আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩০

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩০
তানহা ইসলাম বৈশাখী

সকাল সকালেই ঘুম ভাঙলো চৌধূরী বাড়ির সকলের। পুরো বাড়িতে আনন্দের হিড়িক পরে গেছে। বাতাসে বাতাসে ছড়াচ্ছে খুশির সংবাদ। প্রার্থর বিয়ের খবর বাইরে জানাজানি হতে অনেক সময় লেগেছে কিন্তু এবার মনেহয় না খুব বেশি সময় লাগবে বাবা হওয়ার কথাটা ছড়াতে। আশরাফ সাহেব সকাল সকাল অফিসে মিষ্টি পাঠিয়ে দিয়েছে সকল স্টাফদের জন্য। এছাড়াও পাড়া প্রডিবেশিদের তো দেওয়া হয়েছে সেই কালকেই ।
আজ সকালে প্রার্থ তার পরিচিত ডক্টরের থেকে এপয়েনমেন্ট নিয়ে নিয়েছে। এখন হসপিটালের উদ্দেশ্যেই বেড়িয়েছে দুজন। নতুন গাড়ী এখনো কেনা হয়নি। আপাতত বাইকেই চলছে। পুষ্পকে নিয়ে বাইকে করেই বেরিয়েছে। তবে বাইকের গতি দেখে মনে হচ্ছে কচ্ছপ হাটছে। তার উপর গরমের মধ্যে মাথায় পরিয়ে রাখছে ইয়া বড় হেলমেট। এইটুকু গতিতে ঠিকঠাক বাতাসও লাগছে না। উল্টো শহরের কোলাহল আর দূষিত পরিবেশের কারনে আরো গরম লাগছে।
পুষ্প বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললো।

“-এটা বাইক না শামুক? সামনে চলতেই চায় না। নাকি আপনি বাইক চালানো ভুলে গেলেন। গরম লাগছে জোরে চালান।
পুষ্পর কথায় প্রার্থর কিছু এলো গেলো না। সে নিজের মতো ধীর গতিতে চালাচ্ছে। তবে একেবারে ধীরেও নয়। যতটা সেফলি চালানো যায় ততটাই।
পুষ্প আবার তাগাদা দিলো।
“-একটু জোরে চালান না। কতদিন বাইকের ফুরফুরে হাওয়া খাই না।
প্রার্থ স্বাভাবিক ভাবে বললো।
“-হাওয়া খেতে চাইলে বাসায় গিয়ে খাস। বাড়িতে ফ্যান আছে। সামনে রেখে দেবো হা করে থাকিস।
পুষ্পর নাক ফুলে উঠলো। তেজ সমেত বললো।
“-সবসময় বাকা কথা কেন বলেন? ভালোভাবে বললে কি হয়? রাতে একরূপ দিনে একরূপ। গিরগিটিও আপনার থেকে ভালো।
“-হুম জানি।
প্রার্থর সহজ স্বীকারোক্তিতে রাগ যেন তীরতীর করে বাড়লো। রাগের মাথায় বলে ফেললো।
“-আপনার সাথে থাকাই ঠিক না। নামান আমাকে। নয়তো লাফিয়ে নেমে পড়বো।
কথাটা শেষ হতে না হতেই প্রার্থ জোরে ব্রেক কষে। হঠাৎ বাইক থামানোতে পুষ্পর মনে হয় তাকে নামিয়ে দিতে বুঝি এভাবে থামালো। ভয় পেলো কিছুটা।
প্রার্থ বসা থেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় পুষ্পর দিকে। ভ্রু উচু করে বলে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘-কি বললি?
“-কখন?
“-এখন।
পুষ্পর মনে পড়লো না সে কি এমন বলেছে। প্রার্থ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো।
“-তোর সাহস কি করে হয় বাইক থেকে নামার কথা বলার? যেখানে আমি এত সাবধানে চালচ্ছি যেন তোদের কিছু না হয়। সেখানে তুই আমাকে হুমকি দিচ্ছিস বাইক থেকে লাফিয়ে নামার?
পুষ্প ভ্রু কুঁচকে বললো।
“-তোদের মানে? আর কার?
প্রার্থ পুষ্পর পেট ইশারা করে বলে।
“-এখানে আমাদের ক্ষুদে মেহমান থাকে তা কি মনে আছে আপনার? এখন সাবধানতা অবলম্বন করবো না? আর একটা কথা বললে বাইকে না গিয়ে পায়ে হাটিয়ে নিয়ে যাবো।
পুষ্প ঠোঁটে তর্জনী ঠেকিয়ে চুপ হয়ে গেলো। বিড়বিড় করে বাচ্চাদের মতো বললো।
“-সবসময় বকে।
প্রার্থ বাইক স্টার্ট করতে করতে বললো।

“-ভেবেছিলাম এবার বুঝি একটু ম্যাচিউর হয়েছে। বাচ্চামো স্বভাবটা আর নেই কিন্তু তোর মাঝে আবার সেই বাচ্চা স্বভাব এসে গেছে। কদিন আগেও না কত বড় বড় কথা বলতি?
পুষ্প হাসিখুশি মনে বললো।
“-আপনিও আগের প্রার্থ হয়ে গেছেন তাই তার ফুলও আগের ফুল হয়ে গেছে সিম্পল।
প্রার্থর ঠোঁট এবার ছড়িয়ে গেলো দুদিকে। সামনে ঘুরে বাইক আবার স্টার্ট করে বললো।
“-ঠিকাছে আমার কাছে পুষ্প, ফুল দুটোই মঞ্জুর। তবে সাবধান করে দিলাম এসময় যদি লাফালাফি করিস তবে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
পুষ্প বুঝদারের মতো মাথা দোলালো। সেনাবাহিনীর মতো সটান হয়ে বললো
“-ঠিকাছে।

ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে প্রার্থ পুষ্প। সামনে নিজ চেয়ারে বসে আছেন ড. সেলিনা হোসেন। প্রৌঢ়ার চোখে সাদা ফ্রেমের চশমা। কিছু কাগজপত্র নেড়েচেড়ে দেখছেন।
প্রার্থ উদগ্রীব হয়ে বসে আছে। ভয় কাজ করছে ভেতরে। পুষ্পর মাঝেও সামান্য কৌতুহল বা ভয় দেখা যাচ্ছে।
ডক্টর কাগজ থেকে চোখ উঠিয়ে হাসিমুখে বললেন।
“-রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে মা এবং বাচ্চা দুজনেই সুস্থ আছে। কোন প্রকার জটিলতা নেই।
প্রার্থ যেন হাঁপ ছেড়ে বাচলো। পুষ্পও বিচলিত হাসলো। হাত রাখলো নিজের পেটের উপর। এই অনুভুতিটা একদম অন্যরকম অনুভুতি।
প্রার্থ ডাক্তারকে প্রশ্ন করলো।
“-আচ্ছা আমাকে একদম ক্লিয়ার করে বলুন ও কি কনসিভ করতে পারবে? পরে কোন সমস্যা হবে না তো? বয়সে ঠিকঠাক হলেও দেখতে তো ছোটই। যদি….
“-রিল্যাক্স মি. চৌধুরী। আপনার ওয়াইফ যথেষ্ট এডাল্ট। বয়স ঠিকঠাক। বেবি কনসিভ করতে পারবে কোন সমস্যা নেই। বললাম তো মা এবং বাচ্চা দুজনেই ঠিক আছে। যদিও বাচ্চার বয়স একমাসের মতো। আমরা সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারবো না তার সুস্থতা কিন্তু অন্যান্য টেস্টের দ্বারা বুঝেছি বাচ্চা ঠিক আছে। পরবর্তী চেকআপের সময় ভালোভাবে বোঝা যাবে।

প্রার্থ রিল্যাক্স হয়েও যেন হতে পারলো না। আবারও প্রশ্ন করলো।
“-তারমানে দুজনেই ঠিক আছে? অন্য কোন সমস্যা নেই?
ডাক্তার সাহেবা প্রার্থর এত চিন্তা দেখে হাসলেন। অমায়িক হাসি ঠোঁটে বজায় রেখে পুষ্পর উদ্দেশ্যে বললেন।
“-স্বামী কিন্তু তোমার লাখে একটা। অনেক চিন্তা করে তোমার জন্য।
আবার প্রার্থর দিকে তাকিয়ে বললেন।
“-আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আপনার স্ত্রীর ওজন, রক্তচাপ, রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট সব ঠিকঠাক আছে। এবং তার গর্ভাবস্থা স্বাভাবিকভাবেই এগোচ্ছে। তাই চিন্তার কোন কারন নেই। শুধু খেয়াল রাখবেন খাওয়া দাওয়া, বিশ্রাম যেন ঠিকঠাক হয়। এবং স্ট্রেস কম নিতে হবে। আয়রন আর ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেটগুলো নিয়মিত খাওয়াবেন এবং বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। সমস্ত রুটিন আমি বলে দেবো সে হিসেবে চলাফেরা করলেই হবে।
প্রার্থ নিশ্চিন্ত হলো। পুষ্প ঠিক থাকলেই হলো তার কাছে। বাকি তার দেখাশোনার জন্য সে আছেই।
একটু পরে একটা কথা মাথায় আসতেই তড়িৎ গতিতে প্রশ্নটা করেই ফেললো প্রার্থ।
“-আচ্ছা ডক্টর ওর মাঝে মাঝে মাথা ব্যাথা হয়। এটাতে সমস্যা হবে?

“-সাধারন মাথাব্যাথা হলে সমস্যা নেই। তবে যদি খুব বেশি হয় বা ওষুধেও না কমে তবে কারন খুজতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক আছে তাই দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই।
যাক এবার আরেকটু শান্তি পেলো প্রার্থ। হুট করে প্রেগন্যান্সিটাতে যেমন আনন্দ পেয়েছে তেমন ভয়ও পেয়েছিলো। ভয় পাওয়ার অবশ্য কিছু কারনও আছে। তা নয়তো ছেলেরা খুব সহজে এতটা ভয় পায় না।
ডাক্তারের সাথে আরো কিছু টুকটাক কথাবার্তা বলে তারা বেড়িয়ে গেলো চেম্বার থেকে।
হসপিটালের বাইরে বাইকের সামনে এসে প্রথমে পুষ্পর মাথায় হেলমেটটা পরাতে চায়। হেলমেট একটাই এনেছে পুষ্পর সেফটির জন্য। এদিকে সে গরমের জন্য হেলমেট পরতে চাচ্ছে না।
“-প্লিজ প্রার্থ ভাই। হেলমেট এখন দিয়েন না। গরম লাগে।
প্রার্থ পুষ্পর একহাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে আসে। পুষ্প মুখ ফুলিয়ে আছে বলে গালে একটা টোকা দিলো। বললো আদর স্বরে।

“-কি হয়েছে? এইটুকু ব্যাপারে গাল ফোলায় কে? আগে তোর সেফটিটা তো আমাকে দেখতে হবে তাইনা? দিনদিন বড় হচ্ছিস আর বুদ্ধি কমে যাচ্ছে। এত অগোছালো হচ্ছিস কেন?
পুষ্প আহ্লাদী হয়ে বললো।
“-গুছিয়ে দেওয়ার জন্য আপনি আছেন তো। এতদিন তো গুছিয়েই ছিলাম। এবার অগোছালো হবো আপনি গুছিয়ে দিবেন। এটা আপনার শাস্তি।
পুষ্পর মুখের উপর ছোট ছোট চুল উরছিলো। সেগুলো খুব স্বযত্নে গুছিয়ে কানের পিছে গুজে দিয়ে বললো।
“-তোর সেবা করা যদি আমার শাস্তি হয়। তবে সে শাস্তি যেন আমার সারাজীবনের শাস্তি হয়। তবে ফুল একটা মথা মনে রাখবি গোছানোর মানুষ আছে বলেই যে অগোছালো থাকতে হবে এমনটা নয়। আজ আমি আছি গোছানোর জন্য কাল না-ও থাকতে পারি তখন কে গুছিয়ে দিবে?
পুষ্প ফুসে উঠে বললো।

“-কেন? আপনি আমাকে ছেড়ে কোথায় যাবেন?
“-কোত্থাও না। হেলমেট পর। আমি জানি তুই বুদ্ধিমান। আর বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। নে পর।
কথাটুকু বলে সে নিজেই হেলমেটটা পরিয়ে দিলো। দুজনে বাইকে উঠে পরলো বিনা বাক্যে।
এরপর আবার বাইক ছুটালো সেই মন্থর গতিতে। চলতে চলতে পুষ্প খেয়াল করলো তারা বাড়ি ফেরার রাস্তায় না গিয়ে অন্য রাস্তা ধরেছে। পুষ্প সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করলো
“-আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?
প্রার্থ ছোট করে বললো।
“-শপিংয়ে।
“-কেন? এখন আবার কিসের শপিং করবো? দেখুন এখন বলবেন না যে বাবুর জন্য নেবেন। বাবু আসতে এখনো ৮ মাস বাকি। এত আগেই আমি শপিং করবো না।
প্রার্থ ভ্রু কুচকে বললো।
“-মাথায় জ্ঞান নেই? আমাদের বাবু ছেলে হবে না মেয়ে সেটা তুই জানিস? বাবুর শপিং এখন করবো কেন? আমার মাথায় তোর মতো আজগুবি বুদ্ধি ঘুরে না। চুপচাপ বসে থাক।
পুষ্প মুখে ‘চ’ সূচক শব্দ করে বললো।

“-তো কেন যাচ্ছি। সেদিনও না কতগুলো শাড়ী আনলেন।
“-অর্নবের বিয়ের শপিংয়ে যাচ্ছি।
পুষ্প অবাক হলো। চোখ মুখে বিস্ময় ভাব ফুটিয়ে বললো।
“-কিহ? অর্নব ভাইয়ের বিয়ে? কবে? কখন? আমাকে বললেন না কেন?
আচমকা সবেগে বাইকটা ব্রেক করে বসলো প্রার্থ। খালি রাস্তার একপাশে দাড় করালো বাইক। পুষ্পকে উদ্দেশ্য করে বললো।
“-নাম।
হঠাৎ কি হলো বুঝতে পারলো না পুষ্প। বাইক থেকে নেমে জিজ্ঞেস করলো।
“-কি হয়েছে?
প্রার্থ নিজেও নেমে দাঁড়ালো। পুষ্পর মাথা থেকে হেলমেট খুলে কপালে হাত রাখলো। তাপমাত্রা চেক করে বললো।
“-সব তো ঠিকই আছে। তুই কেন এমন কথা বলছিস? কি নিয়ে টেনশন করছিস এত?
“-আপনি কিসের কথা বলছেন? আমি কি ভুল কিছু বলেছি?
“-আগে আমার প্রশ্নের জবাব দে। তুই কি কোন বিষয়ে ডিপ্রেসড?
“-না তো। আমার কাছে তো আপনি আছেনই আমি কেন ডিপ্রেসড থাকবো? আপনি থাকতে আমার কোনকিছুর জন্য কোন টেনশন নেই।
প্রার্থ কন্ঠ খানিকটা মলিন করে বললো।

“-তাহলে এমন করছিস কেন? যেন কোনকিছুর চিন্তায় তোর মাথা থেকে সব কথা মুছে যাচ্ছে। অর্নবের বিয়ে নিয়ে তো কতদিন ধরেই কথা চলছে। তোর মনে নেই?
পুষ্প ভাবলো কিছুক্ষণ। মনে পরলো অর্নবের তো বিয়ে ঠিক হয়েছে। পুষ্প উৎফুল্ল হয়ে বললো।
“-হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে। অর্নব ভাইয়ার তো বিয়ে। আপনি তো মেয়েটার ছবিও দেখিয়েছিলেন। ভীষন মিষ্টি মেয়েটা। আজ কি স্নেহা আসবে। আমার না মেয়েটার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।
প্রার্থ শান্ত চোখে পুষ্পকে দেখলো কিছুক্ষণ। মনের ভেতরের সন্দেহের বীচ থেকে যেন গেঁড়া উঠে যাচ্ছে। প্রার্থকে একমনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পুষ্প বললো।
“-কি হলো? এভাবে কেন দেখছেন? ওরা আসবে?
প্রার্থ অন্যমনস্ক ছিলো। নিজের ভাবনায় মশগুল ছিলো। পুষ্পর ডাকে আতকে উঠলো।
“-হু? হুম। হুম আসবে সবাই।
“-তো দাঁড়িয়েছেন কেন আপনি? আশ্চর্য! চলুন না। দেরি হয়ে যাবে তো।
প্রার্থ কিছু বললো না। আবারও সব ঠিকঠাক করে বাইক স্টার্ট করলো। সাবধানে বাইক চালিয়ে গেলো শপিংমলের উদ্দেশ্যে।

পুষ্পর নরম সুতনু হাতখানা নিজের খরখরে হাতের মুঠোয় বন্দী করে মলের ভেতরে ঢুকলো প্রার্থ। বা-হাতে ফোন ধরে রেখেছে কানের কাছে। ভেতরে সবাই উপস্থিত। শুধু প্রার্থ পুষ্পই বাকি ছিলো।
হাটতে হাটতে একটু ভেতরে যেতেই দেখলো সামনে থেকে সমৃদ্ধি আসছে একটা লোকের হাত ধরে। যদিও প্রার্থ তাদের পাত্তা না দিয়ে হেঁটে যেতে চাচ্ছিলো তবে তার আগেই মেয়েটা ডেকে উঠলো।
“-প্রার্থ! কেমন আছিস? আরে পুষ্পও আছে দেখছি। বউ ছাড়া দেখি কোথাও যাস না।
প্রার্থ দাঁড়াতে চাইলো না। সম্পূর্নরুপে উপেক্ষা করতে চাইলো তাকে। তবে পুষ্প দাঁড়িয়ে গেলো। কপালে একশো একটা ভাজ ফেলে বললো।
“-এক্সকিউজ মি! আমরা কি আপনাকে চিনি?
সমৃদ্ধি অবাক হওয়ার ভান করলো। হা করে মুখের উপর হাত রাখলো। চোখদুটো গোল গোল করে বললো।
“-কি বলো আমাকে চেনো না? এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?
পুষ্প একই স্বরে বললো।

“-আপনি কি মনে রাখার মতো কেউ হন আমাদের?
প্রার্থ কেন যেন ভয় পেলো। পুষ্পর দুইবাহু ধরে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করালো। চিন্তিত কন্ঠে বললো।
“-ফুল! তুই ওকে চিনতে পারছিস না? ভালো করে দেখ একবার? চিনতে পারছিস না?
পুষ্প রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো। রাগে হিসহিস করে দাঁত চেপেই বললো।
“-আপনার মনেহয় নিজের এক্সকে চেনানোর খুব শখ হচ্ছে। এক্সকে ভুলতে পারেন না তাইনা? আপনার যে বউ আছে সে খেয়ালও কি নেই?

প্রার্থ পুষ্পর বাকি কথায় কান দিলো না। পুষ্প যে সমৃদ্ধিকে চিনে এটা জেনে শস্তি পেলো সে। ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়লো। পুষ্প রাগে প্রার্থর হাতদুটো নামিয়ে দিলো কাথ থেকে। পুষ্প চায়ছিলো এমন কোন মানুষকে তারা মনেই রাখবেনা যাদের সাথে তাদের নিকৃষ্ট অতীত জরিয়ে। কিন্তু প্রার্থর আচরনে মনে হলো সে সমৃদ্ধিকে ভুলতে নারাজ। নব্য মা হওয়ার আনন্দে আত্মহারা মেয়েটির মন অভিমানের জোয়ারে ভেসে গেলো।
এদিকে সমৃদ্ধি বা তার পাশে দাঁড়ানো লোকটি পুষ্পর কটমটিয়ে বলা ধীর স্বর শুনতে পায়নি ঠিকঠাক। সমৃদ্ধি বললো।
“-এভাবে ফিসফিস করে কি বলা হচ্ছে? আমরা জানি সবই।
প্রার্থর রূপ যেন নিমিষেই বদলে গেলো। এক হাতে পুষ্পর কাঁধ জড়িয়ে একদম মিশে দাঁড়ালো দুজন। ঠোঁটে বক্রহাসির একটুখানি ঝলক মিশিয়ে বললো
“-জানলে তো ভালোই। আমাদের সুবিধা। আলাদা করে জানাতে হবে না। এর আগেরবার আমি হয়তো বলেছিলাম আমার বা আমার বউয়ের সামনে আসবি না। কিন্তু কি করার নির্লজ্জদের লজ্জা থাকলে তো তারা অপমান গায়ে মাখবে।

সমৃদ্ধি রেগে গেলো। নতুন একজন মানুষের সামনে তাকে অপমান না করলে কি হতো না? সে কি এখানে প্রার্থকে ছিনিয়ে নিতে এসেছে নাকি। দেশে ছেলের অভাব আছে? এইতো পাশে যে লোকটা আছে তার সাথে ভালোই কথা জমছে। দুদিনেই পটিয়ে ফেলতে পারবে। এখানে ভালো কথা বলতে এসেও অপমানিত হতে হলো।
সমৃদ্ধি অপমানটুকু সামান্য ঢোকের সাথে গিলে নিলো। মুখে সামান্য হাসি টেনে বললো
“-তুই কিসের কথা বলছিস? আমি তো বলছিলাম তোরা বাবা মা হচ্ছিস সেটার কথা। কনগ্র্যাচুলেট করতে এলাম।
প্রার্থ ভ্রু কুচকে তাকায় সমৃদ্ধির দিকে। পুষ্পও একইভাবে তাকায়। এই কথা তো তারা জানলোই মাত্র কাল। সমৃদ্ধির তো জানার কথা নয়। পুষ্প প্রশ্ন করে অবাক স্বরে।
“-আপনি কি করে জানলেন?
“-অর্নবদের সাথে দেখা হয়েছিলো আমার। ওরাই বললো। আরো কত কি জ্ঞান দিলো৷ বাই দ্যা ওয়ে তোমাদের কাবাবে আমাকে হাড্ডি ভাবার কোন দরকার নেই।
পাশের সামান্য বয়স্ক লোকটাকে দেখিয়ে বললো।
“-ও মোখলেস। আমার বন্ধু। আমি ভেঙে পরায় ও আমাকে অনেক সাহস জুগিয়েছে। আমি আর তোমাদের মাঝে আসবো না।
ব্যাস এটুকু বলেই সে লোকটার হাত ধরে চলে গেলো। প্রার্থও আর ওদিকে ধ্যান দিলো না। পুষ্পর হাত ধরে বললো।

“-চল।
পুষ্প হেঁটে যেতে যেতে বললো।
“-দুদিন পর এক বাচ্চার বাপ হবে এক্সকে দেখলে আর ভালো লাগে না কথা বলতেই হবে।
প্রার্থর বেশ মজা লাগে তাকে পুষ্পর জেলাসির বিষয়টা। সে তাকে আরো খ্যাপাতে বললো।
“-অবিয়াসলি! দুদিন পর তো বাচ্চার বাপ হবে। তখন তো সুন্দরীদের বা এক্সদের দেখতে পাবো না তাই এখনই দেখছি।
পুষ্প বিড়বিড় করে বললো।

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২৯

“-নির্লজ্জ, কাপুরুষ।
প্রার্থ পুষ্পর কানের কাছে মুখ নিয়প বললো
“-হ্যা শুধু তোর কাছে।
“-অসভ্য।
প্রার্থ সরে এসে চোখ চিপে দুষ্টু হেসে ফের বললো।
“-শুধু তোর জন্য মাই ফ্লাওয়ার।

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩১