আমার তুমি পর্ব ১১

আমার তুমি পর্ব ১১
তানিশা সুলতানা

আজ শুক্রবার। কারো কাজে বের হওয়ার তাড়া নেই। সাহেদা বেগম সারারাত স্বামীর সাথে আলোচনা করে ঠিক করেছে আজকেই কথা বলবে তৌফিক রহমানের সাথে। আবার মনের মধ্যে খচখচও করছে।
যদি না করে দেয়?
তুলতুলকে নিয়ে যায় এখান থেকে?
কি করা উচিত ওনার?
ছেলেকে মানানো?
না কি ছেলের চাওয়াটাকে পূরণ করা?
সায়ান যে তুলতুলকে প্রচন্ড ভালোবাসে এ ব্যাপারে উনি নিশ্চিত।
কিন্তু তুলি কি চায়?
ওর কি সায়ানের প্রতি কোনো অনুভূতি আছে?
নাহহ ভাইয়ের সাথে কথা বলার আগে তুলতুলের সাথে কথা বলা দরকার। তুলতুলের মতামত নেওয়া দরকার। তুলতুল কি চায়?
তুলতুল না চাইলে উনি কখনোই এই বিষয়ে এগোবে না। বরং শক্ত হাতে শাসন করবে সায়ানকে।

অনেক পশ্রয় দিয়েছে আর না।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাহেদা বেগম।
সায়ান দাদির কোলে মাথা রেখে ঘুমচ্ছে। কাল রাতে দাদিমার খুব কাশি হয়েছিলো। প্রায় পাগল হয়ে গেছিলো সায়ান শান আর সুমু। কাশি কমলে ওরা দাদির সাথেই শুয়ে পড়ে।
শান আর সুমু চলে গেছে ভোর রাতে। সায়ান আর যায় নি। এখানেই রয়ে গেছে।
সকাল সকাল রেডি হয়ে নেয় তুলতুল। পায়ের ব্যাথা মোটামুটি সেরে গেছে। হাতের পোরা জায়গাটাও অনেকটা সেরে
কালো জিন্স গোলাপি শর্ট টপস আর গলায় গোলাপি ওড়না।
বারবার আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে তুলতুল।
ভালো লাগছে কি মন্দ লাগছে এটা দেখার জন্য না। সায়ান কোনো ভুল ধরতে পারবে কি না এটাই দেখার জন্য। মুখে মাক্স পড়ে নেয়।
গালে দাগ বসে গেছে। একদম বিশ্রি দেখাচ্ছে। হালকা রক্ত চলে এসেছিলো। ব্যাথাও হয়ে আছে গালটা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আপনাকে আমি কখনোই পছন্দ করবো না সায়ান। খুব খারাপ আপনি। সব সময় নিজের দিকটা ভাবেন আপনি। কই একবারও তো ফিল করেন না তুলতুল কি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একবারও তো আমায় মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন না ” আমি আছি তো সব ঠিক করে দেবো”
আপনি শুধু রাগ দেখাতেই পারেন। এটাকে ভালোবাসা বলে না।
আর এটাকেই যদি ভালোবাসা বলে তাহলে সে ভালোবাসার কোনো প্রয়োজন নেই আমার।
চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে তুলতুলের। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকায় তুলতুল।একদম ভেঙে পড়বে না তুলতুল। শক্ত হতে হবে।
অনন্ত এটা বুঝে তুলতুল বাবা ছাড়া কেউ নিঃসার্থ ভাবে ভালোবাসে না। বাবা মা যা করে সন্তানের ভালোর জন্য করে।

আর তুলতুলের বাবা তো কখনোই তুলতুলকে জোর করে নি। শুধু বলেছিলো “ইফাদকে আমার তোমার মায়ের খুব ভালো লাগে। আমরা চাইছি তোমার সাথে ইফাদের বিয়ে দিতে। যদি তুমি আমাদের মতামতকে সম্মান করো তবেই। কোনো জোড় করবো না।
তুলতুল তখন কিভাবে বলবে আমি তোমাদের সিদ্ধান্ত মানতে পারবো না। তোমাদের মতামতকে সম্মান করি না।
তাছাড়া ইফাদ ভালো ছেলে। এমপির ছেলে। ওই ছেলের সাথে তুলতুলের মতো সাধারণ একজন মেয়েকে নিতে চেয়েছে এটাই তো অনেক।
হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয় তুলতুল।
” হবু বরের সামনে মুখে লাভ ব্রাইট নিয়ে কি করে যাবি এটা ভেবেই কান্না পাচ্ছে? ইসস যদি বিয়ে ভেঙে যায়?

সায়ান রুমে ঢুকে খাটে বসতে বসতে অফসোসের সুরে বলে।
তুলতুল শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় সায়ানের দিকে। মুখ থেকে মাক্স খুলে ফেলে।
“সত্যি একটা কথা বলি?
আমার অনুমতি ছাড়া প্লিজ কখনো আমাকে টাচ করবেন না। ভালো লাগে না আমার। অন্য কারো বাগদত্তা আমি।
এমন চলতে থাকলে আমি কঠিন কোনো স্টেপ নিতে বাধ্য হবো।
আমতা আমতা করে বলে তুলতুল। কথা বলার মাঝে অনেক বার কন্ঠ কেঁপে উঠেছে তুলতুলের।
কেনো কঠিন হতে পারছে না তুলতুল? কোনোভাবে কি দুর্বল হয়ে পরেছে সায়ানের প্রতি।
সায়ান খুব শান্ত ভাবে তুলতুলের কথা গুলো শুনে। মৃদু হাসে সায়ান।
” ভালো লাগে না তোর?

ভ্রু কুচকে পাল্টা প্রশ্ন করে সায়ান।
তুলতুল কেঁপে ওঠে। মাথা নিচু করে ফেলে।
“ইফাদ ছুঁয়ে দিলে ভালো লাগে? আরও বেশি ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করে?
রাগে শরীর রি রি করে ওঠে তুলতুলের।
” আপনি খুব খারাপ। আমি কখনোই আপনার প্রতি দুর্বল হবো না কখনোই ভালোবাসবো না আপনাকে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তুলতুল।
সায়ান ফিক করে হেসে ওঠে। সায়ানের হাসিতে ধমকে যায় তুলতুল। বুকের বা পাশে গিয়ে বিঁধে হাসির শব্দটা। বুক ধুপ ধুপ করছে।
“আমি তো তোকে কখনোই বলি নি ভালোবাসতে। তাহলে?
মনে মনে তাহলে দুর্বল হয়ে পড়েছিস? ওয়াও এটা তো আশা করি নি।
তুলতুল থমথমে খেয়ে যায়। ইসসস ভালোবাসা শব্দটা কেনো উচ্চারণ করলো?
” আসছি

বলেই হুরমুর করে বেড়িয়ে পড়ে তুলতুল। এই হনুমানটা কথার জালে ফাঁসিয়ে দেবে তাহলে।
তুলতুল রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে।
“টাকা না নিয়েই চলে আসলি?
সায়ান তুলতুলের পাশে দাঁড়িয়ে বলে। চমকে তাকায় তুলতুল সায়ানের দিকে। আচমকা ডাকাতে ভয় পেয়ে গেছিলো তুলতুল।
” মমমনে ছিলো না।
মিনমিনিয়ে বলে তুলতুল।
“মন আমার কাছে পড়ে থাকলে মনে থাকবে কি করে?
সায়ান পকেটে হাত পুরতে পুরতে বলে।
তুলতুল ভেৎচি কাটে।?
“এই এই তুই আমাকে চুমু দিলি কেনো? ছি ছি ছি
ফাঁকা রাস্তায় একটা অবলা ছেলেকে পেয়ে ইভটিজিং করছি। আমাকে রেপ করার হুমকি দিচ্ছিস?
তুলতুল থমথমে খেয়ে যায়। এসব কি বলছে লোকটা। চোখ ছোট ছোট করে সায়ানের দিকে তাকায় তুলতুল।
” আমি কখন চুমু দিলাম? আর রেপ কি?
তুলতুল ইনোসেন্ট ফেস করে প্রশ্ন করে।
“গিরগিটির মতো রং বদলাচ্ছিস? ইটস নট ফেয়ার তুলতুল। পুলিশ কেচ করবো তোর মানে। আমি অবলা একটা ছেলে। ভয় পেয়ে ছিলাম। যদি এখুনি তোর চুমুর দাপটে আমার পিত্তি গলে যেতো?

বুকে হাত দিয়ে বলে সায়ান।
তুলতুল এবার কেঁদে দেবে এমন অবস্থা।
” ট্রাস্ট মি ভাইয়া আমি আপনাকে চুমু দেয় নি। ভেংচি দিয়েছি।
“ওটা ভেংচি ছিলো না চুমু ছিলো।
সায়ান কনফিডেন্সলি বলে।
” ওটা ভেংচি ছিলো। (আমার ভেংচি দিয়ে?)
এভাবে দিয়েছি আমি।
তুলতুল কপালে ভাজ ফেলে বলে।
“আমার চুমু দিলি?
সায়ান কপাল কুচকে বলে।
” আল্লাহ এরে একটু বুঝান
এটা ভেংচি ছিলো।
তুলতুল কপাল চাপকে বলে।
“চুমুই ছিলো। আমাকে চুমু আর ভেংচির মধ্যে পার্থক্য শিখাচ্ছিস? দেবো এক থাপ্পড়?
রাগ দেখিয়ে বলে সায়ান।
” আচ্ছা ঠিক আছে চুমুই ছিলো। এবার চুপ করে যান। মাথা ধরে গেছে আমার।
তুলতুল গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলে।
“ওরে আমার টুনুমুনু রে

আমাকে রাস্তার মাঝ খানে চুমু খাওয়া,
ইসসসস কি লজ্জা পেলাম।? (দুই হাতে মুখ ঢেকে বলে সায়ান)
ফুলসজ্জা ফুলসজ্জা ফিলিং হচ্ছে।
আর এই ফিলিংসের কথা তো ইফাদ সতিনের সাথে শেয়ার করতেই হবে।
মেয়েদের মতো লজ্জায় লাল নীল হওয়ার একটিং করে বলে সায়ান। তুলতুলের দুই ঠোঁটের মাঝখানে কিঞ্চিত ফাঁকা হয়ে যায়। এই ছেলেটা আস্ত ড্রামাবাজ।
দাঁত কটমট করে তাকায় তুলতুল সায়ানের দিকে।
” রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিকনিক করা হচ্ছে? তাড়াতাড়ি মাক্স পড়। নাহয় ভালোবেসে একটা ব্রাইট দিয়েছি তাই বলে জনে জনে দেখাতে হবে? ইডিয়েট
ধমক দিয়ে বলে সায়ান। তুলতুল থমথমে খেয়ে যায়। এই নরম তে এই গরম।
এই লোকটা আস্ত একটা গিরগিটি।
“রিক্সা দাঁড় করা।
আবার ধমকে বলে সায়ান।

তুলতুল দাঁতে দাঁত চাপে। কিছু বলতেও পারবে না। কিছু বললেই সুন্দর গালটাকে ঠাস করে একটা চর পড়বে।
সায়ান চোখে সানগ্লাস পড়ে চুলগুলো বাম হাত দিয়ে ঠিক করতে থাকে।
তুলতুল রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে রিকশা মামাদের থামাতে বলতে চাইছে কিন্তু একটা রিকশাও ফাঁকা আসছে না।
কাঁঠফাঁটা রোদ্দুর। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে তুলতুল।
সায়ান কি সুন্দর রাস্তার পাশে বড় গাছটার জড়ের ওপর বসে বাতাস খাচ্ছে।
” শালা হনুমান। জীবনেও বউ পাবি না। অভিশাপ দিলাম তেকে।
তুলতুল বিরবির করে বলে।
অবশেষে একটা ফাঁকা রিকশা আসে।
তুলতুল রিকশা থামিয়ে সায়ানকে ডাকে।
তুলতুল দাঁড়িয়ে থাকে এটা ভেবে সায়ান আগে রিকশায় বসে তুলতুলকে হাত ধরে ওঠাবে।
সায়ান হেলেদুলে রিকশার কাছে আসে।
“হাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? রিকশাও ওঠার জন্য কি পালকি পাঠাতে হবে?
ধমকে বলে সায়ান।

আমার তুমি পর্ব ১০

তুলতুল একবার রিকশা মামার দিকে তাকায়। উনি তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। ভীষণ লজ্জা পায় তুলতুল। মনে মনে সায়ানকে এক গাঁদা গলাগালি করে রিকশার বসে।
” হাত বাড়া। নাহলে আমি উঠবো কি করে?
আবারও কর্কশ গলায় বলে সায়ান। তুলতুল চোখ বড়বড় করে তাকায় সায়ানের দিকে। খাটাশ একটা। ওনাকে আবার হাত ধরে উঠাতে হবে। ঢংগী?
“ইডিয়েট হাত দে
তুলতুল তাড়াতাড়ি হাত এগিয়ে দেয়। নাহলে রিকশা মামার সামনে থাপ্পড় খেলে মানসম্মত যেটুকু আছে সেটুকু থাকবে না।
সায়ান তুলতুলের হাতে ভয় দিয়ে উঠে বসে।
তুলতুল দাঁত কটমট করছে। ইচ্ছে করছে সায়ানকে রিকশা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে।
খাটাশ একটা।

আমার তুমি পর্ব ১২