আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩০
ইশিকা ইসলাম ইশা
সময়টা তখন তপ্ত দুপুর।গ্রামে সবাই এই সময়টাতে ভাত ঘুম দেয়। ক্লান্ত শরীর খাওয়ার পর আরাম চায়।মিজা বাড়িতেও দুপুরের খাবার পর যে যার রুমে আরাম করছে!
রিদিতার জ্বর কমেছে। সকাল থেকেই বেশ ভালো অনূভব করছে। দুপুরে গোসল করে খেয়ে লম্বা চুল গুলো শুকাতে বেলকনিতে বসে আছে সে।পাশেই ছোট একটা টেবিল ফ্যান রাখা যাতে বাতাসে চুল গুলো তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।লতিফা বেগম ই রেখে গেছে চুল শুকানোর জন্য। ফ্যানের বাতাসে সিল্কি লম্বা চুল গুলো বাঁধন হীন উড়ে চলছে।এতে বিন্দুমাত্র মনোযোগ নেই তার।
রিদিতা উদাস মনে তাকিয়ে আছে দূর আকাশে। কালকে জেদের বশেই জ্বর নিয়ে অনেকক্ষণ গোসল করার ফল এই মারাত্বক জ্বর।সে চাই না তার শরীরে পরপুরুষের ছোয়া থাকুক তাই তো জেদের বসে জ্বর নিয়েই গোসল করেছিল কাল।গোসলের পর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই ধুমিয়ে জ্বর এসেছে।এতো পরিমাণ জ্বরের তাপে রিদির কোন ঙ্গান ছিল না।কিছুই মনে ছিল না তার।তবে সকাল হতেই মজনু মিয়ার গুনগান শুনছে সবার মুখে! বিশেষ করে দাদি! সে তো পারে না মজনুর তারিফের পুল গঠন করবে।
সবার কথামতো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাতে যখন যখন জ্বরের তাপে ঙ্গান হারালো তখন মজনু কোথা থেকে ডক্টর হাজির করেছে।আর ডক্টরের ওষুধের কারনেই নাকি সে সুস্থ হয়েছে।তবে রিদির কেন মনে হচ্ছে রাতে কেউ তার পাশে ছিল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিল।কপালে ঠান্ডা কিছু অনূভব করেছিল।সবটা কি তার মনের ভুল!!কারন দাদি তো বলেছে রাতে কেউ ছিল না তার পাশে! ডক্টর নাকি মানা করেছে কাউকে তার পাশে থাকতে।এতে নাকি বাকিদের ও ভাইরাস ফিভার হয়ে যাবে।
রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলল! আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল সূযিমামা তপ্ত আগুন বের করছে।রিদি আকাশের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাগানের দিকে তাকাতেই নজরে এলো বিশালদেহী লোকটিকে।ছৌট্ট কুটিরের একটা বাঁশের খাম্বার সাথে হেলান দিয়ে দু হাত বুকে ভাজ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বাঁশের চালা আর মজনু মিয়ার মাথা প্রায় ছুই ছুই।তপ্ত এই রোদে লোকটা দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে । মজনুর দৃষ্টিতে মুগ্ধতা হলেও রিদি ঘৃনায় দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।তার কাছে মজনু শুধু একটা ঘৃনিত ব্যাক্তি।যে পুরুষ খুন করে,যে পুরুষ নারীকে বিনা অনুমতিতে ছোয় সে ঘৃনার যোগ্য নয় কি!! অবশ্যই ঘৃনার যোগ্য!
সে ঘৃনা করে এই পুরুষ কে!
এদিকে তীব্র উরফে মজনু রিদির মুখ ফেরানো দেখে হাসল! স্পষ্ট দেখেছে রিদির চোখে ঘৃনা!কেন জানি এই দৃষ্টি তাকে প্রভাবিত করল।খারাপ লাগল কি??হয়তো!!
পরক্ষনেই তীব্রর মেজাজ খারাপ হল।ঘেমে চুপচুপে হয়ে থাকা শরীরটা নিয়ে সোজা চলে এলো মিজা বাড়িতে!এখন দুপুর সবাই ঘুমে তাই কেউ সেভাবে খেয়াল করল না।সিড়ি বেয়ে উঠে বিনা অনুমতিতে ঢুকে গেল রিদিতার রুমে।রিদিতা তখনো বেলকনিতে বসে আছে।
হঠাৎ চুলে টান পড়াই পেছনে ঘুরতেই দেখল ফ্যানের ভেতরে কিছু চুল ঢুকে গেছে। চলন্ত ফ্যানের সাথে চুল পেঁচিয়ে গিয়েছে।রিদি হাত বাড়িয়ে ফ্যান বন্ধ করার আগেই কেউ ফ্যান বন্ধ করে দিল।সাথে সাথেই ধমকে বলল,
যে জিনিস সামলাতে পারবেন না সেটা রাখেন কেন??
বলেই ফ্যান টা ধরে রিদিতার কাছে নিয়ে এলো। চিন্তিত মুখে চুল গুলো দেখে বলল,
ভাবতে পারছেন কতোটা চুল পেঁচিয়ে গেছে!কতোখানি চুল কাটতে হবে!! ধ্যান কোথায় থাকে আপনার?
রিদিতা অবাক হয়ে তাকালো মজনুর দিকে।মজনুর প্রতিটি কথায় স্পষ্ট অধিকার ফুটে উঠেছে।রিদির কেন যেন মনে হয় মজনু আপন কেউ!
তাৎক্ষণিক অবাক নিজেকে বোঝায়।সে অন্য কারো বিবাহিত বৌ।আর মজনু পরপুরুষ।যতোই তার কেয়ার করুক তবুও সে পরপুরুষ!রিদি সবটা ভেবে রেগে উঠে দাড়াতেই চুলে টান পড়ায় ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো। মজনু তাৎক্ষণিক উঠে তার কাছে এগিয়ে এলো।রাগি গলায় বলল,
এই মেয়ে সমস্যা কি আপনার! দেখছেন চুল পেঁচিয়ে গেছে!একটু শান্ত হয়ে বসুন!
একদম দূরে থাকেন আমার থেকে!চলে যান বলছি। লজ্জা করে না একটা মেয়ের রুমে বিনা অনুমতিতে ঢুকতে!
তীব্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
মেয়ে যখন এমন খামখেয়ালি হয় তখন বিনা অনুমতিতেই ঢুকতে হয়! এখন একটু শান্ত হয়ে দাড়ান!
রিদি জেদ দেখিয়ে বলল,
না দাঁড়াবো না! ছাড়ুন আমার চুল!বলেই চুল টান দিতেই ব্যাথায় আবারো কঁকিয়ে উঠলো।
তীব্র হুট করেই রেগে রিদির একদম কাছে এসে গা ঘেঁষে দেওয়ালে চেপে ধরে দাড়ালো। এক হাতে রিদিকে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরলো অন্য হাতে ফ্যান ধরে আছে!এরপর শান্ত স্বরে হুমকি দিয়ে বলল,
আমি একদম ভালো মানুষ নয় ব্ল্যাক রোজ! একদম ভালো না! আমার পছন্দের কিছুর সামান্য আচর ও আমি সহ্য করবো না!
আপনার চুল আমার পছন্দ! উহু!! চুলের ঘ্রাণ মারাত্বক পছন্দ! নেশার চেয়েও নেশাময় আপনার চুলের ঘ্রাণ!
আর আমার যা পছন্দ তার ক্ষতি আমি হতে দিই না।তাই!!না আপনার ,না আপনার চুলের কোনটাই ক্ষতির সম্মুখীন হবে না!কারন দুটোতেই আসক্ত আমি!
এবার যদি নড়চর করেন তো ফলাফল ভালো হবে না।
রিদিতা তীব্র উরফে মজনুর কথায় অবাক হয়ে তাকাই কিন্তু তবুও এমন কাছে আসায় আর এমন হুমকি শুনে দমে যায় না। শক্তি খাটিয়ে সরাতে চাইলে তীব্র আরো চেপে ধরল দেওয়ালে।রিদির দম বন্ধ হয়ে এলো। শক্তিশালী পুরুষের শরীরের নিচে চাঁপা পড়ে নড়াচড়া ও করতে পারছে না! তবুও রিদি দমে যায় না!রেগে কামড় দেয় তীব্রর বুকে! তীব্র দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে তবুও রিদিকে একচুলও ছাড়ে না!
এর মাঝেই শোনা যায় রওনাফ মির্জার কথার আওয়াজ।হয়তো কারো সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে বাইরে এসেছেন!রিদি চমকে উঠে তীব্র কে সরাতে চাইলে তীব্র বিরক্ত হয়ে এক টানে গ্রিল এর পর্দা টেনে দেয়।যাতে দুইজন কে এভাবে নিচে থেকে দেখা না যায়!
রিদি ক্লান্ত হয়ে চুপ হয়ে গেল। শব্দ নিচে গেলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।আপাতত চুপ থাকাই ভালো। তাছাড়া ওষুধের ইফেক্ট এর কারনে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।মানসিক আরামের জন্য ঘুম দরকার।তাই ওষুধের সাথে ঘুমের ওষুধ ও আছে।
মনোযোগ দিয়ে ফ্যান থেকে চুল ছড়াচ্ছে তীব্র।রিদিকে চেপে ধরাই রিদি শান্ত হলেও এখন একদম নড়চড় করছে না দেখে তীব্র রিদির তাকিয়ে দেখল রিদি ঘুমিয়ে পড়েছে। দাঁড়িয়ে অবস্থায় ঘুম দেখে হেসে ফেললো তীব্র।মুখটা নিচু করে ঠোঁট ছোয়াল কপালে।
একহাতে রিদিকে ধরে নিচে পেতে রাখা মাদুরে বসে পড়ল।দেওয়ালে ঠেসে রিদিকে বুকের উপর শুয়ে দিল।ফ্যান টা নিচে রেখে রিদিকে ভালোভাবে শোয়াল বুকের মাঝে।এরপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পকেট থেকে মিনি একটা কেচি বের করে ধীরে ধীরে চুল গুলো ছাড়িয়ে নিল।অতি সাবধানে করার কারনে বেশ সময় লাগল।
টুমি আমাকে রিদু খালামনির তাছে যেতে তিচ্ছ না তেন? বলো আম্মু!!
লতিফা বেগম মনির কথায় হেসে বললেন,
তুমার ওহানে যাওন লাগবো না মা।তুমার খালামনির জ্বর হয়েছে।তাই খালামনি ঘুমাচ্ছে!!
আমি তেখে আতছি!!
না না মামনি! তোমার যাওন লাগব না!আমি ওহনি দেইখা আইছি।রিদু ঘুমাই!তুমি যাও বাগানে তোমার নানু আছে হের লগে খেলা করো!
আত্তা!!
রিদির ঘুম ভাঙল মাগরিবের আজানের আগে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতেই চট করেই তখন কার ঘটনা মনে পড়ল! আশেপাশে তাকিয়ে মজনু কে পেল না।সে স্বস্থির একটা নিঃশ্বাস ফেলে পাশে তাকিয়ে দেখল একটা কাগজ। সেখানে লেখা….
“আমার শরীরের সুবাস আপনাতে থাকবে ব্ল্যাক রোজ!কারন আপনার মাঝেই আমি #আপনাতেই_আমি । তবে ভুলেও একি ভুল দুবার করবেন না। আবার গোসল করার কথা তো চিন্তাতেও আনবেন না! ফলাফল খুব ভালো হবে না বিলিভ মি!”
রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে খেয়াল করল আসলেও কড়া একটা পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে তার থেকে।রিদি বিরক্ত হল।সব পারফিউম কি একবারে গায়ে ঢালে নাকি।এতো কড়া ঘ্রাণ বের হয়।রিদি উঠে কাপড় বদলিয়ে নিল। এখন গোসল করে আবার জ্বরের সম্মুখীন হতে চাই না সে।
রাতের খাবার সবাই একসাথে ই খেতে বসেছে।বাদ যায় নি মজনু মিয়াও। রিদির মুখের রুচি নেই।তাই চাচি তার জন্য ঝাল ঝাল নুডুলস রান্না করে দিয়েছে।সেটাই নেড়ে চেড়ে খাচ্ছে সে। তীব্র খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে রিদির নুডুলস খাওয়া দেখছে। ঠোঁটের সাথে চামচের ছোঁয়া দেখতে বিরক্ত লাগছে তার।চামচের প্রতিই রাগ হচ্ছে।কেন বারবার তার বৌয়ের ঠোঁট ছুয়ে দিচ্ছে।এটা তো তার ব্যক্তিগত অধিকার! শেষ পর্যন্ত কি না তীব্র চৌধুরী চামচকেও হিংসা করছে।এসব ভাবা যায়!আর বৌ ডা এমন কেন বাল!!চামচের প্রতি এতো ইন্টারেস্ট কেন?মুখে দিলে বের ই করছে না।চামচ কি খাওয়ার জিনিস!!!! তীব্র এবার নিজের ভাবনার প্রতি বিরক্ত হয়ে বিরবির করে বলল,
গলা দিয়ে এভাবে খাবার নামানোরই বা কি আছে!পানির ঢোক গিললেও গলায় বোঝা যাচ্ছে! ইচ্ছে করছে গলায় নিজের ঠোঁট দাবিয়ে চুমু খেতে।নিজে এসব করে আমাকে সিডিউস করলে দোষ নাই আর আমি কিছু করলেই দোষ!!ছ্যা……
তীব্র এবার পোশাকের দিকে তাকিয়ে দেখল পোশাক বদলে নিয়েছে।অনেক দিন নিজের পছন্দের পারফিউম ব্যবহার করে নি সে।অন্য কড়া পারফিউম ব্যবহার করছে যাতে কড়া ঘ্রাণ বের হয়। তীব্র ছোট্ট একটি শ্বাস নিয়ে ক্লান্ত হয়ে আসা রিদির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।জ্বরে শুকিয়ে যাওয়া মুখটাও দেখতে মায়াবী লাগছে!রিদি মজনুর তাকানোর ব্যাপার টা বুঝতেই নড়েচড়ে বসলো।কেউ যদি বিষয়টি খেয়াল করে তাহলে কি মনে করবে!! আল্লাহ…..
একটু পরেই রিদি উঠে প্লেট নিয়ে গিয়ে বসল সোফায়! মজনুর চাহনি তার অস্বস্তি বারাচ্ছে।সে চাই না এই বিষয়ে কারো নজর পড়ুক। তীব্রর খিটখিটে মেজাজ আরো বিগরালো বৌ কেন উঠে গেল। ইচ্ছে তো করছে গিয়ে এক থাপ্পর দিতে।
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৯
ডায়নিং টেবিলে চলছে আলোচনা সভা।মনসুর আলীর নাতি মাহির এর ৬ তম জন্মদিন উপলক্ষে সবাইকে দাওয়াত করেছে।সেটা নিয়েই চলছে দীর্ঘ আলোচনা। আলোচনা এক পর্যায়ে এসে থামল।রিদির এসবে কোন মনোযোগ নেই।তার ভাবনায় চলছে অন্যকিছু!এভাবে চুপচাপ এসব তো মেনে নেওয়া যাবে না।