আমার তুমি সিজন ২ গল্পের লিংক || তানিশা সুলতানা

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১
তানিশা সুলতানা

পৃথিবীতে একটা নামই তুলতুল সয্য করতে পারে না। সেই নামটা হলো সায়ান মাহমুদ । তুলতুলের হাসিখুশি মুখটাতে আধার নামার জন্য এই নামটা মনে পড়াই যথেষ্ট। লোকটার সামনে গেলে তুলতুলের কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়। লোকটার তৃহ্ম দৃষ্টিতে তুলতুলের গলা শুকিয়ে যায়।

এই লোকটার কথা কখনো মনেই করতে চায় না তুলতুল। মাঝেমধ্যে মনে হয় গাছের সাথে বাড়ি খেয়ে যদি স্মৃতি শক্তি হারিয়ে যেতো। তাহলে ভালো হতো। ওই হনুমানটাকে তো ভুলতে পারতো। অথবা ওই হনুমান যদি গাছের সাথে বাড়ি খেয়ে তার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলতো। তাহলেও ভালো হতো। কিন্তু ফাঁটা কপাল তুলতুলের। দুটোর একটাও হচ্ছে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এমপির ছেলেটা কি কিউট। দেখলেই ইচ্ছে করে জোর করে ধরে বিয়ে করে হানিমুনে চলে যাই।
তুলতুল আর তুলতুলের বেষ্টু তিথি কলেজ থেকে বাসায় যাচ্ছিলো। তখনই তিথি বলে ওঠে। তুলতুল থেমে যায়। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় তিথির দিকে।

” তোরে কতোবার কইছি?
ওই খাটাশ বেডার নাম আমার সামনে উচ্চারণ করবি না।
তুলতুল চোখ পাকিয়ে তাকায় তিথির দিকে। তিথি ভেংচি কাটে।
“ক্রাশের নাম উচ্চারণ করবো না? এটা হতে পারে? আমার স্বয়নে স্বপনে সারাক্ষণই ওই হ্যান্ডসাম লোকটা ঘুরে বেড়ায়।

তুলতুল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আর কথাই বলবে না। যত কথা বলবে তখনই লোকটার কথা বেশি উঠবে। এই লোকটার কথা শুনতেই চায় না তুলতুল।
কেনো শুনতে চাইবে?

প্রথমবার লোকটার সাথে দেখা হয়েছিলো ক্লাস নাইনে থাকতে। তুলতুল তারাহুরো করে কোচিং এ যাচ্ছিলো তখনই লোকটার সাথে ধাক্কা লেগেছিলো। লোকটা না পড়লেও তুলতুল পড়ে গেছিলো মাটিতে। হাতে কাঁদা লেগে গেছিলো। দোষটা তো দুজনেরই ছিলো। কিন্তু তবুও তুলতুল অনেকবার সরি বলেছে। লোকটা সরি এক্সেপ্ট করে নি। উল্টে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো বাজারের সামনে। কতো লোক হাসাহাসি করেছিলো তুলতুলকে নিয়ে।

পাক্কা এক ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো। রাগে দুঃখে কান্না করতে করতে বাসায় এসেছিলো তুলতুল এতোটাই বেডের হাড্ডি ওই লোকটা।
” এই তুলতুল ওই দেখ ক্রাশ এসেছে।
খুশিতে গদগদ হয়ে বলে তিথি। তুলতুল চমকে ওঠে। পা থেমে যায় ওর। বুকটা ধক ধক করছে। গলা শুকিয়ে আসছে। কোথাও একটা লুকিয়ে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। যাতে এই লোকটা তুলতুলকে না দেখতে পায়।

“এই তুলতুল ডাকছে আমাদের আমার ক্রাশ। চল
শুনে আসি। কি বল
তিথি তুলতুলের হাত ধরে টান দিয়ে বলে। তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে। হাত পা কাঁপছে রীতিমতো। আড় চোখে এক পলক তাকায় রাস্তার দিকে। দুটো বাইক দাঁড়িয়ে আছে। কালো বাইকে কালো শার্ট পড়া ছেলেটাই সায়ান। যে এক তৃহ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। সায়ানের পেছনে বসে আছে রিফাত।

সায়ান তুলতুলের দিকে তাকিয়ে ছিলো বিধায় তুলতুল তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেয় তুলতুল। বুকের ধক ধক হাজার গুন বেরে গেছে। হার্ট দ্রুত লাফাচ্ছে।
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় তুলতুল। কাঁধের ব্যাগটা শক্ত করে চেপে ধরে।
” যাবি তুই? ডাকছে কিন্তু।

তিথি আবার বলে ওঠে। তুলতুল এক পলক তিথির মুখের দিকে তাকায়। মেয়েটা খুশিতে রীতিমতো লাফাচ্ছে। যেনো ওকে প্রেম করতে ডেকেছে।
পালাতে হাব এখান থেকে। নাহলে রা*হ্ম*সটা খে*য়েই ফেলবে তুলতুলকে। তুলতুলের ছোট্ট মস্তিষ্ক একটাই বলছে। এদিন ওদিক তাকিয়ে রাস্তা ঠিক করে নেয় তুলতুল।

“রেডি ওয়ান টু থ্রি
বলেই ভৌ করে এক দৌড় দেয়। তিথি হতদম্ভ হয়ে যায়। এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না একদম। সায়ান চোয়াল শক্ত করে তুলতুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। বড্ড সাহস বেরেছে এই মেয়ের। একবার হাতের কাছে পেয়ে নিক। তারপর সাহস বের করবে।

” ভাই ভাবি তো চলে গেলো।
রিফাত কাচুমাচু হয়ে বলে।
“কোথায় আর যাবে?
সায়ান বাঁকা হেসে বলে।

কলেজ থেকে বাড়ি বেশি দুরে না হওয়াতে দৌড়েই বাড়ি চলে আসে তুলতুল। বাড়ির উঠোনে বসে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানে। আল্লাহ জোর বাঁচা বাঁচিয়ে। ওই করলার সামনে পড়লে না জানি কি করতো?
বাড়িতে পা রাখতেই তুলতুলের কপালে তিনটে ভাজ পড়ে। এতো সুন্দর করে সাজানো গোছানো হয়েছে কেনো? পাশের বাসার আন্টিকেও দেখতে পাচ্ছে মা আর কাকিমার হাতে হাতে সাহায্য করছে।

এখন মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করতে গেলে নির্ঘাত এতগুলো বকা খেতে হবে। নাহলে কোনো কাজ হাতে ধরিয়ে দেবে। এখন বকা খাওয়ার বা কাজ করার এনার্জি নেই। তাই মনে মনে চিন্তা করতে করতে রুমে ঢোকে তুলতুল।
রুমে গিয়ে আরও অবাক হয় তুলতুল। সেখানে শাড়ি পড়ে রাগে গিজগিজ করতে করতে পায়চারি করছে তনু।
” আপু কাকে বকছো?

তুলতুল কাঁধের ব্যাগটা টেবিলের ওপর ধপ করে রেখে জিজ্ঞেস করে।
“শোন তুলতুল
আমি কিন্তু কিছুতেই বিয়ে করবো না। বিয়ের দিনই পালিয়ে যাবো। আর তারপর আমার জায়গায় তোকে বসিয়ে দিয়ে যাবো বলে দিলাম।
তনু তুলতলেুর দিকে আঙুল তুলে বলে।

তুলতুলের চোখ দুটো খুশিতে চকচক করে ওঠে। এক লাফে বিছানায় গোল হয়ে বসে পড়ে।
” ওয়াও আপু আইডিয়া টা কিন্তু দারুণ। এমনিতেই বিয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। এখন তোমার দয়াতেই বিয়েটা হতে যাচ্ছে আমার। ইসসসস আমার বিয়ে হবে?
জাস্ট ভাবছি সাউন্ড বক্সে যখন সাকি গান বাজবে তখন আমি নিজেকে কিভাবে কন্ট্রোল করবো? আমি তো কবুল বলার আগেই নেচে উঠবো রে।

খুশিতে গদগদ হয়ে বলে তুলতুল। তনু মুখ বাঁকায়। বিরক্ত লাগছে। কেউ ওকে সিরিয়াসলি নিচ্ছে না। সত্যিই চলে যাবে তনু। কিছুতেই বিয়ে করবে না। কিছুতেই না।
“আমি সত্যি সত্যি বলছি তুলতুল।
তনু তুলতুলের ঝুঁটি করা চুল গুলো মুঠো করে ধরে বলে।
” আমিও সত্যি সত্যিই বলছি
তুলতুল তনুর গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে বলে।
“ধ্যাত

তনু তুলতুলকে ছেড়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়।
“এই তনু তোর হলো? ওনারা চলে এসেছে।
আঁচলে ভেজা হাত মুছতে মুছতে রুমে ঢুকে বলেন আছিয়া বেগম (ছোঁয়ার মা)
তনু কড়া দৃষ্টিতে তাকায় কাকিমার দিকে। উনি তনুর দৃষ্টিকে পাত্তা দেয় না।

” ইসস রে কি সুন্দর যৌথ পরিবার। সবাই মিলেমিশে থাকে। ছেলেটা একদম রাজপুত্রের মতো দেখতে। আমাদের তনুর কপাল ভালো।
তনুর থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করিয়ে বলেন আছিয়া বেগম।
তনু কাঁদো কাঁদো ফেস করে তাকায় আছিয়া বেগমের দিকে।
“ও মা

আপি তো পেত্নীর মতো দেখতে। ওকে রাজপুত্রের সাথে মানাবে না। তুমি বরং আমার বিয়ে দিয়ে দাও ওই রাজপুত্রের সাথে। আমি রাজকন্যা উনি রাজপুত্র। পারফেক্ট ম্যাচিং হবে কিন্তু।
তুলতুল পেছন থেকে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে আদুরী গলায় বলে।
আছিয়া বেগম রেগে যায়।

” মাইর না খেতে চাইছে জামা পাল্টে আয়। দিন দিন বাঁদর হয়ে যাচ্ছিস তুই।
চোখ পাকিয়ে বলেন উনি। তুলতুল ভেংচি কেটে বিছানার ওপরে রাখা জামা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে।
“একটু বিয়ে করতে চাইছি বলে কি ধমকটাই না দিলো। আর কখনোই বলবো না। চুপিচুপি বিয়ে করে চলে আসবো।
বিরবির করে বলে তুলতুল।

তনু মন খারাপ করে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। আছিয়া বেগম এলোমেলো বিছানা ঠিক করে চলে যায় ওনাদের আপ্যায়ন করার জন্য।
তুলতুল জামা পাল্টে চোখে মুখে পানি দিয়ে রুমে এসে থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। কারণ ওর সামনে সায়ান দাঁড়িয়ে আছে প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুঁজে। বড়বড় চোখ করে তাকায় তুলতুল। আজকে লোকটার ডাক ইগনোর করেছে বলে বাড়িতে চলে এসেছে শাস্তি দিতে?

এখন কি হবে? বাবা মা দেখলে তো আস্ত চিবিয়ে খাবে তুলতুলকে।
শুকনো ঢোক গিলে তুলতুল। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। হাতের জামা কাপড় ফ্লোরে পড়ে গেছে। হাত পা রীতিমতো কাঁপতে শুরু করেছে। দুই চোখে পানি টলমল করছে। শব্দ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
” কি রে ফকিন্নি

শুনলাম বিয়ে না কি করবি?
সায়ান শান্ত গলায় বলে। অথচ তুলতুলের ভেতরে ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেছে।
দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে ছিটকিনি লাগানো। দরজা কেনো বন্ধ করে হনুমানটা? মতলব একদম ভালো না।
এখন যাবে কোথায় তুলতুল?

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২