আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৬০

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৬০
ইশিকা ইসলাম ইশা

রাত তখন কয়টা বাজে জানা নাই তবে মধ্যরাত!! চারদিকে শুধুই নিস্তব্ধতা ঘিরে রেখেছে। অনেকেই জেগে জেগে আছে হয়তো হসপিটাল যেহেতু।তবে এই ফ্লোরের পরিবেশ বেশ শান্ত।ভিআইপি এরিয়া হওয়াই লোকসমাগম কম।নেই বললেই চলে।রিদি ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো তীব্রর রুমের সামনে। নেমপ্লেটে ইংরেজি বড় অক্ষরে লেখা
“TIBRO CHOUDORY”

উপরের দিকে লেখা রেস্ট রুম।রিদি একবার দরজার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দরজায় পাসওয়ার্ড সিস্টেম।৩ বারের অধিক ভুল পাসওয়ার্ড দিলে সিকিউরিটি এলাম বেজে উঠবে।রিদি অনেকক্ষণ ভেবে তীব্রর পার্সোনাল নাম্বারের শেষের ছয় ডিজিট বসালো। কিন্তু তে পাসওয়ার্ড ভুল বলছে।রিদি এবার নিজের নাম্বারের শেষের ছয় ডিজিট বসালো। তবুও রং বলছে।আর একবার ই সুযোগ।এরপর আর সুযোগ নেই।রিদি বেশ কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে তীব্র আর রিদির জন্ম তারিখ বসালো।সাথে সাথেই ডোর আনলক হয়ে গেল। রিদি চমকে উঠল। ধীর পায়ে রুমে ঢুকে দেখল পুরো রুম অন্ধকার।ড্রিম লাইট জ্বলছে।আবছা আলোই রিদি বেডের দিকে এগিয়ে গেল।লাইট জ্বালালে না যেন তীব্রর ঘুম না ভাঙ্গে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রিদি ধীর পায়ে এসে বেডের কাছে দাঁড়ালো। তীব্র চোখের উপর এক হাত দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আবছা আলোয় রিদি তীব্রর হাতের দিকে তাকালো।হাতে রক্ত জমাট বেঁধে আছে।রিদি খুব ধীরে তার সাথে আনা ফাস্ট এইড বক্স টা নিচে রেখে ফ্লোরে বসে পড়ল।বেডে রাখা হাতটা দেখার জন্য মুখ বাড়িয়ে ভালো করে দেখল। কি অবস্থা করেছে হাতটার!রিদির চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল।তুলায় স্যাভলন ভিজিয়ে আলতো করে ফু দিয়ে দিয়ে হাতটা পরিষ্কার করল।যাতে জ্বললে তীব্র উঠে না যাই। পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে ব্যান্ডেজের উপরে ঠোঁট ছোয়াল।চোখের পানি কয়েক ফোঁটা গিয়ে পড়ল সেই ব্যান্ডেজ এর উপর!!
রিদি তীব্রর হাতের প্রতিটি আঙ্গুলে আলতো করে চুমু দিয়ে ধীর আওয়াজ এ বলল,

আম সরি! এসব আমার জন্য হয়েছে।আমি ঐসব উল্টো পাল্টা কথা না বললে…..আম সরি!প্লিজ আমাকে ভুল বোঝেন না প্লিজ!!আমি শুধু আপনার অস্থিরতা দূর করতে চেয়েছি। আমি তো দেখেছি আপনার অস্থিরতা।মাফ করতে না পারার অস্থিরতা।নিজের জন্মদাত্রীকে ঘৃনা করার অস্থিরতা।আপনি মুখে যতোই বলুন আপনি ওনাকে মা মানেন না। কিন্তু তীরা আপনার জন্মদ্রাত্রী মা ওনার সাথে আপনার রক্তের সম্পর্ক।ওনি শুধু আপনার সাথে তার শেষ মুহূর্তে কিছু বলতে চাই।তাকে আপনি মাফ করেছেন এটা একবার আপনার মুখে শুনতে চাই।তীরা আম্মু কে মাফ না করলে ওনি মরেও শান্তি পাবে না আর আপনি জীবিত থেকেও শান্তি পাবেন না।এই আত্মগ্লানি আপনাকে তিলে তিলে কষ্ট দিবে দিবে।আর…আমি আপনাকে এই কষ্টে দেখতে চাই না।

“আমি তো জানি আপনি আমায় কতোটা ভালোবাসেন।মুখে হয়তো বলেন নি। কিন্তু আমি জানি আপনি আমায় ভালোবাসেন। খুব ভালোবাসেন।আপনার মতো আমাকে আমাকে কেউ এতোটা আগলে রাখে নি। কেউ আমাকে এতোটা ভালোবাসেনি।আমার যোগ্যতার চেয়েও হয়তো বেশিই পেয়ছি আপনার থেকে।”
“আমাকে ভুল বুঝবেন না তীব্র!আপনি ছাড়া আমার জীবনে প্রয়োজনীয় বলতে কিছুই নেই।আপনি ছাড়া আমি অপ্রয়োজনীয় বস্তুর ন্যায়।যার হয়তো নিজের কোন অস্তিত্ব নেই।”

রিদি নিজের কথাগুলো বলার মাঝেই তীব্রর হাত নড়েচড়ে উঠল।রিদি তীব্রর হাত ছেড়ে আলতো ভাবে বেডে রেখে দিল।বেশ কিছুক্ষণ তীব্রর ঘুমন্ত মুখখানা দেখে ধীরে বেডের অপর পাশে গিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল। তীব্রর ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে তাই আর শত ইচ্ছের পরেও জরিয়ে ধরলো না।একটু পরেই সে চলে যাবে তীব্র উঠার আগেই কথাটা ভেবেই শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিল।আজকাল বড্ড অচল লাগছে। ক্লান্ত লাগছে!রিদি শুতেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল।
রিদির ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ কানে আসতেই চোখ মেলে তাকালো তীব্র।সে ঘুমাইনি।প্রথম বার রিদি পাসওয়ার্ড দিতেই তার ফোনে ম্যাসেজ আসে। তীব্র ক্যামেরাই রিদিকে দেখেছে। ভেবেছিল পাসওয়ার্ড বুঝতে পারবে না।তবে বৌ তার ইনটিলিজেন্ট আছে!!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্যান্ডেজ করা হাতটা তুলে একপলক সেটা দেখে তাকালো ঘুমন্ত রিদির দিকে। নিজেকে গুটিয়ে জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। তীব্র আলতো ভাবে নিজের কাছে টানতেই রিদি অভ্যাসের কারনে ঘুমের মাঝেই নিজ থেকেই তীব্রর বুকে মাথা রেখে একপা তীব্রর গায়ে তুলে জড়িয়ে ধরল। তীব্র একহাতে রিদিকে জড়িয়ে ধরে অপর হাত দিয়ে রিদির মুখটা তুলে ধরে বলল,
“বড্ড বেশি জ্বালান! আপনি বৌ!
আবার সাহস কতোখানি!! আমার সাথে বাটপারি।এই সাহসের পরিমাণ তো আমি পরে মাপপ।আজকের শাস্তি টা আগে……”

তীব্র রিদিকে বুক থেকে নামিয়ে বালিশে শুইয়ে দিল।মুখের উপর পড়া ছোট ছোট চুল গুলো সরিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রিদির দিকে তাকিয়ে থেকে মুখ ডুবালো গলার ভাঁজে। তীব্র রিদির ওরনা শরীর থেকে ফেলে গলায় জোরে বাইট করতেই রিদি ঘুমের মধ্যেই মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো। তীব্র থামল না বরং আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো।
চিনচিনে ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো রিদি।জ্বলছে পুরো গলা,বুক।রিদির ঘুম ছুটে গেল। পিটপিট করে চোখ খুলতেই পরিচিত ঘ্রাণ নাকে এসে বারি খেল।রিদি পুরোপুরি চোখ খুলে তাকাতেই নজরে এলো সিল্কি এলোমেলো চুল।রিদি বুক থেকে তীব্রর মাথাটা তুলে এনে তার মুখোমুখি করল।আবছা আলোই তীব্রর মুখখানা দেখল।চোখে স্পষ্ট রাগ আর অভিমান।মুখটা বাচ্চাদের মতো ভার করে রেখেছে।যেমন বাচ্চারা রাগলে মুখ ভার করে রাখে ঠিক তেমনি। দুইজন দুইজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।রিদি তীব্রর রাগী আর অভিযোগে ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

“একটু ঘুমাতে দিবেন না নাকি??”
তীব্রর সোজা উত্তর,
“না!!””
রিদি তীব্রর কথায় কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,
ইসস!!জ্বলছে খুব!আপনি কি মানুষ!!এভাবে কেউ কামড় দেয়!! দেখুন কি করেছেন!!আজ শুধু ফর্সা না বলে নয়তো এখুনি লাল রক্ত জমাট বেঁধে যেত।ঐ যে মুভিতে দেখাই না একদম ফটফটে সাদা নায়িকা থাকে এরপর আপনার মতো একটা হিরো থাকে যে নায়িকার গলায় বাইট করে আর নায়কা পরে আইনাতে দেখে তার গলা লাল হয়ে আছে। ব্যাথায় সে চোখমুখ খিচে বন্ধ করে নেয় এরপর নায়ক এসে মলম লাগিয়ে দেয় এরপর সব দাগ ঠিক হয়ে যাই।
কিন্তু আপনি!আপনি আমার দাগগুলো না মিছতেই আবারো ক্ষতের সৃষ্টি করেন।আমি ব্যাথা পাই!নিহাতই আমি ভালো বৌ বলে আপানাকে কিছু বলি না বলেই রিদি থামল!! হাঁপিয়ে গেছে এতো কথা বলে।একটু শ্বাস টেনে আবারো বলল,

“কি সমস্যা!এভাবে চেপে ধরে রেখেছেন কেন?আপনি আস্ত একটা হাতি!আমার মতো পিচ্চি মানুষ আপনার হাতির শরীর টানতে পারি সরুন!!নয়তো!!!”
“নয়তো????”
“নয়তো আমি কেঁদে দিব!”
“কাঁদেন!!”
“আপনি পাষান!!”
“এরপর!!”
“আপনি আসলে একটা রাক্ষস!”
“এরপর!”
“আপনি অসভ্য!!”
“এটাই শুনতে চেয়েছিলাম।আমি অসভ্য।তাহলে অসভ্যতা তো করতেই হয়।”
রিদি চমকে উঠে বললো,

“এই না!!আপনি সভ্য!দুনিয়ার সবচেয়ে সভ্য মানুষ আপনি! আমি সরি!!! ভীষণ সরি!!”
তীব্র রিদিকে আরো একটু চেপে ধরে বলল,
“এরপর আমাকে ছেড়ে যাস শুধু! কলিজা খুব বড় হয়েছে না !!একদম টেনে বের করব বলে দিলাম!!”
“ওমা!!আমি কখন ছেড়ে গেলাম! আপনিই তো বললেন চলে যা এখান থেকে!”
“আমি বললেই তুই কেন যাবি?”
“কেন যাব না!!’
“কেন যাবি?”
“যাব নাই বা কেন?”
“যেতেই বা হবে কেন?”
“আপনি বলেছেন তাই!”
“বলেছি বলেই চলে যাবি!!”

রিদি তীব্রর অভিমানী সুর শুনে,তীব্রর গলার দুইপাশে দুই হাত দিয়ে ধরে মুখটা এগিয়ে এনে কপালে কপাল ঠেকিয়ে আলতো হেসে বলল,
“”ও প্রিয়,ওও ও প্রিয়,
তুমি ছাড়া যাব কোথায় বলো তুমি ছাড়া যাব কোথায়!”””
“না আমি কোথাও যাবো,আর না আপনাকে কোথাও যেতে দিব!”
তীব্র ভূ কুঁচকে বলল,
“কনফিডেন্স!!”
“একশত ভাগ!!”
তীব্র সব ভুলে আলতো হেসে বলল,

“যদি চলে যায়!”
“শেষ করে ফেলবো!”
“কাকে?আমাকে বুঝি!!”
“উহু!! নিজেকে!!”
তীব্র থমকালো। এতোক্ষণের শান্ত হওয়া মাথাটা দপ করে জ্বলে উঠলো।রিদির চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“খুব কথা শিখেছিস??”
রিদি তীব্রর হাতের উপর হাত রাতেই তীব্রর হাত নরম হয়ে এলো।রিদি তীব্রর হাতখানা টেনে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,

“আপনি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমার নিঃশ্বাস ও আমাকে ছেড়ে যাবে প্রিয় রাক্ষস মশাই।”
“যাব না!”
“যেতে দিব না!”
“আরে আমি তো যাবই না!”
“আরে আমিও তো যেতে দিবোই না!”
তীব্র এবার ফিক করে হেসে উঠলো।রিদি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখল সেই হাসি।আবছা আলোয় ফর্সা মুখখানার দিকে চেয়ে থেকে মুচকি হেসে গেয়ে উঠল,

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৫৯

“চেয়ে চেয়ে থাকি,
তোমার শুধু দেখি,
কি আছে তোমার মাঝে !
বলো কি আছে তোমার মাঝে!”

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৬১