আবার বসন্ত পর্ব ৬

আবার বসন্ত পর্ব ৬
ঝিলিক মল্লিক

রুবায়েত ও তিতান ড্রয়িংরুমের ড্রিম লাইট অন করে রাত সাড়ে এগারোটায় বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ দেখতে বসেছে সোফার ওপর। রুবায়েতের কোলের ওপর তিতান৷ ক্রিকেট ও বোঝে না এই ছোট্ট বয়সে। তবে এটুকু বোঝে, ওদের একটা পক্ষ আছে। সেই পক্ষ ভালো কিছু করলেই তার বাবার চোখে-মুখে উল্লাস দেখে তিতানও উল্লাসিত হয়, হাততালি দেয়।
তিতানের হাতে পপকর্ণ। একটার পর একটা মুখে পুরছে। রুবায়েতের মনোযোগও টিভিতে। তখন আয়েশা খানম নিজ ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন। রুবায়েত জানে, তার আম্মা ঘুমাতে গিয়েছেন নিজ ঘরে। তাকে হঠাৎ এই সময়ে বাইরের ঘরে দেখে অবাকই হলো। আয়েশা খানম ছটফপ করছিলেন বিছানায়। ঘুম আসছিল না তার। না পেরেই বাইরে এসেছেন ছেলের সাথে কথা বলতে আড়াআড়ি সোফায় বসলেন তিনি। একনজর টিভি স্ক্রিন দেখে নিয়ে রুবায়েতের দিকে তাকালেন। রুবায়েত তখনও কৌতূহলী দৃষ্টিতে ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ঘটনা বোঝার চেষ্টা করছে। জিজ্ঞাসা করলো,

“তুমি ঘুমাওনি আম্মা?”
“না।”
“কেন?”
“এমনিই, এলাম তোমাদের সাথে আড্ডা দিতে।”
রুবায়েত বেশ অবাক হলো। বিরবির করে বললো, “কখনো তো আসো না বাইরে। এই টাইমে প্রতিদিন ঘুমিয়ে পড়ো। আজ হঠাৎ!”
আয়েশা খানম বোধহয় নিচু আওয়াজে বলা কথাগুলো শুনতে পেলেন না। পাঁচ মিনিট নিরবতা পালন করে ধৈর্যসহকারে টিভির স্ক্রিনে চোখ রাখার পরে তিনি আড়চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে বললেন,
“একজনের চেহারা দেখতে কিন্তু কিছুটা আসমার মতো। মানে, আসমার চেহারার সাথে মিল আছে।”
রুবায়েতের মনোযোগ টিভির দিকেই ছিলো। এক ইঞ্চি পরিমাণও মনোযোগে বিঘ্ন ঘটলো না। না তো সামান্য নড়চড় করলো না। স্ক্রিনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেই রিমোট দ্বারা অনবরত এলোমেলো হাতে বিনা কারণে চ্যানেল পরিবর্তন করতে করতে জবাব দিলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এ বিষয়ে আমি কোনোরকম আলাপ করতে চাইছি না আম্মা। তাছাড়াও আসমার মতো দেখতে হলেই কেউ আসমা হয়ে যাবে না। সুতরাং, এসব বেহুদা আলাপ করে লাভ নেই।”
আয়েশা খানম প্রথমে চুপসে গেলেন। ছেলের সামনে এধরনের কথা তুলতেই আতঙ্কিত হন তিনি। না জানি হুলস্থুল বাঁধিয়ে বসে তার ছেলে আর আয়েশা খানমের বিপি বেড়ে যায়। তবুও কথা ঘুরিয়ে আবার বলতে শুরু করেন,
“তাজরীনের সাথে কিন্তু আমাদের তিতানের ভালো-ই ভাব। দু’জনের বেশ ভালো বন্ধুত্বও হয়েছে৷ তিতানও খেলাধুলা আর ঘোরাঘুরি করার সাথী পেয়েছে। তাজরীন কিন্তু তিতানকে খুব ভালো জানে।”
“হ্যাঁ তো?”
রুবায়েত এবার ওর সম্পূর্ণ মনোযোগ মায়ের দিকে দিলো। ভ্রু তুলে পাল্টা প্রশ্ন করলো।
“তো, তাজরীনকে একদিন এ-বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে আনা উচিত। আর এরপর. . .”
“এরপর?”

ছেলের ভাব-গতিক সুবিধের লাগছে না আয়েশা খানমের৷ এখনই না চেঁচিয়ে ওঠে। ইতস্তত বোধ করছেন তিনি। জড়তা নিয়েই জবাব দিলেন,
“এরপর তাজরীনকে. . . ”
“লাড্ডু, উঠে আসো। ঘুমাতে যাবো। আজ অনেক লেট হয়ে গেছে।”
মা’কে পুরো কথা শেষ করার সুযোগ না দিয়েই রুবায়েত হঠাৎ উঠে গেল সোফা ছেড়ে। তিতান সোফায় বসেই ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“কিনতু পাপা ম্যাত?”
“ম্যাচ ডিশমিশ।”
“তালে কুন জিতিচি পাপা?”
“জিতেছে তোর বাপ! এবার ঘুমাতে আয়।”
রুবায়েত নিজ ঘরের দিকে হাঁটা ধরতেই তিতান নেমে দৌড় দিলো ওর বাবার পিছু পিছু। আয়েশা খানম অসহায়ের মতো সেখানেই বসে রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর বাতের ব্যাথা নিয়ে নিজ ঘরের দিকে চলে গেলেন।

আজ তহুরার বিয়ে। কমিউনিটি সেন্টারে তাজরীন গত দু’দিন যাবত ছিল। এখনো পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সবগুলো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে ও।
তহুরাকে পার্লারের মেয়েরা এসেছে সাজাতে। ভেতরের রুমে ওকে সাজানো হচ্ছে। তাজরীন গতকালের নরমাল পোশাকটা পরিবর্তন করে শারারা গায়ে জড়িয়ে বাথরুমের বাইরে এসে দাঁড়ালো। কাঁচা হলুদ রঙের পোশাকের ওড়নাটা টেনে ধরে সামলে তৈরি হতে লাগলো। এরমধ্যে ওর বড়ভাইকে ফো করে জিজ্ঞাসা করলো, তাদের আসতে কত সময় লাগবে। তাজরীন তৈরি হয়ে তহুরা যে-ঘরে ছিল, সেখানে গেল। তহুরা প্রায় প্রস্তুত। আর মিনিট পনেরোর মধ্যে বাইরে বের হবে। তাজরীন ওকে একবার দেখে নিয়ে বাইরে আসলো হলরুমে অনেক ভীড়। এতো ভীড়ের মাঝে তাজরীনের অস্বস্তি হচ্ছিল। একারণে একটা খোলা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো ও। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। বিরক্তি ধরছে। আলস্য শরীর আর এক জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে চায় না। কিন্তু, কোনো উপায়ান্তরও নেই। ওদিকটাতে গেলে তাজরীনের গরম লাগতে শুরু করবে। বিরক্তিভাব আরো বাড়লো ফোনের রিংটোনের আওয়াজে। হাতের মুঠোয় পিষ্ট করে চেপে রাখা ফোনটা তুলে স্ক্রিনে কলারের নাম্বার দেখলো। নাম্বারটা অপরিচিত। কৌতূহলে রিসিভ করতেই ফোনের অপর পাশ থেকে এশরাকের কন্ঠস্বর শোনা গেল। ও অত্যন্ত কাকুতি-মিনতি স্বরে একনাগাড়ে বলতে লাগলো,

“আমি তোমাকে দেখতে চাই তাজরীন। তোমার সাথে কথা বলতে চাই। বিয়েবাড়িতে তো তুমি? মিরপুর কমিউনিটি সেন্টারে? আমি সেখানেই এসেছি মাত্র। এইতো কমিউনিটি সেন্টারের বাইরে দাঁড়িয়ে। তুমি একবার শুধু দেখা করে যাও আমার সাথে। যদি কনভিন্স না হও, তবে আর দ্বিতীয়বার কখনো তোমার সাথে কথা বলতেও চাইবো না। সত্যি বলছি। বিশ্বাস করো আমাকে।”
“উফফ এশরাক! কী শুরু করেছো তুমি? জ্বালিয়ে মারবে তো দেখছি!”
“একবার দেখা করে যাও। আর কখনো জ্বালাবো না তোমাকে।”

তাজরীনের প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে এহেন অস্বস্তিকর কান্ডে। তবুও, ঝামেলা যাতে বেশি বাড় না বাড়ে এজন্য ও কমিউনিটি সেন্টার থেকে বেরিয়ে আসলো। হলরুমের সদর দরজা পেরিয়ে ঠিক ডানদিকে, যেখানে কোনো জনমানব সচারাচর থাকে না; সেই জায়গাটাতে উল্টোদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে এশরাক। বিপরীত দিকে মেইন গেইট। এদিকটাতে জনসংখ্যা নেহাত শূন্য। গেইট থেকে মানুষ ভেতরে প্রবেশ করছে। কিন্তু কারো খেয়াল বা যাত্রা ওদিকে নেই। তাজরীন বড় বড় পা ফেলে এগোলো সামনের দিকে। আজ এশরাককে কঠোরভাবে শাসিয়ে তবেই সে ফিরবে।
তাজরীন গিয়ে দাঁড়াতেই এশরাক পেছনে ফিরে তাকালো। তাজরীনকে দেখে ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। তাজরীনের ঠিক পছন্দ হলো না এশরাকের হাসির ধরন। শরীরে জ্বলন ধরালো। অস্বস্তিও হতে লাগলো বেশ। এশরাক আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। তারপর-ই তাজরীনকে ইশারা করে সামনের দিকে এগোতে বললো। তাজরীন ভ্রু কুঁচকে সামনে এগোলো। এদিকটা আরেকটু নির্জন। আরো কিছুটা কোণায়। গেইট থেকে এই জায়গাটা ভালোভাবে খেয়াল করলে বোঝা যায়। তাজরীন মেজাজ দেখিয়ে বলতে গেল,

“আমাকে এভাবে বিরক্ত করার মানে কী এশরাক? এখানে এনে. . .”
তাজরীন কথা সম্পূর্ণ করতে পারলো না। তার আগেই অতর্কিতে এশরাক ওর দুই হাত চেপে ধরে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে বলতে লাগলো,
“আমার তোমাকে চাই তাজরীন। যে-কোনো মূল্যে হোক, চাই। তুমি আমার জেদ। ছোটবেলা থেকে আমার যা প্রয়োজন বলে মনে হয়েছে, তা আমি নিজের করেই ছেড়েছি। তোমাকেও আমার লাগবে। ফিরে এসো আমার কাছে।”
“এ-কি করছো এশরাক! সরো। বেয়াদব একটা! একদম দূরে সরে দাঁড়াও। ঘেঁষাঘেঁষি করছো কেন? একটা থাপ্পড় বসাবো কানের নিচে!”

তাজরীন রাগে ফেটে পড়ছে। কান থেকে যেন গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। ঠেলে এশরাককে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ও। কিন্তু এশরাক সরতেই চাইছে না। উন্মাদের মতো আচরণ করছে। তাজরীন চিৎকার করতে যাবে, তখনই একটা লম্বা হাত এসে এশরাকের কলার চেপে ধরলো পেছন দিক থেকে। টেনে ফেলে দিলো নিচে। তাজরীন চমকে ঘুরে তাকালো। রুবায়েতকে দেখে থমকালো। রুবায়েত এগিয়ে গিয়ে এশরাককে টেনে তুললো। তারপর ওর হাঁটু বরাবর একটা লা’থি বসালো। তাজরীনের পা জোড়া যেন গেঁথে গেছে মাটির সাথে। এক ইঞ্চিও নড়ার শক্তি পাচ্ছে না। শুধু তাকিয়ে দেখছে, রুবায়েত কিভাবে একের পর এক লা’থি, ঘু’ষি, থা’প্পড় বসিয়ে যাচ্ছে এশরাকের চিকনচাকন শরীরে। তাজরীনের মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ-ই হচ্ছে বৈকি। এশরাক অসম্মান করেছে ওকে। একজন মেয়ের অনুমতি ব্যতীত তাকে ছুঁয়েছে, শারীরিকভাবে হ্যারাসমেন্ট করার চেষ্টা করেছে। এটুকু মা’র তো ওর প্রাপ্য। তাজরীন আনন্দ প্রকাশ করার অবকাশ পেল না। এশরাককে পালানোর সুযোগটা রুবায়েত-ই দিলো। সুযোগ পেয়ে এশরাক মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত ছুটে পালালো। ও যেতেই রুবায়েত ঘুরে প্যান্টে দুই হাত রেখে সোজা হয়ে মুখ উঁচু করে দাঁড়ালো তাজরীনের সামনে। কিছুক্ষণ ওর চোখে চোখ রেখে সম্ভবত চোখের ভাষা পরলো। তারপর ঠোঁট চেপে ভ্রু কুঁচকে একটা রাগী ভাব নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

“এই ছেলের নাম এশরাক?”
তাজরীন নতমুখে চুপ করে রইলো৷ কোনো জবাব দিলো না প্রথমে। রুবায়েত পরমুহূর্তেই হালকা চেঁচিয়ে আবারও বললো,
“তাসনিয়া! আপনাকে একটা প্রশ্ন করছি আমি। সোজাভাবে জবাবটা দিবেন প্লিজ?”
রুবায়েতের মুখে নিজের ভিন্ন নাম এবং আপনি সম্বোধনে তাজরীনের বেশ দুঃখ-ই হলো বৈকি। রাগটা বোধহয় বেশি পরেছে। রেগে গেলেই রুবায়েত এভাবে সম্বোধন করে। তাজরীন ওর চোখের দিকে তাকালো। ওই চোখে আপাতত রাগের জোয়ার। মেজাজ নিয়ন্ত্রণে নেই। চোয়াল শক্ত করে একভাবে তাকিয়ে আছে তাজরীনের দিকে জবাবের আশায়। তাজরীন আশেপাশে দেখলো একবার। দূর থেকে কয়েকজন দেখছে। হয়তো কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোও দেখেছে। তাজরীন এবার নিচু স্বরে রুবায়েতের প্রশ্নের জবাবে বললো,

“জি।”
“এই ফালতু ছেলের সাথে আবার কেন দেখা করতে এসেছেন আপনি? তাসনিয়া, বলুন কারণটা। শুনবো আমি। তারপর আপনার বড়ভাইকে গিয়ে বলবো।”
তাজরীন এবার বুঝতে পারলো, তার বিয়ে ভাঙার খবরটা রুবায়েত জানে। এমনকি তাজরীনের জীবনের চরম সত্যিটাও হয়তো জানে। তবুও কৌতূহল মেটাতে না পেরে তাজরীন কথা এড়িয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো,
“এশরাকে আপনি চেনেন?”
“হ্যাঁ। চিনবো না কেন? আপনার এক্স ফিয়োন্সে ছিল। বিয়েটা ভেঙে দিয়েছেন আপনি।”
“কেন ভেঙেছি, তা জানেন?”

“জি জানি। আপনার বাচ্চা হবে না কখনো— এজন্য ছেলেটা আপনাকে মূলত দয়া দেখিয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিল এবং বিভিন্ন সময়ে খোঁটাও দিতো। একারণে আপনি বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন। এটা তো সিম্পল ব্যাপার, তাই নয় কি?”
“জি, ঠিক তাই। কিন্তু মেজর, আপনাকে আমার লাইফের এসব পার্সোনাল ইনফরমেশন কে দিলো?”
“অবভিয়সলি আপনার বড়ভাই। এটুকু তো সহজেই বোঝার কথা। ”
রুবায়েত বুক সমান উঁচু দেয়ালের দিকে মুখ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে শুরু করেছে ততোক্ষণে। তাজরীন পেছনে কতক দূরেই দাঁড়িয়ে রইলো। বড়ভাইয়ের ওপর বেশ রাগ হলো ওর। এসব কথা মানুষকে জানানোর কি দরকার! মানুষ পারবে শুধুমাত্র দয়া এবং করুণা দেখাতে। কিন্তু তাজরীন যে করুণা গ্রহণ করে বাঁচতে চায় না। ও কি অবলা নাকি! রুবায়েত না ঘুরেই বললো,

“আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিছু না কিছু ত্রুটি থাকে। সৃষ্টিকর্তা কাউতে নিখুঁতভাবে তৈরি করেন না। চাঁদ সুন্দর, অথচ তার গায়েও কালো দাগ আছে। তবে, কালো দাগের জন্য কিন্তু চাঁদের সৌন্দর্য অমলিন হয়ে যায় না। বরং, চাঁদ তার সিলসিলা মোতাবেক প্রতিদিন রাতের আসমান এবং পৃথিবীকে আলোকিত করে। এই-যে চাঁদের নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস — এটা প্রত্যেক মানুষের থাকা উচিত। চাঁদের গায়ে কালো দাগ আছে বলে কী চাঁদ প্রতিদিন ওঠা বন্ধ করে দেয়? নাকি লজ্জায় সবসময় মেঘের আড়ালে গিয়ে বসে থাকে?”
তাজরীন দুই পাশে মাথা নাড়ালো। অর্থাৎ, চাঁদ এমন কিছু করে না। রুবায়েত এবার সিগারেটটা ফেলে পকেটে হাত গুঁজে সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাজরীনের চোখে চোখ রেখে বললো,
“তাহলে আপনার নিজের ত্রুটির কথা লোকসমাজে জানাতে এতো লজ্জা এবং সংকোচ কিসের? এই ত্রুটি কী আপনার নিজের তৈরি? বরং, এটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত।”
রুবায়েতের কথা শুনে ঠোঁট ফুলিয়ে তাজরীন অন্যমনস্ক ভাবনায় পরলো অনেকটা সময়। রুবায়েত হালকা হেঁসে বললো,

আবার বসন্ত পর্ব ৫

“এতো ভাববেন না তাসনিয়া। আপনাকে আমি সুখী নারী হিসেবে জানতাম। আপনি যে ইমম্যাচিউর, এটাও জানতাম। তবে এতোটা ইমম্যাচিউরটি আপনার থেকে আশা করিনি। মা শা আল্লাহ আজ আপনাকে অন্যরকম লাগছে। ভেতরে আসুন। পরের বৈঠকে আমরা সবাই বসবো। আপনার ফ্যামিলির আসতে একটু লেট হবে। আপনি বরং আমার সাথে সাথেই থাকবেন। আসুন।”
জলপাই রঙা শার্ট ও ছাইরঙা ক্যাজুয়াল প্যান্ট, রোলেক্স ওয়াচে ক্যাজুয়াল লুকে আসা লোকটা বেপরোয়াভাবে হেঁটে চলে গেল হলরুমের ভেতরের দিকে। তাজরীনের মস্তিষ্কে একটা কথা-ই বাজতে লাগলো বারবার,
“মা শা আল্লাহ, আজ আপনাকে অন্যরকম লাগছে।”
“মা শা আল্লাহ”— এই শব্দের চেয়ে প্রশংসনীয় তারিফ আর কী হতে পারে? অজান্তেই তাজরীনের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।

আবার বসন্ত পর্ব ৭