আবেগময় সম্পর্ক সিজন ২ পর্ব ৩

আবেগময় সম্পর্ক সিজন ২ পর্ব ৩
লেখনীতে মৃদু সুপ্রিয়া

জোনাকি স্কুলে আসলো। ক্লাস নিয়ে এসে অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ল তাই অফিসে আসলে একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। তখন টিফিন টাইম চলছে। জোনাকি অফিস রুম থেকে একটু বাইরে চলে এলো। বাইরে আসতেই তার সাথে দেখা হলো সুইটির। সুইটির সাথে তার ড্যাডিও ছিল।

সুইটির ড্যাডি জোনাকি কে বলল, “আপনাকে অনেক ধন্যবাদ কারণ আপনি কাল সুইটিকে সামলেছিলেন। আসলে কাল আমার জরুরি একটা মিটিং ছিল তাই সঠিক সময় নিতে আসতে পারিনি। বাই দ্যা ওয়ে, আমি মিস্টার সাখাওয়াত হোসেন। আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার। আপনার কোন কোন সাহায্য লাগলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন আমি আপনাকে সাহায্য করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

জোনাকি তখন মুচকি হেসে বলে,“তার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি শুধু নিজের মেয়ের একটু যত্ন নিন তাহলেই হবে।”
এই কথা বলেছো নাকি অফিস রুমের দিকে রওনা দেয়। কারণ টিফিন টাইমটাই শেষ হয়ে এসেছে এবং এরপর তার আরও ক্লাস আছে। সাখাওয়াত হোসেন জোনাকির যাবার দিকে চেয়ে থাকেন।

সাখাওয়াত হোসেনের মনে হতে থাকে জোনাকি মেয়েটা অনেক ভালো। অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা। সুইটি তখন সাখাওয়াত হোসেনকে বলে,“আমার ক্লাসের টাইম হয়ে গেছে ড্যাডি। তাহলে আমি যাই কেমন?”
“আচ্ছা, যাও সুইটহার্ট। আমি অপেক্ষা করছি।”

এভাবে ক্লাসের টাইম শেষ হয়ে যায় স্কুলেরও ছুটি হয়ে যায়। স্কুল ছুটির পর সাখাওয়াত হোসেন জোনাকির সাথে দেখা করে। জোনাকিকে বলে,“আসলে কি জানেন তো সুইটি আমার নিজের মেয়ে নয়। ও আমার বড় ভাইয়ের মেয়ে। আমার বড় ভাই এবং ভাবি, সুইটি যখন অনেক ছোট ছিল তখন একটি সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। তারপর থেকে আমি সুইটিকে নিজের মেয়ের মতো করেই মানুষ করি। কখনো ওকে মা-বাবার অভাব বোধ করতে দেইনি৷ সুইটি জানে আমিই ওর বাবা। আমিও ওকে নিজের মেয়ের মতোই দেখি। আমি ওর খেয়াল রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করি, কিন্তু মাঝে মাঝে একটু ভুল তো হয়েই যায়।”

সব শুনে জোনাকি বলে,“আপনি সত্যি একজন ভালো মানুষ। তাই নিজের ভাইয়ের মেয়েকে এভাবে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করছেন। এই জন্য আপনি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু একটু চেষ্টা করবেন বাচ্চাটার খেয়াল রাখার। আর কিছুই নয়।”

কথাগুলো বলে জোনাকি চলে আসে। সাখাওয়াত হোসেন মুগ্ধদৃষ্টিতে জোনাকির গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। জোনাকির কথাগুলো খুব ভালো লেগেছে তার। একটু পর সুইটি চলে আসলে তাকে স্কুল থেকে নিয়ে বাড়িতে ফেরে সাখাওয়াত।

সাখাওয়াত বাড়ি ফেরা মাত্রই তার মা সবিতা খাতুন তাকে বলল,“অনেকদিন তো হলো এবার নিজের জীবনের ব্যাপারে একটু ভাব। কত দিন আর একা থাকবি৷ দেখ, আমি জানি সাব্বির(সাখাওয়াত) মৃত্যুর আগে তোর হাত ধরে তোকে অনুরোধ করে বলে গেছে যেন তুই ওর মেয়েকে দেখে রাখিস। সেই থেকে তো তুই তাই করছিস। এর মধ্যে নিজের কথা ভাবছিস না। আমার মনে হয় এবার তোর বিয়ে শাদির ব্যাপারে ভাবা দরকার।”

সাখাওয়াত কোন কথাই পাত্তা দিলো না। কম দিন তো হলো না, সবিতা খাতুন এসব কথা প্রতিনিয়তই বলে থাকেন। সাখাওয়াত এর কাছে এটা প্রায় নিশ্চিত যতদিন না সে বিয়ে করছে ততদিন তার মা ক্ষান্ত হবে না৷ তাই সে আর কথা বাড়াতে চায়না। তবে আজ সবিতা খাতুন একেবারে আধা জল খেয়েই নেমেছেন। তিনি বললেন,“শোন আমি কিছু শুনতে চাইনা। তোকে বিয়ে করতে হবে, মানে করতে হবেই। আমি মেয়ে দেখা শুরু করছি।”

সাখাওয়াত তখন বলে,“আমি তোমাকে আগেও বলেছি আম্মু, আমার নিজের জন্য কোন স্ত্রীর দরকার নাই। আমার সুইটির জন্য একজন মায়ের দরকার।যদি কেউ সুইটির সব দায়িত্ব সামলাতে পারে,ওর প্রতি কোন বৈষম্য না করে তাহলে এমন কাউকেই আমি বিয়ে করব নাহলে নয়।”
সবিতা খাতুন বলে, “আরে সুইটিকে সামলানোর জন্য আমি আছি তো। তুই এই নিয়ে এত চিন্তা করিস না। তুই শুধু নিজের কথাই ভাব। তোর কেমন মেয়ে দরকার আমায় বল।”

সাখাওয়াত চোখ বন্ধ করে একবার জোনাকির কথা ভাবে। তারপর বলে,“যদি আমার কখনো মনে হয় যে এমন কেউ আমার লাইফে আসবে যে, আমার সুইটিকে নিজের মেয়ের মতোই দেখবে তখন আমি কাকে বিয়ে করবো তার আগে না।”
সবিতা খাতুন আর কিছু বলতে পারলেন না। তিনি বুঝলেনও না যে, কিভাবে সাখাওয়াতের বিয়ে দেবেন। তিনিই তো নিজে পছন্দ করে নিজের বড় ছেলের বিয়ে দিয়ে ছিলেন। তার বড় ছেলের বউ(মানে সুইটির মা) অনেক ভালো মেয়ে ছিল। অনেক সংসারী একটা মেয়ে ছিল, দেখতে যেমন সুন্দরী তেমন গুণও ছিল অনেক। সবিতা খাতুনের ইচ্ছা নিজের ছোট ছেলের জন্যেও এমন নিখুঁত কাউকে চান।”

হঠাৎ করেই তাকে ঘটক ফোন করে। ফোন রিসিভ করতেই ঘটক বলে,“ম্যাডাম, আমি অবশেষে আপনার ছেলের পছন্দ মতো মেয়ে খুঁজে পেয়েছি। যে বাচ্চাসহ সবকিছু মেনে নেবে। বাচ্চাটাকে নিজের সন্তানের মতোই দেখবে।”
সবিতা খাতুন বললেন,“মেয়েটার সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো?”
ঘটক বললেন,“মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দরী, গুণও অনেক। তবে.. ”

“তবে কি?”
“মেয়েটার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল।”
ঘটকের কথা শুনে খুব রেগে গেলেন সবিতা খাতুন। কয়েকটা বিশ্রী গালি দিয়ে বললেন,“আমার ছেলে কি বানের জলে ভেসে এসেছে যে যার তার সাথে ওর বিয়ে দেব? আমার একটা নিখুঁত মেয়ে চাই মানে বুঝলেন আপনি? এসব ডিভোর্সি, বিধবা এমন মেয়েকে কি কেউ বিয়ে করে নাকি? এর অপয়া হয় জানেন না?”

ঘটক বললো,“আচ্ছা, আমি একটা ভালো মেয়ে পাই কিনা দেখি। আপনার ছেলে সুইটিকে নিজের মেয়ের মতো দেখে জন্যই এত সমস্যা। নাহলে ওর জন্য ভালো মেয়ে পেতামই।”

আজ জুঁই সুইটিকে পড়াতে এসেছে। সবিতা খাতুন পড়ার ঘরে এসে অবাক হয়ে গেলেন। যে সুইটিকে আগে মে*রেই পড়তে বসানো যেতো না সে আজ নিজে থেকে পড়ছে দেখে বেশ অবাক হল। তিনি বুঝলেন সব এই জুঁই নামের মেয়েটার কারিশ্মা। সবিতা খাতুন একবার ভালো করে পরখ করে নিলেন জুঁইকে। মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী।

কথাবার্তা, চাল-চলনও বেশ ভালো। সবিতা খাতুনের কাছে পারিবারিক স্টেটাস ওতোটা ম্যাটার করে না। তার তো নিজের ছেলের জন্য একটা রূপবতী, গুণবতী নিখুঁত ভালো মেয়ে চাই। আর এই জুঁই নামের মেয়েটাকে তার সব দিক দিয়ে নিখুঁত মনে হলো। সবিতা খাতুন ভাবলেন, এই মেয়ের ব্যাপারে একটু খোঁজ খবর নিবেন। এই মেয়ে যখন সুইটিকে সামলাতে পেরেছে তখন তার সংসারও নিশ্চয়ই সামলাতে পারবে।

আবেগময় সম্পর্ক সিজন ২ পর্ব ২

এই ভাবনা থেকে পড়ানো শেষ হলে সবিতা খাতুন জুঁইকে চা এনে দিলেন। এর পর, জুঁইয়ের সাথে গল্প করে তার থেকে অনেক কিছুই জেনে নিল। সব জেনে নিয়ে তারপর তিনি জুঁইকে যেতে দিলেন। এরপর তার কিছু পরিচিত লোককে জুঁইয়ের ঠিকানা দিয়ে তার খোঁজ খবর নিতে বললেন। সব শেষে তিনি মুচকি হেসে বললেন,“এবার আমি সাখাওয়াতের বিয়ে দিয়েই ছাড়ব। যদি এই জুঁই মেয়েটা উপযুক্ত হয় তাহলে এই হবে আমার বৌমা। এখন শুধু মেয়েটার সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া বাকি। যেটা নিয়ে নেবো আমি ওদের থেকে।”

আবেগময় সম্পর্ক সিজন ২ শেষ পর্ব