আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২
তানহা ইসলাম বৈশাখী
সকালের সকল নাস্তা পুষ্প একা হাতে করেছে। অহনা বেগম বারোন করেছিলো রান্না করতে। তবুও নিজ উদ্যোগে সবটুকু করা। এখন তো আর এটা খালার বাড়ি নয়, এখন এটা শশুড় বাড়ি। এখন কি আর কাজ না করে থাকা যায়?
রান্নাবান্না শেষ করে সব খাবার টেবিলে এনে সাজাচ্ছে। এতক্ষণে বাড়ির সকলেই উঠে গেছেন ঘুম থেকে।
চৌধুরী বাড়ির সদস্য সংখ্যা মোট ছয়জন। আজ থেকে পুষ্প যোগ হয়ে হলো সাতজন। প্রার্থর বাবা ইউসুফ চৌধুরী বেচে নেই। কয়েকবছর আগে অসুস্থতায় মা*রা গিয়েছেন। মা আছেন পূর্ণিমা বেগম।
প্রার্থর চাচা একজনই আছেন। তিনি আসরাফ চৌধুরী। তার স্ত্রী অহনা বেগম। তাদের দুজন ছেলে। বড় ছেলে ‘আয়ান অন্ত চৌধুরী’ যে এবার অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। ছোট ছেলে ‘রায়ান প্রান্ত চৌধুরী’। এবার ক্লাস সিক্সে পরছে।
এই নিয়েই চৌধুরী পরিবার।
আর তাতে কাল থেকে যুক্ত হয়েছে ‘প্রাপ্তি এহসানা পুষ্প’।
প্রার্থদের বাড়িটা ভীষন সুন্দর। ডুপ্লেক্স বাড়ি। সদর দরজা থেকে ভেতরে ঢুকলেই দেখা যাবে বিশাল সুন্দর ড্রয়িংরুম। নিচ থেকে উপরের করিডোর দেখা যায়। উপর থেকে করিডোরের কাছে এলেও নিচের সব দেখা যায়। লম্বা একটা সিড়ি পা ফেলে চলে গেছে সোজা উপড়ে। সিড়িটা একদম মাঝ বরাবর।
কাল পুষ্পের বোন প্রিয়াও এসেছে পুষ্পের সাথে।
সে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। চোখ কচলাতে কচলাতে নামছে সিড়ি দিয়ে। চোখে এখনো ঘুমুঘুমু ভাব। পড়নে একটা টপস আর প্লাজু।বেনি করা চুলগুলো ওসকোখুসকো হয়ে কপালে এবং পিঠ জুরে লুটোপুটি খাচ্ছে। অন্যমনস্ক হয়ে টালমাটাল পায়ে সিড়ি নামতে গিয়ে আচমকা এক পা পিছলে যায়। চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে ফেলে ঝটপট। এই বুঝি গেলো পড়ে। কিন্তু না। সে আর পরলো না। তবে বেশ অনেকটাই ঝুকে আছে নিচের দিকে। পেছন থেকে কেউ একজন তার পিঠের কাছের ঢিলাঢালা টপস আকড়ে ধরেছে। লোকটা ওইভাবে ধরেই টানলো প্রিয়াকে। মেয়েটা বুকে হাত রেখে হাফ ছাড়লো। ওভাবে মাথাটা পেছনে ঘুরিয়ে দেখে অন্ত বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। পিছনে জামার ওখানটায় এখনো আকড়ে ধরে রেখেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রিয়া ওকে দেখে চোখ মুখ কুচকে তাতে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো।
“-আর কত ধরে রাখবে? পড়ে যাইনি আমি। ছাড়ো অন্ধের বাচ্চা।
অন্ত ভ্রুদ্বয়ের মাঝে গোটা কতক ভাজ ফেলে বললো।
“-না ধরলে তো ঠিকি পরে যেতি। ধরেছি বলেইতো পড়ে যাস নি। আর তোকে না বলেছি অন্ধ বলবি না আমাকে। আমি অন্ধ নই। শুধু…
“-শুধু চশমা ছাড়া কিছুই দেখতে পারো না। এটাকে অন্ধই বলে। তোমার নাম অন্ত, তুমি অন্ধ।
“-থাপ্পড় দিবো আবার এরকম নামে ডাকলে।
“-সাহস থাকলে দিয়ে দেখাও। প্রতিবারই তো হুমকি ধামকি দাও তবুও তো অন্ধ ডাকি। কি করবে তুমি?
“-প্রিয়া লাস্ট চান্স দিচ্ছি। অন্ধ ডাকবি না। আমি অন্ত।
“-আমি ডাকবোই। পারলে আটকে দেখা অন্ধের বাচ্চা।
অন্ত ভ্রু উচু করে বলে
“-আবার তুই বলছিস?
“-কি করছিস ওখানে দুজন? আবার ঝগড়া করছিস?
পুষ্প’র কথায় ঝগড়া থামিয়ে তার দিকে তাকালো দুজন। শাড়ীতে তাকে পাকা গিন্নি লাগছে। আচলটাকে পেচিয়ে কোমড়ে এনে গুজেছে। পেছনে খোপা করা চুল। সামনে থেকে ছোট ছোট চুলগুলো কপালে এসে পড়েছে। ঘামে ভিজে যাওয়া ধবধবে সাদা কপালটায় চুলগুলো লেপ্টে আছে। দেখে মনে হচ্ছে বাড়ির একমাত্র বউ বাড়ির সকল কাজ কর্ম নিজে একা হাতে সামলাচ্ছে।
পুষ্প দুজনকে চুপ দেখে আবারও বললো।
“-কি? আবার ঝগড়া করছিস সাত সকালে দুজনে?
প্রিয়া ঠোট উল্টে নাটক করার মতো বললো।
“-বুবু দেখো তোমার ভাই মানে দেবর আমাকে ফেল্টু ফেল্টু বলে খেপাচ্ছে।
অন্তু অবাক হয়ে বললো।
“-মিথ্যে কেন বলছিস? এখন তোকে একবারও ফেল্টু বলিনি। উল্টে তুই আমাকে অন্ধ বলছিস। পুষ্প আপু তুমি তো জানোই তোমার বোন কেমন। ওকে কিছু বলো। সারাদিন আমার পিছনেই কেন লেগে থাকে ও?
প্রিয়া ওর কথায় যেন খামচে ধরলো ওকে। ধারালো চোখে তাকিয়ে ফ্যাসফ্যাস করে বললো।
“-তুমি আমার পেছনে লেগে থাকো আমি না। আমার থেকে দূরে থাকবে অন্ধরের বাচ্চা।
পুষ্প সিড়ির নিচে দাড়িয়ে ধমকে উঠলো।
“-থাম প্রিয়ু। আমি জানি তুই কেমন। সারাটাদিন অন্ত’র সাথে ঝগড়া কেন করিস? ও তো তোকে কখনো বিরক্ত করে না।
প্রিয়া নাক ফুলিয়ে বললো।
“-এখন তো তুমি তোমার দেবরের পক্ষেই থাকবে। আমি আর কি তোমার কাছে?
“-ও শুধু দেবর নয় ও ছোট ভাই আমার। আমি জানি আমার ভাই কেমন। এ-ও জানি যে আমার বোন কেমন। এখন কথা বাদ দিয়ে খেতে আয়। খাবার টেবিলে সাজিয়ে বসে আছি। কারো খবর নেই।
অন্ত উপরে দাড়িয়েই বললো।
“-তুমি রান্না করেছো পুষ্প আপু?
“-হুম আজকে সবগুলো আমিই করেছি। আয় খেতে বোস।
প্রিয়া উৎসুক হয়ে গোল গোল চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে খুশি মনে বললো।
“-সবগুলো তুমিই করেছো বুবু? এত ভালো কি করে হলে? বুঝেছি প্রার্থ ভাইয়ের জন্য করেছো এগুলো তাইনা? সব ভাইয়ের পছন্দের খাবার রেঁধেছো আমি সিওর।
প্রার্থর কথা শুনে মুখটা ঘোর অমানিশায় ছেয়ে গেলো পুষ্পর। তবুও মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বললো।
“-আগে চল তো টেবিলে। সবার খিদে লেগেছে খেতে দিতে হবে।
দুজনকে সাথে নিয়ে গেলো ডাইনিংয়ের কাছে। সেখানে প্রান্ত, অহনা বেগম এবং পূর্নিমা বেগম বসে ছিলেন। প্রিয়া বাচ্চাদের মতো ছুটতে ছুটতে গেলো পূর্নিমা বেগমের কাছে। গিয়ে পেছন থেকে গলা জরিয়ে ধরে বললো।
“-গুড মর্নিং বড় আম্মু।
অসুস্থ রুগ্ন প্রৌঢ়া মেয়ের গালে হাত রেখে বললো।
“-গুড মর্নিং আম্মাজান। এত লেট করে কেউ উঠে! খেতে বোস।
প্রিয়া তার গলা গেছে উঠে দাড়াতেই চোখ পড়লো অহনা বেগমের দিকে। তিনি মুখ গম্ভীর করে প্লেটে খাবার তুলছেন। এমনিতেও তিনি সবসময় গম্ভীরই থাকেন। তাকে দেখে প্রিয়া ভদ্র ভাবে দাঁড়িয়ে বললো।
“-গুড মর্নিং আন্টি।
ভদ্রমহিলা মুখে গম্ভীর্যতা অটুট রেখে শুধু উচ্চারন করলো।
“-মর্নিং।
প্রিয়া একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। সামনে সুন্দর দেখতে গলুমুলু ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো।
“-হেই হ্যান্ডসাম! ওয়াটস আপ? আমাকে রেখেই খেয়ে যাচ্ছিস।
প্রান্ত তখন ব্রেডে জ্যাম মাখিয়ে মুখ পুরে খাচ্ছিলো। মুখে রুটি থাকায় ফোলা ফোলা গালদুটো আরো ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। ওভাবে চিবুতে চিবুতে বাচ্চা কন্ঠে বললো।
“-তোমার তো ঘুমই শেষ হয় না। অতক্ষন কি বসে থাকবো নাকি। আমার ক্ষিদে পেয়েছে তাই খাচ্ছি।
প্রিয়া আর কিছু বললো না ওকে। সামনে খাবারের সব আইটেম ঘুরে ঘুরে দেখছে। খাবারগুলো দেখে বিষ্ময় নিয়ে পুষ্পকে শুধালো।
“-এমা বুবু! তুমি দেখছি চিংড়ি মাছ বানিয়েছো। প্রার্থ ভাইয়ের তো চিংড়িতে এলার্জি।
প্রান্ত কথা কেড়ে বললো।
“-ফুল আপু এটা আমার জন্যে রান্না করেছে।
প্রিয়া একবার বলতে চাইলো ” তুই এই ব্রেড খাওয়ার পরে আবার এগুলোও খাবি?
কিন্তু বললো না সামনেই অহনা বেগম বসা। মজা করে কিছু বললে আবার না খেপে যায়।
পুষ্পও বললো।
“-হ্যাঁ ওটা ওর জন্য বানিয়েছি। তাছাড়া শুধু প্রার্থ ভাই একা থাকেন না এবাড়িতে। উনার আর অন্তর জন্য বাদে সবার জন্য বানিয়েছি। তাদের জন্য আলাদা আরো তরকারি আছে।
এবাড়িতে প্রার্থ আর অন্ত দুই ভাই পুরোপুরি একই রকম বলতে গেলে। প্রার্থর গায়ের রং আর অন্তর গায়ের রং একই। শ্যামবর্নের দুজনেই। এটা অবশ্য বাড়ির কর্তাদের থেকেই পেয়েছে। ইউসুফ এবং আসরাফ সাহেবও এরকম। তবে এদের চেহারা মা শা আল্লাহ। প্রার্থরও চিংড়িতে এলার্জি অন্ত’রও তাই। কিন্তু এদের থেকে সম্পুর্ন আলাদা হচ্ছে প্রান্ত। ছোট্ট নাদুসনুদুস ছেলেটা হয়েছে একদম ব্যাতিক্রম। মায়ের মতো ধবধবে ফর্সা গায়ের রং। দেখতেও গুলুগুলু। প্রার্থদের থেকে একদমই আলাদা সে।
পুষ্প পূর্নিমা বেগমের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছিলো। তখন তিনি বলে উঠলেন।
“-হ্যারে পুষ্প! প্রার্থ কোথায়? ও খাবেনা? ডাক ওকে। আর অন্তটাই বা কোথায়?
ততক্ষনে অন্ত এসে প্রিয়ার পাশের চেয়ারটা দখল করে নিলো। হাস্যজ্জল চেহারায় বললো
“-এইত বড় আম্মু এখানে আমি।
“-বোস বাবা খেয়ে নে। বেলা তো অনেক হলো৷ প্রার্থটা কোথায় এখন?
অহনা বেগম বলতে গেলেন
“-ও তো সারা রাত বা……
মাঝপথে তাকে থামিয়ে দিলো পুষ্প। কথা কেড়ে নিয়ে তার মোড় পাল্টে বললো।
“-সারা রাত! আ প্রার্থ ভাইতো সারা রাত উনার মিউজিক প্র্যাক্টিস করেছে। কাল উনাদের কনসার্ট আছে না? এজন্য আরকি রাতভর প্র্যাক্টিস করেছে। তাই এখন ঘুমাচ্ছে। এখন ডিস্টার্ব করতে বারন করেছে। উঠলেই রুমে খাবার দিয়ে আসবো।
অহনা বেগম দমে গেলেন। বুঝতে পারলেন কি ভুলটা করতে যাচ্ছিলো এখন। পূর্নিমা বেগম এমনিতেই অসুস্থ মানুষ। হার্টের রুগী। ছেলের এমন কথা শুনলে আরো অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। তিনি আর কথা না বাড়িয়ে খাবারে মন দিলেন।
কিন্তু পূর্নিমা বেগম পুষ্পর কথা শুনে কপাল কুচকালেন। সন্ধিহান গলায় বললেন।
“-বিয়ের রাতে গানের প্র্যাক্টিস কে করে? আর ও তো এমনিতেও কনসার্ট হওয়ার আগে এতো অনুশীলন করে না।
“- বড় আম্মু এত কেন ভাবছো? প্রার্থ ভাই বললো উনার নাকি প্র্যাক্টিস না করলে গলা বসে যেতে পারে। এজন্যইতো মিউজিক রুমে বসে বসে কত পরিশ্রম করলো।
অহনা বেগমও কথা পাল্টাতে বললো।
“-আরে পূর্নি আপা। এত ভেবো না তো। প্রার্থ ক্লান্ত। ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। পরে নাস্তা করে নিবে। তুমি বরং খাওয়া শেষ করে ওষুধ খেয়ে নিয়ো। আমি এখনই বেড়িয়ে পড়বো অফিসে।
“-আজ তো শুক্রবার অহনা। আজকে না গেলি অফিসে।
“-না আপা। অনেক কাজ পড়ে আছে অফিসের। তোমার দেবর একা হাতে এত কিছু সামলাতে পারে না। আমাকে যেতেই হবে।
পূর্নিমা বেগম তপ্ত শ্বাস ফেলে বললেন৷
“-ঠিকাছে সাবধানে যাস।
অহনা বেগম শশব্যাস্ত হয়ে উঠে বেড়িয়ে পড়লেন অফিসের উদ্দেশ্যে।
পূর্নিমা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন৷
“-তোর খালুজানের মৃ*ত্যুর পর থেকেই মেয়েটা অফিসের কাজে যোগ দিয়েছে মেয়েটা। যখন প্রথম এ বাড়িতে আসরাফের বউ হয়ে এলো তখন অনেক চঞ্চল ছিলো মেয়েটা। এই অফিসে জয়েন করার পর থেকে অনেকটা গম্ভীর হয়ে গেছে কাজ করতে করতে। ওকেও বা আর কি বলবো। প্রার্থটা তো কোনমতেই নিজেদের কম্পানি সামলাবে না। ও তো ওর গানের জগৎ নিয়েই ব্যাস্ত।
কথাটুকু শেষে আবার ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো হতাশার শ্বাস।
কথাগুলো শুনে পুষ্পও যেন কোন ভাবনায় চলে গেলো।
এদিকে প্রিয়া ওত পেতে বসে ছিলো কখন অহনা বেগম যায় এখান থেকে। এখন তিনি যেতেই চিংড়ির বাটিটা নিয়ে অন্তর পাতে দুটো চিংড়ি মাছ দিয়ে দিলো।
অন্ত নাক মুখ কুচকে বললো।
“-কি করলি প্রিয়া? তুই জানিস না আমি চিংড়ি খাই না? এলার্জি আছে আমার।
“-জানি বলেই তো দিলাম। এবার খেয়ে নাও তো অন্ধ ভাই। আমি দেখবো এলার্জি হলে কেমন দেখায় তোমায়।
পুষ্প কঠোর হয়ে বোনকে ধমক দিলো।
“-কি হচ্ছে কি প্রিয়ু। তুই যখন জানিস ও খেতে পারবেনা ওটা তাহলে কেন দিলি? সবসময় তোর এই মজা করা চলবে না। বড় হয়েছিস। একটু ম্যাচিওর হওয়ার চেষ্টা কর।
প্রিয়া চুপ হয়ে গেলো। আজকে পুষ্প মনেহয় অনেক বেশিই রেগে আছে। নাহয় মন খারাপ। তাছাড়া সবসময়ই তো প্রিয়া এমন উল্টা পাল্টা কাজ করে। এত তো বকে না তখন। আজ বকছে। মানে কোন কারন নিশ্চয়ই আছে। প্রার্থ ভাইয়ের সাথে বিয়েটা হয়েই এমন হয়েছে হয়তো। তার বুবু যে প্রার্থ ভাইকে কতটা ভালোবাসে সেটা সে খুব ভালোভাবে জানে। কিন্তু প্রার্থ ভাই…! মনে মনে এসব ভেবে চুপ হয়ে গেলো।
পুষ্প খেপেছে দেখে অন্ত বললো।
“-থাক আপু সমস্যা নেই। ওর তো কাজই এগুলো। আমাকে না জ্বালালে কি আর ওর ভালো লাগে নাকি। তুমি খেতে বসো। আমি এটা পাল্টে নিচ্ছি।
পুস্প ওকে বদলাতে না দিয়ে নিজে থেকে বদলে দিয়ে আরেক প্লেটে খাবার তুলে দিলো। আজ থেকে সংসারের এই ছোট ছোট কাজও সে নিজের হাতে করবে। ব্যাস্ত রাখার চেষ্টা করবে নিজেকে। নয়তো যত প্রার্থ’র কাছে যাবে তত কষ্ট ভোগ করতে হবে।
বেলা ফুরিয়ে এসেছে প্রায়। সময়টা বিকেলের একটু পরের সময়। অর্থাৎ গোধূলী বেলা। একটু পরেই সন্ধ্যার আযান পরবে। এসময় চৌধুরী ভিলার কড়া নড়ে উঠলো। বাইরে কেউ এসেছে। দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে ড্রয়িংরুম থেকে পুষ্প উঠে গেলো দরজা খুলতে।
দরজা খুলতেই বাইরে থেকে ভেসে এলো চার পাচজন ছেলের আওয়াজ। তিনজন ছেলে স্বমসুরে বলে উঠলো।
“-আসসালামু আলাইকুমমম নতুন ভাবিইইইইই।
তীব্র আওয়াজে এক হাত কানে চলে গেলো পুষ্পর। হাত নামিয়ে খুশিমনে সালামের উত্তর নিলো সে।
“-ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছেন আপনারা? হঠাৎ এসময়ে এলেন?
সেখান থেকে একজন ছেলে বলে উঠলো।
“-আসলাম তো ভাবির সাথে আলাপ আলোচনা করতে। ভেতরে যেতে পারি ভাবি?
পুষ্প হেসে বললো।
“-হৃদয় ভাই আগে ভাবি বলা বন্ধ করুন তো। পুষ্পই ডাকবেন আমাকে। আপনাদের মুখে ভাবি শুনতে ভালো লাগছে না। নিজেকে অনেক বড় বড় মনে হচ্ছে।
রকি নামক আরেকটা ছেলে বলে উঠলো।
“-আরে তুমি তো এখন বড়-ই। দ্যা গ্রেট সুপারস্টার, ডুপারস্টার, মেগাস্টার, রকস্টার প্রার্থ চৌধুরীর বউ তুমি। বড় হবে না?
সবাই হেসে উঠলো রকির কথায়। কার্তিক রকির মাথায় চাপড় মেরে বললো।
“-সুপার হিরো তো বললিই না। আমাদের বৌদি হচ্ছে এখন সুপার হিরোর বউ সুপার হিরোইন।
পুষ্প কপাল চাপড়ে বললো।
“-হুম হয়েছে? আর মজা নিতে হবে না ভেতরে আসুন।
ভেতরে ঢুকার আগে শোনা গেলো আরেকটা কন্ঠ। খুবই নরম কন্ঠে বললো।
“-কেমন আছো লিটেল প্রিন্সেস (Little Princess)?
পুষ্প বললো।
“-আলহামদুলিল্লাহ আছি তো ভালোই। কিন্তু আপনার সাথে আমার কথা নেই অর্নব ভাই।
লম্বামতো সুন্দর দেখতে ছেলেটার কপালে ভাজ পড়লো।
“-কেন আমি কি করেছি?
“-আপনি বিয়েতে কেন আসলেন না।
“-তোমার হাসবেন্ড দাওয়াত দিয়েছে আমাকে? বিয়েতে তো আসতেও বলেনি হারা*মিটা।
“-তো কি। হৃদয় ভাই, রকি ভাই, কার্তিকদা কে-ও তো কিছু বলেনি। তবুও তো তারা এসেছে। আপনি কেন আসলেন না?
“-সরি লিটেল প্রিন্সেস। কাল একটু কাজ থাকায় আসতে পারিনি তাই আজ আসলাম।
এমন সময় এসে দাঁড়ালো প্রিয়া। চোখ মুখে উৎসুক ভাব নিয়ে বললো।
“-আরে অর্নব ভাই, রকি ভাই, কার্তিক ভাই আপনরা এসেছেন? এখানে দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে এসে কথা বলুন।
পুষ্পর কাধে ধাক্কা দিয়ে বললো।
“-বুবু এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছো কেন? ভেতরে নিয়ে এসো।
হৃদয় নিজের বড় বড় কোঁকড়া চুলগুলো বা হাতে ঠেলে বললো।
“-এখানে আমিও আছি মিস। আমাকে তো বললেন না ভেতরে আসতে!
প্রিয়া লজ্জামাখা কন্ঠে মাথা নিচু করে বললো।
“-সবাইকেই বলেছি। শুধু আপনার নামটা উচ্চারন করা হয়নি। আপনাকে আসতে তো বারন করিনি।
হৃদয় বললো।
“-ঠিকাছে ঠিকাছে আগে ভেতরে তো চলো।
সবাই ভেতরে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলো। ওরা চারজন এসেছে শুনে পুর্নিমা বেগমও ঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন পুষ্পের সাহায্যে। ভদ্রমহিলা অসুস্থতার দরুন একা একা বেশিক্ষন হাটতে পারেন না। ধরে ধরে হাটাতে হয় এছাড়া লাঠি ভর দিয়েও হাটতে পারেন কিছুটা। অন্ত, প্রান্ত গেছে ফুটবল খেলতে তাই এখানে নেই তারা। বাড়িতে শুধু পুষ্প, প্রিয়া, প্রার্থ আর পূর্নিমা বেগমই ছিলেন।
পুষ্প সবার জন্য চা বানিয়ে এনেছে। অর্নবরা পূর্নিমা বেগমের সাথে গল্প আলাপ করছে। পুষ্প ট্রে তে করে চা এনে দিতেই কার্তিক জিজ্ঞেস করলো।
“-আমাদের হিরো কোথায়। আমরা এলাম দেখলোনা? ডাকো ওকে।
সবার হাতে চা দিতে দিতে বললো।
“- প্রার্থ ভাই ঘুমাচ্ছে। আমি ডেকে আনছি।
“-এখন কোন টাইমের ঘুম? দুপুরে কল দিলাম কবার ধরলো না। এখন আবার ঘুমাচ্ছে।
সামনে পুর্নিমা বেগম বসা তাই তার সামনে বলা মিথ্যেটাই অকপটে বলে দিলো পুষ্প।
“-ওই উনি তো কাল রাতে অনেক প্র্যাক্টিস করেছে গানের। তাই দিনের বেলায় ঘুমাচ্ছে। দুপুরে একবার উঠেছিলো। বড় আম্মু আর বাইরে কোথাও যেতে দেয়নি তো তাই আবারও ঘুমিয়ে গেছে।
প্রার্থর বন্ধুদের বেশ অবাক লাগলো ব্যাপারটা। প্রার্থ রাতে গান প্র্যাক্টিস করেছে? তাই বলে সারাদিন ঘুমাবে? ব্যাপারটা খটকা লাগলো বেশ।
হৃদয় কিছু বলবে তার আগেই চোখ গেলো সিড়িঁর দিকে।
“-ওইতো হিরো এসে গেছে।
আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১
প্রার্থ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে। পড়নে সাদা রংয়ের একটা টিশার্ট। সাথে ছাই রংয়ের লটো (lotto) প্যান্ট। জিম করা শক্ত বডি টিশার্টের সাথে এটে আছে। ঘন সিল্কি বড় বড় চুলগুলো হাটার ধাপে ধাপে নড়ে উঠছে। চুলগুলোকে দুহাত দিয়ে ব্যাকব্রাশ করছে বেশ স্টাইলের সাথে।
পুষ্প মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধ শ্যাম পুরুষটার দিকে। প্রার্থ’র চোখও পুষ্পর দিকে তাক করা। সে চোখে ভালোলাগা বা ভালোবাসা নেই। আছে শুধুই হিংস্র*তা।