওরনা কোন মতে গায়ে দিয়েছে।রিদি মিষ্টি হেসে গিয়ে বসল মাহিরের পাশে,
এখন কেমন আছো তুমি? ব্যাথা করছে কি বেশি?
ইকটু ব্যাথা করছে!মিষ্টি মেয়ে!
মিষ্টি মেয়ে!
হ্যাঁ!নান বলেছে তুমি মিষ্টি মেয়ে!
রিদি মৃদু হেসে বলল,
তাই!আমি মিষ্টি মেয়ে হলে তুমি কিন্তু দুষ্টু ছেলে!আর কখনো এমন করবে না! রাস্তায় আম্মুর হাত ছেড়ে দৌড়াবে না!এসব তো দুষ্টু ছেলে করে।তুমি তো মিষ্টি ছেলে তাই আর কখনো এমন করবে না ওকে??
ঠিক আছে মিষ্টি…..
হেই চ্যাম্প দিস ইজ ফর…..
বলে রুমে ঢুকতে ঢুকতে রিদির দিকে তাকালো মির! মাথায় ওরনা দেওয়া সিগ্ধ শ্যামল মুখটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ।
মাহিরা সুলতানা মির কে দেখে বলল,
কোথায় ছিলি তুই?আর ওকে এখুনি চকলেট কেন দিয়েছিস!রিদিতা ও আমার ভাই মির!মির ওর নাম রিদিতা!
মির আওয়ালো,
রি দি তা!!
রিদিতা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মিরের দিকে তাকিয়ে সালাম দিল,
আসসালামুয়ালাইকুম ভাইয়া!
মির ফট করেই বলল,
আমি তোমার কোন জন্মের ভাই লাগি?
রিদি ঘাবরে গিয়ে হচকচিয়ে তাকাল। স্বাভাবিক একটা কথার এমন উওর আশা করেনি রিদি।মাহিরা নিজেও ভাইয়ের রোখা ব্যবহারে বিরক্ত হল।
মির??
মির আলী চরম বিরক্তি নিয়ে সুধাল,
মির কি আপু?যা সত্যি তাই বললাম!
মাহিরা ভাইয়ের ব্যবহার এ অবাক হলেও পরিস্থিতি সামলাতে বলল,
রিদিতা বাসায় যাবে ড্রাইভার কে ওকে ওর বাসায় দিয়ে আসতে বল!
পারব না! ড্রাইভার নাই!
নাই মানে?
মানে আমি পাঠিয়েছি কাজে।
মাহিরা অবাক হয়ে বলল,
তুই???তোর কি কাজ?তুই আবার কবে থেকে ড্রাইভার কে দিয়ে কাজ করাচ্ছিস?
মিরের সোজাসাপ্টা জবাব,
আজ থেকে!
মাহিরা সুলতানা ভাইয়ের ট্যাঠা কথায় বিরক্ত হয়ে বলল,
আমি রিদিকে বাসায় দিয়ে আসছি তুই মাহিরের পাশে বস।
আমার কাজ আছে আপি?
মাহিরা সুলতানা কিছু বলার আগেই রিদি বলল,
আপু থাক না হয় আমি যেতে পারব!
এই পিচ্চি মেয়ে!তোমাকে একা ছেড়ে পড়ে আমরা কেস খাই নাকি?
মিরের কথায় রিদি আবারো হতবাক হয়ে তাকালো।মির সেদিকে তোয়াক্কা না করে বলল,
আমি দিয়ে আসছি। শুধু তুমি আমার জানকে বাচিয়েছো তাই!!
রিদি এবার ফুস করে উঠল,
আপনার কাছে কোন সাহায্য চাই নি!আমি যেতে পারব!অযথা আপনার সময় নষ্ট করেছেন কেন?
মির রিদির রাগে ফুলে উঠা মুখখানা দেখে বলল,
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৭
সাহায্য চাইতে নেই মেয়ে কিন্তু সাহায্য করতে হয়।চল চল আমার আবার কাজ আছে…..
রিদিতা রেগে কিছু বলার আগেই মাহিরা বলল,
রিদি তুমি মিরের সাথেই যাও!প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো!
রিদি মাহিরার মুখের উপর না বলতে পারল না।মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। কিন্তু মনে মনে চরম বিরক্ত হলো। অদ্ভুত মানুষ!!রিদি মাহির কে আদর করে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।করিডর ধরে এগিয়ে যেতেই দাঁড়িয়ে গেল একটা শব্দ শুনে,
বৌ!!এই বৌ!শুনেন!