আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৬৮
ইশিকা ইসলাম ইশা
পাখির কিচিরমিচির জোড়ালো শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় রিদির।অনেক গুলো দিন পর গ্রামের এই ভোরপাখিদের কিচিরমিচির শুনে ঘুম ভাঙল তার ।আড়মোড়া ভেঙে উঠার চেষ্টা করতেই পেছন থেকে লম্বা বলিষ্ঠ হাত পেঁচিয়ে ধরল তার কোমর।রিদিকে টেনে নিতেই রিদি পেছন ফিরে তাকালো তীব্রর দিকে।
আদুরে হাতে তীব্রর মুখটা ধরে বলল,
সবাই বলে আমি ভাগ্যবতী!আমিও মানি আমি ভাগ্যবতী!
তীব্র পিটপিট করে চোখ খুলে বলল,
কিভাবে??
রিদির সরল সোজা উত্তর,
আপনাকে পেয়ে!!
তীব্র অল্প হেসে বলল,
আপনি লাকি কি না জানি না তবে আপনাকে পেয়ে বাকিরা সবাই লাকি!ওদের লাক ভালো। জীবিত অবস্থায় বেঁচে আছে যে!
রিদি ছটফটিয়ে উঠে বলল,
কাকে মারবেন??
তীব্র রিদির ছটফটানি দেখে দ্রুত গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে বলল,
মারবো না। কিছু করব না।যাস্ট স্টে উইথ মি!আপনি আমার কলিজায় এভাবে থাকলে আমি বেশি কিছুই করব না।
রিদি তীব্রর কথার মানে বুঝতে পারলো না।সে জানে এখন গুঁতাগুঁতি করলেও তীব্র তাকে বলবে না।তাই কথা এড়াতে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শেষবার আমাকে মারতে গেছিলেন তবে মারলেন না কেন??আমার তো কিছুই মনে নেই!
তীব্র খানিকক্ষণ চুপ থেকে মনে করল সেদিনকার ঘটনা,
চারদিকে তখন কুয়াশায় ঘেরা।সবেই একটু একটু ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। মধ্যে রাত থেকে অস্থিরতায় গাড়িতে কাটানোর পর তপ্ত মেজাজ যেন আরো বিগড়ে গেল। এই মেয়েকে দেখার পর কেন এই অস্থিরতা?? কেন এই অস্থিরতা কমাতে মধ্যে রাতে তাকে এখানে আসতে হলো!আজ এই মেয়ের একটা ব্যবস্থা করে তবেই যাবে। তীব্র রেগে মিজা বাড়ির সামনে দাড়াতেই কারো গোঙানির শব্দ শুনে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখল কিছুটা দূরে বাঁশঝাড়ের পাশে কেউ আছে। তীব্র ভূ কুঁচকে সেদিকে এগিয়ে যেতেই দেখল একটা মেয়ে মাটির কাছে বসে কান্না করছে! তীব্র নিঃশব্দে কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই বুঝতে পারলো মেয়েটা ঠান্ডায় কাঁপছে।গায়ে কোন শীতবস্ত্র নাই।পাতলা একটা পুরানো শাড়ি গায়ে জড়ানো গায়ের ব্লাউজটার পেছনের গলা বেশ বড়।পাতলা শরীরে পেছনের পিঠ অনেকটা দৃশ্যমান । তীব্র আরো একটু এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার পেছনে বসল। ঠান্ডায় কুপোকাত মেয়েটি মায়ের কবর জরিয়ে ধরে তখন বিরবির করছে,
আম্মু আমাকে তোমার ভেতরে ঢুকিয়ে নাও! আমার ভীষণ ঠান্ডা করছে।ও আম্মু!! আম্মু গো!!বিশ্বাস করো আমি আপুর পাস্তা খায়নি। বিড়ালে মুখ দিয়েছিল হয়তো তাই ওমন এলোমেলো হয়েছিল।ছোট মা আমাকে ঠান্ডায় রুম থেকে বের করে দিয়েছে।আমি আর পারছি না আম্মু!আমাকে তোমার কাছে নিয়ে নাও! আম্মু………
বলতে বলতেই পেছনের দিকে হেলে পড়তেই তার পিঠ ঠেকে তীব্রর বুকে।সাথে সাথে তীব্র থমকালো। মেয়েটার শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে। পুরোপুরি বেহুঁশ ছিল না আবার হুশেও ছিল না। সারারাত ঠান্ডায় থেকে পেছনের সামান্য উষ্ণ ছোঁয়া পেতেই দূবল হাতে তীব্রর কোট ধরে সামান্য একটু ঘুরে মুখ ডুবালো প্রসস্থ উষ্ণ বুকে।ঠিক যেন উষ্ণতা খুঁজে পেয়ে বুকের ভেতরে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা।
এই টুকু এইটুকু ছোয়াই তীব্রর শরীর যেন অবশ হয়ে গেল। আনমনেই বুকের ভেতর শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ফিনফিনে দেহটা।কম্পিত ফিনফিনে দেহটা বুকের ভেতর নিতেই সকল অস্থিরতা যেন মূহুর্তে দূর হয়ে গেল।ঠিক এভাবে অনেকক্ষন থাকার পর তীব্র বুঝল রিদি বেহুঁশ হয়ে গেছে। তীব্র রিদিকে তুলে গাড়িতে নিয়ে বসল। ভেজা ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে শাড়িটা একটানে খুলে গায়ের কোট পড়িয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো বুকের ভেতর।ধীরে ধীরে রিদির শরীর উষ্ণ হয়ে উঠল। তীব্র তীর কে ফোন করে আসতে বলে আবারো রিদির শরীরটা চেপে ধরে বিরবির করে বলল,
I hate this. I just hate to hold you like this.can you hear me?you make me crazy!!
তীর আসে ঠিক আধঘন্টা পর।দেশে থাকলে তীর কখনো চৌধুরী বাড়িতে থাকে না।হয়তো ফ্ল্যাট এ থাকে নয়তো নানার বাসায় আসে।মধ্যরাতে নানার বাসায় ই আজ ঘুমিয়েছিল।ভোর বেলায় তীব্রর কল পেয়েই ছুটে এসেছে।শীতের সময় হওয়াই গ্রামের মানুষের আনাগনা কম এখনো।
তীর হতদন্ত হয়ে গাড়ির কাছে আসতেই তীব্র কটমট করে বলল,
এইটারে আমার থেকে দূরে রাখ!!
তীর হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তীব্রর কথা আপাতত তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।কাকে দূরে রাখবে!!
কি হয়েছে?তুই এখানে কেন ভাই? মির্জা মঞ্জিলে তোর কাজ কি?রিদিরে আবার কিছু করিস নি তো!!দেখ একটা মাত্র বোন আমার!
তীব্র বিরক্তকর মুখে বলল,
তোর বোন আমার কলিজায় উঠে বসে আছে!ওটারে কি বাল করব??
তীর হতবাক হয়ে বলল,
কি???
তীব্র নিজের বলিষ্ঠ শরীর থেকে বিশাল কোটটা একটু টেনে রিদির মুখটা শুধু বের করল। তীর জানালা দিয়ে রিদিকে তীব্রর বুকে বিড়ালছানার মতো ঘুমিয়ে থাকতে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়ল।চোখ জোড়া রসগোল্লার মতো বড় বড় করে বলল,
কি করেছিস ওর সাথে??
উষ্ণ করেছি!!
তীর না বুঝে চিন্তিত মুখে বলল,
দেখ ভাই ও বাচ্চা মেয়ে!দে ওকে আমি নিয়ে যাচ্ছি!বলে দরজা খুলে রিদির দিকে হাত বাড়াতেই তীব্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
বালের বাচ্চা!সর!দূরে সর! মহিলা কাউকে ডাক!
কি করেছিস ওর সাথে??
বাল করেছি!যা তাড়াতাড়ি!!
তীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিদির দাদিকে কল করে ডাকল।রিদির দাদির সাথে দুএকবার দেখা হয়েছে তার অনেক আগে।রিদির দাদি বাইরে আসতেই তীব্র গাড়ি থেকে বের হলো। তীব্র ওনাকে সবটা বলতেই মহিলা হু হু করে কেঁদে উঠলো।তিনি কম চেষ্টা করে নি রিদিকে নিজের কাছে রাখার কিন্তু রুপেস রিদিকে দেয় নি।রিদি তার কাছে আসলে আমিনা তাকে মারধর করে।সে ভয়ে রিদি দাদির কাছেও যায় না। তীর সব শুনে ধপ করেই মাটিতে বসে পড়ল।বাপ হয়ে মেয়ের সাথে এতো অন্যায় কিভাবে করছে রুপেস ভাবতেই রাগে শরীর জ্বলছে। তীব্র এতোক্ষণ সবটা শুনলেও দৃষ্টি তার গাড়িতে শুয়ে থাকা রিদির দিকে। তীব্রর চেহেরায় আজ রাগ নেই।শান্ত! তবে স্থির নয়।তীব্র ধীর পায়ে সেখানে থেকে যেতে যেতে বলল,
তুই ওকে ধরবি না।লেডি গাড ডেকে রুমে দিয়ে আয়!
তীর তীব্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসল। ছটফট করতে থাকা ছেলেটা আজ একদম শান্ত কেন? তবে কি??
বর্তমান,
আমি মরেছি?বাল!!এভাবে কাদছিস কেন?
রিদি ফুঁপিয়ে উঠে বলল,
আমাকে এতো ভালোবাসেন কেন রাক্ষস মশাই??
তীব্র রিদির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
ভালোবাসি না তো!তোকে আগেও বলেছি আমি তোকে ভালবাসি না।
এটা ভালবাসা নয়??
না!
তবে??
প্রয়োজন!
প্রয়োজন শেষ হলে বুঝি আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন!!
তীব্র হুট করেই রিদির গলার ভাঁজে মুখ গুঁজে জোরে বাইট করে বলল,
আপনি আমার এমন প্রয়োজন যার কোন শেষ নেই!
চলে যাচ্ছ তবে!!
রোশানের কথায় তীব্র ঘুড়ে তাকালো রোশানের দিকে। রোশানের হাতে জ্বলন্ত সিগারেট সেটা তীব্রর দিকে বাড়িয়ে দিলে তীব্র জলন্ত সেই আগুন শিখার দিকে তাকিয়ে দুই আঙ্গুলের ফাকে চেপে ধরে সেটার দিকে তাকিয়েই এদিক ওদিক নাড়াচাড়া করে বলল,
It’s harmful…..
রোশান তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
শেষ তো করে না!!
তীব্র তখনো সিগারেট টা আঙ্গুলের ফাকে ধরে নাড়িয়ে চাড়িয়ে বলল,
হৃৎপিণ্ড দূবল করে!!
রোশান এবারো একই ভাবে হেসে বলল,
করে বুঝি!!তবে হয়তো আমার ক্ষেত্রে কাজ করে না।
তীব্র উওর করল না।হাতের সিগারেটটা পায়ের জুতার নিচে ফেলে সেটা পিশে জলন্ত আগুন নিভিয়ে দিল। রোশান সেদিকে কয়েকপলক তাকিয়ে আবারো আকাশের দিকে চেয়ে বলল,
ওকে ভালো রেখে!!ও ভালো থাকলে হয়তো সেও ভালো থাকবে!
তখন কেন ছিনিয়ে নেন নি!!
তীব্রর কথায় রোশান হেসে বলল,
বুঝে উঠতে পারি নি।
তীব্র দুহাত পকেটে গুঁজে সোজা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“Love is nothing without action”
রোশান আবারো হাসল।বুকে হাত রেখে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলল,
তীব্র চৌধুরী না হতে পারার বিশাল এক আফসোস থেকে যাবে সারাজীবন!
তীব্র যেতে যেতে বলল,
হয়তো!!
রোশান তীব্রর যাওয়ার দিকে থেকে আবারো আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।কতো শব্দহীন কথা তার ঐ দূর আকাশে বসে থাকা মেঘ কন্যার সাথে।
গ্রামের মেঠপথ পেরিয়ে শ শ করে পরপর চারটা গাড়ি বড় রাস্তা দিয়ে বের হতেই তীব্র হাতের ফোনটা রেখে রিদির দিকে চাইল।রিদি জানালা দিয়ে তখন বাইরে দেখতে ব্যস্ত। তীব্রর হাতের অবাধ্য স্পর্শ কোমরে পেতেই ঝক করে পেছনে ঘুরে বলল,
কি করছেন??
আদর করছি না। শুধু জড়িয়ে ধরছি!!
সামনে ড্রাইভার আছে!!
ও অন্ধ!!
অন্ধ তাই গাড়ি চালাচ্ছে না!!
মানে আরকি চোখ থাকিতে অন্ধ!
রিদি হতাশ হয়ে তীব্রর হাতে খোঁচা মেরে বলল,
অসভ্য লোক!!
তীব্র একটু হেসে রিদির কোমর পেঁচিয়েই সামনের ট্যাবে মনযোগ দিল।রিদি তীব্র কে ট্যাবলেটের মাধ্যমে কাজ করতে দেখে বলল,
আর কোন পদবী পাওয়া বাকি??টপ ডক্টর, টপ বিজনেসম্যান,মাফিয়া আর???
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৬৭
আর??
হুম!
আর লাগবে বুঝি!
না!
তীব্র রিদির কপালে চুমু দিয়ে।আবারো কাজে মনোযোগ দিল।রিদির রাতৈ ঘুম না হওয়াই তীব্রর বুকের উষ্ণতা পেয়ে চোখ বুঁজে সিটিয়ে গেল তার শরীরের সাথে। তীব্র রিদির কান্ডে হাসল। একহাতে রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে অন্যহাতে টাইপিং এ মনোযোগ দিল।