আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৭+২৮

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৭+২৮
ইশিকা ইসলাম ইশা

রাত তখন প্রায় ৮ টার কাছাকাছি।রাইমা হসপিটাল থেকে ফিরেছে ৭:৪৫ টায়।হাত মুখ ধুয়ে সোজা রুমে ঢুকে ২বছরের ছেলে রিহান কে তার বাবা নাফিস আহমেদ এর বুকে ঘুমাতে দেখে মিষ্টি হেসে ওয়াস রুমে ঢুকে।গোসল করে ভেজা চুল শুকিয়ে এসে বসেছে।ছেলের কপালে পরপর চুমু দিতেই নাফিস বলে,
সব ভালবাসা ছেলের জন্য বুঝি!রাইমা মিষ্টি হেসে বলল,
তোমার জন্য ও কিছু আছে তবে আগে ছেলের জন্য!!
হ্যাঁ তোমার ছেলে তো আমার ভালবাসার ভাগ বসাইছে।
এমন কথাই রাইমা ফিক করে হেসে ছেলেকে কোলে নিতেই কাজের মেয়েটি নক না করেই ঝরের গতিতে রুমে ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
আপা!আপাগো! বাসায় ডাকাত আইছে গো আপা!
রাইমা, নাফিস চমকে উঠে বললো,
কিহহ??

হ আপা!!আমি হাচা কইতাছি!!আপনারে খুজতাছে!আপনি পলাই যান আপা!
রাইমা আশ্চর্য হয়ে বলল,
পালাবো কেন?দেখি সরো কে এসেছে দেখছি!
আপা গো যাইযেন না!ইয়া লম্বা কালো কালো জামা পড়া লোকের হাতে বড় বড় গুলি!!
রাইমা কিছুটা ঘারবে গেলেও নিজেকে সামলে বাইরে বেরিয়ে আসে!রাইমা এসে কিছু বলার আগেই একটা গাড হাতে ফোন ধরিয়ে দেয়!রাইমা আশ্চর্য হয়ে তাকায় ফোনের দিকে! কিছু বলার বা জিগ্গেস করার আগেই মুঠোফোন বেজে উঠল। সেখানে জ্বলজ্বলে করছে “বস”নামটি!গাড রিসিভ করতে বললে রাইমা রিসিভ করেই ভেসে আসে পরিচিত একটা কন্ঠস্বর!
“রিম রাইট নাউ আমার গাডের সাথে হেলিকপ্টার করে চলে আই!আই নিড ইউর হেল্প!রাইট নাউ মিনস রাইট নাউ!নয়তো তোর বর সহ তুলে নিয়ে আসব ”
রাইমা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ফোন কেটে গেল।রাইমা হতভম্ব, হতবাক হয়ে তাকালো ফোনের দিকে! আশ্চর্য হয়ে বলল,
তীব্র!!!!!!!!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নাফিস ততক্ষণে বেরিয়ে এসেছে ছেলেকে কোলে নিয়ে।রাইমার মুখে তীব্র নামটা শুনে চমকে উঠে বললো,
তীব্র!!!
রাইমা কিছুটা ভরকে গিয়ে বলল,
আমাকে এখুনি কোথাও যেন যেতে বলল।মাঠে হেলিকপ্টার আছে!
নাফিস আশ্চর্য হয়ে বলল,
হেলিকপ্টার!!
রাইমা চিন্তিত মুখে বলল,
হয়তো তীব্র কোন বিপদে পড়েছে!!
নাফিসের ভু কুঁচকে গেল। তীব্র চৌধুরী আর বিপদ!আরে সে তো নিজে বিপদকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে তার সাথে কুস্তি খেলেে। সে বিপদে এটা মানা যায়!!ভাববার বিষয় সে বিপদে নাকি তার জন্য অন্য কেউ বিপদে!
নাফিসের ভাবনার মাঝেই একজন গাড বলে,,
ম্যাম আর ৬ মিনিট।আপনি না গেলে আপনার হ্যাজবেন্ট কে তুলে নিয়ে যাওয়ার আদেশ আছে!
রাইমা কিছুটা ভরকে গেল।সে ভেবেই নিল তীব্র বড় কোন বিপদে পড়েছে!তাই দেরি না করে নাফিস কে বলে ঐ পোশাকেই ওদের সাথে গেল।

এদিকে নাফিস স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।বলা তো যাই না তীব্র চৌধুরী যা জিনিস! আর কিডন্যাপ করতে তো সে এক্সপার্ট! নাফিসের এখনো সেই ৪ বছর আগের ঘটনা মনে আছে !
নাফিসের সাথে রাইমার সম্পর্ক ছিল ৬ বছরের।সেই ইন্টার থেকে সম্ভবত!নাফিস ছিল সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান কিন্তু রাইমা ছিল এক মন্ত্রীর মেয়ে।রাইমার সাথে তার আকাশ পাতাল পার্থক্য হলেও দুইজন দুইজনকে খুব ভালোবাসত আর আজো খুব বেশি ভালোবাসে!

রাইমা তখন মেডিকেল এর শেষ বর্ষে।রাইমার বাবা বিয়ে ঠিক করেছে তখন এক মন্ত্রীর ছেলের সাথে।রাইমার সাথে তার সম্পর্ক কিছুতেই মানবেন না তিনি।নাফিস তখন একটা ব্যাংকে কর্মরত ছিলো। সমবয়সী হওয়ায় দুইজনের কেউ ফিন্যান্সিলি ভাবে নিজের পায়ে দাড়ায় নি।নাফিস সবেই একটা চাকরিতে ঢুকেছে।নাফিস রাইমার বাবার কাছে গিয়ে অনেক বোঝায়,মিনতি করে,কিন্তু তিনি কিছুতেই মেয়েকে গরিব ঘরে তার সাথে বিয়ে দিবে না।
এরপর ক্ষমতার জোরে তার চাকরি ও বাতিল করে দেয়।আর রাইমাকে হুমকি দেয় বিয়ে না করলে নাফিস আর ওর পরিবারকে মেরে ফেলবে।নাফিস রাইমার বাবার হুমকিতে তখন মা বোন কে নিয়ে গ্রামে গিয়ে উঠেছে।ছোট বোন আর মাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় রাইমার বাবা।নাফিস সেদিন বুঝেছিল ক্ষমতা কি!!!মা আর ছোট বোন ছাড়া আর কেউ ছিল না নাফিসের তাই ওদের কথা ভেবে নিজের জানকে কুরবানী দিয়ে ফিরে এসেছিল গ্রামে।
রাইমার বিয়ের দিন কয়েকটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল নাফিস!এই দিনটা পর তার তিলে তিলে গড়া ভালবাসার মানুষটা হয়ে যাবে অন্যর।এটা ভাবতেই শতখান টুকরো হচ্ছে তার হৃদয়।তাই ঘুমের ওষুধ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে ছিল।

কিন্তু সে তো আর জানত না তার জীবনে ফেরেশতার মতো হাজির হবে তীব্র চৌধুরী!
সেদিন নাফিস ছিল বেহুঁশ।তবে ঘুমের মধ্যে নাফিসের মনে হচ্ছিল ওর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।চোখ পিটপিট করে খুলে বুঝতে পারে তাকে পুরো পানিতে ডুবিয়ে রেখেছে।নাফিস শ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করতেই তাকে বের করা হয় পানির মধ্যে থেকে।নাফিস শ্বাস নিতে নিতে পিটপিট করে তাকালো আশেপাশে।সে কোথায় এটা বুঝতে বেশ সময় লাগলো তার।ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে বোন নাফিসা আর মায়ের কান্নার শব্দে ততক্ষণে মস্তিষ্ক সচল হল।টেনে চোখ খুলে তাকাতেই বোন নাফিসা কেঁদে কেঁদে বলল,
ভাইয়া!! আমাদেরকে কিডন্যাপ করে তুলে এনেছে এরা!আমাদের বাঁচাও!!
নাফিসের মস্তিষ্ক তখনো পুরোপুরি সচল না।ঠিক তখনই ভেসে এলো কারো ভরাট কন্ঠে বলা কথা,
এই লাবিব এই হাদাকে বিয়ের সাজে রেডি কর!সালা বালের ভালোবাসা! ভালোবাসা মাই ফুট!একজন ঘুমের ওষুধ খাইয়া মরছে তো অন্যজন…..
ছ্যা বাল….

নাফিস এমন কথায় চোখ খুলে তাকালো নীল চোখ যুক্ত রাগে গজগজ করতে থাকা শক্তিশালী সুদর্শন যুবকের দিকে। আশ্চর্য হলেও সত্য নাফিস সেদিন হা হয়ে তাকিয়ে ছিল তীব্রর দিকে! তীব্র কে সেই মূহূর্তে তার সাদা কোরিয়ার নায়ক লাগলো!বয়স হয়তো তার সমান বা ছোটই হবে তবে জিম করা বডি ফিটনেস, উচ্চতা আর অধিক সুদর্শন হওয়াই নজর আটকে গেল।
নাফিসের হুস ফিরল নাফিসার কান্না দেখে।নাফিস তীব্রর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বোনের দিকে তাকালো। স্কুল ড্রেস পড়নে তার পাশে বসে কাঁদছে বোন নাফিসা।নাফিসার কান্না দেখে বোনকে আগলে নিল সে। মৃদু স্বরে জানতে চাইল সে এখানে কিভাবে কি হল,
নাফিসা কেঁদে কেঁদে বলল।সে আর ওর বান্ধবী স্কুল শেষে ফুচকা খেয়ে ফিরছিলো হুট করে কয়েকটা গাড়ি কোথা থেকে এসে তাদের ঘিরে ধরল। দুজনে ভয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল।কারন যারা ঘিরে ধরেছে তাদের সবার হাতে বন্দুক ছিল।দুজন তখন স্কুলে পড়া ছোট মানুষ।
তখন ওদের মাঝে থেকে একজন বলল,

তোমাদের মধ্যে নাফিসের বোন কে?
নাফিসা ঘাবরে গিয়ে ঘামচে ধরল বান্ধবী কে।নাফিসা জানে তার ভাইয়ের প্রেমিকার বাবা তাদেরকে মেরে ফেলতে চাই। ছোট নাফিসা ধরেই নিল এর তারা। ভয়ে ভয়ে নাফিসা কিছু বলার আগেই পাশ থেকে মেয়েটি মানে নাফিসার ফ্রেন্ড বলল,
আমি নাফিসা!!আমাকে মেরে ফেলুন!ওকে ছেড়ে দিন!
নাফিসা চমকে উঠে তাকালো প্রিয় বান্ধবীর দিকে।সে সবটা বলেছে তাকে।আর আজ তাকে বাঁচাতে নিজেকে কুরবান করছে!নাফিসা তখন বলল,
মিথ্যা বলছিস কেন?আমি নাফিসা!
না না!আমি নাফিসা!কথাটা বলেই ও ফিসফিস করে বললো,
ওরা তোকে মেরে ফেলবে নাফু!তার চেয়ে আমাকে মেরে ফেলুক আমার তো আর কেউ……
এই তোরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস!জলদি তুলে আন! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাল দেখছিস!
লাবিব হচকচিয়ে বলল,

বস মানে মেয়ে দুটা নিজেকে নাফিসা মানে নাফিসের বোন দাবি করছে কি করব বস!!
মেরে দে! দুইজনকে মেরে দে! আপদ বিদায় হোক!
পিছন থেকে কারো এমন কথায় মেয়েটি ভয়ে ভয়ে বলল,
ওকে মারবেন না ভাইয়া প্লিজ!আমাকে মেরে ফেলুন।আমি বলছি তো আমি নাফিসা।তবে মরার আগে আমি একটা কথা বলতে চাই! ভালবাসা কোন অন্যায় না!নাফিস ভাইয়া রাইমা আপুকে ভালোবাসে এতে কোন অন্যায় নেই! কিন্তু আপনারা ওদের দুইজনকে এভাবে আলাদা করে কখনো ভালো থাকবেন না।এতো বড় পৃথিবীতে খুব কম সংখ্যক মানুষ ভালবাসা পাই……..
এই মেয়ে! এই!!তোর ভাষন শুনতে চেয়েছি আমি! আমাকে একদম ভালবাসার ঙ্গান দিবি না।এইটুকু মানুষ !!এতো ভালবাসা বুঝিস!কয়টারে ধরে এই বয়সে নিজেরে বিলাইছিস!সালার ভালবাসার কথা বলছিস!, ছোট মানুষ ছোট্ট থাক নয়তো মুখের থেকে হাত চলবে দেখিস!
মেয়েটি ভয়ে ভয়ে অবুঝ গলায় বলল,

বিলাবো কেন?ভালবাসা কি বিলানো যায়!এটা কি মসজিদে পাওয়া ফ্রি লাড্ডু নাকি…….
এই চুপ!বেশি কথা বললে পেছন থেকেই সব কয়টা বুলেট গেঁথে দিব!এই লাবিব যা করার জলদি কর!নয়তো দুইটাকেই মেরে দে…..
লাবিব তীব্রর কথায় পাংশুটে মুখে গুলি তাক করতেই মেয়েটি নাফিসার হাত ধরে দৌড় দিল! কিন্তু কয়েককদম যেতেই একটা শক্ত পোক্ত হাত মেয়েটির হাতটা ধরে ফেলল।মেয়েটি ভয়ে নাফিসার হাত ছেড়ে বলল,
নাফু পালা!!
নাফিসা ভয়ে আতঙ্কে কয়েক কদম যেতেই গুলির শব্দে থেমে যাই।পেছনে ফিরতেই দেখতে পায় প্রান প্রিয় বান্ধবীকে ঢলে পড়তে।নাফিসা চিৎকার করে উঠল,
রুহ………

রুহ নামের মেয়েটি ঝুলে আছে একপ্রকার।কারন তখনো তীব্র শক্ত করেই ধরে আছে মেয়েটির ডান হাত!নাফিসা কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এসে বলল,
রুহ কে ছেড়ে দিন ভাইয়া!ও আমার বান্ধবী রুহ!আমি নাফিসা আমি…..
নাফিসা কাঁদতে কাঁদতে প্রিয় বান্ধবীকে বারবার ডাকছে,
এই রুহ!এই রুহ!!উঠ না।
মরার মত নাফিসার কান্না শুনে রেগে কড়া গলায় বলল,
এই মরার মতো কাদছিস কেন?মরেছে ও!! শুধু বেহুঁশ হয়েছে ভয়ে!বালের সাহস !!দেখানো শেষ!বলেই রেগেই এতোক্ষণ পর তাকালো ঝুলন্ত রুহ নামক মেয়েটার দিকে। কাঁধে স্কুল ব্যাগ সহ ঝুলে আছে মেয়েটা। ঝুলন্ত রুহকে কিছুক্ষণ দেখে তীব্র জোরে হাতে টান দিতেই ছিটকে এসে পড়ল তীব্রর বাহুতে! তীব্র চোখ মুখ শক্ত করে ধাক্কা দিতে যাবে তার আগেই নাফিসা চেঁচিয়ে বলল,
ভাইয়া ওকে ধাক্কা দিবেন না প্লিজ!!একটু কষ্ট করে ধরে রাখুন!ও ব্যাথা পাবে!কিন্তু তীব্র সে কি আর কারো কথা শোনে!!নিজের থেকে আলাদা করার জন্য যেই ধাক্কা দিতে যাবে ওমনি পাশ থেকে লাবিব বলল,
বস!! রাইমা ম্যাম হাতের রগ কেটে ফেলেছে…..

তীব্র বিরক্ত হয়ে আনমনেই একহাতে জড়িয়ে ধরল রুহর কোমর ব্যালেন্স রাখার জন্য!রুহুর ছোট্ট দেহখানা তীব্রর গায়ে পড়ার সাথে সাথেই তীব্র ভু কুঁচকে গেল! তীব্র কি মনে করে ধরে রাখা কোমর ছেড়ে দিতেই রুহ নামক মেয়েটা পড়ে গেল নিচে। তীব্র অদ্ভুত ভাবে মেয়েটার দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে লাবিবের উদ্দেশ্য বলল,
লেডি গাড এনে মেয়েটাকে বাড়ি দিতে আয়! খবরদার!যদি কোন পুরুষ ওকে ছুঁয়েছে তো!! লাবিব আশ্চর্য হয়ে তাকালো পড়ে থাকা নিথর মেয়েটার দিকে।কফি কালার বোরকা পড়নে ছোট একটা মেয়ে।কিসে হবে?? 6,7 এ পড়ে হয়তো!!মুখে মাস্ক পরে আছে।চোখ বন্ধ হয়ে বেহুঁশ পড়ে আছে….
তোকে হাবলার মতো হা হয়ে থাকতে বলেছি?জলদি নাফিসের বোন কে তুলে নিয়ে আয় বলেই নিজের গাড়িতে বসতেই গাড়ি ধীরে ধীরে আড়াল হয়ে গেল!
লাবিব বসের কথা অনুযায়ী কাজ করে নাফিসা কে নিয়ে ফিরল। পথিমধ্যে মেয়েটার মরা কান্না তাকে বিরক্ত করলেও কিছু বলল না।

নাফিস সবটা শুনে কিছু বলার আগেই দুইজন ছেলে এসে নাফিস কে পাঞ্জাবি পড়িয়ে দিল। হতভম্ব নাফিস অবাক হয়ে দেখে গেল সবটা।এরপর গাড়িতে তুলে নিয়ে আসলো রাইমাদের বাড়ি। হতভম্ব হয়ে যাওয়া নাফিস তখনো বুঝল না কিছু। চারদিকে লোকজন কিন্তু একদম স্তব্ধ পরিবেশ।স্টেজ এ চোখ যেতেই দেখল কারো গায়ে হেলিয়ে বধূ বেশে বসে আছে তার প্রান প্রিয়া মেয়েটি।বিয়ের বাড়ির এমন অবস্থা দেখে মূহুর্তে স্তব্ধ হয়ে গেল সে।
কাজী সাহেব বিয়ে শুরু করেন!!
হতভম্ব নাফিস আরো হতভম্ব হলো যখন কাজির মুখে বরের জায়গায় তার নামটা শুনল! একটা মেয়ে এগিয়ে এসে নাফিসের হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো রাইমার কাছে।রাইমা কে ধরে বসা মহিলাটি উঠে তাকে বসার জায়গা করে দিল।নাফিস খেয়াল করল হাতে ব্যান্ডেজ করা রাইমার দিকে!বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠল।লোক সমাগম ভুলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রাইমা কে।রাইমা দূবল শরীর নিয়ে কেঁদে উঠলো।
এরপর বিয়ে শেষ হতেই তীব্র এসে দাড়ালো মন্ত্রী নবাব খানের সামনাসামনি! তীব্র কে দেখে মন্ত্রী কিছুটা ঘাবরে গেল। তীব্র একটা চেয়ারে বসে বললো,
ইন ফিউচার আপনি যদি ওদের মধ্যে ঢুকে ভিলেন হওয়ার চেষ্টা করেন তো আমি ভুলে যাব আপনি আমার বন্ধুর বাবা!ইউ নো হু আই এম!! তীব্র চৌধুরী!ভিলেনের চেয়েও বড় ভিলেন আমি!কথাটুকু শেষ করে তীব্র এবার উঠতে উঠতে বলল,

তাছাড়া আমি এককথা দুবার বলতে পছন্দ করি না আশা করছি মনে রাখবেন!
মন্ত্রী নবাব খান এমন শান্ত হুমকি শুনে কিছু বলার সাহস পায় না। কথায় আছে “পোলা তো নয় যেন আগুনের গোলা”আসলেও তাই!!এইটুকু বয়সে যদি এতো পাওয়ার এই ছেলের থাকে তবে….
ধনাঢ্য চৌধুরী বাড়ির ছেলে তীব্র চৌধুরী!টাকা আর পাওয়ার সম্পর্কে ধারনা আছে তার!তাই আর কিছু বলার সাহস করল না। তাছাড়া তীব্র চৌধুরী সম্পর্কে যা শুনেছিল আজ নিজের চোখে দেখে নিল।পুরো বিয়েবাড়ি তার তান্ডবে স্তব্ধ হয়ে আছে বাড়ি শুদ্ধ মানুষজন অথচ সবাই নিশ্চুপ।
তীব্র বিরক্ত হয়ে এগিয়ে গেল রাইমার দিকে।রাইমা নাফিসের গায়ে হেলিয়ে বসে আছে।হাতের রগ কাটায় রক্ত ক্ষরণ হয়েছে অনেক।শরীর বেশ দূবল! ঠিক তখনি হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে আসে মির,
এই তোর বিয়ে শেষ!
রাইমা সহ সবাই অবাক হয়ে তাকালো পাঞ্জাবি পড়া সুদর্শন মির আলীর দিকে!মির হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
থাম থাম!আমি একটু দম নিয়া নি!কাজি কই !!
কাজি সাহেব ভয়ে ভয়ে বলল,
আমি এখানে বাবা!!
মির আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে পেল পেছনে কাঁচুমাচু মুখে বসে আছে কাজি।মির হেসে বলল,
বিয়ে শুরু করেন!
কার বিয়ে বাবা!!
কেন?এই যে বর বৌ বসে আছে!
বিয়ে তো শেষ!
কিহ!!এই তুই আমাকে ছাড়াই বিয়ে করে নিলি!!
রাইমা ক্লান্ত গলায় বলল,
তুই যেহেতু আমার বর না তাই তোকে ছাড়াই বিয়ে করেছি!

সালার বন্ধুত্ব বলে কিছু আছে!!এই তীব্র……বলে আশেপাশে তাকাতেই অবাক হলো।প্রায় সবারই দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে তীব্রর লোকজন!মির অবাক হলেও বিরবির করে বলল,
সেই একখান বন্ধু বাপরে! মানুষ এই বয়সে প্রেম করে আর এই ক্ষমতার লড়াই করে!
তো লে এবার বিদায় হ!!বিয়ে আর ভাগ্যে নাই!!

রাইমা মিষ্টি হাসল!তিনজন তিন জায়গায় আজ কয়েকবছর কিন্তু বন্ধুত্ব ঠিকই আছে!নাফিস সেদিন অবাক হয়ে দেখেছিল এমন বন্ধুত্ব!সে কখনো ভাবেনি তীব্র চৌধুরী স্বয়ং তাদের সাহায্য করবে!বিয়ে হতেই ওরা গিয়ে উঠে তীব্রর বাসায়। কিন্তু সেটা চৌধুরী বাড়ি না।এরপর কিছুদিন থেকে মা,রাইমা আর বোনকে নিয়ে পারি জমায় ঢাকা থেকে রাজশাহী মামার কাছে। সেখানে থেকে ছোট্ট একটা চাকরি করে কোনমতে সামলে নেই জীবনটা।যদিও তীব্র সাহায্য করতে চেয়েছিল কিন্তু আর সাহায্যে নেই নি তারা। তীব্রর এই সাহায্যোর প্রতিদান কখনো দিতে পারবে না।এরপর ধীরে ধীরে সবটা ঠিক হয়।গ্রামের জমি বিক্রি করে আবারো ঢাকায় ব্যাক করে সেখানে একটা ফ্ল্যাট কিনে!তার চাকরি হয় ব্যাংক এ অফিসার পদে।রাইমার চাকরি হয়। ডক্টর হিসেবে বেসরকারি মেডিকেলে ।নাফিসার পড়াশোনার জন্য মা রাজশাহীতে থেকে যান।এরপর তাঁদের জীবন আলো করে আসে তাদের ছেলে।এইতো চলছে জীবন!
নাফিস ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে রিহানের কান্নার শব্দে। ছেলেকে সামলাতে সামলাতেই ওর খাবার তৈরি করে নেয়।

হেলিকপ্টার আওয়াজ তুলে ৭মিনিটে পৌঁছাল ফুলতলি গ্রামের খোলা মাঠে। সেখানে মির আগে থেকেই উপস্থিত! হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসে রাইমা।রাইমাকে দেখে মির এগিয়ে গেল।সবটা জানাতে জানাতে গাড়ি করে ২মিনিটে চলে এলো মিজা বাড়িতে।রাইমা সবটা শুনে স্তব্ধ হয়ে ছিল শুধু!কোন কিছু বলে নি।গাড়ী থেকে নেমে মিজা বাড়ির ভেতরে যেতেই মজনু মিয়া রুপে তীব্র কে দেখে রাইমা কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল!এটা তীব্র!! তাও এমন বেশে! তীব্র রাইমা কে এভাবে তাকাতে দেখে এগিয়ে এসে মৃদু গলায় বিরক্তি নিয়ে বলল,
বালের মতো তাকিয়ে আছিস কেন?শোন রাতে বৌয়ের আশেপাশে যেন কেউ না থাকে সেই ব্যবস্থা করে যাবি!
কথাটুকু শেষ করে বেরিয়ে গেল তীব্র!রাইমা এখনো হতভম্ব অবাক!বেচারির অধিক শকড এ মাথা ঘুরে উঠল।এসব মানা যায়!!এটা তীব্র!মাই আল্লাহ!!!এরপর রাইমা রিদিকে চেকআপ করে।জ্বরে কাহিল মেয়েটা!মায়াবি মুখটায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে জ্বরের কোপে মেয়েটির অবস্থা! তাড়াতাড়ি ইঞ্জেকশন পুস করে রাইমা।

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৬

তীব্র বিয়ে করেছে নাফিস!!!
ওহহ!!
পরক্ষণেই…এই কি??কি বললা ??বিয়ে আর তীব্র চৌধুরী!!
রাইমা এসে সবটা বলতেই নাফিস ও খানিকটা শকড হয়ে গেল!
একটা ছবি তো আনতে পারতে!!তোমার কথা শুনে আসলেই দেখতে ইচ্ছে করছে সে কে??
তবে যাই বলো পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে এমন একজন দরকার ছিল!
রাইমা কিছু বলল না সে এখনো শকড্!!

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৯