আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১২

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১২
তানহা ইসলাম বৈশাখী

সময়টা সন্ধ্যার একটু পরের। এখনো বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে৷ বৃষ্টির ঠান্ডা হাওয়া এসে শীতল করে দিচ্ছে প্রার্থর কক্ষ। প্রার্থর এই রুমেই সকলের আনাগোনা চলছে। প্রার্থ সোফায় বসে একটু পর পর হাচি দিচ্ছে। টিসু দিয়ে নাক মুছতে মুছতে একেবারে লাল করে ফেলেছে। তার সামনেই বসে আছে তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা। প্রার্থর বিপরীত পাশের সোফায় আছে পূর্নিমা বেগম, প্রিয়া পুষ্প এবং অন্যপাশে সানা, অনৃত বসা। পূর্নিমা বেগম চিন্তিত হয়ে লবারবার প্রার্থকে বলছে
“-বাবা কেমন লাগছে তোর? ডাক্তার ডাকি? আশরাফকে বলি ও আসার সময় ডাক্তার নিয়ে আসবে।
প্রার্থ টিসু দিয়ে নাক মুছে বললো।
“-কোন দরকার নেই মা। এখনো জ্বর আসে নি।
“-আসেনি। কিন্তু আসতে কতক্ষণ। যেভাবে হাচি দিচ্ছিস। একটু পরেই দেখবি জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
পুষ্প বললো।

“-তুমি এত চিন্তা করোনা বড়আম্মু। কিছু খাইয়ে একটা প্যারাসিটামল খাইয়ে দেই এখন। কাল যদি জ্বর বেশি হয় তাহলে ডাক্তার আনা যাবে।
সানা আগ বাড়িয়ে বললো।
“-আচ্ছা প্রার্থ তুমি কি খাবে বলো আমি করে নিয়ে আসি।
পুষ্প খপ করে ধরে ফেললো সানার হাত। বললো।
“-তুমি কেন কষ্ট করবে সানা আপু। তুমি মেহমান আমাদের। তোমাকে দিয়ে কাজ করানো সাজে না। আমি আছি তো। আমি কিছু বানিয়ে আনছি।
প্রার্থ আরেকটা হাচি দিয়ে বললো।
“-কারো কিছু করতে হবে না আমি এখন কিছু খাবো না। সবাই যাও আমি একটু রেস্ট নিবো।
পূর্নিমা বেগম আবার বললেন তা কি করে হয় বাবা? কিছু একটা খেয়ে ওষুধ খেয়ে নে তাহলে একটু স্বস্তি পেতাম। নয়তো সারারাত চিন্তায় থাকবো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

প্রার্থ হার মেনে নিলো। তার মা কেমন সে জানে। সবসময় সবকিছু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করেন ভদ্রমহিলা। যেটা ওনার জন্য খুবই খারাপ। হার্ট দুর্বল মানুষের এত স্ট্রেস নেওয়া উচিত নয়। মা যেন একটু হলেও চিন্তামুক্ত থাকে সেজন্য প্রার্থ রাজি হলো। বললো।
“-ঠিকাছে আমি খেয়ে ওষুধও খেয়ে নেব। তুমি গিয়ে ঘুমাও।
“-তোকে খাইয়ে দিয়েই যাই। কি খাবি বাবা?
প্রার্থ কি খাবে? তার এখন কিছুই মুখে দিতে ইচ্ছে করছে না। শরীর ক্রমশ গরম হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জ্বরে জাপকে ধরবে। তখন সবকিছু গুলিয়ে যাবে। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের বৃষ্টির ফোটা মাথায় পড়লে মাথায় ব্যাথা হয় প্রচুর। আবার কিছু মানুষ আছে যাদের একটু বৃষ্টি ফোটায় তিনদিনের জ্বরের কারণ হয়। প্রার্থরও তাই। ছোট বেলা থেকেই বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বরে কাতর হয়ে পড়তো ছেলেটা। পুষ্পরা বৃষ্টিতে সবসময় ভিজলেও প্রার্থ সহজে ভিজতো না।
প্রার্থ কি খাবে ডিসাইড করতে পারছিলো না বলে পুষ্প বললো।
“- আচ্ছা আপনার জন্য বরং একটু সুপ করে নিয়ে আসি? এখন অন্য কিছু খেতে মন চাইবে না হয়তো।
প্রার্থ বললো।

“-হুম।
এরপর আবার মনে পরার মতো বললো।
“-তোর তো পায়ে ব্যাথা। তোকে করতে হবে না। প্রিয়া করে নিবে।
প্রিয়া না করে দিলো সাথে সাথে।
“-এমা আমি পারবো না। আমার হাতের রান্না যে খাবে সে আর দুনিয়ায় থাকবে না। এমনিতেও আমি সুপ বানাতেও পারিনা প্রার্থ ভাই। তুমি তো আমার রান্না আরো খেতে পারবে না।
অন্ত সাথে সাথে ক্ষুত ধরলো।
“-কি পারিস তুই? সারাদিন ফোন, ফোন আর ফোন। না পারিস পড়ালেখা না পারিস রান্নাবান্না। তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
প্রিয়াও চটে গেলো অন্ত কথায়। অন্ত আজকাল একটু বেশিই বকছে প্রিয়াকে। মানে যখনই পারছে তখনই যেন রাগ সব ঠেলে দিচ্ছে তার উপর। সেও কি এসব শোনার মতো মেয়ে নাকি। খেঁকিয়ে উঠে বললো।

“-হতে হবে না আমার দ্বারা কিছু। তোমার দ্বারা হলেই হবে। আমাকে নিয়ে এত ভাবতে হবে না তোমার।
পুষ্প ধমক দিলো দুটোকে।
“-থাম তোরা। তোকে কিছু করতে হবে না আমিই করে আনছি। পায়ে ব্যাথা বলে কি হাটতে পারবো না? খুঁড়িয়ে হাটতে সমস্যা নেই আমার। তোমরা বসো আমি করে আনছি।
কাউকে কোন কথা বলতে না দিয়েই আস্তে আস্তে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে গেলো রুম থেকে। সাথে প্রিয়াও উঠে গেলো বোনকে সাহায্য করতে।
প্রার্থ গায়ে চাদর ভালো করে টেনে বসে আছে সোফায়। বসে থাকা মুশকিল হয়ে পড়ছে। শরীর গরম হচ্ছে কিন্তু তীব্র শীত অনুভব হচ্ছে। চাদরেও কুলচ্ছে না। তবুও কোনরকম প্রতিক্রিয়া দেখালো না। কারন পূর্নিমা বেগম চিন্তা করবেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই এক বাটি সুপ বানিয়ে নিয়ে এলো পুষ্প। সাথে প্রিয়া। প্রিয়ার হাতেই সুপের বাটি। বাটিটা পূর্নিমা বেগমের হাতে দিলে তিনি বললেন।

“-পুষ্প যখন বানিয়ে এনেছিস। তাহলে তুইই খাইয়ে দে না।
পুষ্প নাকচ করতে চাইলে পূর্নিমা বেগম আরো জোর করলেন। পুষ্প খাওয়াতে যাচ্ছে না দেখে সানা ফয়দা উঠাতে চাইলো। বললো।
“-আচ্ছা আমাকে দাও। আমিই খাইয়ে দেই ওকে।
পুষ্পর রাগ হলো ভীষন। কেমন নির্লজ্জ মেয়েমানুষ? প্রার্থর বউও রয়েছে সামনে তার সামনেই তাকে খাইয়ে দিতে চায়। পুষ্প চোখ মুখ কুচকে বললো।
“-সমস্যা নেই আমিই দিচ্ছি।
এদিকে আরো বেশি রাগ হচ্ছে প্রার্থর। সে কি ছোট বাচ্চা যে তাকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য এ ও কাড়াকাড়ি করছে। কষিয়ে দুটো ধমক দিবে তার আগেই পুষ্প তার সামনে চামচ ধরলো। তাড়াতাড়ি খেতে বলে বললো।
“-নিন। হা করুন।
প্রার্থ বললো।
“-আমিই পারবো। আমা…..
খপ করে চামচ ভর্তি সুপ ঢুকিয়ে দিলো প্রার্থর মুখে। আর কিছু বলতেও পারলো না সে। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো পুষ্পর দিকে। পুষ্প আরেক চামচ উঠিয়ে ফু দিচ্ছে তাতে। আবারও প্রার্থর মুখের সামনে ধরলো। এবার প্রার্থ নিজেই গালে নিলো সেটা।
সানা এগুলো দেখে উঠে চলে গেলো সেখান থেকে। অন্তও বেড়িয়ে গেলো। প্রিয়া পূর্নিমা বেগমকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আস্তে ধীরে চলে গেলো রুম থেকে। যাওয়ার আগে ভদ্রমহিলা দরজার সামনে থেকে বললো।
“-পুষ্প ওকে ওষুধ খাইয়ে শুয়িয়ে দিস মা। আমরা নিচে যাচ্ছি। প্রার্থ বাবা ওষুধটা কিন্তু খেয়ে নিস।
“-হুম মা। সাবধানে যাও। গিয়ে কিছু খেয়ে ওষুধ গুলো খেয়ে নিয়ো। আমার চিন্তা করোনা। আমি ঠিক আছি।
পূর্নিমা বেগম চলে গেলো। প্রার্থ হাফ ছেড়ে বাচলো। শরীরে রিতীমত কাঁপুনি উঠে যাচ্ছে কিন্তু মায়ের সামনে কিছুই প্রকাশ করেনি। গায়ের চাদরটা আরো ভালোকরে জরিয়ে ধরে বললো।
“-আর খাবো না।

পুষ্প ভ্রু কুচকে বললো।
“-কেন? আর অল্প একটুই তো আছে। এইটুকু খেয়ে নিন।
“-খাবোনা বলছি না। ভালো লাগছে না। ওষুধের টা দে।
পুষ্প সুপের বাটি রেখে দিলো। হাত বাড়িয়ে কপাল ছুতে চাইলো কিন্তু প্রার্থ পেছনে হেলে যায় পুষ্পকে এগিয়ে আসতে দেখে। পুষ্প দাত চেপে বললো
“-আপনাকে খেয়ে ফেলছি না। মেয়েদের মতো ব্যবহার করবেন না। শুধু চেক করতে চাচ্ছি গায়ে জ্বর এসেছে কিনা।
এরপর নিজে থেকে আরো একটু এগিয়ে গিয়ে কপাল ছুয়ে দিলো হাতের উল্টে পিঠ দিয়ে। কপালটা এখনই গরম হয়ে গেছে। তার মানে জ্বর চলে এসেছে। চোখদুটোও লাল হয়ে এসেছে। পুষ্প কপাল ছুয়েই বিচলিত হয়ে বললো।
“-একি আপনার তো গায়ে এখনই অনেক জ্বর। দাড়ান আমি ওষুধ দিচ্ছি। খেয়ে শুয়ে পরুন।
পুষ্প ওষুধ নিয়ে এসে খায়িয়ে দিলো প্রার্থকে। নিজের ব্যাথাযুক্ত পা নিয়েই প্রার্থকে খাটে নিয়ে শুয়িয়ে দিলো। প্রার্থর শরীরে কাঁপুনি উঠে গেছে। পুষ্প ভালো করে দুটো কম্বল দিয়ে তাকে ঢেকে দিলো। প্রার্থ চোখ বন্ধ করে আছে। খুলে রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না। পুষ্প কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ঘুমন্ত প্রার্থর দিকে। চুলগুলোকে কপাল থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো।

“-সরি প্রার্থ ভাই। আমার জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হচ্ছে। আপনি চিন্তা করবেন না। তাড়াতাড়িই সুস্থ করে তুলবো আপনাকে। আমি যতই বলি আপনাকে কষ্ট দিবো আমাকে দিয়ে বোধহয় তা আর হবে না। আপনাকে কষ্টে দেখলে আমার নিজেরও কষ্ট হয়। নিজেকে নিজে কি করে কষ্ট দেই বলুন? আমি তো আপনার মতো নিষ্ঠুর নই।
আর কিছু বললো না পুষ্প। বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। নিচে গিয়ে বড় আম্মুকে খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে আসবে। এলাচিটাকেও প্রার্থর জন্য রুমে আনতে পারছে না। তাকে ওখান থেকেই খাইয়ে প্রিয়ার সাথে রেখে আসবে।

পুষ্পর নিচ থেকে উপরে আসতে আসতে প্রায় দশটা বেজে গেলো। উপরে রুমে এসে দরজা আটকে প্রার্থর কাছে আসলো। সে যেভাবে শুয়িয়ে দিয়ে গেছিলো সেভাবে নেই প্রার্থ। নড়াচড়া করেছে বোধহয়। বালিসটা মাথা থেকে সরে গেছে। ঘাড়টা বেকে আছে। পুষ্প শ্বাস ছেড়ে হাটু ফেলে বিছানায় উঠে বসলো। প্রার্থর মাথাটা আলগোছে হাতে তুলে নিলো। বালিসটা ঠিক করে দিয়ে আবার মাথাটা বালিয়ে নামিয়ে দিলো। পুষ্প প্রার্থর উপর ঝুকে তাকে ঠিক করছিলো। হঠাৎ প্রার্থ দুহাত দিয়ে তাকে টেনে ধরে। পুষ্প সোজা গিয়ে পড়ে প্রার্থর বুকের উপর।
মেয়েটা হতভম্বের মতো তাকালো প্রার্থর দিকে। প্রার্থ এখনো ঘুমে বিভোর। তার হাতদুটো পুষ্পর পিঠে।
প্রার্থ হয়তো একটু গরম জায়গা খুজছে।
পুষ্প উঠবে কি তাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো নিজের সাথে।

এরপর কিছু বুঝে উঠার আগেই পুষ্পকে কোলবালিসের মতো করে শুয়িয়ে দেয় পাশে। দুহাতে জরিয়ে ধরে মুখ গুজে দেয় পুষ্পর গ্রীবায়। ঘটনা এত তাড়াতাড়ি হলো যে পুষ্পর বুঝে উঠতে একটু বেগ পেতে হলো। বুঝেও বা কি করতে পারবে। প্রার্থর ওমন শক্ত থাবার হাত থেকে বাচা অসম্ভব। প্রার্থ শুধু ওম খুজে যাচ্ছে। দুহাতে একদম আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে পুষ্পকে। পুষ্পর গলায় প্রার্থর গরম নিশ্বাস আছড়ে পরছে।
এরকম আকস্মিক ছোয়ায় পুষ্পর অস্বস্তি হচ্ছে। তরতরিয়ে ঘামছে মেয়েটা। শ্বাস ভারী হয়ে আসছে। শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। বুকের উচাটন বেড়ে গেছে কয়েকগুন। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সিলিংয়ের দিকে। দুইহাত ছড়ানো দুপাশে। প্রার্থকে জড়িয়ে ধরেনি সে। যার কারনে প্রার্থ বারবার নড়েচড়ে উঠছে। পুরুষালী দুইহাত ঢুকিয়ে দিয়েছে পুষ্পর পিঠের নিচ দিয়ে। নিজের শরীর ছেড়ে দিয়েছে পুষ্পর উপর। প্রার্থর এত বড় শরীরের কাছে পুষ্প নেহাতই চুনোপুঁটি এক মেয়ে। তারউপর প্রার্থর শরীর আগুন গরম হয়ে আছে। পুষ্পর এতে আরো ঘাম ছুটে যাচ্ছে।

পুষ্পর শুকিয়ে যাওয়া গলাটা ঢোক গিলে ভিজিয়ে নিলো। কি করবে বুঝতে পারছে না। ডাকবে কি প্রার্থ ভাইকে? মনে মনে সাত পাঁচ ভেবে ডেকে উঠলো তাকে।
“-প্রার্থ ভাই। প্রার্থ ভাই শুনছেন? আপনার কি খুব শীত করছে? আরেকটা কম্বল এনে দিবো? শুনছেন?
প্রার্থর গায়ে মৃদু ধাক্কা দিতেই সে আরো নড়ে উঠলো। পুষ্পকে আরো শক্ত করে নিজের মাঝে আটকে অস্পষ্টে বলে উঠলো।
“-ফুল!
পুষ্পর দুনিয়া থমকে যায়। বুকের মাঝের ধুকপুক করতে থাকা যন্ত্রটাও বোধহয় বিট করা বন্ধ করে দিলো। শ্বাস নিতে কষ্ট হলো। চোখের কটোর আপনাআপনিই ভরে গেলো জলে।

“ফুল” ডাকটা কতদিন পর ডাকলো প্রার্থ ভাই! তিন মাস না তিন বছর? পুষ্পর কাছে তো তিনমাসকে তিনশো বছরের মতো মনে হচ্ছে। তিনমাস ধরে প্রার্থ পুষ্পকে ফুল বলে ডাকে না। শুধু একটা ভুলের কারণে। পুষ্পর ভালোবাসা প্রকাশ করার পর থেকে প্রার্থ আর ডাকে না তাকে এই নামে। আজ দু দুবার ডাকলো। পুষ্প জানে পুষ্পর রিক্সা থেকে পড়ে যাওয়ার পর প্রার্থ ফুল বলে ডেকেছিলো ওকে। কিন্তু তখন খুব একটা শুনতে পায়নি ডাক। এখন কত স্পষ্ট শুনলো ডাকটা। লোভী মনটা আবারও শুনতে চাইলো নামটা। ছড়িয়ে রাখা দুইহাত এবার প্রার্থকে জরিয়ে ধরলো। নিজের সাথে তাকে মিশিয়ে অশ্রুশিক্ত নয়নে বললো।
“-আরেকবার একটু ডাকবেন এই নামে? ডাকেন না প্রার্থ ভাই! আমার যে খুব ইচ্ছে করছে আপনার মুখে নামটা শোনার। সজ্ঞানে তো কখনো ডাকবেন না। এই অবস্থায় একবার ডাকুন না।
পুষ্পর আকুতি প্রার্থ আদৌ শুনলো কিনা জানা নেই। কারন প্রার্থর কোন প্রতিক্রিয়া পেলো না। পুষ্প ভাবলো আর শোনা হবে না। প্রার্থ ভুলে ডেকে ফেলেছে আর ডাকবে না।
কিন্তু তাকে ভুল প্রমান করে প্রার্থ ডেকে উঠলো। পুষ্পর গলায় মুখ গুজেই বললো তাও একদম অস্পষ্টে।
“-ফুল! কেন ভালোবাসিস? কষ্ট পাবি যে।

পুষ্প ঝরঝরিয়ে কেঁদে দিলো। দুপাশ দিয়ে অশ্রুর ঝরনা বয়ে গেলো কান অব্দি। সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রার্থকে নিজের সাথে আরো ভালো করে চেপে ধরলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো।
“-আপনি তাহলে জেনে বুঝে কেন কষ্ট দেন? কাউকে ভালোবাসাটা কি কারো অপরাধ। আমি তাহলে অপরাধ করলাম আপনাকে ভালোবেসে? আপনি কেন ভালোবাসলেন না আমাকে? আমি কি এতটাই খারাপ?আপনার প্রশ্ন আমি আপনাকে কেন ভালোবাসলাম, তাইতো? কিন্তু আমিতো নিজেও জানি না আমি কেন ভালোবাসলাম৷ কি করে জবাব দিবো? আপনার মাঝে একজন আদর্শ পুরুষ দেখেছিলাম। আপনার কেয়ার, আপনার পারসোনালিটি ভালো লাগতো। ভালোলাগা কবে ভালোবাসা হলো আমি নিজেও জানি না। যদি আগে জানতাম যে আপনাকে ভালোবাসা এতটা কষ্টের হবে তাহলে ভালোলাগাও ছেড়ে দিতাম। কখনোই ভালোবাসার মতো পাপ করতাম না।

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১১

পুষ্প একা একাই কথা বলে গেলো অনেকক্ষণ। প্রার্থর কোন হেলদোল নেই। বেহুস প্রেমিকের কাছেই জানালো হাজারো অভিযোগ অভিমান। একটু শোনাতে চাইলো তার ভেতরো ঠিক কতটা কষ্ট লুকিয়ে। বাইরে থেকে তাকে যতটা কঠোর মনে হয় সে আসলে তার থেকেও বেশি নরম। ভেতরটা প্রতিনিয়ত ক্ষ*ত*বি*ক্ষ*ত হয়। তবুও এ ক্ষ*ত খুব সহজে প্রকাশ করে না সে। আজ উগলে দিলো সকল অভিযোগ, সকল দুঃখ। কিন্তু যার কাছে অভিযোগ করলো সে কি আদৌ শুনলো সেই হৃদয়বিদারক কষ্ট গুলো?

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১৩