আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৪৪
ইশিকা ইসলাম ইশা
সকালে বেশ বেলা করেই ঘুম ভাঙল রিদির। পিটপিট করে চোখ খুলতেই নাকে এসে বারি খেল পরিচিত সুবাস।রিদি চোখ ভালো করে মেলতেই প্রথমে দেখল পুরুষালী চওড়া বুক। কারন তীব্র তাকে একদম পিষ্টে রেখেছে বুকের সাথে।যেন একটু এদিক ওদিক হলেই রিদি হারিয়ে যাবে।রিদি তীব্র কে দেখার জন্য মুখ তুলতে চাইল কিন্তু তীব্রর শক্ত বাঁধনে নড়াচড়া করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।রিদি তীব্রর বাঁধন থেকে বেরানোর জন্য হাত পা নাড়াতেই বুঝল শরীরের ব্যাথার পরিমাণ।ব্যাথার কথা মনে হতেই রিদির রাতের কথা মনে পড়ল। লজ্জায় লাল হলো মুখখানা। শরীরে অসহ্য ব্যাথাটা কমেছে তবুও ব্যাথা তো আছে।
রিদি তীব্রর থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য মোচরামোচরি করতেই তীব্র ঘুম ঘুম কন্ঠে সামান্য বিরক্ত হয়ে বলল,
উহু! ডিস্টার্ব করে না জান!ঘুমাচ্ছি তো……
রিদি তীব্রর কথায় লজ্জায় লাল হয়ে আমতা আমতা করে বলল,
আমাকে ছাড়ুন!আমি উঠব।
তীব্র রিদির কথায় মুখটা নিচু করে রিদির নত মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
এমন লাল নীল হচ্ছেন কেন?বাই এনি চান্স আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন বৌ?
তীব্রর কথায় রিদি নেতিয়ে ঢুকে গেল কম্বলের নিচে। তীব্র রিদিকে বিড়াল ছানার মতো গুটিয়ে যেতে দেখে হো হো করে হেসে উঠলো।এরপর হাসি থামিয়ে রিদিকে আরও লজ্জা দিতে বললো,
রাতে না লজ্জা ভেঙ্গে দিলাম। তবুও আপনার এতো লজ্জা আসছে কোথায় থেকে??বৌজান!! মানে এখনো কি লজ্জা ভাঙ্গে নি।আমি কি লজ্জা ভাঙ্গতে আবার……
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রিদি তীব্রর কথায় চট করে কম্বল থেকে মুখ তুলে বলল,
আপনি অসভ্য!!!
তীব্র রিদির কথায় মুচকি হেসে বলল,
সভ্য হলে কি রাতে আ……..
রিদি সাথে সাথে তীব্রর মুখ চেপে ধরল। লজ্জায় বুঝি এখুনি মরে যাবে বেচারি। তীব্র রিদির হাতের উপর চুমু দিয়ে বলল,
এতো লাল হয়েন না বৌপাখি!টমেটো ভেবে টুপ করে গিলে ফেলব কিন্তু!
রিদি আঁতকে উঠে ঝটপট করে তীব্রর থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে তীব্র রিদিকে জরিয়ে ধরে রিদির গলায় মুখ গুঁজে দিল।রিদি নিজেকে ছাড়াতে চেয়েও পারল না। ক্লান্ত হয়ে চুপ হয়ে গেল।রাতে তীব্রর পাগলামির কথা মনে পড়তেই শরীর শিউরে উঠলো।তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তীব্র চৌধুরী নাকি তার প্রতি এতোটা আসক্ত!
নিস্তেজ শরীরের অসহ্য ব্যাথাটাও তীব্রর পাগলামিতে ভুলে গেছিল রিদি। তীব্রর অমানবিক আচরণে যখন রিদি একদম নিস্তেজ হয়ে গেল তখন তীব্রর হুস ফিরল।রিদিকে নিস্তব্ধ নিস্তেজ দেখে তীব্র ভয়ার্ত দৃষ্টিতে একবার সাদা রঙের চাদরের দিকে তাকালো। পরক্ষনেই তীব্র রিদিকে বারবার ডাকলেও রিদির থেকে কোন উওর না পেয়ে পাগল হয়ে উঠল।রিদিকে কোলে তুলে ঝর্নার নিচে দাড়াল।পানির ফোঁটা শরীর স্পর্শ করতেই রিদির হুস ফিরল।তীব্রর উপর গা এলিয়েই ডুকরে কেঁদে উঠলো। তীব্র রিদিকে গোসল করিয়ে কোলে তুলে রুমে এসে সোফায় সুইয়ে দিল।বেডশিট চেন্জ করে রিদিকে বেডে শুইয়ে নিজেও গোসল সেরে আসল। ততক্ষণে রিদি থরথর করে কাঁপছে, ব্যাথায় ককিয়ে উঠছে।
এই বৌ!এই জান!সরি!সরি জান….খুব কষ্ট হচ্ছে!আম সরি বৌ!সরি…
রিদি তখনো হুসে নেই। অসহ্য ব্যাথায় টনটন করছে শরীর।তার উপর এই জ্বর।রিদির অবস্থা একেবারে কাহিল।
এই বৌ!এই কথা বল প্লিজ…সরি সরি !!কথা বল!আমাকে বল কোথায় কষ্ট হচ্ছে…..কথা বল না বৌ। আর তোকে ছুবো না তবুও কথা বল প্লিজ……
তীব্রর হাজার বলার পরেও রিদি কথা বলতে পারল না। তীব্র রিদিকে কথা বলতে না দেখে আরো অস্থির হয়ে উঠল।পাগলের মতো নিজের চুল খামচে ধরে দেওয়ালে ঘুসি মারতেই হাত ফেটে রক্ত চুইয়ে পড়তে লাগলো। তীব্র আবারো রিদির কাছে এসে শক্ত করে বুকে চেপে ধরল কম্পিত শরীর। অনেকক্ষণ পর রিদির হুস ফিরল।রিদি একটুখানি নড়ে উঠতেই তীব্র ব্যাকুল স্বরে বলে,
সরি বৌ!সরি পাখি!সরি জান!সরি……
রিদি পিটপিট করে দেখল তীব্রকে।কেমন উম্মাদ এর মতো লাগছে।
বেশি কষ্ট হচ্ছে বৌ!আম সরি।বৌ……
রিদি তীব্রর এমন অবস্থা দেখে নিজের কষ্ট ভুলে গেল।তার “প্রিয় রাক্ষস মশাই”সত্যি ই কি তাকে এতোটা ভালোবাসে।এতোটা ভালবাসা যায় তাকে!!কোই সে নিজেকেও এতোটা ভালোবাসে না।রিদি মাথা তুলে তীব্রর কানে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
আমাকে এভাবেই বুকে জড়িয়ে রাখুন।সব খারাপ ভালো হয়ে যাবে” প্রিয় রাক্ষস মশাই “।
তীব্র রিদির কথায় মলিন মুখে হেসে বলল,
কষ্ট হচ্ছে তাই না!
রিদি তীব্রর গলায় মুখ গুজতে গুজতে বলল,
হচ্ছে! কিন্তু আপনার বুকে থাকার জন্য যদি আমাকে কষ্ট সহ্য করতে হয় তো আমি কষ্ট সহ্য করতে প্রস্তুত।
তীব্র দুহাতে আগলে ধরে রিদিকে টেনে নিজের উপর ফেলল। কিছুক্ষণ সেভাবেই জরিয়ে থেকে উঠে রিদির জন্য গরম সুপ করে এনে খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিল।ভেজা লম্বা চুল গুলো হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে দিল যেন চুলের পানি বসে না যায় শরীরে।এরপর আবারো তাকে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই রিদি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
রিদি ভাবনা থেকে বেরিয়ে একবার তাকাল ঘড়ির দিকে।১০টা বেজে ৪ মিনিট।রিদির চোখ কপালে উঠে গেল।ঝটপট উঠতে চেয়েও উঠতে পারল না। তীব্র তাকে এমন ভাবেই পেঁচিয়ে রেখেছে যে নড়াও দুষ্কর।রিদি নিজেকে ছাড়াতে চেয়েও যখন পারল না তখন শান্ত হয়ে তীব্রর দিকে তাকালো। ঘুমন্ত অবস্থায় তীব্র কে একদম নতুন লাগে। মনে হয় এই তীব্র তার অদেখা।রিদির তীব্র কে ডাকতে ইচ্ছে করল না। কিন্তু না ডেকেও উপায় নেই।বাসায় তীর,মির,লাবিব ভাইয়া আছে আল্লাহ জানে তারা কি ভাবছে!রিদি আস্তে করে ডাকল,
এই যে শুনছেন?
এই যে এই!! শুনছেন!!
হু!!!
উঠুন প্লিজ!!
উহু!!
তো আমাকে ছাড়ুন!
উহু !!
ইয়ে মানে বাসায় তীর,মির,লাবিব ভাইয়ারা আছে! ছাড়ুন প্লিজ….
নেই …
নেই মানে!!
বের করে দিয়েছি।রাতের আগে ওরা আসবে না।
কিহ!!কেন??
বাসর করব তাই!!
রিদি চোখ বড় বড় করে বলে,
আপনি এমন কথা ওদের বলেছেন!
হু!!
নির্লজ্জ!!
তীব্র রিদির কথায় তোয়াক্কা না করে মাথা একটু তুলে বলল,
বৌ এখনো বেশি ব্যাথা করছে?
রিদি কিছুটা হচকচিয়ে লজ্জা পেয়ে বলল,
উহু!!!
তীব্র রিদির লজ্জা উপেক্ষা করে বলল,
সরি!কাল আমি বেশি………
রিদি লজ্জায় তীব্রর মুখ চেপে ধরে বলল,
হয়েছে হয়েছে!চুপ করুন……..
তীব্র রিদিকে এতোটা লজ্জা পেতে দেখে হো হো করে হেসে উঠলো।তীব্র কে হাসতে দেখে রিদি লজ্জায় যেন মিইয়ে গেল। তীব্র হাসতে হাসতেই রিদিকে বুকে জরিয়ে ধরলো।রিদিও ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো তীব্রর বুকে।
আইনাই নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতেই রিদির চোখ বড় বড় হয়ে যাই।পুরো শরীরে ছোপ ছোপ দাগ হয়ে আছে।জামা পরার পরেও গলা, ঘাড়ের সবটা দাগ বোঝা যাচ্ছে।রিদি কাঁদো কাঁদো মুখ করে নিজেকে দেখার মাঝেই তীব্র খাবার নিয়ে আসে ।রিদিকে আইনাই নিজেকে দেখতে দেখে মুচকি হাসল।রিদি তীব্রকে হাসতে দেখে মিনমিন করে বলে,
অসভ্য বদ লোক!!কি করেছে!
তীব্র রিদির কথা শুনে আবারো হাসল। দুষ্টু সুরে বলল,
একদিনেই এই অবস্থা তো রাতে…….
রিদি তীব্রর কথা বুঝতেই ঝট করে বলল,
আ মি আজকেই বাংলাদেশে চলে যাব!!
তীব্র আবারো হো হো করে হেসে উঠলো,
এখন আর যাওয়া হবে না জান!আজকের পর থেকে এভরি ডে,এভরি নাইট,এভরি মোমোন্ট আই ওয়ান্ট ইউ বেবি!
তীব্রর কথা শুনে রিদির চোখ বড় বড় হয়ে গেল।শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে বলল,
রিদি তুই শেষ!!
তীব্র রিদিকে আর ভয় পাওয়ালো না।বেচারি এমনিতেই ভয়ে আছে। তীব্র খাবারের দিকে ইশারা করে বললো,
এখানে আসুন! খাবেন এখন!
রিদির খিদেও পেয়েছে তাই চুপচাপ গিয়ে বসল সোফায়। তীব্র ভাত আর গরুর মাংস প্লেট এ তুলে গরম ভাতের সাথে মাংস ছিঁড়ে মাখিয়ে রিদির মুখের সামনে ধরল।রিদি মুচকি হেসে খাবার মুখে তুলল। তীব্র রিদিকে খাইয়ে নিজেও খেয়ে নিল।খাওয়া শেষ করে তীব্র রিদির কপালে হাত রেখে চেক করল।জ্বর আছে তবে কম।তীব্র ওষুধ এনে রিদির হাতে দিল,
খেয়ে নিন!!
রিদিও চুপচাপ খেয়ে নিল। তীব্র খাবার নিচে খেতে আসতে নিচে যেতেই রিদি এদিক ওদিক খুঁজে খুঁজে বিশাল বড় একটা টিভির রিমোট বের করল।টিভি ছাড়তেই বড় পর্দায় ঝকঝকে স্ক্রিন দেখে রিদি অবাক হলো।এতোটা ঝকঝকে যেন এখুনি এটার ভেতর থেকে চলিত সব পশু বেরিয়ে আসবে।বড় স্কিনে যেকোন ছবি একদম কাছে থেকে দেখা যাচ্ছে।রিদি চ্যালেঞ্জ পাল্টিয়ে দেখার মাঝেই চেঁচিয়ে উঠলো।হরর মুভির সিন…..সামনে সাদা পোশাক পড়া কেউ একদম ক্যামেরার সামনে হুট করেই উদ্ভব হয়েছে।রিদি ভয়ে একদৌড়ে দিয়ে রুমের একদম কোনায় চলে যায়।ভয়ে হাত পা কাঁপতে শুরু করলো ইতিমধ্যে। তীব্র রুমে এসে রিদিকে এক কোনায় কাঁপতে দেখে রিদির কাছে যেতেই রিদি তীব্র কে দেখে ঝরের বেগে এসে তীব্র কে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়। তীব্র মূহুর্তে হতভম্ব হয়ে দুহাতে রিদিকে আগলে ধরে বলল,
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৪৩
কি হয়েছে জান?
রিদি থেমে থেমে বলল,
আমাকে বাঁচান রাক্ষস মশাই ওরা আমাকে নিয়ে যাবে।
কারা নিয়ে যাবে!কি হয়েছে?এই বৌ!!
ওরা….ওরা……
বলতে বলতে ঙ্গান হারিয়ে যেতেই তীব্র ঘাবরে গিয়ে।কল করল লাবিব কে।তীব্রর ঙ্গান হারানোর কারন তীব্র না বুঝল না বুঝার চেষ্টা করল।হুট করে রিদির ঙ্গান হারানো তীব্রর ধারনার বাইরে ছিল।