আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৬

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৬
তানহা ইসলাম বৈশাখী

চারিদিকে কৃত্রিম আলোয় সজ্জিত মাঠ। মানুষে গিজগিজ করছে মূল স্টেজের সামনের জায়গাটায়। প্রার্থরা সেখানে পৌছালো সন্ধ্যা সারে সাতটার দিকে। কনসার্ট শুরু হবে রাত আটটার দিকে। প্রার্থ পুষ্পদের নিয়ে একেবারে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেলো। সেখানে অর্নবরা চারজন আগে থেকেই উপস্থিত ছিলো। প্রথমে প্রার্থ ঢুকলো। ওর পিছনে আগে ঢুকলো প্রিয়া। হৃদয় প্রিয়াকে দেখেই বললো।
“-হেই প্রিয়তমা! তুমি আজকে কনসার্ট দেখতে এসেছো? পুষ্প ভাবি আসেনি?
হৃদয়ের প্রিয়তমা বলায় প্রিয়ার ভীষন লজ্জা পেলো। এই নামে ডাকলেই তার লজ্জা পায়। একটু আনন্দও লাগে। প্রিয়া মাথা নাড়িয়ে কেবলই বলবে যে ওরাও এসেছে তার আগেই ভেতরে প্রবেশ করলো অন্ত, প্রান্ত, পুষ্প।
অন্ত ঢুকে হাসি মুখে বললো।

“-ও কেন একা আসবে? আমরাও এসেছি সাথে।
হৃদয় তাদের বসতে বলে বললো
“- তোমাদেরই তো খুজছিলাম। এসো বসো সবাই।
ওরা বসে পড়লে রকি বলে উঠলো।
“-ভাবিকে কি খাওয়াসরে প্রার্থ? দিনদিন আরো বেশিই সুন্দরী হচ্ছে দেখছি। ভাবি, ও তোমাকে সিক্রেট কোন ওষুধ দেয় নাকি?
শেষ কথাটা পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো।পুষ্পর অস্বস্তি বোধ হলো কিছুটা। তবুও সেটাকে তোয়াক্কা না করে বললো।
“-কেন? আগে অসুন্দর ছিলাম বুঝি?
“-আরে না না, তা কেন হবে। তুমি তো এমনিই সুন্দর।
কার্তিক বললো।
“-কথা একটু বুঝেশুনে বল। এখানে প্রার্থ বসা। তুই তার সামনেই তার বউয়ের প্রশংসা করে যাচ্ছিস। বান্দা খেপে গেলে তোর খবর থাকবে না।
প্রার্থর কোন প্রতিক্রিয়া নেই। একমনে নিজের বাদ্যযন্ত্র দেখতে ব্যাস্ত। পুষ্প একবার তাকালো তার দিকে তার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। কিন্তু প্রার্থকে যেমন আছে তেমনই দেখে বিদ্রুপ হাসলো নিজের উপর। মরুভূমিতে খুজছে পানির পথ। একি আদৌ সম্ভব?
হৃদয় চটপট করে বলে ফেললো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“-আজ কিন্তু পুষ্প ভাবি প্রথমবার প্রার্থর বউ হিসেবে কনসার্ট দেখবে। একটা কাজ করা যাক পুষ্প আর প্রার্থর লাইভ কাপল পারফরম্যান্স হয়ে যাক। আমরা পিছনে গান গাইবো। আর ওরা দুজন সামনে কাপল ডান্স করবে। কি বলিস প্রার্থ?
প্রার্থ নিজের কালো গিটারটা দেখতে ব্যাস্ত। সব ঠিক আছে কিনা চেক করে নিচ্ছে একবার। হৃদয়ের প্রশ্নে তার দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলো।
“-তোর নতুনটা নিয়ে নিয়ে তুই কর ডান্স।
হমদয় অবুঝের মতো বললো
“-কী নতুন?
কার্তিক মাথায় জোরে থাপ্পড় মেরে বললো।
“-শা*লা প্লে বয়।
ওদের কথায় প্রিয়ার এত মন খারাপ হলো। বুকটা ফেটে যাওয়ার জোগাড়। প্লে বয় কেন বললো? হৃদয় ভাইয়ের কি অনেক মেয়েদের সাথে সম্পর্ক? হতেও তো পারে। কত্ত সুন্দর ছেলে। আবার শিল্পী। মেয়েরা তো এমনিতেই মরে এদের উপর। পৃথিবীতে কত সুন্দর মেয়ে আছে। হৃদয় ভাই নিশ্চয়ই প্রেম করছে কারো সাথে। নাহলে ওরা এসব কেন বলবে?

এগুলো ভেবে ভেবে ওর মুখটা একেবারে চুপসে গেলো। অথচ প্রিয়ার ওমন চুপসে যাওয়া মুখটা দেখে মনে মনে হাসি পেলো অন্ত’র।
অর্নব হঠাৎ পুষ্পর দিকে চেয়ে বলে উঠলো।
“-লিটেল প্রিন্সেস! একটু বাইরে আসবে? কথা ছিলো তোমার সাথে।
অর্নবের কথা সবগুলো চোখ এসে পড়লো তার উপর। অগত্যা প্রার্থও চাইলো তার দিকে। গিটারে চলতে থাকা ব্যাস্ত হাতটা থেমে গেলো। অর্নবের দিকে তাকালো স্বাভাবিক চোখেই। এরপর তাকালো পুষ্পর দিকে।
পুষ্প বললো।
“-কি হয়েছে অর্নব ভাই?
অর্নব প্রার্থর দিকে তাকিয়ে বললো।
“-অনুমতি থাকলে আপনার বউয়ের সাথে কি আমি দুমিনিট কথা বলতে পারি?
রকি অর্নবকে টোকা মেরে বললো।
“-থাম শা*লা। ওর থেকে আবার কিসের অনুমতি চাস তুই। পুষ্প প্রার্থর বউ হওয়ার আগে আমাদের ছোট বোন হয়। অনুমতি দরকার নেই তুই কি বলবি বলে আয় যাহ।

রকি কিছু না বুঝে কথাগুলো বললেও বুঝলো কার্তিক। গ্রুপের অন্যকেউ না জানলেও কার্তিক জানে অর্নবের মনের খবর। আর এই কথাটা প্রার্থও হয়তো জানে। সে রকিকে থামিয়ে বললো
“-তুই চুপ কর। তোর বোন হওয়ার আগে এখন পুষ্প প্রার্থর বউ। অনুমতিতো অবশ্যই দরকার।
প্রার্থ আবারো গিটারে মনোযোগ দিয়ে নিজে থেকেই বলে উঠলো।
“-কথা যার সাথে বলা দরকার হয় অনুমতিটাও তার থেকে নিলেই ভালো হয়। আমার সাথে কোন কথা হচ্ছে না। আমার অনুমতিরও কোন প্রয়োজন নেই। যার সাথে কথা বলবেন তাকেই জিজ্ঞেস করুন।
পুষ্প প্রার্থর দিকে তাকালো। তারদিকে তাকিয়েই অর্নবকে বললো।
“-হুম চলুন ভাইয়া।
অর্নবের সাথে চলে গেলো বাইরের দিকে। এখানে মানুষজন কম। নেই বললেই চলে। স্টেজের পেছনের দিকের জায়গা হওয়ায় কেউ নেই এদিকটায়।
পুষ্পই প্রথমে বললো।

“-কি হয়েছে ভাইয়া? কোন জরুরি কথা ছিলো?
অর্নব পকেটে হাত গুজে বললো।
“-হুম জরুরী তো বটেই। এজন্যই এখানে আনা।
“-হুম বলুন।
“-আমি কিছু প্রশ্ন করবো সেগুলোর উত্তর দিবে তুমি। ঠিকাছে?
“-জি আচ্ছা।
“-প্রার্থ তোমাকে ভালোবাসলে কি করবে?
এমন প্রশ্নে কপাল টানটান হয়ে গেলো পুষ্পর। কিছুক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে বললো।
“-আপনি তো সব জানেন তাহলে জিজ্ঞেস কেন করছেন?
“-জানি বলেই জিজ্ঞেস করছি। উত্তর দাও।
“- জানিনা এটা কখনো হবে কিনা। তবে যদি এরকমটা হয়, তার মনে যদি আমার জন্য কখনো কোন জায়গা তৈরী হয় তাহলে আমার সকল চাওয়া পাওয়া ছেড়ে দেবো।
অর্নব পুষ্পর দিকে চেয়ে বললো।
“-কিন্তু ও হবে কি করে তোমার?
পুষ্প মাথা নিচু করে হেসে বললো।

“-সেটাতো জানা নেই। বলতে পারেন অন্ধকারে পা ফেলে হাটছি। আলোর পথ আদৌ পাবো কিনা জানিনা।
“-সেই পথ তো তোমাকে খুজে বের করতে হবে। অন্ধকারে তো শুধু হাটলেই চলবে না। আলোর সন্ধান পেতো হলে একটু তো বুদ্ধিও খাটাতে হবে।
পুষ্প অর্নবের দিকে তাকালো। প্রশ্নাত্তক স্বরে বললো।
“-আপনার কাছে কোন প্ল্যান আছে?
“-প্ল্যান নেই। তবে কিছুতো করতে হবে, নাকি? এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে প্রার্থকে ভুলে যাও। কিচ্ছু হবে না।
পুষ্পর চোখে জল চলে আসলো। টলটলে চোখ নিয়েই বললো।
“-প্রথমে তো শুধু ভালোবাসা ছিলো এখন তো স্বামী। যেভাবেই হোক বিয়েটা হয়েছে। যেখানে শুধু আকাঙ্খা ছিলো এতদিন সেখানে একটু আশা জন্মেছে। কিন্তু আশার আলো কি করে জলবে জানা নেই। তাকে কি করে ভুলে যাই?
“-তাহলে তো আমাদের কিছু করা উচিত তাইনা? তুমি চেষ্টা না করলে তো আশার আলো জলবে না।
“-করতে তো চাই অনেক কিছুই। কিন্তু তার অবহেলা আটকে দেয় বারবার।
“-তো এমন কিছু করো যাতে ও অবহেলাই না করতে পারে।
“-এমন কি আছে যাতে তার অবহেলা নেই?
“-আছে অনেককিছুই। তোমাকে খুজে নিতে হবে। আমি তোমাকে সাহায্য করবো। তোমার ভালোবাসা তোমাকে পাইয়ে দিবো।

“- আমার জন্য এতটা কেন করতে চাচ্ছেন?
অর্বন অন্যদিকে ঘুরে হাসিমুখে বললো।
“- ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে না পাওয়ার কষ্টটা আমিও বুঝি তাই ভাবলাম নিজেরটা না পেলাম তোমার ভালোবাসাটা পাইয়ে দেওয়াটা খুব প্রয়োজন।
পুষ্প অবাক হয়ে বললো।
“-আপনিও কাউকে ভালোবাসেন?
“-নাহ। আমি ভালোবাসতাম এখন বাসিনা। সেই অধিকার আমার নেই।
পুষ্পর মনে কৌতুহল জাগলো। অর্নব ভাইও কাউকে ভালোবাসতো? জানা ছিলো না তো। কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বললো।
“-কাকে ভালোবাসতেন অর্নব ভাই? সে-ও আপনাকে ভালোবাসতো?
“-নাহ। সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।
পুষ্প মন খারাপ করে বললো।
“-আপনি এত ভালো একটা মানুষ। আপনাকে কেন ভালোবাসলো না। সে কি জানতো না আপনি তাকে ভালোবাসেন?
অর্নব হেসে বললো।

“-নাহ, জানতো না। তাকে কখনো বলতে পারিনি।
“-কিন্তু কেন? বললেন না কেন? আমি জানি আপনি তাকে বললে সেও আপনাকে ভালোবাসতো।
অর্নব খিলখিল করে হেসে দিলো পুষ্পর বোকা বোকা কথায়। হাসতে হাসতেই বললো।
“-আচ্ছা থামো। আমরা কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে আসলাম। আমার ভলোবাসার কথা পরে একদিন বলবো নাহয়৷ আগে তোমার প্রবলেমের সলিউশন বের করি? আমাদের ঠান্ডা মাথায় কিছু ভাবতে হবে বুঝেছো। যাতে প্রার্থ তোমাকে এড়াতেই না পারে। আর হ্যা তুমি এমন গোমড়া মুখে থেকোনা তো সবসময়। প্রার্থর কোন কথায় হার্ট হলেও গায়ে লাগাবে না। এমন ভাব করবে যাতে ওর কোন কথায় তোমার কিচ্ছু যায় আসে না দেখবে কেমন করে লাইনে চলে আসে।
“-ঠিকাছে।
“-আচ্ছা চলো ভেতরে সবাই অপেক্ষা করছে। আমার মাথায় সলিট কোন প্ল্যান আসলেই তোমাকে জানাবো। ঠিকছে?
পুষ্প প্রসন্ন হেসে বললো।
“-আচ্ছা ঠিকাছে।
অর্নব পুষ্পকে আগে ভেতরে যেতে বলে বললো।
“-তুমি যাও আমি আসছি।
পুষ্প চলে গেলো ভেতরের দিকে। অর্নব তার যাওয়ার পথে চেয়ে থেকে মুখে হাসি ফুটিয়ে মনে সামান্য কষ্ট রেখে বললো।
“-ওয়ান সাইডেট লাভ ইজ সো বিউটিফুল লিটেল প্রিন্সেস। বিকজ দেয়ার ইজ নো কমিটমেন্ট, নো ওয়ারিস। জাস্ট লুক এট হার এন্ড স্মাইল।
( one sided love is so beautiful little princess. beacuse there is no commitment, no worries. Just look at her and smile)

বাজতে বাজতে প্রায় সারে আটটা বেজে গেছে। কনসার্ট শুরু হচ্ছে এখন। হওয়ার কথা ছিলো সই আটটায়। ম্যানেজমেন্টের গাফিলতিতেই দেরি হওয়া।
পুষ্পরা সবাই এসেছে মেইন স্টেজের সামনে। প্রার্থ লোক দিয়ে ওদের একদম সামনে দাড় করিয়েছে। যাতে চোখের সামনে থাকে সবকটা। প্রান্ত ছোট মানুষ আনতে চায়নি সাথে তবুও আনতে হয়েছে। পুষ্প তার হাত এক সেকেন্ডের জন্যও ছাড়ছে না। প্রান্তও হাত ধরেই লাফালাফি করছে। আর প্রিয়া তো যেন আকাশে উড়ে বেরাচ্ছে। এত মানুষের শোরগোলে টেকা মুসকিল হয়ে যাচ্ছে পুষ্পর জন্য। এর আগেও কতবার এসেছে প্রার্থর কনসার্টে তখন মনে অনেক ফুর্তি থাকতো। এখন আর সেরকম লাগছে না। ভালোই লাগছে না এখানে দাঁড়িয়ে থাকা। তবুও প্রান্ত, প্রিয়ার জন্য দাড়িয়ে রইলো।

শুরু হয়ে গেছে বহুল অপেক্ষিত অনুষ্ঠান। স্টেজের সবগুলো লাইট অফ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে অন্ধকার। মানুষজের চিৎকার আরো বাড়লো। হৈ হৈ করে উঠছে সকলে। সকলের মুখে মুখে একটাই নাম “এলিগেন্ট রাইটার্স” (ER)। ER, ER, শব্দে মুখোরিত চারপাশ। হঠাৎ সমস্ত লাইট অন হয়ে গেলো। মানুষজনের আওয়াজও বাড়লো।
স্টেজে পাচটা স্ট্যান্ড মাইকের সামনে পাঁচজন যুবক দাড়ানো। সকলের কৌতূহলী নজর তাদের দিকেই। স্টেজের উপর প্রথমে একটু সামনেই আছে প্রার্থ। পরনে সাদা রংয়ের একটা টিশার্ট যার উপর স্পষ্ট ফুটে আছে এলিগেন্ট রাইডার্স এর লোগো। সেই টিশার্টের উপরে আবার একটা লেদার জ্যাকেট পড়া। যেটাতে পুরোপুরি রকসস্টার রকস্টার ফিল দেয়। বাকি সবার পড়নেও তাই। লোগো ওয়ালা সাদা টিশার্ট শুধু উপরের জ্যাকেটটা একেকজনের একেকরকম।
প্রার্থর সামনে স্ট্যান্ড মাইক। সাথে মুখে হেডসেট মাইক্রোফোন লাগানো। গলায় তার প্রিয় কালো বেজ গিটারটা ঝুলানো। তার হালকা পিছনে বা পাশে অর্নব। তার হাতে একটা একুইস্টিক গিটার। তার পাশে আবার কার্তিক। কার্তিকের সামনে পিয়ানো।
প্রার্থর ডানপাশে প্রথমে হৃদয়৷ হাতে ইলেক্ট্রিক গিটার। তার পরেই রকি। রকির সামনে ড্রামস রাখা। সকলে যার যার ইন্সটুমেন্ট নিয়ে তৈরী।

মূলত মাঝে প্রার্থ এবং তার দুইপাশে দুজন দুজন করে চারজন। মোট পাচজন তারা। প্রথমে লাইট জলতেই মিউজিকের ইন্সটুমেন্ট বাজাতে শুরু করলো তারা। কিছুক্ষণ শুধু মিউজিক বাজিয়েই থামলো। প্রার্থ লিডারের মতো মাইক্রোফোন ধরে হৃদয়দের উদ্দেশ্যে বললো।
“- রাইডার্স! লেটস হিট দ্য স্টুডিও!
এরপর দর্শকের উদ্দেশ্যে বললো
“-আর ইউ রেডি গাইস?
‘ইয়েস’ ধনীতে ছেয়ে গেলো চারপাশ। আবারো চারিপাশে হৈচৈ শুরু হয়ে গেলো। স্টেজে পাচজন নতুন সুর তুললো বাদ্যযন্ত্রে। গলা ছেড়ে গেয়ে উঠলো প্রথমে প্রার্থ। এরপর বাকি সবাই।
কবিতা!
তুমি স্বপ্নচারিনী হয়ে খবর নিও না।
কবিতা,
এই নিশাচর আমায় ভেবনা সুখের মোহনা।
দেখবে আমাদের ভালোবাসা, হয়ে গেছে কখন যেন

পদ্ম পাতার জল
পদ্ম পাতার জল
কবিতা!
তুমি স্বপনচারিনী হয়ে খবর নিওনা
কবিতা,
এই নিশাচর আমায় ভেবনা সুখের মোহনা
বেদনা শিক্ত অশান্ত এই মন
খুজে ফিরে মেটায়, প্রয়োজন
যতদূর জানে এ ব্যাকুল হৃদয়
নীল বিষের পেয়ালা মনের বাধন
দেখবে আমাদের ভালোবাসা,হয়ে গেছে কখন যেন
পদ্ম পাতার জল।

গিটার, ড্রাম, ফ্লুট বাজিয়ে গান গেয়ে যাচ্ছে পাচ শিল্পী। সাথে তাল মেলাচ্ছে সাধারন জনতা। একই সুরে তারাও সুর মেলাচ্ছে। প্রিয়া, প্রান্ত, অন্তও তাই করছে। শরীর দুলিয়ে গানের তালে তাল মেলাচ্ছে। কিন্তু এসবেই কিছুই করছে না শুধু পুষ্প। আশেপাশে মানুষজন এত আনন্দ এত হৈচৈ করছে অথচ কিছুই তাকে ছুতে পারছে না। তাকে শুধু ছুয়ে যাচ্ছে প্রার্থর গাওয়া গানের লিরিক্সগুলো। গানের প্রতিটা লাইনের অর্থ তাকে শক্ত করে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
”কবিতা, তুমি স্বপ্নচারিনী হয়ে খবর নিও না।”
লাইনটা যেন তাকেই বলছে। স্বপ্নচারিনী হয়ে খবর নিতে বারন করছে! অথচ তার মনের ভেতরে শুধু তাকে নিয়েই স্বপ্ন বোনা আছে। সে তো স্বপ্নচারিনী হয়ে আছে। তাহলে কী করে তার খবর না নিয়ে থাকতে পারে!
“এই নিশাচর আমায় ভেবোনা সুখের মোহনা”
বাক্যটা শুনে বোধহয় একটু হাসিও পেলো পুষ্পর। তাচ্ছিল্যের হাসি। নিজের উপর তাচ্ছিল্য হাসলো সে। যে বারবার বলছে তাকে যেন সুখের মোহনা না ভাবে তবুও যে সে তাকেই সুখের মহোনা ভাবতে চাইছে। কবে, কখন, কিভাবে এমনটা ভেবে বসেছে তা নিজেরও অজানা। জানা শুধু এটুকুই তাকে ছাড়া অন্য কাউকে জীবনের সুখ ভাবা অসম্ভবনীয় কাজ। অথচ তাকে পেয়ে সুখ নয় শুধু দুঃখই পেতে হচ্ছে। মন কি নিষ্ঠুর তাইনা! যে আমাদের নিজের মনে জায়গা দিতে নারাজ সেই তাকেই আমরা আমাদের মন দিয়ে বসি। অথচ যাকে মন দিলাম সে তার কোন পরোয়া করলো না।

এসব ভাবতে ভাবতে দু ফোটা উষ্ণ অশ্রু গড়িয়ে পড়লো কপোল বেয়ে। সাথে সাথে মুছে ফেললো সেই অশ্রু। যা নজরে এলো না কারো। এতক্ষনে গানটাও শেষ হয়ে গেলো। স্টেজের পাচজন পুরো ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। গিটার বাজানো, হেলেদুলে গান গাওয়া সবেমিলে এক গানেই একটু হাপিয়ে গেছে মনেহয়। কিন্তু নিচের দর্শকদের মনেহয় না ঘাম এসেছে বা হাপিয়ে গেছে। তারা লাফালাফি করেই যাচ্ছে
প্রথম গান শেষ করে মাইক্রোফোনটাকে ধরে মুখের কাছে নিয়ে দর্শকের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
“-অডিয়েন্স, লেটস ফিল দ্য বিট।
বলেই অন্য আরেক গানের সুর তুললো। এবার প্রথমে গান ধরলো অর্নব। দৃষ্টি তার ঠিক পুষ্প বরাবর। অথচ পুষ্পর দৃষ্টিতে শুধুই প্রার্থ। পুষ্পর দিকে তাকিয়েই হেয়ালি হেসে গান ধরলো।
সে আমারে, আমার হতে দেয় না।
সে আমারে, আমার হতে দেয় না।
কার কপালের টিপ, কার কপালের টিপ
কার হয়ে যায়।
চলে গিয়ে ভুল করেছে,
ভুল করে সে ফুল হয়ে যায়
ভুল করে সে ফুল হয়ে যায়
সে আমারে, আমার হতে দেয় না
সে আমারে, আমার হতে দেয় না

গানটা চলাকালীন হঠাৎ পুষ্পদের পাশ থেকে ভীষন রকমের চেঁচামেচির আওয়াজ এলো। সবাই পাশে তাকিয়ে দেখলো কয়েকজনের সাথে হাতাহাতি হচ্ছে। সেটা মারামারিতে রূপ নিয়েছে। এ মারছে একে তো ও মারছে ওকে। মানে কি হচ্ছে ?কে কাকে মারছে? বোঝার উপায় নেই। আবোল তাবোল পেটাচ্ছে একেকজন। এরকম হিতকর অবস্থা দেখে পুষ্প আগে প্রান্তকে আগলে নিলো নিজের সাথে। জরিয়ে ধরলো ছেলেটাকে। ভায়ার্ত চোখে খুজলো প্রিয়াকে। প্রিয়া তার থেকে কিছুটা দুরে। মানুষের ছোটাছুটি শুরু হয়ে গিয়েছে। কে কার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। সবাই সবার জীবন বাচাতে ব্যাস্ত। প্রিয়া আর অন্ত এক জায়গায়। অন্ত শক্ত করে ধরে আছে প্রিয়ার হাত। পুষ্প ওদের দেখে কন্ঠে ভয় নিয়ে বললো।
“-অন্ত। প্রিয়ুকে নিয়ে বের হ এখান থেকে।
অন্ত জোরে জোরে বললো।

“-তুমি এদিকে আসো আপু। ওদের হাতে বড় বড় অস্র আছে। বের হও এখান থেকে। জলদি।
মানুষের ঠেলাঠেলিতে কোথাও সরতে পারছে না এখান থেকে। পুষ্প বুদ্ধি করে ভীর ভাট্টা ঠেলে প্রান্তকে পাঠালো অন্তর কাছে কিন্তু নিজে যেতে পারলো না। প্রান্ত ছোট হওয়ায় চিপা চিপা দিয়ে বেড়িয়ে গেছে। পুষ্প গলা ছেড়ে বললো।
“-অন্ত ওদের নিয়ে বের হ। আমিও আসছি। তোরা আগে যা।

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৫

প্রিয়া যেতে চাইলোনা। বুবু বলে ডেকে আসতে চাইলো পুষ্পর কাছে কিন্তু অন্ত তাকে আটকে দিলো।
“-তুই আগে বের হ এখান থেকে। পুষ্প আপুর কিছু হবে না আমি দেখছি। বের হ।
পুষ্প বের হতে পারলোনা। মানুষের ঠেলাঠেলিতে আরো ভেতরের দিকে ঢুকে গেলো। লাঠি ছোটার বাড়িও লাগলো কয়েকটা। কপালের কাছটায় কেটে রক্ত বের হয়ে গেছে।

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৭