আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৫
তানহা ইসলাম বৈশাখী
সূর্য উঠে গেছে পূর্ব দিগন্তে। বেলা হয়েছে অনেকটাই। পূর্ব দিকের জানালার কাচ ভেদ করে সূর্যের কিরণ প্রবেশ করেছে কক্ষে। আলোর তীব্রতা প্রচুর। সেই আলোতে বন্ধ করে রাখা চোখও ঝলসে যাওয়ার জোগার। অতিরিক্ত রৌদ্রেরঝাঁজে টিকতে পারলো না পুষ্প। এপাশ ওপাশ নড়তে নড়তে চোখ মেলে চাইলো। আলো এসে সরাসরি পড়লো চোখের মনিতে। আলো থেকে বাচতে সাথে সাথে হাত এনে রাখলো চোখের সামনে। রোদের তাপ দেখে বোঝাই যাচ্ছে অনেকটা বেলা হয়ে গেছে।
তরিঘরি করে বিছানা থেকে উঠে বসলো সে। দেওয়ালে টাঙানো ঘরিটার দিকে তাকাতেই চোখ বর বড় হয়ে গেলো। নয়টা বাজতে আর ১০ মিনিট বাকি মাত্র। পুষ্প চটজলদি উঠে পড়লো। শরীরের শাড়ীটা যেন দুমড়েমুচড়ে গেছে। ভাজ হয়ে আছে জায়গায় জায়গায়।এবড়োখেবড়ো শাড়ীটাকে আবার ঠিকঠাক করে উস্কোখুস্কো চুলগুলোকে হাত খোপা করে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। বাহিরে ডাইনিংয়ের কাছে আসতেই দেখলো টেবিলে সব খাবার রাখা। সেখানে বসে আছে অহনা বেগম, আশরাফ চৌধুরী, প্রান্ত, প্রিয়া এবং পূর্নিমা বেগম।
পুষ্প গিয়ে টেবিলের সামনে দাড়ালো। ঘুম এতক্ষনে কেটে গেছে। পুষ্পকে দেখেই আশরাফ সাহেব বলে উঠলেন।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“-পুষ্প মা এসো। নাস্তা করো। তোমার শরীর কেমন আছে এখন?
পুষ্প নরম স্বরে বললো।
“-জি আঙ্কেল ঠিক আছি।
পরপর অহনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো।
“-আন্টি সব আপনি করেছেন? আমাকে একটু ডাকলেই তো হতো। জানিনা আজকে কি করে চোখ খুললো না।
এরপর প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো।
“-তুই উঠেছিস আমাকে কেন ডাকলি না?
অহনা বেগম বললেন।
“-আমি বারন করেছিলাম। ও বললো তোমার নাকি রাতে জ্বর এসেছিলো অনেক। তাই ভাবলাম আর না ডাকি। রুবি, আমি মিলেই করে নিয়েছি। কিন্তু তুমি প্রিয়ার রুমে কেন ছিলে রাতে?
পুষ্প অকপটে মিথ্যে বলে দিলো।
“-আসলে রাতে ছাদ থেকে এসে প্রিয়ার রুমে একটু শুয়েছিলাম। কখন যেন চোখ লেগে গেছে বুঝতে পারিনি।
আশরাফ সাহেব পুষ্পকে চেয়ারে বসতে বলে বললো।
“-এদিকে এসে বসো। শরীর এখন কেমন আছে? ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো?
পুষ্প তার পাশে থাকা চেয়ারে বসতে বসতে বললো।
“-না না আঙ্কেল আমি ঠিক আছি। এমনি হয়তো রাতে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিলো। এমনি কিছু হয়নি ঠিক আছি আমি।
“- সারাদিন অফিসে থাকি খোজই নেওয়া হয়না কারো। তা প্রার্থ খেয়াল রাখছে তো তোমার? বকা ঝকা করে নাকি আবার?
এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে গেলো সে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো।
“-খ..খেয়াল রাখে আঙ্কেল। চিন্তা করবেন না।
এমন সময় উপর থেকে ধুপধাপ করে সিঁড়ি দিয়ে নামার শব্দ হলো। সিঁড়ির দিকে তাকাতে দেখলো প্রার্থ এবং অন্ত দুইভাই একই সাথে নিচে নামছে। দুজনের গায়ের রং, চেহারা প্রায় একরকমই। শুধু অন্ত একটু ছোট। মুখে এখনো ওইরকম দাড়িগোঁফ গজায়নি। হালকা পাতলা হয়েছে সবে। উঠন্ত বয়সের যুবক লাগে। আর প্রার্থকে দেখতে পরিপূর্ণ যুবক লাগে। মুখে চাপ দাড়ি। বড় বড় চুলগুলো আজ সব পেছনে নিয়ে ঝুটি করছে। গায়ে ছাই রংয়ের একটা শার্ট। হাতাটা কুনুই পর্যন্ত ভাজ করা। শার্টটা কালো প্যান্টের ভেতরে ইন করে রেখেছে। কাল যেমন বাজে আচরন করেছে আজ সেই লোকটাকে দেখে বোঝাই যাবে না লোকটা এতটাও রুড হতে পারে।
অন্ত হয়তো ভার্সিটি যাবে। সে সাদা রংয়ের টিশার্ট পড়ে একটা ব্যাগ কাধে নিয়ে নামছে। দুজন একসাথে নেমে আসলে পুষ্প উঠে দাড়ালো। এখান থেকে সরে যাওয়ার বাহানা করে বললো।
“-আমি একটু রুম থেকে আসি। একটু কাজ আছে।
আশরাফ সাহেব আটকে দিলো তাকে। আদেশ স্বরূপ বললো।
“-একটু পরে যাও। বসো দুমিনিট আমার কথা আছে।
প্রার্থ, অন্ত নিচে এসে একসাথে বললো।
“-গুড মর্নিং
আশরাফ সাহেব বললেন।
“-গুড মর্নিং। বস তোরা। কথা আছে।
প্রার্থ গিয়ে তার মায়ের পাশে বসলো। পুষ্পের বিপরীত পাশে। প্রার্থ বসেই বললো।
“-হ্যাঁ বলো চাচ্চু। কি বলবে?
“-বলছিলাম তোদের বিয়ে তে তো আমার কিছু দেওয়া হলো না। কাজে এত ব্যাস্ত থাকি। তারওপর এত তাড়াতাড়ি সব হয়ে গেলো। তাই ভাবছিলাম তোদের জন্য একটা টুরের ব্যাবস্থা করে দেই? একটু একা সময় কাটিয়ে আসবি দুজনে।
পুষ্প আগে তাকালো প্রার্থর দিকে। তখনই প্রার্থ তাকালো তার দিকে। দুজনের চোখাচোখি হওয়ায় চোখ নামিয়ে নিলো পুষ্প। ভয় হচ্ছে এটা নিয়েও না আবার প্রার্থ পুষ্পকেই দোষ দিয়ে বসে। তাই নিজে থেকেই বারন করে বললো।
“-আঙ্কেল আপনি চিন্তা করবেন না। আমাদের কিছুই প্রয়োজন নেই। বড় আম্মু এত অসুস্থ। তাকে রেখে এখন কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে নেই। কোন একদিন ফ্যামিলির সবাই মিলে নাহয় একটা টুর দিবো।
পূর্নিমা বেগম এখন কথা বললেন।
“-আমার কোন সমস্যা নেই। অহনা আছে, প্রিয়া আছে, তোর মা আছে। তুই দুদিন গিয়ে ঘুরে আয় না প্রার্থর সাথে। ভালো লাগবে।
পুষ্প বাহানা বের করে বললো।
“-হয়েছে কি বড় মা তুমি তো জানোই আমি জার্নি করতে পারি না বেশিদূর। এখন কোথাও না গেলে হয় না?
আসরাফ সাহেব বললেন।
“-দুইদিন পরে যাও। আমি সব ব্যাবস্থা করে দিবো তোমরা গিয়ে শুধু ঘুরেফিরে সময় কাটিয়ে আসবে।
প্রার্থ কি বলিস? একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আয় মেয়েটাকে।
প্রার্থ সোজাসাপ্টা বলে দিলো।
“-আমার সময় নেই।
পূর্নিমা বেগম বললেন।
“-তোর কর্নসার্ট তো আজকে রাতে। তারপর তো বললি কয়েকদিন আর কোন কাজ নেই। এখন আবার কাজ এলো কি করে?
“-তুমি বুঝবে না মা। অন্য অনেক কাজ আছে।
আশরাফ সাহেব নিজের কথায় অটুট থেকে বললেন।
“-তাহলে কাজ শেষ করে যাবি। কিন্তু যেতে তোদের হবেই। ব্যাস। এ নিয়ে আর কোন কথা হবে না। আমি কয়েকদিনের মধ্যে সব রেডি করে দিবো। দরকার পরে কাজকে ছুটি দিবি। কাজ পরেও করা যাবে।
এতক্ষনে নিজের প্লেটে খাবার উঠিয়ে নিয়েছে প্রার্থ। খেতে খেতে বললো-” দেখা যাক”
এরপরে আর এ বিষয় নিয়ে কথা হলো না। আশরাফ সাহেব এবং অহনা বেগম খাওয়া দাওয়া শেষে প্রান্তকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। তারা অফিসে যাওয়ার পথে প্রান্তকে স্কুলে নামিয়ে দিবে।
বাকিদের খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। পুষ্প গিয়েছিলো উপরে। ঘুম থেকে উঠেই এখানে চলে এসেছে ফ্রেস না হয়েই। তাই উপরে গিয়ে নিজেকে ঠিকঠাক করে আবার নিচে এলো খাবার খেতে।
পুষ্প এসে টেবিলে বসলো। এমন সময় প্রিয়া প্রার্থকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।
“-প্রার্থ ভাই। আজ তো তোমাদের কনসার্ট আছে। আমরা কিন্তু যাবো।
প্রার্থ এক কথায় জবাব দিলো।
“-না
প্রিয়া ঠোট উল্টিয়ে বললো।
“-কিন্তু কেন? এর আগে দুইবার আমি যেতে পারিনি। আজকে যাবো প্লিজ ভাই প্লিজ।
“-নো মিনস নো।
“-আমি একা যাবো নাকি। বুবুও তো যাবে। তুমি নিয়ে যেও আমাদের।
পুষ্প প্রার্থর বলার আগেই বরন করে দিলো।
“-আমি যাবো না। আর তুইও যাবি না। কনসার্টে ভালো মানুষরা যায় না।
প্রার্থ এবার চোখ তুলে তাকালো পুষ্পর দিকে। প্রিয়া আবার বললো।
“-বুবু তুমি চুপ করো। আগে তো দেখার জন্য লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে। এখন বলছো ভালো মানুষরা যায় না।”
এরপর বড় আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো।
“-ও বড় আম্মু নিয়ে যেতো বলো না ভাইকে। আমরা বাড়ির মানুষ হয়ে দেখতে পারবো না কেন?
পূর্নিমা বেগমও তালে তাল মিলালো।
“-ঠিকিতো। ওদের কেন নিবি না প্রার্থ? নিয়ে যা না যেতে চাইছে যখন। এমনিতেও ওর কলেজ খুলে গেলে আর যেতে পারবে না কোথাও।
পুষ্প আবারও বাধ সাধলো।
“-প্রিয়া গেলে যাক। আমি যাবো না বড় আম্মু। তোমাকে একা রেখে যাবোনা আমি।
“-আমি একা থাকবো না তো। আজ অহনা বাড়িতে তাড়াতাড়ি ফিরবে বলেছে। ও থাকবে, রুবি থাকবে। তুই আমার চিন্তা করিস না তো। যা একটু মজা করে আয়। প্রার্থ নিয়ে যাস ওদের।
“-মা অনেক রাত হয়ে যাবে আমার ফিরতে ফিরতে। ওদের বাসায় দিয়ে যাবে কে?
অন্ত বলে উঠলো।
“-আমি তো যাবো ভাই। আমি পুষ্প আপু মানে ভাবিকে আর প্রিয়াকে নিয়ে এসে পড়বো।
প্রিয়া অনুরোধ করে বললো।
“-ভাই প্লিজ নিয়ে চলো না। প্লিজ প্লিজ।
পুষ্প চেতে উঠে বললো।
“-প্রিয়ু খাবার খা চুপচাপ। সবসময় সব জায়গায় যেতে নেই।
পূর্নিমা বেগম বললেন।
“-এমন করছিস কেন? এত করে বলছে ও। আমার কথা অন্তত রাখ। রাতে গাড়ি পাঠিয়ে দেবো। গাড়িতে করে নাহয় চলো এলি তোরা।
ও প্রার্থ নিয়ে যা না বাবা।
প্রার্থ উঠে দাড়ালো। মায়ের কথা সে কখনো ফেলতে পারেনা। ভীষন মা ভক্ত ছেলে।
উঠে দাড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
“-ঠিকাছে। সন্ধ্যার পরে রেডি হয়ে থাকিস সবগুলো।
বিকেল ফুরিয়ে সন্ধ্যা নেমেছে আকাশে। চৌধূরী বাড়ির ড্রয়িংরুম আজকে সন্ধ্যায়ও ফাকা। প্রিয়া তো গত এক ঘন্টা ধরে শুধু রেডিই হচ্ছে। ইশশ! আজ তার হৃদয় ভাই কত সুন্দর করে পারফর্ম করবে স্টেজে। নিজেকে একটু পরিপাটি না করলে চলে? সাজগোজে কোন কমতি রাখা চলবে না। গাঢ় লাল রংয়ের একটা চুরিদার পড়েছে। সাথে গাঢ় মেকআপ। লাল টকটকে লিপস্টিক। লিপস্টিকটাকে ঠোটে ঘষে ঘষে লাগাচ্ছে।
হঠাৎ দরজার সামনে টোকা পড়লো। দরজাটা খোলাই ছিলো। সেখানে তাকালে দেখলো অন্ত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। প্রিয়া আবার ঘুরে আয়নায় তাকালো। কথা বললো না। কালকের ব্যাবহারে এখনও রেগে আছে সে। অন্ত ওভাবে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে দেখে বললো।
“-কি চাই। এখানে এসেছো কেন?
অন্ত চশমা ঠেলে বললো।
“-আপতত ভেতরে আসতে চাই।
“-কোন প্রয়োজন নেই। আমার হয়ে গেছে। আমি আসছি নিচে। তুমি যাও এখান থেকে।
অন্ত ভেতরে ঢোকার অনুমতি না পেয়েও ভেতরে ঢুকে গেলো। প্রিয়ার সামনে দাড়িয়ে তাকে ভালো করে পরোখ করে বললো।
“-এরকম ভুতের মতো সেজেছিস কেন? মেকআপ তোল।
প্রিয়া রেগে খেঁকিয়ে উঠলো।
“-যা ইচ্ছে সেজেছি তোমার কি? যাও তো এখান থেকে।
“-আমার কিছুনা। তোকে দেখতে বাজে লাগছে। বিশ্রি ভুতের মতো লাগছে। মেয়েরা এসব আটা ময়দা যে কেন মাখে মুখে।
“-বলছি তো আমার ইচ্ছে। লাগুক বিশ্রী তুমি যাও এখান থেকে।
ওকে বেরিয়ে যেতে বলে নিজেকে আবার আয়নায় দেখলো খুটিয়ে খুটিয়ে। একা একাই বললো।
“-সুন্দরী লাগছে আমাকে। তোমার জলছে আমাকে দেখে তাই বলো। তুমি এটা কি পরেছো? কালো রংয়ের টিশার্টে তো তোমাকে খুজেও পাওয়া যাবে না। কালো কেন পড়ো তুমি?
অন্ত বুঝতেই পারলো খোচাটা গায়ের রং নিয়েই দিলো।
“-সবাইকে খুজতে হবে না। যার খোজার সে ঠিকই খুজে নিবে।
“-কেউ খুজবে না তোমাকে। চোখেই দেখবে না কেউ।
“-যদি বলি কারো চোখে হারাবো কোনদিন।
“-হুহ্ ফিল্মি ডায়লগ বাদ দাও।কে তোমাকে চোখে হারাবে? যাও এখান থেকে। তোমার সাথে কথা বলতে চাইনা।
“-কার সাথে বলতে চাস শুনি?
“-তোমাকে কেন বলবো?
“-ঠিকাছে বলিস না। আমি খুজে নেব।
আর দাঁড়ালো না সে রুমে। হনহনিয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। প্রিয়া যেন বাচলো তার বেড়িয়ে যাওয়ায়। কদিন ধরে দুচোখের দুষমন হয়ে গেছে ছেলেটা।
ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও পুষ্পকে যেতে হচ্ছে প্রার্থদের সাথে। ওখানে গিয়ে আবার কখন অপমান করে বসবে কে জানে। সেই কারনে আরো যেতে ইচ্ছে করছিলো না৷ কিন্তু পূর্নিমা বেগম আর প্রিয়ার জোরাজুরিতে শেষমেশ যেতে হচ্ছে তাকে। সন্ধ্যার দিকে জোর করে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছে তাকে তৈরী হওয়ার জন্য।
পুষ্প কি পড়বে পড়বে ভেবে নীল রংয়ের একটা শাড়ী জরিয়ে নিলো গায়ে। নীল রংয়ের শাড়ীতে ফর্সা মেয়েটাকে হুরপরীর মতো লাগছে। নীল রংটা সাদা চামড়ার সাথে ফুটে উঠেছে। লম্বা চুলগুলোকে পেছনে নিয়ে পাঞ্চক্লিপ দিয়ে আটকে দিয়েছে। কপালের ছোট ছোট চুলগুলো কপালেই পরে আছে।
মুখে প্রসাধনীর চিহ্ন বেশি নেই বললেই চলে। খুবই হালকা রংয়ের একটা লিপস্টিক দিয়েছে ঠোটে। এবার কাজলটা নিয়ে চোখে কাজল দিচ্ছে।
তখনই প্রার্থ এসে দাড়িয়েছে দরজার সামনে। পুষ্প কাজল দেওয়ায় ব্যাস্ত থাকায় তাকে দেখতে পায়নি।
শাড়ীর আচলটা কাধে উঠানো। হাত উচু করে চোখে কাজল ছোয়ানোতে পেটের কিছুটা জায়গা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
প্রার্থর সরাসরি চোখ গেছে সেই লতানো ফর্সা কোমড়ের দিকে। সাথে সাথে চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে একটু কেশে রুমে ঢুকলো। কাশির শব্দ শুনে সামনে তাকাতে দেখলো প্রার্থ এসেছে। কিছু না বলে আবারও অন্য চোখে কাজল দিতে ব্যাস্ত হলো পুষ্প।
প্রার্থ কাবার্ড থেকে একটা জ্যাকেট বের করে এনে গায়ে জরাতে জরাতে বললো।
“- প্রতিদিন শাড়ীই কেন পড়তে হবে ?
পুষ্প বুঝলোনা। কথাটা কি তাকেই বললো? হঠাৎ শাড়ীর কথা জিজ্ঞেস করছে যে। তবুও বললো।
“-বিয়ে হয়েছে তাই পড়ি।
“-বিয়ে হলেই মানুষ শাড়ী পড়ে না। কাল থেকে এগুলো পড়বি না। সব ফেলে দিবি।
“-কেন? কোন দুঃখে ফেলবো আমি? কেনই বা পড়বো না।আমি একশো বার পড়বো। আপনার কোন অধিকার নেই আমাকে পড়তে বারন করার। আমি রোজ রোজ পড়বো।
প্রার্থ রেগে গেলো। হাত ধরে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। মুখোমুখি করে বললো
“-অধিকার দেখতে চাস? অধিকার তো দিয়ে বসে আছিস। তাহলে অধিকার রইলো না কিভাবে?
“-কিন্তু আপনি তো বিয়ে মানেন না। তাহলে অধিকার কি করে রইলো?
ধাক্কা দেওয়ার মতো করে সরিয়ে দিলো পুষ্পকে।
“-সেক্ষেত্রে তো তুই আমার বউও নয়। তাহলে সারাদিন প্রার্থর বউয়ের ট্যাগ লাগিয়ে কেন ঘুরে বেড়াস?
পুষ্প তর্কে যেতে চাইলো না। রোজ রোজ এমন তর্ক আর ভালো লাগে না তার। তাই তর্কে না গিয়ে সোজাসুজি বললো।
“-আপনি যদি এখানে আমার সাথে ঝগড়া করতেই আসেন তাহলে আমার কাছে সময় নেই। অন্য কোনদিন ঝগড়া করি? আমার মতে সময় আপনার কাছেও নেই। যেতে হবে তো আপনাকে।
প্রার্থ কিছু বলবে তখনই আসলো প্রিয়া। দরজার সামনে দাড়িয়ে বললো।
“-প্রার্থ ভাই আমি তৈরী। চলো এবার। বুবু তোমার হয়েছে?
পুষ্প ওদের যেতো বলে বললো।
“-হুম তোরা যা আমি আসছি।
প্রার্থ গাড়ির চাবি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। পুষ্পর চোখে সদ্য আসা জলটুকু সন্তর্পণে মুছে নিলো। নিজেকে ঠিকঠাক করে নিজেও বেড়িয়ে পড়লো।
আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৪
ঢাকারই বড় একটা কলেজ বা ভার্সিটিতে হচ্ছে কর্নসার্ট। মানুষে গিজগিজ করছে চারিপাশ। সবাই রাতের বেলায়ই ছুটে এসেছে কনসার্ট দেখতে। যে দল পারফর্ম করবে সেটার নাম “এলিগেন্ট রাইটার্স” (Elegant Riders)। যেটা মূলত প্রার্থদের দলেরই নাম। টিম মেম্বার পাচজন। প্রার্থ, অর্নব, কার্তিক, হৃদয়, রকি। তন্মধ্যে লিডার হচ্ছে প্রার্থ।
লোকেরা একনামে তাদের দলকে ডাকে ‘ই আর ‘ (E,R)। এলিগেন্ট সর্ট ফর্ম E, রাইডার্স সর্ট ফর্ম R। এক নামে পরিচিত ER ব্যান্ড।