আবার বসন্ত পর্ব ৫

আবার বসন্ত পর্ব ৫
ঝিলিক মল্লিক

রুবায়েত পায়ের ওপর পা তুলে সোফার ওপর বসে আছে। হাঁটুর ওপর ডান হাত রেখে অনবরত আঙুল নাড়াতে নাড়াতে স্থির চাহনিতে গম্ভীরভাবে দেখছে স্টেজের সামনে। গান বাজছে সাউন্ড বক্সে। আর সামনে দু’টো বাচ্চা নাচছে। না, ঠিক দু’টে বাচ্চা নয়। একটা বাচ্চা, আরেকটা দামড়ি। রুবায়েতের চোখে তার বাচ্চা ছেলেটার পাশে দাঁড়ানো মেয়েটা দামড়ি হলেও, আশেপাশের মানুষদের কাছে সে আপাতত বাচ্চা-ই। কারণ, দামড়িটা যেভাবে নাচানাচি করছে আর আশেপাশের মানুষজন যেভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে; তাতে মনে হচ্ছে, তাদের সামনে যেন কোনো বাচ্চা নাচানাচি করছে। রুবায়েতের মুখটা তেতো হয়ে আসছে। পকেটে গুঁজে রাখা হাতটা টেনে বের করে আনলো ও। হাতের মুঠোয় টুকরো তুলো উঠে আসলো কিছু। রুবায়েত দুই টুকরো তুলো দুই কর্ণকুহরে গুঁজে সোফায় মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে দিয়ে চোখ বুঁজে একই ভঙ্গিতে বসে রইলো।

রুবায়েত চোখ খুললো তিতানের ডাকে। তিতান ওর হাঁটু ধরে ঝাকাচ্ছিল। বাবা উঠে তাকাতেই তিতান ভদ্রভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। হাবভাব এমন, যেন কিছুই জানে না সে। তাজরীন তহুরার সাথে কথা বলে এগিয়ে আসলো এদিকে। রুবায়েত ওকে দেখলো স্বাভাবিকভাবেই। এক জায়গায় স্থির নেই এই মেয়ে। হাত-পা অনবরত ছোড়াছুড়ি করেই চলেছে। রুবায়েত ওর পায়ের দিকে তাকালো৷ পা দুটে মাটিতে স্থির দাঁড়িয়ে নেই। একবার সামনে তো একবার পেছনে, ডানে-বামে — এরকম অস্থিরভাবে একটা গন্ডির মধ্যে নড়াচড়া করছে। রুবায়েত এবার প্যান্টের দুই পকেটে হাত গুঁজে উঠে দাঁড়ালো তাজরীনের সামনে। পাশের টেবিলের ওপর থেকে পানির বোতলটা টান মেরে তুলে এনে তাজরীনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে কটাক্ষের সুরে বললো,
“পানি খাও। লম্ফঝম্প তো অনেক করেছো বাঁদরের মতো। ক্লান্ত হয়ে গেছো নিশ্চয়ই?”
তাজরীন বুঝতে পারেনি, রুবায়েত ওকে কটাক্ষ করে কথা বলছে। তাই রুবায়েতের কথা শুনে ঘনঘন মাথা নেড়ে নিজের অসহায়ত্বের কথা বোঝালো ও। রুবায়েত ঠোঁট চেপে পুনরায় ঠোঁটের কোণে হালকা তিরস্কারের হাসি ফুটিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হওয়ার-ই কথা। পোলাপান মানুষ, নাচানাচি করলে তো ক্লান্ত হবে-ই।”
তাজরীন পানি পান করতে করতে ভ্রু কুঁচকে আড়চোখে দেখলো রুবায়েতকে। কোনো জবাব দিলো না প্রথমে। তারপর পানি শেষ করে ধীরেসুস্থে টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে বললো,
“আপনি বুঝবেন কীভাবে বলুন? আপনার মতো আধ-বুড়োর কাছে তো বাইশ বছর বয়সী একজন মেয়েকে পোলাপান-ই মনে হবে।”
রুবায়েত অপমানিত বোধ করলো। না-তো ওর চুল পেকেছে, আর না তো বয়স আহামরি খুব বেশি হয়েছে। তবুও, তাজরীনের মুখ থেকে এমন অপমানজনক কথা শুনতে প্রস্তুত ছিল না। মেয়েটা যে স্পষ্টভাষী নামের অত্যন্ত মানের বেয়াদব— এ সম্পর্কে রুবায়েত অবগত ছিল আগে থেকেই। আঙুল উঁচিয়ে শাসানোর সুরে তাজরীনকে বললো,
“তোমার মতো বেয়াদব ফাজিলের সাথে ফালতু তর্ক-বিবাদ করে নিজের সময় নষ্ট করতে চাইছি না। সুতরাং, চোখের সামনে থেকে যাও।”
তাজরীন একবার তিতানকে অগোচরে চোখ মে’রে উল্টোপথে লা-পরোয়াভাবে হাঁটা দিলো। রুবায়েত তৎক্ষনাৎ পেছন থেকে কি মনে করে যেন বললো,
“আর শোনো।”

রুবায়েতের ডাক শুনে তাজরীন ফিরে তাকালো। সামনে স্টেজ। লোক সমাগম অনেক। আশেপাশের পরিবেশটা একবার পর্যপেক্ষণ করে লাড্ডুকে কোলে তুলে নিয়ে একহাতে জড়িয়ে ধরে তাজরীনের ওড়নার ওপর থেকে হাতের কব্জি আলতোভাবে ধরে ওকে স্টেজের পেছনের দিকটায় নিয়ে আসলো৷ এখানে লোকজন নেই। তবে স্টেজের সামনের অংশ দেখা যায়। স্টেজের ওদিককার মানুষেরাও এই স্থানে কেউ দাঁড়ালে স্পষ্ট দেখতে পাবে। তবে কোনো কথা শুনতে পারবে না। তাজরীন ভীষণ অধৈর্য। চঞ্চল স্বভাবের হওয়ায় চাইলেও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। সেখানে বিরক্তিকর রুবায়েতের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ওর নিজের বিরক্ত লাগছে। লাড্ডুকে দেখলো নারাজ হয়ে ঠোঁট উল্টে বাবার ঘাড়ে মুখ গুঁজে চুপ মেরে আছে। তাজরীনের মায়া হলো। তবে রুবায়েতের সামনে বেচারাকে অভয় দিতেও সাহস পেল না। রুবায়েত প্রস্তুত হয়েই ছিল। মুখে হালকা গাম্ভীর্যভাব বজায় রেখে বললো,
“আজকের দিনটা তোমাদের দু’জনকেই ছেড়ে দিয়েছি, ছাড় দিয়েছি— শুধুমাত্র আমার ছেলের জন্য। চাইনি, ওর মন খারাপ হোক। পরবর্তীতে যেন এসব আর না দেখি তাজ৷ তোমার বুঝতে হবে, লাড্ডু এখনো খুব ছোটো। ওর এতো বেশি বয়স হয়নি যে, নিজের বাবার পারমিশন এবং নজরদারি ব্যতীত বাসার বাইরে অপরিচিত একজনের সাথে চলে যাবে আর আমিও সহজেই মেনে নেবো। এই ছোট্ট বয়সে ওর বাসার বাইরে এভাবে বেরোনোটা সমীচীন নয়। তুমি কী বুঝতে পারো?”

তাজরীন নতমুখে চুপ করে রইলো। আসলেই হয়তো ওর তিতানের জেদ মেনে নিয়ে ওকে এখানে নিয়ে আসা উচিত হয়নি। তবু, তাজরীন মুখ ফুটে কিছু বললো না। রুবায়েত তখন কটাক্ষ করে তিক্ততা নিয়ে বললো,
“নাহ। তুমি কিছু বুঝবে না। বোঝার বয়স হলেও তুমি বুঝবে না। কারণ, জীবনের বাস্তবতা তুমি দেখোনি। সারাক্ষণ ছেলেমানুষী স্বভাব, নিজের একটা জগৎ; যেখানে কোনো রুলস নেই, রেগুলেশনস নেই, লাইফের কোনো গোল নেই! আপাদমস্তক শুধুমাত্র শারীরিক গঠন এবং বয়সের দিক থেকে নামে বড় হয়েছো। বাস্তবিক বুঝ হয়নি তোমার। আমি তোমাকে বোঝানোর কেউ নই-ও অবশ্য। কিন্তু তুমি যখন অনাধিকার চর্চা করে ফেলেছো আমার ছেলেকে উইদাউট পারমিশনে এখানে নিয়ে এসে, সেরকম আজ আমিও অনাধিকার চর্চা করলাম। বরং, একটু বেশিই করলাম। দায় মিটিয়ে দিলাম। জীবনকে বুঝতে শেখো তাজ। নাহলে তোমার জীবনের মোড়গুলো সামলাতে পারবে না। তুমি এখন বাচ্চা নও।”
রুবায়েত দীর্ঘশ্বাস ফেলে লাড্ডুকে কোলে নিয়েই উল্টোপথে হাঁটা ধরলো। পেছন থেকে তাজরীন ফ্রক উঁচিয়ে ধরে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
“তাজ বলে কিন্তু সবাই ডাকে না আমাকে। শুধুমাত্র কাছের মানুষেরা ডাকে।”
“জানি।”
রুবায়েত না ঘুরেই হাঁটতে হাঁটতে জবাব দিলো। তাজরীন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ওদের যাওয়া দেখলো।

রুবায়েত তিতানকে নিয়ে সোজা নিজের ঘরে এসেছে। ওর পায়ের মোজা, শার্ট এবং হাফ জিন্স প্যান্ট খুলে একটা পাতলা সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরিয়ে হাত-মুখ ধুইয়ে এনেছে। রুবায়েত ভেজা মুখ মুছে তোয়ালেটা ব্যালকনিতে মেলে রেখে এসে তিতানের পাশে বসলো৷ তিতান সেই কমিউনিটি সেন্টার হতে ফেরার পথ থেকেই চুপচাপ। ওর মুখে কিঞ্চিৎ ভয়েরও আভাস। বাসায় আসা অবধি পুরো রাস্তায় ওর বাবা ওকে কিছু বলেনি। এখন যদি ঝড় ওঠে! তিতান ভেবে ভেবে আগেই ঠোঁট উল্টে কান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তখনই রুবায়েত এসে ওর সামনে বসলো হাঁটু মুড়ে আসন দিয়ে। তিতানের হাতদুটো টেনে নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিলো রুবায়েত। তিতান তখনও দৃষ্টি বিছানার কভারের ওপর রেখে বসে আছে। রুবায়েত নরম কন্ঠে আদেশ করলো,

“লাড্ডু, আমার দিকে তাকাও।”
তিতান মিটিমিটি পলক ফেলে চোখ তুলে চাইলো। রুবায়েত বললো,
“আজ রাতে আমরা কার্টুন দেখবো। তোমার পছন্দের কার্টুন, শিনচান। আমি রান্না করবো রাতে, তোমার পছন্দের খাবার৷ পিৎজা, বিরিয়ানি। আজ সব তোমার পছন্দে-ই হবে।”
“আত্তা পাপা!”
তিতান উচ্ছ্বসিত। ওর চোখ চকচক করে উঠেছে। রুবায়েত হাসলো ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে। শক্ত করে দুই হাতের বাঁধনে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“হ্যাঁ। সব হবে আজ। তবে, তোমার চুপচাপ আমার কিছু কথা শুনতে হবে এখন।”
“কি কুথা পাপা?”
রুবায়েত এবার হালকা কেশে গলা ঝেড়ে বলতে শুরু করে,

“সন্তান তার মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন হয়, জানো? কিন্তু তোমার তো মা নেই। আমি আছি শুধু , তোমার বাবা। একারণে, তুমি আমার নাড়িছেঁড়া ধন হতে না পারলেও কলিজার টুকরা আমার। কাজের প্রেশারে তোমার জন্য আমার পর্যাপ্ত সময় হয় না ঠিকই, কিন্তু প্রতিমুহূর্তে তুমি আমার মন-মস্তিষ্কে বিচরণ করো। ক্যান্টনমেন্টে থাকলেও আমার মন পড়ে থাকে ঘরে, তোমার জন্য। কিন্তু, আমি যে নিরুপায়। সম্ভব হলে সারাদিন তোমার সাথে বিরতিহীনভাবে কাটিয়ে দিতাম। কিন্তু দায়িত্ববোধ যে আমার পিছু ছাড়তে চায় না।৷ যুবক বয়সে আমি দায়িত্ব নিতে চাইতাম না। কিন্তু যখন তোমার মা এলো আমার জীবনে, তখন থেকে অজান্তে আমি ধীরে ধীরে দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে থাকলাম। এখন চাইলে আমি সবকিছু থেকে ছুটি নিয়ে দূর কোনো পাহাড়াঞ্চলে তোমাকে আর আম্মাকে নিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে তোমার ভবিষ্যৎ গড়তে পারবো না আমি।

পিতা হিসেবে ব্যর্থ রয়ে যাবো। তোমাকে সময় দিতে না পারলেও শাসন করি, যাতে এই বয়স থেকেই তুমি একটা সহবত পরিবেশের মধ্যে মানুষ হও। তোমাকে আমি আদর্শ মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। তোমার জন্মের পর নার্সের কোল থেকে সবার প্রথমে আমার কোলে এসেছিলে। তোমার জন্মের পর কানের কাছে প্রথম আজান আমি-ই দিয়েছিলাম। মা নেই তোমার। সচারাচর তোমার মায়ের কথা তোমার সামনে তুলিও না আমি। মায়ের অভাববোধ যাতে না করো, এজন্য নিজে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি দু’জন অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করার। দেখো, বেকার, লাইফলেস, একসময় বাবা-মায়ের টাকা উড়িয়ে চলা দায়িত্বজ্ঞানহীন ছেলেটাও তোমার আম্মা আর তোমার জন্য দায়িত্বশীল হয়ে উঠেছে ধীরে ধীরে।

আমার সবসময় শঙ্কায় থাকতে হয়, কখনো যেন তোমার বিপদ না হয়, সামান্য আঘাতও যেন তুমি না পাও। এজন্য কোয়ার্টারের বাইরেই পা রাখতে দিই না। এখন সময় নয় তোমার বাইরের জগৎ দেখার। আরো বড় হও বাবা। সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। তুমি আমার জন্য কি, তা আজ বুঝতে না পারলেও বড় হয়ে একদিন ঠিকই বুঝতে পারবে। যদিও এখন তোমার এসব বোঝার বয়সও নয়, তবু আমি নির্বোধের মধ্যে এই কথাগুলো বলছি। কোনোপ্রকার লাভ ব্যতীত বলছি। কারণ, তুমি ছাড়া আমার আর কেউ থাকবে না একসময়। তুমি আমার জন্য একমাত্র সম্বল। এই সম্বলকে আমি হারাতে চাই না।”
কথা বলতে বলতে রুবায়েতের কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে এলো। তিতান কি বুঝলো ন বুঝলো, তা ঠিক বোঝা গেল না। কিন্তু ওর চোখ ছলছল করে উঠলো। নিজের কঠোর বাবার কখনো এইরূপ দেখেনি বোধহয় একারণে! তিতান শক্ত করে রুবায়েতের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

“তুমাকে খুউব বালোপাতি পাপা।”
রুবায়েত মুচকি হেঁসে তিতানের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
“তোমাকেও আমি খুব ভালোবাসি সোনা আমার। সবসময় পাপার কথা শুনে চলবে।”
“আত্তা”
তিতান চুমুতে ভরিয়ে তুললো রুবায়েতের সম্পূর্ণ গাল। এরপর বাপ-ছেলে মিলে রাতের খাবার, কার্টুন দেখার আয়োজন করতে বসার ঘরে চলে গেল।

“একবার তো এশরাকের সাথে কথা বলে দ্যাখ রে মা। কি করবো বল তো! এশরাকের মা যে বারবার অনুরোধ করেই যাচ্ছে।”
তাজরীন বিছানার ওপর বিছানো বালিশে মাথার নিচে হাত আর পা দু’টো পালঙ্কের ওপর রেখে শূন্যে তুলে অনবরত নাচাতে লাগলো। তবে মায়ের কথায় ওর ভাব-গতিক কোনো পরিবর্তন ঘটলো না। ডলি বেগমের এবার রাগ হলো। ধমক দিয়ে বললেন,
“এতোটা বেপরোয়া তুমি কীভাবে হও তাজ? এশরাককে বিয়ে করতে না করে দিলে। তোমার ভাইয়াকে দিয়ে ওদের বলে দিয়েছো, ভালো কথা। তোমার ভাই আমাকে ঠিকমতো স্পষ্ট করে কিছু জানালোও না, আর না-তো তুমি। ভেবেছিলাম, তোমাদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে, মিটমাট করে নেবে। দু’দিন পরে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তো দেখছি, ঘটনা উল্টো। মা’কে একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করেছো? করোনি। তোমার চিন্তায় চিন্তায়-ই মরতে হবে আমাকে। এ-জীবনে আর শান্তি হলো না আমার।”

ডলি বেগম এই মুহূর্তে রেগে আছেন খুব। জীম চিল্লাপাল্লা শুনে দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। শাশুড়িকে সহজে রাগতে দেখে না। আজ হঠাৎ এভাবে রেগে যেতে দেখে বেশ ভয় লাগছে ওর। তাই, যেচে আর সামনে গেল না। দূরে দাঁড়িয়ে তাজরীনকে ইশারা করলো, অভদ্রতা না করে চুপচাপ উঠে বসতে, না-হয় সেখান থেকে চলে আসতে। তাজরীন ইশারা পেয়েও উঠলো না। জেদ ধরেই লা-পরোয়াভাবে শুয়ে রইলো একই ভঙ্গিতে। ডলি বেগম ওর ভাবভঙ্গি দেখে কিছুটা নরম হয়ে বললেন,
“শুনেছি, এশরাক কি করেছে। তবে মানুষ মাত্র-ই তো ভুল হয়। ছেলেটা এমনিতে ভালো। হয়তো বেফাঁস কথা বলে ফেলেছে রাগের মাথায়। কিন্তু তোর চিন্তাও তো করে। তোকে খুব ভালো রাখবে রে মা। এশরাক ছাড়া দুনিয়ার আর কোনো ছেলে তোকে ভালো রাখতে পারবে না বা গুরুত্বও দেবে না। ক্ষমা চাচ্ছে যখন, ক্ষমা করে দে না।”
তাজরীন পা নাড়াতে নাড়াতে বললো,

“তুমি বড্ড সহজ-সরল আম্মা। আমার মরহুম আব্বা চালাক, বুঝদার ব্যক্তি ছিলেন। আমি সম্ভবত আব্বাজানের গুণ পেয়েছি।”
“বাজে বকো না তো। বাস্তবতা বুঝতে শেখো তাজ। এশরাকের মা তোমাকে পুত্রবধূ হিসেবে নেওয়ার জন্য পাগল।”
“কেন পাগল, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। যে মহিলা, স্বার্থ ব্যতীত নিশ্চয়ই কিছু করবে না। হয়তো রাজশাহীতে আমাদের সম্পত্তির জন্য. . .”
তাজরীন বিরবির করলো। তবে ডলি বেগম তা শুনতে পেলেন না। পুনরায় তিনি বলে উঠলেন,
“তুমি সময় নাও তাজ। তোমার ওপর আমরা কিছু চাপিয়ে দিচ্ছি না। কিন্তু এক সপ্তাহ সময় নিয়ে তুমি নিজের অবস্থা, পরিস্থিতি বোঝো, তারপর সিদ্ধান্ত নাও। আমাকে জানিও, আমি মেনে নেব তোমার সিদ্ধান্ত। মনে রেখো, তুমি কিন্তু বন্ধ্যা।”

আবার বসন্ত পর্ব ৪

ডলি বেগম কঠিনভাবে বলে মুখে আঁচল চেপে উঠে চলে গেলেন। তাজরীনের বুকে প্রথমবারের মতো ক্ষীণ ব্যাথা হলো। কি জঘন্য অসহ্যকর সত্যিটা বলে গেলেন আম্মা! তাজরীন তো প্রায়শই ভুলেই বসে থাকে যে, ও বন্ধ্যা নারী!

আবার বসন্ত পর্ব ৬