আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৬৭
ইশিকা ইসলাম ইশা
অতি বৃষ্টির মাত্রা কমে এখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। তীব্র বেলকনি থেকে দূরে সেই পুরাতন আমলের রেজা ভিলার ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ছাদের একপাশে ছোট একটা কুড়োঘর।সেই ঘরে জ্বলছে হলদে রঙের আলো। আর সেখানে থেকে ভেসে আসছে গানের লাইন,
“”যখন ও রূপ স্মরণ হয়
থাকে না লোকলজ্জার ভয়
যখন ও রূপ স্মরণ হয়
থাকে না লোকলজ্জার ভয়””‘
রোশান রেজার ছোট্ট সেই কুড়োঘরে বাজছে গানটি। তীব্র গানটি শুনতে শুনতেই চোখ জোড়া বন্ধ করে নিতেই অনুভব করল ছোট এক জোড়া হাত তাকে জরিয়ে ধরেছে পিছনে থেকে। তীব্র মাথাটা পিছনে একটু হেলিয়ে দিলেও থাও পেল না।তাই রিদিকে ঝট করে সামনে এনে রিদির গালগুলো দুহাতের তালুর মধ্যে নিয়ে মাথাটা গ্রিল এ ঠেকিয়ে রাখলো আলতো করে!গ্রিল দিয়ে আসা পানির ছিটা রিদির মুখ এ পড়তেই রিদি চোখ বন্ধ করে নিল। একহাতে তীব্রর বুকের শার্ট খামচে অন্যহাতের তীব্রর পেটের দিকের শাট খামচে ধরে রইলো। তীব্র রিদির ভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এমন এক বৃষ্টির দিনে দেখেছিলাম এক শ্যাম কন্যা!! যার হাসিতে থমকে গেছিল আমার দুনিয়া……
ঐ রুপ স্মরণ হলে শুধু বুকের মাঝে তোলপার শুরু হয়।ঐ রুপের কোনো বর্ননা হয় না। ঐ রুপের বর্ননা করা যায় না।আমি পারিনি ঐ রুপের বর্ননা করতে”
রিদি তীব্রর কথায় ঝট করেই চোখ খুলে তাকালো তীব্রর দিকে। তীব্র রিদির ঠোঁটের কোনে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে বলল,
সেদিন!! সেদিন তৃতীয় বারের মতো তাকে দেখেছিলাম ভেজা শরীরে লেপ্টে ছিল তার শাড়ির আঁচল। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির দানা তার পুরো শরীর দখলে নিয়েছিল।মুখের উপর বৃষ্টির ফোঁটা পড়ায় ঠিক এখনকার মতোই স্নিগ্ধ লাগছিল।আর হাসি!! মারাত্মক!!এক কথায় মারাত্মক!!ঐ হাসি যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত!ঐ হাসি এমন যেন বুকের ভেতর ছুড়িঘাত করছে অবিরত।এমন এক বৃষ্টির দিনেই সেই শ্যামকন্যা কে আমি দেখেছিলাম সম্পন্ন যুবতী রুপে। সেদিন দেখেছিলাম সদ্য যৌবনে পা দেওয়া কন্যার শাড়ি পড়ে বৃষ্টিতে ভেজার আমায়িক দৃশ্য।সেদিন তীব্র চৌধুরী আটকা পড়েছিল এক আজানা যন্ত্রণায়।
রিদি বিষ্ময়কর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে তীব্রর দিকে। তীব্র রিদিকে এভাবে তাকাতে দেখে আবারো বলল,
তীব্র চৌধুরী !!যার আশেপাশে মেয়েরা উলঙ্গ হয়ে ঘুরলেও একবার চোখ তুলে দেখার রুচি আসে না। সেই আমি একপলক তাকে দেখেই আবারো থমকালাম। সে হাসছিলো।দুহাত মেলে বৃষ্টির পানি গায়ে মাখছিলো।শরীর পুরোপুরি ভিজে যখন আঁচল লেপ্টে ছিল বুকে। গলায় বিন্দু বিন্দু পানি জমে মুক্ত দানার মতো দেখাচ্ছিলো আমি সেদিন উপলব্ধি করলাম আমি অসহায়।সব নারী কে ঘৃনা করার লড়াইয়ে আমি অসহায় হয়ে পড়লাম শুধু তার কাছে।
রিদির চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। তীব্র!!এই তীব্রর মুখে এসব কথা শুনছে সে!!তাছাড়া কার কথায় বা বলছে!ওনার জীবনে কি আরো কোন শ্যামকন্যা ছিল!!তবে কি ওনি অন্য কারো মায়ার পড়েছিলেন!
রিদি কিছু বলার আগেই তীব্র বলল,
প্রথমবার তাকে দেখেছিলাম খুব ছোট্ট বেলায় ঠিক তার জন্মের সময়! কান্না করে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলা এক মায়াবী কন্যা।ডাগর ডাগর চোখে ঘন কালো পাপড়ি। সেদিন অনুভব করলাম একটা টান।একরকমম মায়া। সেইদিন অজান্তেই সে গেঁড়ে বসল মনের কোনে।তবে সেটা ছিল মায়া।
এরপর তার সাথে আমার দেখা হয় অনেক বছর পর।কিশোরি কন্যা সে তখন। দ্বিতীয়বার তার সাথে আমার দেখা হয় অজান্তেই!! সেদিন শুধুমাত্র তার চোখ দেখেই বুঝলাম এটা সেই সদ্য জন্মানো শ্যামকন্যা।যে তীব্র চৌধুরীর হৃদয় কাঁপাতে সক্ষম।জেনেও তাকে গুরুত্ব দিলাম না। কিন্তু যখন তার দেহটা আমার বুকের মধ্যে এসে পড়ল।আমি থমকালাম।বুকের মাঝে তোলপার শুরু হলো। ইচ্ছে করছিলো একদম বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখি।তবে মনকে উপেক্ষা করে তাকে ছেড়ে দিলাম।যাকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে মন আমাকে বলল আমি ঠিক তার বিপরীত টা করলাম। কারনটা ছিল তখন আমি পুরোপুরি তীব্র থেকে তীব্র চৌধুরী!দি বস!দি মাফিয়া বস!সে যা চাই করতে পারে।কেউ তাকে কোন বাঁধনে বাঁধতে পারে না।পারবেও না কখনো না।
এরপর!!এরপর সময় চলতে থাকল।দ্বিতীয়বার তাকে না দেখে শুধু চোখ জোড়া দেখেছিলাম।আর সেদিনের পর থেকে সে আমার জীবনে নিয়ে এলো অশান্তি।ঐ শান্ত চোখজোড়া আমার জীবনের ধ্বংস নিয়ে এলো।আমাকে অশান্ত করল।আমার পাথরের হৃদয়ে অনেক আগেই ফোটা জীবন্ত ফুল সে এটা বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
কিন্তু আমি তাকে চাইনি।তাকে মন, মস্তিষ্ক কোন দিক থেকেই চাইনি।আমি চাইনি তাকে। কিছুতেই চাইনি ।কেউ,কখনো তীব্র চৌধুরীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না।কেউ না!! কিন্তু সে আমাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।না চাইতেও তার ভাবনা আমাকে ঘিরে রেখেছিল।
তার অপরাধ সে কোন সাহসে তীব্র চৌধুরীর বিরুদ্ধে যাবে। তীব্র চৌধুরী যখন চাই না মানে সে মন মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে যাবে কিন্তু সে তো খুঁটি গেড়ে চলছে।সেই খুঁটি জর উপরে ফেলে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করতেই গেছিলাম সেই গ্রামে।যখন জানতে পারলাম ছাদের কোনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাই সে!গাড়ি থেকে সোজাসুজি কোন ভাবনা চিন্তা ছাড়াই বন্দুক তাক করলাম তার দিকে!চারদিকে তখন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।ঠিক যখনি তার মাথার পিছন বরাবর গান তাক করলাম তখনি শুরু হল আজকের মতোই মুশুলধারে বৃষ্টি। আর সেই বৃষ্টিতে ভেজা উচ্ছ্বাসিত মুখখানা দেখে আমি থেমে গেলাম,হেরে গেলাম। প্রথমবার তীব্র চৌধুরী হেরে গেল। তীব্র চৌধুরীর গান পয়েন্টে রাখা হাতটা থেমে গেল।গান তাক করেও তাকে মারার সাহস হলো না।
রিদি এখনো বিষ্ময়কর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে শুনছে তীব্রর কথা। তীব্র একটু হেসে রিদির মুখটা একদম নিজের কাছাকাছি নিয়ে এলো।রিদি শ্বাস আটকে শক্ত করে আছে। তীব্রর মুখ তার মুখ প্রায় ছুঁইছুঁই। তীব্রর গরম নিঃশ্বাস মুখে পড়তেই
চতুর্থবার যখন তার কাছে পৌঁছালাম।এবারো ঠিক করলাম ওই যন্ত্রণাকে শেষ করে তবেই ফিরবো। সেদিন আবারো তাকে মারতে গিয়ে পেলাম তার থেকে পাওয়া প্রথম স্পর্শ।কি মারাত্মক একটা মেয়ে!!আমাকে এবারো কাবু করে ফেলল!!
বলেই রিদির ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে রাখল।রিদি এতোক্ষণ পুতুলের মতো সব শুনলেও এবার কাঁপা গলায় বলল,
কে সে??
তীব্র রিদির ঠোঁটে আবারো চুমু দিয়ে বলল,
আমার প্রথম অনুভূতি!আমার….
রিদি তীব্র কে কিছু বলতে না দিয়ে অভিমানী সুরে বলল,
নাম কি?কোথায় থাকে?
তীব্র হাসল।তবে তা বুঝতে দিল না।রিদির কোমর চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
নাম তার হৃদয়স্পর্শী!
তার ঠিকানা আমার হৃদয়!
প্রথমবার আপনাকে কিভাবে ছুঁয়েছিল?
রিদির কথায় তীব্রর ভীষন হাসি পেলেও গম্ভীর মুখে বলল,
আপনার খুব পছন্দের জায়গায় সে মুখ ডুবিয়ে রেখেছিল!
রিদি এবার কেঁদেই ফেলল।অবুঝ অভিমানী সুরে বলল,
আমার জায়গায় কেন?
সে তো জানি না!ওকে পারলে জিঙ্গেসা করতে পারেন!!
তার মানে আপনাদের এখনো কন্টাক আছে??
আছে তো!!
রিদি এবার ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো,
দিন অমাকে কথা বলবো!!
কি কথা বলবেন??
বলব সে ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছিল এই নাম্বার এখন অন্যকারো!
কিন্তু নাম্বার তো সঠিক।
রিদি চোখ মুছে নাক টেনে বলল,
আপনাকে বেশি বুঝতে হবে না!নাম্বার দিন!
নাম্বার লাগবে না! চলুন সরাসরি দেখা করিয়ে দিই!বলেই রিদির হাত ধরে রুমে নিয়ে এলো। বৃষ্টির পানিতে রিদি তীব্র দুইজনেই অনেকটা ভিজে গেছে। তীব্র রিদিকে রুমে এনে আইনার সামনে দাঁড় করিয়ে দিল।রিদি তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
এখানে আনলেন কেন??
সরাসরি দেখাতে! দেখুন!
রিদি সামনে ঘুড়ে আয়নায় নিজেকে দেখে অবাক হয়ে বলল,
এখানে তো কেউ নেই!
আছে!!!
কোথায়?এখানে তো শুধু আমি……আমি!!!
রিদি আকস্মিক ঝট করে পেছনে ঘুরে তাকালো তীব্রর দিকে।
মানে আমি!!
তীব্র হাসল এবার।রিদির নাক টেনে বলল,
জি আপনিই!! আপনিই সে #আপনাতেই_আমি যে বেগমজান।
রিদি তীব্রর কথার সাথে সবটা মনে করার চেষ্টা করল।২য় বার দেখার ঘটনা স্মরণ হলেও আর কোন ঘটনা মনে পড়ল না। তীব্র রিদিকে ভাবনায় ব্যাস্ত দেখে তীব্র ঝট করে রিদিকে কোলে তুলে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়ল। অনেকক্ষণ ভেজা অবস্থায় আছে ঠান্ডা লাগবে নিশ্চিত।
আরে আরে নামান!
আপনাকে ভেজা ভেজা দেখে কন্ট্রোল হচ্ছে না জান!!
এই না না!!
রোশান ঘরের কোনে চেয়ারে বসে আছে ।হাতে একটা ডায়রি! সেখানেই কিছু একটা লিখছে।
“আমি চেষ্টা করেছি তোমার আমানত কে তার যোগ্য পুরুষের হাতে তুলে দেওয়ার।দেখো আমি সাকশেষ! তীব্র রিদিতা দুইজনেই সুখী।”
আমাদের মিলন হবে কোনদিন তাই না!পরের জন্মে বুঝি!!আমি অপেক্ষা করব!দুনিয়া থেকে মৃত্যুর পরও অপেক্ষা করব।আমাদের মিলন হবে!হতেই হবে!এরপর যখন জন্ম নিব তোমাকে আমার নামে দলিল করেই জন্ম নিব! বিচ্ছেদ যন্ত্রণা সহ্য করে বেঁচে থাকা খুব সহজ হয় না !এবার আমি সহজ ভাবে বাঁচতে চাই। তোমার আমার সন্তান হিসেবে ঐ মিষ্টি মেয়েটাকে চাই!একটা সুন্দর জীবন চাই! তবে তো তুমি বলেছিলে,
“সব চাওয়া পূর্ণতা পায় না”
রোশান ডায়রিটা বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।কালো ফ্রেমের চশমা টা খুলে টেবিলে রেখে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিল।তখনো গানটা বেজে চলছে,
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৬৬
মিলন হবে কত দিনে
মিলন হবে কত দিনে
আমার মনের মানুষের সনে
আমার মনের মানুষের সনে
রোশান গানটির উওরে মুচকি হেসে বিরবির করল,
অপেক্ষা!! প্রেমিকের অপেক্ষা!