আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৪১

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৪১
তানহা ইসলাম বৈশাখী

” আমার বাচ্চা, আমার বাচ্চা কই? আমার বাচ্চাকে এনে দিন? ও এখানে ছিলো, আমার পেটের ভেতর। ও এখনো নড়তে শেখেনি। আমি ওকে অনুভব করিনি। ও কোথায়? ও এখানে ছিলো তো। ”
নিজের পেট দেখিয়ে বাচ্চার জন্য আহাজারি করে যাচ্ছে পুষ্প। কাঁন্নার হিড়িকে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তবুও বলেই যাচ্ছে। সদ্য সন্তান খোয়ানোর বেদনায় বিষিয়ে উঠেছে চারপাশ। যে বাচ্চা এখনো অব্দি চোখে দেখেনি, ছুঁয়ে দেখেনি, অনুভব পর্যন্ত করেনি তার জন্য মায়ের কি কাঁন্না। সে মায়ের কাঁন্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো কেবিন।
পুষ্প হাত পা ছোড়াছুড়ি করে আর্তনাত করছে। তা দেখে প্রার্থ আরেকটু এগিয়ে আসে। দুপাশে হাত দিয়ে ওর বাহু চেপে ধরে বেডের সাথে। প্রার্থর চোখমুখ কঠোর। সে জানে এসময় তাকে পাথর হতে হবে আবেগে ভাসলে চলবে না। ইস্পাতের ন্যায় কঠোর দৃঢ় কন্ঠে পুষ্পর মুখের উপর ঝুকে তাকে ডাকলো,

“পুষ্প, পুষ্প কাম ডাউন। ডোন্ট প্যানিক প্লিজ। পুষ্প।
পুষ্প শুনলো না। তখনও হাত পা ছোড়াছুড়ি করে আহাজারি করছে। প্রার্থ খানিক ধমকে উঠলো,
” ফুল, এদিকে তাকা। লুক অ্যাট মি। ফুল!”
প্রার্থর ধমকে খানিক গুটিয়ে আসে সে। ফোলা ফোলা চোখে জল সমেত তাকায় প্রার্থর মুখে। প্রার্থ কঠোর চোখদুটো পাথর বানিয়ে তাকায় পুষ্পর চোখে। দৃঢ় গলায় বলে,
“-বাচ্চা চাই?
পুষ্প কান্না আটকে উপর নিচ মাথা নাড়ায়। মানে চায়। প্রার্থ এবার কন্ঠ নরম করলো। এক হাত পুষ্পর গালে রেখে মোহনীর কন্ঠে বললো,
“-তুই সুস্থ হ। আমাদের সামনে আস্ত একটা জীবন পড়ে আছে। এত দ্রুত আমরা কেন হাল ছাড়বো? তুই সুস্থ হবি। আল্লাহ চাইলে আমরা একসাথে অনেক বছর বাচঁবো। আমরা বাবা- মা-ও হবো। তার জন্য তো তোকে সুস্থ হতে হবে। প্লিজ, ডোন্ট স্ট্রেস অন ইয়্যুরসেল্ফ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পুষ্প একটু শান্ত হলো। তবে অশ্রুঝরা বন্ধ হলো না। সেগুলো পড়তেই থাকলো তার ধারায়। বাকি সকলে নানা কথা বলে তাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো।
এমন সময় হুট করে কেবিন ছেড়ে দৌঁড়ে বেড়িয়ে গেলো স্নেহা। কারোর চোখে এলো না তা। সবাই পুষ্পকে বোঝাতে ব্যাস্ত। তবে চোখ এড়ালো না অর্নবের। এভাবে কেবিন থেকে বেড়িয়ে যেতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো। সেও পিছু পিছু বেড়িয়ে এলো বাইরে।
এসেই দেখে স্নেহা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুহাতে মুখ চেপে আছে যাতে কান্নার আওয়াজ বাইরে না যায়। অর্নব ঘাবড়ে যায়। দ্রুত স্নেহার কাছে গিয়ে তার দুই বাহু আঁকড়ে বলে,
“স্নেহা! কি হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেন?

অর্নবকে দেখে স্নেহার কি হলো কে জানে, একেবারে ঝাপ দিয়ে জরিয়ে ধরলো ওকে। অর্নব থ হয়ে যায়। হিম হয়ে আসে শরীর। হৃৎপিণ্ডের গতি কিছু সময়ের জন্য খুব ধীরে হয়ে যায়। হঠাৎই আবার তা দ্রুত গতিতে ছুটতে শুরু করে। এ কেমন অনুভুতি। মেয়েদের ছোঁয়ায় কি এমন হয়? নাকি শুধু স্নেহা ছোঁয়ার কারণে এমন হলো? কপালে বিন্দুবিন্দু ঘামও জমে গেছে ছেলেটার। শিরদাঁড়া বেয়ে গড়িয়ে পরে শীতল স্রোত। দুটো শুষ্ক ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। এবার কি হাতটা রাখবে স্নেহার উপর? এটা নিয়েও দ্বিধায় ভুগলো। পরপর ভাবলো, -বিয়ে করা বউ। এইটুকু ছোঁয়ার অধিকার তার অবশ্যই আছে। অবশেষে এক হাত রাখলো স্নেহার পিঠে অন্য হাত তার মাথায়। চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত স্বরে ডাকলো,
” স্নেহা, কাম ডাউন। কি হয়েছে বলো। কেন কাঁদছো? খারাপ লাগছে? বাসায় যাবে? ”
অর্নবের আহ্লাদি কন্ঠে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো তাকে। কান্না জরানো গলায় বললো,
“আমার কষ্ট হচ্ছে অর্নব। আপুর বাচ্চাটা… আপুর অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার সাথে এমন কিছু হলে আমি মরে যাবো অর্নব। ”

অর্নব অবাক হয়। এই মেয়ে এসব কি ভাবছে? ধরলো না ছুলো না সোজা বাচ্চার কথায় চলে গেলো? তাও আবার এমন নেগেটিভ ভাবনায়!
অর্নব শান্ত করার চেষ্টা করলো তাকে। মেয়েটা অনেক আবেগি। সে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“-শান্ত হও স্নেহা। তুমি এত দূরের বিষয় নিয়ে কেন ভাবছো? সবার সাথে কি একইরকম হয় নাকি? প্রিন্সেস…মানে পুষ্পর ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে। তোমার ভাগ্যও এমন হবে এটা তো কোন কথা না। তুমি…
অর্নব আর কিছু বলতে না দিয়ে স্নেহা তার বুক থেকেই বললো,
“-আপনি বুঝতে পারছেন না। আমার পুষ্প আপুর জন্য কষ্ট হচ্ছে। উনার জায়গায় নিজেকে দাড় করিয়েছিলাম এক মিনিটের জন্য। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। বিশ্বাস করুন আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমি আপুর মতো এত স্ট্রং নই। আপু অনেক স্ট্রং। আমি হলে…

“শশশশ! আর ভাবতে হবে না। জাস্ট কাম ডাউন। কিছু হবে না। তোমরা এভাবে কেঁদো না নাহলে পুষ্প আরো ভেঙে পরবে। বি স্ট্রং স্নেহা। এবার উঠো। আমার শার্ট ভিজে যাচ্ছে।
স্নেহা ফট করে উঠে পরে। এতক্ষণ যে লজ্জা শরম খুয়িয়ে অর্নবের বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে ছিলো সেটা যেন টেরই পায়নি সে। অর্নবের কথাটায় বেশ লজ্জা পেলো। আসলেই অর্নবের বুকের কাছের শার্টের কিছু অংশ ভিজে গেছে। স্নেহা ভেজা ফোলা চোখদুটো মুছে নিলো চটপট। নাক টেনে মাথা নিচু করে বললো,
” স্যরি, আমি আসলে… স..স্যরি আমি বুঝতে পারিনি আপনার শার্টটা…
অর্নব ধমকে উঠলো,
“-আশ্চর্য! জামাইকে কে এতবার স্যরি বলে?
পরপর আবার নরম করলো গলা,

“স্যরি বলতে হবে না। শার্টের কথা এমনি বলেছি। তুমি আরো ভিজিও সমস্যা নেই। এবার কান্না থামাও। ভেতরে চলো। ওখানে প্রার্থ কি অবস্থায় আছে দেখতে হবে।
অর্নব হাত বাড়িয়ে স্নেহার সিক্ত চোখ মুছে দিলো। স্নেহার হাতটা আলতো করে নিজের হাতে পুরে ‘কাম’ বলে নিয়ে গেলো কেবিনের ভেতরে। স্নেহা তাকিয়ে দেখলো দায়িত্বশীল একজন ছেলেকে। যে সবক্ষেত্রেই নিজপর দায়িত্ব পালন করে। কোন ক্ষেত্রেই পিছুপা হয় না। মানুষটার মাঝে সব ধরনের গুন আছে। এই মানুষটা ওকে ভালোবাসলে জীবনে আর কিছুর দরকার হবে না তার।

রাত বাজে ১০ টা। কেউ এখনো হসপিটাল থেকে ফেরেনি। প্রার্থ বন্ধুদের ধমকে টমকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো। এবার প্রার্থদের বাড়ির সবাই রয়েছে। তাদেরও বাড়ি পাঠানোর চেষ্টা করছে প্রার্থ। কিন্তু কেউ যেতে রাজি নয়। প্রার্থ তবুও সবাইকে বোঝালো। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ হয়েছে তার। পুষ্পকে দুদিন হসপিটালেই রাখতে হবে। দুদিনের মধ্যে যদি দূর্বলতা কাটে তবে তাৎক্ষনিক ভাবে অপারেশন করবে ডাক্তাররা। তার আগে বাসায় নেওয়া যাবে না। এখন রাতেও বেশিলোককে থাকতে বারন করেছে। প্রার্থও চায় পুষ্পর কাছে শুধু ও থাকুক। কিন্তু কেউ যেতে চাইছে না।
অবশেষে প্রত্যয় এহসান রাজি হলেন বাসায় ফিরতে। পুষ্প প্রার্থ একটু একসাথে থাকুক তাতেই ভালো হবে। তিনিও রাজি করালেন সবাইকে বাসায় ফিরতে। কিন্তু নছরবান্দা হয়ে রইলো প্রিয়া। সে কিছুতেই বুবুকে রেখে যাবে না। অন্তর ভীষন রাগ হলো প্রিয়ার উপর। মেয়েটা কি বাচ্চা? ওরা স্বামী স্ত্রী একসাথে থাকবে এটাও কি বুঝে না? শেষমেষ অন্ত ধমকে উঠলো ওকে,

“প্রিয়া, সবাই বাসায় যেতে বলছে না তোকে? বাসায় চল। আপুর জন্য ভাইয়াই যথেষ্ট। ভাইয়াকে থাকতে দে এখানে। ”
ছেলেটার সাহস দিনকে দিন বাড়ছে তো বাড়ছেই কমার কোনো নাম নেই। প্রিয়া চুপ হয়ে যায় ওর ধমকে। এটা অবশ্য অবিশ্বাস্যকর একটা ঘটনা। অন্তর ধমক খেয়ে প্রিয়া চুপ থাকবে এটা আবার হয় নাকি! তবুও আজ চুপ রইলো। কোনা চোখে একবার তাকালো অন্তর দিকে। অন্ত প্রার্থকে বললো,
“ভাই আমি নিয়ে যাচ্ছি ওকে। তুমি থাকো এখানে। গাড়িটা কি নিয়ে যাবো?”
প্রার্থ শীতল স্বরে বললো,
“হুম নিয়ে যা। সকালে আসলে নিয়ে আসিস। নয়তো কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিস।
“সকালে আমিই আসবো ভাই”
” হুম। ”

শেষ মুহূর্তে প্রিয়া আবার বায়না ধরে,
“আমি একটু থাকিনা বুবুর কাছে।”
প্রার্থ কিছু বলতে চাইলো তার আগে আবার অন্ত ধমক দিলো,
“বাড়ি যেতে বলেছি আমি তোকে। চল। গাড়িতে যা আমি আসছি। আম্মু, তোমার গাড়িতে তাহলে বড়মা, আঙ্কেল আন্টিকে নিয়ে যাও। আমি প্রিয়াকে নিয়ে প্রার্থ ভাইয়ের গাড়িতে যাচ্ছি। প্রিয়া যা।
প্রিয়া এবার আর কথা বাড়ালো না। হাঁটা দিলো সামনে। তখনই ভেসে এলো অহনা বেগমের রুষ্ট কন্ঠস্বর,
“আজকাল মনেহচ্ছে তোমরা একটু বেশিই বড় হয়ে গেছো। প্রিয়া তোমার কথা চুপচাপ শুনছে। তুমি স্বল্পভাষী ছেলেও বেশি বেশি কথা বলতে শিখেছো। এই উন্নতিটা কি করে হলো? ”
প্রিয়া উনার কথা শুনেই থেমে যায়। তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলেন। অন্তর চোখমুখে ভয়ভীতি নেই। সে ঝরঝরে গলায় বললো,

” আম্মু, সময়ের সাথে সাথে তো সবাই-ই বড় হয়। আমিও কি আর ছোট থাকছি? বড় তো হচ্ছি। বড় হলে মানুষ একটু চেঞ্জ হয় স্বাভাবিক।
“-কিন্তু তোমার চেঞ্জেস তো আমার কাছে স্বাভাবিক লাগছে না অন্ত। তুমি…
“-কাকিমা এখন নয় প্লিজ। বাড়িতে যাও। ছেলে বড় হচ্ছে তাকে তার মতো লাইফ লীড করতে দাও। আই হোপ হি উইল নট বি আ ডিজাপয়েন্টমেন্ট।
প্রার্থর কথায় তিনি মাঝপথেই থেমে গেলেন। প্রার্থর দিকে তাকাতেই ও চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করে যেতে বললো অহনা বেগমকে। তিনি কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন। অন্তও বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
সবার যাওয়ার পর প্রার্থ কেবিনে ঢুকলো। পুষ্প শুয়ে আছে। গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে আছে। যে ওষুধ দিয়েছিলো সে ওষুধের প্রভাবে এখন ঘুমিয়ে আছে। অতিরিক্ত হাইপার হওয়ার ফলে ব্রেনে চাপ পড়ছিলো। ব্যথা করছিলো মাথা। ডাক্তার তাই দ্রুত ওষুধ দিয়ে দেয়। এসময় হাইপার হওয়া একেবারেই নিষেধ।

প্রার্থ গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো। বেডের সামনে একটা টুল নিয়ে বসে পড়লো। বিছানায় পড়ে থাকা হাতটা নিজের দু হাতের মুঠোয় পুরে নেয়। নেতিয়ে থাকা সেই হাতে ছোট ছোট চুমু দেয়। নরম হাতটা নিজের খসখসে গালের সাথে মিশিয়ে রাখে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পুষ্পর পুষ্প-রঞ্জিত মুখ পানে। মুখটা কদিনেই শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচও কালো দাগের দখলে। তবুও কিজে মায়া মুখটায়!
এত মায়া কেন এই মুখে? এত প্রশান্তি কেন? আগে তো পুষ্পকে দেখলে বুকের ভেতরটা ঠান্ডা হয়নি। এখন কেন এই মুখটাই তার প্রশান্তির কারণ? ভালোবাসা এত সুন্দর!

সে একহাত বাড়িয়ে পুষ্পর সুতনু কোমল গালটা ছুঁয়ে দেয়। টুল থেকে উঠে মুখের উপর ঝুকে পরে পুষ্পর। রিক্ত কপালে দীর্ঘ চুম্বন এঁকে দেয়। এরপর পুরো মুখেই ছোট ছোট চুমু দিয়ে ভরিয়ে দেয়৷ শেষে ঠোঁটটা ঠেকিয়ে রাখে পুষ্পর নরম গালের মাঝে। ভাবে -যদি এমন হয় এই মেয়েটা এই পৃথিবীতে নেই। পৃথিবীর কোথাও তাকে পাওয়া যাবে না। তখন প্রার্থ কি করবে? এইযে এই মুখটা এত প্রশান্তি দিচ্ছে তখন তার বুকটা এমন শীতল করবে কে? বুকে ব্যথা হবে না? ব্যথায় সে মরে যাবে না?
আর ভাবে না সে। এটুকু ভেবেই চোখের কোনে এক বিন্দু জল জমে গেছে। আরও ভাবলে না আবার জলরাশি চোখ উপচে বেড়িয়ে আসে।

সে উঠে আসে। চোখ ফেরায় পুষ্পর পেটে। তখনই মোচড় দিয়ে উঠে বক্ষে। এখানে, এই পেটে কালও একটা নতুন প্রান ছিলো। আজ আর নেই। তাদের ধোকা দিয়ে সে চলে গেছে। প্রার্থ হাত রাখে চাদরের উপর সেই মেদহীন পেটে। তার হাত কাঁপছে। সাথে সাথে হাতটা উঠিয়ে নেয়। বসে পরে টুলে। পুষ্পর হাতটা আবারও খুব শক্ত করে ধরে রাখে।
আচানকই কেঁপে উঠে পুষ্প। পুরো শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে তার। দুঃস্বপ্ন দেখেছে বোধহয়। চোখ খুলে বড় বড় চোখে চেয়ে দেখে চারপাশ। হসপিটালের পরিবেশ দেখেই ভ্রু কুচকে যায়। উত্তেজিত হয়ে পরে মুহুর্তেই।
“-আমি এখানে কেন? কি হয়েছে আমার? আমি এখানে…প্রার্থ..!
প্রার্থ উঠে আসে। দুহাতে গাল আঁকড়ে ধরে শান্তনা দেয়,
“-ফুল, কিছু হয়নি। শান্ত হ। কাম ডাউন। আমার কথা শোন।
পুষ্প থামে। প্রার্থকে দেখে ভরসা পায়। কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে বলে,
“আমি এখানে কেন প্রার্থ ভাই?
প্রার্থ শুকনো ঢোক গেলে। ডাক্তার বলেছিলো এসময় ভুলে যাওয়ার সমস্যাটা বেশি দেখা দিবে এবং এটি সমসাময়িক। মানে সর্ট টাইম মেমোরি লস। কিছুক্ষনের মধ্যেই সব মনে পরে যাবে।
প্রার্থ বলে,

” কি মনে পড়ছে তোর? আমরা কেন এসেছি মনে নেই?
পুষ্প ভাবলো কিছুক্ষণ। মনে করার চেষ্টা করলো। কিছু একটা ভেবে হাত দিলো পেটে। নিজের পেটে হাত রেখেই ঠোঁট উল্টে দেয়। এখনই কেঁদে ফেলবে। প্রার্থ বুঝে ফেললো পুষ্পর মনে পরে গেছে । সে তাকে উচু করে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে। শান্ত করে তাকে,
“শশশ! চুপ, চুপ! কিছু হয়নি। আমি আছি না? চিন্তা করিস না। ব্রেনে চাপ পড়বে। ঘুমা প্লিজ।
পুষ্প শক্ত করে প্রার্থর পিঠ খামচে ধরেছে। শরীরের দূর্বলতার কারনে খুব জোরালো হচ্ছে না সে বাঁধন। সে ভেজা কন্ঠে প্রার্থর বুক হতে আবদার ছুঁড়ে,

“-এখানে আসুন না। আমাকে বুকে নিয়ে শুয়ে থাকুন। আমার ভালো লাগছে না। আপনি ধরুন আমাকে।
প্রার্থ চটজলদি উঠে পড়ে সিঙ্গেল বেডে। একজন থাকার বিছানায় নিজেকেও আটিয়ে নেয় সে। পুষ্পর ক্যানেলা লাগানো হাতটা সাবধানে রেখে তাকে ঘুরিয়ে নিজের বুকের ওমে জরিয়ে নেয়। মাথায় চুমু দিয়ে বলে,
” আমি এখানেই। এইযে জরিয়ে আছি তোকে। ঘুমা জান।
প্রার্থর শার্টের তিনটে বোতাম খোলা ছিলো। বুক অর্ধেকটা উদম হয়ে আছে। সেই উদম বুকে মুখ গুজে পরে রইলো পুষ্প। বিড়বিড় করে বললো,
” আমি বাচঁতে চাই প্রার্থ।
প্রার্থ আরেকটু শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ওকে। মেয়েটা একসময় ওকে প্রার্থ ভাই বলে একসময় সোজা প্রার্থ বলে। কথাটুকুতে বাচার আকাঙ্ক্ষা। প্রার্থর বুক পুড়ে যায় এমন কথায়। সে বললো,

“-বাঁচবি ফুল, ডাক্তার বলেছে অপারেশন ঠিকঠাক হলে তুই বাঁচবি। আল্লাহর দয়ায় অপারেশনটা যেন ঠিকঠাক হয়।
পুষ্প শুনলো কিনা কে জানে। ওষুধের প্রভাবে চোখ খুলতে পারছে না। বিড়বিড় করে ফের একবার বললো,
“আমি আপনার সাথে বাঁচতে চাই প্রার্থ। আমি আবার মা হতে চাই। আমি মা হওয়ার স্বাদ নিতে পারিনি পুরোপুরি। আমাকে যেতে দিয়েন না। আমি আপনাকে ছেড়ে যাবো না।
আবারও মোচড় দিয়ে উঠলো প্রার্থর ভেতরটা। ব্যথা অনুভব হলো বুকে। কি নিদারুন সেই ব্যথা। নিজেকে খুব করে শক্ত রাখলো সে। পুষ্পর চুলে হাত গলিয়ে বললো,

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৪০

“কোথাও যাবি না। আমি তোকে কেথাও যেতে দিবো না। তুই এখানে থাকবি। আমার বুকে। সারাজীবন তোকে এখানেই থাকতে হবে। মৃত্যু তোকে ছোঁয়ার আগে আমাকে ছুঁয়ে দিক।

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৪২