আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২১
তানহা ইসলাম বৈশাখী
কক্ষ খানিকক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে রইলো। শোনা যাচ্ছে শুধু প্রার্থর রাগত্ব উঠানামা করা ভারি শ্বাসের আওয়াজ। বাইরে থেকে বিয়ে বাড়ির শোরগোলের আওয়াজও আসছে।
অর্নব গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে। প্রার্থর কথাগুলো হজম করতে একটু বেগ পেতে হলো। যতই হোক সে-ও তো মানুষ রোবট নয় যে কোন অনুভুতি থাকবে না। অনুভুতি তো তার মাঝেও ছিলো। দিন শেষে সে তো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আল্লাহর সৃষ্টি। তার মাঝে সকল ধরনের অনুভুতি কাজ করে। সে ক্ষেত্রে এতটুকু কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। তবে এগুলো অর্নব আমলে নেয় না। সে এখন এডাল্ট। তার সঠিক ভুল বোঝার মতো জ্ঞান আছে। যে তার নয় তার জন্য কষ্ট পেয়েও কোন লাভ নেই। উল্টো আরো পাপ হবে। সে নারী এখন অন্যকারো স্ত্রী। সেই অন্যকেউ টা আবার অর্নবেরই প্রিয় বন্ধু। সে হিসেবে বন্ধুর বউকে নিয়ে ভাবাটাও তো পাপ। কিন্তু মানুষ যে অনুভুতির কাছে পরাজিত। সেটা দামিয়ে রাখা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
অর্নব যথাসম্ভব চেষ্টা করলো নিজেকে প্রস্তুত করার। বড় একটা শ্বাস টানলো। গালে হাত রেখেই অভিমানি গলায় বললো।
“-তাই বলে তুই মারবি প্রার্থ? তুই না ছাড়লে ছাড়বি না ওকে। আমি বলেছি নাকি ছাড়তে? আমি তো শুধু চান্স নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যদি তুই ভালোবাসিস তাহলে আর কিছু করবো না। তবুও যদি সামান্য একটু সুযোগও পাই তাহলে কিন্তু হাতছাড়া করবো না।
প্রার্থ কপালে আঙ্গুল ঘষলো। চোখ বুজে রইলো কিছুক্ষন। শান্ত স্বরে কঠোর কিছু বাক্য বললো।
“-অর্নব। তুই আমার ছোটবেলার বন্ধু। এতদিনেও আমাদের সবার বন্ধুতে এতটুকু আচর পর্যন্ত লাগেনি। আমি চাইনা এখানে কোন দাগ লাগুক। পুষ্পর জন্য আমার যে অনুভুতি তৈরী হয়েছে সেটা হয়তো প্রকাশ করতে পারবো না কখনো কিন্তু আমি তোকে ওর আশেপাশে দেখতে পারবো না। বন্ধু তুই আমার হয়ে থাকবি কিন্তু ওর থেকে দূরে থাকবি।
কথাটুকু শুনে অর্নবের ভালোও লাগলো আবার একটু খারাপও লাগলো। ওইযে, সে তো মানুষ। এতটুকু খারাপ লাগবেই। এটুকু সয়ে নেওয়া যায়।
সে একটু ভেবে বললো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“-আচ্ছা সবই বুঝলাম কিন্তু বন্ধু তুমি প্রিন্সেসের মন কেমনে জয় করবা? তোরে ভাই আগেই বলছিলাম সময় থাকতে আগলে নে। সময় চলে গেলে পাবিনা। এখন ওকে দেখেছিস? তোর থেকে দূরে থাকতে চায় সবসময়। এখন কি করবি?
প্রার্থ গম্ভীর স্বরে বললো।
“-সেটা আমি বুঝে নেবো। তোর ভাবার দরকার নেই। তুই তোরটা ভাব। এক মাসের মধ্যে তোর বিয়ে।
অর্নব বোকা বনে যায়। হা করে তাকায় প্রার্থর দিকে। আশ্চর্য হয়ে বলে।
“-আমার বিয়ে?
“-হু।
“- আমার বিয়ে আমি জানিনা তুই জানিস?
প্রার্থ বাকা হেসে জবাব দিলো
“-সারাজীবন তো আর কুমার হয়ে থাকবি না। বিয়ে তো তোকে দিবোই। তাহলে এখনই দেই। আমারও শান্তি হবে একটু।
অর্নব সন্দিহান গলায় শুধালো।
“-এক সেকেন্ড! আমার বিয়ে হলে তোর কি করে শান্তি হবে?
প্রার্থ একই স্বরে বললো।
“-তখন ঘরে তোর নিজের বউ থাকবে আমার বউ নিয়ে আর ভাবতে পারবি না।
অর্নব চোখ-মুখ কুচকে বললো।
“-তোর বউকে নিয়ে ভাববো না আর। কিন্তু বিয়ে আমি এখন করবো না। আমাকে বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন ভুলে যা।
প্রার্থ কনফিডেন্সের সাথে বললো।
“-বিয়ে তো তোকে করতেই হবে।
সন্ধ্যার একটু আগে। এখনো কার্তিকের বিয়ের লগ্ন শুরু হয়নি। মানুষজন ঘুরে বেড়াচ্ছে খাবার খাচ্ছে, নাচগান করছে।
পুষ্প আর প্রান্ত সুস্মিতার সাথে দেখা করে মাত্রই হলে এলো। প্রান্ত ছেলেটা সারাক্ষণ পুষ্পর হাত ধরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন তারা প্রিয়াকে খুজছে। সেই কখন বললো ওয়াসরুমে যাবে এরপর আর খবরই নেই। কোথায় গেছে? এত মানুষের ভেতর ওকে তো খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। এবার চিন্তা হচ্ছে পুষ্পর। প্রান্তর দিকে তাকিয়ে চিন্তিত গলায় বললো।
“-প্রিয়া কোথায় গেলো রে প্রান্ত? অন্তকেও তো দেখছি না।
প্রান্ত বললো।
“-তুমি এখানেই থাকো আমি ওদের খুজে নিয়ে আসি।
“-তুই একা একা কোথায় খুজবি?
“-আরে এইটুকু জায়গা তো। আর আমি এখন বড় হয়ে গেছি। খুজে পাবো দেখো। তুমি বসো তোমাকে ঘুরে ঘুরে খুজতে হবে না। এখানেই থেকো ওদের পেলে আমি এখানেই নিয়ে আসবো।
“-না না তোকে একা যেতে হবে না। তুই….
প্রান্ত পুষ্পর হাত ছাড়িয়েই দৌড় দিলো। বলতে বলতে গেলো “তুমি এখানেই থাকো”। মানুষের মাঝে নিমিষেই হারিয়ে গেলো সে। পুষ্প চিন্তিত হয়ে এদিক ওদিক তাকালো। ছেলেটা একা একা কেন গেলো । বেশি চঞ্চল হয়ে গেছে আজকাল।
“-কাউকে খুজছিলে বুঝি? হাসবেন্ড সাথে নেই? একা রেখে গেছে?
আচমকা পেছন থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসতেই পেছনে ঘুরে তাকালো পুষ্প। দেখলো সমৃদ্ধি দাঁড়িয়ে। আজও শাড়ী পরেছে মেয়েটা। পুষ্পের প্রতিদ্বন্দ্বী মনেহচ্ছে তাকে। সৌন্দর্যে কারো থেকে কেউ কম নয়।
সমৃদ্ধিকে দেখে পুষ্পর ভ্রু টানটান হয়ে গেলো। বললো।
“-ওহ আপনি!
সমৃদ্ধি হেসে বিদ্রুপের স্বরে বললো।
“-অন্যকাউকে খুচ্ছিলে নাক প্রার্থকে খুজছিলে?
সমৃদ্ধির বিদ্রুপের বিপরীতে হাসলো পুষ্প। বললো তেজ নিয়ে।
“-খুজলে খুজলাম। আমার স্বামী আমি খুজবোনা তো কে খুজবে?
“-তাকে খোজার তো মানুষের অভাব নেই।
“-তা তো অবশ্যই। সেলিব্রেটি যে। গানের মানুষ। তাকে খোজার মানুষের অভাব হয় নাকি।
“-শুধু কি গানের জন্য খুজে?কেউ কেউ তো আপন করে পাওয়ার জন্যও খুজে।
পুষ্পর রাগ হলো। তবে সে রাগ প্রকাশ করলো না। প্রার্থর প্রতি তার যতই ঘৃণা থাক। বর্তমানে সে তার স্বামী। ভালোবাসা কি নেই? অবশ্যই আছে। খুব ভালো সম্পর্ক না থাকলেও একটা সম্পর্ক আছে। সেটার মূল্য অনেক। যতদিন এই সম্পর্কটা আছে ততদিন ও এসব ছলাকলা মেনে নিবে না। সে-ও সমৃদ্ধি কে খোচা মেরে বললো
“-কিন্তু আফসোস! আপন করে পাওয়ার জন্য খুজেও যে আর লাভ হবে না। সে তো অন্যের জামাই হয়ে গেছে। এখন কিছু উটকো মেয়েরা যদি তাকে আপন করার লক্ষ্যে খুজতে যায় তাহলে তাদের থেকে নির্লজ্জ এই দুনিয়ায় নেই আমার মতে।
সমৃদ্ধি মুখ বাকিয়ে বললো।
“- শোনো তোমাকে একটা উপদেশ দেই। তুমি ভেবোনা প্রার্থ তোমাকে সুখে রাখতে পারবে। তোমার থেকে বেশি আমি চিনি ওকে। দের বছরের সম্পর্ক ছিলো আমাদের।
“-ধন্যবাদ উপদেশের জন্য। কিন্তু আপনার ফালতু উপদেশ আমার লাগবে না। আর একটা কথা আমাদের সম্পর্কটা কিন্তু ২০ বছরের। আমার জন্মের পর থেকেই তার সাথে আমার সম্পর্ক। দেড় বছর আর বিশ বছরের মাঝে অনেক তফাত। সেক্ষেত্রে আপনার থেকে বেশিই চিনি হয়তো।
সমৃদ্ধি পুষ্পর সাথে কথায় পেরে উঠছে না বলে রাগ হচ্ছে। অপমান বোধ করছে। এই মেয়ে যে অল্প কথায় গলার মেয়ে না তা বুঝা হয়ে গেছে। একে এভাবে বুঝিয়ে সরানোও যাবে না। তাই রাগত্ব স্বরে সরাসরি বললো।
“-শোনো মেয়ে অতিরিক্ত চালাক হওয়া ভালো না। প্রার্থকে ছেড়ে দাও। ও তোমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না। ওর মনে এখনও আমি আছি।
পুষ্প কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো তখনই হাতের উপর ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেলো। চমকে উঠে হাতে তাকাতে দেখে কেউ তার হাতটা নিজের মুঠোয় পুরে রেখেছে স্বযত্নে। হাতের মালিকের খোজে চোখ তুলে পাশে তাকাতে দেখে প্রার্থ কোমল চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। প্রার্থর ওমন চাহনিতে বক্ষস্থল ধ্বক করে উঠলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার মাঝে প্রার্থ স্বাভাবিক গলায় প্রশ্ন করলো পুষ্পকে।
“-এখানে কি করছিস? একা কেন? প্রিয়ু প্রান্ত কোথায় ?
পুষ্প আশ্চর্য চোখে তাকিয়ে রইলো শুধু। কিছু বললো না।
প্রার্থ সামনে সমৃদ্ধির দিকে তাকালো। চোখে মুখে ভর করলো গম্ভীর্যতা। প্রার্থ দূর থেকেই দেখেছে তাদের কথা বলতে। সে সমৃদ্ধি কে পাত্তা দিচ্ছে না। এসেছে পুষ্পর খোজে। কিন্তু সমৃদ্ধি ওকে কিছু বলেছে কিনা জানা প্রয়োজন। তাই পুষ্পর দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে কঠিন গলায় বললো।
“-ও কিছু বলেছে তোকে?
পুষ্প চোখ সরিয়ে আনলো। দুপাশে মাথা নাড়িয়ে বললো।
“- না।
প্রার্থ সমৃদ্ধির দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
“-আগে একবার বলেছিলাম না ওর থেকে দূরে থাকবি। দিস ইজ ইউর লাস্ট টাইম। এরপর ওর আশেপাশে দেখলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
সমৃদ্ধিকে থ্রেড দিয়েই পুষ্প হাত চেপে ধরে টেনে নিয়ে গেলো। সমৃদ্ধিকে কিছু বলার সুযোগও দিলো না। রাগে, অপমানে কান্না চলে আসছে এবার সমৃদ্ধির। যার জন্য এত কষ্ট করে বিয়ে বাড়িতে এলো সে-ই পাত্তা দিলো না। সুস্মিতা তাকে বিয়েতে দাওয়াত করেনি বলে বিভিন্ন ইমোশনাল কথা বলে নিজে থেকেই দাওয়াত নিয়েছে চতুরতার সাথে। এসব কার জন্য? প্রার্থর জন্যই তো। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না উল্টো নিজেকে অপমানিত হতে হলো। এবার মনেহচ্ছে হাল ছাড়তেই হবে। প্রার্থর পুষ্পর প্রতি হাবভাব দেখে মনেহয় না সে পুষ্পকে ছেড়ে তাকে বিয়ে করবে কখনো।
প্রার্থ পুষ্পের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। পুষ্প এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার হুঁশে এলো। প্রার্থর তো কোন অধিকার নেই তাকে এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ার। অনেক তো সহ্য করলো আর কত?
পুষ্প হাত মুচড়ে বললো।
“-ছাড়ুন আমাকে? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? হাত ধরেছেন কেন আপনি? ভালোই ভালোই বলছি ছাড়ুন আমাকে নয়তো…
হঠাৎ প্রার্থ তাকে জোরে টান দিয়ে কোথাও ঠেলে দিলো। পিঠ গিয়ে ঠেকলো দেওয়ালে। তবে ব্যাথা পেলনা। পিঠের পিছনে প্রার্থর হাত থাকায় ব্যাথা পেলো না। ছোট একটা কোনার মতো জায়গা। সেটা আবার পর্দা দিয়ে ঢাকা। ডেকোরেশনের জন্য যে পর্দা ব্যাবহার করেছে সেটা দিয়েই ঢেকে গেছে জায়গাটা।
এজন্য লাইটের আলোও একটু কম এখানে।
প্রার্থ পুষ্পের চোখে চোখ রেখে বললো।
“-নয়তো কি করবি? আমি ধরবো না তো কে ধরবে তোকে? স্বামী হই তোর। তোর উপর সবকিছুর অধিকার আছে আমার।
প্রার্থ পুষ্পের অনেকটাই কাছাকাছি। সে দুহাত সামনে দিয়ে রেখেছে যাতে প্রার্থর বুকের সাথে তার স্পর্শ না লাগে। প্রার্থ পেছন থেকে তাকে ধরে রাখায় পুষ্পর চেষ্টাতেও কাজ হচ্ছে না। প্রার্থর কবজায় বন্দি থেকেই কুঁকড়ে উঠলো সে। ইতস্তবোধ কাটিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললো।
“-অধিকারের কথা আপনি না বলেন তাই ভালো। সরুন সামনে থেকে। ছাড়ুন আমাকে। এভাবে কেন ধরে আছেন?
প্রার্থর মুড হলো না ঝগড়া করার। আর কত ঝগড়া করবে। এরকম প্রতিদ্বন্দ্বীত্ব থাকলে সত্যিই পুষ্প দূরে চলে যাবে। আর প্রার্থ এখন চায় না পুষ্প দূরে যাক। দূরে থেকে তো বুঝলো দূরে থাকা সম্ভব নয়। এবার নাহয় একটু কাছাকাছি আসার গল্প হোক।
রাগ সব মাটিচাপা দিয়ে নরম গলায় বললো।
“-তো কিভাবে ধরবো বলে দে সেভাবেই ধরবো।
প্রার্থর কথায় পুষ্পর সন্দেহ জাগলো। এরকম কথা বলার মানুষ তো প্রার্থ নয়। পুষ্প ভ্রুকুটি করে সন্দিহান গলায় বললো।
“-আপনার সমস্যা টা কি? আমার সাথে এভাবে কথা বলার কারণ কি? আমি তো দূরে চলে যাচ্ছি তাহলে কেন কাছাকাছি আসছেন? আপমান করতে পারছেন না? পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে পারছেন না এজন্য? এজন্য এমন ব্যাবহার?
পুষ্পর এতগুলো প্রশ্নের বিপরীতে প্রার্থ শান্ত গলায় বললো।
“-তোর এমনটা মনেহয়?
“-মনেহয় না। এমনটাই চাইছেন আপনি।
প্রার্থ ডান হাতটা ধীরে ধীরে চলে গেলো পুষ্পর বাকানো কোমড়ে। যদিও হাতটা শাড়ীর উপরেই রেখেছে কিন্তু পুষ্পর মনে হলো প্রার্থর শক্ত চটা হাতটা তার শাড়ী ভেদ করে কোমড় ছুয়েছে। অস্বস্তি হলো ভীষন। মেয়েলি সত্ত্বা বারি দিয়ে উঠলো মস্তিস্ক। অস্বস্তি কাটিয়ে প্রার্থকে সরিয়ে দিতে চাইলো কিন্তু শক্তি আসছে না কেন যেন।
প্রার্থ নিজের পুরুষালি হাত দ্বারা পুষ্পর কোমড় নিজের আয়ত্বে আনলো। নিচু হয়ে মুখের সামনে মুখ আনলো। এক ইঞ্চির দূরত্ব তাতে। প্রার্থর তপ্ত শ্বাস পুষ্পর মুখজুরে ছড়িয়ে পড়ছে। মায়াভরা চোখে তাকিয়ে নোশালো কন্ঠে বললো।
“-তাহলে তাই। এমনটাই চাইছি। তোকে না জ্বালালে শান্তি পাচ্ছি না। মনের শান্তির জন্য একটু জ্বালালে ক্ষতি কি?
প্রার্থর এমন ব্যাবহার পুষ্পর বুঝে আসছে না। প্রার্থর পুরুষালী শরীরের কাছে পুষ্প নেহাতই ছোট মানুষ। ওমন মানুষের কবলে পরে তার দেহ নেতিয়ে আসছে। ভার ছেড়ে দিতে চাইছে শরীর। শ্বাস-প্রশ্বাসের বেগতিক উঠানামা চলছে। তবুও নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে বললো।
“-আপনার মতলব কি? এত কাছে কেন আসছেন?
প্রার্থ একইভাবে বললো।
“-কাছে আসার জন্য কাছে আসছি।
“-কি করতে চাইছেন আপনি?
“-করতে তো চাইছি অনেক কিছুই।
“-সরুন সামনে থেকে।
“-সরে যাওয়ার জন্য তো কাছে আসিনি।
“-তাহলে কেন এসেছেন?
“-কিছু দিতে কিছু নিতে।
পুষ্প বুঝলো না। বললো।
“-কি?
“-বুঝে নে।
“-আপনাকে বুঝতে পারছি না।
“-চোখে তাকা।
পুষ্প প্রার্থর চোখেই তাকিয়ে ছিলো। তবে সে চোখের ভাষা বোঝার মতো পরিস্থিতিতে ছিলো না। এবার প্রার্থ বলায় পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো তার চোখে। সেখানকার ভাষা আজ একটু অন্যরকম লাগলো। রাগ নেই, হিংস্রতা নেই, ঘৃণা নেই সেখানে। আছে মায়া, মুগ্ধতা সাথে ভালোবাসাও বোধহয়।
ভালোবাসা! কথাটা ভেবে পুষ্প নিজেই অবাক হলো। মনে মনে বললো। ভুল দেখছিস পুষ্প। এখানে কখনো তোর নামের ভালোবাসার দেখা মিলবে না। এটা তোর মনের ছলনা ছাড়া কিছুই না।
প্রার্থর বুকে দুহাত দিয়ে ধাক্কা দিলো সে। হঠাৎ ধাক্কায় ক্ষানিকটা সরে এলো সে। পুষ্প ঠান্ডা গলায় বললো।
“-আমি জানিনা আপনি কেন এমন ব্যাবহার করছেন। শুধু মনে রাখুন আপনাকে আমার চাই না। চিন্তা করবেন না ছেড়ে যখন দিচ্ছি তাহলে ভালোভালোই দিবো। আমার কোন চিহ্ন রাখবো না আপনার জীবনে।
প্রার্থ আবার সেই আগের মতো হয়ে গেলো। রেগে গেলো মুহূর্তেই। ছেড়ে যাবে মানে কি? প্রার্থ তো ওকে বলেনি তার জীবনে আসতে তাকে ভালোবাসা শেখাতে। সে কেন এলো? কেন ভালোবাসতে শেখালো? এখন প্রার্থর মনে সুখ ফুল ফুটিয়ে সে ছেড়ে চলে যাবে। এত সহজ? তার কোন চিহ্ন রাখবে না? বললেই হলো? শুধু চিহ্ন নয় প্রার্থর তো পুরো ফুলটাকেই চাই।
রেগে আবার টেনে আনলো পুষ্পকে। মুখোমুখি হয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
“-চিহ্ন রাখবো নাকি আস্ত তোকে রাখবো সেটা আমার ব্যাপার। ছেড়ে যাওয়ার কথা বললে জানে মে*রে ফেলবো। তুই আমার তোর উপরের সকল সিদ্ধান্তও আমার। ছাড়তে হলে আমি ছাড়বো রাখতে হলে আমিই রাখবো।
প্রার্থর কথায় তীব্র অধিকার বোধ। পুষ্প আশ্চর্য না হয়ে পারছে না। হুট করে প্রার্থর কি হলো? পুষ্পর বোধহয় হজম হলো না কথাগুলো। সে কড়া গলায় বললো।
“-ছেড়ে তো দিয়েছেনই তাহলে রাখার প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে? জীবন আমার তাই সিদ্ধান্তও আমার। আপনার সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দেওয়ার ভুলও করবেন না।
“-জীবন তোর কিন্তু সিদ্ধান্ত আমার। বিষয়টা আগে হলে আমার কিছুই যায় আসতো না কিন্তু বিষয়টা এখনকার যখন আমার….
থেমে গেলো প্রার্থ। বাকিটুকু আর বললো না। এত সহজেই কি আর ধরা দেবে। এখন ধরা দিলেও পুষ্প মানবে না। এতদিনে প্রার্থ তার মনে যে ঘৃণাটা তৈরী করেছে সেটাকে তো কাটাতে হবে। তার আগে কিছুই বলবে না।
প্রার্থ থেমে যাওয়ায় পুষ্প প্রশ্ন করলো।
“-যখন আপনার? কি হলো বলুন।
প্রার্থ ছেড়ে দেয় পুষ্পকে। সারে গিয়ে পর্দা সরিয়ে রাস্তা দেয়। শান্ত স্বরে বলে।
“-যা
আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২০
পুষ্পর এবার পাগল হওয়া বাকি। মানে প্রার্থকে সে কখনোই বুঝে না। একসময় এই রূপ তো আরেক সময় অন্য রূপ। গিরগিটিও এত রূপ বদলায় না যতটা প্রার্থ বদলায়। সেকেন্ডে সেকেন্ডে কারো মুড কি করে বদলায়। এজন্যই বলে আকাশ আর মানুষ এক প্রকৃতির। আকাশে যেমন মিনিটে মিনিটে আবহাওয়া বদলায়।প্রার্থর মুডও তেমন মিনিটে মিনিটে বদলে যায়।
পুষ্প আর ঘাটলো না তাকে। সরে যখন গিয়েছে চলে যাওয়াই ভালো। এখানে থাকা মানেই মাথা নষ্ট করা।
প্রার্থর ছেড়ে দেওয়া জায়গা দিয়ে হনহন করে চলে গেলো। প্রার্থ তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজেও চলে গেলো তার পিছু পিছু। মেয়েটা অতিরিক্ত সাহসী হয়েছে। একে বেগে আনতেই হবে।