আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩৪
তানহা ইসলাম বৈশাখী
শুভ্রকায় দিনটি প্রায় শেষ হতে চললো। সূর্য ক্রমশ হেলে পরছে পশ্চিমাকাশে। পবিত্র দিনের শেষ লালিমা সাক্ষী হবে পবিত্র একটি বন্ধনের। যেখানে দুটো সই এবং মুখে বলা তিনটি পবিত্র বাক্যে এক সত্তায় পরিনত হবে দুজন মানব-মানবী।
আজ সেই কাঙ্খিত দিনটি। অর্নব-স্নেহার বিয়ে। এইতো সময় হয়ে এসেছে প্রায়। একটু পরেই স্নেহাকে আনা হবে এবং কাজিকে দিয়ে বিয়ে পরানো হবে।
বিয়ের আয়োজন টাও অর্নবদের বাড়িতেই করা হয়েছে। স্নেহার বাসা থেকে তেমন আয়োজন করবে না বলে অর্নবের বাবার অনুরোধে এবাড়িতেই আয়োজন হচ্ছে। বিয়ের আসরের ঠিক মাঝ বরাবর পাতলা ফিনফিনে একটা কাপড় দিয়ে আড়াআড়ি করে ঢেকে রাখা হয়েছে। স্নেহাকে আনা হলো কিছুক্ষনের মাঝে। পর্দার অন্যপাশে বসানো হলো তাকে। অর্নব অজান্তেই চোখ তুলে তাকালো মেয়েটির দিকে। পাতলা পর্দা ভেদ করে তার চোখ গিয়ে আটকালো মেয়েটির শুভ্রকায় মুখটির উপর। লাল শাড়ীতে আর ভারী মেকআপে দেখতে চমৎকার লাগছে। অর্নব আবারও একবার প্রশংসা করলো তার “-নাহ! মেয়ে দেখতে মা শা আল্লাহ। এবার ভালোই ভালোই মনটা এখানে আটকে গেলেই হলো।
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিয়েছে। অর্নব চোখ ফিরিয়ে নিচের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ পরেই কানে এসে বাজলো কাঙ্ক্ষিত বাক্যটি। কাজী সাহেব স্নেহাকে কবুল বলতে বলছেন। কিন্তু মেয়েটি বলছে না। হয়তো নার্ভাস লাগছে। এই এক বাক্যেই তো জীবনের পুরো মোড় ঘুরে যায়। এই জায়গায় এসে একটু নার্ভাস হওয়া স্বাভাবিক।
স্নেহা কবুল বলছে না বলে অর্নব আবারও তাকালো স্নেহার দিকে৷ তখনই স্নেহাও তাকালো এদিকে। পাতলা বেষ্টনী ভেদ করে দুটো দৃষ্টির সন্ধি হলো। পরপর দুজনেই দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো বৃতিঃস্পৃহায়।
এর মাঝেই শোনা গেলো স্নেহার রিনরিনে গলার স্বর। সে তিনবার কবুল বলে ফেলেছে। সবার আলহামদুলিল্লাহ ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এরপর পালা এলো অর্নের। কাজী সাহেব তাকে কবুল বলতে বলছেন। সে একটু সময় নিয়ে বলে ফেললো তিন কবুল। আবারও আলহামদুলিল্লাহ ধ্বনিতে মুখরিত হলো চারপাশ।
কাছেই দাড়িয়ে আছে হৃদয় মোহ। মোহর মোলায়েম হাতের আঙ্গুলের ভাজে হৃদয়ের খসখসে হাত গুঁজে রাখা। সে একটু নিচু হয়ে মোহর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“-চলো জান আমরাও কবুলটা বলে ফেলি।
মোহ তার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললো।
“-তুমি একাই বলো
হৃদয়ে অবাকের সুরে বলে।
“-কি বলো জান? আমি একা বললে হবে নাকি? বিয়ে করলে তো আমাদের দুজনকেই কবুল বলতে হবে।
“-আগে ঠিক করো বিয়েটা তুমি করতে চাও কিনা। নাকি এখনো মেয়েদের দেখলে ছুঁকছুঁকে ভাব চলে আসে?
হৃদয় আগের থেকেও দিগুন অবাক ভাব নিয়ে বললো।
“-ছিঃ জান! তুমি আমাকে এটা বলতে পারলে? আমি মেয়েদের দেখলে ছুঁকছুঁক করি? উল্টো মেয়েরা আমাকে দেখলে পাগল হয় সেইটা বলো। মেয়েরাই আমাকে দেখলে ছুঁকছুঁক করে।
মোহ এক ভ্রু উঁচু করে বলে।
“-ওহ আচ্ছা! তাহলে আমি তোমার পেছনে ঘুরেছিলাম বুঝি?
হৃদয় দাত কেলিয়ে হেসে বলে।
“-হে হে। তোমার পেছনে তো আমিই ঘুরেছিলাম জান। তুমি আর অন্যসব মেয়ে এক হলো নাকি?
“-কেন আমার মাঝে আলাদা কি আছে।
“-আমি তোমাকে ভালোবাসি বেবি। অন্য কোন মেয়েকে আজ পর্যন্ত ভালোবাসতে পারিনি। সেখানে তোমাকে মাত্র কয়েকদিনেই মন দিয়ে বসেছি। তুমি তো স্পেশালই আমার কাছে।
“-বিয়ের পর যদি শুনি তোমার কাছে অন্য মেয়েদেরও স্পেশাল লাগে তখন?
হৃদয় চোখদুটো মার্বেল আকারের করে বলে।
“-আসতাগফিরুল্লাহ! কসম লাগে জান তোমারে ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে ভুলেও তাকাবো না। অন্য কারো দিকে তাকালে চোখ উপ্রে ফেইলো তুমি। হ্যাঁ যদি তুমি চাও ঘরে সতিন আসুক তাহলে একটার ব্যাবস্থা করতে পারি।
মোহ বুঝলো হৃদয়ের দুষ্টুমিটুকু। সে হৃদয়ের কলার চেপে ধরে শাসানোর স্বরে বললো।
“-মেরে ফেলবো একদম। আমি ছাড়া অন্য মেয়েদের দিকে তাকালেই খুন করবো।
হৃদয় ঠোঁট কামড়ে হাসে। ফিসফিস করে বলে।
“-আমি তো আগে থেকেই তোমার প্রেমে খুন হয়ে আছি জান।
মোহ হেসে ফেলে। কলারটা ছেড়ে দাঁড়ায়। হৃদয় তার কাধ পেরিয়ে বাহুতে হাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে তাকে।
পাশে থেকে একধ্যানে কেউ একজন অবলোকন করে তাদের। এরকম খুনসুটিপূর্ণ মূহুর্তে হৃদয় মোহকে একসাথে দেখে ভালোও লগে আবার একটু খারাপও লাগে। হাজার হোক সে অন্যকারো কোন একসময় তার জন্য প্রিয়ার মন কেমন করতো তো। এইটুকু খারাপ লাগা স্বাভাবিক।
প্রিয়া ওদের থেকে চোখ ঘুরিয়ে ডানপাশে তাকায়। অন্য একজোড়া চোখ তার উপর নিবিষ্ট দেখে আতকে উঠে সে। চোখ নামিয়ে ফেলে তত্র। আর ভাল্লাগে না। এই ছেলে এমনভাবে তাকায়, প্রিয়ার বুক ছলকে দিতে তার ওই চাহনি টুকুই যথেষ্ট।
প্রিয়ার ষষ্ঠইন্দ্রিয় বলছে অন্ত এখনো তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে চোরাচোখে আবার একটু তাকায় অন্তর দিকে। আবারও সেই চোখাচোখি। তবে এবার প্রিয়া আর চোখ নামালো না। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। প্রিয়াও দেখবে এই অন্ধের বাচ্চা কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে তার দিকে। এমনিতেও প্রিয়ার বুক কাঁপছে অন্তর চাহনিতে তবুও সে টললো না। চোখ বাঁকিয়ে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ অন্ত করে বসলো এক অপ্রীতিকর কান্ড। বোকা-সোকা ছেলেটা চশমার ভেতর থেকেই চোখ টিপলো। প্রিয়া হোঁচট খায়। বিষম খাওয়ার জোগাড় হয়। এদিকে অন্ত চোখ টিপে ঠোঁট কামড়ে হেসে প্রস্থান নেয় সেখান থেকে।
প্রিয়া হা করে তাকিয়ে থেকে দেখে তার প্রস্থান। এ আবার কোন অন্ত? অন্ত মেয়েদের দেখে চোখও মারতে পারে? আল্লাহ! প্রিয়া এতদিন কোথায় ছিলো? এই অন্ত কোথায় ছিলো? ভোলাভালা অন্ত কোথায় হারিয়ে গেলো?
একটা মানুষের এতটা পরিবর্তন কি করে সম্ভব ভেবে ভেবেই আশ্চর্য হচ্ছে প্রিয়া।
“-চল আমরা আবারও বিয়ে করি”
প্রার্থর এহেন ছেলেমানুষী কথায় সরু চোখে তার দিকে তাকালো পুষ্প। অর্নবের বিয়ে দেখে এখন কি তারও ভীমরতি হলো নাকি? পুষ্প বাকা চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।
“-বিয়ে মানুষের কয়বার হয়?
প্রার্থর সোজা কথা
“-যতবার তারা বিয়ে করতে চায়।
“-আর আপনাকে কে বললো এমন আজগুবি কথা?
“-কে বলবে? আমিই বললাম। চল আমরা আবার বিয়ে করি। প্রথমবার বিয়ে করে কোন ফিল পাইনি। যেদিন বিয়ে সেদিন বাসর করতে না পারলে বিয়ে বিয়ে ফিল পাওয়া যায় নাকি?
প্রার্থর লাগামহীন কথায় বিরক্ত হয় পুষ্প। নাক মুখ কুচকে বলে।
“-ছিঃ! কিসব কথা! মানুষ বাসরের জন্যই শুধু বিয়ে করে নাকি?
প্রার্থ মুখে চ সূচক শব্দ করে বলে।
“-এতকথা বাদ। আমার আবারও বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। আমি আবারও বিয়ে করবো। তাতে তুই রাজি থাক বা না থাক সেটা তোর ব্যাপার।
পুষ্প ভ্রু উচিয়ে বলে।
“-আচ্ছা? আমি রাজি না থাকলে বিয়েটা করবেন কাকে?
প্রার্থ ভাবলেশহীন বললো।
“-তোর রাজি হওয়া নিয়ে কি এসে যায়? যেখানে আমার নাম থাকবে সেখানে অটোমেটিক তোর নাম চলে আসবে। তুই না চাইলেও আসবে। আমি জোর করে হলেও আনবো।
“-হয়েছে। বুড়ো বয়সে দুবার বিয়ে করার স্বপ্ন বাদ দেন। দুদিন পর বাবা হচ্ছেন। এ বয়সে এসে বিয়ের কথা মানায় না।
প্রার্থ আরো কিছু বলতে নেয় কিন্তু পুষ্প বলতে দেয় না। স্বচ্ছ তর্জনী দিয়ে চেপে ধরে প্রার্থর নরম ঠোঁট। দুই ভ্রু উঁচু করে বলে।
“-চুপপ! আর একটাও বাজে কথা না। যান ওদিকে আপনার বন্ধু ডাকছে আপনাকে। আমি দেখে আসি প্রান্ত, প্রিয়া কোথায়। অন্তটাকেও দেখছি না।
প্রার্থ প্রফুল্ল স্বরে মোহগ্রস্ত হয়ে বলে।
“-এভাবে শাসন করলে যে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় বউ। তখন কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না বউকে ছেড়ে।
পুষ্প লজ্জা পায়। চোখ মুখ খিঁচে বলে।
“-উফফ! আবার বাজে কথা। যান তো এখান থেকে। আমি গেলাম।
কোনরকমে বলেই হাটা ধরে পুষ্প। প্রার্থ পেছন থেকে সাবধান বানী ছুঁড়ে দেয়।
“-সাবধানে। বেশি দূরে যাবি না।
ওত কথা শোনার সময় নেই পুষ্পর। হনহন গতিতে ছুটে চললো স্টেজের বিপরীত দিকে।
বিয়ে শেষ। বিয়ের যাবতীয় আনুষাঙ্গিক কাজও শেষ আজকের মতো। দূর দূরান্ত থেকে আগত মেহমানরা সব চলে যাচ্ছে একে একে। স্বল্প আত্মীয়ে ভরপুর বাড়ি নিমিষেই খালি হয়ে যাচ্ছে। বিয়ের কাজ যেহেতু শেষ তবে থেকে আর কি লাভ। এবার চলে যাওয়াই উত্তম। কেউ কেউ আবার রয়ে গেলো অর্নবদের বাসাতেই।
অর্নবকেও মাত্র পাঠানো হলো তার রুমে। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়দের বিদায় পালা চুকিয়েই সে ঘরে ঢুকলো। তবে ঘরে ঢুকার আগে শ্যালীকাদের ভালো বকশিসও দিতে হয়েছে বটে। বাসর ঘরে ঢোকার আগে নাকি শালিদের ভেতরে ঢোকার টাকা দিতে হয়। এটা নাকি তাদের ন্যায্য অধিকার। অর্নব আশ্চর্য হয়। বাসর রাত ওর। বিয়ে করেছে ও। বউটাও ওর। তাহলে শালিকাদের আবার কিসের ন্যায্য মূল্য? তবুও তর্কে যায়নি সে। বাধ্যের ন্যায় টাকা বের করে দিয়ে দিয়েছে। টাকাগুলো দেওয়ার সময় রকি ছাড়া আর কোন বন্ধুকে পাশে পায়নি ছেলেটা। সবগুলা বউয়ের ন্যাওটা। শালা হৃদয়টাও এলো না। বলে কিনা সে মেয়েদের কাছে ঘেঁসে না।
এর থেকেও বড় আশ্চর্যের কিছু আছে? আরেক শালা কার্তিক। ব্যাটা বিয়ের পর থেকেই যেখানেই যায় বউকে বগল দাবা করে নিয়ে যায়। আর সবচেয়ে বড় বউ পাগল তো ওই শালা প্রার্থ। যখন বিয়ে করলো তখন কি জেদ কি ঘৃণা তার। এক মুহুর্ত সহ্য হয় না প্রিন্সেস কে। আর এখন দেখো, প্রিন্সেস যেখানেই যায় সেখানেই তার পিছু পিছু বউ, বউ করতে করতে মুখে ফ্যানা তুলে দেয়। আর যে তার বউকে ভালোবাসার সুযোগ করে দিলো তার কোন দাম নাই। ছ্যাহ! এই নাকি জীবন। ‘বিয়ে’ কি একটা শব্দ অথচ দেখো কতগুলা মানুষরে কেমন চোখের পলকে মীর জাফর বানায় দিলো।
এসব ভেবে ভেবে দরজার সম্মুখ হতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো ছেলেটা। দরজা আটকে ভেতরে ঢুকে দেখে স্নেহা বউরুপে পুতুলের ন্যায় বসে আছে বিছানায়। ঘরটাও কি সুন্দর ফুলে ফুলে সাজানো। পরিস্থিতি বুঝেই গলা শুকিয়ে আসে অর্নবের। ইশশরে আজ তো তাদের বাসর রাত। এখন কি বাসর করতে হবে নাকি? ছিঃ! এখনই ওসব কিছু করা যাবে না। আগে সম্পর্ক স্বাভাবিক হোক। পরে বাকিসব নিয়ে ভাবা যাবে।
অর্নব ভীতসন্ত্রস্ত মন নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো তবে স্নেহার কাছে গেলো না। একটু কেশে কাবার্ড থেকে নতুন টিশার্ট আর ট্রাউজার বের করে নিয়ে গেলো ওয়াসরুমে। এই শেরওয়ানি পড়ে কিছুতেই ঘুমানো যাবে না রাতে।
কিছুক্ষনের মাথায় জামা কাপড় বদলে বেড়িয়ে আসে অর্নব। তখনো স্নেহা একইভাবে বিছানায় বসে। অর্নব কি বলবে বুঝতে পারছে না। পুরু ঠোঁট ভেজালো জিহ্বা দিয়ে। মুখ ফুটে বলেই ফেললো।
“-আপনি বসে কেন? শুয়ে পড়ুন। নিশ্চয়ই অনেক ক্লান্ত। আমার একটু দরকারি কাজ আছে ল্যাপটপে আমি কাজটা সেরেই আসছি।
কোনরকমে কথাগুলো বলে চোরের মতো গিয়ে টেবিলের সামনে বসলো। ল্যাপটপ বের করে আবোল তাবোল টিপে চললো। হঠাৎই শোনা গেলো মেয়েলি রিনরিনে কন্ঠস্বর।
“-শুনুন!
অর্নব ফট করে তাকায় স্নেহার দিকে। প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই স্নেহা বলে উঠে।
“-শাড়ী পড়ে ঘুমানোর অভ্যেস নেই। এটা অনেক ভারী। চেঞ্জ করবো আমি। আমার লাগেজটা….
আধা বলা বাক্যটা আর পূরন করতে হলো না তাকে। অর্নব বুঝে নিলো পরেরটুকু। কিছু একটা মনে করে বললো।
“-কাবার্ড থেকে আমার জামা নেওয়ার সময় দেখলাম আপনার জামা কাপড়ও রাখা। আম্মু বোধহয় আপনার জন্যই রেখেছে ওগুলো। চেঞ্জ করে ঘুমিয়ে পড়ুন।
স্নেহা তাই করলো। কাবার্ড খুলে দেখে তার জামা কাপড়ও রাখা অর্নবের জামার পাশে। মেয়েটা লাজুক হেসে নিজের জামা নিয়ে চলে গেলো চেঞ্জ করতে।
একটা কমলা রংয়ের চুড়িদার পড়ে বেড়িয়ে আসে সে। মেকাপের আস্তরনটাও তুলে ফেলে। এবার খুব হালকা লাগছে। সে আর অর্নবের আসার অপেক্ষা করলো না। চুপচাপ গিয়ে খাটের একপাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো। অর্নব চোরা চোখে একবার দেখে নিলো তাকে। নাহ! সুন্দরই লাগছে মেয়েটাকে। তার সাথে কমলা রংটা ফুটে উঠেছে একদম। মেকআপ হীন ত্বকে আকর্ষণীয় লাগছে তাকে দেখতে।
হুট করে নিজের ভাবনার উপর নিজেরই লজ্জা লাগলো অর্নবের। কষিয়ে দুটো থাপ্পড় মারলো নিজের দুই গালে। মনে মনে শাসালো নিজেকে ” ছিঃ অর্নব! একটা মেয়েকে এভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অবলোকন করছিস। লজ্জা লাগে না?
আবার ভাবলো নিজের বউ-ই তো। অন্য মেয়ের দিকে তো আর তাকায়নি।
কিছুক্ষণ পর অর্নব উঠে গেলো বসা থেকে। ভালো লাগছে না। চোখ ল্যাপটপে কম স্নেহার দিকে বেশি যাচ্ছে। কি আশ্চর্য! মাত্র বিয়ে হলো তাদের তাতেই এই অবস্থা হলো ছেলেটার!
সে রুমের আলোটা নিভিয়ে আস্তে করে গিয়ে স্নেহার অপরপাশে শুয়ে পড়ে। বিশাল খাটের দুই প্রান্তে দুজন। মাঝে দূরত্ব অনেক। স্নেহা বোধহয় এতক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু অর্নবের চোখে কিছুতেই ঘুম আসছে না। প্রথমবার কোন নারীর সাথে এক ঘরে এক বিছানায় ঘুমাচ্ছে তাও এত কাছে। অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে আসে শরীর। বেচঈন মন নিয়ে একবার এপাশ ঘুরছে তো আবার অন্যপাশে ঘুরছে। মানে শান্তি পাচ্ছে না কোনভাবেই।
হুট করে আবার সেই মেয়েলি কন্ঠ কানে এলো।
“-শুনুন।
অর্নব চমকে চায় তার পাশে। স্নেহাকে জেগে থাকতে দেখে শুধায়।
“-আপনি ঘুমান নি?
স্নেহা সহজ সরল ভঙ্গিতে উত্তর দিলো।
“-আপনি অনেক নড়াচড়া করছেন। ঘুম আসছে না।
অর্নব ইতস্ত বোধ করে। দুঃখিত হয়ে বলে।
“-স্যরি! আসলে প্রথমবার কারো সাথে বেড শেয়ার করা তো এজন্য অস্বস্তি হচ্ছে। ঘুম আসছে না।
স্নেহা আবারও সরলভাবে বললো।
“-এখন থেকে তো রজই বেড শেয়ার করতে হবে।
“-তখন অভ্যেস হয়ে যাবে সমস্যা নেই।
স্নেহা একটু হেসে বললো।
“-আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
অর্নব কৌতুহ নিয়ে বলে।
“-হ্যাঁ করুন।
“-আগে আপনি ‘আপনি’ বলা বন্ধ করুন। তুমি বলুন। আমি আপনার থেকে ছোটই। আপনি শুনলে নিজেকে বুড়ী লাগে।
অর্নব হেসে বললো।
“-আচ্ছা তাই হবে।
“-আচ্ছা তাহলে বলি।
“-হু।
স্নেহা একদম ডিরেক্ট প্রশ্ন করে বসলো।
“- আপনি কাউকে ভালোবাসেন বা ভালোবাসতেন?
অর্নব হোঁচট খায় তার এমন কথায়। এসময় এমন প্রশ্নটা সে কস্মিনকালেও আশা করেনি। সে নিজেকে সংযত রেখে বললো।
“-হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করলেন যে?
“-আসলে আপনাকে আমি খেয়াল করেছি খুব ভালো ভাবে। আমাকে বিয়ে করার পিছনে আপনার কিছু সূক্ষ্ম কারন আছে সেটা তো আপনি বলেছেন জানি। কিন্তু সেই কারনটা কি অন্য কাউকে ভালোবাসা নিয়ে?
অর্নব এবার আর হোঁচট খায় না। বরং অবাক হয় মেয়েটার বুদ্ধিতে। সে যতটা বোকা ভেবেছিলো ততটা বোধহয় না মেয়েটা। নয়তো তার মনের খবর কি করে তার অব্দি পৌছাবে?
স্নেহা ভাবে অর্নব বোধহয় উত্তর দিবে না। হয়তো তার প্রশ্নটাকে বাজেভাবে দেখেছে। এসব ভেবে একটু ভয় পেলো মেয়েটা। তবে তার ভয়কে ভেঙে দিয়ে অর্নব হাসিমুখে নির্দিধায় সব স্বীকার করলো।
“-হ্যাঁ ভালোবাসতাম বলতে পারো। তবে এখন বাসি না।
মেয়েটার মনে জানার আগ্রহ জাগে। প্রশ্ন করে
“-কেন?
“-অন্যের ভালোবাসায় আমি কেন নজর দিবো?
“-তার বিয়ে হয়ে গেছে?
“-হুম।
“-আপনাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেললো।
অর্নব শব্দ করে হাসে। বলে।
“-সে জানতো না আমি তাকে ভালোবাসতাম। তার আগেই বিয়ে হয়ে যায়।
“-আপনি কখনো বলেননি তাকে?
“-সুযোগ হয়ে উঠেনি।
“-এখনো মনে রেখেছেন তাকে?
“-উহুম! তার জন্য এখন শুধুই সম্মান আছে মনে। এর বেশি নয়।
স্নেহা তবুও চিন্তিত হয়ে শুধায়।
“-আপনার খুব কষ্ট হয় তার জন্য তাইনা ? চিন্তা করবেন না। আমি আছি আপনার পাশে।
অর্নবের হাসি প্রকট হয়। বলে স্ফুর্তচিত্তে
“-না কষ্ট হয় না। কিন্তু তুমি আমাকে একটা কথা বলো। তুমি আগে থেকেই কাউকে ভালোবাসো নাতো? নিজের স্বামীর মুখেই অন্য কারো জন্য ভালোবাসার কথা শুনছো। খারাপ লাগছে না?
স্নেহা চোখ নামিয়ে নেয়। সরল মনে সত্যি বলে ফেলে।
“-হুম খারাপ তো লাগছে। কিন্তু আপনি সব সত্যি বলেছেন বলে খুশি লাগলো। আপনি অনেক ভালো।
মেয়েটা কি আসলেই এত সহজ সরল? একটু আগেও কত চালাক ভেবেছিলো অর্নব কিন্তু কথাগুলো শুনে মনে হলো বাচ্চা মেয়ে আরেকটা বাচ্চা ছেলেকে শান্তনা দিচ্ছে। অর্নব হাসিমুখেই বললো।
“-আচ্ছা? সেক্ষেত্রে তো তুমিও অনেক ভালো।
মেয়েটা চুপ হয়ে যায়। বোধহয় লজ্জা পেয়েছে। অর্নব আবার বলে।
“-তুমি বললাম বলে রাগ করো না আবার। তুমি এমনিতেও আমার অনেক ছোট। আপনিতে পুষায় না আমার।
“-না না সমস্যা নেই। আপনি তুমিই বলেন। আমার ভালো লাগে।
আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩৩
“-ঠিকাছে। এবার তাহলে ঘুমাও। সকালে হয়তো জলদি উঠতে হবে।
স্নেহা মাথা কাত করে সম্মতি জানায়। চোখ বুজে নেয় ঘুমানোর জন্য। অন্ধকারের মাঝেই স্নেহার স্নেহময়ী মুখটাতে একবার চোখ ঘুরিয়ে আনে অর্নব। ঠোঁটের কোনে আবারও হাসি ফুটে উঠে। মনে মনে আওড়ায় ” স্নেহময়ী”