আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৯

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৯
তানহা ইসলাম বৈশাখী

আজকের আবওহাওয়াটা খুব বেশি ভালো নয়। খারাপই বলা চলে। সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৈরী হাওয়া বইছে। শীত শীত ভাব আসছে তাতে। পূর্নিমা বেগম মাথা ভর্তি চিন্তা নিয়ে বসে আছেন। ছেলেটা তার সেই সকালে বেড়িয়েছে এখন বিকেল তবুও তার আসার খবর নেই । বাড়িতে আসেনি সে নিয়ে খুব একটা চিন্তা নেই কারন প্রার্থ বেশিরভাগ সময়েই বাড়ির বাইরে থাকে কিন্তু এই বৃষ্টির দিন হলে তিনি তাকে কোথাও যেতে দেয়না। প্রার্থও যায়না কোথাও। আজ না জানি কোথায় আছে। বৃষ্টিতে ভিজে না আবার জ্বর ঠান্ডা লাগিয়ে দেয়।
পুষ্প তাকে এত চিন্তিত হয়ে বসে থাকতে দেখে বিরক্ত হয়ে বললো।

“-এত চিন্তা করছো কেন বড়আম্মু? কিছু হবে না তোমার ছেলের। সে জানে কি করলে কি হবে তুমি টেনশন নিও না। ডাক্তার তোমাকে স্ট্রেস মুক্ত থাকতে বলেছে
“-কি করবো চিন্তা তো হয় রে। জানিসই তো শেষবার যখন জ্বরটা আসলো তখন কেমন অবস্থা হয়েছিলো ছেলেটার।
প্রিয়া বললো।
“-এত চিন্তা করো না তো। এখন বুবু আছে না খেয়াল রাখার জন্য। ভাই অসুস্থ হলে বুবু যত্ন নিবে। তাইনা বুবু।
বড় আম্মুর সামনে এরকম কথা বলায় পুষ্প শুধু মুখে ‘হুম’ টুকুই বললো। মনে মনে ভাবলো যত্ন আর কি নিবে যে যত্ন নিতে চায় না তাকে অযত্নে ফেলে রাখাই ভালো।
প্রান্ত চোখ মুখ কুচকে বললো।
“-কেন? কেন? ফুল আপু কেন প্রার্থ ভাইয়ের যত্ন করবে? ফুল আপু পারবে না। আপু তো নিজেই অসুস্থ।
প্রিয়া ওকে ভেঙচি কেটে বললো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“-ইশশ! ভাইয়ের চেয়ে ফুল আপুর জন্য দরদ বেশি উনার। তো তুই বিয়ে করতি ওকে।
“-আমি বড় হলে আমিই বিয়ে করতাম। তবুও প্রার্থ ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে ফুল আপুকে কষ্ট পেতে…
পুষ্প আটকে দিলো তাকে। আর কিছু বলতে দিলো না পূর্নিমা বেগমের সামনে।
“-প্রান্ত! এরকম বলতে নেই জানিস না? এগুলো বললে পাপ হয়।
“-ঠিকাছে বলবো না। কিন্তু তুমিও প্রার্থ ভাইয়ের সেবা করবে না।
পুর্নিমা বেগম হেসে বললেন
“-ঠিকাছে।তোর ফুল আপু তো নিজেই অসুস্থ। আগে ওর সেবা করতে হবে তারপরেই না ও প্রার্থর সেবা করবে। আচ্ছা পুষ্প! আমাকে একটা কথা বল তো। প্রার্থ এখন তোকে ফুল বলে ডাকে না কেন? ওইদিন দেখলাম তোকে পুষ্প বলে ডাকছে। ও তো তোকে পুষ্প বলে ডাকে না।
যেই জিনিসের ভয় ছিলো সেটাই ধরে ফেললো। পুষ্প জানতো এরকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবেই । তাই উত্তরও আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলো। সেটাই উগলে দিলো।
“-ফুল নামে তো প্রান্ত আর প্রার্থ এইদুজনেই ডাকতো। তো প্রান্ত চাইছিলো যে এই নামে শুধু ও-ই ডাকবে আমাকে। আমি প্রার্থ ভাইকে গিয়ে বললাম যে ফুল না ডেকে পুষ্পই ডাকিয়েন। প্রথমে উনি মানতে চায়নি পরে প্রান্তর কান্নাকাটিতে মানতে হয়েছে। এজন্য পুষ্পই ডাকে।
প্রান্ত চোখ ছোটছোট করে তাকালো পুষ্পর দিকে। পুষ্প চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝালো যেন কিছু না বলে। পুষ্প আগেই প্রান্তকে বলে রেখেছিলো এই ব্যাপারে।
পুর্নিমা বেগম সব শুনে বললেন।

“-এটা কেমন কথা প্রান্ত। তোর ভাই ছোটবেলা থেকে ওকে ফুল বলে ডাকে। অভ্যাসটা বদলে দিলি৷ এমনি ভালোই করেছিস। ওর মুখে পুষ্প ডাকটাও সুন্দর লাগে কিন্তু ফুলটা একটু বেশিই সুন্দর শোনাতো।
এমন সময় সদর দরজার বেলটা বেজে উঠলো। পুষ্প হাফ ছেড়ে বাচলো। এখন কথা ঘুরে গেলেই বাচে। প্রিয়া ওঠে চলে গেলো দরজা খুলতে। লাফিয়ে লাফিয়ে গেলো দরজার দিকে। ভেবেছে হয়তো এলাচিকে নিয়ে এসেছে প্রার্থ । হাসিখুশি মুখ নিয়ে দরজা টা খুলে দিলো। কিন্তু বাইরে অন্যকিছু দেখে মুখটা পানসে হয়ে গেলো। একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।চোখে কালো সানগ্লাস। হাতে একটা ট্রলি ব্যাগ। গায়ে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা। হাটুর নিচ পর্যন্ত একটা ফ্রক টাইপ জামা। নিচে সালোয়ার বা প্যান্ট নেই। ফর্সা পা হাটুর একটু নিচ থেকে দৃশ্যমান। জামার উপরের অংশে চিকন ফিতাওয়ালা হাতা। হাত পুরোটাই দৃশ্যমান। মেয়েটার এরকম বেশ ভুষা দেখে মুখ বাকিয়ে বললো।
“-ওহ ছানা আপু। তা কেমন আছো? হঠাৎ এবাড়িতে কেন এলে?
মেয়েটা নিজের চশমাটা মাথায় উঠিয়ে রেখে বললো।

“-ইট’স সানা নট ছানা।
প্রিয়াও বেশ ভাব নিয়ে বললো।
“-ইয়াহ! ইয়াহ! হোয়াট এভার! তুমি বলো এখানে কি করছো?
প্রিয়াকে সাইডে চাপিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো।
“-তোমাকে কেন বলবো? তুমি কি বাড়ির মালকিন?
প্রিয়া তার পেছন পেছন আসতে আসতে বললো।
“-আমি কখন বললাম আমি বাড়ির মালকিন। ছানা আপু তুমি না বড্ড বেশি বুঝো।
“-ওহ জাস্ট সাট আপ।
“-ওখেই!

প্রিয়া মুখ ভেঙচি কেটে পুষ্পর পাশে গিয়ে বসলো। সানা প্রথমে পুর্নিমা বেগমের কাছে গেলেন। গিয়ে একেবারে তাকে সালাম করলো। বললো টেনে টেনে।
“-আন্ঠিই! কেমন আছেন আপনি? আামাকে তো একদমই ভুলে গেছেন। আমার সাথে বিয়ে ঠিক করে প্রার্থকে বিয়ে দিয়ে দিলেন অন্য কোথাও অথচ আমাকে ডাকলেনও না।
পূর্নিমা বেগম বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পরে গেলেন। একটু হেসে বললেন।
“-তা নয় মা। প্রার্থর বিয়েটা তো হুট করে হয়ে গেছে এজন্য কাউকে তেমন কিছু বলা হয়নি।
“-কিন্তু আন্টি বিয়েটা তো আমার সাথে হওয়ার কথা ছিলো।
এই কথার জবাব দিলো পুষ্প। সানার মতো করেই বললো।
“- আর এটা তোমাকে কখন, কবে, কে বলেছে যে প্রার্থর বিয়ে তোমার সাথে হওয়ার কথা ছিলো?
সানা পুষ্পর দিকে তাকিয়ে আগা গোড়া পরখ করে বললো।

“-ওহ মিসেস চৌধুরী যে। তুমি হয়তো জানোনা কিন্তু পিপি বলে রেখেছিলো বিয়েটা আমার সাথেই হবে। যাইহোক যা হয়েছে তা তো হয়েই গেছে। ওটা নিয়ে কথা না বলি। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা ভাবি।
“-হ্যাঁ! এইতো বুঝে গেছো। আমার সামনে আমার স্বামীকে নিয়ে যদি একটু কম কথা বলো তাহলেই খুশি হবো।
সানা বাকা হেসে সোফায় গিয়ে বসে পড়লো। ব্যাগটা সাইডে রেখে বললো।
” আন্টি! পিপি কোথায়। দেখছি না তো কাউকে।
“-অহনা তো অফিসে। সেই সকালে যায় আসতে আসতে অনেকটাই রাত হয়ে যায়। কিন্তু তুমি এসময়ে কি করে এলে? তুমি তো ইতালিতে ছিলে তাইনা? এলে কবে? হঠাৎ না জানিয়ে এলে যে।
“-আন্ঠি! আমি কি এবাড়ির মেয়ে নই? আসতে পারিনা আমি এখানে? আমি কি তোমাদের পর?
প্রিয়াও ঢং করে বললো।

“- ইউ আর নট দ্যা গার্ল অফ দিস হাউস ছানা আপ্পি। তুমি জাস্ট এবাড়ির গেস্ট। অহনা আন্টির ভাইয়ের মেয়ে। নাথিং এলস।
পুর্নিমা বেগম প্রিয়াকে চোখ রাঙানি দিয়ে সানাকে বললো।
“-ওর কথা বাদ দাও মা। তুমি তো আমাদের মেয়ের মতোই। তুমি যখন পারো আসতে পারো এখানে সমস্যা নেই। হঠাৎ চলে এলে এজন্য জিজ্ঞেস করলাম।
সানা বললো।
“-আমি জানি আন্ঠি। আপনারা আমাকে মেয়ের মতোই দেখেন। বাট এখানে কিছু লোক আছে যারা আমাকে হিংসে করে বুঝেছেন তো।
প্রান্ত হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। হাসতে হাসতে সানাকে নকল করেই বললো।

“-ইট’স আন্টি নট আন্ঠি ছানা আপু।
আবারো হেসে উঠলো প্রান্ত। প্রান্তর সাথে প্রিয়াও তাল মিলিয়েছে।
সানা দাতে দাত পিষলো। উপরে উপরে হেসে হেসে বললো।
“-ইট’স কলড সানা নট ছানা বেবি!
প্রিয়া আর অন্ত দুজনে মুখ চেপে হাসছে এবার। এই সানাকে তাদের কাছে জোকার ছাড়া কিছুই মনে হয় না। চেহারা এত সুন্দর কিন্তু ব্যাবহার দেখলে মাথায় বারি দিতে ইচ্ছে করে। অতিরিক্ত ন*ষ্টা ব্যাবহার। শুধু অহনা বেগমের ভাস্তি বলে বেশি কিছু বলে না।
পুষ্প বললো

“-আচ্ছা তুমি বসো আমি কিছু খাবারের ব্যাবস্থা করছি। আফটার অল বাড়ির বউ আমি। গেস্টকে তো খালি মুখে বসিয়ে রাখা যায় না।
প্রিয়া নাকচ করে বললো।
“-না দরকার নেই। তুমি অসুস্থ। রুবি খালা করে দিবে।
“-সমস্যা নেই। মাথায় ব্যাথা নেই এখন। আর খুরিয়ে হাটতে সমস্যা হবে না।
সানা বললো।
“-ইট’স ওকে। তোমাকে কষ্ট করতে হবে না। আমি এমনিতেও এখন কিছু খাবো না। অনেক দুর জার্নি করেছি একটু রেস্ট করবো এখন। তাছাড়া কয়েকদিন তো থাকবোই তখন তোমার হাতের রান্না তো খাবোই। নো টেনশন। আচ্ছা আমি আগে একটু ফ্রেশ হয়ে আসি। আমার রুমটা ফাকা আছে তো?
তখনই সদর দরজা দিয়ে ঢুকলো প্রার্থ। চুলগুলো হালকা ভেজা। গায়ের শার্টেও বৃষ্টির ফোঁটা দেখা যাচ্ছে। পুর্নিমা বেগম বিচলিত হয়ে পড়লেন।

“-একি প্রার্থ! বৃষ্টিতে ভিজে গেছিস দেখছি। তোকে কতবার করে বললাম আজ বের হোস না তবুও কেন বের হলি? এখন অসুস্থ হলে কি হবে বলতো?
প্রার্থ মায়ের কাছে দাড়িয়ে বললো।
“-চিন্তা করোনা মা। ভিজিনি আমি। এইটুকুতে কিছুই হবে না। উপরে গিয়ে গোসল করে নিবো প্রবলেম হবে না।
সানা প্রার্থকে দেখে সুন্দর করে বসে সুন্দর মিহি গলায় বললো।
“-কেমন আছো প্রার্থ?
প্রার্থ শুধু বললো।
“-হুম ঠিক আছি।
সানাকে আর উল্টো প্রশ্ন করলো না দেখে সে নিজেই বললো।

“-আমাকে জিজ্ঞেস করবে না? আমি কেমন আছি?
“-তুমিও ভালো আছো। তাই জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করিনি।
“-ওয়াও! তুমি তো দেখছি আমাকে অনেক ভালো করেই জানো।
প্রিয়া ফোড়ন কেটে বললো।
“-তোমাকে কে না চেনে বলো। আমরা সবাই তোমাকে চিনি এবং ভাল্লোবাসি।
প্রার্থ উপরে যেতে পা বাড়ালে পুষ্প বলে উঠলো।
“-আমার এলাচি কোথায়?
প্রার্থ থেমে গেলো। অন্যদিকে দাঁড়িয়েই বললো।
“-গাড়িতে।
প্রিয়া বললো।

“-গাড়িতে কেন রেখে এলে? নিয়েই আসতে।
“-ওটাকে আমার গাড়িতে জায়গা দিয়েছি এটাই অনেক। আমার কাছে এর বেশি আশা করাটা বিলাসিতা। পারলে নিজে গিয়ে নিয়ে আয়।
আর একটা কথাও ব্যায় করলো না। চলে গেলো উপরের দিকে। সানাও উঠে গেলো বসা থেকে। ফ্রেশ হওয়ার বাহানা করে নিজেও চলে গেলো উপরের দিকে। প্রিয়া গেলো এলাচি কে আনতে।
প্রার্থ উপরে এসে প্রথমে নিজের শার্টটা খুলে ফেললো। বৃষ্টিতে ভিজে গেছে সামান্য। শার্ট খোলায় বেড়িয়ে আসলো নিখুঁত ভাস্কর্যের মতো শরীর। প্রশস্ত কাঁধ, সুগঠিত বুকের পেশি, মজবুত বাইসেপ্স, সিক্সপ্যাক আ্যপ সবে মিলে তরতাজা তাগড়া যুবক। এরকম পেটানো বডি দেখলেই মেয়েরা ফিদা হয়ে যায়। বিশেষ করে সানাদের মতো মেয়েদের তো মূল আকর্ষণই ছেলেদের এই শক্ত পেটানো বডি।
এইযে সানা নামক মেয়েটা দরজার সামনে দাড়িয়ে পুর্ন দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে প্রার্থকে। প্রার্থকে এভাবে দেখেই তার শ্বাস প্রশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে।
কেউ দরজায় দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে সেটা একটু হলেও বুঝতে পারলো প্রার্থ। ভ্রু কুচকে পেছনে ঘুরতেই দেখলো সানা দাঁড়িয়ে।
ওকে দেখেই দাত কটমটিয়ে উঠলো প্রার্থ৷

“-এখানে কি করছো তুমি? আমার অনুমতি না নিয়ে আমার রুমে কেন এসেছো?
সানার মধ্যে বিচলিত ভাব দেখা গেলো না। সে বিন্দাস হয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো।
“-প্রার্থ! তোমার রুমে ঢুকতেও বুঝি পারমিশন লাগবে আমার?
প্রার্থ চোখ ছোট ছোট করে বললো।
“-ওয়ান মিনিট! হু আর ইউ?
“-তোমার মজা করার অভ্যেসটা গেলো না। এভাবে..
“-সাট আপ! গেট আউট ফ্রম হেয়ার। ইউ নো আ’ম নট কিডিং উইদ ইউ। নাউ গেট লস্ট।
সানা না গিয়ে উল্টে এগিয়ে আসলো। শরীরের অঙ্গভঙ্গি বিকৃত করে বললো।
“-দিস এটিটিউট! উফফফ! আই জাস্ট লাভ ইউর এটিটিউট।
প্রার্থ চোয়াল শক্ত করলো। এখন একদফা অপমান করেই ছাড়বে এই মেয়েকে। তখনই রুমে ঢুকলো পুষ্প। সানার দিকে তাকিয়ে চোখ কুখ কুচকে বললো।

“-সানা আপু। তুমি আমাদের ঘরে কি করছো? তোমার তো গেস্ট রুমে থাকার কথা তাইনা?তাহলে এখানে কি করছো তুমি? উনি জামা চেঞ্জ করছে তুমি দেখতে পারছো না? যাও নিজের রুমে যাও।
“-যাচ্ছিলাম তো রুমেই কিন্তু তোমার হাসবেন্ড আটকে দিলো তার যাদুতে।
“-আমার হাসবেন্ড যাদু জানেনা। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আছে যারা নিজেকে মৌমাছি ভাবে আর আমার স্বামীকে মধু ভাবে। সুযোগ পেলেই উড়ে উড়ে চলে আসে। এখন তুমি হেটে হেটে যেতে পারো এখান থেকে। দরজাটা ওদিকে।
সানা কিছু না বলে চুল উড়িয়ে হনহন করে চলে গেলো বাইরের দিকে।
পুষ্প গিয়ে একটা তোয়ালে বের করে নিয়ে আসলো প্রার্থর জন্য। সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো।
“-নিন মাথা মুছে নিন। এতক্ষণে হয়তো শুকিয়েই গেছে।
প্রার্থ তোয়ালেটা নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বললো।

“-তোকে আমার খেয়াল রাখতে হবে না। আমারটা আমি করে নিতে পারি।
“-আমি খেয়াল রাখছিও না।
প্রার্থ তোয়ালেটা দেখিয়ে বললো।
“-তাহলে এটা কি?
“-এটা মানবতা।
“-দিনদিন মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে যাচ্ছিস দেখছি।
“-হতে হয়।
“-বাই দ্যা ওয়ে। এরপর থেকে আমাকে হাসবেন্ড বা স্বামী হিসেবে ডাকবি না একদম। দিস ইজ ইউর লাস্ট ওয়ার্নিং।
“-সরি মিস্টার। যতদিন আপনি আমার হাসবেন্ড আছেন ততদিন আমি ডাকবোই। বিশেষ করে কিছু কিছু মৌমাছিদের দুরে রাখতে এই ডাক আমি ইউজ করবোই। এতে আপনার সমস্যা হলে আমার কিছু করার নেই।
প্রার্থ পুষ্পর হাত টেনে সামনে নিয়ে আসলো। মুখোমুখি করে বললো।
“-আমি বলেছি তোকে আমার পাশে ঘুরঘুর করা মাছি তাড়াতে? বলেছি আমি?

“-আপনাকে কেন বলতে হবে? এটা আমার দায়িত্ব। আমি দায়িত্ব অবশ্যই পালন করবো। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন। আপনি যতদিন আমার স্বামী হিসেবে আছেন যতদিন আমাদের এই বিয়ে আছে ততদিন অন্তত আপনাকে অন্য মেয়েদের কাছে ঘেষতে দেবো না। যেদিন থেকে আপনার আমার মধ্যে কোন সম্পর্ক থাকবে না সেদিন আপনি যেকোন মেয়ের সাথে যা ইচ্ছে করতে পারেন। আই উইল রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার। বাট নাউ আই হ্যাভ টু কেয়ার।
“-আমাকে নিয়ে তোর মাথা ঘামাতে হবে না। যেখানে বিয়েটাই একটা খেলা সেখানে কিসের দায়িত্ব?
“-বিয়েটা আপনার কাছে খেলা হতে পারে। আমার কাছে না। তিন কবুলে বাধা পড়েছি আমরা। আর তিন কবুলের শক্তি জানেন? না জানলে খুব শীঘ্রই জেনে যাবেন ইন শা আল্লাহ।

“-তোর এই ঘ্যানঘ্যান এখন সত্যিই সহ্য হয় না। মা যে তোকে কেন আমার গলায় ঝুলিয়ে দিলো।
“-ভুল বলছেন মিস্টার ইউভান। ভুল বলছেন। বড়আম্মু আমাকে আপনার গলায় ঝুলায় নি আপনাকে ঝুলিয়ে দিয়েছে আমার গলায়। যেটা এখন আমার গলার ফা*স হয়ে দাড়িয়েছে। কবে যে মুক্তি পাবো কে জানে। হতেও পারে একদিন এই গলার ফা*সে দম আটকেই ম*রে যাবো।
প্রার্থ শুধু পুষ্পর চোখে কটমটিয়ে তাকিয়ে রইলো। কি বলবে বুঝতে পারছে না। ভান্ডারে কোন শব্দ খুজে পাচ্ছে না।
তখনই দরজায় আসলো প্রিয়া। ওদের দুজনকে এত কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখের সামনে হাত দিয়ে বললো।

“-সরি, সরি, সরি! আমি কিছু দেখিনি। সত্যিই দেখিনি। আমি যাই পরে আসবো। তোমাদের হলে ডেকো আমাকে।
প্রার্থ, পুষ্প দুজনেরই কপালে ভাজ তৈরী হলো। ঠিক করে নিজেদের দিকে তাকাতে দেখলো তারা অনেকটাই কাছাকাছি দাঁড়িয়ে। চোখে চোখে লড়াই করতে করতে কখন এতটা কাছে আসলো নিজেরাও জানে না। প্রার্থ পুষ্পকে সরিয়ে দিয়ে বললো।
“-বাজে বলা বন্ধ কর। কি বলতে এসেছিস তাই বল।
প্রিয়া চোখের উপর থেকে হাতটা সরালো। এবার দুজনকে আলাদা দেখে একটু কেশে বললো।
“-তুমি আমাদের এলাচিকে গাড়ির ডিকিতে করে কেন নিয়ে এসেছো? পেছনের সিটে বসিয়ে আনলেই তো হতো। ও তো ব্যাগের মধ্যেই ছিলো।
প্রিয়ার কোলে ছোট কিউট দেখতে একটা বিড়াল। সাদা রংয়ের মাঝে একটু একটু বাদামি রংও আছে। প্রিয়ার কোলে একদম গুটি-শুটি মেরে শুয়ে আছে। কতদিন পরে যেন মালিককে পেয়ে একটু আয়েস করে শুয়েছে
প্রার্থ চোখ উল্টিয়ে বললো।
“-এটাকে আমার কাছ থেকে দূরে রাখবি। আমার রুমের আশেপাশেও যেন না দেখি। নাহলে লাথি মেরে ডাস্টবিনে ফেলে আসবে।
প্রিয়া চোখ বড় বড় করে বললো।

“-উহহ্! সাহস কত বেশি! আমাদের বাচ্চাকে হাতও লাগাবে না তুমি।
পুষ্পও বললো।
“-আপনার সমস্যা কি? ও আপনার কি ক্ষতি করেছে? ওকে নিয়ে এত মাথাব্যাথা কেন আপনার?
“-ও আর ওর মালকিন দুজনকে নিয়েই আমার মাথা ব্যাথা। আর মাথা ব্যাথাকে সবসময় লাথি মেরেই তাড়াতে হয়।
পুষ্পকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই প্রার্থ ওয়াসরুমের দিকে চলে গেলো। এখানে আর ফাও কথা বলে সময় নষ্ট করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
পুষ্প বিড়বিড় করে বললো।

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৮

“-দেখা যাক কে কাকে লাথি মেরে তাড়ায়।
খুড়িয়ে খুড়িয়ে গিয়ে প্রিয়ার হাত থেকে এলাচিকে নিজের হাতে নিয়ে নিলো। কতদিন পর তার পোষা প্রানিটাকে দেখছে। মন ভরে আদর করে দিলো কিছুক্ষন। বিড়ালটাও ঘাপটি মেরে বসে রইলো তার কোলে।

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১০