আবার বসন্ত পর্ব ৯
ঝিলিক মল্লিক
“আম্মা, তোমার কী বিরক্ত লাগছে?”
“বিরক্ত কেন লাগবে?”
“এই-যে আমি তোমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি?”
তাজরীন ডলি বেগমের কোলে শক্ত করে চেপে রাখা মাথাটা এপাশ থেকে ওপাশ করে বসলো। ডলি বেগম তাজরীনের চুলের খোঁপা খুলে লম্বা চুল নিচের দিকে ছড়িয়ে দিয়ে দুই হাতে বিলি কাটতে কাটতে জবাব দিলেন,
“মায়েরা কখনো বিরক্ত হয় না রে মা। সন্তানের স্বস্তিতেই তো মায়ের স্বস্তি। সন্তানের সুখেই তো মায়ের সুখ।”
“সুখ?”
“হ্যাঁ সুখ। অভিমান, দুশ্চিন্তার বশে রাগ দেখিয়ে বসলেও জায়নামাজে বসে দু’আয় আমি সবার আগে তোর জন্যই কাঁদি। সবসময় দোয়া করি, জীবনে অনেক সুখী হ তুই।”
কথাটা বলা মাত্র তাজরীনের সামান্য হাসির ঝংকার শোনা যায়। এ-কথায় মুচকি হেসেই বলে,
“এই ছোট্ট এক জীবনে মানুষ যা চায়, তার সব-ই কি পায়? জীবনের অনেকটা সময় শুধু সুখ চেয়ে গেলাম। অথচ সুখ বাদে সবকিছু আমি পেলাম। অসুখ, দুঃখ. . .কোনোকিছুর কমতি নেই। দুঃখ যেন পাই বেশি — এই দু’আ করো আম্মা। তাহলে বোধহয় আমি সুখ পেলেও পেতে পারি।”
ডলি বেগমের ভেতর থেকে কান্নারা দলা পাকিয়ে একসাথে হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসতে চাইলো৷ তবে সেটাকে ভেতরেই দমন করে নিলেন তিনি। বুঝেছেন, মেয়ের তার জাগতিক এতো ঝঞ্ঝাটের কারণে মন খারাপের মাত্রা বেড়েছে৷ এখন ডলি বেগম নিজেও যদি দুঃখী হয়ে বসে থাকেন, তবে মেয়ের মন ভালো করবে কে?
সবার আপন মানুষ আছে। সবার সব আছে। তার এই হতভাগিনী মেয়েটির কিছু নেই। জনমদুখী হয়ে জন্ম যার, তার কপালে কী আর সুখ লেখা থাকে? সবাই আশা ছাড়লেও, সমাজের মানুষ বহু কটু কথা শোনালেও ডলি বেগম আশা ছাড়েননি। এই একটি মাত্র মেয়ের একটা সুব্যবস্থা না করে মরেও শান্তি পাবেন না তিনি। একরাশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ডলি বেগম মেয়ের মাথায় আলতোভাবে ধীরে ধীরে হাত বোলাতে বোলাতে বলেন,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“জালালুদ্দিন রুমির সেই বাণী মনে আছে তোমার?”
“কী?”
“রুমি বলেছিলেন, · ‘যে অন্ধকারের মধ্যেই তুমি থাকো না কেন, ধৈর্য ধরে বসে থাকো; প্রভাতের সূর্য শীঘ্রই আসিতেছে।’ — এজন্য বলছি, দুঃখ মনে পুষে রেখো না। নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা তোমার জন্য ভালো কিছু রেখেছেন সামনে। এখন ঘুমাও আমার সোনা।”
ঝকঝকে, তকতকে এক সকাল। দশটার দিকেই তীব্র রোদ উঠেছে। সূর্য প্রখর তেজ নিয়ে তার তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে যাচ্ছে পৃথিবীতে। তাজরীনের মনটা বড্ড বেচঈন লাগছে সকাল থেকেই। ছটফট করছে ও। আজ তো শুক্রবার— সাপ্তাহিক ছুটির দিন। বের হওয়ারও কোনো উপায় নেই। অন্যদিন মন খারাপ হলে বা বাসায় থাকতে ভালো না লাগলে, ভার্সিটির বাহানা দিয়ে বেরিয়ে নীলক্ষেত, উত্তরা, মিরপুরের সব সেক্টর ঘুরেফিরে আসতো তাজরীন। আজ ওর বড়ভাইও বাসায় আছে। ভাইয়া খুবই কঠোর। এই কাঠফাটা রোদে তাজরীনের বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে একখানা একাডেমিক বই ধরিয়ে বসিয়ে দেবে। এমনটা আগেও ঘটেছে। তজ্জন্য, ইচ্ছাসত্ত্বেও বাসা থেকে বেরিয়ে একটু ঘুরেফিরে আসতে পারছে না তাজরীন। নীলক্ষেত ওকে এখন টানছে ভীষণ। কিন্তু যেতে-আসতে অনেকটা সময় লাগবে। কোনোমতে বেরোলেও ফিরতে দেরি হওয়ার কারণে বাসায় হৈচৈ পড়ে যাবে। অনেকটা সময় ঘরের দরজা বন্ধ করে অস্থিরভাবে পায়চারি করলো তাজরীন। তারপর কি মনে করে যেন দরজা খুলে পা টিপে টিপে বেরিয়ে এলো। নিঃশব্দে ভাই আর বৌমণির ঘরের সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখতে পেল, ওর বৌমণি আচার খাচ্ছে বসে বসে। হঠাৎ তার দরজায় চোখ পরতেই তাজরীন ‘হিস হিস’ শব্দ করে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো, “ভাইয়া কোথায় বৌমণি?”
জীম সহসা জবাব দিলো, “উনি তো বাসায় নেই।”
“কোথায় গেছে?”
“বের হলো মাত্র।”
“কী কাজে গেছে?”
“সেলুনে যাবে চুল কাটাতে। আর কিছু বাজার-সদাই করে নিয়ে আসবে।”
“তাহলে তো ফিরতে সাড়ে বারোটার মতো সময় লাগবে, না?”
“হ্যাঁ, আনুমানিক ওরকম-ই।”
খবরটা শুনে তাজরীন উচ্ছ্বসিত হলো৷ দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে ওর আম্মাকে বললো, “আম্মা আমি একটু বাইরে যাই।”
“কোথায় যাচ্ছো?”
“নীলক্ষেত।”
“এই অবেলায়?”
“না আম্মা। এটাকে অবেলা বোলো না। আমার ইচ্ছা হয়েছে এখন। কী করবো বলো? ভাইয়াকে বোলো না। যদি আমার আগে ভাইয়া এসে পড়ে; তবে বলবে, সামনের লেকপাড়ে গিয়েছি।”
ডলি বেগম রান্নাঘরে রান্নায় ব্যস্ত। কড়াইতে খুন্তি দিয়ে মশলা নাড়তে নাড়তে চেঁচিয়ে অনেক নিষেধাজ্ঞা দিলেন, সাবধান বাণী শোনালেন। তাজরীন কিচ্ছুটি শুনলো না। ততোক্ষণে ও ঘরে গিয়ে গোসল সেরে দ্রুত একটা আনারকলি গায়ে চাপিয়ে সাইড ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে এক হাতে মেটেল চুড়ি দু’গাছা, আরেক হাতে ঘড়ি পরতে পরতে বেরিয়ে গেল।
নীলক্ষেতে আজ অনেক ঘোরাঘুরি, পরিশ্রম এবং দরদাম করে কতগুলো নতুন বই সংগ্রহ করে ব্যাগে পুরে নিয়ে আসতে পেরে ভীষণ খুশি তাজরীন। নীলক্ষেতে ঘোরাঘুরি এবং কেনাকাটা শেষে রিকশায় ওঠা থেকেই তাজরীন বারবার হাত তুলে ধরে ঘড়িতে সময় দেখে যাচ্ছে। এখন দেড়টা বাজে। পৌঁছাতে পৌঁছাতে নিশ্চয়ই ১ টা বেজে ৫০ মিনিটের ধারেকাছে যাবে। এতোটাও দেরি হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু যাওয়ার পথে কয়েকজন যানবাহন চালকদের মধ্যে ঝামেলা হওয়ার কারণে, সেদিকেই প্রায় দেড় ঘন্টার মতো সময় ব্যয় হয়েছে। পেছানোরও কোনো উপায় ছিল না। কারণ, ততোক্ষণে অনেকটা রাস্তা পার করে এসেছে, তারওপর ওর নেওয়া রিকশার পেছনে আরো অজস্র গাড়ির জ্যাম লেগে ছিল। অতঃপর দীর্ঘ যানজট শেষে ১২ টা ২০ নাগাদ নীলক্ষেতে পৌঁছালো তাজরীন। আজ অনেক ভেতরের অজানা দোকানগুলো খুঁজে খুঁজে সেখানে গিয়েছিল ও। তাই, কখন যে সময় কেটে গিয়েছে; তা ও বুঝতেই পারেনি। নীলক্ষেতে ঢুকলে পুরোনো বইয়ের ঘ্রাণে ওর ঘোর-ই কাটে না। এক অদ্ভুত আমেজে থাকে। শেষমেশ কতগুলো বই সংগ্রহ করার পর তাজরীনের সময় জ্ঞান হলো। তখন দুপুর একটারও ওপরে ঘড়ির কাটা। তৎক্ষনাৎ দ্রুত পা চালালো তাজরীন। একপ্রকার অস্থিরতা নিয়ে রিকশা ডেকে তাতে উঠে পরলো। আসার পথে যানজট পায়নি। নিঝঞ্ঝাট পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাত্রা চলছে। আজ কপালে কি দুর্ভোগ আছে, কে জানে!
কোয়ার্টারের প্রায় কাছাকাছি-ই চলে এসেছিল তাজরীন। সামনের রাস্তায় মসজিদ। মসজিদের পর পাঁচ মিনিট হাঁটলেই কোয়ার্টার। তাজরীন বারবার সময় দেখছিল। হঠাৎ সামনে চোখ আটকে গেল ওর। মুহূর্তের মধ্যে রিকশা থেমে যায়। তেতে ওঠে তাজরীন। চেঁচাতে যাবে, তখন-ই সামনের মানুষটা বলে ওঠে,
“উঁহু উঁহু! চেঁচিয়ো না একদম! মান-সম্মান যাবে তোমার।”
তাজরীন দাঁতে দাঁত পিষে নিচু স্বরে জবাব দেয়,
“ভরদুপুরে এখানে কী করছো তুমি? এটা তোমার এরিয়া?”
এশরাক হাই তুলতে তুলতে অবজ্ঞাভাবে জবাব দেয়,
“আমার এরিয়া না-ই হতে পারে, তোমারও তো এরিয়া না। কারো বাপের এরিয়া না। সুতরাং, এখানে আসতেই পারি।”
“কেন এসেছো এখানে? লজ্জা হয় না তোমার?”
“হয় না তো। এজন্যই এসেছি। তাছাড়াও এসেছিলাম, তোমার আশিককে দেখতে। শুনেছি, ব্রাদারের দেখা নাকি শুক্রবার পাওয়ার চান্স বেশি। এখানকার মসজিদে জুমা’র নামাজ পড়তে আসে। তাই আমিও আমাদের ওখানকার মসজিদ রেখে এখানে চলে আসলাম। কিন্তু তোমার আশিকের দেখা-সাক্ষাৎ তো এখনো পেলাম না। তবে, এসে কিন্তু ভালো-ই হয়েছে। তোমার আশিককে না পাই, তোমাকে তো পেয়েছি। আজ শুক্রবার, জুমা বাদ; আমি সাদা পাঞ্জাবিতে, তুমি লাল-খয়েরি ফ্রকে। সামনের কাজী অফিসও খোলা, চলো এই ফাঁকে শুভ কাজটা সেরে আসি।”
এশরাকের ভাবভঙ্গি সুবিধার মনে হলো না তাজরীনের। এদিকে রিকশাচালকও চরম বেকুব। রিকশা চালু করছেই না। মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে দেখছে চুপচাপ। তাজরীন অত্যন্ত বিরক্তির সাথে তাকে তাগাদা দিতে যাবে, তখনই এশরাক ওর হাত চেপে ধরে জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে অস্থিরতার সাথে বলতে লাগলো,
“চলো তাজরীন। আর কোনো নাটক নয়। অনেক দেখা শেষ। অনেক ধৈর্য ধরেছি। এতো আপোষ করলাম, না চাইতেও বাধ্য করলে মাফ চাওয়াতে; তবু তুমি রাজি হলে না। তোমার দেমাগ মাটিতে পড়ে না। বন্ধ্যা মেয়ে তুমি, তোমার এতো কীসের দেমাগ হ্যাঁ?”
শেষোক্ত কথাটা বলার সাথে সাথে এশরাকের ডান গালে ঠাস করে একটা চড় পরলো। পরমুহূর্তে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে এশরাক দেখলো, তাজরীন তার বাম হাত উঠিয়ে রেখেছে। তাজরীন একবার এশরাকের চোখের দৃষ্টি আরেকবার নিজের হাত দেখে, হাতটা ঝটপট নামিয়ে বললো, “এটারও যোগ্য না তুই।”
এশরাক তাজরীনের হাতটা ছেড়ে তেড়ে আসতে যাবে, তখনই পেছন থেকে একটা হাত ওর পাঞ্জাবির কলারের পেছন দিকটা টেনে ধরলো। এশরাক ঘুরে তাকানোর আগেই পেছন থেকে তাচ্ছিল্যভরা কণ্ঠস্বর শোনা গেল— “কী করছো ছোটভাই?”
এশরাক এবার কোনোমতে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো, একটা সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি এবং মাথায় সাদা পরিহিত দাঁড়িয়ে আছে ওর এতোক্ষণ যাবত খোঁজ করতে থাকা ব্যক্তি। রুবায়েতের কোলে লাড্ডু। লাড্ডুরও পরনে কালো পাজামা-পাঞ্জাবি। চোখে সানগ্লাস। মাথায় সাদা টুপি। এশরাক এবার পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,
“এই-তো চান্দু, তোমারেই তো খুঁজি। কই ছিলা তুমি? মসজিদের আনাচে-কানাচেতে কোথাও দেখলাম না। ভয় পেয়ে লুকাই ছিলা নাকি?”
“লুকিয়ে ছিলাম না। তোর পেছনের সারির কোণার দিকটায় ছিলাম। হুতাশে অন্ধ হয়ে চললে তো দেখতে পাবি না। তোর মতো কাপুরুষ নই আমি৷ তোর দুঃসাহস দেখে অবাক হচ্ছি! চিনিস আমাকে?”
“চিনি তো। মেজর রুবায়েত নওয়াজ।”
এশরাক বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে নামটা উচ্চারণ করলো। রুবায়েত যথেষ্ট শান্ত। ঠোঁটের কোণে একটা সুক্ষ্ম হাসি। তবে গভীরভাবে খেয়াল করা ব্যতীত বোঝা যায় না। রুবায়েত এবার এশরাকের কলার সামনে থেকে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে হালকা হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো,
“ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে একদিন বন্দুকের নলা দিয়ে পাছায় এমন বা’রি মারবো না, বাপের নামসহ নিজের নামও ভুলে যাবি। তখন মেয়েদের অসম্মান আর এরকম দুঃসাহস দেখানো ছুটে যাবে। যা ফট!”
এশরাক গেল না। তাজরীন এতোক্ষণ দেখছিল ঠোঁট চেপে। এবার ও হালকা চেঁচিয়ে বললো,
“তোমার লাজলজ্জা থাকলে এখুনি এখান থেকে যাবি এশরাক।”
এশরাক এবার কলার ঝাঁকি দিয়ে সরে তাজরীনের দিকে আঙুল তুলে বেশ জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
“এসেছিলাম তোমার ভালো করতে। আমি ছাড়া কে বিয়ে করবে তোমাকে? তোমার মতো মেয়েকে? দয়া দেখাচ্ছি আমি। মেনে নাও। পরে ফুটো কপালে আর কিচ্ছু জুটবে না। যেটুকু জুটতো, তা-ও নিজ দোষে হারাচ্ছো।”
রুবায়েতের এবার মেজাজ তরতরিয়ে বাড়লো। লাড্ডুকে একহাতে কোলের সাথে চেপে ধরে এশরাকের মুখোমুখি দাঁড়ালো, তাজরীনের সামনে ওকে আড়াল করে। রুবায়েতের কপালের রগ ফুলে স্পষ্ট হয়েছে। ক্রোধে চোখের ভেতরের কনজাংটিভাল শিরা টনটনে লাল হয়ে উঠেছে। যেন প্রতিটা ভেইন দিয়ে আগুন ছুটছে। অবশিষ্ট শুধু বিস্ফোরিত ক্রোধের বিস্ফোরণ। শক্ত মুষ্ঠিতে পুনরায় এশরাকের পাঞ্জাবির কলার সামনে থেকে এবার শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
“ওকে কেউ বিয়ে করবে না কেন? আর ওর মতো মেয়ে মানে? ওর মতো মেয়ে মানে কী? জবাব দে হারামির বাচ্চা!”
“ওর মতো বন্ধ্যা, অপয়াকে কে নিজের ঘরের বউ হিসেবে নিয়ে যাবে? আমি যে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি কোনোরকম স্বার্থ ছাড়া — এটা ওর সৌভাগ্য। আমার দয়ায় সারাজীবন বাঁচতে পারতো ও। এছাড়া ওকে কেউ বিশ-ত্রিশ লাখের যৌতুক আর কয়েক ভরি স্বর্ণ ছাড়া বিনাস্বার্থে কখনো বিয়ে করবে না। একথা আমি হলফ করে বলতে পারি। আর যদি সত্যি সত্যি কেউ স্বার্থের বাইরে গিয়ে ওকে বিয়ে করে, তাহলে ওর জুতা আর আমার দুই গাল। ওর যদি ঝামেলা ছাড়া বিয়ে হয়, তাহলে আমি এই রাস্তার ওপর নাকে খৎ দেবো। কথা দিলাম।”
“ওকে। রেডি হ এশরাক। নিজ গালে তাজরীনের জুতার বা’রি খাওয়া এবং নাকে খৎ দেওয়া তোর জন্য এনজয়েবল হবে।”
কথাটা বলেই পেছনে ঘুরে তাকালো রুবায়েত। তাজরীন তখন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে। মাঝ রাস্তার ওপর নিজের এতো অপমান হতে দেখে বোবা হয়ে গেছে যেন। প্রতিবাদের ভাষাটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। শুধু অগ্নিঝরা দৃষ্টিতে দেখছে এশরাককে। পারলে এখানে ভস্ম করে দেয়। রুবায়েত তাজরীনের হাতের কব্জিটা আলতোভাবে ধরে বেক্কল দাঁড়িয়ে থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা দেখতে থাকা রিকশাওয়ালাকে বললো,
“কাকা, সামনের কাজী অফিসে চলুন দ্রুত।”
আবার বসন্ত পর্ব ৮
রুবায়েত তাজরীনকে আগে উঠিয়ে দিয়ে নিজে উঠে বসলো। তাজরীন ঠিক বুঝেও বুঝতে পারছে না। স্তব্ধ বনে গেছে ও। ঘটনার আকস্মিকতায় মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে তখনই, যখন এশরাকের নোংরা কথাগুলো শুনেছে। লাড্ডু আজ চুপচাপ। ওর বাবার মেজাজ প্রচন্ড খারাপ এবং তার তাজ বাবু’রও কোনো কারণে মন খারাপ — এটা বুঝতে পেরে শুধু পিটপিট চাহনিতে দেখছে বাবা আর তাজ বাবুকে। কিছু বলছে না। তাজরীন সামনের পথে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কোনোরকম অনুভূতি ব্যতিরেকে রুবাযেতকে প্রশ্ন করে,
“আমরা কাজী অফিসে কেন যাচ্ছি।”
কাজী অফিস তখন প্রায় নিকটে। আর একটা মোড় পেরোলেই সেই স্থান। রুবায়েত তাজরীনের কথায় স্পষ্ট জবাব দিলো,
“যাচ্ছি বিয়ে করতে।”